নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিয়াসের রূপান্তর (সোনার গাধা) Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius) The Golden Ass(ধারাবাহিক)

২৩ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:০২

‘ঠিক আছে বলে ফেল,প্রথম থেকেই বল’।
‘বলছি তবে,যে সরকারী কর্মচারীর কথা বলছি,রাজদপ্তরে বেশ সম্মানজনক পদ ছিল তার,তা ছাড়া স্বয়ং সম্রাট ও ছিল তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তবে শত্রুর অভাব ছিল না তার, যারা নানান ষড়যন্ত্র করে তাকে নির্বাসনে পাঠালো।সাথে গেল তার স্ত্রী প্লোটিনাও,স্বইচ্ছায় স্বামীর সাথে নির্বাসনে যেতে কোন দ্বিধা করেনি সে,শহরের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণায় ভঁরা মন তখন তার,ার সে তো স্বামীর সুখদুঃখের সঙ্গী।যাওয়ার আগে চুল কেটে ছোট করে নিল প্লোটিনা,পুরুষের কাপড়,কোমরে লুকানো সোনার মোহর,অলঙ্কার।পাহারাদারদের খোলা তলোয়ারেও ভঁয় ছিল না তার,পুরুষের মত স্বামীর বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ায় দ্বিধাও ছিল না কোন।তাদের পাঠানো হলো জাকাইনতাসে নির্বাসনে,একতিয়াম উপসাগরে ছোট্ট একটা দ্বীপ,সমুদ্র সেখানে বেখাপ্পা নিজের সুরে,অনেকটা অত্যাচারের উপরে অত্যাচার’।

‘ম্যাসেডোনিয়া,ছেড়ে তখন আমরাও জাঁকাইনতাসে,অভিযানের পর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।একদিন রাতে আমরা যখন তাদের থাকার জায়গায় হানা দিয়ে সবকিছুঁ লুটপাট করে নিয়ে যখন বাইরের দরজার কাছে,প্লোটিনা চীৎকারের পর চীৎকার করে নাম ধরে ডাকা আরম্ভ করলো ক্রীতদাসদের, তারপর স্বামীর ঘরে গিয়ে আবার চীৎকার করলো,
“ডাকাত,ডাকাত”।

চীৎকারে আশেপাশের লোকজন ও ছুটে আসলো ক্রীতদাসদের সাথে,তবে আমাদের সৌভাগ্য যে ক্রীতদাসরা কোন এক কারণে ভঁয় পাওয়ায় সে যাত্রা কোন ভাবে রক্ষা হলো আমাদের’।
আহত হলো সেই প্রাক্তন কর্মচারী।

‘এই সম্ভান্ত্র মহিলা,হ্যাঁ তাকে আমি সম্ভান্ত্র মহিলাই বলছি-কোন ক্ষমা চাইবো না এর জন্যে,সম্রাটের কাছে গিয়ে আবেদন জানালো,আহত স্বামীর পক্ষে,অযথার এই যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করে তার সেবা শুশুষ্রার যথাযথ ব্যাবস্থার জন্যে।তার আবেদনে অভিভূত হয়ে সম্রাট ডেকে পাঠালো প্লোটিনা আর তার স্বামীকে রাজসভায়।শুধু তাই না সম্রাট আদেশ দিল,
হায়েমুস ডাকাত দলকে নির্মুল করার জন্যে আর সিজারের আদেশের গুরুত্ব সেটা কারই বা না জানা।রীতিমত সৈন্যবাহিনী পাঠানো হলো আর আমাদের খুঁজে খুঁজে ধাওয়া করা তাদের, এক এক করে পুরো দলটাই শেষ হলো তাদের,কোন ভাবে বেচে ছিল শুধু একজন,সেটা আমিঃমৃত্যুর হাত থেকে ছুটে আসা একটা মুখ।কখনও মেয়েদের পোষাকে,মাথায় টুপি, গ্রামের কাজের মেয়েদের জুতা পায়ে,বার্লি বয়ে নেওয়া গাধার পিঠে চড়ে সৈন্যদের চোখ এড়িয়ে কোনভাবে পালানো আমার।কোন দাঁড়ি ছিল না তখন,চেহারায় তখন টুকটুকে লাল গালের ছোট্ট এক ছেলেমানুষ,আমি।এর পরেও আমার কার্যকর্ম,আমার বাবার জন্যে কোন দূর্নাম এনে দেওয়ার কথা না।একা একাই আমি বেশ কটা ডাকাতি,লুটপাট করেছি,এই মেয়েদের পোষাক পরেই আর এ ভাবেই কিছু সোনার মোহর জোগাড় করেছি আমি’।

জামাটা ছিঁড়ে,শ তিনেক সোনার মোহর বের করে,হায়েমুস বললো। ‘এটা দলের তহবিলে আমার অবদান,বলতে পার এটা আমার দেয়া যৌতুক।সবাই রাজি হলে,আমি দলের লাগাম হাতে নিতে পারি,এ গুহার চারপাশটায় সোনায় মুড়ে দেব সকলের যথাযথ সহযোগিতায়’।



লুসিয়াসের রুপান্তর-একাদশ অধ্যায়

ডাকাতদের কারও দ্বিধা ছিল না-হায়েমুসকে নেতা হিসাবে বেছে নিতে।লুটের কাপড় চোপড়ের মধ্যে থেকে একটা পোষাক পচ্ছন্দ করে,বের করে দিল নতুন নেতার জন্যে।পুরোনো ছেঁড়া কাপড়চোপড় ফেলে দিয়ে নতুন পোষাক পরে নিল হায়েমুস।নেতা পচ্ছন্দ করার বিরাট আনুষ্ঠানিক ভোজে হৈ চৈ চলছিল চারপাশে,আর নতুন নেতার আসনে বসে ছিল হায়েমুস। ডাকাতেরা হায়েমুসকে চারিতের ব্যাপারে মোটামুটি একটা বর্ননা দিল তাকে অপহরণ করা থেকে আরম্ভ করে ছুটে পালানোর ঘটনা,বিচারে তার মৃত্যুদন্ড।হায়েমুস শিকলে বাঁধা চারিতকে দেখে নাক সিটকে বললো, ‘আমার যদি এ শাস্তিতে সম্মতি নাও থাকে তবুও সেটা নিয়ে কথা কাটাকাটি করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।নেতা হিসাবে সকলের সম্মতিই আমার সম্মতি,আমি তার বিপক্ষে হলেও।আমার মতামত হলো বুদ্ধিমান ডাকাতেরা তাদের ব্যাক্তিগত বিদ্বেষ একপাশে সরিয়ে রাখে সমষ্টিগত লাভের জন্য,যদিও সেটা অনেকটা শাঁখের করাত যেন।চারিতেকে গাধার শরীরে সেলাই করে ফেলে রাখলে প্রতিশোধ নেয়া হবে ঠিকই তবে সেটাতে লাভ না হবে দলের কারও,আমার জানা এক দল তারা সুন্দরী মেয়েদের বেশ চড়া দামে বিক্রি করে সম্ভান্ত্র ব্যাবসায়ীদের কাছে।আমার প্রস্তাব মেনে নিলে,আসবে দলের জন্যে বেশ কিছু টাকাপয়সা আর শাস্তিও হবে মেয়েটার,শরীর বিক্রি করে সারাজীবন কাটাবে পতিতালয়ে।আমার প্রস্তাবটা যেমন লাভজনক ঠিক তেমনই প্রতিশোধের চরম’।

হায়েমুসের প্রস্তাবটায় ছিল যেমন আমার রক্ষা আবার চারিতের মানসিক অত্যাচার থেকে অব্যাহতি।বেশ কিছু আলোচনা কথা কাটাকাটি,শেষে সবাই রাজী হলো হায়েমুসের প্রস্তাবে,শিকল খুলে চারিতেকে এক পাশে এনে বসিয়ে রাখা হলো।তবে চারিতের মুখেছিল তখন অদ্ভুত একটা হাসি-বিশালদেহ দাঁড়ি ভঁরা মুখের হায়েমুসের বেশ্যাবৃত্তির প্রস্তাবটায়।
চারিতের ব্যাবহারে শুধু আমি অবাক না,আমি যেন নারী বিদ্ধেষি নতুন একজন,অবিশ্বাস্য ছিল আমার কাছে,ভঁরা যৌবনা এক কুমারী,সারা জীবনের স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষা যার প্রেমিকের জন্যে,কত সহজেই আনন্দে অভিভূত হয়ে গেল এক বেশ্যালয়ে শরীর বিক্রি করার কথা শুনে।সমগ্র নারীজাতি তখন বিচারের কাঠগরায় আর বিচারক এক গাধা,আমি।

নতুন দলের নেতা ডাকাতদলের সবাইকে ডেকে বললোঃ ‘আমার মনে হয় যুদ্ধ দেবতা মারস এর কাছে নতজানু হয়ে আর্শীবাদ চাওয়া উচিত আমাদের,আমরা যেন এই মেয়েটাকে বিক্রি করতে পারি ভাল দামে,আর ভাল কিছু মানুষ জোগাড় করতে পারি আমাদের দলের জন্যে।যা দেখছি এখানে আমাদের তেমন কিছুই নাই পূজার উৎসর্গের জন্য,আট দশজন আমরা শহর থেকে নিয়ে আসবো মাংস আর সোমরস দেবতার উৎসর্গের জন্য’।

হায়েমুস চলে গেল শহরে,সাথে দশজন ডাকাত,খুব একটা সময় লাগেনি ফিরে আসতে,বেশ পরিমান মদ,ভেড়া ছাগল নিয়েফিরে এলো সবাই।বড় একটা নাদুসনুদুস ভেড়া ছিল তাদের সাথে,মারস,যুদ্ধ দেবতাকে উৎসর্গের জন্য,সাথে সাথে ডাকাতদের ভোজের জন্যেও।দলের অন্যান্য লোকজন কাঠখড় জোগাড় করে নিয়ে এলো খাবার তৈরীর জন্যে,আর দেবতার বেদীর জন্যে কিছু লতাপাতা,ফুল।

‘বন্ধুরা,নেতা হিসাবে আমার দায়িত্ব শুধু ডাকাতি লুটপাটের পরিকল্পনা না,সবার আনন্দের দায়িত্বটাও আমার’ বলে হায়েমুস চারপাশটা পরিষ্কার করে,দেবতা মারসের বেদী প্রস্তত করার জন্যে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।নিজেই মাংস রান্না করে থালায় থালায় ডাকাতদলের সবাইকে পরিবেশন করলো হায়েমুস,সাথে মদ।ঘরের ভেতর থেকে কিছু জিনিষপত্র আনার ভণিতা করে চারিতেকে লুকিয়ে কিছু খাবারদাবার আর মদ দিয়ে গেল হারেমুস।আলতো করে একটা চুমুও দিল-কোন আপত্তি করেনি চারিতে,হেসে উল্টো একটা চুমুও দিল,সে।একেবারেই হতভম্ব আমি-মনে মনে বললাম,‘এটা কি ধরণের ব্যাবহার,নিজের প্রেম ভালবাসা শুধু না,বাবা মার মান মর্যাদাও টেনে ধুলা মাটিতে মেশানো একটা রাস্তার বেশ্যার মত,এই ডাকাতদের জন্যে।কি ভাবে ভুলে গেলে তুমি লিপোলেমাস এর কথা-তোমার ভালবাসা,তোমার বিয়ের কথা?সত্যি সত্যি কি ভাবে তুমি বেছে নিলে,এই রক্তচোষা ডাকাতকে তোমার প্রেমিককে ভুলে গিয়ে,একটুও বাধলো না তোমার বিবেকে?একটুও ভাবলে না কি হবে তোমার,অন্য ডাকাতেরা যদি দেখে তোমার এই চুমুর খেলা?আবার পালাবে আমার পিঠে চড়ে,আবার ঠেলে দেবে আমাকে মৃত্যুর মুখে’?

আমার ভুলটা বুঝতে যদিও বেশ কিছুটা সময় লাগলো,চারিতের কথার আদান প্রদানে বুঝলাম,হায়েমুস আসলে হায়েমুস ডাকাত না,চারিতের ভালবাসার মানুষ লিপোলেমাস।ফিসফিস করে বললো হায়েমুস,‘চিন্তা করো না চারিতে তোমাকে বন্দী করে রাখা ডাকাতেরা,নিজেরাই হবে তোমারই বন্দী’।এটাও আমার চোখে পড়লো মদ খাওয়ার ব্যাপারে তার বেশ নিষ্পৃহতা অথচ অন্যান্য ডাকাতদের গেলাস ভর্তি করে দেওয়ায় তার ব্যাস্ততা,তাদেরকে মাতাল করার জন্যে।হয়তো এমনও হতে পারে কোন কিছু একটা মিশিয়ে দেওয়া ছিল ঐ মদের সাথে। বেশ কিছুটা সময় লাগলেও ডাকাতদের সবাই যখন বেশ মাতাল,রশি দিয়ে সবাইকে বেঁধে দিল হায়েমুসের ছদ্মবেশে লিপোলেমাস।তারপর চারিতেকে আমার পিঠে নিয়ে বের হয়ে গেল তাদের বাড়ির দিকে।

শহরে পৌছানোর সাথে সাথে চারিতের বাবা মা ছুটে আসলো-অন্যান্য আত্মীয় স্বজন,কাজের লোকজন,ক্রীতদাস কয়েকজন,আনন্দে হৈচৈ করে সারি বেঁধে,তাদের পেছনে দলবেঁধে নানান বয়সের নারী পুরুষ ছেলে মেয়ে।আমার কথা আর কিইবা বলা যায়,লম্বা লম্বা কান দুটো দুলিয়ে,জোরে জোরে ডাক দিয়ে চললাম,চীৎকারের শব্দটা আমার নিজেই কাছেই মনে হলো একটা বজ্রপাত যেন।বাড়িতে পৌঁছেই চারিতে ছুটে গেল দোতলায় আর আমাকে নিয়ে লিপোলেমাস ফিরে গেল আবার ডাকাতদের আস্থানায়।বেশ কিছু লিপোলেমাসের লোকজন,মাল বয়ে নেওয়ার অনেক গাধা,ঘোড়া দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে।আমার কৌতুহলও খুব একটা কম ঐ গুহায় যাওয়ার জন্যে,দেখার ইচ্ছা ছিল প্রচন্ড বন্দী হিসাবে ডাকাতদের অনুভূতিটা দেখার জন্যে।লিপোলেমাস গুহায় ঢুকে দেখলো গভীর ঘুমে রশি দেয়া বাঁধা ডাকাতেরা যে ভাবে রেখে গেছে,সে।পুরো গুহাটার লুটপাটের জিনিষপত্র আমার পিঠে চড়িয়ে,কজন ডাকাতকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল পাহাড়ের নীচে আর কজনের হলো শিরচ্ছেদ।

হৈচৈ করে ফিরে গেল লিপোলেমাস সাথে লুটের মালগুলো আমার পিঠে,মালগুলো সব ফিরিয়ে দিল লিপোলেমাস সরকারী তহবিলে।চারিতে আর লিপোলেমাসের ভেঙ্গে পড়া বিয়ের অনুষ্ঠান আবার বেশ আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হলো।সকলের চোখে আমি তখন চারিতের
ত্রাণকর্তা,চারিতের আদেশে আমার খাবার জন্যে দেয়া হলো বার্লি,গম,যেটা গোটা কয়েক উট খেয়েও শেষ করতে পারবে না।ভাবছিলাম শুধু কি ধরনের অভিশাপ দিতে পারি আমি ফটিসকে,আমার এই দূরবস্থার জন্যে,অন্তত ভুল করে কুকুর হলেও হতো,বেশ কটা কুকুর তখন আমার সামনেই মজা করে খেয়ে যাচ্ছিল ফেলে দেওয়া বিয়ের মাংসের অংশ।

দিনটা নিশ্চয় ছিল চারিতে আর লিপোলেমাসের শরীর খোঁজার গল্প-এক জনের মাঝে আরেকজনকে খুঁজে নেওয়ার সেই অন্যন্য রহস্য।সকালে চারিতে যেন নতুন আরেক চেহারায়,অদ্ভুত একটা উজল্য চোখেমুখে,মা বাবা লিপোলেমাসকে বুঝিয়ে বললো সে-যদিও আমি গাধা,বিশেষ একটা সম্মান অবশ্যই প্রাপ্য আমার,এই রক্ষা অভিযানে সহযোগিতা করার জন্যে।শহরের গন্যমান্য ব্যাক্তিদের ডেকে তাদের অভিমত চাইলো-চারিতে,লিপোলেমাস।কারও উপদেশ ছিল–আমাকে মালপত্র নেয়া থেকে অব্যাহতি দিয়ে গম,বার্লি নানান ধরনের খাবার দিয়ে রাজকীয় মর্যাদায় রেখে দেওয়া হোক আস্তাবলে।আবার বেশ কজন প্রস্তাব দিল- মুক্তি দেওয়া হোক আমাকে এই বন্দীদশা থেকে-আমি আমার নিজের মত ঘুরে বেড়াতে পারি যেখানে যখন ইচ্ছা,আরও কিছু গাধা,ঘোড়ার সাথে।ডেকে পাঠানো হলো শহরের এক পাশের খামারের তত্বাবধায়কে,আমাকে যেন বিশেষ যত্নে রাখা হয়,খাবারদাবার আয়েশে।এটা মনে করে বেশ আনন্দেই ছিল মনটা-খোলা আকাশ,পাহাড়ি ঝর্না,প্রকৃতির গান,গম,বার্লি অভাব হবে না কোনটটা।গাধা হিসাবেই আমার এই পরিচর্যা-আমার আসল চেহারায় ফিরে গেলে কি ধরনের আদর হবে ভাবতেই বেশ ভাল লাগছিল,আমার।



০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০



ঘোড়ার খামার


ঘোড়া খামারের তত্বাবধায়কের সাথে গেলাম-শহর ছাড়িয়ে বেশ দুরের একটা খামারে,এই টুকুই,আমার কপালে ছিল না স্বাধীনতা আর আকাশ ছোঁয়ার আনন্দ।খামারের তত্বাবধায়কের বৌ ছিল যাকে বলে শয়তান,এক মহিলা-আমাকে নিয়ে বেঁধে দিল গম পেশার ঘানিতে।সারাটা দিন ঘানি টেনে যাওয়ার দায়িত্বে আমি–পিঠের চামড়া ছিড়ে রক্তাক্ত একেবারে খেজুরের ছড়ির মারে।খাবারের বরাদ্দ গম,বার্লিও ছিল না কপালে-দিনের শেষে পড়ে থাকা গম,বার্লির খুদ ছিল আমার খাবার।

নিয়তির নিষ্ঠুরতা থেমে থাকেনি ওখানেই-যদিও দিন কয়েক পরে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হলো,ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানো,খুজে নেওয়া ইচ্ছেমত আমার পচ্ছব্দের ঘোটকি।কিন্ত আমার কপালে ছিল না-ইচ্ছেমত কামনার আনন্দ খুঁজে নেওয়া একটা ঘোটকীর শরীরে,যা নিঃসন্দেহে নিয়ে যেত আমাকে তৃপ্তির চরমে।যদিও খুঁজে পেলাম আমার পচ্ছন্দের কটা ঘোটকী-তবে তাদের কারও পচ্ছন্দ ছিল না এই গাধাকে।দুরন্ত,স্বাধিনতার উচ্ছাশে ওরা যেন অন্য কেঊ-আমার উত্তেজনায় যদিও আমার সাধ মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম এক ঘোটকির সাথে,
সেখানে শুধু পেলাম তার লাথি আর খুরের ধাক্কায় রক্তাক্ত এক চেহারা,দাতের কামড়ে দাগ সারা শরীরে।এই মুক্তি তো চাইনি আমি-ওর চেয়ে ভাল ছিল ঐ ঘানি টেনে যাওয়া,কোন মূল্য ছিল না আমার কাছে স্বাধিনতার ওই পাওয়াটায়।

তবে ভাগ্যের পরিহাস শেষ হয়নি সেখানে-খামার থেকে একজন কাজের ছেলে দিয়ে আমাকে পাঠানো হলো জঙ্গল থেকে কিছু কাঠখড়ি নিয়ে আসার জন্যে।আর কাজের ছেলেটা ছিল যাকে বলে শয়তানের আরেক চেহারা-নিষ্ঠুরতার আরেক চরম রুপ।নিষ্ঠুরতায় অদ্ভুত এক আনন্দ ছিল তার-পাহাড়ের ওঠা নামার খেলায়,আমার ক্লান্তি,অক্ষমতার উত্তর ছিল,তার লাঠির বাড়ি দিয়ে।সারা পেছনটায় ছড়ানো ক্ষত আমার-আর সেই ক্ষতের ওপরই হচ্ছিল লাঠির মারগুলো আবার।পিঠের ওপর চড়ানো কাঠগুলো দেখে মনে করবে যে কেউ যেন একটা হাতী বয়ে নিয়ে যাচ্ছে মাল।শুধু তাই নয়-ছোটখাট কোন নদী এলে সোজা উঠে যাচ্ছিল ছেলেটা ঐ মালভর্তি পিঠে,কোন রকম ভেজানো যাবে তার পা দুটো।কোন ফাঁকে পা পিছলে পড়ে গেলে আমাকে তুলে নেওয়ার সাহায্যের ধরনটাও ছিল নিষ্ঠুর-লেজের লোমগুলো টেনে।

নিষ্ঠুর আরেকটা খেলা ছিল তার,আমার লেজে একগোছা কাঁটাগাছের ডাল বেঁধে দেওয়া,লেজ নাড়া চাড়া করলেই,যন্ত্রনায় কেঁপে ওঠতো শরীর আমার।আমাকে যন্ত্রনা দেওয়াই ছিল তার আনন্দ।সহ্যের চরম প্রান্তে যদিও আমি-কিন্ত নিজেকে রক্ষা করার আর কিইবা ছিল আমার, পেছনের পা দিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে পাহাড়ের একপাশে ফেলে দেয়া ছাড়া।

একগাদা মিথ্যা অপবাদ দিতেও কার্পন্য করেনি-অলস,অকর্মন্য,কোন কিছুই বাদ পড়েনি,
শেষমেষ সকলে সিদ্ধান্ত নিল,অকেজো আমাকে মেরে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।একজন বললো-আমার মাথাটা কেটে কুকুরকে দেওয়ার পর,মাংসগুলো রান্না করে হৈচৈ,আনন্দ করে খাওয়ার জন্যে।আরেকজন মন্তব্য করলো,ভুলে গেলে চলবে না,আদালতের লোকজনকে কিছু একটা বানিয়ে বলতে হবে,যে গাধাটা মারা গেছে।

একজন প্রস্তাব দিল-‘ওকে খোঁজা করে দেওয়া হোক,তা হলে ওকে দিয়ে ভারী ভারী কাজগুলো করে নেওয়া যাবে আর এর চেয়ে প্রচন্ড শাস্তি আর কি হতে পারে?আমি জানি ঘোড়া গাধাদের খোঁজা করলে ওদের শক্তি বেড়ে যায় বেশ কগুন।শাস্তিও দেওয়া হলো আবার কাজ ও করে নেওয়া যাবে একগাদা’।

শয়তান ছেলেটা একটা ছোরা ধার দেওয়ায় ব্যাস্ত তখন-ভুলে যায় নি সে আমার লাথি।
আমার চোখ মন দুটোই কান্নায় ভঁরা-বেঁচে থাকার আনন্দটাই হারিয়ে যাবে, আমার পুরুষত্ব যদি না থাকে,তার চেয়ে হয়তো ভাল হবে শেষ করে দেওয়া সামনের র্নিযাতনের জীবনটা।

০০০০০০০০০

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: যেহেতু ধারাবাহিক তাই এক দুই তিন- এভাবে দিন। তাহলে পাঠকের সুবিধা হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.