![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানতে চাই, জানাতে চাই মানুষের অনুভুতির এপিঠ ওপিঠ
আপনাদের পরিচিতদের মাঝে নিশ্চয় এমন অনেকেই আছেন যারা যেখানেই যান আসরের মধ্যমনি হয়ে যান। এমন এমন সব ফতোয়া ছাড়েন যে আসরের সবাই হাসি মুখে তার মুরিদ হয়ে যান। অথচ আপনি হয়তবা অনেক কিছু করতে পারেন যা ঐ পীর সাহেব পারেন না। কিন্তু কেউই আপনাকে দাম দিচ্ছে না। দাম দিচ্ছে সেই পীর সাহেবকে, যে নাকি তেমন কিছুই করতে পারে না। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক।
এই জাতীয় আসর জমানো বিদ্যারও হয়ত প্রয়োজন আছে। কার্যকরী টিপস প্রতিদিনই তো দিচ্ছি, আরো দেব। আজ আপনাদের জন্যে থাকছে এমন কিছু তথ্য যা চলচ্চিত্র র্নিমাণের ক্ষেত্রে কোন কাজে না আসলেও আসর জমানোর ক্ষেত্রে হয়ত আপনাদের সহায়তা দেবে।
1. বিশ্বের প্রথম চলচ্চিত্র প্রর্দশনী হয় ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর । লুমিয়ের ব্রাদার্স র্নিমিত এই চলচ্চিত্রটি প্রর্দশিত হয় ফ্রান্সের প্যারিস শহরে। এটি কোন কাহিনি চিত্র ছিল না। অনেকটা ডকুমেন্টারীর মত কিছু খন্ড চিত্র ছিল।
2. দি লাস্ট কিস ঢাকায় নির্মিত প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র (১৯২৯)।ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্যরা এই চলচ্চিত্র র্নিমান করেন।
3. “আলম আরা” (১৯৩১) এই উপমহাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সবাক চলচিচ্চত্র।
4. আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত “মুখ ও মুখোশ” (১৯৫৬) বাংলাদেশের প্রথম বাংগালী র্নিমিত সবাক পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র।
5. রবীন্দ্রনাথের কাহিনী নিয়ে র্নিমিত চলচ্চিত্র “বিষ্ণু মায়া”(১৯৩২)-তে গায়ক আব্বাসউদ্দিন অভিনয় করেছিলেন।
6. “ধ্রুব” (১৯৩৪) নামের একটি চলচ্চিত্রে কবি নজরুল একাধারে অভিনেতা, গায়ক ও পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এটি যৌথ পরিচালনার সিনেমা ছিল।
7. “পাতালপুরি”(১৯৩৫) চলচ্চিত্রে কবি নজরুল সংগিত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
8. ভারতের আগে বাংলাদেশে (তৎকালিন পাকিস্থানে) টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হয়। শিল্পী মোস্তফা মনোয়ারের হাতে এই দেশের টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়।
9. যে চলচ্চিত্রে বানিজ্য ও চিন্তাশীলতার মিশ্রণ ঘটে সেই চলচ্চিত্রকে সুডো আর্ট (psedo Art) গোত্রীয় চলচ্চিত্র বলে।
10. আমেরিকার এডউইন এস র্পোটার প্রথমবারের মত খন্ড চিত্রগুলোকে এক সাথে জোড়া দিয়ে পূর্ণাংগ একটি কাহিনী চিত্র র্নিমান করে। এ কারণে তাকে সম্পাদনা পদ্ধতির জনক বলা হয়। পোর্টার তার সম্পাদনায় প্যারালাল কাটিং ব্যবহার করে। “লাইফ অফ এন আমেরিকান ফায়ারম্যান” (১৯০২) এবং “দি গ্রেট ট্রেন রবারি” (১৯০৪) তার উল্লেখযোগ্য দুটি কাহিনী চিত্র।
11. আমেরিকার ডেভিড ওয়ার্ক গ্রিফিথ ক্লোজ আপ, ফেড ইন, ফেড আউট, হাই এংগেল, লো এংগেল, সফট ফোকাস, লাইট ও রিফ্লেক্টর বোর্ডের ব্যবহার ইত্যাদি অনেক কিছু আবিস্কার করে। এ কারণে তাকে চলচ্চিত্রের ব্যাকরণের আবিষ্কারক বলা হয়। “দি বার্থ অফ এ নেশন” (১৯১৫) এবং “ইন টলারেন্স” (১৯১৬) তার দুটি বিখ্যাত সৃস্টি।
12. রাশিয়ার র্সাগেই আইজেনস্টাইন সম্পাদনার ক্ষেত্রে মন্তাজ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে শিল্পের প্রয়োগ ঘটান। বলা হয়ে থাকে, আমেরিকার ডেভিড গ্রিফিথ চলচ্চিত্রের ব্যাকরণ র্নিমাণ করেছে। আর রাশিয়ার র্সাগেই আইজেনস্টাইন চলচ্চিত্রে শিল্পের প্রয়োগ শিখিয়েছে।
13. আইজেনস্টান মোট ৬ টি চলচ্চিত্র র্নিমান করেছে। তার মধ্যে একটি চলচ্চিত্র ছিল সবাক। যার নাম “আলেকজেন্ডার নোভস্কি”। তার সবচেয়ে বিখ্যাত সিনেমা হচ্ছে “ব্যাটেলশীপ পটেমকিন”-যাকে ডিকেটরস বাইবেল বলা হয়।
14. আইজেনস্টাইন প্রথম জীবনে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। পাশাপাশি তিনি থিয়েটারে কাজ করতেন।
15. লেখক ম্যাক্সিম গোর্কির সুপারিশে ১৯১৯ সাল থেকে রাশিয়ায় চলচ্চিত্র র্নিমাণকে জাতীয়করণ করা হয়। মানে সরকার সমস্ত সিনেমা নির্মাণের ব্যায় ভার বহন করতে শুরু করে।
16. জার্মানের বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব হিটলারের উদ্যোগে শুরু হয়।
17. কান (ফ্রান্স), বার্লিন (জার্মান) বা ভেনিস (ইটালী) চলচ্চিত্র উৎসব সমগ্র বিশ্বের সিনেমাকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এই তিনটি উৎসব বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানীত আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
18. অস্কার বা একাডেমি এওয়ার্ড শুধু মাত্র আমেরিকা, ইউকে ও কানাডা নির্মিত চলচ্চিত্রের মাঝেই সীমাবদ্ধ। যদিও বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র নামে একটি পুরস্কার সেখানে প্রদান করা হয় কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সেরা অভিনেতা, সেরা সংগিত বা সেরা কাহিনী এই জাতীয় কোন ক্যাটাগরি অস্কারে নাই। সারা বিশ্বের জন্যে শুধুই একটা মাত্র পুরস্কার। বাকি সব আমেরিকা, ইউকে ও কানাডার সিনেমার জন্যে।
19. অস্কার লাইফ টাইম এ্যাচিভম্যান্ট এ্যাওয়ার্ড এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ জনকে দেয়া হয়েছে। চার্লি চ্যাপলিন (হলিউডের অভিনেতা ও পরিচালক), ক্যারি গ্রান্ট (হলিউডের অভিনেতা), গ্রেটা গার্বো (হলিউডের অভিনেত্রী), একিরা কুরোশোয়া (জাপানী পরিচালক) ও সত্যজিৎ রায় (ভারতীয় পরিচালক)। এই এ্যাওয়ার্ডটি নির্দিষ্ট কোন সিনেমার জন্যে নয় বরং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তির সারা জীবনের কর্মকান্ডের জন্যে প্রদান করা হয়। এই পুরস্কার প্রতি বছর দেয়া হয় না। পুরস্কার দেয়ার মত যোগ্য কাউকে পেলেই তবে দেয়া হয়। আর একারণে এটি অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন একটি পুরস্কার। একে চলচ্চিত্রের নবেল বলা হয়। আমরা প্রতি বছরের দেয়া অস্কার এ্যওয়ার্ডের সাথে “অস্কার লাইফ টাইম এ্যাচিভম্যান্ট এ্যাওয়ার্ড”-কে গুলিয়ে ফেলি।
20. “লশেমন” একিরা কুরোশোয়ার প্রথম ছবি যা অস্কার পুরস্কার পায়। এরপরে কুরোশোয়ার আরো অনেকগুলো সিনেমা অস্কার পায়। শুধু তা-ই না কুরোশোয়ার একাধিক ছবি হলিউডে রিমেক করা হয়।
21. একিরা কুরোশোয়ার পূর্ব পুরুষরা সামুরাই যোদ্ধা ছিল।
22. সত্যজিৎ রায় প্রথম জীবনে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার ছিল। পেশাগত কারণে ইউরোপে গিয়ে ভিত্তোরিও ডি সিকা-এর “দি বাইসাইকেল থিপ” ও আরো বেশ কিছু সিনেমা দেখে চলচ্চিত্রে জগতে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
23. সত্যজিৎ রায় তার “পথের পাঁচালী” চলচ্চিত্রটি র্নিমানের জন্যে সরকারী অনুদানের আবেদন জানালে কতৃপক্ষ তার সেই আবেদনের ফাইল রোডস এন্ড হাইওয়েস ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পথের পাঁচালী নামটি দেখে তারা মনে করেছিল এটা রাস্তা-ঘাট র্নিমান সংক্রান্ত কোন কিছুর আবেদন।
24. সত্যজিৎ রায় ভীন গ্রহের প্রাণী নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্ক্রীপ্ট লেখার পরে সেটা তার হোটেল রুম থেকে গায়েব হয়ে যায়। সত্যজিৎ রায় তখন ইউরোপের কোন এক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেয়ার জন্যে গিয়েছিল। তার কিছুদিন পরেই স্টিভেন স্পিলবার্গ তার বিখ্যাত সিনেমা “ই. টি.” নির্মাণ করে, যার সাথে সত্যজিতের কাহিনির সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায়।
25. সত্যজিৎ রায়ের বাবা বিখ্যাত ছড়াকার সুকুমার রায়, সুকুমার রায়ের বাবা আরেক বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়।
26. ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে যে কয়জন ব্যক্তি অমিতাভ বচ্চনের চেয়ে লম্বা তার মধ্যে সত্যজিৎ রায় একজন।
27. হলিউডের পরিচালক চার্লি চ্যাপলিন ও আলফ্রেড হিচকক দুজনেই বৃটিশ বংশদ্ভুত ছিল।
28. চার্লি চ্যাপলিন ব্যক্তি জীবনে অসাধারণ সুপুরুষ ছিল এবং মোট চারটি বিয়ে করেছিল।
29. আফ্রেড হিচককের “রোপ” সিনেমাটিতে সর্ব মোট ৯টি শট রয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে রিহার্সেল করার পরে এক টানে কোন রকম কাট না করে সিনেমাটির সুটিং করা হয়। মোট নয় রিলের এই সিনেমাটির দৈর্ঘ ছিল ১ ঘন্টা ২১ মিনিট।
30. ডিজিটাল যুগে আগে চলচ্চিত্রে “রিল” বলে একটি শব্দ ছিল যা এখন ব্যবহার করা হয় না।৩৫ ক্যামেরার পিঠে উটের জোড়া কুঁজের মত একটা ম্যাগজিন লাগানোর হত। সেই ম্যাগজিনের ভিতরে ফিল্ম প্যাঁচানো থাকতো। এই প্যাঁচানো ফিল্মকে রিল বলা হত। এক রিল মানে কম বেশী ১ হাজার ফুট র্দৈঘের ফিল্ম। আর ফুট থেকে ফুটেজ শব্দটি এসেছে। যা এখনও ব্যবহার করা হয়।
31. ২০ শতকের শুরুর দিকে মস্কো থিয়েটারের পরিচালক স্ট্যান্সলোভস্কি নাট্যকলার উপরে যা কিছু অবিস্কার করেছে তার অধিকাংশই এই উপমহাদেশের ভরত মুনি(৫০-১০০ খৃষ্টপূর্বাব্দ) তার নাট্যকলা সংক্রান্ত গ্রন্থে লিখে গেছে।
32. প্রাচীন নাট্য শাস্ত্রে নাচ এবং নাটককে সমার্থক ধরা হত। বোধ করি সেখান থেকেই আমাদের চলচ্চিত্রের সংগিত র্নিভরতার শুরু।
33. রাশিয়ার নাগরিক হোরেশিম ল্যাভেডব প্রথম বাংলা নাটক রচনা করেন। এর আগে এই বাংলায় সংস্কৃত ভাষা র্নিভর নাটক রচিত হত। তার রচিত দুটি নাটকের নাম হল “দি ডিসগাইস” এবং “লাভ ইজ দা বেস্ট ডক্টর”।
34. দুটি টেলিভিশন সম্প্রচার প্রদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ নাম-
NTSC-National Television system commission
PAL-Phase Alternating Line
35. বাংলাদেশে PAL আর আমেরিকায় NTSC ব্যবহার করা হয়। ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে এই দুই পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটছে। সেই জায়গায় HD পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হচ্ছে।
আজ এই পর্যন্তই। চলচ্চিত্র, টিভি ও মঞ্চ মিলিয়ে কিছু তথ্য দিলাম। যদি আপনাদের ভাল লাগে তবে ভবিষ্যতে আরো দেয়া যাবে। তবে আবারও বলছি উপরের এইসব তথ্য চলচ্চিত্র র্নিমানের ক্ষেত্রে বিন্দু মাত্র কাজে আসবে না। আমি আমার থিয়েটার জীবনের মাঝামাঝি এসে হোরেশিম ল্যাভেডব সাহেবের নাম জেনেছিলাম। বিশ্বাস করেন এটা জানার পরেও আমার অভিনয় দক্ষতা আগের মতই থেকে গিয়েছিল, বিন্দু মাত্র উন্নতি হয়নি। যা কিছু উন্নতি হয়েছে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমেই হযেছে, তথ্য উপাত্ত্ব মুখস্থ করে নয়।
©somewhere in net ltd.