![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোন না কোন দরকার এসে ঠিক হাজির হবে। প্রতিটি মাসেই এ এক নৈমত্তিক ঘটনা। কিন্তু এবার কোনভাবেই মুমিন তার শখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবে না। একরকম নাক-মুখ-চোখ বন্ধ করে রাখতে চায়। রাহেলার সঙ্গে আজ বিয়ের সাতটি বছর হয়ে গেছে। অথচ মেয়েটির জন্য এখন পর্যন্ত এক রতি সোনার কিছু গড়ে দিতে পারে নি মুমিন। যখনই কিছু টাকা সঞ্চয় হয়েছে তখনই এমন একটা প্রয়োজন এসে হাজির হয়েছে যে, সেই টাকা ঢেলে দিতে হয়েছে—কখনও ছোট ভাইয়ের স্কুলের ফি, কখনও মা বলেছে এ মাসে বাড়তি কিছু টাকা দিও বাবা কিংবা বাড়ির সারাই-মেরামত ইত্যাদি। সেই ছোট বেলায় রবিনের বাবা তার লাল টুকটুকে সিডিআই হান্ড্রেড হোন্ডা মোটর সাইকেলে এক বিশাল বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছিল—সারা এলাকার মানুষ চোখ গোল গোল করে দেখেছে সেই মাছ। বাবার চাকরির বেতন কত আর মা কীভাবে সংসার চালান সেটা বোঝার জন্য মুমিন তখন বয়সের তুলনায় একটু বেশিই পরিপক্ক হয়ে গিয়েছিল। তাই আর, আর সবার মত চোখ দিয়ে বোয়ালটা চেটেপুটে খেলেও বাবা-মা’র সামনে কখনই বলে নি সে কথা। জানে, বললে বাবা হয়তো চেষ্টা করবেন অমন একটা মাছ আনার; কিন্তু কী দরকার সেসব বলার বরং যখন নিজে বড় হয়ে অনেক বড় চাকরি করবে—মা’র জন্য একটা ফ্রিজ কিনে দিতে পারবে তখন এমন একটা বিশাল বোয়াল সেও তার মোটর সাইকেলে বেঁধে নিয়ে আসবে। আর সেই বড় মাছটা কাটতে গিয়ে মা শুধু বকবে—পাগলটা দেখ কত বড় মাছ নিয়ে এসেছে!
মা সে রাতে বলেছিল রবিনদের বাড়িতে একটা ফ্রিজ আছে—মুমিনের কাছে তখনও ফ্রিজ মানে হচ্ছে এমন একটা মিটশেফ যেখানে খাবার কখনও নষ্ট হয় না। বাবাকে সে জিজ্ঞেস করেছিল বাবা কেন মাকে একটা ফ্রিজ কিনে দেয় না? বাবা সব সময়ের মত খুবই হালকা ভাবে বলেছিলেন কিনে দিবে। মুমিন জানত বাবা কিনে দিবেন না, তাকেই বড় হয়ে কিনে দিতে হবে।
চিন্তা করতে করতে কখন যে বড় রাস্তায় উঠে গেছে খেয়ালই করে নি মুমিন। পেছন থেকে বাসের তীব্র হর্ণে তার মনে পড়ে সে মোটরসাইকেলে। গাড়িটা অফিস থেকে দিয়েছে। ফিল্ডবেজড চাকরি, অনেক ছুটাছুটি করতে হয়—তেলের খরচ, মেরামতের খরচ সব অফিসই দেয়। এতে মুমিনের বেশ সুবিধাই হয়েছে। আগে সে মোটর সাইকেল চালাতে জানত না। প্রথম যখন এনজিওতে চাকরি নেয়, সেখানকার বস অবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘বলেন কি, মোটর সাইকেল চালাতে না জানলে এনজিওতে চাকরি তো নাই’। ব্যাপারটা তাকেও বেশ নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু কারও কাছে মোটর সাইকেল চাইতে খুবই সঙ্কোচ বোধ হয়। রাশেদ ভাই- যতটা না কলিগ তার চেয়ে অনেক বেশি বড় ভাই- তার কাছে মোটরসাইকেল চাইলে নির্দ্বিধায় দিয়ে দিবেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু তারপরও একটা দ্বিধা তো থেকেই যায়—যদি ‘না’ করে বসেন। অফিসে একটা পুরোন মোটর সাইকেল ছিল, কোন একটা প্রজেক্ট ক্লোজ হবার পর আর এটা বিক্রি হয় নি—অফিসের কেউ কাছাকাছি কোথাও ফিল্ডে গেলে এটা নিয়ে যায়। পিওনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে মোটর সাইকেলটা নিয়ে একবার বের হয়েছিল সে, মিলন নামের এক বন্ধু কিছুটা হাতে খড়িও দিয়েছিল। ব্যাস ওই পর্যন্তই। পরের দিন অফিসে গিয়ে লোকমুখে শুনেছিল মোটর সাইকেল নেওয়াতে বস বেশ অখুশি হয়েছেন। অফিসের নিয়ম অনুযায়ী যার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই সে মোটর সাইকেল নিতে পারে না। যা হোক পরে চাকরি বদল, তারপর আবারও চাকরি বদল। এই তিন নম্বর চাকরিটাতে অবশ্যই মোটর সাইকেল চালাতে হবে। বরিশালের প্রত্যন্ত এলাকায় ফিল্ড, সেখানে খুব একটা যানবাহনও চলে না, পরিবহণ বলতে মোটর সাইকেলই ভরসা। বিপাকে পড়ল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া অফিস থেকে গাড়ি দিবে না। আবার গাড়ি ছাড়া সে তো চালানোও শিখতেও পারবে না, লাইসেন্স পাবে কীভাবে! সুনীলদা, মুমিনের এলাকার লোক—এই বিদেশ বিভুইয়ে মুমিন তাকে বন্ধু-বড়ভাইয়ের মত সম্মান করে—পরামর্শ দিল—একটা দালাল ধরেন, টাকা দিলেই লাইসেন্স হয়ে যাবে, তারপর ওটা জমা দিয়ে অফিস থেকে গাড়ি নেন; আমি দুইদিনে শিখিয়ে দিব। সুনীলদাই একটা দালালের ফোন নম্বর দিল। পরবর্তী ঘটনা খুবই স্বাভাবিক আর সাদামাটা—যে রকম হলে বলা যায় প্রায় বিনা ঝঞ্ঝাটে লাইসেন্স হয়ে গেল। এই অসততার জন্য যে নিজের মনে কিছুটা অনুশোচনা হয় নি তা নয়; তবে সততা দেখিয়েই মিঠু ভাই কী পাহাড় উল্টেছে! তিনি তো প্রায় আঠার হাজার কিলোমিটার গাড়ি চালিয়েছেন। অথচ বিআরটিএতে পরীক্ষা দিলেই ফেল। শেষ পর্যন্ত তিনিও দালাল ধরেই লাইসেন্স নিয়েছেন। সুনীলদা কথা রেখেছিলেন, মাত্র দুদিনেই গাড়ি চালানো শিখিয়ে দিয়েছেন।
ক্লাসটা টেনে বেশ জোরে ব্রেক কষে মুমিন। আর একটু হলেই মহিলার গায়ে লেগে যেত। মহিলার আতঙ্কিত চোখ আর টায়ারের ক্যাচ শব্দ মুমিনের বুকটা কাঁপিয়ে দেয়। সে ধরেই উঠতে পারছে না আসলে দোষটা কার, মহিলাটা কোথা থেকে ফুঁড়ে উঠলো কে জানে। পেছন থেকে রিকশাওয়ালা চিৎকার করে উঠে, আসলে গালিগালাজ করতে থাকে অটোরিকশাওয়ালাকে। রিকশাওয়ালারা ইদানিং অটোরিকশাওয়ালাদের ওপর বেশ ক্ষ্যাপা। ক্ষেপবেই বা না কেন, একেতো এরা এই রিকশাওয়ালাদের প্যাসেঞ্জার কমিয়ে দিয়েছে, তার ওপর রাস্তায় কোন আইন কাণুনেরও তোয়াক্কা করে না এরা, যেখানে যে সিগন্যাল দেয় এরা কিছু না ভেবে দাঁড়িয়ে পড়বে সেখানে। যেমন এই মহিলা ঠিক তিন রাস্তার মোড়ে সিগন্যাল দিয়েছে আর অটোরিকশা দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু মুমিন যে অন্যমনস্ক ছিল না—তা তো নয়। সুনীলদা বলেন গাড়ি চালানোর সময় অন্য কোন কথা চিন্তা করা যাবে না। কিন্তু মাথা এমন একটা জিনিষ যা অনর্গল চিন্তা করতে থাকে। এ মাসে সে অনেক নির্ভার—কোন চিন্তা নেই—বাড়িতে মাস চলার টাকা, নিজের বাসাভাড়া, লোনের কিস্তি, বিদ্যুৎবিল, গ্যাসবিল, ময়লা ফেলার টাকা, পেপার বিল, বাজার-খরচ সবই করা হয়ে গেছে। বরং গত পাঁচ মাস ধরে একটু একটু করে যে টাকা জমিয়েছে সেটার উপর এখন পর্যন্ত কোন শনি নজর দেয় নি। তারপরও কেন জানি না মুমিনের মাথার মধ্যে চিন্তারা গিজগিজ করতে থাকে। বোধহয় এটা একটা অভ্যাসই হয়ে গেছে। অথচ এবারের চাকরিটা তার বেশ হয়েছে। বরিশাল ছেড়ে সম্প্রতি ফরিদপুরে নতুন চাকরি নিয়ে এসেছে সে। রাহেলা কেঁদে-কেটে একসার হয়েছিল যখন শুনেছে নয় মাসের মাথায় আবার চাকরি বদল হচ্ছে। আবার নতুন জায়গা, নতুন মানুষ ইত্যাদি-প্রভৃতি। তারপর তাকে আসতেই হয়েছে। সাতদিন ধরে বাঁধা-ছাদা করা, ট্রাক ঠিক করা, একে-ওকে খবর দেওয়া—এইসব রাহেলা এক হাতে করেছে। মুমিন একমাস আগেই ফরিদপুরে চলে এসেছিল। বাড়ি বদলের দিনও যেতে পারে নি সে। এক ছোট ভাই আর কিছু বাড়িবদল শ্রমিকের সাহায্যে রাহেলা এই গুরু দায়িত্ব সামলেছে। রাতে বিভিন্নভাবে মুমিন রাহেলাকে সান্ত্বনা দিয়েছে; এমন সব কথা বলেছে যা সে নিজেও বিশ্বাস করে না। অবশেষে রাহেলা এ কথা শুনে শান্ত হয়েছে যে, মুমিন অন্তত আগামী দুই বছর চাকরি বদল করবে না। মুমিনের কিন্তু ভালই লাগে ফরিদপুর, এখানে সস্তায় নদীর মাছ পাওয়া যায়। মাছের দাম এত সস্তা যে সে প্রতি মাসে মাছের বাজেট থেকে কিছু কিছু করে টাকাও জমাতে পেরেছে—এই টাকাটার কথা কেউ জানে না—শনি তো দূরের কথা। এই টাকাটা তার একটা স্বপ্নের টাকা। ছোট বেলা থেকে বুকের মধ্যে গোপনে রেখে দেওয়া একটা বোয়াল মাছ কেনার টাকা। ফরিদপুরে নদীর মাছ সস্তা হলেও বোয়াল-ইলিশের দাম বেহেশেতেও একই। মুমিনের মনে হয়— দিন কোনদিন আসলে বদলে না, বাবাও কোনদিন রবিনের বাবার মত বড় একটা বোয়াল কিনতে পারেন নি, সে নিজেও বড় একটা বোয়াল কিনতে পারে না। মাকে একটা ফ্রিজই কিনে দিতে পারে নি, আর তো বোয়াল। ফ্রিজ আসলে কিনে দেবার সুযোগটাই হয় নি মুমিনের। তার আগেই মা নিজেই একটা ফ্রিজ কিনে নিয়েছেন। এ জমানায় ফ্রিজ ছাড়া কোন সংসার চলে? বিয়ের আগে মুমিন একটা বাড়িতে পেয়িং গেস্ট ছিল; খুব ভাল পরিবারটি। সেই আপা তো মুমিনকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করতো। রান্নার হাতও যথেষ্ট ভাল। বাসায় ফিরতে যত রাতই হোক না কেন কখনও ঠান্ডা ভাত তাকে খেতে হয় নি। কিন্তু মুমিনের এক বদঅভ্যাস ঠান্ডা পানি ছাড়া ভাত খেতে পারে না। সেদিন ভাত খেতে বসে আপার কাছে ঠান্ডা পানি চাইলে আপা একদম ঝেড়েমুছে না করলেন। মুমিন আর ঠিকমত ভাতই খেতে পারে নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে মুমিন খেয়ে ওঠার পর ভাইয়া যখন খেতে বসল আপা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খেতে দিল। আপার সমস্ত ভাল মানুষী সেই একটা আচরণে মুমিনের সামনে নির্নিমেষ হয়ে যায়। বিয়ের পর টিভি কেনার আগে মুমিন আর রাহেলা ফ্রিজ কিনেছে। অবশ্য মুমিনের সাধ্যে কুলোয় নি সেটা, রাহেলা তখন চাকরি করে। সে-ই তিন কিস্তিতে এই ফ্রিজটা কিনেছে। যা হোক এটাই তার সংসারের প্রথম ফার্নিচার।
মোটর সাইকেলটা নিয়ে বড় বাজারের চিপা-গলিতে ঢুকে যায় মুমিন। ডানদিকে দাঁড়ানো মেয়েগুলো নানা ভাবে ডাকে তাকে; এদের দিকে এখন তেমন একটা তাকায় না সে। এই যৌনকর্মীদের নিয়ে তিন বছর কাজ করেছে সে, তার একটি গবেষণাও আছে এদেরকে নিয়ে। কিন্তু এখন আর কেন যেন এদের প্রতি কোন মমতা বোধ করে না। মনে হয় সবাই তো টাকার জন্যই খাটে, ওরাও যা মুমিন নিজেও তো তাই। আসলাম ভাইয়ের দোকানের সামনেই সাধারণত সে মোটর সাইকেল রাখে। আজও সেখানেই রাখল। কিন্তু আজকের রাখাটা একটু অন্যরকম—আজ যখন সে বের হবে বাজার থেকে তখন তার হাতে থাকবে বিশাল একটা বোয়াল মাছ। এই বাজারের সবচাইতে বড় বোয়াল মাছ। তখন অবশ্য আসলাম ভাইও বেশ সম্ভ্রম নিয়ে তাকাবে, এখন যদিও সে তেমন একটা গ্রাহ্য করে নি মুমিনকে। মুমিন লক্ষ করেছে এই ধরনের লোকজন— মানে বাজারের আশেপাশের লোকজন— তাদেরকেই কদর করে যারা অনেক বাজার করে। যেমন রমিজ ভাই, বাজারে এসে কখনও মাছের দাম করবে না। একজন দোকানদার যত মাছ নিয়ে বসবে সব একবারে বাজারের ব্যাগে তুলবে। ব্যাস, রমিজ ভাই আসলে এই আসলাম একদম গলে পড়ে। রমিজের সামনে নিজেকে মুমিনের খুব ছোট লাগে। সে অবশ্য কখনও বড় সাজতে চায়ও না, তবে আজকের দিনটা আলাদা অবশ্যম্ভাবীভাবেই, কেন না আজকে সে সবচাইতে বড় বোয়ালটা কিনবে আর রাস্তাঘাটেও লোকজন চোখ ছানার বড়ার মত করে দেখবে। কেউ হয়তো জিজ্ঞেসই করে বসতে পারে বোয়াল কত হল? খুব জিতেছেন ভাই এই বাজারে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ছোট মাছওয়ালাদের বিন্দু পরিমাণ পাত্তা দেবার আজকে কোন প্রশ্নই আসে না। ওরা যতই ডাকুক না কেন মুমিন ছুটে চলে বোয়াল মাছের দিকে। নিজেকে দুই একবার বেশ হ্যাংলা মনে হয়। কিন্তু ওসব আজ সে আমলে নিতে চায় না।
এখানে সে প্রায় প্রতিবারই—যখনই বাজারে তখন—একবারের জন্য হলেও দাঁড়ায়। এখানেই বোয়াল বিক্রি হয়। তবে এবারের দাঁড়ানোটা সঙ্গত কারণেই অন্য যে কোন বারের চাইতে আলাদা। এবার সে ক্রেতা। সবচেয়ে বড় বোয়ালটা দেখিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে কত এটা? আগে ধইরা দেখেন স্যার—দোকানী তার সাদা দাঁতগুলো বের করে বলে। বেশ কায়দা করে মাছটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায় মুমিনকে। আর কিছুক্ষণ বাদেই মুমিন এই সুবিশাল মাছটির গর্বিত মালিক হতে যাচ্ছে। আর এটা তো গর্ব করার মতই বটে। কখনই মাছওয়ালারা তাকে স্যার বলে সম্বোধন করে নি। আসলে যারা বড় বড় মাছ কিনে তারাই ওই সম্বোধনটার গর্বিত অধিকারী। আজকে মাছটা বাসায় নিয়ে গিয়ে একটা সেলফি তুলতে হবে। আর ফেসবুকে কোন পোস্ট না দিলে সেই ঘটনা এই পৃথিবীতে ঘটে না। প্রতিটি কাজেরই ডকুমেন্টশন দরকার আছে আর এমন কপাল আবার কবে আসবে কে বলতে পারে। দোকানদারের একটা কথাও কানে ঢোকে নি মুমিনের— এটা সে এইমাত্র খেয়াল করল—দাম কত হবে বললেন? সে ফোস করে জিজ্ঞেস করে।
- কত আর দিবেন স্যার? আপনের লিগা বারো হাজার।
- বারো হাজার!
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও এতটা অবাক হত না মুমিন। নাকি আসলে দোকানদার বুঝে ফেলেছে—পড়ে ফেলেছে তার মাথায় কী ঘুরছে—মাছ যে সে নিবেই সেটা ধরে ফেলেছে মাছওয়ালা।
- আড়াই হাজার টাকা পাবা
দোকানদারসুলভ ভাবেই দোকানদার বলল- এইটা আড়াই হাজার-পাঁচহাজারের মাছ না, কম কইরা হইলেও দশ-বারো কেজি মাছ হইব স্যার। এভাবে দর কষাকষি চলতে থাকে। আর অন্য কোন মাছ হলে যে মুমিনের চলবে না সেটা মুমিন ছাড়া আর কেউ জানে না। তাই সবাই এই দর কষাকষির ধরন শুনে একটু অবাক হয়। শেষ মেষ সাড়ে ছয় হাজার টাকায় রফা হয়। এর জন্য মুমিনের অবশ্য এমাসে মোবাইল বিল থেকে তিনশ’ টাকা, তেল খরচ থেকে তিনশ’ টাকা, মাসের হাত খরচ থেকে পাঁচশ’ টাকা আর চশমা কেনার সাতশ’ টাকা কেটে ফেলতে হয়েছে। আর সঙ্গে যোগ করতে হয়েছে পাঁচ মাস ধরে তিল তিল করে জমানো টাকাগুলো। তবুও তো একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রতিটি মানুষেরই উচিৎ তার ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে এভাবে পূরণ করা। কেউ কেউ ধারালো বটি হাতে বলেছিল স্যার কাইটা দেই—মুমিন আমলে নেয় নি। সে তার মোটর সাইকেলে বোয়াল মাছটি বাঁধার চেষ্টা করছিল। হই-হই করে আসলাম ভাই এগিয়ে আসে—আরে মুমিন ভাই এত্তবড় মাছ কিনছেন! খাড়ান, খাড়ান আপনে পারবেন না আমি বাইন্দা দিতাছি। আসলাম যে এভাবে বাজার মাথায় তুলবে সেটা তো প্রত্যাশিতই ছিল। আসলামই দৌড়াদৌড়ি করে সব ব্যবস্থা করছিল। এই সময়ই মুমিনের ফোনটা বেজে উঠে। জানে তার বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছে বলে রাহেলা ফোন করেছে। যা হোক মুমিন ঠিক করে রেখেছে রাহেলাকে কিছু বলবে না। বাসায় যখন এত বড় মাছটা নিয়ে যাবে তখন সে কতটা স্তম্ভিত হবে সেটাই দেখতে চায় মুমিন। মাছ বাঁধার দায়িত্ব আপাতত আসলামের ওপর সমর্পন করে একটু সরে পকেট থেকে মুমিন ফোনটা বের করে। গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে
-হ্যালো
-হ্যালো, বাবা, মুমিন তোমার বাবা এক্সিডেন্ট করেছে। তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসো।
মূহুর্তে দুনিয়াটা বদলে গেল। মোটর সাইকেল স্টার্ট করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে মুমিন। একটু পরেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। বাসায় গিয়েই রাহেলাকে তৈরি হতে বলতে হবে। ব্যাঙ্কে একটা কড়িও নেই। পকেট কপর্দক শূণ্য। গাড়িতে ঝোলানো বোয়ালটাকে মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বোঝা। লোকজন ঘুরেঘুরে দেখছিল—তারা কী মাছ দেখছিল না মুমিনকে উপহাস করছিল তার কোন তাল খুঁজে পায় না মুমিন—খোঁজার কোন চেষ্টাও করে না। শুধু মনে হয় কেন সে মাছটা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল! গলার মাঝখানে কোথায় যেন ব্যাথা করে উঠে। আবার চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে, আজকাল প্রায়ই চোখে ঝাপসা দেখে মুমিন।
২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫
ইমরান মামা বলেছেন: ধন্যবাদ গিয়াস লিটন ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: খাড়ান , আপনারে একটা স্যালুট দিয়া লই ।
নিন্ম মধ্য বিত্ত্ব ''মুমিন'' দের চমৎকার জীবনালেখ্য ।
অসাধারণ লিখেছেন ভ্রাতা , সরি '' মামা '' ।