নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Paulo Coelho এর adultery (পরকীয়া)

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:২০

(১৪)

কি ভাবতো মানুষটা,কি ঝড় বয়ে যাচ্ছিল জন ক্যালভিনের মনে?ভেবে কোন কুলকিনারা পাই নি।রাতে কি ঘুম হতো লোকটার নাকি জেগে জেগে অযথার ফানুস তৈরী করতো?তার কথায় হত্যা করা হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ,ছেলেমেয়েরা হারাচ্ছে তাদের বাবা মা,রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে,জেনেও কি কোন অস্বস্তি ছিল না লোকটার মনে?নাকি তার আত্মবিশ্বাস এতই দৃঢ় ছিল,হয়তো সে ভাবতো,যা কিছু ঘটছে সেটাই যথাযথ?তার কাছে কি মনে হতো ভালবাসার স্বার্থে যা কিছুই করা হোক না কেন সেটাই ঠিক?ওটাই তো আমার মনের বর্তমান অবস্থা।

ডঃজেকাইল আর মিষ্টার হাইড।জন কালভিনের চেনা জানা মানুষের কাছে সে ছিল আধ্যাত্মিক একটা মানুষ,যীশুর নির্দেশ অনুসারে তার জীবন যাত্রা,ব্যাবহারে বিনয়,
নম্রতার কোন অভাব ছিল না।মানুষ তাকে ভঁয় করতো আবার ভালবাসতো-আর সেই ভালবাসার আগুনের সূযোগ নিতে কোন দ্বিধা করতো না,জন কালভিন।

ইতিহাস সাধারণতঃলেখা হয় বিজয়ীদের হাতে,আজকের মানুষদের অনেকের হয়তো জানেনা তার অত্যাচার,অন্যায়ের ইতিহাস।এখন সকলের কাছে সে মুক্তিদাতা,ক্যাথলিক অতাচারীদের থেকে আমাদের উদ্ধার করে আনা দেবদূত।

যে মানুষটার জন্যে আমি অপেক্ষা করে ছিলাম,তার আসতে বেশ কিছুটা দেরী হয়ে গেল।
কিউবার একজন টোটকা ডাক্তার বা ওঝা।তাকে বানিয়ে বললাম সম্পাদকের কথায় খবরের কাগজ থেকে আমরা মানসিক টানাপোড়েনের টোটকা চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত একটা লেখা বের করতে চাচ্ছি।এ পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা খুবই দয়ালু এক মুহূর্তে,আবার দূর্বলের প্রতি অত্যাচারী হয়ে পড়ে আরেক মুহূর্তে।দিন দিন মানুষকে বোঝা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
সাইকোলোজিষ্টরা এতই ব্যাস্ত থাকে যে অনেক রুগীই তাদের পক্ষে দেখা সম্ভব হয় না,আর রুগীদের কি মাসের পর মাস অপেক্ষা করে থাকা সম্ভব মানসিক চিকিৎসার জন্যে?
কোন মন্তব্য না করে,কিউবান লোকটা আমার কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়েই শুনলো।
জিজ্ঞাসা করলাম,শীতটা বেশ ভালই,আপত্তি না থাকলে কোন কফির দোকানে বসে আলাপ করা যায়।‘আকাশটা খুব মেঘলা’,বলে আমার কথায় রাজী হয়ে উত্তর দিল কিউবান ওঝা।ফেব্রুয়ারী,মার্চ মাসে মেঘে আকাশ ছেয়েই থাকে,দখিনা বাতাস এসে ঠান্ডা আরও বাড়িয়ে দেয়।

‘আমাকে কি ভাবে খুঁজে বের করলে,তুমি’?

খবরের কাগজের এক দারোয়ানের কাছে তোমার কথা শোনা।আমার সম্পাদকের ইচ্ছা সাইকোলোজিষ্টদের সাক্ষাৎকার নিয়ে একটা লেখা,কিন্ত ওতো সব সময়ই করা হচ্ছে।তাই মনে ভাবলাম নতুন কিছু জানা দরকার,আর এ ব্যাপারে ওর চেয়ে ভাল লোক আর কে হতে
পারে।
‘তুমি কিন্ত আমার নামটা প্রকাশ করতে পারবে না।আমি যা করি সেটা রাষ্ট্রীয় ইন্সুরেন্স,নিয়ম কানুনের বাইরে’।
লোকটার কথা এটাই, ‘আমি যা করি আইন সম্মত না’।
মিনিট বিশেক আলাপ করলাম তার সংশয় কাটানোর জন্যে,কিন্ত কিউবান লোকটা নিঃসন্দেহ হয়নি,আমাকে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে তখনও।রোদে পোড়া চামড়া,পাকা চুল,টাই আর হাফ প্যান্ট পরা,একটা লোক,ওঝাদের ছবিটা কোনদিন এ ভাবে ভাবিনি।বুঝিয়ে বললাম,আমাদের আলাপ আলোচনা সবকিছুই গোপনীয় থাকবে,আমি জানতে চাচ্ছি তার কাছে রুগীদের সংখ্যাটা কেমন?।এটাও জিজ্ঞাসা করলাম,শোনা যায় তার নাকি বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে,তার কতটুকু সত্যি।

‘কথাটা একেবারেই সত্যি না,মানুষের আরোগ্য ক্ষমতা আমার নাই,ওটা শুধু সৃষ্টিকর্তার হাতে’।কোন বাদানুবাদ করিনি,কিন্ত প্রতিদিনের জীবনে অনেক মানুষ দেখি আমরা,যারা বদলে যায় এক মুহূর্ত থেকে আরেক মূহূর্তে।আমরা ভাবিঃকি হলো লোকটার?প্রশ্ন করি,কি হলো লোকটার?ওটা কি কাজের চাপ,না অন্য সমস্যা?

অনেক সময় দেখা যায় লোকটা বদলে আবার আগের মত,মনটা হাল্কা হয়ে উঠে।আবার নতুন কিছু ঘটে সব কিছু বদলে যায়,লোকটার কি হলো না ভেবে,আমরা ভাবি ভুলটা কোথায়?
ওঝা উত্তর দিল না,মনে হলো লোকটা তখনও আমাকে বিশ্বাস করছে না।
এ ধরণের অসুখের কোন চিকিৎসা আছে?
‘চিকিৎসা অবশ্যই আছে,তবে সব কিছুই ঐ উপরের মানুষটার আওতায়’।
‘তা বিধাতার চিকিৎসাটা কি ভাবে হয়’?
লোকটা উত্তর দিল, ‘এক এক সময় একেক ভাবে, শোন আমার চোখে তাকাও,দেখ’।
লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম,বুঝলাম না কোথায় যাচ্ছি,আমি।
‘আমি সেই শক্তির নামে প্রতিজ্ঞা করে বলছি,যে আমাকে সব পথ দেখায়,যে আমাকে
সব সময় রক্ষা করে যাচ্ছে,তুমি যদি আমার কোন ক্ষতি কর বা আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দাও,তাহলে বংশ,পরিবারের সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে’।

হাতটা আমার মাথায় রেখে চারপাশে দিয়ে ফুঁ দিয়ে আরম্ভ করলো,কিছু একটা।অদ্ভুত একটা যাদু মন্ত্র জড়ানো ভড়ং,ইচ্ছা হচ্ছিল সেই মুহুর্তেই উঠে চলে যাই।তবে বেশ কিছু ক্ষনের মধ্যে সবকিছুই যেন আগের মত স্বাভাবিক।
‘তুমি আমাকে যা জিজ্ঞাসা করার করতে পার,আমি তোমাকে বিশ্বাস করি;।
একটু ভঁয় পেয়ে গেছি আমি তখন,কিন্ত ঐ লোকটার কোন ধরণের কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা ছিল না,আমার।আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে তাকে বুঝিয়ে বললাম,কি কি জানার ইচ্ছা আমার?ডাক্তারদের সাক্ষাৎকারে তারা সবাই বললো,মানসিক চিকিৎসা বেশ ভালই সময় লাগে।দারোয়ান ওঝা সর্তক করে বললো-অযথা না বানিয়ে যথাযথ প্রশ্ন করলেই ভাল।আর
কিছু না হোক তার কিছুটা আধ্যাত্মিক উপলদ্ধি আছে।

‘হয়তো তোমার জান,এই যে সমস্যাগুলো আমাদের মাথা খারাপ করে দেয়,আমরা হারাই মানসিক ভারসাম্য,সবই তো আমাদের তৈরী করা,বাইরের কোন শক্তি বা অন্য কোন কিছুর প্রভাব না সেটা।তোমার মনের শক্তির কাছে সাহায্য দরকার ঐ ঝড়ের প্রকোপটা সামাল দেয়ার জন্যে।কিন্ত আমাদের বিশ্বাসটাই এখন টলমল।স্বর্গের শক্তি,দেবতারা তারা তো আমাদেরকে সাহায্যই করতে চায়,আমরা জানিনা তাদের সাহায্য নিতে।আমার কাজ হলো মানুষকে ঐ স্বর্গীয় শক্তির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া।এটুকুই,আর কিছু না’।

আচ্ছা,ধর কেউ যদি এ সব মানসিক উপসর্গে কারও ক্ষতি করতে চায়,অযথা কারও নামে গুজব রটাতে চায়।ঐ উপসর্গ কেটে সে যখন স্বাভাবিক হবে,আত্মগ্লানিতে সে তো নিজের কাছেই মুখ দেখাতে পারবে না।
‘কোন সন্দেহ নাই।আর ধীরে ধীরে তার অবস্থাটা তো আরও খারাপই হবে’।
তা হলে কালভিনের আদর্শ,ঐ অন্ধকার সরানোর পর আলো আসবে এক সময়,সেটা তো ভুল?
‘কি বলতে চাচ্ছ’?
না,তেমন কিছু না,আমি পার্কের ঐ মুর্তিটা নিয়ে ভাবছিলাম।
‘হ্যা,নিঃসন্দেহে আলো আছে,ঐ অজানা অন্ধকারের পর,ওটাই যদি তোমার প্রশ্ন হয়?অনেক সময় অনেক অন্ধকারের শেষটায় যখন মানুষ পৌঁছায়,পেছনে পড়ে থাকে তার ঘৃনা,
নোংরামির একগাদা ইতিহাস’।
যাকগে,তোমার কথায় আসা যাক।
‘ওটা আমার কথা না,নতুন কিছুও না,যুগ যুগ ধরে মানুষ মানসিক যন্ত্রনা,উত্তেজনা,ঘৃনায় ঐ নিষ্ঠুরের মত কত কি করে যাচ্ছে,যা মানুষের ক্ষতি করে’।
শেষে খুঁজে পেলাম আসল মানুষটাকে,মাথাটা এখন ঠান্ডা রাখতে হবে।
আমরা এটাকে বলতে পারি…
‘…আত্মসমাধি,আত্মসংযম।আত্মবিশ্লেষন।ভিন্ন সংষ্কৃতিতে ভিন্ন নাম।কিন্ত আমি এটা জানি সুইস মেডিকাল সংস্থা ঐ পদ্ধতিকে খুব একটা ভাল চোখে দেখে না’।
আমি,যোগ ব্যায়াম করি অনেকদিন,কিন্ত নিজের সমস্যা সমাধানের জায়গায় আজও পৌঁছাতে পারলাম না।
‘আমরা কি তোমার ব্যাক্তিগত সমস্যা নিয়ে কথা বলছি,নাকি ওটা খবরের কাগজের কোন গল্প নিয়ে আলোচনা’?
দুটোই।আমি নিজেকে তুলে ধরলাম,এ লোকটার কোন কিছু গোপন করে কিইবা লাভ?লোকটা আমাকে যখন তার চোখের দিকে তাকাতে বললো,ওর প্রতি আমার আস্থাটা অনেক বেড়ে গেছে।ওর নিজেকে গোপন রাখার ব্যাপারটা বেশ হাসির মনে হচ্ছিল-লোকটা তো বাড়ী থেকেই রুগীর চিকিৎসা করে।এমন কি জেলখানার কিছু পেয়াদারাও তার কাছে
চিকিৎসার জন্যে যায়।কাগজের লোকটা তো আমাকে সেটাই বললো।
‘তোমার সমস্যা হয় শুধু রাতেই’?
হ্যা,ঠিক।কিন্ত কেন?
‘তোমার নিশ্চয় জানা আছে,ছোটবেলায় রাতের অন্ধকারে সব কান্না ভঁয় যন্ত্রণা ছুটে আসে মানুষের কাছে,একা হওয়ার ভয়,একাকীত্বের যন্ত্রনা ছুটে আসে চারপাশ থেকে।আমরা যদি রাতের ভুতগুলোকে সরাতে পারি,দিনের আলোর ভয়াবহ চেহারাগুলো তখন কিছুই না।আমরা তখন আলোর বন্ধু অন্ধকারের কোন ভঁয় থাকে না,আমাদের’।
মনে হলো,পুরোনো স্কুলের টিচারের সামনে বসে আছি,যে আমাকে খোলা কাগজের মত সব কিছু বলে দিচ্ছে।
আমি কি তোমার বাড়ীতে যেতে পারি…।
‘…ভুত ঝাড়ানোর জন্যে’?
এটা আমার মনে হয়নি কোনদিন,আসলে ওটাই হয়তো দরকার।
‘না,আমি দেখছি তোমার মন ছেয়ে আছে অন্ধকার,আবার আলোও আছে চারপাশে।আমি জানি,একসময় আলো অন্ধকারকে সরাবেই’।
কান্নায় চোখ ভরে গেল,আমার।ঐ মানুষটা আমার আত্মার ভেতরটা ঝকঝকে একটা আয়নার মত দেখে ফেললো,জানি না কি ভাবে,কেন।

‘রাতে মাঝে মাঝে হারিয়ে যাবে মনের স্রোতে,নিজেকে অত বিশ্লেষন নাই বা করলে।হলেই না হয় নেশায় একটু মাতাল,চেষ্টা করো রাতের তারাগুলো খুঁজে নিতে।অন্ধকারেরও একটা সৌন্দর্য আছে,তার হাত ধরে পৌঁছে যাবে হয়তো নতুন আলোর রাজ্যে।দেখবে হয়তো অন্ধকারের অজানার হাত ধরেই যেতে পারবে বিধাতার অনেক কাছে,সরাতে পারবে মনের লুকানো ভুতুড়ে ছায়ার আকাশটা’।

প্রায় ঘন্টা দুয়েক কথা হলো,আমাদের।লোকটা বেশ জোর দিয়েই বললো-আমার মনের ভঁয়গুলো অলস মনের অযথার চিন্তার ফসল।আমি তাকে মারিয়ানের কাছে প্রতিশোধ নেয়ার কথাও বললাম,খোলা মনেই কোন মন্তব্য না করেই লোকটা শুনলো আমার কথা,কেন জানি তার প্রতি আমার আস্থাও অনেক বেড়ে গেল।

উঠে এক সময় পার্ক হেঁটে আলাপ আরম্ভ হলো।পার্কের গেটের পাশে বেশ বড় আকারের দাবা খেলার গুটি সাজানো ছিল,কনকনে ঐ শীতেও কজন লোক খেলছিল দৈত্যদের দাবার গুটি দিয়ে।।আলাপ অনেকটা থেমে গেছে তখন,আমি আপন মনেই অভিযোগ করে যাচ্ছিলাম।বিরাট একটা দাবাগুটির সামনে দাড়ানো আমরা দুজন-তখন আমার সমস্যার ঢেউ একপাশে ফেলে দিয়ে দাবা খেলার চিন্তায় ব্যাস্ত মনে হলো,তাকে।
‘কি লাভ সংযমের ঐ মেকী মুখোস পরে,খুঁজে নাও তোমার ভাল লাদা,কোন সংযম থাকবে না,ভেসে গেলেই না হয় অচেনায়’।
সংযম থাকবে না?স্বামীকে ঠকাবো,শত্রুতা করে অন্য কারও ব্যাগে কোকেন দিয়ে,পুলিশকে খবর দিব?
হেসে উঠলো,লোকটা।
‘এই যে দাবা খেলোয়াড়রা,দেখছো-তাদের সবসময় প্রস্তত থাকতে হয়,এর পরের চালটার কি হবে তার জন্যে।মাঝখানে খেলা ছেড়ে যেতে পারে না কেউ,তা হলে সেটা হার মেনে নেয়া।অনেক সময় দেখা যায় পরাজয়টা চোখের সামনে,তবুও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে যায়,খেলোয়াড়রা।কোনটা ভাল,কোনটা খারাপ,কোনটা ঠিক,কোনটা ভুল ও ধরনের চুলচেরা বিশ্লেষন নিয়ে মাথা ঘামানো বোকামী ছাড়া আর কিছু না।দেখ সারা জেনেভা শহর মেঘে ঢাকা এখন,কিন্ত আজ হোক, কাল হোক,কমাস পরে হোক,মেঘটা সরে যাবেই,আলোর হাসিতে ভরে যাবে চারপাশ।তুমিই বল,কি লাভ এত সংযমে,ভেসে যাও ভেসে যাওয়ায়’।

কোন উপদেশ না,আমাকে নিজেকে সংবরন করার,কোন কিছু বলা এটা করো না,সেটা করো না,একটা কথ্ ‘ খুঁজে নাও নিজেকে’।
‘দেখবে যেটা করার না সেটা করতে গেলেই,তোমার মন তোমাকে টেনে নিয়ে যাবে ঠিক জায়গায়।ঐ যে চা খাওয়ার সময় আমি বললাম,তোমার মনের আলোটা অনেক বেশী উজ্জল অন্ধকারের গভীরতা থেকে।কিন্ত সেটা বোঝার জন্যে তোমাকে খুঁজে নিতে হবে অন্ধকারের শেষ মাথা’।
সারা জীবনে এ ধরণের আজগুবি উপদেশ কোনদিন শুনিনি।তাকে ধন্যবাদ জানানোর পর জিজ্ঞাসা করলাম,কত টাকা দিতে হবে।সোজা একটা উত্তর পেলাম, ‘না,কিছুই আমার প্রাপ্ত না’।
অফিসে সম্পাদক প্রশ্ন করলো,সাধারণ একটা সাক্ষাৎকারের জন্যে এত সময় অপচয় করলাম,কোথায়?বুঝিয়ে বলতে হলো,বিষয়টা এমনই বিদঘুটে যে বেশ কিছু সময় লেগে গেল লেখার বিষয়বস্ত জোগাড় করতে।
‘সাধারণ,সনাতন কিছু না হলেই কি আমরা বেআইনী কিছু করতে পারবো,তোমার ঐ ওঝা তো বেআইনি সবকিছু করে যাচ্ছে’?
আমরা কি বেআইনী কিছু করি না,যখন বিজ্ঞাপন ছাপানো হয় গাড়ীটা ছুটে যেতে পারে ২৫০ কিলোমিটার ঘন্টায়?আমরা কি মানুষের মধ্যে হতাশা ছড়াই না,যখন বড়াই করে গল্প বলি সমাজের সার্থক মানুষদের কথা,ভুলে যাই বলতে তাদের গোপন নোংরামির কথাগুলো বলতে।আমরা কি অজান্তেই অন্যদের বলে দেই না,তারা অর্থব সব।

সম্পাদক কোন আলাপ আলোচনায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না।‘একটা সংস্থা এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর জন্যে ৮ মিলিয়ন ফ্র্যাঙ্ক’,চাদা তুলে পাঠাচ্ছে সেটা আজকের কাগজের প্রথম পাতা আর সাথে ৬০০ শব্দের একটা লেখা যার বেশীর ভাগটাই ইন্টারনেট থেকে নেয়া,সে দিনের কাগজের জন্যে আমার লেখাটার খুব একটা জায়গা ছিল না,তাই ওঝার সাথে আমার আলাপ আলোচনার কিছুই ব্যাবহার করতে পারিনি।

মরলোক থেকে যেন জেকব হঠাৎ একটা টেক্সট মেসেজ পাঠালো,সময় থাকলে কফির কাপে কিছু গল্পগুজব আলাপ আলোচনা করার ইচ্ছা তার,যেন পৃথিবীতে আমার আর কিছু করার নাই।উপর বসে থাকা সেই মদ বিশারদ এখন কোথায়?ঐ মানুষটা যার হাতে ক্ষমতার সব সে এখন কোথায়?অবাক হয়ে খুঁজছিলাম,স্কুল বেলার বন্ধুকে যার জন্যে সব কিছুই ছেড়ে দিতে রাজী ছিলাম,একসময়।

বিয়ে করে সংসার সাজিয়ে কফির কাপে ঝড় তোলার জন্যে মেসেজ পাঠাচ্ছে আমাকে।এর চেয়ে ভাল হতো না যদি ও আমাকে চারমোনিস্কের নুডিষ্ট এলাকায় দৌড়াদৌড়ি করার জন্যে
ডাকতো।ঐ মেসেজের উত্তর দেয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না আমার।সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আমাকে উপেক্ষা করতে সে একটুও দ্বিধা করেনি।এখন কি ছুটে যেতে হবে আমাকে যেহেতু সে আমাকে একটা মেসেজ পাঠালো?

বিছানায় শুয়ে শুয়ে কিউবার সেই ওঝার টেপ করা সাক্ষাৎকারটা শুনছিলাম।আমি যখন ভান করে যাচ্ছিলাম শুধু একজন সাংবাদিক হিসাবে,একজন মেয়ে যে প্রকাশ করতে পারেনি তার ব্যাক্তিগত সমস্যা।
তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, ‘ভালবাসা,প্রেমের,যন্ত্রনার চীৎকার’।
‘ওটা একটা ধোঁয়াটে আকাশ’,ছিল তার উত্তর।
‘সাময়িক ভাবে আমরা মনের স্মৃতিকে ঘোলাটে করে দিতে পারি,কিন্ত ওখানে আছে আরও অনেক মুখ অনেক গল্প।তা হলে ভুলে যাওয়াটাই হলো যথাযথ উপায় না।সমস্যার
সমাধান সমস্যায়’।
পুরো রেকডিংটা বেশ কবার শুনলাম,একগাদা প্রতিজ্ঞাও করলাম মনে মনে,কিন্ত্নেকিছুতেই কাজ হচ্ছিল না।জেকব ভেসে আসছিল আমার মনে বারে বারে,শেষমেশ ঘুমোতে যাওয়ার আগে জেকবের কফি খাওয়ার আমন্ত্রনের উত্তর দিলাম,নিজেকে সংযত করতে পারিনা,ওটাই আমার সমস্যা।

‘বলবো না,তোমাকে খুব মনে পড়ছিল,আর বললে হয়তো তুমি বিশ্বাসও করবে না।এটাও বলবো না যে তোমার মেসেজের উত্তর দেয়া হয়নি,কেননা ভঁয় হচ্ছিল প্রেমে পাগল হবো আবার’।

ও দুটোর কোনটাই আমি বিশ্বাস করি না,তবে সূযোগ দিলাম জেকবকে না বোঝাটা বোঝানোর জন্যে।কলোঞ্জেস-সুস-সালেভের কাছে খুব সাধারণ একটা কফির দোকানে বসে ছিলাম আমরা,ফ্রান্স সুইজারল্যান্ডের সীমানায় ছোট্ট একটা গ্রাম।লোকজন যারা ছিল দেখে মনে হচ্ছিল হয় ট্রাক ড্রাইভার না হয় পাশের খনির কর্মচারী।আমি ছাড়া শুধু আরেকজন মেয়ে ছিল সেখানে-সে অবশ্য বারে বসে লোকজনের সাথে আলাপ করছিল।

‘তুমি আমার জীবনটা একেবারে নরক করে দিলে,অফিসের ক্ষণকিছুর ঘনিষ্ঠতা-কোথায় টেনে নিয়ে গেল আমাকে?এখন আমার সাথেই আমাকে লুকোচুরি খেলতে হয়’।
(‘ঘনিষ্ঠতা’,ওটা কথার কথা,আসলে ওটা ছিল যৌনতার একটা পর্ব,তার লিঙ্গ মুখে নিয়ে খেলা করা,ওটাকে আর কি বলা যায়’)।
‘বলা যাবে না,আমি অসুখী,তবে আমি বড় একা,যা জানা নেই কারও।এমন কি বন্ধুদের মাঝেও মদের গ্লাস,হাসি উল্লাসে আমি আছি,আমি থাকি তাদের কথার জোয়ারে,তবুও আমি একা।কোন এক সময় হঠাৎ বের হয়ে আসে আমার সেই একাকীত্বের চেহারা’।

এখন আমার প্রতিশোধ নেয়ার সময়ঃতুমি কি মনে কর না,তোমার কোন একজন সাইকোলোজিষ্টের সাথে আলাপ করা দরকার?
‘কথাটা একেবারেই ঠিক,তবে আমার সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলে মেরিয়ানকেও নিয়ে
যেতে হবে,ওকে কোন ভাবেই রাজী করাতে পারছি না।মেরিয়ানের মতে দর্শন শাস্ত্রে আছে জীবনের সব প্রশ্নের উত্তর।যদিও সে জানে বদলে গেছি আমি,তবে তার মতে সব কিছুর দোষ ঐ নির্বাচন’।

ওঝার কথাটাই ঠিক যা দেখবে তার শেষটা পর্যন্তটা দেখবে।এ মুহুর্তে জেকব রক্ষা করলো তার বৌকে ড্রাগ বিক্রি করার অভিযোগ থেকে।
‘অনেক বেশী দায়িত্ব আমার হাতে এখন,যা অনেকটা সীমা ছাড়ানো বলা যায়।মারিয়ান যদিও বলছে,সবকিছু সয়ে যাবে শীঘ্রিই।তোমার খবর কি’?
আমাকে নিয়ে কি ভাবছো,তুমি?কি জানতে চাও তুমি?
আমার সংযমের সব বাঁধ ভেঙ্গে গেছে,জেকব একা বসে আছে হাতে কাম্পারি আর সোডার একটা ককটেল।আমাকে দেখে একটু লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসি দিল,আমরা যেন ফিরে গেছি আমাদের পুরোনোয়,সেই স্কুল বেলা কিছুটা বদল আছে যদিও,এখন আমরা ইচ্ছা করলেই মদ খেতে পারি।হাত বাড়িয়ে জেকবের হাতটা হাতে নিলাম,জানি না ঠান্ডাটা শীতের প্রকোপ না চক্ষুলজ্জার,হাতটা একেবারেই ঠান্ডা হয়ে ছিল।

০০০০০০

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.