![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কজিতো, এরগো সাম
হাতে ছোটখাট সার্জিক্যাল নাইফটা নিয়ে দুই পা সামনে আগাল ছেলেটা। তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুই পা পেছাল তরুণী। তরুণীর স্থীর কালো-কালো চোখদুটোতে আতংক। সেটা দেখে মুচকি হাসল ছেলেটা। তারপর হঠাৎ-ই হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল তরুণীকে। আকস্মিক এই অবস্থার পরিবর্তনে ভ্যাবাচ্যাকা খেল মেয়েটা। কিন্তু সেই ভ্যাবাচ্যাকা কাটিয়ে উঠার আগেই ডান হাত দিয়ে ছুরিটা তরুণীর বুকে বসিয়ে দিল ছেলেটা।।
[1]
বিরাট হলরুমটা ফ্লাশ লাইটের আলোতে সম্পূর্ণরূপে আলোকিত হয়ে আছে। সেই আলোর স্পর্শ থেকে হলরুমের কোন কোণার জিনিসপাতিও বাদ গেছে বলে মনে হয় না।।
ডিটেক্টিভ আসিফ হলরুমটাতে প্রবেশ করতেই তার চোখ ধাঁধিয়ে গেল আলোর তীব্রতায়। মনে মনে ক্রাইম সিন ইউনিটের উদ্দেশ্যে দুটো গালি দিলেন তিনি। এতো পাওয়ারফুল ফ্লাশ লাইটের কোন দরকার ছিল না!
ডিটেক্টিভের গায়ে এই গরমেও ভারী কালো কোট। দরদর করে ঘাম ছুটছে তার শরীর থেকে। কিন্তু সেদিকে কোন খেয়ালই নেই তার। চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। উদ্দেশ্য - হলুদ ফিতায় আবদ্ধ চতুর্ভুজ আকৃতির স্টেজটা।।
কাছে আসতেই প্রথমে তার চোখ চলে গেল অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটার উপর। তবে, মেয়েটা লাশ হয়ে পড়ে আছে স্টেজের মেঝেতে। বুকের বাম দিকে ছোটখাট সার্জিক্যাল নাইফটা আটকে আছে। একবার দেখলেই বুঝা যায়, একদম গভীরে চলে গেছে ছুরির ফলা। শুধু ছুরির বাঁট-টাই বাইরে আছে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মধ্যবয়স্ক ডিটেক্টিভ। এমন সুন্দরী মেয়ে জীবনে তিনি কমই দেখেছেন!
পাশে এসে দাঁড়ানো ওসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলেন ডিটেক্টিভ ," মেয়েটা ছুরির আঘাতের সাথে সাথেই মারা গেছে। খুব একটা মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়নি তাকে।"
"মেয়েটা তার ডিপার্টমেন্টের টপ স্টুডেন্টদের একজন ছিল।" - বিষন্ন মনে বললেন উপচার্য সাহেব।।
একটু চিন্তা করে ওসির উদ্দেশ্যে বললেন ডিটেক্টিভ - "লাশটা ফরেনসিক তদন্তের জন্য নিয়ে যান। আর ছুরিটা চ্যাক করে দেখুন - তাতে কোন হাতের ছাপ আছে কিনা!"
তারপর উপচার্যের দিকে ফিরলেন। "আপনি মেয়েটার সব ফ্রেন্ডকে আমার সামনে আনার ব্যবস্থা করুন" - বললেন ডিটেক্টিভ।
সম্মতিসূচক মাথা দুলিয়ে দুজনই বেরিয়ে গেলেন হলরুম থেকে।
[2]
তিন দিন পর।।
ভ্রু কুঁচকে সামনে বসে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালেন ডিটেক্টিভ আসিফ রহমান। সন্দেহের সবগুলো তীর এই ছেলেটির দিকেই যাচ্ছে। কিন্তু খুনটা যে সে করেনি - সেটা প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা বারবার করছে এই ছেলে।।
সামনের দিকে ঝুঁকে ছেলেটার চোখের দিকে সরাসরি দৃষ্টি দিলেন ডিটেক্টিভ। তারপর বললেন, "শোন, হৃদয়। তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছ - নিকির খুনের জন্য প্রথম সন্দেহভাজন তুমি। কারণ, যে ছুরি দিয়ে নিকিকে খুন করা হয়েছে সেখানে তোমার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। তোমার অন্যান্য বন্ধুদের জেরা করে জেনেছি - তুমি নিকিকে পছন্দ করতে। কিন্তু গত মাসে তুমি তাকে প্রপোজ করার পর - কোন সাড়া পাওনি। এটাই হতে পারে তোমার মোটিভ। তাছাড়া আমরা তোমার ফ্ল্যাট চেক করে দেখেছি। সেখানে, ড্রাগস পাওয়া গেছে। তুমি যে ড্রাগস নাও - সেটা এখন স্পষ্ট। ড্রাগসের প্রভাবেই হয়তো তুমি নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড এবং মনের মানুষকে খুন করে ফেলেছ। এখন, ভালোই ভালোই স্বীকার যাও। এবং তোমার এই ড্রাগসের জোগান দাতা কে বা কারা সেটা বলে দাও। মারাত্নক অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবে তুমি। তোমার ফ্ল্যাটে আমরা ইয়াবা এবং ফেনেসেলিন - এর বড়সড় একটা চালান আসার আলামত পেয়েছি - মেইল চ্যাক করে।"
দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে হাঁপিয়ে গেলেন ডিটেক্টিভ। সামনে রাখা পানির গ্লাসটা এক ঢোকেই শেষ করে দিলেন তিনি। তারপর চোখ তুলে তাকালেন সামনে এখনো স্থিরভাবে বসে থাকা হৃদয়ের দিকে। ছেলেটার এই দীর্ঘ লেকচার শুনেও কোন ভাবান্তর হলো না। কাল থেকেই এই লেকচার শোনার মতো যন্ত্রণা ভোগ করে আসছে সে। কিন্তু এখনো নিজের কোন কথাই বিশ্বাস করাতে পারল না এদের।।
গভীরভাবে বায়ু থেকে অক্সিজেন টেনে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল হৃদয়। তারপর বলল - "দেখুন। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি। নিকিকে আমি পছন্দ করতাম। প্রোপোজ করে রিজেক্টেডও হয়েছি। কিন্তু তাই বলে, ওকে আমি খুন করিনি। ওর মৃত্যুতে আমার চেয়ে বেশি কষ্ট কেউ পেল বলে মনে হয় না। কিন্তু আপনারা সেই কখন থেকে আজাইরা বকবক করছেন। আমি মানছি - আমি ড্রাগস নিই। ড্রাগসের লেনদেনও করি। সামনে বড়সড় একটা ডিলও করেছি ড্রাগস নিয়ে। ড্রাগস ব্যবসার সাথে সংযুক্ত কারো নাম আমি মরে গেলেও বলতে পারব না। এজন্য আপনারা আমাকে টর্চার করে মেরে ফেলতে পারেন। আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু প্লিজ, নিকিকে আমি খুন করেছি সেটা বলবেন না। কেউ আমাকে ফাঁসিয়ে ফাঁদে ফেলার জন্য ওকে খুন করেছে!"
হৃদয়ের কথা শুনে থমকে গেলেন ডিটেক্টিভ। এই ঘাড় ত্যাঁড়া ছেলেটার চোখ দিয়েও নিকির কথা বলতে গিয়ে অশ্রু ঝরছে দেখে - আরো বেশি বিস্মিত বোধ করলেন ডিটেক্টিভ সাহেব। তার মনের ভেতরে কেউ যেন বলে উঠল - সামথিং ইজ রং। কোন একটা ভুল হচ্ছে।।
হৃদয়ের চোখে মুখের অসহায় ভঙ্গিটা দেখে - আরো দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। চোখ কুঁচকে ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললেন, "আচ্ছা, ধরলাম - খুনটা তুমি করোনি। যদিও সব প্রমাণ তোমার বিপক্ষেই। তবুও তর্কের স্বার্থে ধরলাম। তোহ এখন বলো, কে তোমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে? কেই বা খুন করেছে নিকিকে?"
মাথা নেড়ে অসহায় একটা ভঙ্গি করল হৃদয়। তারপর বলল,"সেটা জানলে তোহ আর আপনার সামনে বসে থাকতাম না। ওই শালাকে ধরিয়ে দিতাম। তবে, কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম বলতে পারি। যারা আমার ক্ষতি করার চেষ্টায় থাকে সবসময়।"
আগ্রহে দম বন্ধ হয়ে এলো ডিটেক্টিভের। সামনে আরো ঝুঁকে এসে মনোযোগ দিলেন হৃদয়ের দিকে।।
[3]
মাথা তুলে বিরাট বিল্ডিংটার দিকে তাকালেন ডিটেক্টিভ আসিফ। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে হৃদয়।
"এই বাড়িতেই থাকে নিলয়। আমার এককালের বন্ধু। এইকালের ঘোর শত্রু।। আমার সন্দেহভাজন তালিকার অন্যান্যদের জেরা করে তো মনে হলো না - তারা খুনী। এটাই শেষজন। যদি আমার চেনা শত্রুদের কেউ খুন করে - তবে এই নিলয়ই করেছে। চলুন, দেখা যাক - হারামজাদা আছে কিনা।" - ডিটেক্টিভের উদ্দেশ্যে বললো হৃদয়।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন ডিটেক্টিভ। তারপর হাঁটা দিলেন বিল্ডিংয়ের ভেতরের দিকে। সিঁড়ির উদ্দেশ্যে।
দুই তলায় উঠে চার নম্বর ফ্ল্যাটটার দরজায় কয়েকবার নক করেও কোন সাড়া পাওয়া গেল না। বাধ্য হয়ে পিছিয়ে এসে গায়ের জোরে কাঁধ দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিলেন তারা দুজনেই। ইতিমধ্যে ডিটেক্টিভের হাতে চলে এসেছে রিভালবার। এক ধাক্কাতেই ছিটকিনি ভেঙে দরজাটা খুলে গেল।
হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়লেন তারা।
ভেতরে ঢুকে প্রথমে কিছুই চোখে পড়ল না তাদের। পরমুহুর্থেই চোখ চলে গেল খোলা জানালার দিকে। মোটাসোটা একটা দড়ি ঝুলছে জানালাটার বাইরের দিকে। দ্রুত সেদিকে এগুলেন তারা। নিচে তাকাতেই দেখা গেল - দ্রুত দড়ি বেয়ে নেমে পড়ছে একজন মানুষ।
দঁড়িটা শক্ত হাতে ধরে উপরের দিকে টান দিলেন ডিটেক্টিভ সাহেব এবং হৃদয়। উপরের দিকে তাকিয়ে ভয়ে চমকে উঠল নিচে নামতে থাকা লোকটা।
দাঁত দাঁত চেপে ডিটেক্টিভের উদ্দেশ্যে হৃদয় বলে উঠল,"এই হারামজাদা নিলয়। ওই খুন করেছে আমার নিকিকে। দেখছেন, কেমনে পালানোর চেষ্টা করছে!"
হৃদয়ের দিকে একবার তাকিয়ে নিচের দিকে ইশারা করলেন ডিটেক্টিভ। ইঙ্গিত বুঝে দ্রুত নিচে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে দৌড় দিল হৃদয়।
এদিকে, সর্বশক্তিতে মোটা দড়িটা টেনে তুলার চেষ্টা করছেন ডিটেক্টিভ। কিন্তু খুব বেশি তুলতে পারলেন না। তার আগেই দড়ি ছেড়ে দিল নিলয়। মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে দ্রুত বেগে মাঠি স্পর্শ করল ছেলেটার পা। এমন সময় তীর বেগে সেখানে এসে পৌঁছল হৃদয়। দৌড়ে এসেই তীব্র বেগে ঘুষি বসিয়ে দিলো নিলয়ের নাকের উপর। দরদর করে রক্ত বেরিয়ে এলে নাক দিয়ে। মুখে হাত দিয়ে মাঠিতে বসে পড়ল নিলয়।
তার কলার ধরে হুঙ্কার দিয়ে উঠল হৃদয়,"খুনটা কি তুই করেছিস?"
মাথা নেড়ে কাঁপতে কাঁপতে সম্মতি জানাল নিলয়। এরইমধ্যে সেখানে এসে পৌঁছেছেন ডিটেক্টিভ সাহেব।
"হারামজাদা..." - বলেই জোরে একটা লাথি বসিয়ে দিল হৃদয় নিলয়ের পেটে। দৌড়ে এসে তাকে থামালেন ডিটেক্টিভ। তারপর হৃদয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,"তুমি এখন বাসায় যাও। তোমার রেস্ট দরকার। বাকিটা আমি হ্যান্ডেল করছি।। আর হ্যা, ড্রাগস ব্যাবসা ছেড়ে দিও। অনন্ত নিকির জন্য।"
ডিটেক্টিভের উদ্দেশ্যে মাথা দুলিয়ে নিলয়কে ছেড়ে দিল হৃদয়। তারপর হাঁটা দিল দক্ষিণ দিকে।।
_পরিশিষ্ট_
কিছুদূর আসতেই হঠাৎ অট্টহাসি হেসে উঠল হৃদয়। এই হাসি - ডিটেক্টিভ আসিফ সাহেবের মতো মানুষকে বোকা বানানোর জন্য। এই হাসি ফাঁদে ফেলে নিজের ঘোর শত্রুকে জীবনের পথ থেকে হঠানোর জন্য।।
তিনদিন আগের বিকেলের কথা মনে পড়ে গেল হৃদয়ের মনে। নিকিকে সেদিন হলরুমে সে ডেকেছিল - ড্রাগসের ডিলের ব্যাপারে আলোচনা করবে বলে। নিকিও ছিল তাদের গ্যাংয়ের একজন সদস্য। ফলে কোন সন্দেহ ছাড়া মেয়েটা ঢুকে পড়েছিল হৃদয়ের ফাঁদে।
কিন্তু ভুলবশত ডিটেক্টিভের হাতে ধরা পড়তে হলো হৃদয়কে। এই সুযোগে একটু অভিনয় করেই ঘোর শত্রু নিলয়কেও হঠানো গেলো। যে নিলয় ভেবেছিল - তাকে ধরতে আসা হয়েছে গত মাসে করা খুনটার জন্য।।
আবারো অট্টহাসি হেসে লোকজনকে চমকে দিলো হৃদয়। তারপর চললো - নিজ ডেরার উদ্দেশ্যে। কয়েকদিনের জন্য গায়েব হয়ে যেতে হবে তার।।
২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
শাহ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন: ধন্যবাদ, সুমন দা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৪
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার সাবলীল বর্ণনা। দারুণ হয়েছে।
লাইক দিলাম।