![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কজিতো, এরগো সাম
আমার হাতে তিনটে বই। পাওলো কোয়েলহোর 'দ্য স্পাই', দান্তে অলিগেরির 'ডিভাইন কমেডি', সিডনি শেলডনের 'ডুমসডে কন্সপিরেসি'। বইগুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট পনের হচ্ছে। এর মধ্যে মেয়েটা তিন জন ক্রেতার কাছে বই বিক্রি করেছে। প্রথম দুইজন পুরুষ, তৃতীয় জন একটা বাচ্চা ও তার মা। পুরুষ দুইজন নিয়েছে একটা বাংলা একাডেমীর ইয়া বড় ডিকশনারি ও একটা লাল কাভারের কবিতার বই। বাচ্চার মা নিয়েছে এক কি দুইটা বড় বড় রঙিন কমিক বই। এই পনের মিনিটের মধ্যে সেলসগার্ল মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়েছে তিন বার। প্রথমবার সরাসরি প্রশ্নাতুর চোখে, দ্বিতীয়বার কৌতুহলি চোখে, তৃতীয়বার আড়চোখে লাজুক ভাবে। আমি তাকিয়েছি পাক্কা পনের মিনিট। স্পেসিফিকলি বললে তার দিকে নয়, তার ডান হাতের দিকে।
মেয়েটার ডান হাত এর অনামিকা আঙুলে একটা স্বর্ণের আংটি আছে। নকলও হতে পারে। আংটিটার উপরাংশে পাথর বসানো। পাথরটা অচেনা জাতীয় কালচে রঙের। উপরের আস্তরণ থেকে কিছুটা উঠে গেছে। সম্ভবত সে ঘরের ধোয়া-মোছার কাজ নিজেই করে অথবা পাথরটাই অমন। বৃদ্ধাঙ্গুল এর নোখ বেশ লম্বা। নেইল পলিশ দিয়ে ছোপ ছোপ দাগ আঁকা। বেশ সুন্দর দেখতে। তর্জনী আর মধ্যমার মাথা সামান্য দেবে আছে। অনেকক্ষণ টাইপ করার ফল।
মেয়েটার হাতে লাল কালার বেশি মানায়। কারণ তার হাতও লালচে ঘরনার। রক্ত চলাচল বেশি। কনিষ্ঠা আঙ্গুল সবসময় বাঁকা হয়ে থাকে। সম্ভবত কোন অস্থি সম্বন্ধীয় রোগ কিংবা অভ্যাস।
ষোল মিনিটের মাথায় মেয়েটার চোখে সরাসরি চোখ রাখলাম আমি। তার কাজলটানা চোখ এ অন্তহীন ব্যাকুলতা।
“আপনার আংটিটা সুন্দর।” বললাম তাকে।
প্রথমে ভ্যাবাচেকা খেলেও সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মাঝে মুখে মাপা বহু চর্চিত হাসি ফিরিয়ে আনলো।
“থ্যাংক্স। আপনি কি বই গুলো কিনবেন?”
আমার হাতের দিকে ইশারা করল সে।
“হ্যাঁ। কিনবো। সাথে আরেকটা জিনিস কিনবো।”
কৌতুহলি হলো সে। “কী?”
“আপনার মন।” জবাব দিলাম।
মেয়েটা এবার মিষ্টি করে হাসলো। স্বাভাবিক হাসি। হাসলে তার গালে টোল পড়ে না, ঠোঁট বেকে গিয়ে দু'চারটে ঝকঝকে দাঁত প্রকাশিত করে।
“মন তো কেনা যায় না।”
“যায়। ধরুন আমি আপনাকে আজ না হয় কাল পটিয়ে ফেললাম। সে জন্য অবশ্যই আমাকে হালি হালি ডেটিং, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি ব্যয়বহুল কাজ করতে হবে। তাহলে ব্যাপারটা আলটিমেটলি কি দাঁড়াল?”
“খোঁড়া যুক্তি।” মুখ বাঁকাল সে।
হাসি দূরত্ব কমিয়ে দেয়। আমি হাসলাম। নিশব্দ হাসি। যেন বুঝিয়ে দিলাম অখন্ডনযোগ্য খোঁড়া যুক্তিই দিয়েছি। মেয়েটাও হাসলো। যেন বুঝিয়ে দিল হার মেনেছে সে।
আমি স্বাভাবিক ভাবে তার দিকে বইগুলো এগিয়ে দিলাম। সে হাত বাড়িয়ে নেয়ার সময় তার কনিষ্ঠা আঙ্গুলে আমার হাতের ছোঁয়া লাগলো একটু। আঙ্গুল দ্রুত গুটিয়ে নিয়ে নারীর স্বাভাবিক লাজুকতার প্রকাশ ঘটাল সে।
“আপনি কি এই বই গুলো পড়েছেন?” জিজ্ঞেস করলাম আমি।
মেমো তৈরি করার ফাঁকে উত্তর দিলো সে,“দুটো পড়েছি। ডিভাইন কমেডি পড়া হয়নি।”
“কালজয়ী বই। কিছুদিন আগেই পড়েছি আমি। বইটিতে দান্তের নরক সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণা তিনি তাঁর নরক ভ্রমণ এর প্রেক্ষাপটে তুলে ধরেন।”
“আবার কিনছেন যে? কাউকে গিফ্ট করবেন নাকি?”
“হ্যাঁ। আপনাকে।” সংক্ষেপে উত্তর দিলাম।
মেয়েটা এবার মুখ তুলে তাকাল। অবাক দৃষ্টি।
“অপরিচিত কাউকে গিফ্ট দেওয়াটা কি ঠিক?”
ভাবনার বিষয়। একটু মাথা চুলকে হাত বাড়ালাম হ্যান্ডশেক এর উদ্দেশ্যে। মুখে বললাম,“আমি শাহ মোহাম্মদ ইসমাইল। আপাতত বেকার।”
সে ইতস্তত করলো অল্পক্ষণ। তারপর দ্বিধার সাথে হালকা ভাবে হ্যান্ডশেক করলো।
“আমি তনুশ্রী রায়। আপাতত কর্মী।”
“উই আর নট স্ট্র্যাঞ্জার এনিমোর।” স্মিত হেসে বললাম তাকে।
হাত ছাড়িয়ে নিল মেয়েটা।দুই আঙুলের ফাঁকে ক্যাশ মেমো রেখে বাড়িয়ে দিল কয়েক সেকেন্ড পরেই। নিলাম জিনিসটা। ৪২৮ টাকা। এত কম কিভাবে এলো?
জিজ্ঞাসু দৃষ্টি হানলাম 'বাতিঘর' এর সেলসগার্ল তনুশ্রী রায়ের দিকে।
“আপনি যদি গিফ্ট করতে পারেন, তবে আমার করতে দোষ কি বলেন? 'দ্য স্পাই' আমি আপনাকে গিফ্ট করলাম।”
মেয়ে বেশ চালু। মনে মনে একছুট প্রশংসা করে নিলাম।
“ধন্যবাদ তবে। আজ আসি। হয়তো শীগ্রই আবার কোন বই নিয়ে চলে আসব আপনার কাছে।”
“ধন্যবাদ আপনাকেও। আবার আসবেন।” বলে বহুল চর্চিত মেকি হাসিটা আবার মুখে ফুটিয়ে তুললো তনুশ্রী রায়।
আমিও আমার ভুবনভোলানো হাসি ঠোঁটের কোণায় ঝুলিয়ে বেরিয়ে এলাম। মেয়েটা জানে না সে যখন 'ডিভাইন কমেডি' খুলবে তখন দান্তের সাথে তারও নরক ভ্রমন এর টিকেট কাটা হয়ে যাবে।
২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:২৮
শাহ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:২৬
কানিজ ফাতেমা বলেছেন: পাওলো কোয়েলহো আমার অন্যতম পছন্দের একজন লেখক ।
অল্প কথায় বিস্তারিত পর্যালোচনা এবং সুক্ষ বিবরনগুলো উপভোগ্য ।
ভাল থাকুন সতত
২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৩০
শাহ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন: তাঁর 'দ্য অ্যালকেমিস্ট' আমার অন্যতম প্রিয় বই। ধন্যবাদ আপনাকে পাঠ ও মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন।
৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০৯
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: শিরোনামহীন গল্প অনেক ভাল লাগল।
২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩
শাহ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:২৩
লেখা পাগলা বলেছেন: ভালা