নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

~ An Average, An Explorer ~

ওমর ফারুক কোমল

অজ্ঞ এক মানবসন্তান

ওমর ফারুক কোমল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐতিহাসিক হলি রোজারি চার্চে একদিন...

১৪ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩


(ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সিএস মাল্টিকাস্ট)

এইতো সেদিন, বড়দিন উপলক্ষে কোথায় বেড়াতে যাই বুঝতে পারছিলাম না। বন্ধু শাহরিয়ারও ঢাকার বাইরে। কি করব ভেবে না পেয়ে ঠিক করলাম কোন এক গির্জা থেকে ঘুরে আসব। তবে ঢাকার ভেতরে গির্জা বলতে আমি শুধু আর্মেনিয়ান গির্জাতেই গিয়েছিলাম। তবে জানা মতে সেখানে এখন আর কোন প্রার্থনা/উৎসব হয় না। পরে ফেসবুকে এক বড়ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় হলি রোজারি চার্চ নামের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন গির্জা রয়েছে। ‘প্রাচীন’ শব্দটা শুনেই মনে উথাল পাথাল শুরু হয়ে গেল।

পরদিন মানে বড়দিনের দিন বিকেল তিনটার দিকে বের হয়ে পরলাম ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে। প্রথমে বাসা থেকে ঝিগাতলা বাসস্ট্যান্ড এবং সেখান থেকে টেম্পু যোগে সোজা ফার্মগেট। ফার্মগেট নেমে কিছু দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলে তারা দিক নির্দেশনা দেয় রাস্তার ওপারে একটা গলি রয়েছে, সেই গলি দিয়ে একটু হেঁটে গেলেই কাঙ্ক্ষিত চার্চ। তো আমি ওভারব্রিজ দিয়ে বিপরীত রাস্তায় চলে গেলাম। নেমে হাতের ডানেই একটা গলি মোড় নিয়েছে। আমি সেখানে নেমে এক রিক্সাচালক ভাইকে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হয়ে নিলাম। হ্যাঁ, এটাই সেই গলি। তো গলি দিয়ে ২ মিনিট হেঁটে যেতেই রাস্তার ডান পাশে দেখা মিলল সেই ঐতিহাসিক চার্চের ফটক।

হলি রোজারি চার্চ, উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন গির্জা। ধরা হয়ে থাকে ১৬৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজরা এই চার্চটি নির্মাণ করা হয়। তবে এর সঠিক স্থাপত্য কাল নিয়ে রয়েছে বহু জল্পনা-কল্পনা। যেমন জেমস টেলর বলেছেন, ঢাকার সন্নিকটে তেজগাঁও এর গির্জাটি ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে স্থাপিত। তাঁর মতে, প্রথমে এটি ভার্থেমা (ইটালিয়ান ভ্রমণকারী) কর্তৃক বর্ণিত নেস্টোরীয় (নেস্টরিয়াসের অনুসারী) খ্রিস্টান বণিকদের দ্বারা নির্মিত হয় এবং পরবর্তীকালে রোমান ক্যাথলিক মিশনারীগণ কর্তৃক এর সংস্কার করা হয় বা পুননির্মিত হয়। ১৮৪৫ সালে ক্যালকাটা রিভিউতে প্রকাশিত History of the Cotton Manufacture of Dacca District শীর্ষক প্রবন্ধে তেজগাঁয়ের গির্জাটি নির্মাণকাল ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দ বলে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে জি.জি.এ ক্যাম্পোজ গির্জাটির প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে বলে উল্লেখ করেন কিন্তু ম্যানরিক সেবাস্টিয় (১৬৪০) এবং টের্ভানিয়ার-এর (১৬৪০ ও ১৬৬৬) বর্ণনায় গির্জাটির উল্লেখ থাকায় ক্যাম্পোজের উক্ত মতামতটি গহণ করা যায় না। গয়া’র প্রধান ধর্মযাজক গির্জাটি ১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় বলে উল্লেখ করেন।


(আনুমানিক ১৮৭০ সালের একটি দূর্লভ ছবি। কৃতজ্ঞতাঃ সানডে বিডি)

গেট দিয়ে ঢুকতেই সামান্য কিছু খালি জায়গা চোখে পরল। এর পর খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বাম পাশে মূল গির্জা। সেখানে এক পাশে রয়েছে কবরস্থান এবং অন্য পাশে রয়েছে প্রার্থনালয়। তবে এখানে প্রার্থনালয় মূলত দুইটি। একটি তো সেই প্রাচীন আমলে তৈরি। আরেকটি তৈরি করা হয় ১৯৯৭ সালে। নতুন তৈরি করা উপাসনালয়টিই এখন মূল উপাসনালয়। এর মূল চুড়ায় লেখা আছে ‘জপমালা রাণীর গির্জা’। পরে জানতে পারি স্থানীয়ভাবে চার্চটি ‘জপমালা রাণীর গির্জা’ নামেই অধিক পরিচিত।


(এটিই নতুন এবং মূল উপাসনালয়)

মনে হচ্ছিল অন্যান্য দিন জায়গাটি খুব নিস্তব্ধ থাকে। তবে বড়দিনের কারণে প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় করেছে। পুরো চার্চজুড়ে একটা উৎসব আমেজের ঘোর তৈরি হয়েছে। আমি নিজে যেন সেই ঘোরেই আচ্ছন্ন হয়ে পরছি...

ঢোকার পরেই চোখে পরল যীশু এবং মেরীর বড় দুটি প্রতিকৃতি। ছোট বড় সবাই মিলে সেখানটায় ছবি তোলায় ব্যস্ত। আমিও আমার স্বল্পমূল্যের মোবাইলখানা বের করে ফেললাম।





প্রাচীন গির্জাটির গাঁ ঘেঁষেই রয়েছে কবরস্থানটি। এখানে কবরের সংখ্যা এক হাজারের ওপর। কবরগুলো চার্চের পক্ষ থেকেই সংরক্ষণ করা হয়। স্থায়ীভাবে কাউকেই এ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয় না। ১০ বছর অন্তর অন্তর পুরনো স্থানেই নতুন কবর দেওয়া হয়। চার্চের নথিপত্রে ক্রুশের নম্বর অনুসারে নাম ও ঠিকানা লেখা থাকে। সবচেয়ে পুরনো কবর ফলকটি ‘সোয়ামো সোয়ারেস’-এর ১৭২৫ সালের।




(কবরস্থানের শেষ দিকে যীশুর ক্রুশবিদ্ধ প্রতিকৃতি)

নতুন গির্জাটির পেছনের দিকে আবার গাছ গাছালির পরিবেশ। সেখানটায় গিয়ে দেখতে পেলাম ছোট একটি কটেজ। খুব সম্ভবত গির্জাটির দায়িত্বরত কেউ এখানে বসবাস করেন। কিছুক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে থেকে প্রকৃতির সঙ্গে খানিকটা গা ভিজিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার রহস্যময় ধোয়ার আঁধারে গির্জাটি থেকে বের হয়ে বাড়ির পথে রউনা দিলাম।


-১২/জুন/২০১৬ ইং

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:২৪

সুমন কর বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। যাবার ইচ্ছে থাকল।

+।

১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩৯

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.