নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ২:৩৪

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা


(১৩)

‘অবাক হয়ে সুলতানের কথা শুনলাম’,এনিষ্টে বললো,সেই মুহুর্তে মনে হলো সুলতান যেন শয়তানী চেহারার অন্য কোন এক মানুষ।‘সুলতানের আদেশ ছিল,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বই এর কাজ শুরু করার জন্যে,আনন্দে আমার মাথা যেন চার পাশে নাচানাচি করছিল।সুলতানের আদেশ ছিল তার পোট্রেট সহ বইটা হবে ভেনিসের রাষ্ট্রদূতের জন্য উপহার।বইটা হবে আমাদের খলিফা,সুলতানের ক্ষমতার প্রকাশ,হিজরী সাল ১০০০ হাজারে।এই আলোকিত বইটা যেন আমি গোপনে করি,যাতে জানাজানি না হয় এটা ভেনিসের জন্যে একটা উপহার আর ষ্টুডিওর শিল্পীদের মধ্যে অযথার ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি না করে।আর এভাবেই সম্পূর্ন গোপনীয়তা আমি কাজটা হাতে নেই’।



আমি তোমার প্রিয় চাচা

শুক্রবারের সকাল,যে বইটাতে ভেনিসের পদ্ধতিতে সুলতানের পোট্রেটটা আঁকা হবে তার কথা বলছিলাম সিয়াহকে।বিস্তারিত সবকিছু বললাম,তাকে এটাও জানালাম সুলতানের কাছে সব কিছু বলে এই বইটার পৃষ্ঠপোষকতার খরচের জন্য শুধু অনুরোধ করিনি,
সুলতানের সম্মতিও পেতে খুব একটা কষ্ট হয়নি।আমার সুপ্ত ইচ্ছা ছিল বইটার গল্প লিখবে সিয়াহ-আনুষিনঙ্গকতা যোগাবে ছবিগুলো।
সিয়াহকে জানালাম,বই এর বেশীর ভাগ ছবিগুলো আঁকা হয়ে গেছে,শেষ ছবির কাজটা চলছে তখন।‘ফেরেশতা আজরাইলেরও একটা ছবি আঁকা থাকবে’,বললাম, ‘সবচেয়ে প্রতিভাবান শিল্পীরা আমার সাথে কাজ করছে,লেইলেকের দায়িত্ব হলো গাছের ছবি দিয়ে সুলতানের ক্ষমতা প্রতিপত্তির ইতিহাস তুলে ধরা।শয়তানেরও একটা ছবি আছে,তার পাশে একটা ঘোড়া তার কাছ থেকে যেন মানুষকে দূরে সরিয়ে নেয়ার জন্যে।বেশ চালাক,চতুর,
চেহারার একটা কুকুর,পাশে একটা সোনার মোহর...।ছবিগুলো শিল্পীদের মনের সব সৌন্দর্য ঢেলে আঁকা’,সিয়াহকে বললাম,‘ছবিগুলোই তোমাকে বলে দিবে তার সাথের গল্পটা কি হবে?কবিতা,গল্প,ছবি,কথা আর রং,তাদের একে অন্যের সাথে আছে আত্মার যোগাযোগ,একে অন্যের সাথে কথা বলে,এটাতো তুমি জানাই’।ভাবছিলাম তাকে কি বলাটা ঠিক হবে যে আমার ইচ্ছা সেকুরেকে তার হাতে তুলে দেয়ার।

জানি না ও এ বাসায় থাকবে কি না আমাদের সাথে?নিজেকে এটাও বুঝাচ্ছিলাম,সিয়াহ শিশুসুলভ চেহারায় আর মিষ্টি কথায় আমি যেন নিজেকে ভুলে না যাই।জানি সিয়াহ চেষ্টা করছে সেকুরের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে একটা কিছু করার জন্যে,তবে ওকে ছাড়া এই বইটা শেষ করা কোন ভাবেই সম্ভব না।
জুম্মার নামাজ থেকে ফেরার সময় আলোচনা করছিলাম,ছবির চেহারায় আলো আঁধারী সুরে ছায়া আর চেহারা পাশাপাশি আনার পদ্ধতির কথা,যা ভেনিসের খ্যাতনামা শিল্পীদের ছবি বিরাট একটা অবদান।বললাম, ‘যদি হেঁটে যাওয়া মানুষটার দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখতে হয়,যেখানে মানুষে কথাবার্তা বলছে,আলাপ আলোচনা করছে,রাস্তার সেই ছবিটা আঁকতে গেলে সেই পদ্ধতিটা নিঃসন্দেহে অভাবনীয়,আর সেখানে লুকানোঃছায়া’।
‘ওটা কি ভাবে ছায়ার কথা বলে দেয়’?সিয়াহ প্রশ্ন করলো।
অনেক সময় আমার কথা বলার ধরনে আমার ভাই এর ছেলেটা বেশ অসহিষ্ণু হয়ে যায়।তখন তার উপহারের মঙ্গোলিয়ান কালির দোয়াত নিয়ে নাড়াচাড়া আরম্ভ করে,
অনেক সময় আবার শিক দিয়ে ঘর গরম করার উনুনের কাঠ নাড়াচাড়া আরম্ভ করে।
এমনও হতে পারে কোন কোন সময় হয়তো ঐ শিক দিয়ে আমাকে খুন করার ইচ্ছাও হতো তার,ছবির জগতটাকে ইসলামিক পৃথিবী থেকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমি,হেরাতের নামকরা ওস্তাদদের থেকে সরে ছুটে যাচ্ছি ভেনিসের কাফের শিল্পীদের দিকে।আমার চিন্তাদারার নেশায় সুলতানকে মাতাল করতেও দ্বিধা করিনি।অনেক সময় সিয়াহ শুধু চুপচাপ বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।

হয়তো তার মন বলেঃ ‘আমি তোমার চাকর হতে রাজী আছি সেকুরেকে না পাওয়া পর্যন্ত,তারপর আমি বাদশাহ আমার রাজত্বে’।ছোটবেলায় তাকে আঙ্গিনায় নিজের ছেলের মত,গাছপালা,আলোর ছটার প্রভাবে গাছের চেহারার বদল,গলে যাওয়া বরফের চেহারা,বাড়ীগুলো কেমন করে ছোট হয়ে যায়,সবকিছু বোজানোর চেষ্টা করতাম।ওটাই আমার ভুল,আর সেখানেই শুরু হলো আমাদের সম্পর্কের ভাঙ্গন।এখন বুড়ো হয়ে আমি যেন ফিরে গেছি সিয়াহর ছোটবেলার মনটায়,এখন শুধু একটা বুড়ো যার মেয়ের ভালবাসায় উন্মাদ,সিয়াহ।চাকরীর সুবাদে অনেক দেশেই ঘোরাফেরার সূযোগ হ্য় সিয়াহর,অভিজ্ঞতাও হয়তো কম অর্জন করেনি,অনেক দেখা অনেক কথা আটকে আছে ওর মনের খাতায়।আমার ব্যাবহারে ও হয়তো ক্লান্ত হয়ে গেছে আর আমার জন্যে ওর মনে আছে অনেক সহানূভূতি।হয়তো ওর মনে অনেক রাগ জমা হয়ে আছে,কেন না বছর বার আগে আমি সেকুরের সাথে তার বিয়েতে সম্মতি দেই নি-অবশ্য সে সময় আর অন্য কোন কিছু করার ছিল না,আমি হেরাতের নামকরা শিল্পীদের ছবি আঁকার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম,আর আমার বাড়াবাড়িটা হয়তো এত বেশী ছিল,যেন মৃত্যুকে আমি কাছে টেনে আনছিলাম।আমি জেনে শুনে আমার ভাই এর ছেলেকে ও দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারি না।

আমি তাকে কোনদিন ভঁয় করিনি,তবে মনে হয় সিয়াহ আমাকে বেশ ভঁয় করে,অবশ্য ওই ভয়টা থাকা ভালই অন্তত এই বই এর লেখার জন্যে।‘আর ঐ বই এর ছবিগুলোর কথা বলতে গেলে,নিঃসন্দেহে ছবিগুলোকে পৃথিবীর কেন্দ্র করে গল্পের উদ্ভব হতে পারে’।
আমি এক এক করে গত বছরে আঁকা সব ছবিগুলো দেখাচ্ছিলাম সিয়াহকে,যা গোপনে বিভিন্ন শিল্পীদের তুলির ছোঁয়ায় তুলে ধরা।প্রথম দিকে ছবিগুলো দেখার সময় সিয়াহর চোখেমুখে ছিল একটা লাজুক ভাব,লাজুক না বলে বরং ভঁয় ভঁয় ভাব বললেই মানান্সই হবে।যদিও কিছুটা অবাক হয়ে সে বুঝতে পারলো মৃত্যুর দৃশ্য দিয়ে সাজানো ‘শাহনামার’,অনেক গল্পই,যেমন তুরানের বাদশাহ আফ্রাসিয়াবের হাতে আবিস্থানের শাহজাদা সিয়াভাসের হত্যা,রুস্তমের হাতে অজানায় তার ছেলে সোহরাবের হত্যা-সিয়াহর কৌতুহল আরও বেড়ে গেল।সুলতান সুলেয়মানের জানাজার একটা দৃশ্য আমার হাতেই আঁকা,যা গাঢ় কিন্ত দুঃখ ভঁরা রং এ সাজানো,ভেনিসের ওস্তাদদের অনুকরণে আঁকা,পেছনে আমার নিজের পদ্ধতি ছায়া দিয়ে সাজানো।সিয়াহকে দেখালাম নাটকীয় সুরে সাজানো আকাশে মেঘের খেলার দৃশ্য।এটাও দেখালাম যে প্রতিটা মৃত্যুই একটা অন্যন্য দৃশ্য,ভেনিসের প্রাসাদগুলোর অবিশ্বাসী শিল্পীদের আঁকা পোট্রেটের বিশেষত্বের চেহারা নিয়ে আঁকা।

‘মানুষ মৃত্যুকে ভঁয় করে না,তবে ভঁয় করে তার সাথে জড়ানো অত্যাচারের গল্প।
তুমি ছবিগুলো দেখ,এই ছবিগুলোর বোবা মুখে ভাষা তুলে দাও।এই নাও কাগজ আর কলম।
তুমি যা লেখবে সোজাসুজি চলে যাবে কালিগ্রাফ্রাদের কাছে’।একটা ছবির দিকে তাকিয়ে সিয়াহ জিজ্ঞাসা করলো, ‘এই ছবিটা কার আঁকা’?
‘কেলেবেক’।বলা যায় প্রতিভাবান শিল্পীদের প্রথম সারির একজন,ওস্তাদ ওসমান তার
ছবির অভাবনীয় সৌন্দর্যে সবসময়ই পঞ্চমুখ।
‘আমি অবশ্য কফির দোকানে কুকুরের ভাষায় গল্পকথকের সস্তা ধরণের ছবি আগেও দেখেছি’,সিয়াহ বললো।
‘ছবিগুলো বেশীর ভাগ ওস্তাদ ওসমানের পদ্ধতিতে আঁকা,অন্যান্য শিল্পীদের সুলতানের ছবিঘরের ছবিগুলোর একটা করুন চেহারা তাদের মনে আছে।রাতে তারা যখন বাড়ীতে ফিরে যায়,এই ছবিগুলো নিয়ে হয়তো কত হাসি ঠাট্টাই না করে,কটা মোহরের জন্যে ঐ ছবিগুলো আঁকা তাদের হাতে।তাদের ছবি ম্লান হয়ে যাবে ভেনিসের যুবক শিল্পীর কথা যাকে সুলতান আমন্ত্রণ করে এনেছিল পোট্রেট আঁকার জন্যে,অবশ্য সেটা আমার অনুরোধে ভেনিসের দূতাবাসের কাছে।পরে সুলতানের আদেশে বাধ্য হয়ে ওস্তাদ ওসমান সেই পোট্রেটের আরও কটা হুবুহু নকল করে।সুলতানের আদেশের পেছনে আমার বিরাট একটা হাত ছিল ওস্তাদ ওসমানের সেটাই ধারণা,আমি স্বীকার করছি,অপবাদটা যথাযথ’।

শুধু একটা ছবি ছাড়া,প্রায় প্রতিটা ছবিই দেখালাম সিয়াহকে,যে কোন কারণেই হোক ঐ ছবিটা দেখানো হয়নি।ছবিগুলো দেখানোর পর সাথের কাহিনী লেখার সিয়াহকে জন্য খোঁচানো আরম্ভ করলাম,বিভিন্ন শিল্পীদের মানসিকতার কথাগুলোও তাকে জানালাম,
ছবিগুলোর কাকে কত মোহর দেয়া সেটাও জানাতে দ্বিধা করিনি।আমরা, ‘দৃষ্টিভঙ্গী’,নিয়ে,আর ভেনিসের ছবির ছোট ছোট চেহারাগুলোর প্রাধান্যতাও নিয়ে আলাপ আলোচনা করলাম।আলাপ ঠিক না বললাম,আমার ধারণা এলেগান্ট এফেন্দীর খুনের কারণ আর কিছু না,উচ্চাশা আর তার ধনদৌলত।
সিয়াহ বাড়ীতে ফিরে গেল সেই রাত্রে,আমার কোন সন্দেহ ছিল না সকালে সে কথামত ঠিকই ফিরে আসবে,আর আলাপ করবে ছবির সাথের গল্প সাজানো নিয়ে।অন্ধকার শীতের রাতে সিয়াহর পায়ের শব্দটা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল,হয়তো অন্ধকারে ঘুম হারানো খুনীকে,আমার বই এর শয়তানের চেয়ে আরও ভয়ংকর কিছু একটা মনে হচ্ছিল।
আঙ্গিনার গেটটা বন্ধ করে,অন্যান্য রাত্রির মত সিরামিকের পানির গামলাটা সরিয়ে রাখলাম।ঘর গরম করার চূলার আগুন নেভানোর পর সোজা বিছানায় গেলাম,দেখি একপাশে সাদা পোষাকে অন্ধকারে সেকুরে একেবারে ভূতের মত দাঁড়িয়ে আছে।
‘তুমি একেবারেই নিশ্চিত ওকে বিয়ে করতে চাও’?
‘না বাবা,আমি এখন বিয়ের কথা একেবারে ভুলে গেছি,আমি তো বিবাহিতা’।
‘তুমি যদি ওকে বিয়ে করতে চাও আমার কোন আপত্তি,আমি মন থেকে তোমাদের জন্যে দোয়া করবো’।
‘না আমি ওকে বিয়ে করবো না’।
‘কেন’?
‘না সেটা হবে তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।সত্যি কথা বলতে কি আমি এমন কাউকে বিয়ে করবো না,যে তোমার পচ্ছন্দের না’।
হাল্কা থেমে থাকা চূলার ঝলকে দেখলাম সেকুরের চোখের কোনের কালি,জানি না সেটা বয়সের কারণে,না রাগের প্রতিফলনে,তবে তার কথার সুরে কোন রাগ ছিল না।
‘সিয়াহ তোমাকে ভালবাসে’,জানা কথাটা আমি যেন সেকুরেকে একটা গোপন রহস্যের মত তুলে ধরলাম।
‘আমি জানি’।
‘জান আমি খুব অবাক হলাম,সিয়াহ আমার সব কথাগুলোই বেশ ধৈর্যের সাথেই শুনলো,তবে নিঃসন্দেহে সেটা শিল্পের ভালবাসায় না,তোমাকে ভালবাসে বলে’।
‘সিয়াহ তোমার বইটা শেষ করতে সম্পূর্ন সাহায্য করবে,এটাই তোমার দরকার আর কিছু না’।
‘তোমার স্বামী হয়তো একদিন ফিরে আসতে পারে’,আমি বললাম।
‘মনে হয় না,এই শীতের রাত্রির অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা আমাকে বলে দিচ্ছে,আমার স্বামী আর ফিরে আসছে না।জানি আমার দুঃস্বপ্নটাই আসলে সত্যি।যুদ্ধে মারা গেছে সে,তার অস্তিত্ব এখন আর কিছু না শুধু ধূলাবালি আর মাটি’,শেষের কথাগুলো অনেকটা ফিসফিস
করেই বললো সেকুরে যেন ছেলেরা শুনতে না পায়,আর কথা ভরা ছিল রাগ আর হতাশা।
‘ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলে,আমি চাই এই বইটা তুমি যেন শেষ কর,আমার সব স্বপ্ন আকাঙ্খা ঢেলে দেয়া এই বইটাতে।কসম খাও,অন্তত এটুকু করবে তুমি আমার জন্যে’।
‘আমি কথা দিচ্ছি।তা বইটা শেষ করবে কে’?
‘সিয়াহ!আর এটা তোমার দায়িত্ব যে তুমি দেখবে সে যেন শেষ করে বইটা’।
‘বাবা,তুমি তো ধরেই নিচ্ছ সিয়াহ তোমার বইটা শেষ করবে!আমাকে তোমার আর কি দরকার?আমার কোন সাহায্য তো তোমার দরকার হওয়ার কথা না’সেকুরে বললো।
‘হয়তো বা।তবে সিয়াহ যা কিছু করছে,সেটা তোমার আর্কষনে।আমাকে খুন করা হয়,সে হয়তো আর ভঁয়ে আগাবে না’।
‘তা হলে সে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না’,আমার চালাক মেয়েটা উত্তর দিল।
কোথায় আমি খুঁজে পেলাম সেকুরের হাসির বিবরণ?আমাদের কথার সময় সেকুরের চোখের ছোট্ট একটা ঝলক ছাড়া আর কিছুই আমি দেখেনি।দুজন দুজনের দিকে নিস্তব্ধতায় তাকিয়ে ছিলাম,আমরা।
‘তোমরা দুজনে শুধু চোখের ভাষায় কথা বল’?আমি না বলে পারলাম না।
‘কি ভাবে তুমি এটা ভাবতে পারলে’?
যন্ত্রনার নিস্তব্ধতা কেটে গেছে তখন,শীতে আমি বেশ কাঁপছিলাম।অন্ধকারটা ধীরে ধীরে সারা ঘরটা গিলে ফেললো,আমরা একে অন্যের চেহারাও দেখতে পাচ্ছিলাম না,কোন কারণ ছাড়াই আমরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলাম।সেকুরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,মার কথা
খুব মনে পড়ছে তার।আদর করে তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলাম,সেকুরের চুলের গন্ধে তার মায়ের মুখটা ভেসে আসছিল আমার চোখে।এক সময় শোবার ঘরে নিয়ে ছেলেদের পাশে শুইয়ে দিলাম।হিসাব মত কোন সন্দেহ নাই যে গত দুই দিনে সেকুরে সিয়াহর সাথে যোগাযোগ করেছে।



আমাকে সবাই সিয়াহ নামেই ডাকে

বাড়ীতে ফেরার পর,বাড়ীর মহিলা মালিককে এড়িয়ে ঘরে পৌঁছালাম-মহিলা আমার মায়ের মত ব্যাবহার করার চেষ্টা করে সবসময়,যাকগে নরম তোষকে শুয়ে নিজেকে সেকুরের হাতে ছেড়ে দিলাম।এনিষ্টের বাসায় শোনা কথাগুলোর কিছুটা বিশ্লেষন করি।প্রায় বার বছর পর আমার দ্বিতীয় যাত্রায় সেকুরে আর দেখা দেয়নি।তবে কোন একটা যাদুর মন্ত্রের প্রভাবে তার উপ্সথিতি ছিল আমার চারপাশে,ভবিষ্যতের স্বামী হিসাবে আমাকে যাচাই করছিল,যুক্তি তর্কের খেলার ছলে।ইবনে আরাবীর কথাটা মনে পড়ে গেল,ভালবাসায় অদৃশ্য মুখটা ছুটে আসে মনের খাতায়,আর সেই অদৃশ্যকে ছুঁয়ে যাওয়ার আকাঙ্খাই তো জীবনের গল্প।

কেন জানি মনে হচ্ছিল,সেকুরে আমাকে গোপনে গোপনে চোখে রাখে দেখে যাচ্ছে,কেন না বাড়ীর ভেতর থেকে নানান শব্দ ভেসে আসছিল।মনে হলো,কোন সন্দেহ নাই যে সেকুরে খেলার ছলে পাশের ঘরে তার ছেলেদের নিয়ে নিয়ে হৈচৈ করছে,ঘরটার শব্দ বারান্দা দিয়ে এপাশে ছুটে আসছিল।সেকুরের ছেলেদের ধাক্কাধাক্কির শব্দ পাচ্ছিলাম,কিছুটা অনুভবও করছিলাম সেকুরে তার মুখ চোখের ভঙ্গীতে তাদের থামানোর চেষ্টা করছে।মাঝে মাঝে তাদের ফিসফিস করে কথা বলার চেষ্টা বোঝা যাচ্ছিল।

তাদের দাদা যখন আমাকে ছবিতে আলো,ছায়ার খেলা বোঝানোর চেষ্টা করছিল,সেভকেত আর অর্হান সেকুরের শেখানো ভঙ্গীতে কফি আর মিষ্টি নিয়ে আসলো ট্রেতে।এই পর্বটা হওয়ার,হাইরিয়ের হাতে,কিন্ত সেকুরে কায়দা করে তাদের হবু বাবাকে দেখানোর জন্যে অর্হান আর সেভকেতকে পাঠালো।সেভকেতকে হাসতে হাসতে বললাম, তোমার চোখ দুটো খুবই সুন্দর’।সাথে সাথেই আবার অর্হানের দিকে ঘুরে বললাম, ‘তোমার চোখগুলোও খুব সুন্দর’।আমার পোষাক থেকে দুটো গোলাপের পাপড়ি বের করে দুজনের হাতে দিয়ে আদর করে তাদের গালে চুমু দিলাম।পরে তাদের খিলখিল হাসির শব্দ পাচ্ছিলাম পাশের ঘর থেকে।

একটা কৌতুহল আমাকে বড্ড জ্বালাতন করছিল,সেকুরে কি ভাবে উঁকি দিয়ে আমাকে দেখে বেড়াচ্ছে দেয়ালের কোন ছিদ্র দিয়ে,নাকি দরজার পাশ থেকে,নাকি অন্য কোন ভাবে?দেয়ালের একটা ফাটা অংশ দেখে মনে হচ্ছিল,হয়তো ওটাই সেকুরের রহস্য খোজার জানালা,পরে দেয়ালের একটা কালো দাগ দেখে এনিষ্টেকে কিছুটা উপেক্ষা করেই আমি উঠে দেখতে গেলাম।অবশ্য আমার ভাবটা এমন ছিল যে আমি এনিষ্টের গল্পে উদ্ধুদ্ধ হয়ে আনমনে হাঁটাহাটি করছি।
দেয়ালের গর্তে সেকুরের চোখের কোন খোঁজ না পেয়ে কিছুটা হতাশ হলাম।তবুও একটা অনূভূতি ছুঁয়ে যাচ্ছিল আমার মন,কোন না কোন জায়গা থেকে সেকুরে উঁকি দিয়ে দেখছে সবকিছুই।আমি তো শুধু প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া একজন পুরুষ না,একজন দায়িত্বশীল মানুষও নিঃসন্দেহে।মনে মনে ভাবছিলাম সেকুরে হয়তো তার ছেলেদের সাথে আমাকে নিয়ে কথাবার্তা বলছে,হয়তো তার স্বামীর সাথে আমাকে তুলনা করতেও দ্বিধা করেনি।নিজেকে ফিরিয়ে আনতে হলো এনিষ্টের ভেনিসের শিল্পীদের ছবি আঁকার কথাবার্তায়।ঈর্ষা হচ্ছিল ঐ সব শিল্পীদের যাদের কথায় ভঁরে আছে সেকুরের স্মৃতি,কিন্ত তারা তো কোন দরবেশ,পীরের মত আত্মত্যাগ করেনি,যুদ্ধে কোন শত্রু সৈন্যের হাতে শহীদ হয়নি তার স্বামীর ,মত,শুধু কটা ছবি এঁকে পৃথিবী জয় করে যাচ্ছে তারা।ভাবছিলাম পৃথিবীর রহস্য আর অন্ধকার নিয়ে কি ভাবে ছবি এঁকে যাচ্ছে এই শিল্পীরা,এনিষ্টে যা বিশ্লেষন করছিল।ভাবছিলাম ঐ ছবিগুলোর কি বিবরণ দিয়ে মানুষের চোখে তুলে ধরা যায়,যাদের ঐ ছবিগুলো দেখার সূযোগ হয়নি কোনদিন।

দেখি সেভকেত দাঁড়িয়ে আছে,দৃঢ় একটা ভাব নিয়ে সে আমার দিকে এসে হাতে চুমু খেল -ট্রান্সওক্সানিয়ার সারকি্সিয়ান জাতিদের ওটা একটা প্রথা,অতিথির হাতে চুমু খাওয়া শুধু আসার সময় না যাওয়ার সময়।দূরে সেকুরের জোরে জোরে হাসির শব্দটা কানে ভেসে আসছিল।সেকুরের হাসিটা কি আমাকে উদ্দেশ্য করে?ব্যাপারটা হাল্কা করে নেয়ার জন্যে আমি সেভকেতকে জড়িয়ে ধরে তার দুই গালে চুমু দিলাম,তবে সেটাই যেন ছিল আমার করনীয়।এনিষ্টের দিকে একটু হেসে বোঝানোর চেষ্টা করলাম তাকে কোন অসম্মান করার ইচ্ছা ছিল না আমার।দেখি কোন এক ফাঁকে সেভকেত আমার হাতে একটা চিরকূট গুজে দিয়ে চলে গেছে।চিরকূটটা হাতে ধরে ছিলাম,অমুল্য এক রত্ন যেন,চোখে মুখে হয়তো ছিল
একটা বোকার ভাব।এটাই তো প্রমান করে যে সেকুরে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে।ফিরে গেলাম আমার ছেলেবেলার ভালবাসার সময়টায়।সেকুরে কি আমার ভাবভঙ্গী খেয়াল করছে আড়াল থেকে?মনটাকে আবার এনিষ্টের বক্তব্যের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিলাম,অসহনীয় এক যুদ্ধ ভালবাসার রাজ্যে বাস্তবতার বিদ্রোহ।
৯৯


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই ধারাবাহিকটি আমি ছাড়া আর কেউ পড়ে না কেন? আজিব !!!

২| ১১ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:৫২

ইল্লু বলেছেন: কলমের ছোয়াটা হ্যতো তেমন মানানসই না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.