নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিয়াসের রুপান্তর Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius) The Golden Ass(ধারাবাহিক)

১৮ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৪৩



(১৯) গুরুর সাথে


‘আমি তোমাকে ভালবাসি,এ ভাবে আমি কোনদিন ভালবাসিনি কাউকে,’আন্তরিকতার স্রোতে ভঁরা কথাগুলো।তারপরই বিছানায় আরম্ভ হলো তার উন্মাদ যৌনসঙ্গম-যদিও এমন না যে সেটা আমার কাছে অজানা ছিল।

সুন্দরী নগ্ন এক মহিলা,তার শরীরের সুবাসে ভেসে যাওয়া চারপাশ,বেশ কিছুদিন আমার কোন যৌনসঙ্গমের সূযোগ হয়নি আর থেসিয়াসের মদের প্রভাব,আমি যে কোন কিছুর মাঝে চরম সুখ খুঁজে নিতে প্রস্তত ছিলাম।শুধু ভাবছিলাম সেই মুহুর্তে,বিশাল শরীরটা আর বড় বড় দাঁতে,ঐ নরম মধু ছড়ানো স্তনের কি যে ক্ষতি হবে কেই বা জানে।তা ছাড়া আমার বিশাল উরু,বিশাল লিঙ্গের অত্যাচার সহ্য করার মত ক্ষমতা ঐ মহিলার আছে কি?কোন ভাবে আমি যদি ঐ মহিলার কোন শারিরিক ক্ষতি করে ফেলি তবে আমার এই সুখের দিন তো শেষ হবেই,আমিও হয়তো হবো বন্য জন্তদের খাবার।কিন্ত চুমুর পর চুমু আর নেশায় ভঁরা কথাগুলো, ‘আমার সোনামনি,আমার ছোট্ট পাখি,আমার জান,তুমি ছাড়া এ পৃথিবীতে আর কিছু নাই আমার’,কথাগুলো শোনার পর আমার সব বুদ্ধি ক্ষমতা হারানো,আর কোন কিছু চিন্তা করার অবকাশ ছিল না,শুধু শরীর মিশে যাওয়া শরীরে,খুঁজে যাওয়া আনন্দের আকাশ।

মায়ামাখানো চোখগুলো আমাকে নিয়ে গেল অন্য আরেক রাজ্যে,কোন ভয় ছিল না আমার আর।একটু একটু করে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে গেল সেই মহিলা আর সবকিছু ভুলে গিয়ে আমিও হারিয়ে গেলাম শরীর খেলায়,শরীর আনন্দের চরমে।যদিও দূর্বল ভাবে কবার চেষ্টা করলাম নিজেকে সরিয়ে নিতে,কিন্ত পারিনি,মনটাও চায়নি,শরীর আটকে ছিল মনের নেশায়,
সেই মহিলাও আমাকে জড়িয়ে আরও কাছে নিয়ে গেল,শরীরের নেশায় ভেসে গেলাম আমি,
আত্মসর্ম্পন করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।।মনে পড়লো,পাসিফে এর আর ষাঁড়ের ভালবাসার কথা,দেবতা পোসাইডনের অভিশাপে মত্ত সুন্দরী পাসিফে ষাঁড়ের প্রেমে,আর তাদের ভালবাসার ফসল মিনোতারের গল্প।সারাটা রাতে একটুকুও ঘুমানোর সুযোগ পেলাম না,একের পর এক শরীর সুখের যাত্রায় ব্যাস্ত ছিলাম আমি ঐ মহিলার সাথে,শুধু তাই না ভোর হতে না হতেই মহিলা ছুটে গেল আমার ওস্তাদের কাছে কাকুতি মিনতি আরেকটা রাত কাটানোর ইচ্ছা জানালো।পয়সার লোভ সামলানো সম্ভব ছিল না আমার গুরুর পক্ষে,তা ছাড়া থেসিয়াসকেও দেখানোর সুযোগ হবে গাধা আর মানুষের যৌনসঙ্গমের দৃশ্য,তাতে আয়ের পরিমানটাও আরও ফুলে ফেঁপে উঠবে।

মহিলার সাথে কথাবার্তা ঠিক করে আমার গুরু ছুটে গেল থেসিয়াসের কাছে আর বসে বসে বর্ননা করলো,রাতের সম্পুর্ন ঘটনা।শুনে থেসিয়াস অবাক, ‘অদ্ভুত,অসাধারণ,অচিন্তনীয়-এটা কি সম্ভব?এটাই তো দরকার আমাদের অনুষ্ঠানের জন্য,তবে ও ধরণের এক সম্ভ্রান্ত মহিলা,
তার পরিবার কি আর রাজী হবে এ ধরনের বারোয়ারী এক অনুষ্ঠানের জন্য’।

নানান জায়গায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো আমার সাথে যৌনসঙ্গমের দৃশ্যের একটা মেয়ের যোগাড় করার জন্যে,দেওয়া হবে প্রচুর পুরস্কারসহ অনেক টাকাপয়সা,কিন্ত কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না,এমনকি রাজী হলো না বেশ্যাপাড়ার মেয়েরাও,কেই বা রাজী হবে এ ধরণের বারোয়ারী, মুখরোচক নাটকের জন্য।শেষে মৃতুদন্ড প্রাপ্ত এক মহিলা রাজী হলো তার জীবন বাচানোর স্বার্থে।
০০০০০০০


অবশ্য এই মেয়ের জীবন গল্পটা আগেই শোনা আমার-ছেলের বাবা,যে এই মেয়েটার স্বামী ব্যাবসা সুবাদে বাইরে যাওয়ার সময় বৌকে বলে গেল,তাদের হবু সন্তান ছেলে না হলে জন্মের সাথে সাথে তাকে যেন মেরে ফেলে।তবে স্বামীর কথা না মেনে মহিলা জন্মের পর,তার শিশু মেয়েটাকে লুকিয়ে তার পড়শিকে দিয়ে আসে,আর স্বামীকে জানালো যে জন্মের সাথে সাথেই বাচ্চাটা মারা গেছে।পড়শি যদিও ছিল বেশ গরীব,এমন কোন সার্মথ্য ছিল না তার একটা মেয়েকে বড় করা,আবার বিয়ের যথাযথ যৌতুক দেয়ার,তবুও মনের দিক দিয়ে সে অবজ্ঞা করতে পারেনি মেয়েটার জীবন রক্ষা করার সূযোগ।মহিলা মেয়েটাকে তার বাড়িতে দিয়ে আসার পর তার ছেলেকে অনুরোধ করলো সম্পুর্ন ঘটনাটা গোপন রাখার জন্যে।
ছেলেটা ভাল সন্তানের মতই মাকে খুশি করার জন্যে সব কিছু গোপন করে রাখলো।আর বয়সে,ভাল একজন ভাই এর মত যথাযথ যৌতুক দিয়ে মেয়েটার বিয়ে দিল তার এক বন্ধুর
সাথে।এখানেই ঘটনার মোড়টা ঘুরে যায় দূর্যোগের দিকে,যার সাথে বিয়ে হলো সেই ছেলে কাজে বাইরে গেল কিছুদিনের জন্য।ছেলেটার সংসারে আর কেউ ছিল না,তাই পালিতা মেয়েটার ভাই তাকে একটা বাড়ী ভাড়া করে রাখলো,তার ফিরে না আসা পর্যন্ত।তবে তার স্ত্রী যে মেয়েটার গল্প আমি বলছি,ঈর্ষায় নানান ধরণের অপকর্ম করে বেড়ানোর শাস্তিতে আজ যার এই মৃত্যুদন্ড।ছেলেটার বৌ পালিতা মেয়েটার কথা জানার পর ভাবলো নিয়ে, নিশ্চয় সে হয়তো তার স্বামীর রক্ষিতা আর শুরু হলো তার প্রতিশোধের ভয়াবহ পদ্ধতি।

স্বামীর আংটি চুরি করে লুকিয়ে রেখে,স্বামীর নাম করে বিশ্বস্ত এক ক্রীতদাসকে দিয়ে খুবই জরুরী দরকার বলে ডেকে পাঠালো-মেয়েটাকে।ভাই এর বিপদের কথা শুনে ছুটে গেল মেয়েটা,আর যথারিতি ফাঁদ তো তৈরী করাই ছিল-তার কাপড়চোপড় খুলে তাকে মারধর করতে করতে প্রায় মৃতপ্রায় করে ফেললো,মহিলা।যদিও পালিতা মেয়েটা তাকে অনেক চেষ্টা করলো বুঝিয়ে বলতে,‘ও আমার ভাই আমার ভাই,আমার কোন প্রেমিক না’,কিন্ত মনের জানালা দরজা যখন বন্ধ,তখন সতিটা ছুটে পালায় অনেক দূরে।যতই যাই বলুক না কেন,ঈর্ষায় অন্ধ ছেলেটার বৌ এর কাছে সব কথাগুলোয় মনে হচ্ছিল বানোয়াট,রাগে মেয়েটার যোনীদ্বারে গরম শিক দিয়ে যন্ত্রনায়,অত্যাচার করে তাকে মেরেই ফেললো।

ভাইটা আর তার বন্ধু(মেয়েটার স্বামী),এই ঘটনার কথা শুনে ছুটে গেল,তবে তখন সবকিছুই শেষ,মৃতদেহটার যথাযথ কৃতকর্ম শেষ করলো তারা।মেয়েটার ভাই বিশ্বাস করতে পারছিল না তার বৌ অযথার এক সন্দেহে শেষমেষ তার বোনকে মেরে ফেললো।দুঃখে রাগে সে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লো-এমনই অবস্থা যে সবাই ভাবলো,তার সুস্থ হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নাই,বিশেষ কোন এক শক্তিশালী ওষুধ ছাড়া,যা কিছুটা অপ্রমানিতই বলা যায়,তবে জীবন বাঁচানোর জন্যে তখন আর কোন উপায় কি।

মহিলা ছুটে গেল তার পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে যার বেশ বদনাম ছিল অপকর্মের জন্যে,অনেক রুগী আত্মীয় স্বজনের চক্রান্তে পয়সার জন্যে তার হাতে মারা গেছে।ডাক্তারকে প্রায় ছয়শো সোনার ড্রামাক দিয়ে বৌটা কিনে আনলো বিষ-ওষুধ হিসেবে।স্বামীকে এসে বললো,সেটা বিশেষ ভাবে তৈরী করা ওষুধ,খেলে সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যাবে।জানা ছিল না ছেলেটার,ওষুধটা তৈরী করা জীবন দেবতা এপোলোর আর্শিবাদে না,বরং মরণের দেবী প্রসপেরিনের আর্শিবাদে।

বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন উপস্থিত ছিল অনেকেই যখন ডাক্তার ওষুধ নিয়ে একটা কাপে ভাল করে মিশিয়ে খেতে দিল মেয়েটার স্বামীকে।এর মধ্যে মেয়েটা তখন আরেক পরিকল্পনায় ব্যাস্ত-কি ভাবে কোন সাক্ষী না রেখে,তার ছয়শো সোনার ড্রামাক উদ্ধার করা যায়।তবে তার স্বামী যখন ওষুধ খাওয়া আরম্ভ করবে,মহিলা ডাক্তারের কাছে ছুটে গিয়ে বললো,
‘ডাক্তার যদিও কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হবে আপনার কাছে,তবে আমি চাই এই ওষুধটা আমার স্বামীকে দেওয়ার আগে,আপনি অল্প একটু খেয়ে দেখেন ওর মধ্যে বিষ বা অন্য কোন ক্ষতিকর জিনিষ মেশানো আছে কি না।আমি শুনেছি অনেকেই ক্ষতি করার জন্যে অনেক অপকর্ম করে,আমি জানি আপনি সেটা করবেন না,তবু এই একটু সর্তক থাকা আর কিছু না’।

ডাক্তার বেশ কিছুটা অবাক হলেও,সেই মুহুর্তে ওষুধটা খাওয়া ছাড়া আর তার কোন উপায় ছিল না,ডাক্তার ওষুধ খেল আর ওষুধ খেল মহিলার স্বামীও।ডাক্তারের মনে আর কোন চিন্তা না,শুধু একটাই চিন্তা কি ভাবে বাড়ী ফিরে যাওয়া যায় সেই মুহুর্তে,আর বিষের প্রতিক্রিয়া থামানোর জন্যে প্রতিষেধক খাওয়া।

কিন্ত শয়তান মেয়ে চেষ্টা করছিল কোন না কোন ভাবে ডাক্তারকে আটকে রাখার জন্যে,
যাতে বিষের প্রক্রিয়া গ্রাস করে ডাক্তারকে ‘ডাক্তার,দয়া করে একটু অপেক্ষা করেন,দেখে যান না,ওষুধটায় কাজ হচ্ছে কি না,একটু দেখে যান আমার স্বামীর শারিরিক অবস্থা’।অনেক কাকুতি মিনতি করার ডাক্তার যখন বাড়ি পৌছালো বিষের প্রক্রিয়ায় তখন থামানোর আর কোন উপায় নেই।তবে মৃত্যুর আগে ডাক্তার তার বৌকে সম্পুর্ন ঘটনাটা জানিয়ে গেল।

এর মাঝে বিষের প্রভাবে মারা গেছে মহিলার স্বামী আর শয়তান মহিলা বাড়ীতে লোক দেখানো কান্নায় তখন অস্থির।যথারিতি শেষকৃত্য পালন হলো,এর মাঝে ডাক্তারের বৌ এসে তার স্বামীর দেনা দাবী করলো,এটাও বলে গেল বেশ ভাগ্যবান মহিলা,এক পরিশ্রমে তার দুটা কাজ হয়ে গেল।মহিলা ডাক্তারের বৌকে জানালো,তার কোন আপত্তি নেই ছয়শো সোনার ড্রামাক দিতে,তবে ডাক্তারের বৌ ওষুধের কিছুটা তাকে এনে দেয় তার খুব উপকার হবে।

ডাক্তারের বৌ এর জানা ছিল মহিলার প্রতিপত্তির কথা,সে ভাবলো তার সুনজরে থাকতে পারলে তার সুবিধাই হবে।বাড়িতে গিয়ে আনলো বিষের বাক্স আর শুরু হলো মেয়েটার একের পর এক খুনের পর্ব।মহিলার এক মেয়ে ছিল,আইনমত তার স্বামীর সব সম্পত্তির মালিক হবে সেই মেয়ে।কিন্ত শয়তান মহিলার কাছে সেটাও অসহনীয়,সব চাই তার,চাই তার নিজের আনন্দ উল্লাসের জন্য।এক পর্ব শেষ করে,মহিলা আমন্ত্রন জানাল ডাক্তারের বৌকে সকালের খাবারের জন্যে,আর সুযোগমত বিষ মিশিয়ে দিল তার খাবারে আর তার মেয়ের খাবারেও।বাচ্চা মেয়েটা মারা গেল কিছুক্ষনের মধ্যেই,আর ডাক্তারের বৌ শরীরে বিষের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পেরে,ছুটে বের হয়ে সেই প্রদেশের গর্ভনরের বাসায় ছুটে গিয়ে বিচারের আবেদন জানালো।গর্ভনর সম্পুর্ন ঘটনাটা ডাক্তারের বৌ এর কাছে শুনে,অভিজ্ঞ এক সরকারী কর্মচারীর পরামর্শে তাড়াহুড়া করে মহিলাকে না এনে প্রথমে ধরে আনলো তার ক্রীতদাসদের,
শারীরিক যন্ত্রনায় তাদের জবানবন্দিতে জানা গেল সম্পুর্ন ঘটনা।ছ্য়টা জনের খুনের জন্য দায়ী করে মেয়েটাকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে বন্য জন্তদের খাবার হিসেবে ফেলে আসার জন্য রায় দিল,গর্ভনর।




দেবী আইসিসের হস্তক্ষেপ


সেই জঘন্য খুনী মহিলার সাথে আমাকে লোকজনের সামনে যৌনসঙ্গমে মত্ত হতে হবে,যা অনেকটা সামাজিককতায় বিয়ে বলেই গন্য করা যায়,সবকিছু ভেবে ইচ্ছা হচ্ছিল আমার এই হতভাগা জীবনটার ইতি টেনে আনতে।

বড়ই দুঃখের কথা আমার কোন হাত নাই,কোন আঙ্গুল নাই,যে একটা তলোয়ার টেনে নিয়ে এই ঘাড় থেকে এই হতাশ মাথাটা নামিয়ে দিতে পারি।শুধু একটাই সান্তনা যে বসন্ত প্রায় এসে গেছে,চারপাশটা ছাপিয়ে যাবে সবুজে,নানান ধরণের ফুলে ফুটে উঠবে,ফুটে উঠবে গোলাপ,হয়তো অব্যাহতি হবে এই সুযোগে আমার গাধার জীবন থেকে।

অনুষ্ঠানের দিনটায় সাজানোর পর গেলাম থিয়েটারে,লোকজনের প্রচন্ড হৈ চৈ এর মধ্যে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল ব্যালে নাচ আমি একপাশে বসে বসে বেশ কৌতুহল নিয়েই মত্ত হয়ে ছিলাম,অনুষ্ঠানে।

বেশ কজন সুন্দর ছেলে মেয়ে দল বেঁধে ছন্দে ছন্দে তুলে ধরছিল গ্রীক পাইররিক নাচ,গ্রীসের যুদ্ধ যাত্রার আনুষ্ঠানিক নাচ,নর্তক নর্তকিরা ছন্দে ছন্দে কখনও বৃত্তের আকারে,কখনও বর্গের আকারে,কখনও অন্য আকারের ছন্দে সাজিয়ে নিচ্ছিল নিজেদের,অদ্ভুত আর্কষনিয় এক দৃশ্য,
ভোলার মত না,ভাষায় বর্ননা করে তার অবিচারই করা।

ভেঁপু বাজিয়ে নাচের শেষে,অনুষ্ঠানের এক পর্বের সমাপ্তি ঘোষনা করে,পর্দা টেনে আরেক পর্বের প্রস্ততি আরম্ভ হলো তোড়েজোড়ে।তৈরী হলো হোমারের কাব্যের অনুকরণে ইডা পাহাড়,দেবীদের পাহাড় বলে যার পরিচয়,ষ্টেজের কারুকার্যতায় তৈরী হলো অভাবনীয় এক দৃশ্য,গাছপালা,জঙ্গল সাজানো হলো,যেন সত্যিই উপ্সথিত সবাইকে নিয়ে যাওয়া হোমারের রাজ্যে।ষ্টেজের স্থপতি সুন্দর ভাবে তৈরী করলো একটা ঝর্না,পাহাড়ের উপর থেকে সুর করে নেমে যাচ্ছে পাশের সবুজ ঘাসের আঙ্গিনায়।অল্পবয়সী এক রাখাল সোনালি পোশাক পরে একগাদা ভেড়া চরাচ্ছিল,তার চরিত্রটা প্যারিসের,ফিরিসিয়ান এক মেষপালক।

এরপর কমবয়সী এক যুবকের পালা,সম্পূর্ন নগ্ন শরীর,কাঁধে ছড়ানো উত্তরিয় আর লম্বা সোনালির চুলের ফাঁকে দু পাশে তার বিরাট দুটো পাখা,চরিত্রটা মারকারির,জুপিটারের বার্তাবাহক।ছন্দের সুরে নাচতে নাচতে সে ছুটে গেল মেষপালক প্যারিসের কাছে, তুলে দিল তার হাতে একটা সোনার আপেল আর আকারে ইঙ্গিতে তাকে জানালো জুপিটারের আদেশ।

ছুটে আসলো মঞ্চে জুনো-ফুটফুটে সুন্দরী একটা মেয়ে,মাথায় মুকুট হাতে মনিমুক্তা রত্নে সাজানো রাজদন্ড।এরপর মির্নাভার পালা,খুব সহজেই চেনা যায় তাকে,মাথায় মুকুটের পাশে সাজানো ঝুলে পড়া জলপাই এর পাতার চেহারা,হাতে বল্লম আর ঢাল এই যেন ছুটে যাবে,যুদ্ধে।তারপর অপুর্ব সুন্দরী এক মেয়ে,চেহারা সাজ সবকিছু মিলিয়ে সে ভেনাস ছাড়া আর কেউ হতে পারে না-কুমারী ভেনাস সারা ত্রি ভুবনের সৌন্দর্য্যে সাজানো অন্যন্য একমুখ।সাদা ফিনফিনে একটা পোষাক,শরীরের সব অঙ্গগুলোয় আলতো করে ফুটে উঠছিল সেই পোষাক ভেদ করে,আর মাঝে দমকা বাতাস মাতাল সুরে,তুলে ধরছিল তার আকাশ ছোঁয়া সৌন্দর্য।ভরাট স্তন যেন পাথরে খোদাই করা,ধবধবে সাদা মার্বেল পাথরের উরুতে লুকানো পৃথিবির সবচেয়ে আকাক্ষিত রহস্য।সদ্য স্বর্গ থেকে নেমে আসা সুন্দরী এই যেন ফিরে যাবে তার সমুদ্রের রাজ্যে।

দেবিদের সাথে ছিল তাদের প্রহরির দল,যুবকেরা ছিল সেই চরিত্রগুলোয়,যেমন জুনোর সাথে ছিল কাষ্টোর আর পোল্লাক্স,আমি তাদেরকে চিনতে পারলাম তাদের মাথার শিরস্ত্রান দেখে,অনেকটা ডিমের খোসার মত।তাদের মা লিডাও অবশ্য জন্ম দেয় তাদের ডিমের খোসায়,দুই যমজ ভাই সাজানো নানান নক্ষত্রের সাজে।দেবী জুনো তাদের সাথে ছুটে গেল প্যারিসের কাছে আইনোয়ান বাশির শব্দের সাথে সাথে,হয়তো বাশির শব্দে আর সৌন্দর্যে প্যারিস যদি ভাবে জুনোই বিশ্বব্রক্ষান্ডের সবচেয়ে সুন্দরি,তা হলে তাকে সারা এশিয়ার সম্রাট করে দিতেও তার দ্বিধা হবে না।

মিনার্ভার সাথে তার দুই প্রহরী-টেরর আর ফিয়ার,দেবির সামনে নাচতে নাচতে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা আর তাদের সাথে রনবাদ্যে আরেকজন যুবক,ছিল মৌমাছির দল রণবাদ্যে সুরে সুরে।সুর আর নাচের মোহ যেন নিয়ে যাচ্ছে দর্শকদের সবাইকে নিয়ে যাচ্ছে কোন এক রণক্ষেত্রে।মির্নাভা মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে গিয়ে পৌছাল প্যারিসের কাছে-প্যারিস যদি তার পক্ষে থাকে তবে সে ভবিষত্যে হবে পৃথিবীর সব চেয়ে নাম করা যোদ্ধা,তার ভঁয়ে ভঁয়ে কেটে উঠবে সারা পৃথিবি।

ভেনাস-মুখভরা হাসি আর আকাশ ছোঁয়া সৌন্দর্য নিয়ে,অভিভুত দর্শকেরা হৈ চৈ করে সবাই তাকে আমন্ত্রন জানালো।ভেনাসের চারপাশে একগাদা ছেলের দল-ফুটফুটে চেহারার,সবাই যেন এক একজন কিউপিড,সদ্য নেমে আসা স্বর্গ থেকে।সমুদ্রের ধারে অপেক্ষায় ছেলেরা সবাই সাজানো সাদা পাখায়,কাধে ঝোলানো তীর ধনুক,হাতে জ্বালানো মশাল,প্রস্তত্ত তাদের কর্ত্রীকে প্রাতরাশের নিয়ে যাওয়ার জন্যে।ছুটে এলো আরেকদল সুন্দরী,তাদের হাতে হাতে নানান ধরণের ফুল,সৌন্দর্য আর আনন্দের সম্রাগির সামনে দিয়ে ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে গেল,তারা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: এই পর্বটা অনেক সুন্দর।

২| ০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:৪৫

ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.