নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

ইহতিশাম আহমদ

জানতে চাই, জানাতে চাই মানুষের অনুভুতির এপিঠ ওপিঠ

ইহতিশাম আহমদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্র র্নিমাণ টিপস-৮ লেন্স-ওয়াইড এংগেল

১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:২১



লেন্স কি? কিভাবে তা বানায়? কেন এই লেন্সটা এই রকম? এই জাতীয় অনেক আলোচনা করা যেতেই পারে। কিন্তু যেহেতু আপনারা বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার হবেন না, হবেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, তাই কোন লেন্স দিয়ে কি কি কাজ করা যায় বা কোন লেন্সের কি বৈশিষ্ট তাই সহজ ভাষা জানানোর চেষ্টা করব।

লেন্স মূলতঃ তিন প্রকার। ওয়াইড এংগেলে লেন্স, নরমাল এংগেল লেন্স ও টেলিফটো লেন্স।এই পর্বে আমরা ওয়াইড এংগেল লেন্সের বৈশিষ্ট ও ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।

পরিচিতি-
ফুল ফ্রেম ক্যামেরার ক্ষেত্রে মোটামোটি ভাবে ১৭ থেকে ৩৫এমএম এবং ক্রপ সেন্সর ক্যামেরার ক্ষেত্রে মোটামোটি ভাবে ১৫এমএম থেকে ২৪এমএম মাঝে যে সমস্ত লেন্স পাওয়া যায় সে সমস্ত লেন্সকে ওয়াইড এংগেল লেন্স বলে। ১৬এমএম (ফুল ফ্রেম) বা ১০ এমএম (ক্রপ সেন্সর) এর নিচের লেন্সগুলোকে আল্টা ওয়াইড এংগেল লেন্স বলা যেতে পারে। মানে ওয়াইড এংগেলের ভাল খারাপ সকল বৈশিষ্ট এই লেন্সগুলোর মাঝে অতিরিক্ত মাত্রায় পাওয়া যায়।

এখানে লেন্সের পরিমাপ দেয়ার সময় “মোটামোটি ভাবে” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ ১৭থেকে৩৫এমএম-এর মধ্যে সব মাপের লেন্স বাজারে কিনতে নাও পাওয়া যেতে পারে। তবে এই মাপের মধ্যেযতগুলোলেন্স পাওয়া যাবে সবগুলোই ওয়াইড এংগেল লেন্স। সাধারনতঃ ৩৫ এমএম (ফুল ফ্রেম) এবং ১৫ এমএম (ক্রপ সেন্সর) বাজারে পাওয়া যায়। আল্টা ওয়াইডের ক্ষেত্রে ১৬এমএম (ফুল ফ্রেম) এবং ফিসআই লেন্স পাওয়া যায়।

বৈশিষ্ট-
খালি চোখে কোন বস্তুটিকে যতটা দূরে দেখা যায় ওয়াইড এংগেল লেন্স দিয়ে সেই বস্তুকে তুলনামূলক ভাবে বেশী দূরে দেখা যাবে। আর তাই এই লেন্স দিয়ে তোলা ছবির এংগেল অফ ভিউ তুলনামূলক ভাবে বিস্তৃত হয়ে থাকে। বিষয়টাকে একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। মনে করেন, আপনার সামনে একটি গাছ, গাছের পিছনে একটা নদী, নদীর মাঝে একটা নৌকা, নদীর ওপারে একটা গ্রাম, গ্রামের শেষ মাথায় একটা তালগাছ আছে। এ সবের পুরোটাই আপনি এক ফ্রেমে ধরতে পারবেন ওয়াইড এংগেল লেন্স দিয়ে তোলা ছবিতে।

এই লেন্সের ডেপথ অফ ফিল্ড বেশী হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই লেন্স দিয়ে তোলা ছবির অধিকাংশ বা পুরোটাই ফোকাসড হয় মানে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। যেহেতু অধিকাংশই ফোকাসে থাকছে সুতরাং এই লেন্স দিয়ে ফোকাস শিফটিংএর খেলা দেখানো সম্ভব নয়। অপর দিকে হাইপার ফোকাল ডিসটেন্স মানে একই সাথে কাছের কোন বস্তু থেকে শুরু করে অসীম দূরত্বের কোন বস্তুকে পর্যন্ত স্পষ্ট করে দেখানের সম্ভব।

এই লেন্স দিয়ে তোলা ছবির একটি বড় বৈশিষ্ট হচ্ছেকাছের বস্তুকে বাস্তবের চেয়ে বেশী বড় আর দূরের বস্তুকে বেশী ছোট দেখায়। শুধু তা-ই নয় দূরের বস্তুগুলোর আকার জ্যামিতিক হারে ছোট হতে থাকে। মানে দশ মিটার দূরের বস্তুকে যতটা ছোট দেখাবে বিশ মিটার দূরের বস্তুকে তার দ্বিগুণ ছোট দেখানোর কথা থাকলেও দেখাবে চার গুণ ছোট। ত্রিশ মিটার দূরেরটা দেখাবে ৮ গুণ ছোট।এতে করে ছবির মাঝে এক ধরনের গভীরতা বা গতিশীলতা সৃষ্টি হলেও যে কোন উলম্ব রেখার উপরের অংশ দু পাশ থেকে কেন্দ্রের দিকে একটু একটু করে বেঁকে যেতে থাকে।

নিশ্চয় খেয়াল করেছেন তাল গাছ বা কোনমিনার বা টাওয়ার জাতীয় স্থাপনাগুলোর উপরের দিক বাস্তবে সোজা হলেও অনেক ছবিতে সোজা দেখায় না।কারণটা আর কিছু না- ওয়াইড এংগেল লেন্স। তার মানে যে দৃশ্যে যোজন বিস্তৃত ধান ক্ষেত বা যতদূর চোখ যায় শুধু কংক্রীটের দালানের পর দালান অথবা এলোমেলো ঝোপ ঝাড় বাড়ি ঘর রয়েছে সেই দৃশ্যের জন্যে ওয়াইড এংগেল লেন্স খুবই ভাল। খালি চোখের চেয়ে লেন্সের চোখে সেই দৃশ্যে অনেক গতিশীলতা পাবেন। কিন্তু যদি ফ্রেমে লম্বালম্বি বা খাড়া এক বা একাধিক সোজা বস্তু থাকে তবে নিশ্চিত থাকতে পারেন সেটাকে আপনি আর সোজা অবস্থায় পাবেন না। ধীরে ধীরে দূরের বস্তুগুলো দুই পাশ থেকে কেন্দ্রের দিকে চেপে আসবে।

এই লেন্সের আরেকটি বৈশিষ্ট হচ্ছে বেশী কাছের বস্তুর আকার বিকৃত হয়ে যায়। যেহেতু এই লেন্সে কাছের বস্তুও দূরে দেখায় তাই কোন কিছুর ক্লোজ শট নিতে গেলে সেই বস্তু বা ব্যক্তির খুব কাছে যেতে হয়, ফলে বস্তু বা ব্যক্তির আকার স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা লম্বাটে বা চ্যাপ্টা দেখায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন হরর ফিল্ম বা চেহারা বিকৃত করার প্রয়োজন আছে এমন দৃশ্য ছাড়া ওয়াইড এংগেল লেন্স দিয়ে ক্লোজ শট নেয়া ১০০% হারাম একটি কাজ। আর যদি সুপার ওয়াইড এংগেল লেন্স ব্যবহার করেন তো সর্ব ক্ষেত্রেই বিষয় বস্তুর আকার কিছু না কিছু বিকৃত হবেই। এংগেল অফ ভিউ অনেক বিস্তৃত বলেসুপার ওয়াইড এংগেল লেন্স সাধারনত সিসি ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তুলনামূলক কম আলোতেও এই লেন্স দিয়ে তোলা ছবিতে চমৎকার এক্সপোজার পাওয়া যায়। অর্থাৎ একই সার্টার স্পিড, এ্যাপারচার ও সেন্সর সেনসিটিভিটিতে নরমাল এংগেল বা টেলিফটো লেন্সের চেয়ে কম আলোতেই ঝকঝকে ছবি তোলা যায়।

ব্যবহার-
এই লেন্স দিয়ে শুট করা তুলনামূলক ভাবে অনেক সহজ। আগেই বলেছি এর ডেপথ অফ ফিল্ড বেশী হওয়াতে ফ্রেমের প্রায় অধিকাংশ জায়গাই ফোকাসে থাকে। সুতরাং ফোকাস ঠিক মত আছে কি নাই সেই চিন্তার ঝামেলাও কম। তাছাড়া সামান্য ঝাঁকুনির প্রভাব ছবিতে খুব একটা পড়ে না বিধায় হাতে ক্যামেরা নিয়ে শুট করাটা অনেক সহজ। ট্রাইপড ব্যবহার করতেই হবে অথবা ক্যামেরায় হাত সাংঘাতিক পাকা হতে হবে নয়ত হাত কেঁপে যাওয়ার কারণে ছবি ঝাপসা হয়ে যাবে, এমন টেনশন এই লেন্সর ক্ষেত্রে অনেক কম। তার অর্থ কিন্ত এই নয় যে আপনি ডিগবাজি খেতে খেতে শুট করলেও ঝকঝকে তকতকে থাকবে।

লংশট, মাস্টার শট, ওয়াইড শট, টপ শট, বার্ডস আই ভিউ ইত্যাদি শট নেয়ার সময় ওয়াইড এংগেল লেন্স ব্যবহার হয়ে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে মিড শট নেয়ার জন্যেও এই লেন্স ব্যবহার করা হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.