নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ বছরের একজন ক্ষুধার্ত মানুষ তবে সুখি ও বিস্ময়কর! যার অতীত ঘোলাটে, বর্তমান ধূসর আর ভবিষ্যৎ অন্ধকার.....
প্রিয় মৃম্মরী,
যে সময়টাতে তোমাকে লিখতে বসলাম। সন্ধ্যায় বৃষ্টি হয়েছিল, কিছুক্ষন আগে বাজার থেকে পিয়ন কাকার মত সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরেছি। সদ্য ভেঁজা পিচঢালা পথ বায়না ধরেছে পাড়াগাঁর লাজে মরে যাওয়া নবধূর মত! দুপাশের দেবদারু গাছগুলো যেনো বিমুগ্ধ নাগরিক স্ট্যাচুর মত নির্জন সাক্ষী। এখনো অবশ্য চারদিকে বিজলী চমকাচ্ছে অহরহ। বাড়ান্দায় বসে বাহিরের আদ্র পরিবেশ টা দেখছি আর তোমাকে লিখছি। আকাশের মেঘ ভাঙা আলোর রশ্মি বিনা অনুমতিতে প্রায়ই আমার ঘরে প্রবেশ করে জ্বলজ্বলিয়ে উঠে। জানো? আমারো না ভয় লাগে! কখন আবার বজ্রের ধমকে সিগারেটের মত নিভে যায় জীবনের আলোটা। কংক্রিটের পাকা উঠানে যখন আসমানি শুভ্রনিল আলোর রেখা সূর্য কিরণের মত লম্বভাবে সরল রেখা বরাবর পরে তখন তার রিপ্লেকশন এসে ধাক্কা খায় আমার চশমার গ্লাসে। জানিনা তোমার মন আজ কেনো মেঘের মত বিষণ্ণ? কি বা তার কারণ? মেঘের সাথে আমার প্রায় কথা হয়। মেঘপরীদের একজন তো তুমিও।
মিম, বাবা বাসায় নেই। আম্মু আজ চারদিন হল বড় আপুর বাড়ি বেড়তে গেছে। ঠান্ডা লাগছে। ঘরের বড় বধূ আকাশ কে বলেছি এক মগ কফি বানিয়ে দিতে। খুব মিস করছি তোমায়। দেখো আমি কেমন গর্দভ! কেমন আছো সেটাই জানা হল না। ভালো আছো নিশ্চয়? এই বেজার জীবনে না পাচ্ছি চাকরী আর না পাচ্ছি তোমায়। জীবনানন্দের মত হাটছি পথে পথে।
আচ্ছা মিম তোমার কি আমার দুস্ত আশিষের কথা মনে আছে? বড় ফ্রেমের চশমা পড়া ছেলেটা। গত সপ্তাহে তার ছোট বোন চিত্রার বিয়ে গেলো। আশিষ কেবল আমায় নিমন্ত্রণ করেনি তারসাথে বিয়ের অনেক কাজের দায়িত্ব ও আমার উপরে চাপিয়ে দিয়েছি। ঐ বিয়েতে তরুন উপন্যাসিক সাদাতের সাথে দেখা। বেচারা খুব ভাল মানুষ। কলকাতায় থাকেন। আমায় কার্ড দিয়ে বলেছেন সেখানে গেলে উনার সাথে যেনো অবশ্যই দেখা করি। আলাপের এক ফাঁকে তোমার কথা বললাম উনাকে। বায়না ধরে বলেছে তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেনো উনার মস্ত বড় দালান বাড়িটায় দুরাতের জন্য হলেও বেড়াতে যাই। বেচারা এত করেই যখন বলল ভাবছি একবার নাহয় দুরাত কাটিয়ে'ই আসবো। অন্য কোন কারণে না হলেও আমাদের মধুচন্দ্রিমার রাতটা তো কাটানো যায়। কি বল? আজ সন্ধ্যায় পুকুর পাড়ে গিয়েছিলাম, ঠিক যেখানটায় তুমি আঁচল বিছিয়ে বসতে সেখানে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে মৃদু আলোয় ছলছল শব্দ করা পানির দিকে তাঁকিয়েছিলাম। এছারা আর কি করবো বল? পানির উপরিভাগে একটা হাসের ছানা ভাসছে, ঠিক আমার মতই একা মনে হল তাকে। সঙ্গীহীন জীবন হয়তো তার ক্ষেত্রে ও বহমান। মনে মনে নিজের সাথে করেছি কথোপকথন। আর বলেছি,
"প্রতিদিন স্নানে নেমে এসো সলাজ পুকুরে
চুল থেকে ঝরাও মুক্তোদানা
আমিতো সেই কবেই বেছে নিয়েছি হাসের জীবন।"
আরেকটা কথা শোন, আমার বড় বোনের মেয়ে রোদেলা তোমার কথা জানতে চেয়েছে। আমি বলেছি বেশ ভাল আছো। তোমার আমার সম্পর্কের কথাটা রোদেলা বেশ ভাল ভাবেই জানে। এছাড়া আর কেউ না। আরো বলেছে তার মামিকে খুব মিস করছে মেয়েটা। সে এবার মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে তাই তাকে উপহার স্বরুপ আমি একটি হাত ঘড়ি কিনে দিয়েছি। তুমি আগামী তে রোদেলাকেও একটা চিঠি লিখো। মেয়েটা বেশ খুশি হবে। জানো? তুমি পাশে নেই বলে তোমার ছোট বোন লিমা আমায় ক্ষুদে চিরকুট পাঠায়। বেশ ফাজিল হয়ে গেছে ও আজকাল। চিরকুটে দুয়েক লাইন ছন্দ সাজিয়ে কবিতাও লিখে। আর তা কেমন হয়েছে তার মন্তব্য করতে বাধ্য করে আমায়। মেয়েটা আড়ালে খুব ভালবাসে বোধয়! কিন্তু জানেনা আমিযে তোমার খোঁপায় জীবন বেঁধেছি মরন বেঁধেছি।
ইতি,
তোমার মুদ্রা।
আমাকে তুমি মুদ্রা বলে ডাকতে। অবশ্য গভর্নরের সাক্ষরের নিচে কাগজে ক্ষুদ্রাংশ কে যা আমরা অর্থের পরিমাপ তত্ত্বের ভিত্তিতে লেনদেন করি সে নামটা কেনো দিয়েছো তার কারন আজো খুঁজে পাইনি। কে যানে! হয়তো দু-দন্ড শান্তির লেনদেনের তাগিদেই এই নামটা দিয়েছিলে।
কুমিল্লা, ২৭শে ভাদ্র ১৪২৩
সন্ধ্যা ০৮.৩৯।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
"দুপাশের দেবদারু গাছগুলো যেনো বিমুগ্ধ নাগরিক স্ট্যাচুর মত নির্জন সাক্ষী। "
-২ পাশে দেবদারু গাছ, কোথায় সেই রাস্তা?