নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিয়াসের রুপান্তর Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius)- The Golden Ass(ধারাবাহিক) অনুবাদ

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১২

লুসিয়াসের রূপান্তর –অষ্টম অধ্যায়

কিউপিড আর সাইকি-দ্বিতীয় পর্ব(২)

‘সাইকির কাছে তার বোনদের খোঁজ পৌঁছে দিল বায়ু দেবতা।কান্নায় হাহুতাশে ভেঙ্গে পড়া সাইকির দুই বোন, “সাইকি,সাইকি” বলে কাঁদতে কাঁদতে দুঃখে বুক চাপড়াচ্ছিল,তারা।বাতাসে ভেসে পৌঁছালো কান্নার শব্দ সাইকির কানে,দৌড়ে প্রাসাদের বাইরে এসে চীৎকার করে বললো সে-“আমার প্রিয় বোনেরা,কেন কাঁদছো তোমরা আমার জন্যে?এই দেখ আমি তোমাদের সাইকি,এই দেখ আমি তো ভালই আছি,বেঁচে আছি,সুস্থ ভাবেই আছি।দোহাই তোমাদের,কান্না থামাও তোমাদের,কিছুক্ষণ পরেই দেখা হবে আমাদের”।

বায়ু দেবতাকে ডেকে সাইকি,বললো তার স্বামীর আদেশের কথা।সাইকির কথামত বাতাস উড়িয়ে নিয়ে গেল তার বোনদের প্রাসাদে।সাইকি,বোনেরা একে অন্যকে দেখে আনন্দে জড়িয়ে কান্নাকাটি আরম্ভ করলো,প্রাসাদের ভেতরে ঢুকে বোনদের বললো,সাইকি-“এটা আমার নতুন বাড়ী,চল চারপাশটা ঘুরে দেখবে,খুবই খুশী হবে তোমরা”।

‘রকমারী অলঙ্কার,মনি মুক্তার মালা,সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো,সাইকি।অদৃশ্য কাজের লোকেরা সাইকির বোনদের যথারীতি গোসলের ব্যাবস্থা করলো,গোসলের পর টেবিলে আসলো অভাবনীয় সব খাবার দাবার।চারপাশের এই প্রাচুর্যতা,স্বাচ্ছন্দতা,অবিশ্বাস্য ছিল দুই বোনের চোখে,
ঈর্ষায়,হিংসায় পুড়ে যাচ্ছিল দুই বোন,বিশেষ করে সাইকির মেজ বোন।কৌতূহলের প্রশ্নের স্রোতে ভেসে যাওয়া তাদের মন,কে সেই অদৃশ্য চরিত্র-দেবতাদের মতই ক্ষমতা,প্রাচুর্যতা যার।বার বার প্রশ্ন করছিল তারা নিজেদের-কেমন সে,কেমন দেখতে সে,প্রশ্নের পর প্রশ্ন তাদের,মনে,উত্তরটা দরকার।

‘সাইকি স্বামীর উপদেশ মতই বানিয়ে বললো একগাদা গল্প,তার স্বামী বেশ সুন্দর চেহারার দাঁড়ি ভঁরা মুখের এক সুপুরুষ যুবক,পাহাড়ী বন্ধু বান্ধবদের সাথে হৈচৈ করে বেশির ভাগ সময় কাটায়,আর তা ছাড়া কিই বা করবে,বাবা মা রেখে গেছে প্রচুর ধন সম্পত্তি,আনন্দে সময় কাটানো এটাই বা খারাপ কি?প্রশ্নের ঝড়ে থতমত,সাইকি-ভুল কিছু বলে ফেলার ভঁয়ে,গহনা পত্র দিয়ে বোনদের,বাতাসকে ডেকে বললো,তাদের বাড়ী পৌছে দিতে।কিন্ত কুটিল বোনদের মনে তখন অশান্তির ঝড়-সাইকির এই অভাবনীয় আনন্দ,প্রাচুর্যতা দেখে।

‘বড় বোন নিরাশ,হতাশ হয়ে মেজ বোনকে বললো “কত নিষ্ঠুর এই ভাগ্যের পরিহাস,আমরা তিনবোন অথচ আমাদের দুজনের বিয়ে হলো,বিদেশীর সাথে,আমরা সেখানে স্বামীর কাছে থাকি কাজের মেয়ের মত,উচ্ছিষ্ট একজন।আর সাইকি মায়ের শেষ বয়সের পাগলামির ফসল,সবকিছুই পেল সে,ধন সম্পদ হিসেবের বাইরে,স্বামী সেও হয়তো একজন দেবতাও,এমনই বোকা যে সাইকি-জানেও না যে কি ভাবে ব্যাবহার করা যায় ক্ষমতাগুলো।এটা কি বিশ্বাস করা সম্ভব-এমনকি বাড়ীর মেঝেটাও সোনায় কাজ করা,নানান ধরনের দামী পাথরে সাজানো মেঝের ,ফুল ছবিগুলো।আর তার স্বামী যদি সত্যি সত্যিই ওমন সুন্দর চেহারা হয়,তবে তার মত ভাগ্যবতী আর কে আছে মর্তে-এমন কি হয়তো স্বর্গেও।স্বামীও হয়তো বা এমন ভক্ত তার,সে ও হবে দেবী একজন কোন একসময়। তা ছাড়া এখনই বা তার ক্ষমতা তো খুব একটা কম,না?
এমনই শক্তিশালী যে বাতাসকে ও ডেকে আদেশ দিতে পারে যখন তখন-আর আমাকে দেখ,বিয়ে হলো এক বুড়োর সাথে,বাবার চেয়েও বুড়ো।চুল নেই মাথায়,চেহারায় একটা কুমড়ার মত,আর এত কিপটে যে সবকিছু আটকে রাখে তালা চাবি দিয়ে,মনের সুখে খরচ করারও কোন উপায় নাই”।




০০০০০০০০০






“আর আমার স্বামী”-মেজ বোন বললো,“সে তো তোমার স্বামীর চেয়েও অধম,বাতের ব্যাথায় সব সময় যন্ত্রনায় কাইকুই করে যাচ্ছে,এমনই বেঁকে গেছে তার আঙ্গুল,মালিশ করতে করতেই কেটে যায় আমার সময়গুলো,যৌবনটা ভেসে যাচ্ছে অযথাই।মনে পড়ে তোমার,কত সুন্দর ছিল আমার হাতটা একসময়,কত সুন্দর ছিল আঙ্গুলগুলো,এখন দেখ মালিশের ঔষধ,
আর মালিশের চোটে কি অবস্থা ? আমি তো তোমার মত রাণী নই ই,বরং কাঁটাছেড়া করার একজন ডাক্তারের চাপরাশ।বিশ্বাস করো আমার কাছে অসহ্য সাইকির এই সৌভাগ্য,এটা শূধু চরম অপমানজনক এক পরিস্থিতি না,দুঃখে রাগে আত্মহত্যা করেতে ইচ্ছা করছে। সে তো শুধু বড়াই করে শুধু আমাদের দেখায়নি তার প্রাচুর্যতা,কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেয়ার মত,
অলঙ্কার মনিমুক্তা দেওয়ার সময় একটা কিপটের মত ব্যাবহার করলো অযথাই।দেখলে তো,আমাদের দেখে তার আনন্দটাও ছিল কত অল্প সময়ের জন্য,কেটে গেল কত সহজেই,কত তাড়াতাড়ি সে বাতাসকে ডেকে আমাদেরকে বাড়ী পৌঁছে দিতে বললো।

অসহ্য এ অপমান-এর প্রতিশোধ নিতেই হবে আমাকে।আমি ঐ গর্বের আকাশ ছোঁয়া মাথাটা মাটিতে নামাতে চাই,লজ্জায় লুকানোর জায়গা যেন না থাকে তার।তোমার যদি আপত্তি না হয়,আমরা দুজনে বুদ্ধি করে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করি,সাইকিকে”।

‘“আমার কোন আপত্তি নেই,আমি আছি তোমার সাথে,আমরা বাবা মা কাউকে দেখাব না, আমাদের দেওয়া গহনা,অন্যান্য জিনিষপত্র।কাউকে বলবো না সাইকির সাথে সাক্ষাতের কথা,কেউ জানবে না তার প্রাচুর্যতা,সৌভাগ্যের কথা।মানুষের জানা ছাড়া কিইবাঁ আনন্দ আছে ঐ প্রাচুর্যতা-আয়েসের।সাইকিকে বুঝিয়ে দিতে হবে আমরা তার বোন,তার কাজের মানুষ নই”।

“খুব ভাল কথা”,মেজ বোন উত্তর দিল-“আমরা নিজের নিজের হেঁশেলে ফিরে যাব ঠিকই চুপচাপ,বাবা মা কাউকে কিছু না বলে।ভাল একটা বুদ্ধি মাথায় এলে আবার দেখা হবে আমাদের এখানেই”।

‘দুই বোন হাত মিলিয়ে ফিরে গেল, সাথে নিয়ে আসা অলঙ্কার,দামী মনিমুক্তা লুকোনোর পর ধীরে ধীরে হেঁটে গেল-ওদের বাবার রাজমহলের দিকে।প্রাসাদের কাছাকাছি এসে আরম্ভ হলো তাদের নাটক-চুল টেনে,মুখের আচড়ে যেন দুঃখে ভঁরা দুবোন যেন।রাজা রানী এসব দেখে দূ;খে হতাশায় ভেঙ্গে পড়লো আরও,তাদের মনে হলো তাদের দুঃস্বপ্নই ফিরে আসছে।আর দুই বোন চলে ফিরে গেল তাদের নিজেদের সংসারে।

‘সাইকির অদৃশ্য স্বামী আবার সাইকিকে বুঝিয়ে বললো-“জানি না,তুমি এখনও হয়তো বুঝতে পারনি,তোমার বোনেরা কি শয়তানি পরিকল্পনা করছে,দূরে থেকে ও?তুমি যদি সর্তক না হও,এ স্রোত তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কোন সে অজানায়,ফিরে আসা অসম্ভব হবে।
তোমার ডাইনী বোনেরা জল্পনা কল্পনা করছে,যাতে তুমি দেখ আমার চেহারাটা।তবে মনে রেখ,একবার আমার চেহারা দেখা আর সেখানেই শেষ হবে আমাদের এ সম্পর্ক,মনে রেখ সেটা,ভুলে যেও না।ঐ রক্তচোষা বাদুরেরা আসে যদি আবার-দেখা করো না আর,তাদের সাথে।হয়তো তোমার মত সহজমনা মেয়ের জন্য সেটা হবে বেশ কষ্টকর-অন্তত তাদের প্রশ্নের জবাব দিও না কোন,যেন কথাগুলো শুনতে পাওনি তুমি।যদিও সংসার সাজায়নি এখনও আমরা-যদি ও তুমি সদ্য যৌবনা,তবে তুমি হয়তো জাননা আমাদের সন্তান আসছে খুব শীঘঘির,আর সে হবে দেবতাদের একজন”।


‘সন্তানের কথা শুনে এক অভাবনীয় আনন্দের ছন্দ ছুটে গেল সাইকির মনে-শরীর,শারীরিক খেলা নিয়ে খুব একটা জানা ছিল না তার,সাইকি তখনও জানে না,প্রেমের খেলায় শারীরিক পরিবর্তন আসবে কেন?

‘শয়তান বোনেরা তাদের শয়তানি,কুটিল বুদ্ধি সাজিয়ে কি ভাবে সাইকিকে অপদস্থ করা যায় সেই পরিকল্পনাট ব্যাস্ত,ঘৃনা আর ঈর্ষা ভঁরা মন নিয়ে আরম্ভ হলো সাইকির সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য।সাইকিকে আবার সাবধান করলো তার অদৃশ্য স্বামী-“বিপদ আসছে কিন্ত,আজ তোমার আমার বিপদের দিন।তোমার শত্রুরা আসছে কাছাকাছি,দল পাকিয়ে ওরা আসছে তোমার ক্ষতি করার পরিকল্পনা নিয়ে।যদিও তোমার রক্ত মাংসের অংশই না তোমার বোনেরা,যদিও ওরা তো তোমারই মত নারী দুজন,তবে মনে রেখ ওরা খোলা তলোয়ার নিয়ে- ধাওয়া করে আসছে তোমার গলা লক্ষ্য করে।প্রেয়সী আমার-তোমার নিজের আর সন্তানের কথা মনে রেখে দয়া করে আমার কথাগুলো শোন,আমাদের রহস্যটা থাকুক না আমাদের রহস্য,হয়ে।ওরা এখন আর তোমার বোনের মত ব্যাবহার করছে না,তোমার বোন হওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে ওরা,ওদের দুষ্টবুদ্ধিতে।ওদের সাথে নাই বা দেখা করলে,
ওদের কথা কানে দিও না,একেবারে চুপচাপ থাকার চেষ্টা কর”।

‘সাইকি অনেকটা ভেঙ্গে পড়লো স্বামীর কথা শুনে,কাকুতি মিনতি করেই বললো,স্বামীকে-“বিশ্বাস রাখতে পার আমার ওপর।এর আগে আমার বোনদের আসার সময়,আমি তো আমার কথা ঠিকই রেখেছি,তার প্রমান তো তোমার জানাই।তুমি তো দেখেছই আমার গোপন কথা-গোপণ রাখার ক্ষমতা।তুমি শুধু পশ্চিম বাতাসকে ডেকে বলে দিও,আমার বোনদের নিয়ে আসার জন্যে,তবু তো সঙ্গ পাব,কারও আমার মনের একটা সান্তনা,তোমার সাথে দেখা হওয়ার সূযোগ হয় আর কতটুকু?

তোমার কাঁধের লুটিয়ে পড়া চুলের সুবাস,তোমার মসৃন গাল,বুকের অভাবনীয় ভালবাসার উত্তাপ,হয়তো বুঝবো আমাদের সন্তানকে দেখে।দোহাই তোমার আমার একটু সুখের জন্য মেনে নাও এটা,অন্ধকার ছাড়া তোমাকে দেখা হয় না,অন্তত বোনদের দেখে সান্তনা তবু কিছুটা সান্তনা পাবে হতভাগা মনটা,আমার”।সাইকির কাকুতি মিনতি বেশ নরম করে দিল তার অদৃশ্য স্বামীর মনটা,আলতো করে চুমু দিয়ে সাইকির চোখের পানি মুছে ফেলে,সম্মতি জানানো ছাড়া তখন আর কোন উপায় ছিল না তার।

‘সাইকির শয়তান দুই বোন কদিন পর ছুটে গেল সোজাসুজি পাহাড়ি এলাকায়,বাবা মার সাথে দেখাটাও করার ইচ্ছা বা সূযোগ হলো না তাদের।এত বেশি উদ্গ্রীব ছিল তারা যেন পারলে সোজাসুজি ছুটে যায় প্রাসাদে বাতাসের অপেক্ষা না করেই,যদিও সম্ভব ছিল না সেটা-বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের,বায়ু দেবতার তো আদেশ ছিলই,তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রাসাদের দরজায়।

প্রাসাদে ‘পৌঁছানোর পর পরই তারা চীৎকার করে ডাকা আরম্ভ করলো-“বোন, আমাদের প্রিয় বোন,সাইকি কোথায় তুমি”?বলির পাঁঠাকে জড়িয়ে ধরার আনন্দ তাদের মনে, চোখে মুখে যদিও ছড়ানো একটা মেকী স্নেহের প্রকাশ।ছলনার করে বড় বোন বললো-”সাইকি,
বোন দেখে মনে হয় তুমি বেশ কিছুটা ওজন বাড়িয়েছ,মনে হয় খুব শীঘঘির বাচ্ছা আসছে তোমার সংসারে।বাবা মা শুনে তো খুবই খুশী হবে,তর সইছে না আমাদের দেখার জন্যে,
ছোট্ট এক কিউপিড আসছে হয়তো,কে জানে”।

‘তারা চেষ্টা করছিল ধীরে ধীরে কি ভাবে বিশ্বাস,আস্থা আনা যায় সাইকির মনে।ক্লান্ত বোনদের জন্য গরম পানির গোসলের বন্দোবস্ত করলো সাইকি।গোসলের পর অভাবনীয় এক ভোজ,নানান ধরণের খাবার-ঝাল সসেজ,মার্যিপান,অদৃশ্য এক শিল্পী বীণা বাজাচ্ছে পেছনে,
অনেকগুলো মধূর গলায় হচ্ছিল এক স্বর্গীয় সুরের গান,এত আদর,ভালবাসা তবু ও তার বোনদের মনে কুটিল পরিকল্পনা থেমে থাকেনি।ঘুরে ফিরে তার বোনেরা ফিরে আসছিল সাইকির স্বামীর বৃত্তান্তে-কোথায় জন্ম,তার বংশ পরিচিতি,একগাদা প্রশ্নের জোয়ার।


‘সাইকি বরাবরই বেশ সরলমনা,এর মাঝে ভুলে গেছে কি কি বলা তার বোনদের,নতুন আরেক গল্প তৈরী করলো আবার,মিল ছিল না কোন পুরোনো কথার সাথে।পাশের রাজ্যের
মধ্যবয়সী ব্যাবসায়ী তার স্বামী,এর মধ্যে চুলে কিছুটা পাকও ধরে গেছে,দেখতে শুনতে একেবারেই সাধারণ।আর কথা বেশী না বাড়িয়ে অলঙ্কার,হীরা জহরত দিয়ে বিদায় দিল সাইকি তার বোনদের।

‘বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পথে মেজ বোন বড় বোনকে প্রশ্ন করলো-“তুমিই বলো এখন,কি ধরণের মিথ্যা সাজানো যায়?মনে আছে তোমার,প্রথম বার সাইকি আমাদেরকে বললো,তার স্বামী মুখে দাঁড়ি কমবয়সী এক ধনী পরিবারের ছেলে,পাহাড়ি বন্ধুদের সাথে হাসি ঠাট্টায় বেশির ভাগ সময় কাটায়,প্রতিপত্তি সম্পত্তি যা কিছু করার দরকার হয় না,দেখ এবার সে বললো তার স্বামী এক মাঝবয়সী্‌ ব্যাবসায়ী,চুলে পাক ধরা বুড়ো-আমাদের পাশের রাজ্যের লোক।বোঝাই যাচ্ছে ও শয়তানী করছে ,যেন ওর স্বামীর সাথে দেখা না হয় আমাদের,হয়তো এমনও হতে পারে ও নিজেই জানা না ওর স্বামী দেখতে কেমন”?

“যেটাই সত্যি হউক না কেন, ওর ধংস চাই আমরা,ধ্বংস চাই ওর অহংকারের।আর ও যদি ওর স্বামীকে না দেখে থাকে,তবে ওর হয়তো নিশ্চয় কোন এক দেবতা নিশ্চয়,আর ও শয়তানটার সন্তান ও তো হবে এক দেবতা”।

“আমার কথাগুলো কিছু যদি সত্যি হয় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ব আমি,এ আমার সহ্য হবে না,সাইকি এক দেবতার বৌ আর এক দেবতার মা।কিন্ত আমার মাথায় একটা বুদ্ধি ভেসে বেড়াচ্ছে যে কি করা দরকার,এখন চল মা বাবার সাথে দেখা করে আসি”।

“বাবার প্রাসাদে পৌছে দুই মেয়ে মা বাবাকে জড়িয়ে-জানালো প্রানভঁরা শুভকামনা,যদিও সেটা নিঃসন্দেহে মেকী সুরে ভঁরা।মানসিক অসস্থিতে সারাটা রাত জেগে থাকলো দুই বোন-এক পলক ঘুমও ছিল না কারও চোখে।সকালে ওঠেই ছুটে গেল দুই বোন পাহাড়ের দিকে-আগের মতই পশ্চিম বাতাসে ভঁর করে চলে গেল,তারা সাইকির প্রাসাদে।কথায় কথায় বড় বোন চোখ কচলে কচলে কান্নাভরা চোখে বললো-“সাইকি বোন,হয়তো স্বামী সমন্ধে,কিছু না জানাটাই একধরনের আর্শীবাদ।কোন চিন্তা নেই ভাবনা তোমার,শান্তি,স্বস্তিতে ভঁরা চেহারা তোমার,অথচ চিন্তায় ভাবনায় আমরা প্রায় পাগল হয়ে গেলাম।তিনবোন আমরা,একে অন্যের সুখ দুঃখ সব সময়ই ভাগাভাগি করে নিব,তোমার কোন বিপদ হলে সেটা আমাদেরও বিপদ, কোন কিছু লুকাতে পারিনা আমরা।এই যে তোমার স্বামী শুধু রাতের অন্ধকারে আসে বিছানায়,এক বিশাল সাপ,এত বড় শরীরটা যে তোমাকে হয়তো বার তের বার জড়িয়ে ফেলতে পারবে,বড় বড় দাঁত,গলা ভঁরা বিষ।তুমি তো জানোই এপোলোর ভবিষৎ বানীঃ
তোমার বিয়ে হবে এক হিংস্র জন্তুর সাথে,এ এলাকার অনেক চাষিরা যারা মাঝে মাঝে শিকার জঙ্গলে করতে যায়,দেখেছে সন্ধ্যার আঁধারে বিরাট একটা সাপ,খাওয়ার পর্ব সেরে মাঠ ছেড়ে লেকে,অনেকে দেখেছে হাঁটু জলে তাকে সাঁতার কাটতে।বেশীর লোকজনই বলা-বেশিদিন নেই আর,তুমিও হবে তার খাবার,পেটে বাচ্চাসহ শরীরটাই ওর বেশ পচ্ছন্দ।তোমাকে এখন মনস্থির করতে হবে,আমাদের সাথে ফিরে যাবে না কি করবে,জীবন দিয়ে হলেও আমরা তোমাকে রক্ষা করতে দ্বিধা করবো না,নিজেকে যদি ব্রক্ষা না কর তুমি ঐ পৈশাচিক সাপের হাত থেকে শেষমেষ যাবে ওর পেঠে।হয়তো এটাই তোমার আনন্দ সারাদিন কথা বলা নিজের সাথে আর রাতটা কাটানো এই নোংরা সম্পর্কে। সেটা যদি ভাল লাগে বলার কিছু নেই আমাদের,বোন হিসেবে আমাদের যা দায়িত্ব তোমাকে সতর্ক করার,সে দায়িত্ব আমরা ঠিকই পালন করেছি”।

‘বোকা সাইকি বোনদের মনগড়া কথায় ভুলে গেল তার স্বামীর সর্তকবানী,ভেঙ্গে গেল মনটা তার,সব আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গেল ভয়ঙ্কর খবরটায়।সহ্য ক্ষমতা ভেসে গেছে কোথাও, কেঁপে ওঠলো,সারা শরীর,ফ্যাকাসে মুখ,রক্ত ছিল না সেখানে,ভুলে গেল স্বামীর সর্তকবানী,নিজের প্রর্তিশুতি,সোজাসুজি ডুব দিল দূর্ভাগ্যের রসাতলে।বিরাট এক দীর্ঘশ্বাসের সাথে বললো সাইকি-“প্রিয় বোনেরা তোমরা ঠিকই করেছ আমাকে সর্তক করে,তা ছাড়া আশেপাশের লোকজনও তো আর নিশ্চয় বানিয়ে বলে নি কিছু।এটা তো সত্যি,আমি স্বামীর চেহারাটা দেখিনি কোনদিন,আমার কোন ধারনা নেই সে কে,কোথায় কোনদেশে বাড়ী তার।শুধু রাতের অন্ধকারে মৃদ্যু গলার শব্দ শুনেছি,আর এটা সত্যিই কষ্টকর এমন একজনের সাথে ঘর করছি,যার ভঁয় দিনের আলোকে।আমারও মনে হয় তোমাদের কথাটাই ঠিক হয়তো,আমার স্বামী নিশ্চয় কোন এক ধরনের দানব।তা ছাড়া সে আমাকে সবসময় সর্তক করে দিচ্ছে, ভয়াবহ কিছু একটা ঘটে যাবে তাকে দেখার চেষ্টা করলে।আমার এ ভয়াবহ বিপদে কি করা,তোমাদের কোন উপদেশ থাকলে দয়া করে যদি বল আমাকে,ভাল দুই বোনের মত,না হয় তোমাদের এত কষ্ট সবটাই হবে বৃথা”।

‘শয়তান বোনেরা শেষমেষ সাথর্ক হলো তাদের শয়তানী কুচক্রে,ভেঙ্গে তছনছ হলো সাইকির আত্মরক্ষার বর্ম।বোনেরাও নোংরা ভাবে নেমে পড়লো তাদের হীন পরিকল্পনায়।মেজ বোন বললো-“পানির চেয়ে রক্তের ঘনত্ব অনেকগুন বেশি,তোমার বিপদে আমরা ভুলে যাই আমাদের বিপদ।গতকাল থেকে আমরা দুজন বারবার আলোচনা করছি তোমাকে নিয়ে-শেষমেষ আমরা ঠিক করলাম তোমাকে রক্ষা করার একমাত্র উপায়।মাংস কাঁটার চাকু একটা যোগাড় করো,ওটাকে ধার দিয়ে রাখবে ঠিক মত,আর তোমার বিছানায় জায়গামত লুকিয়ে রাখবে-আর শোন একটা বাতিও জোগাড় করে রাখবে,তেল ভর্তি করে,সলতে বেশ ছোট্ট করে কেটে বিছানার পেছনে লুকিয়ে রেখ।সবকিছু গোপনে করো কিন্ত,যখন ঐ দানবটা হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে থাকবে-আর তুমি তো বুঝতেই পারবে ওর
নাকডাকায়।বিছানার থেকে সরে পড়বে চাকুটা নিয়ে,এক ফাঁকে বাতিটা বের করে,কোন দ্বিধা না করে সেরে ফেলবে তোমার কাজ।তোমার চাকুটা তোমার সব শক্তি দিয়ে ঢুকিয়ে দেবে ঐ ভয়াবহ দানবের গলায়-কেটে ফেলবে মাথাটা।তোমার ঐ দানবকে মেরে ফেলার সাথে সাথে ছুটে আসবো আমরা-যা পারি অলঙ্কার,হীরা জহরত নিয়ে সবাই সরে পড়বো আমরা।পচ্ছন্দ সই ভাল এক ছেলের সাথে বিয়ে দিব তোমার,তারপর”।

‘বোনদের কথায় বদলে গেল সাইকির মনোভাব-ঠিক করলো সাইকি বোনদের কথামত ঐ দানবকে হত্যা করে নিজেকে উদ্ধার করবে,দুই বোন সবকিছু বলেই তাড়াতাড়ি সরে পড়লো,যেন ধারে কাছে না থাকে তারা এই দূষ্কর্মে।বাতাসকে বলে তারা চলে গেল তাদের জাহাজের কাছে-তাড়াহুড়া করে পালিয়ে গেল তারা তাদের নিজেদের রাজ্যের দিকে।

‘সাইকি একা-একা এক যুবতী,স্বামীকে খুন করার জন্যে দৃঢমনা,অদ্ভুত এক আক্রোশ ছড়ানো মনে তার,মনটা যেন তখন ঝড়ো বাতাসের দুরন্ত সামুদ্রিক আবহাওয়া।প্রথমদিকে যদিও তার মনটা ছিল পাথরের মত কঠিন,তবে ভেসে এলো একটু সন্দেহ,যদি কোন কারণে সে অসফল হয়,এলোমেলো চিন্তায় উতলা সাইকির মন।প্রস্ততির পর প্রস্ততির পর্ব চালিয়ে গেল সাইকি-যদিও মনের অজান্তে প্রশ্নটা ছিল,কিছু ভুল করছে কি না,পর মূহূর্তেই আবার রাগে দুঃখে ভেসে যাওয়া তার মন।অবাক হচ্ছিল সে নিজেই,কি করে রাতের পর রাত কাটালো এক বিষাক্ত সাপের কোলে-কিন্ত তবুও কেন জানি ঘৃনা ছিল না সেখানে,লুকানো ভালবাসার ছোঁয়াচ।নেমে আসা রাতের অন্ধকারে প্রস্তত হলো সাইকি তার ধারালো ছোরা আর বাতি নিয়ে।


‘ঘুটঘটে অন্ধকার-অন্ধকারের অচেনায় সাইকির স্বামী কোন এক সময় বিছানায় এসে,জড়িয়ে ধরলো তাকে ভালবাসায়,আদরের চুমুতে এলোমেলো করে দিল তাকে,শরীর সাজানো শরীরে,
সাইকি হারালো কামনার স্রোতে কোন বাঁধা দিতে পারেনি কোনভাবে,তারপর কোন এক সময় আলতো করে ঢলে পড়লো ঘুমের কোলে।সাইকি খুব একটা সাহসী ছিল না কোন সময়ই,ছিল না তেমন একটা দৃঢমনা তবুও ভাগ্যের নিষ্ঠুরতায় সে তখন উগ্রচন্ডী।মাংস কাটার চাকুটা শক্ত করে ধরে,বাতির আলোটা তুলে ধরলো বিছানায়।

‘সব রহস্যের উন্মোচন হলো সেই মূহুর্তেই-শুয়ে ছিল সবচেয়ে সুন্দর আর শান্ত চেহারার দেবতা,কিউপিড-ভালবাসার দেবতা।বাতির আলোটাও যেন শুধু ঐ দেখার আনন্দে আরও দপদপ করে জ্বলে উঠলো-আর চাকুটা যেন লজ্জায় লুকিয়ে নিল তার সারা শরীর।

‘ভঁয়ে অভিভূত সাইকি-জ্ঞান হারিয়ে ফেললো ক্ষণকতেকের জন্য,ভেঙ্গে পড়লো মেঝেতে একটা মৃতদেহের মত,চাকুটাকে লজ্জায় ঢুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল নিজের বুকে।হয়তো দূর্ঘটনা কিছু একটা ঘটে যেত,যদি চাকুটা না পড়ে যেত মেঝেতে।অস্থির আর অভিভূত সাইকি-অবাক হয়ে দেখছিল কিউপিডের স্বর্গীয় চেহারা,সোনালী চুল,ধোয়া অমৃতে,সুবাসে ছড়ানো চারপাশ।কোকড়ানো চুলের গোছা এলোমেলো কাঁধে গলার এপাশ ওপাশে,কিছুটা তার টকটকে লাল গালে,মাথার দুপাশে,চুলের সোনালী আলোয় লুকিয়ে পড়লো বাতির ঝকঝকে আলোটা তখন।কাধের দু পাশ দিয়ে বের হয়ে ছিল ধবধবে সাদা ডানা,যদি ও ডানাদুটো শুয়ে ছিল বিছানায়,তবু বাতাসের ফুরফুরে দোলায় নেচে বেড়াচ্ছিল এলোমেলো।মাখনের মত ধবেধবে সাদা মসৃন শরীর-সৌন্দর্যের দেবী ভেনাসের নিশ্চয় বেশ গর্ব হাওয়ার কথা,এ ধরণের এক দেবতার মা হওয়ার জন্যে।

‘সাইকির সীমা হারানো কৌতুহল নেভানোর একমাত্র উপায় ছিল,আরও কাছে যেয়ে তার স্বামীর,কাছে যেয়ে দেখা তার তীর ধনুকে লুকোনো ভালবাসার রহস্যটা।একটা তীর বের করে নিয়ে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ধার পরীক্ষা করছিল সাইকি, কাঁপছিল সারা শরীর-তীরটার তীক্ষনতায় বের হয়ে এলো ক ফোঁটা রক্ত,ভালবাসার উন্মাদনায় মাতাল,মাতাল সাইকি ভালবাসার দেবতার শরীরের কামনায়।কামনার তীব্রতায় বিভ্রান্ত হয়ে-পাগলের মত চুমু খাচ্ছিল সাইকি,শুধু একটু ভঁয় যেন জেগে না ওঠে কিউপিড।

‘কামনায় উন্মাদ সাইকি জড়িয়ে ছিল কিউপিডের শরীর-একহাতে ধরে থাকা বাতিটা কোনরকমে,একসময় উত্তেজনায় ফসকে পড়লো বাতি একগাদা তেল নিয়ে,দেবতা কিউপিডের শরীরে,বাতিটাও যেন মুগ্ধ তখন ভালবাসায়,তারও চাই চুমু কটা।কে জানে কার আবিষ্কার এই বাতি,হয়তো কোন এক প্রেমিকের যে তার অতৃপ্ত চোখ দুটোকে ভরাট করা নিতে চেয়েছিল তার দেখার তৃপ্তিতে-তবে এখন সে পুড়িয়ে দিল ভালবাসার দেবতাকে।্প্রচন্ড ব্যাথায় জেগে উঠলো কিউপিড,চোখ মেলে চারপাশটা দেখে ডানা মেলে উড়ে গেল সে,কোন কথা ছিল না মুখে।উপায় ছিল না সাইকির,পা দুটো জড়িয়ে ধরা কোন রকমে,বেশী দূর যেতে পারেনি মাথা ঘুরে পড়ে গেল এক সময়।

‘কিউপিড তবুও ছেড়ে যায় নি সাইকিকে সেই মূহুর্তেই,সাইপ্রেস গাছটার পাশে দাঁড়িয়ে বললো-“বোকা মেয়ে,শুধু তোমার জন্যে আমি শুনিনি আমার মা ভেনাসের কথা।আমার মায়ের আদেশ ছিল ভালবাসায় তোমাকে পাগল করে তোমাকে একটা নোংরা কাপড়ের মত ছুঁড়ে ফেলতে কোন অর্থব পুরুষের কাছে,কিন্ত মার কথা না শুনে স্বর্গ ছেড়ে এলাম,
তোমার সরলতায় মুগ্ধ হয়ে।জানি কোন কিছু না ভেবেই পালন করা উচিত ছিল আমার মা এর দেয়া কাজ,না শোনার এই পরিনতি আমার।কিউপিড একগাদা ভালবাসার তীর যার হাতের ডগায় বিয়ে করলো এক মর্তের মেয়েকে,তার ভালবাসার মর্যাদা না দিয়ে এক পিশাচ দানব ভেবে,তার মাথা কেটে নিয়ে অন্ধকার করে দিতে চায় চোখদুটো,যা দেখে পাগল দেবলোক আর মর্তলোক।বার বার জানালাম তোমাকে এই বিপদের কথা,সর্তক থাকার জন্যে প্রস্ততিরও দ্বিধা করিনি,কোন লাভ হয়নি,তুমি বোকার মত কুচক্রান্তের ফাঁদে পড়েই গেলে,শেষমেষ।আর তোমার বোন ওরা ছাড়া পাবে না,যারা তোমাকে এই দূর্বিষহ কাজে বাধ্য করেছে তাদের আমি অবশ্যই দেব যথাযথ শাস্তি,আর তোমার শাস্তি তোমার সাথে এই শেষ দেখা উড়ে যাওয়া আমার”।এটা বলে উড়ে গেল কিউপিড।

‘সাইকি পড়ে ছিলা একটা মৃতদেহের মত-চোখ দুটো তাকিয়ে ছিল উড়ে যাওয়া স্বামীর দিকে,আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নায় ভেসে যাচ্ছিল সে।ডানায় ভর করে,উড়ে গেল কিউপিড,ধীরে ধীরে চলে গেল সাইকির চোখের আওতার বাইরে-আর তার পেছনে ছুটে যেতে যেতে পাশে বয়ে যাওয়া নদীর কিনারে গিয়ে সোজাসুজি ঝাঁপিয়ে পড়লো সাইকি নদীর স্রোতে।নদীর পানি,দেবতা কিউপিডের সম্মানে সাইকিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল নদীর পাড়ের এক পাশের ফুলের বাগানে,চারপাশে ছড়ানো এলোমেলো ফুলের পাপড়িতে।

‘পান,ছাগলের মত দেখতে এক দেবতা,ইকো নামের পরীকে, নানান ভালবাসার গান শেখানোতে ব্যাস্ত ছিল একপাশে।ছাগলের দলও খাওয়া খোঁজার জন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এপাশে ওপাশে।পানের কাছে অজানা ছিলনা সাইকির দূর্ভাগ্যের কথা-সহানুভুতিতে সাইকির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,পান,“যদিও আমি এক বুড়ো গ্রামের রাখাল,শহুরে ব্যাপারে তেমন একটা অভিজ্ঞতা নেই আমার,তবুও বয়সের অভিজ্ঞতায় এটুকু বলতে পারি তোমার ফ্যাকাসে চেহারা দেখে,এলোমেলো হেঁটে যাওয়া,তোমার দীর্ঘশ্বাস খুব সহজেই বলে দেয়,প্রেমে অন্ধ তুমি,এখন।শোন ঝাঁপ দিয়ে বা আর যে ভাবেই হউক আত্মহত্যার চেষ্টা বাদ দাও।কান্না থামিয়ে তোমার সত্যিকারের অনুভুতি দেখাও কিউপিডকে,যদি বা কমবয়সী দুষ্টামি আছে তার,কিন্ত দেবতাদের মধ্যে সত্যিই উদারমনা যে কেঁউ থাকে তবে সেটা কিউপিড।মন খুলে প্রার্থনা করো তার কাছে মধুর ভাষায়”।

‘পানের সহানুভূতির কথায় অভিভুত সাইকি-কিন্ত কোন উত্তর দেইনি,,কিই বা বলতে পারে,শুধু চুপচাপ কথা শুনে যাওয়া আর কি করার আছে,তার।হেঁটে যাচ্ছিল ক্লান্তিতে নদীর ধার দিয়ে-একসময় একপাশের রাস্তাটা ধরে চলে গেল শহরের দিকে।দিনের শেষে পৌছালো সাইকি যে শহরটায়-সে দেশের রানী তার বড় বোন।পরিচিতি দেওয়ার পর প্রাসাদে ঢোকার অনুমতি পেল শেষমেষ।


‘অনেক কথাবার্তা আলাপ আলোচনার পর বড়বোন জানতে চাইলো-সাইকির আসার কারণটা।
সাইকি বললো,“তোমার কথামত মাংস কাটার চাকু আর বাতি নিয়ে পিশাচ দানবকে মেরে ফেলতে যখন বিছানায় গেলাম,দেখি এক অদ্ভুত দৃশ্য,শুয়ে ছিল দেবী ভেনাসের ছেলে কিউপিড,শান্তিতে ঘুমে।আমার আনন্দ আর তৃপ্তি ছিল জন্যে অভাবনীয়।সব বুদ্ধি হারানো আমার-চোখে অতৃপ্তি নিয়ে,শুধু দেখে যাচ্ছিলাম কিউপিডকে প্রানভঁরে,সেই সময় ঘটে গেল একটা দূর্বিষহ দূর্ঘটনা-বাতিটা গরম তেলসহ পড়ে গেল কিউপিডের কাঁধে।ব্যাথায় কাতর হয়ে চীৎকার করে বললো কিউপিড-“শয়তান মেয়ে এই মুহুর্তে বের হও তুমি এখান থেকে,এখানেই সম্পর্কটা শেষ আমাদের,আমি বিয়ে করবো তোমার বড় বোনকে।এরপর পশ্চিম বাতাসকে ডেকে আমাকে উড়িয়ে বের করে দিল সে”।


‘সাইকির কথা শেষ হতে না হতেই বড় বোন ছুটে গেল স্বামীর কাছে,কাঁদতে কাঁদতে বললো তার মা বাবা আর নেই,সেই মুহুর্তেই যাওয়া দরকার তার দেশের দিকে।তারপর তাড়াহুড়া করে ছুটে গেল পাহাড়ী এলাকায়-যদি ও বায়ু দেবতা তখন ছিল না পাহাড়ে ,তবুও চীৎকার করে বললো সাইকির বড় বোন, “কিউপিড এই যে আসছি আমি,শুধু আমিই যোগ্য তোমার ভালবাসার।পশ্চিম বাতাস এই মুহুর্তে নিয়ে চল আমাকে প্রাসাদে”।না দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়লো, কিন্ত পৌঁছানো হলো না তার সেই পাহাড়ি উপত্যকায়-ছিন্ন ভিন্ন শরীরটা ছড়িয়ে পড় লো চারপাশে।এটাই ছিল তার অপকর্মের পুরস্কার-বিরাট এক ভোজ বনের পাখী আর জন্তদের।

‘ঘুরতে ঘুরতে সাইকি পৌছালো আরেক শহরে-যেখানে তার মেজবোন রানী সেই দেশের।একই গল্প বললো সাইকি তার মেজ বোনকে।শয়তান বোন ছুটে গেল কিউপিডের উদ্দেশে-এখন যে সাইকির বদলে সে নতুন ভালবাসার আরেকজন।তারও আদেশ ছিল পশ্চিম বাতাসকে-আর তার শেষ পরিনতি সেই একইভাবে অভাবনীয় যন্ত্রনায়’।


০০০০০০০০০০০০০০০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: বড্ড অগোছালো মনে হচ্ছে।

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৫১

ইল্লু বলেছেন: শিশু পায়ের হোচট খাওয়া।
আপনার ধৈর্যের প্রশংসা করছি
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.