নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখালিখি পেশা নয়, নেশা! আর আমি লেখায় আসক্ত!

ডাকনাম ইমু ইমরান

লিখালিখি পেশা নয়, নেশা! আর আমি লেখায় আসক্ত

ডাকনাম ইমু ইমরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ \'বদলে যাওয়া জিসান\'

০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১১

স্বদেশ ছেড়ে আবুধাবিতে আমি তখন প্রথমবার এসেছি। হাতের কাজ শেষে অবসর সময়টা আমরা তখন নিজেদের বাসার মধ্যেই কাটিয়ে দিতাম সবাই মিলে। বাসায় থাকাকালীন সময় নামাজ পড়ার জন্যে আমি আমাদের রুমের বেলকুনীটা সবসময় ব্যবহার করতাম। আমাদের রুমের ভেতরে নামাজ পড়ার মতো কোনোরকম পরিস্থিতি না থাকার কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাকে সেখানে নামাজ পড়তে হতো। একই রুমে তখন আমরা চারজন বন্ধু থাকি। আবির, উদয়, জিসান আর আমি। স্বদেশের বাড়ি একেকজনের একেক জেলায় হলেও সবার মাঝে অনেকটা ঘনিষ্ঠতা জন্মে গিয়েছে। একে অপরের প্রতি ভালবাসায়, ভালোলাগা, মায়ামমতায় আবদ্ধ তখন সবাই। তবে এরমধ্য আবির আর উদয় অনেকটা স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মানুষ হলেও জিসান ছিলো উঠতি নাস্তিক স্বভাবের ছেলে। নিজের ধর্ম ইসলাম হলেও জিসান কোনো স্রষ্টা, ধর্মে বিশ্বাসী ছিলোনা।

একদিন ছুটির দিনে গোসলখানা থেকে বের হয়ে দেখলাম হোম থিয়েটারের পুরোটা বলিউড দিয়ে জিসান গান শুনছে আর ডিস্ক নাচ নাচছে। খেয়াল করলাম যোহরের আযানের ধ্বনিও তখন স্পষ্টভাবে কর্ণে ভেসে আসছে। আযানের ধ্বনি শুনতে পেয়েও যে জিসান গান বাজিয়ে নাচছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই আমার। আমি গিয়ে হোম থিয়েটার বন্ধ করে দিলাম। জিসান আমার দিকে আড়চোখে তাকালো। বুঝতে পাড়লাম জিসানের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটিয়েছি আমি। জিসান কোনো স্রষ্টা, ধর্মে বিশ্বাসী ছিলোনা বলে আমার সাথে জিসানের নানান বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটা হতো। হোম থিয়েটার বন্ধ করার পর আমি জিসানকে জিজ্ঞাস করলাম,-
- 'আযানের সময় গান বাজাচ্ছিস কেন? কানে কি শুনিস না আযান হচ্ছে?'
- 'গান তো আল্লাহ বাজাচ্ছে। আমিতো গান বাজাচ্ছি না।'
- মানে!
- 'তুই না বলিস আমাদের স্রষ্টা আল্লাহ্‌।'
.
আমি বললাম,-
- 'নিঃসন্দেহে আল্লাহু এই সকল কিছুর সৃষ্টিকারী।'
- 'তাহলে আমার স্রষ্টা কে হলো?'
- 'আল্লাহ্‌'
- 'আমাকে খাবার দিচ্ছেন কে?'
- 'আল্লাহ্‌'
- 'আমাকে মেরে ফেলবেন কে?'
- 'আল্লাহ্‌'
- 'আমাকে চালাচ্ছেন কে?'
- 'আল্লাহ্‌'
- 'দ্যাটস্ এক্সেক্টলি দ্যা পয়েন্ট! আমাকে যদি আল্লাহ্‌ নিজেই চালিয়ে থাকেন তাহলে এই গানটাও আল্লাহ্‌ চালিয়েছেন। আমি কেবলমাত্র তার নির্দেশ অনুযায়ী হোম থিয়েটার অন করেছি। তাতে আমার কোনো দোষ নেই। তিনিই তো আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে তাইনা?'
.
জিসানে কথাটা শুনে আমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। জিসান ততক্ষণে দীঘির জলের পদ্মফুলের ন্যায় হেসে উঠেছে। অট্টহাসি হাসতে হাসতে আমাকে বললো,-
- 'আল্লাহ স্রষ্টা যাই বলিস, এসব বলতে আসলে কিছুই নেই। কোনো স্রষ্টা মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীকে বা উদ্ভিদ সৃষ্টি করেনি। এগুলো সবই প্রাকৃতিক নিয়মের ফলাফল। বিবর্তনের ফলে এক কোষী প্রাণী থেকে বহুকোষী প্রাণী তৈরি হয়েছে এবং কোটি কোটি বছর ধরে তা উন্নত হতে হতে একসময় বানর বা শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী তৈরি হয়েছে। মানুষ কোনো বিশেষ প্রাণী নয়, শুধুই বানর থেকে বিবর্তনের ফলে একটু উন্নত প্রাণী।' আল্লাহুর ধারণাটা আসলে মানুষের কল্পনা প্রসূত।'
.
আমি জিসান কে বললাম,-
- 'তোকে কিছু কথাবলি উদাহরণ স্বরূপ। কিছু মনে করিস না?'
- 'হ্যা বল?'
- 'এক্সাম্পল! তুই একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছিস। এখন তার জন্যে আমি তোর বাবার কাছে গিয়ে তার গালে কষে থাপ্পাড়াচ্ছি। আর তারপর তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার পর তুই মেয়েটিকে ধর্ষণ করার দায়ে তোর বাবাকে আদালত ফাঁসির আদেশ দিলো। এই বিচারটা কি তোর কাছে সঠিক মনে হয়?'
- 'অবশ্যই না! আমি ধর্ষণ করে থাকলে আমার বাবাকে কেন ফাঁসি দেওয়া হবে?'
- 'কারণ তোর বাবা তোকে জন্ম দিয়েছেন, তোকে খাবার খায়িয়ে ছোট থেকে বড় করেছেন। আর তোকে ধর্ষক বানিয়েছেন বলে।'
- 'মোটেও না, আমার বাবা একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ। কারণ তিনি আমাকে সবসময় ভালবেসেছেন এবং আমাকে তিনি উচ্চশিক্ষা দানের জন্যে সবসময় চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমিই কখনো তার কথাকে মান্য করতে পারিনি।'
- 'তবুও তোর বাবাকেই দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলনো হবে। কারণ সে তোকে জন্ম দিয়েছে।'
.
জিসান কিছুটা রাগান্বিত হলে বললো,-
- 'অদ্ভুত! আমি যদি ধর্ষণ করে থাকি, তাহলে আমি সাজা পাবো। আমার বাবা কেন তার জন্যে দোষী সাব্যস্ত হবেন। তিনিতো আমাকে ধর্ষণ করার নির্দেশ দেননি।'
- 'তাহলে আল্লাহু যদি তোকে সৃষ্টি করে থাকেন তাহলে কেন তোর পাপকাজের জন্যে তিনি দোষী থাকবেন। আল্লাহু কি তোকে পাপকাজ করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন?'
.
আমার প্রশ্নটা শোনার পর জিসানের পূর্বের হাসিমাখা মুখটা অনেকটা মলিনতায় ছেয়ে গেল। আমি জিসানকে বললাম,-
- 'আল্লাহ মানুষের মাঝে ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন এবং ভালোমন্দের দুইটি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। নির্দেশ করেছেন ভালো পথে চলার ও ভালো কাজ করার জন্যে। আর বারণ করেছেন খারাপ পথ হতে বিরত থাকতে। তবুও যদি তুই খারাপ পথ বেছে নিশ তার জন্যে কি আল্লাহ দায়ী থাকবে?'
.
জিসান এবারও চুপ হয়ে রইলো। বুঝতে পাড়লাম জিসানের কোনো উত্তর এখানে নেই। আমি জিসানকে রেখে ভাত হয়েছে কিনা দেখার জন্যে রান্নাঘরে চলে আসলাম। রান্নাঘর থেকে খেয়াল করলাম জিসান শার্টটা গায়ে দিয়ে কোথায় যেন বেরিয়ে পড়লো। তারপর দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা শেষে রাতে এসে বাসায় ফিরলো। রুমে এসে কারো সাথে কোনোকথা না বলে সরাসরি ফ্রেস হয়ে খেতে বসলো। আমি জিজ্ঞাস করলাম,-
- 'কিরে! কোথায় ছিলি সারাদিন?'
.
জিসান কোনোকথার উত্তর না দিয়ে খেয়েদেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। আমিও আর কিছুই জিজ্ঞাসা করলাম না। ফজরের নামাজটা নিয়মিত মসজিদে গিয়েই পড়ি। শেষরাতে ফজরের আযান শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে উঠে মসজিদে যাবো বলে রুমের দরজা খুলেতেই পিছন থেকে জিসান ডাকলো,-
- 'দোস্ত একটু দাঁড়া।'
- 'কেন?'
- 'আমিও তোর সাথে মসজিদে যাবো।'
.
লেখকঃ ডাকনাম ইমু ইমরান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.