নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিয়াসের রূপান্তর Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius) The Golden Ass(ধারাবাহিক)

০৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৭:১১

১০ সাইকি আর কিউপিড(৩)

‘এই দ্বিতীয়বার প্রত্যাখান ছিল সাইকির জন্যে অসহনীয়- মনে হলো সম্ভব হবে না আর খুঁজে নেওয়া করা তার তার ডানাধারী স্বামীকে।মনে মনে বলে উঠলো সাইকি-“কোথায় যাব,কেই বা সাহায্য করবে আমাকে,ক্ষমতাশালী ঐ দেবীরাই শুধু ছিল সান্তনাএকটু ভরসা,কিন্ত তারাই ভঁয়ে কাতর,আর কোন উপায় নাই,আমার?আমার পা দুটো যে জড়ানো ভাগ্যের অদ্ভুত পরিহাসে।আছে কি কোথায় এমন জায়গা যেখানে আমি লুকিয়ে নিতে থাকতে পারবো নিশ্চিন্তে নিজেকে,জানালা দরজায় তালা দিয়েও ,নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না ক্ষমতাশালী ভেনাসের কাছ থেকে।এটাই সত্যি,সাইকি তুমি জোগাড় কর পুরুষের সাহস-সমর্পন কর নিজেকে,তোমার ভালবাসার প্রভুর কাছে।হয়তো বা যদিও দেরী হয়ে গেছে কিছু্টা-তবু সমর্পন করলে হয়তো কমিয়ে আনতে পারবে তার রাগটা।কোন ফল ছাড়া তোমার এলোপাথাড়ী না খুঁজে বেড়ানোর চাইতে-হয়তো দেখা হতে পারে করো তোমার স্বামীর সাথেও”।

‘কিন্ত সাইকির চিন্তাধারাটা ছিল বেশ বিপদজনক-অনেকটা নিজেকে ঠেলে দেওয়া যেন আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া,তবুও সেটাই শেষমেষ বেছে নিলো সে,আর কিইবা করবে,ভেনাসের কাছে নিজেকে সম্পুর্ন সমর্পন করা আর কোন উপায় নাই তার।

‘ভেনাস সোজাসুজি ফিরে গেল স্বর্গে,তার রথের বাহককে ডেকে বলল,রথ যাত্রার প্রস্ততির জন্য।সোনায় মুড়ে মোড়া দেওয়া রথটা-অভাবনীয় অতুলনীয় সৌন্দর্যে, নানান ধরণের দামী রত্নে সাজানো রথের আসন।স্বামী ভালকানের বিয়ের উপহার ভেনাসের জন্যে।চারটা ধবধবে সাদা দল ছাড়া ডোভ পাখী এসে তাদের রংধনুর গলাটা বাড়িয়ে দিল রথটা টেনে নেওয়ার জন্যে-ভেনাস উঠে পড়ার সাথে সাথে ছুটে চললো তারা বাতাসের গতি্তে।পেছনে পেছনে ছুটে চললো একগাদা চড়ুই পাখীর দল আর ছিল ছোট ছোট অন্যান্য বেশ কটা পাখীর দল,তবে সবাই ছিল নিশ্চুপ-ভেনাসের নির্দেশ মত,জানান দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না তাদের ভেনাসের আসার’।

‘সরে গেল মেঘ একপাশে,আকাশ খুলে দিল তার দরজাটা আনন্দের সাথে।গান গাওয়া পাখীরা সুর করে গান করছিল,কোন চিলের ভঁয় ছিল না তাদের,ভঁয় ছিল না কোন বাজপাখীর।ভেনাস সোজাসুজি গেল জুপি্টারের দূর্গে-তার দরকার জুপিটারের স্বর্গের দূত মারকারীকে ব্যাবহার করার অনুমতি,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।জুপিটার তার নীলাভ ভুরু কুচকে সম্মতি দিল যখন,আনন্দের অভাব ছিল না ভেনাসের চোখে মুখে।,মারকারীকে ডেকে ভেনাস বললো-“তুমি আমার স্বর্গের ভাই,তোমার সাহায্য ছাড়া কোন কাজই সম্পূর্ন করা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে,আমার পালিয়ে যাওয়া এক ক্রীতদাসীর, এখনও কোন খোঁজ পাইনি বেশ কিছু সময়।তুমি এ খবরটা ছড়িয়ে দাও চারপাশে-একটা পুরস্কারও ঘোষণা কর।তার বিবরণ ঠিক আমার জানা নাই, জানিও না অন্য কেউ জানে কি না, এই নাও এখানে আছে তার কিছু বৃত্তান্ত এটুকু জানি-আরঐ ক্রীতদাসীর তার নাম হলো সাইকি”।

‘ছোট্ট একটা খাতা মারকারীর হাতে তুলে দিয়ে, ভেনাস -সোজা ফিরে গেল তার নিজের ঘরের দিকে।মারকারী ভেনাসের আদেশমত ছুটে গেল দেশে থেকে দেশে,চীৎকাঁর করে ঘোষনা করলো চারপাশে, “শোন,শোন,শোন সবাই,যদি যে কেউ ধরে আনতে পারবে,দেবী ভেনাসের পালিয়ে যাওয়া ক্রীতদাসী এই রাজকন্যাকে নাম যার নাম সাইকি,দেবী ভেনাসের ক্রীতদাসী,বা তার কোন খবরটা পৌঁছে দিতে পারবেে স্বর্গের দূত মারকারীর কাছে তার মন্দিরে,বনদেবীর এলাকায়,রোমের পাহাড়ে-তবে অন্যন্য এক পুরস্কার অপেক্ষা করবে তার জন্যে,স্বয়ং দেবী ভেনাসের সাতটা চুমু আর মধু ভঁরা জিভটা মিশিয়ে দেওয়ার সুযোগ জিভে,যা কল্পনা্র বাইরে কারও ”।

‘বিরাট হুলস্থূল পড়ে গেল মর্তলোকে এই অভাবনীয় পুরস্কারের কথা শুনে,-এটা শোনার পর সাইকির মনে আর কোন দ্বিধা ছিল না আর ছুটে গেল সে ভেনাস দেবীর উদ্দেশ্যে।ভেনাসের বাড়ির দরজায় সাইকির-দেখা হলো এক এক দাসীর সাথে,নাম “ভেতুস হাবিতাস(পুরোনো স্বভাব),চীৎকার করে বললো ভেনাসের দাসী , “এই নোংরা,বেশ্যা মেয়ে,শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলে,তুমি আর কিছু না শুধুই এক ক্রীতদাসী।তোমাকে খোঁজা নিয়ে জন্যে কত যন্ত্রনা পোহালো লোকজন,হয়তো জানা নেই তোমার কাকমুখী।দুর্ভাগ্য তোমার,আমার হাতে পড়লে, নরকেও এর চেয়ে বেশী যন্ত্রনা নাই,এখন পাবে শাস্তি,একগুয়ে,শয়তান”।সাইকির চুলের গোছা হাত দিয়ে ধরে হিচকে টেনে নিয়ে গেল দাসী সাইকিকে ভেনাসের কাছে-যদি ও সাইকি বাঁধা দিল না কোন।

‘ভেনাসের চোখে মুখে ছিল বীভৎস অট্টহাসি-আগ্নেয়গিরির স্ফুরণের চরম প্রকাশ।ভয়াবহ একটা ভঙ্গী মুখে নিয়ে, বাম বা কানটা একটু চুলকিয়ে-তার পর ডান কানটা একটু চুলকিয়ে,প্রতিশোধের অদ্ভুত এক শব্দ-“হুম”,তার পর ভেনাস,চোখে মুখে রাগ নিয়ে বললো,“ তা হলে শেষে তুমি শেষে এলে তা হলে তোমার শ্বাশুড়ীকে দেখার জন্যে?নাকি দেখতে এলে তোমার প্রিয় স্বামীকে-যাকে নিজের হাতে পুড়িয়ে মারার ইচ্ছা ছিল?

যাকগে,এটা তোমার নিজের বাড়ী মনে করো,কোন অসুবিধা হবে না, অস্বস্তির কোন কারণ নেই তোমার।আমি একটা ভাল শ্বাশুড়ির মতই ব্যাবহার করবো,কোন চিন্তা করো না ”।ভেনাস হাতদুটোতে তালি দিয়ে ঢেকে পাঠালো তার তার দুই ক্রীতদাসকে,এনগজিটেটেম(উদ্বেগ) আর ডোলোর( বিষাদ)।অদ্ভুত আচরণ ছিল,ঐ দুইজনের,তারা সাইকিকে ,ভেনাসের সামনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে,মারতে মারতে নিয়ে গেল।

চীৎকার করে বলে উঠলো ভেনাস-“দেখ দেখ, সবাই দেখ বেশ্যা মেয়েটার আচরণ ব্যাবহার।,ওর ওই ঐ বড় পেটটা দিয়ে আমাকে সত্যি সত্যিই অভিভুত, মুগ্ধ করার চেষ্টা করছেে।নতুন মানসিক যন্ত্রণায় অস্থির আমি,ভাবতে অবাক লাগে আমার এই বয়সে-দাদি হওয়ার।ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠছে ঐ ক্রীতদাসীর কোলে আসবে আমার,পৌত্র।না,না এটা হতেই পারে না।দেবতা আর মর্তের মানুষের বিয়ে ওটাতো এমনিতেই হয়না,তারপর কোন সাক্ষী ছিল না,সম্মতি ছিল না ছেলের বাবা মায়ের,একেবারেই বেআইনী।
জেনে রাখ মেয়ে, তোমার ছেলে হবে এক জারজ সন্তান”।


‘কথাগুলো বলে উড়ে গেল ভেনাস সাইকির পাশে,ছিড়ে নিল তার কাপড় ছিন্নভিন্ন করে,ছিঁড়ে নিল মাথা থেকে একগাদা চুল,মাথাটা ধরে পাগলের মত ঝাঁকিয়ে গেল,যেন মাথাটা ছিঁড়ে নিবে শরীর থেকে।ভেনাস সাজিয়ে দিল গম,বার্লি,খুদের চাল,মসুরের ডাল,পোস্ত দানা মেশানো একসাথে মেশানো একটা স্তূপের সামনে সাইকি বসিয়ে বললোপ,“তোমার এই চেহারা নিয়ে তোমার প্রেমিক পাওয়া আর তো সম্ভব না,একমাত্র উপায় যদি শরীর খাটিয়ে কিছু করতে পার,আমি নিজেই পরীক্ষা করবো তোমাকে।ঐ যে নানান ধরনের ফসল মেশানোের স্তূপ, একসাথে ওগুলো আলাদা করে স্তূপ কর এক একটা স্তূপ করে রাখবে,ভোরের আলোর আগে,আমার জানা দরকার যে তুমি সত্যিই কোন কাজের কি না,সে ভাবেই বোঝা যাবে,তোমাকে এখানে রাখা সম্ভব কিনা”?উড়ে চলে গেল ভেনাস তারপর কোন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বা অজানা কোন এক অনুষ্ঠানে।


‘সাইকি ঐ কাজের কথা শুনে একেবারেই হতবুদ্ধি ঐ কাজের কথায়,কোন উদ্যোগ ছিল না তার,চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া আর কিই বা করতে পারে সে, এক শূন্য দৃষ্টি নিয়েতে নিজেতে নিজে হারিয়ে ছিল কোন এক অজানায়।,ঘটনাচক্রে ছোট্ট একটা পিপড়া হেঁটে যাওয়ার সময় সব কিছুই শুনে গেল।প্রেমের দেবতার সহধর্মিনীর ওপর শ্বাশুঁড়ির অত্যাচারের ধরণ দেখে সমবেদনায় ডেকে আনলো সে আশেপাশের সব পিপড়াদের দল।অনুরোধ করলো সবার কাছে,“ভাই বোনেরা আমার,মর্তের সন্তানেরা,এই হতভাগী মেয়েটার প্রতি দয়া কর সবাই,ভালবাসার দেবতার প্রেমিকা সাইকির বিপদ,আমাদের সাহায্য করা উচিত,দয়া করে,তার রক্ষায় নেমে পড় সবাই তার সাহায্যে”।


‘পিপড়ার দল একের পর এক ছুটে গেল সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছটা পায়ে তাদের,জোরেসোরে সবাই চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের কাজ,এক একটা করে গম,বার্লি,মসুর,খুদি যেন গুনে গুনে আলাদা করে স্তূপ সাজিয়ে চলে গেল পিঁপড়ারা।

‘দিনের আলোর শেষে মাতাল ভেনাস ফিরে এলো,ফুলের মালায় জড়ানো এপাশ ওপাশ সারা শরীর,কামনায় হারানো কিছুটা অন্য এক জগতে তখন সৌন্দর্যের দেবী।অবাক চোখে দেখলো কি অদ্ভুত ভাবে সাইকির কাজ শেষ করে বসে আছে চুপচাপ ,“এর একটুকু ও যে তুমি করনি সেটা আমি জানি, কাকে তুমি বশ করলে আবার,কাকে তুমি বশ করেছ ডাইনী।ঐ আনন্দ থাকবে না, ভেব না দুঃখ আসছে তোমার কপালে,তুমি ও হবে যোগ দিবে ঐ হতভাগাদের দলে”।ছুড়ে দিল দেবী ভেনাস একটা রুটির টুকরা সাইকির রাতের খাবারের জন্যে,তারপর শুতে সোজা বিছানায় চলে গেল।

‘এদিকে ভেনাসের কথামত কিউপিডকে বন্ধী ছিল তার ঘরে,এলোপাথাড়ি প্রেমের খেলায় তার শারীরিক সুস্থতার ব্যাঘাত যাতে না হয়,হঠাৎ দেখাও যেন না হয় তার সাইকির সাথে।পাশাপাশি দুই প্রেমিক প্রেমিকা পাশাপাশি তবুও যেন হাজারো যোজন কতদুরে’।

‘কদিন পর,সৌন্দর্যের দেবী ভেনাস আবার ডেকে পাঠালো সাইকিকে, “দেখছ ঐ যে দুরে ছুটে যাওয়া ছোট্ট নদীটা,ওর ধারে অনেক ফলের গাছ আছে,আর পাশে ঝুলে থাকা ফলগুলো খেতে আসে সোনালী ভেড়ারা,কোন রাখাল নেই সেখানে।আমার চাই ঐ সোনালী ভেড়ার পশম একগাদা,একটা সোনালী শাল বুনতে চাই,পশম নিয়ে আসার দায়িত্ব তোমার,জানিনা কি ভাবে আনবে সেটা তুমি”।

‘সাইকির বলার আর কিছু ছিল না,শুধু চুপচাপ ভেনাসের কথা শুনে উঠে গেল -তবে তার কোন ইচ্ছা ছিল না ভেনাসের আদেশ পালনের,বরং তার ইচ্ছা হচ্ছিল পাহাড়ি নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে কষ্টের জীবনটা শেষ করে দিতে।একপাশে ঝুলে থাকা বাঁশের এক ডগা অনেকটা দেখতে অনেকটা বনদেবতা পানের বাঁশির মত,স্বর্গের বাতাসে দুলে দুলে বাঁশের ডগা ফিস ফিস করে সান্তনা দিয়ে সাইকির কানে বললো কটা সান্তনার কথা,“দাঁড়াও দাঁড়াও অধৈর্য হবে না, সাইকি ,অনেক কষ্ট করেছ তুমি,তবে আত্মহত্যা করে দূষিত করো না এই পবিত্র নদীর পানি।আর তুমি নিজের জীবনে বিপদও টেনে এনো না ঐ ভয়ঙ্কর ভেড়াদের কাছে গিয়ে,অপেক্ষা করে,অপেক্ষা কর বিশেষ সময়ের জন্য।তুমি হয়তো জানো না রোদের তাপ এমনই পাগল করে দেয় ঐ ভেড়াদের,ওদের আশেপাশে কেউ গেলেই ওরা ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে তাকে।

হয়তো শিং এর গুতায়,না হয় ওদের পাথরের মত শক্ত মাথার ধাক্কায়, না হয় ওদের বিষাক্ত দাঁতের কামড়ে শেষ হবে যেই যাক না তাদের পাশে।অপেক্ষা কর সাইকি, অপেক্ষা কর গোধূলির আলোর জন্যে,মৃদ্যু ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়া নদীর গান ওদের চোখে নিয়ে আসে ঘুম নিয়ে আসে যখন।তুমি যেয়ে লুকিয়ে থাকবে ঐ লম্বা গাছটার নীচে,আমার মতই থাকবে নদীর পানির কাছাকাছি।ভেড়াগুলো ঘুমিয়ে পড়লে,তুমি দেখবে, ঐ জঙ্গলের কাঁটা গাছগুলোতে আটকে থাকা আছে একগাদা পশম,আর তোমার কাজও সিদ্ধ হবে”।

‘বাঁশির বাঁশের উপদেশ ছিল সত্যি সত্যিই বেশ উপকারী,সেই সন্ধ্যা বেলায় ভেনাসের জন্যে একগাদা দুর্লভ পশম নিয়ে ফিরে গেল সাইকি।সবকিছু দেখে ভেনাস অবাক, চোখে মুখে তবুও একগাদা অতৃপ্তি, রাগে ভুরু কুচকে বললো সাইকিকে-“আমি জানি কেউ না কেউ সাহায্য করছে তোমাকে।কিন্ত বুঝবে এবার,আমি দেখতে চাই তোমার সাহস আর দূরদর্শিতা কেমন।দূরে ঐ যে দূরে পাহাড়ের চূড়া দেখছ,কালো পানির এক ঝর্না ছুটে যাচ্ছে পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের পাহাড়ে,ভাসিয়ে নিয়ে যায় জন্ম,মৃত্যু ভাগ করা নদী স্টিসের জলা এলাকায়,মিশে যাওয়া যায় ওইয়েলিং নদীতে।এই যে একটা জগ-নিয়ে যাও ভরে নিয়ে আস ঐ পাহাড় ভেঙ্গে দেওয়া এলাকার কালো পানি”।

‘সাইকির হাতে ঝকঝকে একটা কাঁচের জগ সাইকির হাতে তুলে দিয়ে চলে যাওয়া গেল ভেনাসের-আর বলে দিল ঠিকমত কথা না শোনার পরিনতি কি হবে তার।


‘সাইকি ছুটে গেল,এরোনিয়াস পাহাড়ের দিকে,একটু আশা মনে ভেবে নিশ্চয় একটা না একটা উপায় হবে তার এই দূর্ভাগ্যের জীবনটার সমাপ্তি,শেষ হবে কোন না কোন ভাবে অযথার টানা পোড়েন থেকে উদ্ধার পাবে,সে।যতই কাছে পৌচাচ্ছিল সে ততই বুঝে উঠলো কত দূর্গম,দুঃসহ ঐ যাত্রা, কত অভাবনীয় বিপদে ভঁরা কাজটা।পাহাড়ী নদী,স্টিক্সের জল বয়ে যাওয়া নিচের উপত্যকায়,ভাসিয়ে নিয়ে যায় চারপাশ, দুটো হিংস্র ড্রাগনেরা সারি করে পাহারা দেয়,ওয়া আলো অন্ধকার সব ছাড়িয়ে,ছুয়ে যায়ওয়া তাদের লম্বা গলা।বয়ে যাওয়া জলের স্রোত যেন সুর করে বলে যাচ্ছে- “সরে দাঁড়াও,সরে দাঁড়াও সবাই।ইচ্ছে থাকলে ইচ্ছে কর।ভুলে যেও না এটা মৃতের দেশ,মৃতের দেশ এটা”।

‘স্তম্ভিত পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ছিল সাইকি,বুঝতে পারলো ভেনাসের ফাঁদ ছেড়ে বেরোনো তার পক্ষে অসম্ভব,চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই নাই,তার নারীত্বের আত্মমর্যাদার শেষ সম্বল।টেমপুস(কিন্ত সময়) তার দুরদর্শিতার হাত বাড়িয়ে দেয় নির্দোষের সাহায্যে।সময়ের সাহায্যে,টেমপুসের(সময়ের)পরামর্শে ছুটে গেল জুপিটারের হিংস্র বাহন,বাজপাখীটা।কিউপিডের সাহায্যের কথা ভুলে যায়নি বাজপাখী সে,কিউপিডের সাহায্য ছাড়া হয়তো কোন রকমেই পূর্ন করা যেত সম্ভব হতো না তার পক্ষে জুপিটারের আদেশ পূর্ন করা,গানিমিড,ফিরিজিয়ান যুবরাজকে নিয়ে আসা স্বর্গে নিয়ে আসার কাজ কোনদিনই সম্ভব হতো না,জুপিটারের মদ আনার সঙ্গী হিসেবে।

যেহেতু সাইকি কিউপিডের সহধর্মিনি,তাকে সাহায্য করা বাজপাখীর একটা নৈতিক দায়িত্ব,চিৎকাঁর করে বললো জুপিটারের বাজপাখী, “বোকা,অবুঝ সাইকি কিভাবে তোমার ভাবলে তুমি চিন্তা করা নিয়ে যাবে যেতে পারবে একফোটা জলও স্টিক্স নদীর।হয়তো তুমি জান না,স্বয়ং জুপিটার তারও ভঁয় এই নদী স্টিক্সকে।তুমি যে দেবতাদের পূজা কর,সেই দেবতাদের হাতেই সম্পুর্ন স্বাধীনতা দেওয়া স্টিক্সকে।দাও আমাকে দাও ঐ পানির মগ”।বাজপাখী অনেকটা উড়ে গিয়ে অনেকটা কেড়ে নিল পানির মগটা,ধরে থাকা সাইকি ধরে ছিল দুই হাতের মাঝে-পাখায় মগটা তুলের মধ্যে নিয়ে চলে গেল জুপিটারের বাহন।আঁকাবাঁকা ভাবে উড়ে গেল দুই সারির ড্রাগনদের মাঝে- বের করা হিংস্র দাত,তিন ভাগ করা জিভ,ছাড়িয়ে তার পচ্ছন্দ মত জায়গায়।সাবধান করে দিল ছোট্ট নদীটা-জুপিটারের বাহনকে, “ যত তাড়াতাড়ি পার চলে যাও,এখান থেকে”।উত্তর ছিল তার,ভেনাসের দরকার স্টিক্সের পানি,এই অজুহাত দেখালো,যেটা ছিল সম্পূর্ন বিশ্বাসযোগ্য,পানি ভঁরা সাইকিকে এনে দিল জুপিটারের বাহন বাজপাখী,আনন্দে মনভঁরা সাইকি।

‘ভেনাসের কাছে নিয়ে গেল সাইকি ষ্টিক্সের পানি,তবুও তৃপ্তি ছিল না ভেনাসের,তবুও কমে নি তার উন্মাদনা।আরও কঠিন পরীক্ষার প্রস্ততি তখন ভেনাসের মনে-একটু মুছকি হাসি ঠোঁটের কোনে,লুকোনো সেখানে সাইকির সর্বনাশের কল্পনা,।ভেনাস বললো- “তুমি নিশ্চয় একটা ডাইনী,ভয়ংকর কোন একটা ডাইনী,না হলে জানি না-তোমার পক্ষে কি ভাবে সম্ভব হলো এ কাজগুলো শেষ করা।দাঁড়াও নতুন ,আরেকটা কাজটা করতে দিলাম তোমাকে আছে তোমার,আমার এই বাক্সটা নিয়ে যাও মরলোকে( অধোলোকে),প্লুটো দেবতার প্রাসাদে।বাক্সটা রানী প্রসপেরিনের হাতে তুলে দিয়ে বলবেঃ “ এটা দেবী ভেনাসের দেওয়া,আপনার সৌন্দর্যের শুধু একটুকু চাওয়াই দেবী ভেনাসের,বেশী কিছু না একটু,শুধু ছোট্ট একটা দিনের জন্য।তার সৌন্দর্যে সুস্থতা ফিরে আসবে, তার,ক্ষয়ে যাওয়া কিছুটা অসুস্থ সন্তানের সেবা শুশুষ্রায়”।এরপর বাক্সটা নিয়ে ফিরে আসবে,আজকের অলিম্পিকের নাটক ঘরে দরকার সেটা আমার,সাজগোজের জন্যে”।

‘সাইকির জানতো তার পরীক্ষার জন্যে ভেনাস তাকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে,শেষ মাত্রায় পৌঁছানো হয়তো,এবার যেখানে পাঠাচ্ছে তাকে ভেনাস সেটা পরপারের শেষ এলাকায় তারতারাসের রাজ্যে।ভেনাসের এবার তাকে খোলাখূলি পাঠিয়ে দিচ্ছে মৃতদের দেশে।সেই মুহুর্তেই ছুটে গেল সাইকির পাশের মন্দিরের চিলেকোঠায়-ভাবলো দরকার কি সেখান থেকেই যে ঝাঁপিয়ে পড়াই ভাল,দেরী না করে,এই জীবনের পরিনতি টেনে আনাটাই ভাল। ভেবে।কিন্ত চিলে কোঠাটা বলে উঠলো মানুষের ভাষায়, “দুঃখী মেয়ে,সাইকি, কেন ঝাপ দিতে চাও আমার এখান থেকে?কেন হারাচ্ছো সব আশা, তোমার বিচার হওয়ার আগেই।এ টুকু বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয় আছে তোমার-যে মুহুর্তেই নিশ্বাস ছেড়ে যাবে তোমার শরীর,তুমি চলে যাবে,তারতারাসের রাজ্যে,সেখানে যাওয়া আছে কিন্ত ফিরে আসা নেই।

আমার কথা শোন,লাসাডা বেশ নাম করা একটা শহর গ্রীসের,এখান থেকে খুব একটা বেশী দুরেও না,এখনই চলে যাও সেখানে,খোঁজ করে জেনে নিবে তায়েনেরাসের যাওয়ার রাস্তাটা,শহর ছাড়িয়ে বেশ কিছুট দূরে সেটাা অজানায়।ছোট্ট একটা উপদ্বীপ,কিছুটা দক্ষিনের দিকে।সেখানে ছোট্ট একটা গর্ত আছে যার যোগাযোগ মরলোকের (অধোলোকের) রাজ্যের সাথে।মাথাটা কোন রকমে গুজে নিয়ে ঢুকালে দেখবে,দেখা যাবে অধোলোকের যাওয়ার রাস্তাটা, সোজা চলে যাওয়া যাবে পাহাড়ের ঢলার দিকেয় -খুব একটা চলাচলও নেই সে দিকে।ধীরে ধীরে নেমে যাবে সেখানে-রাস্তাটা নিয়ে ধরে এগিয়ে গেলেই দেখবে সোজা নিয়ে যাবে তোমাকে প্লুটোর প্রাসাদে।তোমাকে বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম যাওয়া আমার-দু হাতে মধুতে ভেজানো দুটো রুটি নিতে ভুলো না কিন্ত,আর সাথে মুখে নিও দুটো দুটা রুপোর টাকা।

‘”রাস্তা দিয়ে কিছুটা হেঁটে যাওয়ার পর দেখা পাবে,একটা খোঁড়া গাধা পিঠে চড়ানো কাঠের বোঝা,যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সে মানুষটাও খোঁড়া একপায়ে,তারা তোমাকে বলবে যদি দয়া করে তুলে দাও তার কাঠ বাঁধার রশিটা,কোন কথা না শুনে এগিয়ে যাবে সোজা,ভুল করো না কিন্ত।এবার হেঁটে যাবে পরপারের নদী স্টিক্স না আসা পর্যন্ত,পারাপারের নৌকায় দেখা হবে নিয়ে সেখানে পাবে মাঝি চারনকে।নৌকাতে পার হওয়ার জন্যে,চারনকে দেখার সাথে সাথে ভাড়া দিতে হবে নৌকার।,একটা রুপার টাকা আর ভাড়া দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া ঐ নৌকাটায় অশরীরী আত্মাদের ভিড়েই,ওর মাঝেই যেতে হবে তোমাকে ওপারে।মনে হয় ওটা এভারিসের এলাকা, মনে রেখ,না চারণ না তার প্রপিতামহ আত্মীয়স্বজন কেউই কোনকিছুই করে না বিনিময় পয়সা ছাড়া।(মৃত মানুষের দাঁতের ফাঁকে রুপোর টাকাটা না থাকলে, যাওয়ার উপায় নেই কোন পরপারে,সেটা তো সত্যি কারের মৃত্যু না,জিবন জীবন মৃত্যুর মাঝে ঝুলে থাকা স্টিক্সের এপারে)।

যাই হউক ঐ গুণ্ডাটাকে দেবে একটা রুপোর টাকা-আর হ্যা,একটা কথা মনে রাখবে,টাকাটা ওর হাতে তুলে দিবে দিবে না কিন্ত,তোমার দাঁতে ধরা অবস্থায় নেয় যেন।নৌকায় পার হওয়ার সময় দেখা হবে,এক উড়ে যাওয়া বুড়ো মানুষের সাথে-অনেক অনুরোধ করবে তোমাকে তাকে নৌকায় টেনে নেওয়ার জন্যে,অবজ্ঞা করো কোন দয়া দেখাবে না আবার,একেবারেই বেআইনী হবে সেটা।ওপারের ঘাটে পৌছেই দেখবে-তিনজন বয়স্কা মহিলা কাপড় বোনায় ব্যাস্ত ব্যোনায়,তোমাকে দেখাই দেখে তারা ওরা অনুরোধ জানাবে করবে,তাদের সাহায্য করার জন্যে,মনে রেখ ভুলেও ওই ঐ কাপড়টা ছোঁয়ারও নিয়ম নেই,ছুবে না কিন্ত।এই মায়াবী ফাঁদগুলো ভেনাসের তৈরী করা তোমাকে ফাঁদে ফেলার জন্যেের বানিয়ে করা শুধু তোমার জন্যে,উদ্দেশ্য একটা মধু ভেজা রুটির টুকরা নেওয়া যায় যেন,আর তোমার মর্তলোকে ফিরে আসার কোন উপায় যেন না থাকে।ওই রুটিগুলো লাগবে তোমার সেরেবেরাসকে দেওয়ার জন্যে,তিন মাথার কুকুর যার চিৎকারে ভঁয় পায় কি মৃত আত্মারাও,যদিও মৃত আত্মাদের ভঁয় পাওয়ার কিছু নেই,ওরা তো শুধু ছায়া এক একটা,ওদের ছোঁয়ার কোন উপায় নেই তার।

‘ “সেরবেরাসের দায়িত্ব হলো প্রসপেরিনের প্রাসাদ পাহারা দেয়া-অন্ধকার,জনশূন্য এলাকায় ঐ প্রাসাদে,প্রসপেরিন আর তার স্বামী প্লূটোর বসবাস করে সেখানে।একটা রুটি ভেজা রুটি ছুঁড়ে দিও,দেখবে প্রসপেরিনের কাছে পৌছাতে কষ্ট হবে না তোমার।প্রসপেরিন তোমাকে আমন্ত্রন জানাবে সাদরে,সুন্দর একটা আসন বসার,ভাল ভাল খাবার।তুমি অনুরোধ করবে মেজেতে বসার জন্যে,শুকনো একটা রুটি ছাড়া খাওয়ার।তারপর তোমার আসার কারণটা জানাবে,প্রসপেরিন তোমার অণুরোধ পুরন করতে কোন দ্বিধা করবে না।

“ বেরিয়ে ঐ হিংস্র কুকুরটাকে ছুঁড়ে দিও আরেকটা রুটি,তোমাকে যেতে দেওয়ার জন্যে একটা ঘুষ।ঘাটে গিয়ে ঐ লোভী মাঝিটাকে আরেকটা রুপোর টাকা দিয়ে পার টাকা দিয়ে পার হবে স্টিক্স নদীটা।ভুলেও তোমার হাতের বাক্সটা খুলে দেখতে চেও না,ঐ স্বর্গীয় উপহার মর্তের মানুষের জন্যে নয়”।

‘স্বর্গীয় উপদেশ বানী শুনে- অপেক্ষা না করে সাইকি ছুটে গেল তায়েনেরাসে,উপদেশ মত সাথে দুটো রুপোর টাকা,মধু ভেজা রুটি নিয়ে সাইকির যাত্রা শুরু হলো মরলোকের (অধোলোকের) রাস্তায়।উপদেশ মত বুড়ো লোকটাকে উপেক্ষা করে,সেরবেরাসকে রুটি দিয়ে,প্রসপেরিনের প্রাসাদে মেজেতে বসে,বন্দ বন্ধ বাক্স নিয়ে চারণকে রুপোর টাকাটা দিয়ে ফিরলো।সাইকি নতুন এক মানুষ-এক নতুন এক জীবন ফিরে আসা তার জীবনে,উদ্দীপনায় নতুন সজীব এক চেহারা।সকালের আলোয় প্রার্থনা করে ধন্যবাদ জানালো দেবদেবীদের সাইকির-কিন্ত কৌতুহলে ভরপুর তার মন,ভাবছিল“এটা একটা চরম বোকামী হবে,বাক্সটা হাতে পেয়েও স্বর্গীয় সৌন্দর্য নিজের জন্যে কিছুটা রেখে না দেয়া ,আর সেটা আমার ভালবাসার দেবতাকে খুশী করতে কিছুটা কাজেও লাগবে”।

‘বাক্স খুলে সাইকি দেখে কিছুঁই নাই সেখানে,লুকানো ছিল স্টিক্সের চির নিদ্রার কুয়াশা,সাইকির অজানায় যা অজানায় টেনে নিয়ে গেল সাইকিকে এক অজানা ঘুমের দেশে।উপুড় হয়ে পড়ে রইলো থাকলোা সাইকি যেন একটা মৃতদেহ,পাশে খোলা বাক্স।

‘এর মাঝে কিউপিড তখন বেশ কিছুটা সুস্থ -প্রেমিকা সাইকিকে দেখার জন্যে তার মন বড্ড কাতর।কিউপিড ভেনাসের আদেশে সারাটা সময় ছিল ঘরে বন্ধী,এক ফাঁকে কোন রকমে কিউপিড বের হয়ে এলো গেল বন্ধ ঘরের জানালা দিয়ে,যেখানে তার মা ভেনাসের হাতে বন্দী ছিল সে।আর কিছু না হউক হোক,বিশ্রাম আর সুস্থতায় কিউপিডের ডানাদুটো তখন জীবন পাওয়া,এক নতুন গতি আর উৎসাহে নিয়ে উড়ে গেল কিউপিড সাইকির খোঁজে।বাতাসের কাছে সাইকির খোঁজ পেয়ে ছুটে গেল,পৌঁছে দেখে পড়ে আছে সাইকি,যেন জীবন নেই সেখানে, দেখার পর কিউপিড -স্টিক্সের কুয়াশা সরিয়ে ফিরিয়ে দিল বাক্সে।আর একটা তীরের খোঁচা দিয়ে কিউপিড বলে উঠলো-“বোকা মেয়ে,তোমার কৌতূহল আবার নিয়ে যাচ্ছিল তোমাকে চরম বিপদে।জেগে ওঠ ওঠো আমার মার দেওয়া দায়িত্ব পালন করে ফিরে যাও”।কথা শেষ করেে উড়ে চলে গেল কিউপিড,আর সাইকি তাড়াহুড়া করে প্রস্ততি নিল বাক্সটা নিয়ে ভেনাসের কাছে যাওয়ার জন্যে।

‘কিন্ত কিউপিড সাইকির প্রেমে হারানো মত্ত আরও,ভেনাসের নতুন চেহারাটায় বিশ্বাস ছিল না কোনভাবেই তার,আরও যে কত বিপদ আসতে পারে ভেবে,কিউপিড ছুটে গেল কিউপিড স্বর্গের শেষ মাথায় জুপিটারের কাছে।জুপিটারেরর পা দুটো জড়িয়ে ধরে জানালো তার নিবেদন।জুপিটার কিউপিডের গালে আলতো হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো-“দুষ্টু ছেলে,জান দেবতাদের পরিষদের সিদ্ধান্ত আমাকে শ্রদ্ধা জানানোর কথা,তোমার তো সময় নেই শুধু ছুটে ছুটে তোমার তীরগুলো ছুড়ে যাচ্ছ চারপাশে -আমি স্বর্গের রাজা,রক্ষাকর্তা সৃষ্টির চার উপাদানের,নিয়ম ছাড়া সব কিছু নষ্ট হয়ে যাবে এটা তোমার অজানা না।

তুমি মর্তলোকের মেয়েদের সাথেও প্রেম,ফষ্টিনষ্টি করতে ছাড়নি,যেটা স্বর্গীয় বিধানের বাইরে-অশান্তি ,ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে- জুলিয়ানের বিধান সেটাকেও অসম্মান নেই করতে দ্বিধা করনি,তুমি আমার নাম,ক্ষমতাকে টেনে নিয়ে গেছ কাদামাটিতে,তোমার ঐ নোংরা ভালবাসার খেলায়, স্বর্গের রূপটাকে বদলে দিয়েছ তুমি একটা ভয়ঙ্কর জন্তূর রাজ্যে-তুমি যেন একটা পিশাচ বিভৎস সাপ,একটা জংলী জন্ত,সব নষ্ট করে তছনছ করে দেওয়া আগুন হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ,তুমি।তবুও আমি ভুলে যাইনি আমার কোলে তোমাকে নিয়ে খেলা করার কথা্-তোমার অতসব নোংরা কাজের পরও বল কি করতে হবে তোমার জন্যে?ভুলে যেও না তোমার সুন্দরী বৌকে কত ঘৃনা করে একজন,আর যে তোমাকে সাহায্য করবে কিছু উপহার দিতে ভুলবে না তাকে।আর আমাকের পরিচয় করিয়ে দি্তে ভুলবে নাও মর্তের এই সুন্দরীর সাথে”।

‘এরপর জুপিটার মারকারীকে ডেকে জানালো পাঠালো দেবতাদের এক অধিবেশন ঘোষণা করার জন্যে,না আসার জরিমানা ১৫,০০০ ড্রাকমা।জরিমানার পরিমান আর জুপিটারের আদেশ- অধিবেশনে উপস্থিত ছিল হলো মোটামুটি সবাই,শক্তিশালী জুপিটার তার সিংহাসনে ভারিক্কী রাজকীয় গলায় দেবতাদের উদেশ্যে বললোঃ

“ দেবতারা,মিউসের খাতায় আপনাদের সকলের নাম লেখা আছে,এই অধিবেশনে আসার জন্যে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।আমার সামনে বসে আছে এই যে এই ছেলেটা-যদিও তার বিরুদ্ধে হয়তো আছে অনেক বদনাম,তবে কোলে পিঠে করে আমি মানুষ করেছি ওকে ।আমি জানি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নাই-প্রতিদিনই আমার কাছে আছে,একটা ছেড়ে অভিযোগে আরেকটা অভিযোগ।তাই আমি ঠিক করলাম,ঐ শয়তানটাকে বিয়ের শিকলে বাঁধা বেঁধে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই ,আর এর জন্যে খুঁজেও পাওয়া গেছে সেই বিশেষ একটা মেয়েটা,যার নাম সাইকি,সে সত্যি সত্যিই ভালবাসে, আমার এই শয়তান ছেলেটাকে,এর পক্ষে বিপক্ষে আর কোন কিছু শোনার ইচ্ছে নেই আমার,এটাই আমার আদেশ,আমার ইচ্ছা”।


‘এর পর জুপিটার ভেনাসকে ডেকে বললো- “তোমার লজ্জা বা দুঃখ করার কিছু নেই,স্বর্গে তোমার সামাজিক খ্যাতির কোন ব্যাঘাত হবে না,আমি নিজে ব্যাবস্থা করছি যেন তোমার ছেলের বিয়ে হয় যেন সামাজিক সমকক্ষতায়,বিধানমত,বিয়ের আইন কানুন মেনে নিয়ে”।মারকারীকে ডেকে পাঠালো জুপিটার,সাইকিকে সাথে সাথে নিয়ে আসার জন্য। মারকারী জুপিটারের আদেশ মত সাথে মারকারী সাইকিকে সাথে নিয়ে এলোগেল জুপিটারের কাছে,।জুপিটার এক গেলাস গ্লাস অমৃতসুধা নিয়ে সাইকিকে হাতে তুলে দিয়ে বললো, “এটা খাও,এখন তুমি হবে মৃতুঞ্জয়ী ,তুমি একজন দেবী আজ থেকে,কিউপিড আটকে থাকবে তোমার ভালবাসার বাঁধনে,উড়ে যাওয়ার উপায় থাকবে না আর”।

‘বিয়ের খাওয়ার বিরাট আয়োজন চারপাশে,কিউপিডকে নিয়ে বসলোা সম্মানের আসনে,সাইকির মাথা লুকোনো কিউপিডের বুকে,পাশে জুপিটার,জুপিটারের পাশে জুনো,তারপর অন্যান্য দেবতারা তাদের সামাজিক অবস্থান মত।জুপিটারের জন্য তার বিশেষ কাজের ছেলে গানিমিইড নিয়ে আসলো অমৃতসুধা,বাচ্চুসের দায়িত্ব ছিল অন্যান্য সবার দেখাশোনা করা,ভালকানের ছিল খাবার দাবারের দায়িত্বে,সময় দেবতা নিজের হাতে সাজিয়ে দেওয়া দিল পুরো বিয়ের আসর লাল গোলাপ,অন্যান্য বিয়ের ফুলের সাজে,উর্বতার দেবী গ্রেস ছিটিয়ে দিল আর্শীবাদের জল,মিউস বাজাচ্ছিল তার বাঁশি আর গেয়ে যাচ্ছিল তার গান,নাচলো তার সাথে আধেকঅর্ধেক মানুষ আধেক অর্ধেক দেবতা সাটাইরস,পেনিসকাস।সবশেষে এপোলো তার বাদ্যযন্ত্র লায়ার নিয়ে,সুরের মাধুর্যতায় ভেনাস নিজেই মেতে উঠলো নাচে।স্বর্গের আনুষ্ঠানিক বিধান মতে সাইকির বিয়ে হলো,আর হ্যা, সময় মত তাদের ঘরেকোলে এলো আসলো একটা মেয়ে,বিয়াটিটুডিনেম( আনন্দ)’।

০০

পাশে দাড়িয়েই আমি শুনছিলাম এই সুন্দর গল্পটা,যদিও বলা এক মাতাল বোকা বুড়ির,দুঃখ এটা লেখার কোন উপায় নেই আমার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.