![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি রক্ত বন্যা দেখিনি কোথাও, দেখেছি চোখের কান্না। সে অশ্রু ফোটায় ম্লান হয়েছে হীরা, মতি, মণি, পান্না।
এক
সবে বসন্তের শুরু তখন ।গাছে গাছে নতুন তকতকে সবুজ পাতা ।বনের গাছের ডালে ডালে পাখিদের ঘন ঘন ডাকাডাকি ।বনের পুব পাশে একটা ছোট্ট নদী ।ছোট্ট নদীটা পাশ ঘিরে একটা গ্রাম ।নদীটায় যেন গ্রামটার প্রাণ ।
এ গ্রাম এ নদী পেরিয়ে বনে গাছের মধ্য দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত একটা হাটা পথ চলে গেছে বনের মাঝ বরাবর ।পথটা অনেকদূর গেছে বৈকি কিন্তু বনটা শেষ করতে পারেনি ।
ঘন ঝুপঝাড় আর গাছপালা কেটে কেটে কাঠের খোঁজে কাঠুরেদের হাতে যদিও রাস্তার সৃষ্টি ,তবে রাস্তার উপরে জীর্ণ দুর্বাঘাসগুলোর করুন অবস্থা দেখে সহজেই আন্দাজ করা যায় ,নদী পেরিয়ে অতদূর পর্যন্তের দূর্গভ রাস্তাটা নিতান্তই কাঠুরেদের নয় ।হাল হালতে সবারই কাজে লাগে ।
রাস্তাটা অবশ্য সব জায়গায় এরকম পরিচ্ছন্ন নয় ।মাইল দু য়েক পরেই রাস্তায় ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে দূর্বাঘাস ।তারপাশের বাক নেওয়া আরেকটি শাখা রাস্তা ।সে শাখা ধরে আরও কিছুদূরে হয়তো রাস্তার অস্তিত্যই প্রায় বিলিন অবস্থা ।এ জায়গাটা অবশ্য কাঠুরেদেরই কালেভদ্রে কাজে লাগে ।তবে এই ঘন ঘাসে ঘেরা জায়গাটা অবশ্য আরেকজনের খুব কাজে লাগে ।
আট বছরের ছেলে মিলুর ।বাবা মা অবশ্য শখ করে নাম রেখেছিল মিল্টন ।
কিন্তু অজ গ্রাম কিনা ।এখানে ঠিক নামটা টেকানো বড্ড দায় ।
বিপ্লব থেকে হয়ে যায় বিলু ।তেমনি নাম রাখার ঘন্টা খানেকের মধ্যে মিলু নামটাও জুটে গিয়েছিল মিল্টনের কপালে ।
মৃদু মৃদু হাওয়ায় গাছের পাতা একটু একটু দুলছিল ।শাখা পথটার এক পাশের উচু কাশবনকে নুইয়ে বিছানা বানিয়ে শুয়েছিল মিলু ।
চোখ তার কাশবনের ডগায় উড়তে থাকা একটা ফড়িং এর দিকে ।
ফড়িংটা বেশ কিছুখন ধরে বেশ জ্বালাচ্ছে ওকে ।
ডগা থেকে উড়ে হঠাত্ হঠাত্ করে ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছে ওর নাকে ।
কখনওবা উড়ে এসে বসছে কপালে ।হাতে তাড়াতেই আবার এসে বসছে বুকে ।
এবার উঠেই বসল মিলু ।হাত দুটো সামনে এনে মুঠোভরে খিল খিলিয়ে এসে উঠল ও ।
: কি রে ফড়িং .. কি চাস ?
একটা কাশ ফুল ছিড়ে নিয়ে তীরের মত ঢিল মেরে বলল ও ।
সুর্যটা বেশ পশ্চিমে হেলে পড়েছে ।খেলা আজ এখানেই সাঙ্গ মিলুর ।জলদি বাড়ি ফিরতে হবে ।
নামাজ শেষ এইমাত্র ফিরল কলিম ।কলিম মুন্সি ।ছনের ঘরটার সামনে একটা ছোট্ট বারান্দা ।ঠিক মত দাড়ানো যায়না ।মাথায় ছনের ঠোকর লাগে ।
এক পাশে একটা ভাঙ্গা এক হাতলের চেয়ার ।সেটাই টেনে বাইরে এনে বসল সে ।
পাঞ্জাবীটা খোলে ছনের চালে বিছিয়ে রাখল ।
: ঐ এক গ্লাস পানি দাও ..
তৃষার্ত গলায় বলল সে ।
কিছুখন পর ঘরের ভেতর থেকে পানির গ্লাস হাতে একজন মাঝারি বয়সের মহিলা বেরিয়ে আসলেন ।
কপালে কালির দাগ ।রান্না ঘর থেকে মনে হয় এসেছেন ।
গ্লাসটা হাতে নিয়ে প্রথমে অর্ধেক পানি দিয়ে কুলি করলেন কলিম ।
বাকি অর্ধেকটা একটানে নিঃশেষ করে গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন ।
: পোলা কই ?নামাজে দেখলাম না ।
: আমি ক্যামনে কমু ?
স্ত্রীর দিকে একবার রাগী চোখে তাকালেন কলিম ।
©somewhere in net ltd.