নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রক্ত বন্যা দেখিনি কোথাও,\nদেখেছি চোখের কান্না।\nসে অশ্রু ফোটায় ম্লান হয়েছে\nহীরা, মতি, মণি, পান্না।

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া

আমি রক্ত বন্যা দেখিনি কোথাও, দেখেছি চোখের কান্না। সে অশ্রু ফোটায় ম্লান হয়েছে হীরা, মতি, মণি, পান্না।

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপ্সরা: দুর্গের দরজা (পর্বঃ ০৪)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৬



ছয়
নিপু আর ভার্সিটির পথে গেলনা। সোজা মোড় ঘুড়িয়ে চলে এলো বাড়ি। হন্তদন্ত হয়ে দরজা দিয়ে ঢুকতেই বাবা বললেন,
- কিরে এতো দ্রুত ফিরে এলি যে?
- ক্লাসে যেতে ভালো লাগছেনা বাবা। মোনাপুকে খুব মনে পড়ছে!

নিজেকে তৎক্ষণাৎ সামলে নিয়ে বলল ও। বাবা আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কিংবা হয়তো জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে ঢুকে পড়লো নিপু। ভেতর থেকে দরজা আটকে যত দ্রুত সম্ভব ব্যাগ নিয়ে লাফিয়ে উঠল বিছানায়। দ্রুত হাতে জিপার খোলে আতিপাতি করে খোঁজতে শুরু করলো ব্যাগের পকেটগুলো। উপরের দুইটা পকেটে পেরিয়ে তৃতীয় পকেটে যেতেই হাতে ঠেকল জিনিসটা। বের করে আনলো বাইরে।
একটা গোলাপি রঙের খাম। এপাশ ওপাশ দুদিকেই খালি। কোথাও প্রেরক কিংবা প্রাপকের কোন নাম লেখা নেই। তবে খামটা হাতে নিতেই কেমন অদ্ভুত একটা ঘ্রাণ পেল নিপু। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা গন্ধ। আগে কোথাও পেয়েছে বলে মনে হয়না।
খামের ভেতরটা দেখার জন্য কৌতুহল ফেটে পড়ছিল নিপুর। সুতরাং ও আর দেড়ি করলোনা। একটানে সামনের অংশটা ছিড়ে ফেলল খামটার। তারপর মুখটা দু ফাক করে প্রথমে ভেতরে উঁকি দিল। একটা কাগজ দেখা গেল। তবে কি কোন চিঠি?
একটা মুহূর্ত ভাবার জন্য সময় নিল নিপু।
তারপর বের করে আনলো কাগজটা। তিন ভাজে ভাজ করা কাগজটা মেলে ধরল চোখের সামনে। যা দেখলো তাতে একরাশ হতাশা চেপে ধরল ওকে। কোন লেখা নেই। একদম খালি একটা কাগজ। জানালার কাছে গিয়ে বেশ কয়েকবার উল্টেপাল্টে দেখল। নাহ! কালির একটা আচরও নেই কোথাও।
আচ্ছা অদৃশ্য কালিতে লেখা নেই তো?
ছোটবেলায় এক ধরনের অদৃশ্য কালি দিয়ে লিখে মজা করতো ওরা। পানির মতো দেখতে তরলের মতো পদার্থটা দিয়ে লিখে সেটা শুকিয়ে ফেললে কাগজে কিছু লেখা আছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হতোনা। কিন্তু আগুনের তাপে মেলে ধরলে সে লেখা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হত।
সুক্ষ্য সম্ভাবনাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারলোনা নিপু।
কাগজটাকে ভাঁজ করে এক হাতের মুঠে পুরে হাতটাকে যথাসম্ভব আড়াল করে বেড়িয়ে এলো ও। রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে বুয়া রান্না করছে। বুয়ার সামনে কাগজটাকে আগুনে ধরা যাবেনা। সুতরাং প্রথমে যে কাজটা করতে হবে তাহল, বুয়াকে রান্না ঘর থেকে সরাতে হবে। এক মিনিট চিন্তা করল নিপু। তারপর এগিয়ে গিয়ে বলল,
- খালা, তোমাকে আম্মা ডাকছে!
আম্মা কাল থেকেই অসুস্থ। সুতরাং বুয়া ডাকছে শুনে ধড়ফড় করে উঠে আম্মার ঘরের দিকে চলে গেল। নিপুর সামনে আর কোন বাঁধাই রইলনা। এগিয়ে গিয়ে কাগজটা মেলে ধরলো উনুনের আগুনের আঁচে। এক মুহূর্ত শ্বাস রোধ করে রইল। কিন্তু তারপরেই আবারো হতাশ হতে হলো ওকে। কাগজটা একেবারেই মামুলি সাদা কাগজ। না অদৃশ্য কালি না কোন কিছু। একেবারেই ফাঁকা। সহসা গাধামুখো বানরটার প্রতি মেজাজ চড়ে গেল ওর। ব্যাটার মতলব টা কি?
এমন ফকফকে সাদা কাগজ দেয়ার মানে কি?

রাগে কাগজটা ভাঁজ না করে ধুমরে মুচরে কোন মতে ঠেসে ঠুসে খামটায় ভরে টেবিলের উপর ফেলে রাখল।
হুট করে মন খারাপ হয়ে গেল ওর। ও ভেবেছিল অদ্ভুত এমন কিছু পাবে যার সাহায্যে খুব সহজেই মোনাপুর সাথে যোগাযোগ করা যাবে। কিংবা এমন একটা পথ জানা যাবে, যা অনুসরণ করে ও পৌছে যেতে পারবে মোনাপুর কাছে! বারান্দায় এখনও দুটো মোড়া পাতা। মোনাপু থাকতে একটায় ও বসতো আরেকটায় মোনাপু। পাশের বিল্ডিং ওদের বিল্ডিং চেয়ে ছোট হওয়ায় আর দুটো বিল্ডিং এর মাঝ খানে একটা রিকশা চলার মতো রাস্তা থাকায় এদিকটা বেশ খোলামেলাই। দুপুর গড়িয়ে গেছে। রুমে দেয়াল ঘড়ি আছে। কিন্তু ওদিকে তাকাতে ইচ্ছে হলনা ওর। অনুমান করলো, ১ টার মত বাজে।

বারান্দার একটা মোড়া দখল করে বসে পড়লো ও। চড়া রোদ উঠেছে বাইরে। সকালের রোদের মত দুপুরের রোদ মিষ্টি নয়, বিরক্তিকর।

তেতে রোদে এক মুহূর্তেই ঘেমে অস্থির অবস্থা হয়ে গেল ওর। মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করলো। তারপর খুঁটির মত বসেই রইল নিপু। অদ্ভুত এই রোদের সাথে বাইরের গাছের পাতাদের ঢিলেমি আর নিচ দিয়ে যাওয়া মাঝে মাঝে দু একটা রিকশার ক্রিং ক্রিং বেলের শব্দের মাঝে যে কি একটা শূন্যতার ছবি খুঁজে পেল ও। রোদের তাপ বাড়তে লাগলো, সেই সাথে বাড়তে লাগলো ঝিম ঝিমও। হঠাৎ কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল যেন। চারদিকে রোদের তেজ চলে গিয়ে যেন নেমে এসেছে অন্ধকার। ঘন কালো অন্ধকার হাতরে কি যেন একটা খোঁজার চেষ্টা করছে ও। ঘন অন্ধকার। চারদিকে কোন কিছুর অস্তিত্য পর্যন্ত টের পাচ্ছেনা ও। কেবল একরাশ শূন্যতা। আর সেই শূন্যতার মাঝে হঠাৎ যেন কোথ্থেকে ভেসে এলো একটা ফিসফিসে স্বর।
- কি খোজছিস নিপু ?

স্বরটা চিনতে দেড়ি হলোনা ওর। ও ডাকল,

মোনাপু... আমাকে বাচাও... আমি শূন্যতার মাঝে হারিয়ে গেছি।

একটা মুহূর্ত কাটলো। নিপুর মনে হল আর বুঝি উত্তর আসবেনা। আর বুঝি সে রেহায় পাবেনা এই অন্ধকার কুপ থেকে। ওর হিসেবে যখন সহস্র সহস্র বছর পেরোল তখন যেন আবার ভেসে এলো মোনাপুর গলা। তেমনি ফিসফিস করে মোনাপু বললেন,

ভালো করে খোঁজ নিপু। অনেক সময় শূন্যতাও অনেক কিছু নির্দেশ করে , আবার অনেক কিছু নির্দেশ করে শূন্যতা! ভালো করে খোঁজ... তাহলেই পথ পাবি...

নিপুর মনে হল আস্তে আস্তে যেন মোনাপুর কথার শব্দের দূরত্ব বাড়ছে। স্পষ্ট থেকে ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিপু ভয়ে এবার দৌড়াতে শুরু করলো কন্ঠ টাকে অনুসরণ করে...

দাঁড়াও মোনাপু... আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও...
চেচিয়ে উঠলো ও। দৌড়াতে দৌড়াতে খেই হারিয়ে উল্টে পড়লো নিচে। আর ঠিক তখন একটা আর্তচিৎকার এসে পৌঁছল ওর কানে। ওর মনে হল বুয়া ওর নাম ধরে ডাকছে। কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি। তারপর সব গুলিয়ে গেল কেমন যেন!

চোখ মেলে নিজেকে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করলো নিপু। ওর শিয়রে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন বাবা। কাদো কাদো মুখে পায়ের তালুতে একটানা মালিশ করে চলেছে বুয়া।

চোখ মেলতেই বাবা ঝুকে এলো সামনে,

কি রে কেমন লাগছে এখন?


নিপু হুট করে কি বলবে ভেবে পেলনা। কিছুটা সময় নিল ও দারস্ত হতে। এর মধ্যে বুয়া পা ছেড়ে দ্রুত মাথার কাছে চলে এলো।

আফা কিছু খাইবেন? মাথা ঘুরাইতাছে এখনও?
নিপুর খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল। তাই ও বলল,

পানি খাব!
বলতে গিয়ে বুঝতে পারলো গলা ভেঙ্গে গেছে। কেমন একটা অবশ অবশ অনুভূতি ঝেকে আছে ওর সারা গায়ে। তবে মাথা আর আগের মত ঝিম ঝিম করছেনা এখন।

পানি খেয়ে একটু সুস্থ বোধ করলো ও।

এখন কেমন লাগছেরে?
ওকে একটু দারস্থ হতে দেখে বাবা আবারো প্রশ্ন করলেন।
- ভালো। তবে কেমন যেন অবশ অবশ লাগছে!

ও কিছুনা, একটু পরেই দেখবি ঠিক হয়ে যাবে। তা অমন রোদের মধ্যে গিয়ে বসেছিলি কেন?
নিপু অনেক ভেবেচিন্তেও শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর পেলনা। তাই কি যেন একটা বলতেও গিয়েও চুপ করে গেল। বাবাও আর পীড়াপীড়ি করলেন না। হয়তো ভাবলেন, বোনের জন্য মন খারাপ করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।

বাবা একটু বেড়িয়ে গেলেন একটু পরেই। নিপুর মায়ের অবস্থাও ভালোনা। ইঞ্জেকশন দায়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে আপাতত। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে মোনাপুর খোঁজ চালাচ্ছেন তিনি। সুতরাং বসে থাকার জো নেই।

বুয়ার কাজ পরেছিল রান্না ঘরে। তাই বেড়িয়ে যাওয়ার সময় সে বলল,

আফা, আমি রান্না ঘরে আছি। খারাপ লাগলে ডাক দিয়েন।
পুরো রুম খালি হতেই এক ঝাক চিন্তা এসে ভর করলো নিপুকে। মাথার মধ্যে এক্টা কথা ঘুরতে লাগলো বারবার।
ঘোরের মধ্যে মোনাপু বারবার করে বলছিল, “অনেক সময় শূন্যতাও অনেক কিছু নির্দেশ করে , আবার অনেক কিছু নির্দেশ করে শূন্যতা! ”

চিঠিটা শূন্য ছিল। এটা স্পষ্ট যে শূন্য চিঠির কথায় ওকে বলেছে মোনাপু। কিন্তু! একটা শূন্য চিঠি কি এমন নির্দেশ করতে পারে? কি অর্থ পারে এর?

কল্পনা করার চেষ্টা করল ও। শূন্যতা, নির্জনতা, সাদা কাগজ! শূন্যতাকে নির্দেশ করে এমন শব্দ গুচ্ছ আওরাতে লাগলো ও। কিন্তু অদ্ভুত উক্তির রহস্য সমাধানের কোন হদিস পেলনা ও।

গোলাপি রঙের খামটা টেবিলের উপরই পড়ে ছিল। হাত বারিয়ে ওটাকে হাতে নিল নিপু। দুমরে মুচরে ভরায় কেমন পেট ফুলে আছে ওটার। চিঠিটা বের করলো ও। ভাঁজ পড়ে অবস্থা কাহিল কাগজটার। বিছানায় রেখে এক হাত দিয়ে ওটাকে সমান করতে চেষ্টা করল ও।তারপর চোখ মেলে ভাল করে কাগজটায়। কি আছে এই শুন্য কাগজে?
ঠিক এই প্রশ্নটা জাগার সাথে সাথেই অদ্ভুত একটা উত্তর খেলে গেল ওর মাথায়। ভাঁজ পড়ে হওয়া এলোমেলো দাগগুলোর দিকে ভালো করে খেয়াল করলো ও। একটা অদ্ভুত ম্যাপের মত দেখাচ্ছে ওগুলোকে। এগুলোই কি তবে কোন নির্দেশ? নাকি মামুলি কোন দাগ?

পাশেই ওর ব্যাগ রাখা ছিল। এখান থেকে কলম নিয়ে ভাঁজ গুলোর উপর কালি দিয়ে দাগ টানলো নিপু। আর তারপরেই অদ্ভুত একটা কাণ্ড ঘটলো।
যেই ভাজগুলোর উপর শেষ দাগটা টেনেছে, অমনি ও অবাক দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলো প্রত্যেকটা খোপে অজ্ঞাত কোন এক ভাষায় আলাদা আলাদা নাম ভেসে উঠতে শুরু করেছে। যেন কোন এক অদ্ভুত উপায়ে ম্যপের জায়গা গুলোর নাম লিপিবদ্ধ করে দিছে কেউ।

নিপু গুনে দেখলো, মোট সাতটা খোপ। আর প্রত্যেকটাতে আলাদা আলাদা নামঙ্কিত করা। ভাষাটা বুঝতে পারলোনা বলে নামগুলো পড়া গেলোনা। কিন্তু, এটা নিয়ে মাথা ঘামাবার আগেই অদ্ভুত একটা জিনিস চোখে পড়লো নিপুর।
ডাণকোনার একদম কাগজের পাশ ঘেসে যে খোপটা আছে ওটার দাগ গুলো যেন আগুনের কয়লার মত জ্বলছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে রঙটা লাল না, আগুনের রঙ অনেকটা গোলাপি দেখাচ্ছে।

নিপুর চোখ আটকে গেল ওখানে। অদ্ভুত একটা প্রতীকের মত লাগছে খোপটাকে!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: হে ঈশ্বর তুমি কি বেঁচে আছ ? নাকি মরে গেছো ?

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:১১

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া বলেছেন: কেন ভাই?

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫১

পলাতক মুর্গ বলেছেন: গল্পের কনসেপ্ট খুবই জটিল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.