নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

~ An Average, An Explorer ~

ওমর ফারুক কোমল

অজ্ঞ এক মানবসন্তান

ওমর ফারুক কোমল › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারিয়ে যাওয়া পুরান ঢাকার রূপলাল হাউজ!

০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:১৮


(ছবিঃ উইকিমিডিয়া)

সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে বহু ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। আমি এই হারিয়ে যাওয়ার তালিকায় প্রথম সারিতে রাখব পুরান ঢাকার ফরশগঞ্জে অবস্থিত রূপলাল হাউজকে।


(ছবিঃ উইকিমিডিয়া)

রূপলাল হাউজ, ১৮২৫ সালে আরমেনিয়ান জমিদার আরাতুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এটি। পরে ১৮৩৫ সালে রূপলাল দাস এবং তার ভাই রঘুনাথ দাস বাড়িটি কিনে নেয়। এরপর থেকে বাড়ির নাম হয় রূপলাল হাউজ। তখনকার যুগের অত্যন্ত ব্যয়বহুল স্থাপত্য এই রূপলাল হাউজ। বাড়িটি ইংরেজী “ই” আকৃতিতে তৈরি। রূপলাল হাউজের ডিজাইন করেছিলেন কলকাতার মার্টিন কোম্পানি। জানা যায়, ১৮৮৮ সালে লর্ড ডাফরিন যখন ঢাকা সফরে আসেন তখন তাঁর সন্মানে বল-নাচের আয়জন করার জন্য ইংরেজরা রূপলাল হাউজের হলঘরটি দু’দিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই সময়ে শুধু মাত্র ঢাকার আহসান মঞ্জিল এবং রূপলাল হাউজেই বল নাচের উপযোগী বিশাল হলঘর ছিল। আরও জানা যায়, সেই সময়কার বিদেশীগন ঢাকায় আসলে রুপলাল হাউজেই ভাড়া প্রদান করে থাকতে পছন্দ করতেন। শুধু তাই নয়, সেই সময়ে রুপলাল হাউজে নাকি নিয়মিত সংগীতের আসর হতো! ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান, ওস্তাদ ওয়ালী উল্লাহ খান এবং লক্ষী দেবী সহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ রুপলাল হাউজে সংগীত আসরে নিয়মিত আসতেন।


(বুড়িগঙ্গা নদীর বুক থেকে রুপলাল হাউজের একাংশ। ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অফরোড বাংলাদেশ)

আফসোস! এতক্ষণ যা বকবক করলাম তা এখন শুধুই ইতিহাস। বাস্তবতা হল, আমরা দুই বন্ধু (শাহরিয়ার আর আমি) প্রায় আধাঘণ্টা ধরে ফরাশগঞ্জের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত বাড়িটিকে খুঁজেও এর কোন অস্তিত্ব পাচ্ছিলাম না। স্থানীয় লোকজনদেরকে জিজ্ঞাসা করলে সবার কাছে একই উত্তর। এমন কোন বাড়ির নামই নাকি শুনেনি তারা। কি আশ্চর্য! অথচ প্রাপ্ত দিক-নির্দেশনা মোতাবেক তো ঠিক জায়গাতেই আছি। পরে মোবাইল থেকে বাড়িটির একটি ছবি বের করে আবার খুঁজতে লাগলাম। হটাত আমার বন্ধু আমাকে রাস্তার পাশেই একটি বাড়ি দেখিয়ে ছবির সাথে সেটা মিলিয়ে দেখতে বলল। কি সর্বনাশ! এই বাড়িটিই তো সেই কাঙ্ক্ষিত বাড়ি অর্থাৎ রূপলাল হাউজ। অথচ এর পাশ দিয়ে কিছুক্ষণ আগেও হেঁটে গেছি। পুরো হরদম একটা বাজার বৈ কিছুই নয় এটা। ঢোকার সময় আবার দেখলাম দেয়ালের এক পাশে লেখা ‘’জামাল হাউজ”। আবারও ছবিটি মিলিয়ে দেখতে লাগলাম। হ্যাঁ, এটাই তো রূপলাল হাউজ। পরে ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারি ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় দাস পরিবার ঢাকা ছেড়ে চলে গেলে ১৯৫৮ সালে মোহম্মদ সিদ্দিক জামাল রূপলাল হাউজটি কিনে নিয়ে এর নতুন নাম করেন ‘জামাল হাউজ’।

যাহোক, বাড়িটি ঘিরে এখন মসলা ও সবজি ব্যবসায়ীদের দোকানপাট। সেগুলোর ভিড়ে বাড়িটির প্রবেশপথ খুঁজে পেতে একটু কষ্টই হচ্ছিল। পরে এক দোকানের পাশ দিয়ে একটি ছোট দরজার সন্ধান পেলাম যেখান থেকে ভিতরে বাড়ির উঠান দেখা যাচ্ছে। আশেপাশে একাবার তাকিয়ে নিয়ে ফুড়ুৎ করে ভিতরে ঢুকে পরলাম। ঢোকার সময় গেটের গায়ে একটা নোটিশ পেপার লক্ষ্য করলাম যাতে লেখা ছিল এ বাড়িটি বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।

পুরো বাড়িটি ছিল অন্ধকারে আচ্ছন্ন। শুধু মাঝখানের উঠানটায় রোদের আলো পরছে। গেট দিয়ে ঢোকার পরেই উপরে উঠার সিঁড়ি পেয়ে গেলাম।





আমরা দুজন ধীরে ধীরে অন্ধকারে সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় পৌঁছে গেলাম। সেখানে দেখতে পেলাম পুরো বারান্দা জুড়ে মানুষের কাপড়-চোপড় (অর্থাৎ, ভেজা কাপড় শুকানোর উদ্দেশ্যে যেভাবে কাপড় মেলে রাখা হয়)। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এখানে বেশ কিছু পরিবার বসবাস করেন।



হটাত একটা ঘর থেকে একজন ভদ্রলোক বের হলেন এবং বললেন, 'কি চাই?'।
-না কিছু চাচ্ছি না। এই বাড়িটা দেখতে এসেছি। পুরাতন তো।
-এখানে দেখার কিছু নাইকা। কাইটা পরেন। সমস্যা আসে।
-ঠিক আছে ভাই, চলে যাচ্ছি। থ্যাঙ্ক ইউ।

এরকম কিছু হতে পারে আগেই ভেবেছিলাম। আর কি করার! দুই বন্ধু তৎক্ষণাৎ নেমে পরলাম।

ভীষণ ভীষণ আফসোস হচ্ছিল। কিজে ছিল এই বাড়িটি আর কি হয়ে গেল? দেশের সংবিধানে পুরাকীর্তির যে একটা আইন রয়েছে তা হয়তো এখানকার ভূতপ্রেতরও জানা নেই। সবচেয়ে অবাক হয়েছি বাড়িটির পাশ দিয়েই শুধু নয় একেবারে মূল ভবনের সামনেই দোকানপাট বসিয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়েছে। তাও কোন ভাসমান দোকান নয়, একেবারে পার্মানেন্ট (এই পোস্টের ২য় ছবিটি লক্ষ্য করলেই ভালো বুঝতে পারবেন)। চেনার বিন্দু মাত্র উপায় নেই।

পরে বাড়িটির পেছনে যে নদীর ঘাট আছে সেখানে বসে বসে আরও একটি হারিয়ে যাওয়া সম্পদ (বুড়িগঙ্গা নদীর সৌন্দর্য) অনুধাবন করছিলাম।



অতঃপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। দুই বন্ধু একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম...


-৭/জুলাই/২০১৬ ইং

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৯

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: কিচ্ছু বলব না।

নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, তাই লিখলাম ঃ "অন্যায় অর্থ বেশী দিন থাকে না" এমন ধরনের কথা বলা যায়। তবে এটি অবশ্যই পুরাকীর্তির তালিকায় রাখা দরকার।

১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:০৭

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: যথার্থ..।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.