নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রক্ত বন্যা দেখিনি কোথাও,\nদেখেছি চোখের কান্না।\nসে অশ্রু ফোটায় ম্লান হয়েছে\nহীরা, মতি, মণি, পান্না।

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া

আমি রক্ত বন্যা দেখিনি কোথাও, দেখেছি চোখের কান্না। সে অশ্রু ফোটায় ম্লান হয়েছে হীরা, মতি, মণি, পান্না।

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপ্সরা: দুর্গের দরজা (পর্বঃ ০৫)

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৬



সাত
ঘন কুয়াশা ঘেরা দরজাটা পর্যন্ত এগিয়ে গেল তন্ময়। পাশের ফলকটাতে আঁকা প্রতীকটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এখন। আগুনের মত জ্বলজ্বল করে জ্বলছে যেন ওটা। হাতের সিম্বলটা ওটার দিকে এগিয়ে নিল ও। চুম্বকের মত একটা আকর্ষণ অনুভব করল হাতে। ব্যাপারটা বুঝার জন্য বার কয়েক দুটো প্রতীক মুখোমুখি ধরে পরীক্ষা করলো। হ্যা, পরস্পর কে আকর্ষণ করছে ওরা। সিম্বলটা এবার একদম ফলকের কাছাকাছি নিয়ে গেল ও। ঠক! করে একটা শব্দ হল। সিম্বলটা প্রবল আকর্ষণে আটকে গেল ফলকটার সাথে। এক মুহূর্ত শ্বাস রোধ করে রাখলো তন্ময়। গর গর… একটা গুঞ্জন কানে এলো ওর। ক্রমেই গুঞ্জন বাড়তে লাগলো। আর সেই গুঞ্জনের সাথে ধীরে ধীরে ফাক হতে শুরু করলো দরজার কপাট। উন্মুখ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল তন্ময়। রহস্য ঘেরা দরজাটা খোলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ভেসে উঠছে দরজার পেছনে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় এক জগৎ। এক সময় অপেক্ষার অবসান ঘটলো। খোলে গেল পুরো দরজা। ধীরে ধীরে দরজার সামনে এসে দাড়ালো ও। অবাক দৃষ্টিতে তাকাল তন্ময়। মস্ত একটা খোলা মাঠ। চারপাশ ঘিরে আছে ঘন সবুজ পাহাড়। পাহাড় ছুয়ে স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা উপচে পরছে নিচের নদীতে। পানির শব্দ যেন অদ্ভুত একটা গুঞ্জন তুলছে এসে কানে। অজানা এক প্রাকৃতিক সঙ্গীত যেন বেজে চলেছে টানা। সিম্বলটা খোলে পকেটে পুরে নিল তন্ময়। ধীর পায়ে এসে প্রবেশ করলো স্বর্গ তুল্য সে উদ্যানে। পেছনে আগের মতই একটা গুঞ্জন তুলে বন্ধ হয়ে গেল দরজা।

সামনের দিকে ফিরে তাকালো তন্ময়। নিরব, শুনশান প্রান্তর। কোথাও কোন জনপ্রাণীর সাড়া নেই। একটু পরপর একটা দমকা হাওয়ার এসে কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলার মত শো শো করে চলে যাচ্ছে। সমানে বিরাটাকার এই মাঠের একপাশ গিয়ে শেষ হয়ে ঝর্নার পাড়ে। বাকি দুইপাশে গা গেসে থাকা পাহাড়ে দেয়ালে ঘেড়া।
পেছনেও ফেরার আর কোন পথ নেই। নিজের ইচ্ছেতেই যে এই প্রকৃতির দুর্গে এসে রীতিমত বন্দি হয়েছে সেটা বুঝে বেশি সময় লাগলো না ওর।
সুতরাং সামনের দিকে এগোনোটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করলো ও। মাঠের ওপাশে পাহাড়ের কোল ঘেসে একটা ঝর্না ঝরে চলেছে একটানা। ভেবেচিন্তে ওটার দিকে হাটা শুরু করল সে।
নরম কোমল ঘাসে ছাওয়া মাঠ। মৃদু মৃদু বাতাসের তোড় কানে একটানা বেজে চলেছে শো… শো … করে।

একটু পর পর দু একটা গাছ বাদে আর তেমন কিছুই চোখে পড়েনা মাঠে। যেন গাছগুলো কেউ পরিকল্পিতভাবে লাগিয়েছে পথ নির্দেশ করার জন্য। সবগুলো গাছই আবার কিরকম যেন কিম্ভূত কিমাকার। দেখলে মনে হয় ধনুকের মতো বাঁকা কররে বেঁধে রেখে কেউ। এইভাবে প্রায় বিশ জোড়া গাছকে অতিক্রম করে শেষ তন্ময় এসে পৌঁছল সে ঝর্নার পাড়ে। বিশাল পাহাড়ের চুড়া দেখে ঝম ঝম করে ঝরে পড়ছে ঝর্নার পানি। গায়ে এসে লাগলো ঠান্ডা বাতাসের আঁচ। এমন সময় একটা অদ্ভুত জিনিস দেখে চমকে উঠলো তন্ময়।
ঝর্ণার পানি যেখানে পড়ছে তার সামনে বেশ খানিকটা জুড়ে একটা জলাশয়ের মতো তৈরি হয়ে খুব সম্ভবত কোন নদীতে গিয়ে পড়েছে বোধহয়।
সেই জলাশয়ের পাড়ে উবু হয়ে একটা অদ্ভুত প্রাণী চুকচুক করে পানি খাচ্ছে। তন্ময়ের সাড়া পেয়ে ফিরে তাকালো ওর দিকে। শরীরের তুলনায় বেশ বড়সড় মুখটা, পুরো মাথাভর্তি চকচকা টাকে চুল বলতে কেবল মৌমাছির হুলের মত দুটো, বাতাসে হালকা দুলছে ওগুলো।

তবে কয়েক মুহূর্তের জন্যই কেবল ওটাকে দেখতে পেল তন্ময়। ভালো করে দেখার জন্য যেই ও একটু সামনের দিকে পা বাড়িয়েছে অমনি লিকলিকে হাত পায়ে এতো বড় সড় মাথা আর বুড়িদার দেহটাকে নিয়ে ছুটতে শুরু করলো প্রাণীটা। তারপর পাহাড়ের গা ঘেঁসে জন্মানো লতাপাতায় প্রায় ঢেকে থাকা একটা বেশ বড়সড় সুরঙ্গের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেল ওটা।
সুড়ঙ্গটা এতোখন চোখেই পড়েনি তন্ময়ের।
লতাপাতার আড়ালে ওটা এমনভাবে লুকিয়ে আছে যে সহসা দেখলে পাহাড় বলেই ভ্রম হয়। যাহোক, এই বিরান প্রান্তরে বন্দি দশায় সুড়ঙ্গটা অনেকটা আশার আলো হয়ে দেখা দিল ওর কাছে। সুরঙ্গের মুখ যেহেতু আছে, সুতরাং কোথাও না কোথাও এটার শেষও আছে। কে জানে, এটাই হয়তো এই প্রান্তর থেকে বেরোনোর পথ।
এতদূর পথ হেটে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল ও। তাই সুরঙ্গের দিকে যাওয়ার আগে জলাশয়ের দিকে এগিয়ে গেল হাতমুখ ধোঁয়ার জন্য।

অসম্ভব স্বচ্ছ আর ঠান্ডা পানি। রোদের আলো পড়ে মুক্তোর মত ঝিলমিল করছে। দুহাতের ক্রোস ভরে পানি তুলে মুখিয়ে ছিটিয়ে দিতেই অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে গেল ওর মধ্যে। সব ক্লান্তি যেন হারিয়ে গেল এক লহমায়। ফুরফুরে হয়ে উঠলো শরীর।
কিন্তু দ্বিতীয় বার যেই উবু হয়ে পানি তুলতে গিয়ছে তন্ময় অমনি একটা ভয়ানক ব্যাপার ঘটে গেল। পকেটে রাখা সেই অদ্ভুত সিম্বলটা হঠাৎ করে গড়িয়ে পানিতে পড়ে গেল। আর তারপরেই যেন ভোজভাজির মতো কোথায় মিলিয়ে গেল ওটা। একেতো কাচের মতো স্বচ্ছ পানি তারউপর জলাশয়ের এদিকটাতে তেমন একটা স্রোতও নেই। নিচে মসৃণ পাথরের আস্তরণ। তারপরও জলাশয়ের অনেকটা পর্যন্ত আতিপাতি করে খোঁজেও ওটার আর কোন হদিস পাওয়া গেলনা।
অগত্যা নিরাশ হয়ে পাড়ে উঠে এল তন্ময়। পাড়ে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো পুরো জায়গাটাতে নজর বুলিয়ে দেখল জলাশয়টার দিকে। যতদুর চোখ যায় কোথাও কোন কিছুই চোখে পড়লোনা। শেষে নিরাশ হয়ে সুড়ঙ্গের দিকে হাটতে শুরু করলো।



সুরঙ্গের ভেতরটা বেশ অন্ধকার। প্রথমে বেশ খানিকটা সময় কোনকিছুই চোখে পড়লোনা ওর। তারপর অন্ধকারটা খানিকটা চোখে সয়ে আসতেই একটু একটু করে খানিকটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো ভেতরাটা। এবরো থেবরো দেয়াল দুপাশে, তবে বেশ প্রশস্থ আর উঁচু করে কাঁটা। সুতরাং কখনও একটু আধটু দেখে আবার কখনও হাতের স্পর্শ দিয়ে সামনেটা অনুমান করেই চলতে থাকলো ও। সুড়ঙ্গের ভেতরে চলার পথটা মোটেই সুগম নয়। মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো অসংখ্য ধারালো পাথরের কুচি। খুব সাবধানে পা ফেলে হাটতে হচ্ছে ওকে। তারপরও মাঝে মাঝেই অসাবধানতা বশত পা পড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্য পা ছিলে গেছে কয়েক জায়গায়। বদ্ধ সুড়ঙ্গের বাতাসটাও হয়ে গুমোট। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করতে লাগলো ওর। ইচ্ছে করছে এখানেই কোথাও পা ছড়িয়ে বসে পড়ে। কিন্তু থামলে হবেনা, যতদ্রুত বাইরে বেরোনো যায় ততই মঙ্গল।
সুরঙ্গটা সোজা নয়। একটু পর পর সাপের মতো ডানে বামে বাঁক নিয়েছে। যতই সামনে এগোচ্ছে ততই যেন অন্ধকার ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সুরঙ্গের বেরোনোর পথ পাওয়ার আশাও ফিকে হয়ে আসছে। তাই এক একটা বাঁক অতিক্রম করার সময় গুনে রাখছে তন্ময়। ইতোমধ্যে পাঁচটি বাঁক পেছনে ফেলে এসেছে। ও মনস্থির করলো সামনে আর তিনটা বাঁক দেখবে। বেরোনোর পথ না পেলে আবার ফিরে যাবে। অন্যকোন পথ খুঁজে দেখবে।

কিন্তু বিপত্তিটা ঘটলো ষষ্ঠ বাঁকটা পেরোবার পর। সুরঙ্গের ভেতরটা এতোখন একেবারেই নিরব ছিল। নিজের চলার শব্দ বাদে আর কোন শব্দই আসেনি কানে। কিন্তু ষষ্ঠ বাঁক পেরিয়ে কয়েক কদম হাটতে না হাটতেই প্রথম কানে ভেসে আসলো শব্দটা। একটানা থপ! থপ!

পায়ের শব্দ। বেশ ভারী কোন একটা প্রাণী পায়ে চলার আওয়াজ। অন্ধকারে ঠাওর করা চেষ্টা করলো শব্দের উৎসটা। সামনে পেছনে দুদিকের অন্ধাকার । শব্দটাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কিন্তু আওয়াজটা কি সামনের দিক থেকে আসছে নাকি পেছনের ঠিক ঠাওর করতে পারছেনা। একবার মনে হচ্ছে সামনে, পরক্ষনেই আবার মনে হচ্ছে পেছনে। বাতাসে ভালো করে কান পাতলো ও। কিন্তু ভালো করে কিছু বুঝতে পারার আগেই হঠাৎ করে থেমে গেল শব্দটা। আবার শুনশান হয়ে এলো চারপাশ। আর সেই নিরবতাই যেন এবার ভয়ালো সে পায়ের শব্দের চেয়ে আরো ভয়াবহ উঠলো এবার। এতখন তাও একটা বুঝার উপায় ছিল, কিন্তু এখন!
ঘন অন্ধকারে কোথায় কি ভয়াবহ বিপদ উৎ পেতে আছে বোঝার কোন উপায় নেই।
বেশ কিছুখন একজায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো ও। বার কয়েক পাথরের টুকরো নিয়ে ছুড়ে মারলো এদিক ওদিক। কিন্তু অন্ধকারে পাথর ছিটকে পড়ার শব্দ আর সুড়ঙ্গের বার কয়েক বাজতে থাকা সেটার প্রতিধ্বনি বাদে আর কোন প্রতিউত্তরই ভেসে এলোনা কোথাও থেকে।

খানিকটা আশস্থ হয়ে আবার চলতে শুরু করলো ও। সোজা এগিয়ে গিয়ে একটা বড় সাইজের পাথর টপকে সপ্তম বাঁকটা পেরোতেই যা দেখলো সহসা নিজেরই বিশ্বাস হলোনা ওর। মুহুরতেই আনন্দে ঝলমল করে উঠলো ওর মুখ। সুড়ঙ্গের ঢুকার পথের মতো বেরোনোর পথটাও একই রকম লতাপাতায় ঢাকা। সেগুলোর ফাক গলিয়ে ঠিকরে আসছে আলো। আনন্দের অতিশহ্যে চলার গতি বাড়িয়ে দিল। আর সেটা করতে গিয়েই বিপদটা ঘটলো। সুড়ঙ্গ মুখটা তখন মাত্র আর কয়েক কদম বাকি, এমন সময় একটা পাথরে পা আঁটকে মাটিতে আছড়ে পড়লো ও। টাল সামলাতে না পেরে মাথাটা গিয়ে সজোরে আঘাত করলো একটা ধারালো পাথরে ওপরে। ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো সে। আর তারপরেই যেন হঠাৎ চারপাশটা কেমন ঘোলাটে হয়ে যেতে থাকলো। সুরঙ্গের ভেতর থেকে আবার ভেসে আসতে লাগলো সেই শব্দটা। সেই একি রকম, একটানা থপ থপ। শব্দটা ক্রমশ বাড়তে লাগলো। এক পলকের জন্য ও দেখতে পেল দ্রুত পায়ে কিছু একটা এগিয়ে আসছে ওর দিকে। পরক্ষনেই হঠাৎ করে সবকিছু অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। জ্ঞান হারালো তন্ময়।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০

শামচুল হক বলেছেন: অনেক বড় পোষ্ট পরে পড়বো।

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: আগের পর্ব গুলো কি আমি পড়েছি?

লিংক দেন না কেন?

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৪

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া বলেছেন: Click This Link করলেই পাবেন।

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪১

দিলের্‌ আড্ডা বলেছেন: প্রতিটা পর্বই চমৎকার।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৫

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য :)

৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

পলাতক মুর্গ বলেছেন: +++++++++++

দুবার কপি হয়েছে লেখাটা, পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৪

মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দুবার কপির সমস্যাটা ধরিয়ে দেয়ার জন্যও ধন্যবাদ :) আপডেট করে দিয়েছি এখন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.