নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসতিয়াক অয়নের ব্লগ

হাসন রাজায় কয়, আমি কিছু নয় রে আমি কিছু নয় !

ইসতিয়াক অয়ন

আমি কে ? কেউ না ...

ইসতিয়াক অয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমাকে !

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫

আমার জমজ কবিতা লিখবার গল্প দিয়ে শুরু করি । অনেক আগে একদিন, তারিখটা ঠিকঠাক করে বলতে গেলে ৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৪ (২১ মে, ২০০৭), খুব হৈ-রৈ করে একটা কবিতা লিখতে বসেছিলাম । কবিতার নাম ঠিক করা আছে । আজই লিখে ফেলতে হবে এমন । লিখে ফেললামও । লেখা শেষে দেখলাম কিছু চরনের ছন্দ মিলছে না । সমস্যা হচ্ছে ওগুলিকে ছেঁটে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে না । কথাগুলি সুন্দর । এমন সুন্দর বাক্যগুলি কিছুতেই ফেলে দেয়া যায় না । ঐসব লাইন দিয়ে তৈরী হল আরেকটা কবিতা । কো-ইন্সিডেন্টালি একই সময়ে দুটা কবিতা লেখা হয়ে গেল । জন্ম নিল জমজ কবিতা ।



সাধারনত জমজদের নাম দেয়ার কৌশল চমৎকার হয় । যেমনঃ একজনের নাম ‘সান’ হলে আরেক জনের নাম মিলিয়ে রাখা হয় ‘মুন’ । সান-মুন । একজনের নাম ‘দিবা’ হলে আরেক জনের নাম ‘রাত্রি’ । দিবা-রাত্রি । একসঙ্গে ডাকতেও ভাল লাগে । এরকম কোন নাম দেয়া গেলে স্বস্তি পেতাম । কিন্তু নাম যেহেতু আগের ঠিক করা তাই কবিতা দুটির নামও হল একইরকম । এক নামের লোকজনদের যেমন নাম্বার দিয়ে ডাকা হয় (যেমন, দীপু নাম্বার টু), এই কবিতা দুটিরও একই অবস্থা হল । এক জনের নাম হলঃ তেঁতুল বনে জোছনা-১ । আরেকজনেরঃ তেঁতুল বনে জোছনা-২ !



এবার আসি এই যে নাম বদলানো গেল না, তার কি কারন সেই প্রসঙ্গে । একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক তার একটি উপন্যাস বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখেছিলেনঃ



মাঝে মাঝে আমার খুব কবিতা লিখতে ইচ্ছা করে । তখন কাগজ কলম নিয়ে বসি এবং খুব আয়োজন করে কবিতার একটা নাম ঠিক করি । ব্যাস এই পর্যন্তই । কবিতার শিরোনাম লেখা হয়, কবিতা আর লেখা হয় না । বুদ্ধিমান পাঠক আশা করি এর মধ্যেই ধরে ফেলেছেন যে ‘তেঁতুল বনে জোছনা’ আসলে একটা কবিতার নাম । যে কবিতা লেখা হয় নি, এবং কখনো হবেও না ।



এই হচ্ছে জমজ কবিতা লেখার ইতিহাস । বিখ্যাত ঔপন্যাসিক নিজেকে বলতেন ‘দুঃখী বলপয়েন্ট’ । তার একটি নাম ঠিক করে রাখা কবিতা লিখতে না পারার হতাশাবোধ আঁচ করতে পেরে কোন এক মফস্বল শহরের ক্লাস টেনে পড়া একটি ছেলে দুমদাম জমজ কবিতা লিখে সবাইকে বলে বেড়াতে লাগলোঃ হুমায়ূন আহমেদের লেখা কবিতা ! এই তথ্য জানলেও কি তিনি নিজেকে ‘দুঃখী বলপয়েন্ট’ বলতেন ? আমি জানি না । যে কথাটি জানি এবং মনে করে রেখেছি সেটি হচ্ছে আজ দুঃখী বলপয়েন্টের জন্মদিন । জন্মদিনে কি আর উপহার দেই । জমজ দুটি কবিতাই দিলাম !



শুভ জন্মদিন

হুমায়ূন আহমেদ !









তেঁতুল বনে জোছনা-২





প্রেমিকের সাথে তার হয়েছিল দেখা

সেই কবে । তারপর রয়ে গেছে একা

কেঁদে গেছে চোখ তার— তাই দেখে নীলাকাশ কেঁদে হল ছাই—

বিবর্ণ বৃষ্টিতে । ভেঁজা কালো কোটরের

পেঁচাদের ঘুম পেল তাই !

কার্নিশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে নেচে নেচে জলকণা পড়েছিল খসে

প্রেমিক তখনও ছিল আঁধারের ঘরে একা বসে

দুজনেই ভেবেছিল— ‘প্রেম তবু যায় নিকো ঝরে

বৃষ্টিকণার সম’, দুজনার চোখে তাই প্রেম ছিল গোধূলীর লাল রঙে পড়ে ।

পড়েছিল জোছনাবেলায়

পড়েছিল সমুদ্রের জলে

পড়েছিল রোদে ভেজা অপূর্ব মাহেন্দ্রক্ষণে !



প্রেমিকার হাত ছুঁয়ে যেদিন প্রেমিক পথ চলেছিল হেঁটে

সেইদিনও স্বর্ণালী ঘ্রাণ ছিল শালিখের পেটে

সেইদিনও ঝড় হত চৈত্রের শেষে

আমাদের সবুজাভ জোছনার দেশে

তারপর নিভে গেল প্রেম

সে প্রেমিকা কেঁদে বলে— ‘বুঝলেম,

সবই ছিল মেকী ?

ভালবাসা-অভিনয় একসাথে করে গেছো,

ভুলে গেছো কালো চুল ছুঁয়ে দেখাদেখি—

ভুলে গেছো দুজনার অভিমানী দিন ।

ভুলে গেছো জোছনা বিলাস ।

মনে আছে শুধু- ঝরা পাতা, মল্লিকা, তৃণ

ভুলে গেছো স্মৃতিমাখা কবিতাও— ‘আট বছর আগের একদিন’...’



প্রেমিকের মনে পড়ে সব,

ঢেকে যায় অস্ফুট ধ্বনির আড়ালে

মনে পড়ে ‘লাশকাটা ঘর’ও, স্মৃতির অরণ্য মাড়ালে

তারপর মনে মনে হেঁটে চলে তেঁতুলের বন

বনে জাগা প্রেমকাঁটা হেসে বলে,

‘ছিঁড়ে ফেলো অতীতের সব বন্ধন !’



জানে কি সে ? —কিছু কিছু প্রেম প্রেম নয়

কিছু কিছু অভিমান নয় অভিমান

ইহাদের মাঝেতেও ভালবাসা রয়

হয়তোবা ফুল হয়ে ফোটে না কখনো...

হয়তোবা থাকে শুধু সেমন্তীর ঘ্রাণ !!



‘আর বুঝি কোনদিনই হবে না’ক দেখা

তেঁতুলের বনে কোন আশ্বিনা জোছনায় তুমি-আমি রবো না’ক একা,

নাই হল দুজনার পুনরায় দেখা...’

—প্রেমিকের গভীর অবসাদ;

ঝরে না’ক তবু প্রতিবাদ ।









তেঁতুল বনে জোছনা-১





হাঁটছি আমি তেঁতুল বনের অন্ধকারে মহাপথের পথে...

ধূসর পেঁচার ডাক শুনে কে থমকে দাঁড়ায়, তাকায় আমার তরে ?

জিউলি-নোনার ঘ্রাণ পেয়ে যাই তাহার আলোর রথে

আসবে তুমি ? ধরবে এ হাত ?

আসমানী এক শাড়ি আর এক কাঁচপোকা টিপ পরে ?



দেখেছি নীল তারার কাঁদন বনবাদাড়ের জোনাক দেখার শোকে

আর দেখেছি অশ্রুসজল চাঁদের আঁখি— কষ্ট তাদের দিঠে

এদের মাঝেই হাসতে তোমায় দেখেছে সব লোকে

মিথ্যে কি হয় ?

পায়েল পায়ের ছিল, ছিলও কাল-রঙা তিলক তোমার পিঠে ।



তোমার হাসি কাটা বাঁশের বাঁশির মতন বেজে

সুরের মায়ায় অসুর টেনে ইন্দ্রপুরী আনে

আবার সেথায় তোমার মাঝেই আরেক তুমি সেজে

আমার চোখের বৃষ্টিগড়া

দুল পরো ঐ কানে ।



গগনতলে আমায় বলে আসতে ভেঁজা ছাদে

মোদের করুন ছেলেমীতে বধির ছাদও কাঁদে

কত কথাই বলব করে ভেবেছিলেম আমি

ভাবতে গেলেও সেসব কথা আজকে আমি ঘামি

হল না সেই কিশোরীকে বলা সেসব কথা

জরীর রঙে হল না সে আমার প্রিয়ংবদা

ঝগড়া করেই কাটিয়ে দিল অভিসারের বেলা

অবেলাতেই আমার বেলা করিয়া কালবেলা ।



তোমায় এ মন চিনল না তাই আমায় ‘বোকা’ বলে

আমার হলুদ পান্‌জাবীতে নতুন আলোক দিয়ে

হাসির মাঝেই বাসলে ভাল উপহাসের ছলে

করলে প্রদান প্রেমের সুধা

আমার গরল পিয়ে ।



জোছনা আমার লাগল গায়ে পঁচিশ বছর পরে

শত জনম শেষ হল আজ নতুন তৃষার ছায়ে

এরই পানে দিন গুনিনু হাজার বছর ধরে

পেলাম শেষে শেষ নিমেষে

তারার সমবায়ে ।



আমার হাতে তোমার দেয়া পাঁচ পদ্মের নীল

তোমার হাতে সহস্র ফুল মিশল হাজার রঙ

সহস্র সেই পুষ্প হতে পদ্মগুলির মিল

এবং অমিল বের করে কি

ভাঙবে প্রেমের জঙ্‌ ?



হয়ত তোমার হৃদয় রঙিন অনেক প্রসুনঘ্রাণে

‘ভালবাসি’ –এই শব্দখানিও অনেক বেজেছে কানে

রূপসী তোমায় হয়তো অনেক প্রেমিক বেসেছে ভাল

আঁধারে কেবল আঁধার এঁকেছ, কাউকে দাওনি আলো

আমায় ছোঁয়ালে মদিরার জাম, পিয়ালে ও প্রেম পিয়া

ইউরিডিসের মত ভালবেসে হৃদে জ্বেলে দিলে দিয়া

ঘুচেছে আঁধার তবু কেন জানি মাঝে মাঝে অমাবতী

নভে ছেয়ে যায় আপন ইচ্ছায়; মানে না অসম্মতি ।



হয় একদিন হেডিস হতে সে ইউরিডিসের প্রেম

আনব কিনে ফিকে হলুদ পিউলির বন ভেঙে

নয়তো কোন আশিন মাসে ভালবাসার ফ্রেম

ছিন্ন করে হয়ত যাবে

অন্য মনে রেঙে...



কান্না আমার মুছিয়ে দিতে থাকবে না কেউ আর

সেদিন ঝরে পড়ব আমি প্রচন্ড সেই ঝড়ে

হৃদয় ? —সেও দুঃখ পাবে তোমার প্রতীক্ষার

কিইবা ক্ষতি হবে

যদি তোমার মনে পড়ে...



...আমার কথা ! যদি আবার বাঁধো আমায় গানে

তেঁতুল বনে জোছনা ক্ষণে তোমার মনে মনে

চান্নিপসর সেই সে রাতে হারাই কোনখানে

যদি আবার জোছনা ঝরে...

আবার তেঁতুল বনে... !



_____________________

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪

আমিনুর রহমান বলেছেন:



স্যারে জন্মদিনে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায় !

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫১

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: :)

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৮

সকাল হাসান বলেছেন: স্যারের জন্মদিনে স্যারকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্যারকে মিস করছি!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫১

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সকাল !

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

অদৃশ্য বলেছেন:




চমৎকার লিখলেন... কাউকেই আমরা খুব বেশিদিন মনে রাখতে পারিনা... অনেকে পারে বা চেষ্টা করে মনে রাখার..।


শুভকামনা...

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ অদৃশ্য !
আমাদের বোধহয় কিছু সমস্যা আছে কোথাও-

//তোমাদের নিয়ে পারছি না আর জ্ঞাতি
তোমাদের নিয়ে পারে নি কবিরা কোন
হাজার হাজার কবি এলো গেলো তবু
চিনতে পারোনি একটি ‘কবি’র মনও //

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪৮

মহান অতন্দ্র বলেছেন: আপনার লেখা আমার বরাবর খুব প্রিয় , এটিও খুব ভাল লেগেছে ।

শুভ কামনা ।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৩

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.