নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাগ্নিক গাঙ্গুলী

সাগ্নিক গাঙ্গুলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ ইচ্ছা

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:১৮

"মা, একটু seat belt টা বেঁধে দেবে ?"

সুদূর Africa-য় Sudan -র এক অখ্যাত শহর Dongola থেকে রাজধানী Khartoum গামী বিমানে বাংলা ভাষা শুনে বেশ চমকেই গেলেন Mrs Chatterjee । তাকিয়ে দেখলেন এক বৃদ্ধ। মাথায় সাদা চুল, এক মুখ সাদা দাড়ি, চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা, পড়নে ফিটফাট শার্ট-প্যান্ট, হাতের ঘড়ি টি পুরোনো কিন্ত বেশ দামী তা বোঝা যায়, মুখে-চোখে বয়স এখনও অতটা থাবা বসাতে পারেনি।

প্রশ্ন টা আর একবার আসতেই হুঁশ ফিরল Maddam এর। তখনই উদ্দিষ্ট ব্যক্তির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। "ধন্যবাদ" শুনে বুঝলেন, উচ্চারণ এ টান আছে।

"Boarder's List থেকে জানতে পারি বিমানে একজন বাঙালী আছেন। ভাবছিলাম আলাপ এর সুযোগ হবে কিনা, আর দেখো মা, কী অবাক কান্ড তুমি আমার পাশের seat এই বসলে ", হাসি মুখে বললেন বৃদ্ধ।

একটু অপ্রস্তূত হয়েই জিজ্ঞাসা করলেন Mrs Chatterjee , "কিন্ত আপনি বুঝলেন কিভাবে আমি বাঙালী ?"

জবাব এল, " কপালে গোল টিপ্, সিঁথিতে সিঁদুর, ও হাতে শাখা পলা দেখে এটুকু বুঝেছিলাম যে তুমি ভারতীয়, তাই এইটুকু রিস্ক না নিয়ে পারলাম না"।

এবার একটু আস্বস্ত বোধ করলেন Mrs Chatterjee । শুনতে পেলেন, "মা, কী নাম তোমার ? কী করো তুমি ?"

"Mrs Sharmila Chatterjee।" , উত্তর দিলেন Maddam, "আমার Husband Mr Deepak Chatterjee এখানকার ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত, সেই সূত্রেই গত চার বছর ধরে আমরা Khartoum -র ই বাসিন্দা। শেষ একমাস কোনো এক Project এর কারণে ওকে Dongola তেই থাকতে হচ্ছে। তাই গত এক সপ্তাহ আমি ওর সাথে কাটিয়ে আজ দেশে ফিরছি, রাতেই Flight Khartoum থেকে।"

কথাটা বলতে বলতে বৃদ্ধের চোখের দিকে তাকালে এক মুহূর্তের ঝিলিক টা Mrs Chatterjee নিশ্চয়ই খেয়াল করতে পারতেন।

ভারী গলায় প্রশ্ন এলো, "দেশ মানে ? "

" হ্যাঁ ", বলে বৃদ্ধের দিকে তাকাতেই তিনি দেখতে পেলেন, বৃদ্ধের চোখে জল। অবাক হয়ে শর্মিলা তাকিয়ে আছে দেখে বৃদ্ধও তখনই চোখ মুছে আবার স্বাভাবিক হয়ে বললেন, " আসলে শেষ দশ বছর তো দেশে ফেরাই হয়নি, তাই তুমি যাচ্ছ শুনে একটু চোখে জল এসে গেল। জানিও না আর কখনও সুযোগ হবে কিনা। তাই আর কী। তা মা, তোমার দেশের বাড়িতে কে কে আছেন ?"

" মা থাকেন একা, সাথে ৩০বছরের বিস্বস্ত মণিদা। আমি প্রতি বছর এক মাসের জন্য যাই দেশে।"

" আর বাবা ?", প্রশ্ন টা করেই বৃদ্ধ বুঝতে পারলেন যে ভুল হয়ে গেছে।

কিছুক্ষন শুধু বিমানের ওড়ার শব্দ শুনলেন। তারপর উত্তর পেলেন, " আমার যখন দু বছর বয়স, তখনই পুলিশের এনকাউন্টার এ আমার বাবার মৃত্যু হয়। বড় হয়ে জানতে পেরেছিলাম তিনি রেলে চাকরি করতেন, কিন্ত কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ডাকাতি ও খুনের দায়ে ধরা পড়েন তিনি। জেল হয়। জেল ভেঙে পালিয়ে যান। যেখানে লুকিয়ে ছিলেন সেখানেই পুলিশ খবর পেয়ে এনকাউন্টার করে ও তাঁর মৃত্যু হয়"।

দীর্ঘশ্বাসের শব্দটা কান এড়ালো না বৃদ্ধের। আবারও কিছুক্ষণ সব চুপচাপ, শুধু প্লেন ওড়ার গোঁ গোঁ শব্দ। পরিবেশ টা হালকা করার জন্য Mrs Chatterjee নিজেই এগিয়ে এলেন, "জ্যেঠু আপনার সম্পর্কেও কিছু বলুন।" মিনিট দুয়েক সামনের দিকে তাকিয়ে রইলেন বৃদ্ধ, যেন মেপে নিলেন চিন্তার গভীরতাকে। তারপর শুরু করলেন-

"ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন আমার বয়স বছর পাঁচেক। সে স্মৃতি এখনও স্পষ্ট। হিন্দু স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করি আমি, ভর্তি হই এখনকার প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরাজী সাহিত্য নিয়ে। পাশ করে বেরিয়ে সরকারী চাকরি পেয়ে গেছিলাম, তখন চাকরি পাওয়া এত কঠিন ছিল না, আবেদন করলেই মিলত সরকারী চাকরি। ভালোই চলছিল। বিয়ে করলাম। সন্তান হল। জীবনে প্রথমবার সন্তানকে কোলে নেওয়ার ওই মুহূর্ত কোনোদিনও ভুলতে পারি না। সন্তান হওয়ার ঠিক দেড় বছরের মাথায় হঠাৎ-

"Excuse Me Sir, If You Don't Mind, May I ask Your Preference in Snacks ?", বিমানসেবিকার প্রশ্নে থামলেন বৃদ্ধ। একই প্রশ্ন তাঁকেও করে খাবার এর প্যাকেট হাতে দিয়ে এগিয়ে গেলেন সুশ্রী বিমানসেবিকা। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে একমনে হাতের Sandwitch এ কামড় দিয়ে নিজের ছোটবেলার কথা ভাবছিলেন Mrs Chatterjee। বাবাকে ছাড়া একাকিনী মায়ের সাথে অন্য পরিবেশে গিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই কী ভোলা যায়? কতবার বলেছে, মা আমাদের সাথে থাকবে এসো , তোমার কোনো সমস্যাই হবে না, কিন্ত কে কার কথা শোনে। মা বলে, " শমু , এই বাড়ির প্রতিটি ধূলিকণা আজ ও তোর বাবার স্মৃতি বহন করছে রে। আর তোর বাবাকে ছেড়ে আমি কিভাবে যাই বল ? বেশ তো আছি, এই ভাল।"

খাওয়া হলে আবার শুরু করলেন বৃদ্ধ-

"হঠাৎ একদিন অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমার আর চাকরি নেই। আমায় ছেঁটে দেওয়া হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই। কানাঘুষো শুনলাম, আমার পদে উর্ধতন কতৃপক্ষের পরিচিত লোককে নেওয়া হবে। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। অনেক কাকুতি-মিনতি করলাম, কেউ কান দিল না, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হল। বাড়িতে স্ত্রী ও একরত্তি সন্তান। আর তখনকার দিনে সরকারি চাকরির মাইনেও ছিল খুব কম, তাই সঞ্চয় বলতে প্রায় কিছুই ছিল না। মাথাটা ঘুরে গেল। আমি ছিনতাই শুরু করলাম, জুটে গেল আরও দুজন। রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকতাম আড়ালে , আনমনা পথচারী দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তাম, লুঠ করে নিতাম সব কিছু। বেশ চলছিল। বাড়িতে জানত আমার রাতের শিফ্ট এ কাজ। এরকমই একদিন হঠাৎ রাতের অন্ধকারে যাকে আক্রমণ করলাম, তিনি-"

বাধা পড়ল আবার। বিমানসেবিকা এসে Feedback Form দিয়ে তা পূরণ করার অনুরোধ জানালেন।

কাজ মিটতেই আবার শুরু করলেন বৃদ্ধ-

( চলবে )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: ঠিক এই ভাবেই হুট একদিন আমার চাকরীটা চলে গেছে।

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৮

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: চলুক....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.