নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু মুঠোভরা অন্ধকার

সে এক পাথর আছে কেবলই লাবণ্য ধরে ...

শামীম শরীফ সুষম

just another brick in the wall

শামীম শরীফ সুষম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধা ও কুকুরের গল্প

২৯ শে মে, ২০১০ সকাল ১১:৫৮





বাতাসে রুটির গন্ধ ।



মুখ তুলে তাকাতে ইচ্ছা করে না অসিতের , মুখ তুললেই বৃষ্টির ছিট আসছে । বছরের এই সময়টা খুব খারাপ কাটে ... পড়ার মত কোন গরম জামা নেই , অথচ এমন শীত করে যে গায়ে কিছু না দিয়ে থাকাও যায় না । মাথায় দু-এক ফোঁটা পড়ুক ঠিক আছে , কিন্তু কাঁথা ভিজে গেলে শুকাতে বেশ কষ্ট হয় ।



বাম পা অনেক কষ্টে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় অসিত , অর্ধেকটা নাই পায়ের , কাটা অংশটা টায়ারের রাবার দিয়ে মোড়া । ছোটদের আইসক্রিমওয়ালার গাড়ির মত গাড়িটা গড়িয়ে নেবার চেষ্টা চালায় সে , পারে না ; জোর পায় না হাতে আর ।



কাঁথায় নাক গুজে রুটির গন্ধ নিতে থাকে অসিত । এই হোটেলটার মালিক বদলেছে । মাসুদ চালাতো আগে , তখন গেলে দুই একটা রুটির টুকরো পাওয়া যেত ... এখন অসিতকে কেউ চিনে না ... গেলে ফকির বলে তাড়িয়ে দেবে .. অথচ ক্ষুধাটা এমন যে অস্বীকার করা যাচ্ছে না ।



এই রাস্তাটাকে নদীর মত লাগে তার । ছেলেবেলায় বাপুর সাথে মাছ ধরার কথা মনে আসে । নরম পলিমাটিতে পা দেবে যেত .. শিকারি বিড়ালের মত সর্ন্তপনে অসিত হাত রাখত নির্ভরতায় , দুহাতের ভাঁজে ধরা দিত অসহায় কোন মীন ।



"বাপু , জবর পাইছি.... "



ছেলের আনন্দ সংক্রমিত হত পিতার ঠোঁটেও , " লইয়্যা যা , তর মারে কইস রানতে .. এই মাছ বেচুম না "



সদ্য বৃষ্টিটা থামল ... এখনো ধোঁয়া উঠছে গরম পিচ থেকে .... গন্ধটা কেমন যেন নেশাধরা .... মাথা তুলে তাকায় অসিত । গাড়িটাকে আবার রাস্তায় গড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে , হাতে জোর পায় না । গত সাতদিন এরকম চলছে । জ্বর আর বৃষ্টির যণ্ত্রণায় একবারও বের হতে পারেনি ।



" মাথা ঠান্ডা রাখো ... পুরো ঠান্ডা । হাত কাঁপলে শেষ । আমরা কেউই পেশাদার যোদ্ধা না , মনে রাখবা । যেগুলা শিখাই , ভালোমত শিখে নাও । এভাবে দাঁত দিয়ে পিনটা খুলে হাতে নাও ..গুনতে থাকো ..এক ... দুই.. "



কমান্ডার গণি ভাইয়ের গলা যেন আজও বাড়ি খাচ্ছে ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে .... উপহাস ? ... পেশাদার যোদ্ধা ? জন্মের পর থেকে আজ অবধি , যুদ্ধই তো তার একমাত্র পেশা ।



গতকাল মিছিল হয়েছে এখানে । একটা ছেঁড়া স্যান্ডেল এখনো পড়ে , একটা ভাঙা চশমা । জুলফি বেয়ে গড়ানো পানির স্রোতটাকে মুছে ফেলে অসিত ।



রুটির গন্ধটা ক্রমেই বাড়ছে । খিদেটা চাগিয়ে উঠল আবার ... মাথায় এখন শুরু গরম রুটির ঘ্রাণ , একটা কাঁচামরিচ যদি পাওয়া যেত ?



জিভে জল আসে , জুল জুল করে একদৃষ্টিতে দোকানের চুলার আগুনের দিকে তাকিয়ে থাকে অসিত ।



ছাত্রজীবনে শখের রেডিও ছিলো একটা , টাকা জমিয়ে কিনেছিল অসিত, পরে কাজে দিয়েছিল । ১৬ জন ঘরহারা , স্বজনহারা যোদ্ধার সাথে সেও ছিলো এক যোদ্ধা । রোজ রাতে একসাথে গোল হয়ে বসে থাকতো সবাই , মাঝখানে কথা বলে যেন ন্যাশনাল ট্রানজিস্টর .....



রোজ এক-দুইজন শ্রোতা কমে যেত ... এক একটি অক্ষর হয়ে যেন রক্তাক্ত এক একটি ফুল , সেইসব না জানা কবরে।



২৫ এপ্রিল , ইকবাল হল ... করিডোরে লাশ .. লাশ আর লাশ ।



"বাপু , আমার আর ঢাকায় পড়া হয়নি বাপু । আমারে মাফ করে দাও ।" বিড়বিড় করে অসিত , জ্বরে মাথাটা ভীষণ ভারি লাগে । ক্ষুধা লাগে , বড় ক্ষুধা ।



চারদিন হলো কিছু পেটে পড়েনি .. এমনি সময় বোঝা যায় না , কিন্তু রুটির গন্ধটা মরে যাওয়া ক্ষুধাটাকে জাগিয়ে তুলছে ।



" মনে রাখবা , তুমি যোদ্ধা । খিদা পাইলে খাবা না , খাবার পাইলে খাবা । আমাদের দেশে যুদ্ধ চলতেছে ... না খেয়ে থাকতে হবে হয়তো দিনের পর দিন । মনের জোর হারাবা না ... "



গনি ভাই , আপনি রাঙ্গানগর ব্রিজে বুকে দুইটা গুলি নিয়ে বেঁচে গেছেন । আপনাকে আর কখনোই ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে হবে না ... আপনার বুকে আর কেউ কখনো রাইফেলের নল ঠেকিয়ে ভয়াবহ সব প্রশ্ন করবেনা .....



" তোমার সার্টিফিকেট কই ? "



" তুমি হিন্দু না মুসলমান ? "



" কই যুদ্ধ করছিলা তুমি ? "



" কোন ডকুমেন্টে তোমার নাম নেই কেন ? "



যে কোন রাইফেলের গুলির চেয়েও বেশি ভয়াবহ এসব প্রশ্ন । যে কোন ডাস্টবিনের নোংরার চেয়েও পুতিগন্ধময় এসব প্রশ্ন । গণিভাই , আপনি মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছেন ।



আস্তে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অসিত ।



রাস্তার একটা কুকুরকে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে অসিতের দিকে , তার মুখভরা লালা .... তীক্ষ্ণ শ্বদন্তে তীব্র বিষ ....







ভীষণ ভয় লাগে অসিতের ।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:০১

""ফয়সল অভি "" বলেছেন: দ্রোহ এর দ্বিতীয় সংখ্যার জন্য আপনার উক্ত লেখাটি প্রকাশের অনুমতি চাইছি এবং আশা রাখি অনুমতি প্রাপ্ত হবো ।


দ্রোহ এর প্রথম সংখ্যার লিংক>> http://www.chittagongnews.org/droho/

আন্তরিক শুভ কামনা রইল ।

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৩৭

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: আমার ও ভালো লাগবে ... সানন্দে ।

ধন্যবাদ

২| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:১০

ভাঙ্গন বলেছেন: সুন্দর আবহের গল্প। ক্ষুধাতুর,সংগ্রামী আর নি:স্ব মানুষদের বা অসিতদের গল্প।
তবে এক জায়গায় এসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ'র 'নয়নচারা'র মত পেলাম। যেখানে "ঘনায়মান কালো রাতে জনশূন্য প্রশস্ত রাস্তাটাকে ময়ূরাক্ষী নদী বলে কল্পনা করতে বেশ লাগে"........

.........
শুভ কামনা সুষম।

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৩৯

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা

৩| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:১৩

সোহানুর রহমান বলেছেন: বেশ ভাল লাগলো

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৩৯

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:১৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৪০

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: ধন্যবাদ , মাহবুব ভাই

৫| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:১৯

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন!! এরকম কত নির্মম বাস্তব আমাদের আশে পাশেই হয়ত ঘুরছে, আমরা তার খবরও জানিনা। এ কোন বাংলাদেশ দেখছি??!! চমৎকার লেখার জন্য আবশ্যই +

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৪১

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: ধন্যবাদ , ভাই

৬| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৩০

করবি বলেছেন:
আজ অতিসদের জবাব দিতে হয় অথচ কথা ছিল অতিসদের জবাব চাওয়ার ।


ভালো লাগলো লেখাটা।

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:৪২

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: ধন্যবাদ , করবি

৭| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১:০৮

শায়মা বলেছেন: এত মন ছুঁয়ানো লেখা কি করে লিখে ফেলো সুষম!

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:২৮

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: প্রথমে হাত ফোটাই ....তারপর কিবোর্ডের ওপর আংগুল রাখি .......

৮| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১:১৬

মোঃ আরিফ উদ্দিন বলেছেন: লেখাটা পড়ে মনে ভাল লাগলেও কিছুটা কষ্ট অনুভব করলাম। আমরা কতটা অসহায়।

২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:২৯

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: ধন্যবাদ

৯| ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৩৪

সায়েম মুন বলেছেন:
গল্প ভাল লাগলো।
পরিণতিটা একটু --------------- :(

২৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩৭

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: এটাই তো হয় ! আমি কি করব বলুন ?

১০| ২৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:০৮

ফুল পরী বলেছেন: এত সুন্দর একটা লেখা! খুব খুব সুন্দর!!

২৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩৮

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: ধন্যবাদ , ফুলপরী

১১| ২৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:১৭

ফাহাদ চৌধুরী বলেছেন:
ভাল লাগলো গল্পটা!! সাথে লেখার ভাষাটাও!!

২৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩৯

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: ধন্যবাদ , ফাহাদ ভাই

১২| ২৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩২

ইসতিয়াক আহমদ আদনান বলেছেন: খুব ভাল লাগল। ভাষাটাও চমৎকার।

২৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩৯

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: ধন্যবাদ

১৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৫৬

রাজ মো, আশরাফুল হক বারামদী বলেছেন: আপনি আসলেই শক্তিশালী আছেন।

দৃশ্যগুলি মাথায় ভাসছে। গনগনে চুলার আগুন। এক টুকরো রুটি। হোটেল। তপ্ত রাস্তা। টায়ারে মোড়ানো পা। পুরা বাস্তব।

১০ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৪৩

শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: আমি মোটেও শক্তিশালী নই ... হালকা পাতলা মানুষ :)

ভালো থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.