নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius)- The Golden Ass(ধারাবাহিক) অনুবাদ

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:২৬

লুসিয়াসের রুপান্তর- চতুর্থ অধ্যায়

মিলোর বাসার কাছে এসে দেখি তিনজন লোক বাড়ীর গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে-আমাকে দেখেও ভঁয় পেল না তারা।এ অবস্থায় সাথের তলোয়ারটা দিয়ে ওদের আক্রমন করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না আমার,হৈচৈ শুনে এ ঘুমভাঙ্গা চোখে ফটিস বের হয়ে একফাঁকে আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল বাড়ীর ভেতরে।ক্লান্ত শরীর,ক্লান্ত তখন অযথার যুদ্ধে,যেন ড্রাগনকে যুদ্ধে হারানো হারকিউলেস আমি,জয়ের আনন্দ আত্মহারা,ক্লান্তি কোন এক ফাঁকে আমাকে নিয়ে গেল ঘুমের দেশে।

সকালের আলোর হাসি জানান দিল একটা নতুন দিনের,রাতের গ্লানি ছিল না আর পৃথিবীর চোখে,এ যেন এক নতুন একটা পৃথিবী।মনে ছড়ানো তখনও গত রাতের কথা,তিন তিনটা রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে,বাইরে,কি যে বলা যায়,কেই বা বিশ্বাস করবে কথাগুলো আমার।

ভাবনায়,ভঁয়ে বেশ অস্থির আমি-জানি না কখন যে আইনের অন্ধ চোখটা এসে টেনে নিয়ে যাবে আমাকে জেলখানার ঘরে-একাকীত্বের ঐ চরম নির্জনতায়।ভয়টা শেষমেষ সত্যিই হলো,দেখি কজন পুলিশ তখন মিলোর বাসার দরজায় ধাক্কাধাক্কি করছে।বাড়ীর ঘরগুলো একের পর এক খুঁজে-আমাকে হাত কড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে গেল বাজারে।যদিও বিচার হওয়ার কথা,জেল ঘরের পাশের দালানটায়,সেখানে না নিয়ে কেন যে ওরা আমাকে বাজারে নিয়ে গেল,এটা বুঝে উঠতে পারিনি,আমি।

সারা বাজার ঘোরানোর পর আমাকে পুলিশরা আমাকে নিয়ে গেল বিচারকের ঘরে-কজন লোকজন বসে ছিল সেখানে,তারা চীৎকার করা আরম্ভ করলো,অস্থির সবাই বিচার পর্বে ওতো দেরী হওয়ার কারণটা কেউ বুঝে উঠতে পারছিল না।তা ছাড়া সকলের দাবী ছিল বিচার হয় যেন বাজারের লোকজনের মাঝে।বিচারক তখনও চুপচাপ বসে ছিল-সব শোনার পর বিচারকের কথামত,পুলিশেরা আসামী,আমাকে নিয়ে গেল বাজারের দিকে।

বেশ বড় একটা বাজারঘর-সুন্দর কারুকাজের বেশ কটা স্তম্ভ দিয়ে সাজানো।বেশ কজন লোক মেঝেতে আসর করে বসেছিল-কজন বসে ছিল দেয়ালের আশেপাশে,বসার জায়গাগুলো বেশকিছু সময় ধরে দখল করা,জানালার বাইরেও ছিল আরও কিছু লোক।

আদালতের কেরানী-ঘটনাটা মোটামুটি জেনে নিয়ে,সাক্ষী সাবুদদের ডেকে পাঠালো।বেশ বয়স্ক এক লোক-যদিও আমার সাথে কোন্দিন দেখা হয়নি তার,ছিল বাদী।বিচারক একটা ফানেল দিয়ে পানি ছেড়ে দিল-ওটা আরেক পাত্রে জমা হওয়ার পর্যন্ত যেটুকু সময় লাগে,ওটুকুই হলো তার বক্তব্য পেশ করার সময়।

বাদীর ভাষ্য পেশ করা আরম্ভ করলো,সরকারী কেরানী-

‘মাননীয় বিচারপতি,এটা কোন সাধারন ব্যাপার না,এর নৃসংশতা আমাদের সকলকে অভিভুত করেছে কান্নায় দুঃখে,এ শহরের প্রতিটা মানুষ মনে হয় এ যন্ত্রনায় সমব্যাথী।ব্যাক্তিগত কোন হিংসা বিদ্ধেষের ঘটনা না এটা।এ শহরের রাতের প্রহরীদের নেতা হিসাবে এর বিচার চাওয়া দায়িত্ব শুধু আমার না-দায়িত্ব এই শহরের প্রতিটা অধিবাসীর,সবাই চায় একটা ন্যায্য বিচার।গত রাতে পাহারা দেওয়ার সময় আমরা দেখি-একজন কমবয়সী লোক খোলা তলোয়ার হাতে ধাওয়া করছে তিনজনকে।কোন কিছু বলার আগেই সে বেশ রাগের সাথে তিন জনকে এক এক করে তার তলোয়ার দিয়ে আক্রমনে করে অযথাই খুন করলো-আমাদের কিছু বলার আগেই তিনটা প্রাণহীন শরীর পড়ে ছিল তখন মাটিতে।আমরা দেখলাম মানুষটা দৌড়ে গিয়ে লুকালো কাছের কোন এক বাড়ীতে-তার চেহারাটা আমাদের মোটামুটি জানা ছিল,বাড়ীটাও কিছুটা ছিল আমাদের আন্দাজে।সকালে তাই খুঁজে তাকে বের করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আমাদের।দৃষ্টান্ত মূলক বিচার হওয়া উচিত ঐ নিষ্ঠুর লোকটার,তিন তিনটা নিরীহ প্রানের-বিচার চায় এ শহরবাসী’।

কথাটা শেষ করার পর আদালতের কেরানী আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-‘আসামী,
তোমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ,এর প্রতিবাদে তোমার বলার কিছু নেই?কিছু বলার থাকলে এটাই তোমার বলার সময়’।

আমি তখনও হতবুদ্ধি,কিছু একটা বলা দরকার,আমার বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যে মামলার বিপক্ষে-নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলা আরম্ভ করলাম,

মাননীয় বিচারপতি,এ শহরের বেশ মান্যগণ্য একজনের বক্তব্য ছিল কিছুক্ষন আগে।আমি তার বিপক্ষে বলছি না,যা সত্যি সেটাই বলছি।আর এটা কার না জানা যে আপনি সত্যির ওপর ভিত্তি করেই আপনার বিচার করবেন।গত রাতে এ শহরের এক মান্য ব্যাক্তির বাড়ির অনুষ্ঠানের আমন্ত্রনে পর্ব শেষ করে ফিরছিলাম-মিলোর বাড়ীর দিকে,সেখানে আমি কদিনের জন্য অতিথি।মিলো আপনাদের শহরের বেশ নামকরা একজন ব্যাবসায়ী,নিঃসন্দেহে একজন গন্যমান্য ব্যাক্তিও বটে।যাক গে যা বলছিলাম,রাতে মিলোর বাড়ীর কাছাকাছি এসে দেখি,
তিনজন গুণ্ডা বাড়ীর গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকছে-একপাশের জানালাটা ভেঙ্গে ঘরে ঢোকার আগে,আমি তাদের সাবধান করে দিয়ে ফিরে যেতে বললাম।আমার হাতে তখন খোলা তলোয়ার-যা আমি আমার কাছে সবসময় রাখি সেটাকে,নিজেকে রক্ষার জন্যে।তবে তলোয়ার দেখেও ওদের চোখে কোন ভঁয় ছিল না,বরং কটা বড় বড় পাথরের টুকরা কুড়িয়ে নিয়ে আমাকে আক্রমন করা আরম্ভ করলো,নিজের প্রতিরক্ষা আর আমি যার অতিথি তার সম্মান, প্রতিরক্ষা করার জন্য,এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

এর বিচারে এই শহরের কাছে আমার ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই,বরং আমি আশা করি পুরুষ্কৃত হবো,কিছু দূবৃত্তকে দমন করে,এ শহরের গণ্যমান্য একজনের প্রতিরক্ষার জন্যে।

কথাগুলো বলার সময় ছিল আমার চোখেমুখে কোন অভিযোগ ছিল না,ছিল মিনতি আর কান্না-শুধু বিচারক নয় এ চারপাশের সকলের কাছেই।

আশা ছিল তবু-সত্যি সত্যি যদি কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকে,তবে এ কান্না তো পৌঁছাবে তারও কাছে,এ কথাগুলো পৌঁছাবে তারও ঘরে।আমার এ কান্নায় হয়তো হাসিও নিয়ে আসতে পারে তার মনে।

হঠাৎ দেখি কজন মহিলা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এলো,একজনের কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা,বুক চাপড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করেই বললো-‘মাননীয় বিচারপতি,এই তিনজন নির্দোষ মানুষের নামে যে দূর্নাম করা হলো,সেটা যে কত মিথ্যা তা তো সকলের ই জানা।আসামী যাদের নামে এসব অভিযোগ করছে,তাদের সুনাম জানা নেই কার,ওদের তো মা ছিল,বউ ছিল,ছেলে মেয়ে ছিল।বিধবা,অনাথদের কেই বা দেখবে এখন।ঐ পাশে শুয়ে আছে আমার স্বামী-আমার স্বপ্ন,আমার ভবিষ্যত,কিছু নেই আমার আর,এই অনাথ ছেলেমেয়ে কোথায় যাবে।আমরা বিচার চাই,এই নিষ্ঠুরতার বিচার চাই,আমরা’।

এত কথা কান্নার মাঝেও বিচারক মহোদয় কোন কথা বলে নি-যুবতীদের কান্নার পর,তার বক্তব্য আরম্ভ হলো-‘সবকিছু থেকে এত টুকুই বোঝা সম্ভব হলো,আমাদের সামনে তিনটা মৃতদেহ,তারা যে খুনের শিকার এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।আমাদের জানা নেই সেটা প্রতিরক্ষায় না অযথার আনন্দে।তাই আমি অনুরোধ জানাচ্ছি ধৈর্য ধরুন সবাই-এ সত্যি বের করার দায়িত্ব শুধু আমার না,আমাদের সকলের,তা ছাড়া রাতের সেই সঙ্গী কাজের মানুষটাকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি।এই অপকর্মে তার কোন সহযোগী আছে নাকি?
ভবিষত্যের কোন অপকর্মের পরিকল্পনা আছে নাকি তাদের এগুলো জানা দরকার,আমরা তাই ফিরে যাব,পুরোনো সনাতন অত্যাচারের পদ্ধতিতে’।

বিচারকের কথার ফাঁকে আনা হলো-অত্যাচার করার পুরোনো একটা যন্ত্র,কয়লার আগুনে জোর করে পা ধরে রেখে কথা বের করে আনা।তবে অনুরোধ করলো বুড়ো মানুষটা-‘হুজুর,মাননীয় বিচারপতি,আপনি আদেশ করেন ঐ খুনীটাকে,মৃতদেহগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে সে নিজেই বলুক-তার কি শাস্তি হওয়া উচিত’?

আমাকে বলা হলেও কোন ইচ্ছে ছিল না আমার আবার নতুন করে ঐ মুখগুলো দেখার-মৃতদেহের ঢাকা কাপড় সরিয়ে মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে কোন কিছু বলার।তবে আমি তো সেখানে নিরুপায়,জোর করে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে-এক প্রহরী মৃতদেহের ঢাকা সরিয়ে বলে উঠলো,দেখ চোখ খুলে দেখ তোমার অন্যায়ের উদহারন।

আমার অবাকে অবাক হওয়া ছিল আরও-হতবাক আমি,যে জগত ছিল দোষী আমার চোখে,সেই একই জগত আমার চোখে তখন সৌন্দর্যের নতুন এক রাজ্য।আমার অবাক চোখের সামনে,সরানো কাপড়গুলোর পেছনে ছিল না কোন মৃতদেহ-সেখানে তিনটা মশক সাজিয়ে রাখা দেহের মত।

হাসির ছড়াছড়ি সারা আদালত ছুঁড়ে-সবাই চিৎকার করে একে অন্যকে ধন্যবাদ জানালো,হাসির উৎসবে,তাদের হাসির খোরাক যোগানোর জন্যে।মিলো দৌড়ে এসে কাঁধে হাত ধরে নিয়ে গেল একপাশে-আমার কান্না কোন বাঁধের বাঁধনে আটকে ছিল না-মিলোর সহানূভূতি সেটা ভেঙ্গে তছনছ করে দিল-হাউমাউ করে ছিল আমার কান্না,এ যে ফিরে আসা যেন মৃত্যূর দ্বার থেকে।

দৌড়ে এলো পরে বাররাহেনাস খালার কাজের লোক-রাতের আমন্ত্রনের কথাটা যেন ভুলে না যাই।আমি উত্তর দিলাম-ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হবে না আজ,মিলোর অনুরোধ,রাতের খাবার আজ তার ওখানেই।তা ছাড়া বিশেষ অনুরোধ খাওয়া দাওয়ার পর গল্প গুজবে সময় কাটানো-তবে অবশ্যই আসবো পরে’।

মিলো আমাকে নিয়ে গেল পাশের সরকারী হাম্মামে-এক কাজের লোককে ডেকে বললো, ‘আমার অতিথি সুন্দর করে ওর পিঠ,পা গুলো পরিষ্কার করবে,আর শোন ভাল সাবান আর তেল দিবে যেন’।

রাতের খাবারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না আমার তবু মিলোর অনুরোধে কিছুটা খেতেই হলো। খাবার শেষে গল্পগুজবে মত্ত হওয়ার জন্য মিলোর একান্ত অনুরোধ।মিলোকে আমি বুঝিয়ে বললাম-সারাদিনটার কান্না আর উত্তেজনায় বেশ ক্লান্ত,তাই গল্প করার চাইতে ঘুমোনোটাই আমার দরকার বেশী।

আধো ঘুমে দেখি-আমার সৌন্দর্যের দেবী,ফটিস,খাওয়া দাওয়ার পর ছুটে আসতে দেরী করেনি আমার ঘরে।তবে ছিল না তার চোখে মুখে সেই দুষ্টুমির রহস্য মাখানো হাসি –বব্রং কিছুটা যন্ত্রনার সাথেই ফটিস বললো-‘আমি চাইনি এ যন্ত্রনার মধ্যে তোমাকে নিয়ে যেতে।কি বোকা আমি,একটু হাসির জন্যে কত কষ্ট দেয়া হলো তোমাকে।জানি না তুমি আমাকে ক্ষমা করবে কি না,না করলেও দোষ দেওয়া যাবে না তোমাকে।এই চাবুকটা নিয়ে এসেছি,তুমি শাস্তি দাও আমাকে।যে আমাকে বলা সবার শুধু হাসি আর আনন্দ, আমি এমনই মন্দ কপালি, আমার জন্যেই তোমার এত জ্বালা যন্ত্রনা’।

না বলে পারিনি আমার স্বপ্নের দেবীকে-ভালবাসা আমার,তুমি এই চাবুক এনে আমার যন্ত্রনা বাড়িয়ে দিলে আরও।কি ভাবে ভাবলে আমার চরম ভালবাসার মানুষটাকে এমন অত্যাচার করতে পারি আমি।ঐ ধবধবে আমার ভালবাসার শরীরটা তার ওপর যন্ত্রনা?আমার শুধু জানার আগ্রহ তোমাকে কি বললো অন্যান্যরা যাতে তুমি এভাবে জড়িয়ে পড়লে,কৌতুহল ছাড়া আর কিছু না যদিও।আমাকে যতই বলা হউক না কেন,আমি তুমি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন দিন আমাকে পারবে না একটু ও কষ্ট দিতে’।

ফটিসের চোখ দুটো ছিল কান্নায় ছলছল-তবুও অদ্ভুত এক কামনার দৃষ্টি উকি দেওয়া তখন তার চোখের কোনে।নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি আমি আর,ভালবাসার ঐ সোমরস পান করার জন্যে মনটাও আমার তখন উত্তেজনার সমুদ্রস্রোতে,চুমুতে আর শরীর ছুঁয়ে যাওয়া আদরে পাগল করে দেওয়া আমার ফটিসকে ।


কিছুটা অপ্রস্থত হয়ে ফটিস বললো-

‘লুসিয়াস,প্রান আমার,একটু অপেক্ষা করো,দরজাটা বন্ধ করে আসি প্রথমে,আমি চাই না যে এ কথাগুলো অন্য কার ও কানে যায়।আমি জানি আমি যাদের আশ্রয়ে আছি,তাদের সমন্ধে কোন রকম গুজব ছড়ানো ঠিক ন্য,তাদের কথা তাদের রহস্য আমার না বলাটাই স্বাভাবিক।
তুমি সম্ভান্ত্র পরিবারের সন্তান,জানি তোমার কাছে এ কথাগুলো কথাই থেকে যাবে।তুমি জানো না হয়তো,এ বাড়ীর গিন্নী,গৃহকর্তী,এক ডাইনী,অনেক যাদুমন্ত্র দখলে আছে তার।তার ক্ষমতার পরিমাপও বোঝা সম্ভব না আমাদের পক্ষে-চাঁদ সুর্যকে পর্যন্ত তার কথা মেনে চলতে হয়।
দেব-দেবীরাও ভঁয় করে চলে আমাদের বাড়ীর কর্তী-পামফিলিকে,ভঁয় করে শরীরী অশরিরি সবাই।

পামফিলির বয়স যদি ও পড়ন্ত বয়সে-তবে শারীরিক চাওয়া কমেনি একটুও,কামনায় অন্ধ সে,আর তার চোখ হলো কমবয়সী যুবকদের দিকে।ইদানীং তার চোখ পড়লো-এক কমবয়সী বোহেসিয়ান যুবকের দিকে।

সুপুরুষ,দেখার মত চেহারা-লম্বা সোনালী চুলের,স্বর্গীয় চেহারার দেবতা একজন।গত সন্ধ্যায় পামফিলির সূর্য দেবতাকে ধমক দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্যে ধমক দিয়ে বললো-ভঁয় দেখালো কথা না শুনলে তার ক্ষমতার মন্ত্রে সে পড়ে থাকবে,আঁধারের রাজ্যে।পামফিলির শরীরের তৃপ্তি যে ফুরোয় না-দিনের আলোর লম্বা টানা সুরে,অন্ধকার দরকার তার যাদু-মন্ত্রের প্রভাবের।

সে দিন পামফিলি আমাকে ডেকে বোহেসিয়ান নাপিতটার দোকান থেকে দোকান থেকে তার কাটা চুলের কিছু অংশ নিয়ে আসার জন্যে।নাপিতের দোকানে যাওয়ার পর আমি সেই দোকান থেকে কিছু চুল নিয়ে বের হয়ে আসার সময়-বুড়ো নাপিত আমাকে ডেকে ধমক দিয়ে বললো-আমরা কি করে বেড়াচ্ছি সব কিছুই তার জানা।আর জেনেশুনে খদ্দেরদের বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়ার তার কোন আগ্রহ নাই।তারপর আমাকে একপাশে টেনে নিয়ে আমার দুই স্তনের মাঝে লুকোনো চুলগুলো টেনে বের করলো।ধমক দিয়ে বললো এবার যদিও আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিচ্ছে,তবে এর পর আমাকে দেখলে নিয়ে যাবে সোজাসুজি পাশের পুলিশের কাছে,আর জেলের ঘানিটা খুব একটা আরামদায়ক না,সেটাও জানাতে দ্বিধা করলো না।

অপদস্ত-লজ্জায় মাথা নিচু করে,বের হয়ে আসা ছাড়া কোন উপায় ছিল না আমার। যদিও জানতাম,চুলগুলো না নিয়ে গেলে পামফিলির হাতে যন্ত্রণা অত্যাচারের শেষ হবে না কোন। হয় আমাকে পালিয়ে যেতে হবে,না হ্য়,আমাকে নিয়ে যেতে হবে আমার কত্রীর চাওয়া সোনালী চুলের গোছা।তোমাকে ছেড়ে এ পৃথিবি ছেড়ে স্বর্গেও যেতে চাই না আমি,তাই তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি,সাবধানের চোখটা খুলে রেখ।যাকগে যা বলছিলাম,
সৌভাগ্য আমার আরেক নাপিতের দোকান গিয়ে দেখি সেখানে যে সোনালী চুল ছিল-একেবারে সেই বোহেসিয়ানের চুলে ছোঁয়াচের চুলের ধরণ,কিছু নিয়ে গেলাম,পামফিলির জন্যে।

সন্ধ্যা ছাড়ানো রাতের অন্ধকার-পামফিলি চলে গেল বাড়ীর ছাঁদে,সেখানে রাখা আছে তার যাদু মন্ত্রের সরঞ্জামগুলো।কিছু মন্ত্রের কথা বিড়বিড় করে আওড়ালো পামফিলি-আমি অবাক চোখে দেখি,আকাশের কটা জানালা খুলে যেন দমকা বাতাসে,বেশ কিছুক্ষন এলোমেলো উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম।কিছুক্ষন পর লাল রং সাজানো রাঙ্গানো পূর্ব আকাশ-আর পামফিলি আমার কত্রী আবার তার মন্ত্র আওড়ানো আরম্ভ করলো।তার সামনে সাজানো ছিল ধূপের কাঁঠি-হাল্কা ধূয়োয়,পেচা,কাকের ঠোঁট,মৃতদেহ থেকে কেটে আনা মাংসের টুকরা,ফাসি দেওয়া মৃত শরীরের নাক আর আঙ্গুল,ফাসির দড়ির অংশটা যেখানেআছে সেখানে মৃতের গলার চামড়া,বন্য জন্তুর হাতে মৃত শরীরের কিছুটা।

সদ্য বলি দেওয়া একটা জন্তু-শরীরটা তখনও নড়াচড়া করছে,এর মাঝে বিড়বিড় মন্ত্র আওড়ালো-পামফিলি।আমার দেওয়া সোনালী চুলের কিছুটা দড়ির মত-তবে অদ্ভুত একটা বাধন দিয়ে পামফিলি আগুন,ধূপধুনোয় ফেলে দিয়ে বিড়বিড় করে আরও কিছু মন্ত্র আওড়ালো।অবিশ্বাস্য-অস্বাভাবিক এক পরিবেশ,ধূপধুনোর ধোঁয়া,পোড়া চুলের গন্ধ যদিবা আসার কথা সেই বোহেসিয়ান মানুষটার-অশরিরি ভৌতিক কটা মশক রাতের অন্ধকারে জীবন্ত হয়ে আসা মিলোর দরজায় সে রাতে।ঠিক সে সময় তুমি ফিরে এলে-আর মনে হলো তুমি বেশ কিছুটা মাতালও ছিলে।তোমার নেশার চোখে হয়তো দেখেছ কটা গুণ্ডা চেহারা মিলোর বাড়ীর দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে।

তুমি ভঁয় পাওনি ঐ ডাকাতদের চেহারাগুলো দেখে-বরং বীর রাজা এজ্যাক্সের মত তলোয়ার বের করে ঝাঁপিয়ে নিরীহদের রক্ষার চেষ্টা করেছ।তুমি কোন খুন করনি-কোন নিরীহকে দাও নি কোন যন্ত্রনা,ভালবাসা আমার,তুমি আমার,তুমি এখন আমার বুকে’।

আমি কিছুটা হেসে বললম-ঠিকই বলেছ তুমি আমি রীতিমত বীর হারকিউলিস যেন এ মাত্র বধ করে এলাম গেরিয়নকে,তার বিশাল তিন মাথার শরীর,আমার বীরত্বের কাছে কিছু কি?তা ছাড়া আমি তো ধরেই এনেছি সেই তিন মাথার কুকুর সেরবেরাসকে।
যাক গে আমার একটা অনুরোধ-এর পরে এই যাদুর আনুষ্ঠিনকতায় কোন ভাবে যদি উপস্থিত থাকা যায়,আমার খুব আগ্রহ দেখা এই যাদু বিজ্ঞানের রহস্য।

তুমি জান তোমাকে ছাড়া আমি চাই না কাউকে আর-সম্ভান্ত্র বংশ,সামাজিক অবস্থান,এ গুলোর দিকে কোন লোভ নেই আমার। ভালবাসার দাস আমি তোমার,আমি দাস তোমার আকাশ ছোঁয়া চোখের,তোমার স্বর্গীয় স্তনের নিটোল পাহাড়ে,তোমার গোলাপের পাপড়ির মত গাল দূটো,তোমার পাগল করা চুমু।বাধন নাই কোন এ দাসত্বে,স্বেচ্ছাকৃত বাধন এ আমার।থিসালী,আমার বাড়ী ছাড়িয়ে অনেক দুরে যদিও আমি,তবু তোমার শরীরের উন্মাদনায় ভুলে যাওয়া আমার নিজেকে।

ফটিস তার মন উজাড় করে উত্তর দিল-
‘লুসিয়াস,আমার আনন্দের সাথে তোমার অনুরোধ পালন করা উচিত,কোন দ্বিধা থাকার কথা নয়।তবে ভঁয় আমার এই যে,ঐ ডাইনী পামফিলি তার এই সব যাদু মন্ত্রের অপকর্মে,বেশ গোপনীয়তা,নির্জনতার আশ্রয় নেয়,অনুমতি নেই কারও আশেপাশে যাওয়ার।তবু তোমার অনুরোধ পালন করার চেষ্টা করবো আমি-চেষ্টা করবো এর পরের অনুষ্ঠানের ইতিবৃত্ত জেনে নেওয়ার।তবে দোহাই তোমার এ কথাগুলো আর কারও কাছে বলো না আবার’।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর অনুবাদ হয়েছে। সহজ সরল ভাষা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.