নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

~ An Average, An Explorer ~

ওমর ফারুক কোমল

অজ্ঞ এক মানবসন্তান

ওমর ফারুক কোমল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদা রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদে

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২১



বহু প্রাচীন ঐতিহ্যে ঘেরা আমাদের এই নগরী। এ নগরীর অলি-গলিতে মিশে আছে ইতিহাসের সুঘ্রাণ। মূলত বিভিন্ন প্রাচীন ইতিহাসের ঘ্রাণ নিতেই আমি ভ্রমণে বের হই। ছুঁটে যাই দেশের বিভিন্ন প্রাচীন, রহস্যময় এবং ঐতিহাসিক স্থাপনার সাক্ষী হতে। আজ সেই দর্শনাভিজ্ঞতার ঝুলি থেকেই কিছু লিখব।

স্থানটির নাম ‘রাজা হরিশচন্দ্রের পাসাদ’, স্থানীয়ভাবে হরিশচন্দ্রের বাড়ি, হরিশচন্দ্রের ঢিবি নামেও পরিচিত। তবে নামের সাথে স্থাপনার যে অমিল রয়েছে তা জানতে পারি স্বশরীরে সেখানে উপস্থিত হবার পর। তা যাহোক, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড এক রৌদ্রমাখা সকালে ছোট ভাই ফাহিমকে সাথে নিয়ে বের হয়ে পরলাম রাজপ্রাসাদটি দেখার জন্যে। প্রথমে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড এবং সেখান থেকে বাসে করে সরাসরি সাভার কাঁচাবাজার বাসস্ট্যান্ড নামলাম। রাস্তার ঠিক বিপরীত পাশে অর্থাৎ বিপরীত রাস্তায় এক বড় ইলেকট্রিক খাম্বার গাঁ ঘেঁষা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এক সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম।



তো সাইনবোর্ডের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমি মুল রাস্তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া আরেকটি সরু রাস্তায় প্রবেশ করলাম। অতঃপর রিক্সাযোগে মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদের সামনে। রিক্সা থেকে নেমে যা দেখলাম তাতে বিস্ময় হওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না। কোথায় সেই রাজ প্রাসাদ! কোথায় সেই রাজমহল! এতো দেখি শুধুই এক ধ্বংসাবশেষ। তবে ইতিহাস কিন্তু ইতিহাসই। এর গুরুত্ব কখনই কম নয়। তবে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ভুল জায়গায় চলে এসেছি। পরে অবশ্য গেটের পাশে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড দেখে নিশ্চিত হলাম যে আমি ঠিক জায়গাতেই আছি।





তো স্রষ্টার নাম নিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকে পরলাম। গেটটা সম্ভবত সবসময়ই খোলা থাকে। ঢুকতেই দেখি একটা গাছের কাছে কিছু স্থানীয় যুবক খোশ গল্পে ব্যস্ত ছিল তবে আমাদেরকে দেখেই কেমন চোখাচোখি শুরু করল। ব্যাপারটা আমার কাছে একটু অস্বস্তিকর লাগছিল। দ্রুতই অন্যত্র সরে পরলাম। ভ্রমণে বের হয়ে তো কত বাজে অভিজ্ঞতাই হয়, তবে সাথে ছোট ভাই আছে। আমি যার অভিভাবক।

জায়গাটা খোলামেলা। পুরো ঢিবিটি লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। ঢোকার প্রথমেই ধ্বংসাবশেষটি চোখে পরবে যেটি মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে।



এটির চার পাশে রয়েছে ওঠার জন্যে চারটি সিঁড়ি। উপরে ওঠে একটু ভিতরের দিকে যেতেই চোখে পরল আরও বিশাল খালি জায়গা। তবে ঠিক সমান্তরাল কিন্তু নয়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে খনন কাজ চলেছিল। ইতিহাস থেকে জানতে পারি ১৯১৮ সালের দিকে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী (ঢাকা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত) এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ পরিচালনা করেন।





এই খননকাজের ফলে আবিষ্কৃত হয় বৌদ্ধদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রত্নবস্তু ও গুপ্ত রাজবংশের অনুকৃত মুদ্রাস্মারক। এতে সেখানকার বৌদ্ধ মূর্তির পরিচয়ও পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০/৯১ সালে পূর্ণরূপে খনন কাজ চালালে এখান থেকে বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য খচিত পোড়ামাটির টুকরো, ব্রোঞ্জের তৈরি ক্ষুদ্রাকার বুদ্ধমূর্তি, বিভিন্ন টেরাকোটা এবং গুপ্ত অবস্থায় লুকায়িত নকল স্বর্ণমুদ্রা আবিষ্কার হয়। প্রাপ্ত শিল্পশৈলী বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন জায়গাটি একটি বৌদ্ধ মতাদর্শের কেন্দ্র ছিল এবং এটি খ্রিস্ট্রীয় সপ্তম শতকের একটি নিদর্শন। বর্তমানে সেখান থেকে পাওয়া সকল প্রত্নবস্তু বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।





ইতিহাস থেকে রাজা হরিশ্চন্দ্রের সম্বন্ধে তেমন কোন তথ্য খুঁজে পাইনি। তবে জানতে পেরেছি সত্যবাদিতার জন্যে উনি বিখ্যাত ছিলেন। ভারতবর্ষের প্রথম নির্বাক চলচিত্র ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ তার জীবনের উপরেই নির্মিত। তবে কিছু প্রশ্ন রয়েই যায়। এই যেমন, সেই রাজার নামেই কি সাভারের এই ঢিবি? আর কেনইবা একটি বৌদ্ধ বিহারের নাম প্রাসাদ?

যাহোক, স্থানটি দর্শন শেষে যখন বের হচ্ছিলাম তখন শুধু একটি কথাই মনের মধ্যে দোলা দিচ্ছিল। কি চমকপ্রদই না ছিল সেই প্রাচীন সময়কালগুলো। আহ! একটু যদি যেতে পারতাম সেই সময়টাতে!


তথ্যসূত্রঃ প্রত্নতত্ত্ব: উদ্ভব ও বিকাশ-মোঃ মোশারফ হোসন

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: :D গল্পে পড়েছি এই সমস্ত পুরাতন জায়গায় গেলে নাকি ভূতপ্রেত/আত্মার দেখা পাওয়া যায়?

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৩

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: গিয়ে দেখেন, দেখা পেলেও পেতে পারেন।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩

একজন সত্যিকার হিমু বলেছেন: সত্যিই যদি যাওয়া যেতো ।ইতিহাসে খুব যেতে ইচ্ছা করে ।বিশেষ করে মোঘল আমলে ।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৫

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: মোঘল আমল তো আমার স্বপ্নের সময়। আহ! যদি যেতে পারতাম..।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.