নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ বছরের একজন ক্ষুধার্ত মানুষ তবে সুখি ও বিস্ময়কর! যার অতীত ঘোলাটে, বর্তমান ধূসর আর ভবিষ্যৎ অন্ধকার.....
০১.
যে আকাশ ফড়িঙের
এক আশ্বিনের রাতে মুঠোভর্তি জীবনানন্দ হাতে
আকাশ বানিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে
বোকা যুবকের মত রাস্তার সস্তা হোটেলে সোনালী ডানার চিল হয়ে
চায়ের কাপে কর্পোরেট প্রেমে পড়েছিলাম।
সময়ের সরলরেখায় তোমাকে ভুলে গেছি,
শুধু সেদিনের সেই রমনার বটমূলের ধূসর সময় গুলোকে ভুলিনি
সিঁথির সিঁদুরে জমা মেঘে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির বায়নায় কিছু সময়,
যে সময়কে হতে হয়েছিল বিশ্বাসঘাতক কোন রাঙা বেনারসী’র গল্প।
চায়ের দোকান গুলো মদের দেশীয় ফরাসী ক্যাফে হয়ে উঠলেই -
চিরস্থায়ী বর্ষণের মুখ থেকে দর্পণের বিপরীতে
শ্বেত তারায় নিজেকে রাঙালে
মনে হয়, মিথ্যের এই প্রতিশ্রুতি বোধয় কয়েকশো বছর আগের কথা;
যে মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলে তুমি।
মহাপৃথিবীর অপেক্ষার রেললাইনে আমি আবার বোকা যুবকের ন্যায়
এক সন্ধ্যের শাড়ি দিয়ে মহাপ্রলয়ের অহিংস ডাকাত হয়ে
উম্মাদ প্রেমিকের মত মুঠোয় আনবো
বনলতা সেনের চুল থেকে ঘোর অন্ধকার।
লুফে নেবো সমস্ত পৃথিবীর দগ্ধ আকাশ,
যে আকাশ আমায় নয়; যে আকাশ ফড়িঙের!
০২.
বকেয়া হিসেব
তুমি বলেছিলে ক্যামেলিয়া ফোটার মত সময় হলে
বকেয়া হিসেবটা অসমাপ্ত চাঁদের প্রতিফলনে আমার কপালে একে দিবে।
কারো ভয়ে বাম হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের অর্ধখাওয়া অংশে চাপ মেরে
তার অসমাপ্ত অংশে পূর্ণিমার চাঁদকে রুটি ভেবে
অপেক্ষার সুপ্রাচীন বন্দীশালায় স্বদম্ভে গিলে যাবো।
শুধু সে মুখোমুখি বসবার রাতটা জোৎস্নায় জ্বলজ্বল করবে,
সমস্ত আকাশ ঠোঁটের স্পর্শে এসে গড়িয়ে তুলবে
আরেকটি মোহভিসক্ত শরীর।
জোৎস্নার নিমন্ত্রণে বুকের নিয়ন যন্ত্রনা গুলি নিকোটিনে দগ্ধ বাসর বুনে
সমস্ত সাম্রাজ্যের সব বন্ধ জানালা খুলে জ্বালিয়ে তুলবে রঙিন বাতির শহর
মিটে যাবে দুজনের অহিংস লেনদেন, শুধু সে রাত হবে তোমার-আমার।
০৩.
ফের অটোগ্রাফ
বেনীমাধব
একদিন শহীদ স্মরণীর পিচঢালা পথে প্রথম দেখার প্রণত মুহূর্তে
আহত ফুলের তোড়ার অধিকার চেয়েছিলে,
সেদিন আমায় আদিবাসী উদ্ধারের প্রবেশ পত্র হাতে ডেকেছিলে
ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোর মৌনতায় হাতে অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে
শহীদ মিনারে বসে তুমিই প্রথম এঁকেছিলে নির্জন ভাস্কর্য!
তুমি একবার ভুল করে আমার আঙুলকে ফেরিওয়ালার টোস্ট ভেবে
পারস্যের সুন্দরী রমণীদের মত কামড় বসিয়েছো আমার হাতে
জানি তুমি আদিবাসী নও-
তোমার এসব নিষ্কাম ধর্ম দেখে তিরস্কার করেছিল মন্দিরের সব প্রভুভক্ত কুকুর,
বিমুগ্ধ চিত্তে জমা ছিল বিকেলের ঝালমুড়ি’র ঠোঙায় আটকে থাকা কিছু কথা।
জানো? সেদিনের সেই আমি কবেই ছিনতাই হয়ে গেছি
বিমূর্ত কোন কিশোরীর বনজ গন্ধ মাখা চোখে।
এখন আর কেউ হাতে অটোগ্রাফ নেয় না; তালুতে ধেয়ে আসেনা ধূলিরাশি
শুধু আটকাতে পারনি তুমি; তাইতো আর অটোগ্রাফ চাইতে আসো না-
বলতে পারো না, “কবি, দিন না একটা অটোগ্রাফ।”
কাগজ তো আনিনি তাই হাতটাই বিছিয়ে দিলাম
এখানে লিখে দিন, আমার ভালবাসাটা করে নিলাম।”
০৪.
নীহারিকা
নবম শ্রেণীর হাজিরা খাতার শেষ কলামে নাম উঠা মেয়েটার সাদা ওড়না,
পিছন কাঁধে ঝোলা ব্যাগ আর চোখের নিচে ক্লিওপেট্রা হাসি
মাথায় দু-বেনী, চোখের নিচে কালো দাগ, খোঁপায় হলদে ঝিঙেফুল
হাতে আশীর্বাদের লাল সূতো, আর চিকণ ফিতার মেয়েলী ঘড়ি,
যার নাম নীহারিকা;
দেখেছিলাম তার হাতের রেখায়, বেঁকে যাওয়া নীহারস্ফোট আঁকা।
প্রতিটা পদচারণ যার কাছে বায়না ধরে গ্রীক দেবী ইউরাডিসির
সেওতো স্বার্থক প্রেমিকা ছিল, যে ভালবেসে ফিরে এসেছে মৃত্যু থেকে -
উষ্ণ আবেগের লিপলেটে রুপে ভিড় করে কল্পনার মানবীরা
এই সে মেয়ে; যে তার অনামিকার বিনিময়ে কিনে নিতে পারে আমাকে
কিংবা সবুজ ঘাসের দেশের ফলবতী সেই লাল আপেল গাছ
যার অপেক্ষায় মহামতী নিউটন বসে কাটিয়েছে হাজার হাজার বছর।
শেষ দেখার ছায়াচিত্রে যার মুখে ফুটে উঠেছিল করিডোরের এক চিলতে রোদ
সেদিন পেছনের টেবিলের বসা আমি-ই বোধয় ছিলাম তার একমাত্র মূর্খ দর্শক!
০৫.
বাউণ্ডুলে ফড়িং
আমার কোন স্বপ্ন নেই; ধরে নাও বাউণ্ডুলে, বড় হব না আমি।
হব না দিকবিজয়ী কলম্বাস কিংবা অভেদ্য মস্তিস্কের সেই প্ল্যাটো
আমি ধোয়া আটকানো নারী বিদ্বেষী শ্বেত ফুসফুস চাইনি,
চেয়েছিলাম মদের দেশের অশোকের হিমায়ীত মাথার খুলি।
চারপাশে সবুজঘাস আর মাথার উপর থাকবে মস্ত বড় আপেল গাছ।
সমস্ত শহর বন্দীশালা হলে কফির মগের নীল দেয়ালে,
পপী ফুলের সুবাস মিশিয়ে ঘোর’কে পৃথিবী থেকে আলাদা করে দিলে
আহত সময়গুলো নীল বিষাদ কে পুঁজি করে
সময়ের হেয়ালীপনায় বইয়ের তাকের বালু পড়া মলাট গুলো
গড়ে তুলে কারো একলা আকাশ।
ঘরে ফেরা হবে না বলে খুঁজতে যাবে না কেউ টিএসসি'তে
কিংবা শতসিঁড়ির শহীদ মিনার পেড়িয়ে চেতনা একাত্তরের পাশে।
কবি নায়কীর মানবীয় সুখে ঘোর অন্ধকারের ব্যস্ত প্রলাপে
কেউ খুঁজে মহানগরীর রাজপ্রাসাদে কেউ খুঁজে নেয়না বলে
বিধান রচিত দেবদারু বায়নায় ফিরে আসবো না ঘরে।
০৬.
ক্ষণকালের রোদ্দুর
দেখেছো কখনো আদিবাসী কিশোরীর চোখে –
গোধুলির মত সন্ধ্যের পায়ের ছাপ?
ক্যাডাভেরাসের মৌন ডিভাইসে ভুল বাক্যে শহর সাজার সঙ্গ দোস!
কথা ছিল ইচ্ছের পক্ষে জেদ ধরে শহুরে মেঘপাই হয়ে
কেড়ে এনে দেবো ঘোর লাগা বর্ষার জোৎস্নাস্তুপ।
সুন্দরবনের মৌমাছি হয়ে কেড়ে নেবো সরষে ফুলের দগ্ধ সংলাপ
মুখোমুখি বসবার রাতে সুডৌল বৃত্তে বন্দীর মত হলেও –
শ্রাবণ ঢলের স্পর্শ পাবে না অনুরাগ; কথার মিছিলে বন্ধী হবো দুজনে
তোমার বুক ব্যরাকের চারপাশে সমরাস্ত্র সাজিয়ে
নিপুণ অভিনেতার মত দুঃসাহসী সেনা মোতায়েন করে রেখো
নাহয়, আমি নাৎসী বাহিনীর মত আচমকা হামলা হানতে থাকবো বদ্ধ পরিকর!
সেদিন কিলোরোডে রিক্সায় চড়া এক আদিবাসী কিশোরী’কে দেখে
তুমি বলেছিলে,
“এই তোমার বিশ্বাসঘাতক প্রাক্তন প্রেমি?
যে তোমাকে কথা দিয়ে, ভালবেসেছে জয় গোস্বামী!”
চাকমা কিশোরী নয়,
আমার টিনের চালে নুয়ে পড়া জোৎস্নার একলা অধিকারী হবে তুমি।
সময়টাকে আসামী করে শিশিরের ছ্যাতছ্যাতে বৈরি আবহাওয়ায়
রাতের বায়নায় তারায় তারায় মিটিয়ে যাওয়া দগ্ধময় সংলাপে
ইচ্ছের অবিরত ব্যরিকেডে পৌছে যাবে আমার অনুতাপ।
সেদিন শহরের উঁচু দালানের আভিজাত্য রেস্তোরাঁর ব্যস্ত সংলাপে
নাশপাতি ফুলের গন্ধ মেখে ক্রিস্টিমাসের দিনে হালকা কথোপকথনে
অহেতুক বিরহী যন্ত্রনায় ছলে তুমি যাকে প্রেয়সী ভেবেছো,
সে চাকমা কিশোরী শুধুই আমার পাশ বেঞ্চের বান্ধবী ছিল
যার হাতের রেখায় খুঁজে পেয়েছিলাম ক্ষণকালের রোদ্দুর!
০৭.
মালিনী
মালি বাড়িতে গিয়ে দেখা পাই একজনের, মনে হয়নি সে মালিনী।
জানতে চাইলাম,
“কন্যা, পূজার প্রথম দিনে কাউকে দেয়া ফুলটা হবে?
কিংবা তার দাম কত?”
মালিণী আষাঢ় বর্ণিত রক্তিম ঠোঁটে লাল স্টবেরীর তাজা গন্ধ মেখে
তীব্রকণ্ঠে তীরন্দাজী তীর নয়নার মত বলেছিল,
“বাবু, দেন না আপনার ভালবাসার দাম যত!”
আমি যথার্থ মূল্যে ফুল কিনে নিলাম; তারপরে
বাড়ির দক্ষিণ পথে প্রতিদিন ঠাকুর ঘরে রোজ সন্ধ্যে হলে যায় যে
অনেক দিনের জমানো ইচ্ছের ভিড়ে আচমকা ফুলটা তাকেই দিলাম।
হায় এ কি সেতো দেখেই বিস্মিত!
আমি হঠাৎ বায়না করে বললাম,
“কন্যা, আজই তো পূজার প্রথম দিন
তাই মূল্য চুকিয়ে ফুল কিনতে গিয়েছিলাম,
ভালবাসাটা বোতলে রাখা রজনীগন্ধার মত বড় যত্ন করে রেখেছি।
এই নাও গ্রহণ করো, এটাই তোমার কাছে আমার ঋণ।”
মালিণী মুখে মুচকি হাসির টোপরে ঠাকুর ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল
বুঝলাম, আমার এ সম্বোধন বোধয়, সে স্বচিত্ত্বে গ্রহণ করে নিল।
০৮.
চাঁদ সমার্পণ
সমুদ্রতমা,
তুমি ফিরে এলেই সংবিধান সংশোধন করে উঠিয়ে নিব সকল অভিযোগ।
কৃষ্ণসাগরের উজ্জ্বল চাঁদটাকে মাথার উপর এনে বলবো,
“এই নাও প্রিয়তমা, সমুদ্র কিনে এনেছি”
আমি সেদিনও তোমার চোখে সমুদ্র দেখবো, উম্মেলীত হয়ে উঠবো।
তুমি নেপোলিয়ন হাসিতে অভিমান উঠিয়ে প্রত্যাখ্যান করবে রাগ,
আর বিসর্জন পত্রে স্বাক্ষর দিয়ে বিকিয়ে দেবে সব অভিমান।
ফুটপাতের সব শিশু আশীর্বাদ করে যাবে সেদিন -
তারায় তারায় মিটে যাবে দুজনের অমিমাংসীত লেনদেন।
শহরের অর্ধেক পথ জুড়ে গল্প হবে শুধু তোমার-আমার,
কিংবা সংবাদ পত্রে থাকবে বুলেটিন,
বিলবোর্ডে ছাপা হবে বড় বড় বিজ্ঞাপন।
তুমি ছুঁয়ে দিলে দুল খেলে সমুদ্রের ঢেউ;
আর আমি স্পর্শ চাইলেই হয়ে যাই নিন্দিত কেউ।
০৯.
অনেক বদলে গেছি
আমার বদলে যাবার সময় হয়েছে তাইতো বদলে গেছি,
বদ্ধ পরিবর্তন এনেছি রাত জাগার,
আড্ডা আর পরিবর্তন এনেছি তাস খেলার রুটিনে,
মাথার ভেতর অনুভূতির ঘোর তৈরি হলেই ফিরে যাই কল্পনায়।
সিগারেটের প্যাকেট ফেলে ডুব দিয়েছি কিশোরীর নৈশভোজ আয়োজনে
একদিন কেউ বুকের ওড়না সরিয়ে বলেছিল,
“বাবু, এখানে পুঁজিপতিদের নখের চিহ্ন আছে!
শতাব্দীর শেষ শৈশবে প্রথম কেউ প্রেমের বায়না মিশিয়ে তৈরি করেছিল
এ নাট্যমঞ্চের জীবন।“
তারপর ঘুম ভাঙলে চেয়ে দেখি দেয়ালে আমার-ই যত্তসব অখ্যাত পেইন্টিং
এ হয়তো কোন নারী কিংবা ভিঞ্চি কল্পনার বাস্তব রুপ!
তবু আমি বদলে গেছি আজ,
সভ্যতার বিবর্তনে উড়ে বেড়াচ্ছি সাইকেলের ডানায়
যে আকাশ আমার নয়, অন্যকারো; কিংবা
যে আকাশ ফড়িঙের।
তাই মধ্যরাতেও খুঁজে পাইনা রেলিংবিহীন উষ্ণতার সিঁড়ি ঘর।
মাঝরাতের আকাশ থেকে খুঁজে বেড়াইনা দোঁড়ে বেড়ানো তারা
কিংবা,
টিউশনি’র নাম করে ঘুরতে যাইনা চা বাগানের সাঁওতালী পাড়ায়।
আমি সত্যিই বদলে গেছি,
যতটা বদলালে অবহেলার সব স্মৃতি ভুলা যায়।
১০.
অবাধ্য সাঁতার
রাষ্ট্র আমায় স্বীকৃতি দেয় নি, তবুও আমি নাগরিক।
কেউ একজন তার বান্ধবীকে আমায় দেখিয়ে বলেছিল,
“এই বাউণ্ডুলে আমার সাবেক প্রেমিক”।
যার হাতে আমার কোন স্বাধীনতা ছিলনা,
অধিকার ছিলনা চুল সরিয়ে নিঃশ্বাসের বৈধ ভাগ নেয়ার
ঠোঁটের কক্ষপথে ভাগ দেয়নি গোলাপের ঘ্রাণ দেয়ার।
অনেক শতাব্দী আগে কেউ হটাৎ বলেছিল,
“আনমনে একক্ষণে ভুল করার উইপোকা’রা ডানা ঝাপটাবে -
শ্যাওলা হাতে আকাশ দেখাবে, বিনিময়ে চাইবেনা অবলম্বন”
কৌতূহলের বিজ্ঞাপনে আবেদন করে নিজেই ডুবে গিয়েছিলাম তার চুলে
ফিরে এসে ভেবে দেখি, কয়েকশো রাত কেটে গেছে ঠিকানা খুঁজে।
তারপরেও শহর সাঁতরে খুঁজে পাই নি।
যার চুলে কতবার আমি সাঁতরেছি,
কিন্তু বড় অভিমানী সে উচ্ছিষ্ট আদিবাসী তনয়া;
গোলাপ ভেবে বোধয় ভুল করেছি,
অথচ কোন একদিন নির্ভেজাল প্রেম খুঁজে পেয়েছিলাম তার চোখে।
১১.
কেমন হত যদি বদলে যেতো
কেমন হত যদি খাঁচার সব গুলো পাখি স্বাধীন ভাবে উড়ে বেড়াতো আকাশে।
কিংবা মানব স্বত্ত্বার এ খাঁচার ভেতর অকারণে যাওয়া আসা বন্ধ হত ওদের;
জীবন হত উন্মুক্ত, স্বাধীন আর বিশ্বয়কর!
কেমন হত যদি সব গুলো ইটের ভাটার বিনিময়ে -
কেউ সাজিয়ে দিত সবুজঘাসের বাগান।
মানব সভ্যতার সব শিল্পায়ন পুনরায় ধ্বসে যেতো মাটিতে,
চারদিকে থাকতো সবুজঘাস আর নির্জণ স্বাক্ষী হিসেবে দারুচিনি বাগান।
যদি পৃথিবীর সব মানবিকতা উচ্ছেদ করে রেল লাইনের পুরণো বস্তিটা হত বঙ্গ-ভবন,
কিংবা সারাদিন কাগজ কুড়ানো ছেলেটা বস্তার বদলি –
হাতে নিতে পারতো মলাটে বাধা পাঠ্য বইয়ের নতুন সংস্করণ,
সত্যি যদি বদলে যেতো পৃথিবীর ধারানুপাতিক সমীকরণ!
কেমন হত যদি সব প্রেয়সী বিচ্ছেদ ভুলে পুনরায় জাগিয়ে দিত প্রাক্তন ভালবাসা,
দিশেহারা তরুণরা ফিরে পেতো শঙ্খনীলের সুনীল নির্বাসণ।
হয়তো আবার, শহর ডিঙ্গিঁয়ে দামী পারফিউম কিনে ফিরে যেতো ঘরে।
কেমন হত যদি চায়ের কাপে আবদারের ভাগ বসাতো অন্য একজন,
সকল ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে, একটি রাত হত মুখোমুখি বসবার।
১২.
অপরিচিত কিশোরী
আঁতশবাজি তে আটকে থাকা সময় জমা থাকে চিরকুটের খামে
মাঝে মাঝে পুরাতন কফির মগে ডুবে যাই কবিতা ভেবে।
আমার পুরাতন টেবিল আর দেয়ালে ঝুলানো মানচিত্র,
একটা সিগারেট প্যাকেট আর পরিত্যক্ত তাসের কার্ড।
বিকেল ঘনিয়ে এলে জানালার পাশে দাঁড়াই প্রবল আগ্রহ নিয়ে,
ওপাশে নবীন কিশোরী কে দেখি বেখেয়ালী মৌনতায়।
সে এদিকে চোখ রাখলেই, ভান করে খবরের কাগজ খুলে -
পুরাতন জীর্ণ সংবাদ গুলো পড়ার চেষ্টা করি চোখের তৃষ্ণায়।
পশ্চিমাংশের হলুদ আলো এসে ধাক্কা খায় আমার চশমার গ্লাসে,
বেশ আগ্রহ নিয়ে ঠোঁটের দুপাশ জুড়ে আজম্ম ধোঁয়া উড়াতে চাই
সংশয়, বর্ণমালায় দেয়াল লিখন গুলো যদি শ্রুতিলিখন হয়ে যায়।
কে ? কোন কিশোরী হেটে বেড়ায় একলা ছাঁদে; কিংবা
মধ্যদুপুরে বসে থাকে চেতনা একাত্তরের গায়ে হেলান দিয়ে
কোন মেয়েটি রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে আমার অপেক্ষাতে?
১৩.
যদি সময় হয়
একদিন সময় হলে আমার হাত ধরো প্রবল তৃষ্ণায়
জানি এতে তপ্ত দুপুরের তৃষ্ণা মেটানো জল মিলবে না; কিন্তু
আমি রক্ত ফুটে চারহাজার কিলোমিটার দূরের সুদূর ওশেনীয়া থেকে
তোমায় মুঠোভর্তি গোলাপ চামেলি আর কৃষ্ণচুড়া এনে দেবো।
সময় হলে একদিন কোন এক বর্ষায় আমার পাশে এসো -
ইচ্ছে হলে পার্কের ফাঁকা সিট টাতে পাশাপাশি বসো,
আমি নাহয় মেঘ কুড়িয়ে বর্ষার দ্বিতীয় কদমটা হাতে নিয়ে থাকবো।
তুমি এসো পৌষ, বাউল আর হেমন্তের মাঠে ফসলের গন্ধ নিয়ে
কিংবা এসো কোন এক গ্রীষ্মের ভরা যৌবনে; এসো শূন্য ব্যস্ততার রোদে
আম জারুলের বনে ইচ্ছে হলেই সদম্ভে ডুবে যেও।
একদিন গভীর রাতে এসো সাঁওতালী পাড়ায়,এসো মাদল হাতে
কিংবা উপজাতীয় পোশাকে নাকে নোলক পরে ওদের সাজে;
উন্মাদ হয়ে আদিবাসী উৎসবের মুখর সন্ধ্যায় মেতে উঠবো দুজনে
সাঁওতালী পাড়ার নদীর তীরের নরবরে বাঁশের টেবিলে কাটাবো রাত
নূয়ে পড়া জোৎস্নায় কথা বলে যাবো সারারাত জুড়ে।
১৪.
অতীত থেকে বর্তমানে
একটা স্বপ্নের পুনঃ জাগরণ দেখে -
সবাই শুভেচ্ছার প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অভিনন্দন জানালো।
অথচ আমি সেদিন বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায়
ধুতরাফুল হাতে নিয়ে বাঁচাও বলে চিৎকার করে কেঁদেছি কয়েক কোটিবার
জীবনের নিয়ন্ত্রন রেখায় ছিল শুধু হতাশা আর ব্যর্থতার ঘোলাটে সিগন্যাল
আমি সেদিনও মৃত্যু চাপা গোঁঙানি’তে মুচড়ে ছিলাম আশা নিয়ে
পূর্ণিমার চাঁদ দেখলেই, মনে হত মৃত্যু প্রাক্কালীন সাদা কাফন;
আর শণশণ নীরবতায় চারদিকে বেজে উঠতো বিরহী ভায়োলিন।
কতটা রাত কেটেছে টেবিলে ঝিমিয়ে; ফ্লোরে ঘুমিয়ে কিংবা
চারশো কিলোমিটার দূরে থাকা সদা শংকিত বাবা-মা'র কথা ভেবে
তথ্য দপ্তরের বালাম বইতে হিসেব নেই তার;
পরিসংখ্যান মেলাতে চায়নি সরকারি রাজস্ব বোর্ড,
আমি শুধুই ছিলাম যার ভুক্তভোগী মূর্খ দর্শক।
পিতা-মাতার স্বপ্ন হত্যার দায়ে যে ছেলেটা ছিল জেল পলাতক
আমিই ছিলাম তার রাজসাক্ষী!
কে যেনো আমায় বারবার বলেছিল,
“রাত পোহালেই ফুটে উঠবে হাসিমুখ”
আজ বোধয় সেই হতাশার দ্রাঘিমারেখা প্রত্যাবর্তন করেছে সুখের ফোয়ারায়।
১৫.
জন্মদিন
জুন,
একদিন রাতে ঠিক সময় করে ঘরে ফিরবো।
নেবুউলায় স্নান করে বিশ্বাসের মুগ্ধ তাঁতে বুনে দেবো জীবনের দগ্ধ মসলিন।
আর, না ফিরলে বুঝে নিও -
ঠিকানা পাইনি বলে জোনাকী স্মানে সাঁতরাচ্ছি,
যেমন সাঁতরে বেড়ায় নীল পুকুরের গায়ে অবাধ্য গ্রাম্য মেয়েটা।
সেদিন নাহয় বড় কৌতূহলের ছলে একুশ তারিখের মোমবাতিটা জ্বালিয়ে
মস্ত বড় শহর ডিঙ্গিঁয়ে সাঁওতালী পাড়া থেকে খুঁজে এনো আমায়,
সুযোগ বুঝে গোপনে বেয়নেটের বারান্দায় ডেকে নিও।
আমি নাহয় প্রশ্নের কড়া রোদে একদিন হটাৎ করে মানুষ হয়ে যাবো,
সব ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে মিটিয়ে দেবো সব ঋণ -
শুভ জন্মদিন।
১৬.
সভ্যতার এপিঠ ওপিঠ
সবুজ ঘাস ধ্বংস করে অবাধ্য নগরায়ন,
শপিং মল থেকে শুরু করে আকাশ চুম্বি দালান
পুঁজিবাদের আট কুঠরির সেলে আটকে আছে
দারিদ্রের পকেট ভর্তি হাহাকার।
আমি তোমার ভালবাসাকে নিঁখাত পূঁজি করে
আয়ত্ত্বে আনতে চাই সেই নগরায়ন।
আর দু-হাত সামলে রেখে দেখতে চাই -
কিভাবে দিনের শেষে রোদের উষ্ণতার কাছে
পরাজয় মেনে নেয় বিকেল
আর মৃত ক্যাকটাস হয়ে উঠে সবুজ!
উগ্র দিনের শেষে স্নিগ্ধ রাত নেমে আসলেই ঝলমলে হয়ে উঠে নগর,
ঝিঁঝি’রা খুঁজে পায় ঠিকানা; আর
নলের ধারে শুয়ে থাকে কালো কুকুর গুলো।
শহর সাজতে থাকে হ্যামিলনের মত উজ্জ্বল শাড়িতে,
ক্যাফেইনের নেশায় আসক্ত যুবক
ছিরে ফেলে বিষাক্ত ক্ষতের শুভ্র ব্যান্ডউইজ।
তাম্রবাদের তমাল শাসনে চলতে থাকে প্রেমের গোপন বুলেটিন
অরণ্যের বুকে নেমে আসে শতাব্দী’র সর্বোচ্চ বিপদ সংকেত
ভাটার কুচকাওয়াজে জ্বলতে থাকে দাবানল ।
প্রকৃতি হারায় তার আপন সুবাস; তারপর আমরাও ডুবে যাই নীলে
আর ভুলে যাই সভ্যতার ইতিহাস।
১৭.
যে রাত বিভীষিকার
এখন মাঝরাত, মনে হচ্ছে চোখে বিভীষিকা নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি
সমুদ্রের মাঝপথে অহিংস প্রেত নারীদের ফাঁদে পড়া জাহাজে ড্যাকে।
চারদিকে অসূর্যস্পর্শা নারীর মত কোমল কুয়াশা
মাঝে মাঝে শিমুল তুলোর মত স্পর্শ করে আমায়,
আহ! বেশ কোমল বটে।
ঘুম জড়ানো চোখে ভেসে উঠে বিশ্বাসঘাতক সাবেক প্রেমিকার কথোপকথন!
চারপাশে সমুদ্র, জীবনের হিসেব কষতে পারছি না;
কোনদিকে মাদাগাস্কার, দক্ষিণের কুতুবদিয়া, এডেন কিংবা ম্যালবোর্ন!
বিচ্ছেদ আর ঠকে যাওয়া ভালবাসাকে অনুপ্রেরণার পুঁজি করে নিয়েছি।
জ্বলন্ত সিগারেটে ফুঁ দিয়ে তার পরিত্যক্ত অংশ ফেলি দেই নীচে।
কল্পনার প্রাচীর ভেঙে গেলে ভাবি –
সময় চলে যাচ্ছে মানমন্দিরের দ্রাঘিমারেখায়
যে সময় কাউকে ক্ষমা করেনা।
নিচে হিম শীতল জল;
যাতে ঝাঁপ দিলেই একজন ক্ষুধার্ত কবির মৃত্যু অনিবার্য।
শহর প্রদীপের সব কটা ঘর বেশ উজ্জ্বল।
পুঁজিপতি’দের’দের অর্থের কাছে সবকটা ঘর,
উম্মাদনার সাক্ষী থাকে কেবল ঝাঁড়বাতির মৃদু আলো, আর
প্রতিহিংসার চার দেয়াল,
কিনে নেয়া ভালবাসা উঠে আসে নিলামে।
১৮.
দেখা হবে হে আকাশ
একদিন তোমাদের ধূসর ধুলোর নগর ছেড়ে
নিঃশব্দ্যে চলে যাবো,
সচ্ছ জলের দেশ সুদুর সাইবেরিয়ার পথে
আকাশ যেখানে প্রত্যাশার কথা বলে।
অতিথি পাখি হয়ে উড়ে বেড়াবো জলা থেকে জলে,
একবার ভুল করে, জলে নেমে খুঁজে নিব কিশোরী শামুক
হয়তো হবে তা কোন এক মহাকাল।
কিংবা, খাম ভর্তি শামুক ভাঙ্গার কয়েক দন্ড ধারালো খন্ড।
আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করে যে ভুল একদিন কেউ করেছিল,
সেটা বোধয় আমি ছিলাম!
অনিশ্চয়তার অপছায়ায় নতুন নগরে –
ফেনার দগ্ধ তাঁতে বুনে দিব পাতিহাঁসের মুগ্ধ বাসর।
কে যেনো বলেছিল; আবার দেখা হবে!
সময় হবে মুখোমুখি বসবার।
সেটা কি শুধুই কবির লেখা ছিল?
যে বলেছিল, “আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে”
নাকি কোন কিশোরীর অভিমানি আবদার?
নিরন্তরে সব ভুলের মাশুল, অসময়ের যোগ-বিয়োগ
সমস্ত নগর জুড়ে জমা থাকা ব্যস্ত ঢেউয়ের কোলাহলে –
দেখা হবে হে আকাশ, আমি আবার আসবো তোমাদের এই নগরে।
১৯.
যে সময় হতাশার
মাঝরাতের রিডিং রুমের চেয়ারে সস্তা বিছানা ঈশ্বরকে ডেকে হয়রান
বইয়ের শক্ত মলাটের বালিশ, শরীর ঢেকে আছে পরিচিত শালে
শীত আসতেই কারো অভিমানী আবদারে বস্ত্রের নিমন্ত্রণ
মনে হয় ঝুল বারান্দায় দাঁড়ানো নিরীহ কাক।
বেশ কয়েকদিন না খেয়ে হয়ে গেছি উচ্ছিষ্ট তন্ময়
নড়ে চড়ে উঠলেই পরে যাই ফ্লোরে, হাত বাড়ালে স্পর্শ পাই বালির।
চোখের পাশে কুয়াশা জমে, আকাশে বাতাসে হতাশা আর পরাজয়ের গান
অথচ রাত পোহালেই ধেয়ে আসে আলোর আহবান।
বুকে মাঝে আশা বেঁধে পূঁজি করেছি ন্যানোকোটি বর্ণকে!
কী নিদারুণ ভাগ্য আমার!
রাত দিন বসবাস করি সঙ্গি করে পরাজয় কে।
শরীরের হিমোগ্লোবিন মিশ্রিত রক্ত আর যুবকের শার্ট ভেজা ঘাম’কে
স্বপ্নের মস্ত বড় প্ল্যাকার্ডে ঝুলিয়ে -
এগিয়ে চলার রণসঙ্গীতে চোখে মুখে বিজয়ী হবার চির প্রাচীন নেশা;
পরাজয়ের বিনিময়ে অস্ফুট ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি;
তা যা হয়, তাই দেবো;
বিনিময়ে দিতে রাজি বিশ্বাসঘাতক প্রেমিকা
কিংবা বনলতা সেনের চুল থেকে কেড়ে আনা বনজ গন্ধ।
তবুও কেউ অবহেলার লুন্ঠিত হাসি ফেলে
সোনালী সুরের দাম্ভিক কন্ঠে অনুমতি প্রত্যাশা না করেই বলুক,
“হাল ছেঁড়ো না ফড়িং”
বিজয়ীর চাপা হাসিতে চোখে মুখে অস্ফুট তরুণ রাঙানো ঠোঁটে
সজল আঁখি বাঁকা করে দেখিয়ে দিক প্রতীক্ষার নিশান,
তারপর উজ্জ্বল চাঁদের মত উঠুক ফুটে ঝলমলে হাসি।
২০.
অতীত অথবা রুপকথা
প্রাক্তন প্রেমিকা কে দেয়া বিকেলগুলো গোডাউনের এক কোনে পড়ে আছে,
বছরের অনেকদিন অতৃপ্ত কান্নাভূত চোখে সময়ের কৃতদাস হয়ে;
ক্লান্তপ্রাণে প্রেমিকের নিথর চোখে ঘৃণার মিথষ্ক্রিয়া হয়ে স্তুপ জমায় বিচ্ছেদ।
শূন্যতায় কৃপণ ঈশ্বরের হাতে নিলাম করে
ঘৃণার পরিপাটি আরো অন্ধকারে আলো ধার করে।
স্বচিত্ত্বে আকাশ'কে পুঁজি করে নিশিকন্যাদের মনে জেগে উঠে দিগন্ত!
দাম অত্যন্ত কম, লেনদেনের হিসেবে যতটা সম্ভব।
সরকারী পার্কের সস্তা জায়গায় রোদশূন্য বিকেলে কাটানো সময়
আর ঝালমুড়ির ঠোঙায় কিছু চাওয়া পাওয়ার ঠিকানায়
ধ্বস নেমে আসে খসে পড়া প্রাক্তন সাময়িকীতে।
খানিক পেছন ফিরে দেখে পুনরায় নেশাগ্রস্থ সন্ধ্যায় কেড়ে নিতে চায় সূর্যোদয়।
বালিকা সুলভ আচরণে রুপসীর চুলের মত
নীলাভ আলো এসে পরে ডান চোখের মাঝখানে
ঘৃণার স্তুপে পরে থাকা গল্পগুলো সাহিত্যের কোন নতুন অনুচ্ছেদ নিয়ে
রক্ত লাল চোখের অগোছালো পাপড়িতে
গল্প করার ডাস্টবিনে পরিষ্কার ক্যানভাস খুঁজে
আবার কাছে এসে তৈরি করে অবিহিত ভাস্কর্য!
নিউজপ্রিন্টের সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে খুঁজে ফিরে শূন্যতা।
তাই প্রতিবেদনের উগ্রবাদের চাপা কণ্ঠে
ভুলে যায় আরেক শতাব্দীর কথা ভেবে
মনে মনে ভাবে সময় গুলো ছিল বোধয় অভিশাপ কিংবা রুপকথা!
২১.
অদ্ভুত নারী
আঁতশবাজি তে আটকে থাকা সময় জমা থাকে চিরকুটের খামে
মাঝে মাঝে পুরাতন কফির মগে ডুবে যাই কবিতা ভেবে।
আমার পুরাতন টেবিল আর দেয়ালে ঝুলানো চিহ্নিত মানচিত্র,
লালদাগে তারিখ কাটা একটি পরিত্যক্ত ক্যালেন্ডার।
দিনের শেষে পরে থাকে একটা সিগারেট প্যাকেট আর পুরনো তাস কার্ড
বিকেল ঘনিয়ে এলে জানালার পাশে যাই; বড় ভয় লাগে আমার।
যদি গ্রীলে হাত রেখে আলতো করে চায়ের মগে চিনি দেয়ার মত
চিম্বুক দরদ খাটিয়ে একটু ছুঁয়ে দেয় সে!
ওপাশের নবীন কিশোরী কে রোদ শূন্য বিকেলে ছাদে উঠতে দেখে
ভালবাসার আপন চিত্ত্বে ভাবি,
কলঙ্কের দাগ মুছে এই দেহ শূন্য আলোর গায়ে মেখে নেই মৌন পরিচয়।
সে এদিকে চোখ রাখলেই নিপূন অভিনেতার মত
প্রাক্তন ম্যাগাজিনের পাতা খুলে চেয়ে থাকি,
পুরাতন জীর্ণ সংবাদ গুলো পড়ার চেষ্টা করি চোখের তৃষ্ণায়।
পশ্চিমাংশের হলুদ আলো এসে ধাক্কা খায় আমার চশমার গ্লাসে,
বেশ আগ্রহ নিয়ে ঠোঁটের দু পাশ জুড়ে আজম্মের ধোঁয়া উড়াতে চাই
বেওয়ারিশ বস্তির মত জ্বলে অঙ্গার হয়ে যাক চৌচির ঠোঁট
বর্ণমালায় দেওয়াল লিখন গুলো যদি কারো ইচ্ছের লালটিপ হয়ে যায়।
কে যায়? কোন কিশোরী হেটে বেড়ায় একলা ছাঁদে
কোন মেয়েটি রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সীমানার প্রাচীরে?
চারদিকে নির্জনতার স্বাক্ষর রেখে বিদীর্ণ কোলাহলে থামে পৃথিবীর সমস্ত ছায়াপথ
সে বড় অদ্ভুত সে নারী!
যার কামনা চাই নি, তবে বাঁকা সূতোয় উষ্ণ স্পর্শ পেয়েছি।
২২.
অসমাপ্ত হিসেব
রংবিহীন চিত্রকর্মে সাজে শহর, সময় থেকে থাকে মানমন্দিরে
কারুকাজে ফিরে তাকায় বিদীর্ণ হিসেবের ঘর।
কলমের নীপে দাগটানা খাতা, জাবেদার একপাশে আমি;
অন্যপাশের ক্রেডিট ঘরটা কারো জন্য উন্মুক্ত -
তাই জনমানবহীন সাইবেরিয়ান তৃণভূমির মত আজো খালি পরে আছে।
তোমার আমার কয়েক বছরের জাবেদার হিসেব শেষে
গত রাতে খতিয়ান মিলিয়ে দেখলাম।
আমি এখনো পরে আছি ডানের ছকটার একটু নিচে ;
আর অহর্নিশির স্পর্শ চোখে হিসেবের ফাঁসীর কাষ্ঠের মত
বাঁয়ের ঘরটা একেবারে ফাঁকা।
আরো পরে আছে অনেক দিনের জমানো কিছু অসমাপ্ত হিসাব,
লাভ-ক্ষতির পাতায় নীট লাভের ব্যবধানে চেয়ে আছে হিসেবের ইমারত
রেওয়ামিলে আয়ের ঘর দখল করার যাদের অধিকার নেই।
শূন্য পাতার বালুচরে বারুদ পূর্তি অবিরাম অমিলীত রাশিমালা
প্রাক্তন খাতায় লিখে রাখা নগদানের অবস্থা তো আরো খারাপ
প্রত্যাখ্যিত প্রেমটা কারবারি বাট্টা বলেই
নগদানের ঘরে জায়গা নেয়ার অধিকার মিলেনি তার,
যে অধিকার আমি পাইনি তোমার বুকের প্লাটফর্মে ঠাঁই নেয়ার।
তারপর, বেলাশেষে তোমার মত পাল্টালে কলঙ্কের দাগ মুছে -
ফিরে আসো ডেবিট থেকে ক্রেডিটে।
২৩.
ঘরে ফেরার গান
নীহারিকা
তোমার আকাশটা যখন আমার জন্য বরাদ্দ করে দাও
বিকেল শেষে সন্ধ্যা আসলে আমি ঘরে ফিরি খরগোশের মত।
পাড়াগাঁয়ের কালো মেয়ের চুলের মত বুক পকেটে আঁধার কে পুঁজি করি
উজ্জ্বল রাতে জেগে থাকা ইতিহাস কে সাক্ষী রেখে।
চারদিকে কল্পনার চিরাচরিত কাল্পনিক মানবীরা ভিড় করতে থাকে এখানে
সবুজের মাঝে গাঢ় আর জলপাই রঙের কোন কিশোরী
যাকে নিয়ে কারাবন্দী এ শহরের মাঝে ঘর বাধার রঙিন স্বপ্নরা,
ছায়াময় আলোতে মেঘের ভেলা ভাসিয়ে যায় অহরহ।
সে সবুজ শঙ্খিনীর সাথে কোন সমুদ্রের তীরে ভেসে আসা পরিত্যক্ত বাঁশের
ঝুলু টেবিলে একলা রাতে চাঁদ দেখার স্বপ্নরা
প্রতিনিয়ত কর্কশ ছিনতাই করে যায়।
নিষিদ্ধ দ্বীপের শব্দের অরণ্য শৃঙ্খলে আমি নাহয় গৃহত্যাগী হবো।
সময়ের তুষার ঝরে অনুমতির হত্যাকান্ডে
দণ্ডিত আসামী হয়ে নুয়ে নেবো স্পর্শ।
২৪.
আবার বছর কুড়ি পরে
আবার কোনদিন কুয়াশার চাদরে দেখা হবে তোমার আমার
যে পথে দুজন ছিলাম এক সকালের পথিক,
আমি পুনরায় সে পথের ভবঘুরে হবো কোন এক অপেক্ষার সন্ধ্যায়,
ফুসফুস থেকে হৃদপিন্ডের চারপাশে থাকবে না কোন ধোঁয়ার পেয়ালা;
কিংবা আন্দোলনের প্ল্যাকার্ড হাতে আজম্মের আহত মিছিল।
চারদিকে সবুজঘাসের দালানে ঘেরা থাকবে গোলক ধাঁধাঁ;
হটাৎ যদি চোখ জল মিশিয়ে বিস্মিত হও; হবে তা কোন এক ঘোর
সেদিন প্রিয় শাড়ির সংমিশ্রণে জড়িয়ে নিও নিজেকে
চিহ্নিত করার প্লাটফর্মের তাগিদে হাতে থাকবে নীলপদ্ম।
যে শাড়িতে হিন্দু রমনী স্নান শেষে ঠাকুরঘরে যায় ধুপকাঠি হাতে
তুমি নাহয় সেজে এসো চির বসন্তের নগরী কিটোর রুপে
যেদিন সব পাতা পড়বে ঝড়ে, হোক সে – আবার বছর কুড়ি পরে।
সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.