নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাংবাদিক ইলিয়াছ রিপন

সাংবাদিক ইলিয়াছ রিপন

ইলিয়াছ রিপন

সাংবাদিক ইলিয়াছ রিপন মীরসরাই প্রতিনিধি দৈনিক ভোরের ডাক বার্তা সম্পাদক পাক্ষিক খবরিকা ই-মেইল ঃ [email protected]

ইলিয়াছ রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালো মেঘে ঢেয়ে গেছে অবরোধের বোমায় নিহত এনামের সংসার!

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩১

কালো মেঘে ঢেয়ে গেছে অবরোধের বোমায় নিহত এনামের সংসার!

▓▓▓▓ ইলিয়াছ রিপন ▓▓▓▓

মেঘ যেমন ছুটে যায় আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে -তেমনি পরম সুখের দিন কাটছিল এনাম-নাঈমার জীবন। গত বছরের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল।

এনাম-নাঈমার ঘরে যখন ফুটফুটে কন্যা সন্তান মারিয়া বিন্তে এনাম ফারিয়া জন্ম নেয় তখন সুখ যেন আকাশ ছোঁয়া। জীবনের ফ্রেমে মারিয়া কি কখনো ভেবেছিল আকাশের মেঘের ছুটাছুটি না থামলেও হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে নিমেশেই থেমে যাবে তার অতি আদরের জীবন।

এনাম-নাঈমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী তথা বছর ঘুরে পেরিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আসতে এখনো প্রায় এক মাস বাকি। কিন্তু ভালোবাসা দিবসের আগেই নিভে গেল নাঈমার প্রিয়তম এনামের জীবন প্রদীপ। আর অন্ধকারে মারিয়া প্রতিনিয়ত ঘুরেফিরে তার বাবাকে খুঁজে ।


মাত্র ১১ মাস আগে ভেলেন্টাইন ডে’তে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন সাতকানিয়ার এনাম হোসেন (৪০)। অনেক স্বপ্ন নিয়ে মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থী নাঈমা সুলতানার সঙ্গে যুগলবন্দী হন তিনি। বিয়ের দশ মাস পর তাদের কোলজুড়ে আসে একমাত্র কন্যা সন্তান মারিয়া বিন্তে এনাম ফারিয়া। আর আজ বছর না ঘুুরতেই বিপণন কর্মী এনামের স্বপ্নময় রঙিন জীবন নীল হল দেশের আবেগবর্জিত রাজনৈতিক অবরোধের কবলে পড়ে।


সোমবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় (বিএসআরএম গেট) এলাকায় চলন্ত ট্রাকে অবরোধকারীরা পেট্রোল বোমা ছুঁড়লে মুখ জ্বলসে এবং মাথা থেঁতলে এনাম নিহত হন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছমদর পাড়া গ্রামে। সে গ্রামের মৃত নূূরুর ছাফার ছেলে।

পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এনাম (মেঝ)। বড় ভাই দিদার হোসেন বেকার, ছোট ভাই ফয়সাল হোসেন প্রবাসে অবৈধভাবে জীবন যাপন করছেন।
গত বছর ১৪ ফ্রেবুয়ারী একই পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মাওলানা শফিকুর রহমানের মেয়ে নাঈমা সুলতানার সঙ্গে এনামের বিয়ে হয়। নাঈমা বর্তমানে স্থানীয় সাতকানিয়া আলীয়া মাদরাসায় ফাজিলের শিক্ষার্থী। বিয়ের দশ মাস পর গত ডিসেম্বর মাসে তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান ফারিয়া।

বুধবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে এনামের কর্মস্থল চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের মদিনা ক্লথ স্টোরে গেলে প্রতিষ্ঠানের মালিক ফরিদুল আলম জানান, ‘গত বুধবার (৭ জানুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে এনাম টঙি তুরাগ তীরে যায়। সেখান থেকে আখেরি মুনাজাতশেষে সোমবার ভোর বেলায় কর্মস্থলে পৌঁছায়।

পরে ওই দিনেই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কাজকে গুরুত্ব দিয়ে বকেয়া টাকা কালেকশন করতে মিরসরাইয়ে গিয়ে শেষতক এনাম ফিরে আসে লাশ হয়ে।’
নগরীর অভিজাত ওই বস্ত্র বিতানে কর্মরত এনামের কয়েকজন সহকর্মী জানান, ‘দীর্ঘ ২০ বছর এনাম ওই প্রতিষ্ঠানে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মরত ছিলেন।’

সহকর্মীদের সাথে তাঁর শেষ কথাটুকুর বর্ণনা করতে গিয়ে এনামের সহকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান ও কুতুব উদ্দিন জানান, ‘এনাম সবসময় বলতো মদিনা ক্লথ স্টোরের সকল স্টাফকে মেয়ের আকিকা অনুষ্ঠানে দাওয়াত করবে, ইজতেমা থেকে ফিরেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) গেটে নিজের ভগ্নিপতির লাশ গ্রহণ করতে অপেক্ষা করছিলেন এনামের স্ত্রী নাঈমার বড় ভাই মুহাম্মদ নুরুল হুদা। বোনের সুন্দর দাম্পত্য জীবন অকালে বিপন্ন হওয়ায় তিনি যেন বাকরুদ্ধ তবুও এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে হুদা বলেন, অবরোধের কারণে আমার বোনটা অকালে বিধবা হল, কোলের অবুঝ শিশু ফারিয়া এতিম হল।

এই বিচার মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমি রাখলাম। আল্লা]হ্ যেন এর সুবিচার করেন।’

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে এনামের লাশ মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য চমেকে পাঠিয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তানন্তর করা হয়। রাত ৮টায় নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার সংলগ্ন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল মাঠে নিহত এনামের প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর সাতকানিয়া গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় নামাজের জানাজাশেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.