![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পকেটে কিছু খুচরো স্বপ্ন নিয়ে নিজেকে জানার চেষ্টায় আছি। মাঝে মাঝে শব্দ দিয়ে দাগাদাগি করি। অসামাজিক।
*
ছোটবেলায় দাদাবাড়িকে আমরা খুব একটা পছন্দ করতাম না। এর কারন এই না যে তারা দরিদ্র ছিলেন। তবে তাদের বাড়িতে কারেন্ট ছিল না। যদিও বড় হয়ে জেনেছি কারন দু'টি পরষ্পরের প্রতিবেশী।
দাদার কথা আজ আর খুব একটা মনে নেই। শুধু মনে আছে তিনি মাঝে মাঝে অল্পদামী বিস্কিটের প্যাকেট নিয়ে আমাদের দেখতে আসতেন। তবে আমরা তা পছন্দ করতাম। তখন তাকে বাজারের আর দশটা বুড়ো মানুষের মতই লাগত।
কোন এক শুক্রবার আমরা দাদাকে দেখতে দাদাবাড়ি গেলাম। তিনি মৃত্যুশয্যায় ছিলেন। এটা আসলেই তার মৃত্যুশয্যা ছিল। সেই দিনটা শুক্রবার ছিল মনে আছে কারন ছোটবেলায় প্রতি শুক্রবারে টিভিতে আলিফ-লায়লা নামক একটা ব্যাপার দেখানো হত।
একপাশে ধানের ক্ষেত রেখে একটা মাটির পথ অন্ধকারে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। দাদাবাড়ি থেকে রিকশা পেতে হলে এই পথটুকু পেরুতে হয়। আমাদের কাফেলা দাদাকে দেখে, তার সুস্থতা কামনা করে চলে যাচ্ছে। দূরের জঙ্গলে জোনাকীর আলো আমাদের শিশুমনকে খুব একটা আলোড়িত করতে পারছে না। আমরা খুব চিন্তিত। আলিফ-লায়লা শুরুর আগেই বাসায় পৌঁছাতে পারব কিনা সেই টেনশন। তবে আশার কথা- আরেকটু এগোলেই রিকশা পেয়ে যাবো।
কিন্তু পথটা পেরিয়ে যাবার আগেই ভেতরের বাড়ি থেকে একটা ক্রন্দনরোল ভেসে এসে আমাদের পথ আটকে দিল। গ্রামের প্রতিটা কান্নাই আলাদা আলাদা, শুনলে চেনা যায়। কান্না শুনে সবাই বুঝল আমাদের দাদা মারা গিয়েছেন।
*
মৃতবাড়িতে গ্রামের প্রায় সব মানুষ চলে এসেছে। বাড়ি গিজগিজ করছে শোকার্ত মানুষে। অনেকেই কাঁদছে, নানানবয়সী মানুষজন, কেউ কেউ ফোঁপাচ্ছে।
আমরা সবার সাথে পাল্লাদিয়ে কাঁদছি।
আমাদের মা আমাদের কান্না দেখে বিরক্ত হন। চাপা স্বরে ধমকে ওঠেন।
'চুপ করবি? নাকি মার খাবি?'
শুনে একদল মহিলা পরমাদরে আমাদের মাথায় আন্তরিকভাবে হাত বুলিয়ে দিলেন।
'আহারে। দাদা মারা যাওয়ায় কাঁনতেসে। থাক বৌ, বইক না।'
সাহস পেয়ে আমরা কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিই। সব হারানোর ব্যথা না হলেও অনেককিছু হারানোর ব্যথা ছিল। আমরা কিছুতেই আলিফ-লায়লার সেই পর্বটি মিস করতে চাই নি। আর আমাদের অসহায় মা সব জেনেও কিছু করতে পারেন না। চুপচাপ বসে থাকেন। রাগ-শোক-বিরক্তি মেশানো একটা অদ্ভুত রাত উপহার নিয়ে বসে থাকেন।
*
অনেকবছর পর আলিফ-লায়লা দেখতে গিয়ে আমাদের সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যায়। ভেবেছিলাম, ঘটনাটা মনে করে আমাদের নিজের কাছে অপরাধী লাগতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আমরা ছোটবেলার কাছে অপরাধী হয়ে যাই। তখন আমরা ভান করতে জানতাম না। এখন আমরা ভান করি। শোকার্ত হওয়ার ভান করি, আনন্দ পাওয়ার ভান করি, পছন্দ করার ভান করি। চারিদিকে ভান আর ভান। ঠিক কবে জানিনা, তবে আমরা বোধহয় নষ্ট হয়ে গেছি।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৬
ইমরান নিলয় বলেছেন: চলুক...
২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৪
এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: নষ্ট নিয়ে কষ্ট হলেও,আপনার লেখা পড়ে মনে ঘৃনার জন্ম হলো। বেশী ঘৃনা হচ্ছে আপনার পিতা-মাতার প্রতি,যারা আপনার বাল্য শিক্ষার গুরু। জীবন শুরু যাদের এভাবে,তাদের শেষ আবার কিভাবে হবে??!!
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৯
ইমরান নিলয় বলেছেন: আপনার কথার তরজমা বুঝতে পারিনি। অথবা আপনি আমার লেখা বোঝেন নাই। কোনটা?
৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০২
এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: ‘দাদা- দাদীর বাড়ী অপছন্দ তাদের গরীবি নয়, বিদ্যূৎ আর টিবির অভাব।’ দাদার কথা আজ আর খুব একটা মনে নেই। শুধু মনে আছে তিনি মাঝে মাঝে অল্পদামী বিস্কিটের প্যাকেট নিয়ে আমাদের দেখতে আসতেন। তবে আমরা তা পছন্দ করতাম। তখন তাকে বাজারের আর দশটা বুড়ো মানুষের মতই লাগত। এখানে পারিবারিক বন্ধনহীনতার চিত্র স্পষ্ট ছিল বলেই--আমরা খুব চিন্তিত। আলিফ-লায়লা শুরুর আগেই বাসায় পৌঁছাতে পারব কিনা সেই টেনশন। তবে আশার কথা- আরেকটু এগোলেই রিকশা পেয়ে যাবো।কিন্তু পথটা পেরিয়ে যাবার আগেই ভেতরের বাড়ি থেকে একটা ক্রন্দনরোল ভেসে এসে আমাদের পথ আটকে দিল। সবাই কি টিবি সিরিয়াল দেখার রুগি ছিলেন? এই আপনার বাল্য শিক্ষা এবং তার অর্জিত মানবতার ছাপ আপনার লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করে, অবশেষে অবুঝের মতো মায়াকান্না করলেন।---হায়রে সব লেখক। লিখতে গিয়েই বুঝিয়ে দেয় উনির অতীত ও বর্তমান ।আপনাদের মতো লেখদের লেখায়--পিতার পিতা,পিতা-মাতা সেই গুরুজনের শেষ বিদায়ের বিষয়টার লেখনির ভাব, ভাষার অর্থ, করুন মর্মস্পর্শ হওয়া কোনদিনই সম্ভব নয়।
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৪
ইমরান নিলয় বলেছেন: প্রায় পুরোটা লেখাই একটা শিশুর মনের জগত নিয়ে।
পারিবারিক বন্ধনহীনতার চেয়ে একটা শিশুর নিজের অনুভূতিই প্রকট।
একজন লেখকের কাজই হল- সৎলেখার মাধ্যমে নিজের গল্পগুলো বলা। নিজেকে ফেরেসতা সাজাতে আসিনি, গল্পগুলো বলব বলে এসেছি। আপনারা সমালোচক, সমালোচনা করবেন। তবে লেখককে চেনার জন্য অন্য লেখাও পাঠ দরকার। আপনাকে লিঙ্ক দিতে ইচ্ছা করছে না।
দুইটা গল্প আছে- দূরে থাকা কিংবা অচেনা নিকটবর্তী, আরেকটা একেবারে উপরেরটা।
ভালো থাকবেন।
৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৩৭
এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: মনে সংকীর্নতা থাকলে সকলেই আপনার মতো মাথা নীচু করে দাড়িয়ে থাকে।
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪৫
ইমরান নিলয় বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভান এবং ভ্রমের দেখনদারীতে চটকদার জীবন! চলুক না...