নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাগঐতিহাসিক ধারাভাষ্যকার শ্রদ্ধেয় \"চৌঃ জাফর উল্লাহ শরাফতের\" সাথে আমার নামের মিল ছাড়া, কাছে বা দুরের কোণ সম্পর্ক নেই।

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত

সাধারণ মানুষ

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের দিবস

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:০৬

আমাদের জাতীয় দিবসগুলো পালনের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? পালন করা যাবে কি যাবে না? কেউ বলেছেন যাবে না আবার কেউ বলেছেন যাবে তবে কিছু কিছু কাজ মুসলমান হিশাবে আমাদের করা উচিত না। নিচের লিঙ্কগুলো বিভিন্ন আলেমের মতামত।

http://fiqhehanafi.com/fiqhe/848

Click This Link

Click This Link

যারা বলেন ইসলামে কোণ দিবস পালন করার নিয়ম নেই তারা সাধারণত দলিল হিশাবে নিচের হাদিসটি উল্লেখ করেন,
“সাহাবী আনাস বিন মালিক (রঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলে কারীম সা. যখন মদীনায় আসলেন তখন দেখলেন বছরের
দুটি দিনে মদীনাবাসীরা আনন্দ-ফুর্তি করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ দিন দুটো কি ? তারা বলল যে আমরা ইসলামপূর্ব মুর্খতার যুগে এ দুদিন আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ আল্লাহ তাআলা এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটো দিন তোমাদের দিয়েছেন। তা হল
ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।”(সাহীহ আবু দাউদঃ ১১৩৪)
এখানে বলা হয়েছে মদিনা বাসি ইসলাম পূর্ব যুগে এ দুই দিন আনন্দ ফুর্তি বা উৎসব করত। এটা কিসের উৎসব ছিল? সেই দুটি দিন ছিল “ নিরজ” ও “মেহেরজান”। এগুলো ছিল তাদের তথা কাফেরদের ধর্মীয় উৎসব। “আল্লাহ তাআলা এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটো দিন তোমাদের দিয়েছেন”, যেহেতু আল্লাহ মুসলমান দের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন তাই রাসুল (সাঃ) বললেন সেই দুই দিনের পরিবর্তে এই দুটি দিন। এই দুটি দিন আল্লাহ্‌র তরফ থেকে দেয়া। এখানে এই কাফের দের ধর্মীয় উৎসবের সাথে আমাদের দেশিয় উৎসব বা দিবস গুলোকে কি একই কাতারে বিচার করা যাবে? এখান থেকে কি কোণ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আল্লাহ্‌র তরফ থেকে দেয়া এই দুটি দিন ছাড়া আর কোণ দিন আমরা অর্থাৎ বান্দারা, অন্য কোণ দিবস (ধর্মীয় নয়) হিসাবে পালন করতে পারব না? বিশেষ করে একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, এই সব দিন গুলি কি ইসলাম পূর্ব যুগের ধর্মীয় উৎসব হিসাবে ধার্য করা? বা অন্য কোণ ধর্মীয় উৎসব থেকে নেয়া ? “ এই দুই দিন বাদে আর কোণ দিনে মুসলমানরা কোণ কিছু দিবস (ধর্মীয় নয়) হিসাবে পালন করতে পারবে না” এটা কি বলা আছে? বা কোরআনে এর ব্যাপারে কি কোণ সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে?(জাতি গত উৎসব বা দেশ গত উৎসব)। কোণ জায়গায় এই দুই দিন মুসলমানদের উৎসব পালন করতে বলা হয়েছে যেমন ঠিক আছে তেমনি এই দুই দিনের বাইরে পালন করা যাবে না তা ও ত বলা নেই।
এখন যদি পালন করার ব্যপারে ইসলামের কোণ বাধা নেই, তাহলে আশবে কিভাবে পালন করবো? প্রথমেই দেখি আমাদের আলেমরা কি বলেন,
view this link
মুল লিখা থেকে,
"বিজয় দিবস সম্পর্কে কুরআনের দুটি সুরা আমাদের সামনে পড়ে। একটি সুরাতুল ‘ফাতাহ’ (বিজয়) আরেকটি সুরার নাম ‘আন-নাসর’ (মুক্তি ও সাহায্য)। সুরা নাসর-এ মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করবে,’ তখন মুসলমানদের কী করণীয় ? পবিত্র কুরআনের সূরায়ে নাসর-এ বিজয় দিবসের তিনটি কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।
‘১. এই দিনে তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা কর। ২. আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর।
৩. মুক্তিযুদ্ধের সময়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, জিহাদ চলাকালীন সময় যদি ভুল-ত্র“টি হয়ে থাকে, তার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাও। বিজয় দিবসে এই তিনটিই আমাদের জাতীয় কর্মসূচী। ১৬ই ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ যখন আসবে, মুসলমানদের জন্য আল্লাহর শাহী দরবারে বিনয় এবং নম্রতার সাথে শুকরিয়া প্রকাশ করা দরকার যে, হে আল্লাহ! হে মহামহিম! তুমি আমাদেরকে স্বাধীন ভূখন্ড দান করেছ, সে কারণে তোমার শুকরিয়া আদায় করছি, তোমার প্রশংসা করছি। তোমার দ্বারে কৃত গুনাহের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। হে আল্লাহ! আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তুমি আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের হেফাজত কর। ইজ্জতের সাথে যেন এ বসুন্ধরায় টিকে থাকতে পারি, সে তাওফিক দান কর। এটাই হচ্ছে আমাদের আজকের দিনের শপথ এবং দোআ।
স্বাধীনতা দিবস সুন্নাহর দৃষ্টিতে
বিজয় দিবসের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহর নবীর আদর্শ কী ছিল ? যে মক্কা নগরী থেকে আল্লাহর নবী বিতাড়িত হলেন, ১০ বছর পর শত-সহস্র সাহাবায়ে কেরামের বিশাল বহর নিয়ে যখন পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি বিজয় মিছিল-শোভাযাত্রা কিছুই করেননি। গর্ব-অহংকার করেননি, বাদ্য-বাজনা বাজাননি। নবীজীর অবস্থা কি ছিল ? আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওযী রহ. (মৃত ৫৯৭) তার কালজয়ী-অনবদ্য গ্রন্থ “যাদুল মাআদে” উল্লেখ করেন, আল্লাহর নবী একটি উষ্ট্রীর উপর আরোহণাবস্থায় ছিলেন, তাঁর চেহারা ছিল নিম্নগামী। (অর্থাৎ, আল্লাহর দরবারে বিনয়ের সাথে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন) সর্বপ্রথম তিনি উম্মে হানীর ঘরে প্রবেশ করেন। সেখানে আট রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। এই নামাজকে বলা হয় বিজয়ের নামাজ। এরপর নবীজী সা. হারাম শরিফে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, হে মক্কার কাফের সম্প্রদায় ! তের বছর ধরে আমার উপর, আমার পরিবারের উপর, আমার সাহাবাদের উপর নির্যাতনের যে স্টিম রোলার চালিয়েছ, এর বিপরীতে আজকে তোমাদের কি মনে হয়, তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব? তারা বলল, হ্যা,ঁ আমরা কঠিন অপরাধী। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, আপনি আমাদের উদার ভাই, উদার সন্তান, আমাদের সাথে উদারতা, মহানুভবতা প্রদর্শন করবেন। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
আল্লাহর নবী সা. বললেন- হ্যা, আমি আজ তোমাদের সকলের জন্য হযরত ইউসুফ আ. এর মত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলাম। যাও তোমাদের থেকে কোন প্রতিশোধ নেওয়া হবেনা। [সুনানে বাইহাকী ৯/১১৮]
এখানেই ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, অনবদ্যতা, অনন্যতা। শান্তিপূর্ণভাবে মক্কা বিজয় করে মহানবী সা. পুরো বিশ্বকে এই ম্যাসেজ দিলেন যে, আমরা শান্তির পক্ষে, বোমাবাজি, খুনাখুনি, ত্রাস এবং লুন্ঠনের বিপক্ষে.”

এখন, ইসলামী আলেম বা বড় বড় যারা উলামা আছেন তাদের মতে, কোরআনের কোণ আয়াত দেখেই চট করে কোণ স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ঠিক হবে না। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে, কোণ সুরা বা কোণ আয়াতের পটভূমি, পরিপেক্ষিত,আরবের তৎকালীন সামাজিক অবস্থা এবং সেই পরিপেক্ষিতে রাসুল (সাঃ) এর হাদিস, সাথে এটা ও বিবেচনায় আনতে হবে তাফসিরকারকরা বা ইমামরা এর কি ব্যক্ষ্যা দিয়েছেন। তার পর আপনার কমন সেন্স ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত।
চলুন দেখা যাক, সুরা “আন-নাসর” এবং মহানবি(সাঃ) এর মক্কা বিজ্ইয়ের পটভূমির সাথে আমাদের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ কতটা সামণজস্বপূর্ণ??
১। রাসুলুল্লাহ(সাঃ) মক্কা বিজয় করেছিলেন কাফেরদের দখল থেকে, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করে, আর আমরা তার ১৪০০ বছর পর আমরা আমাদের বিজয় অর্জন করেছিলাম মুসলমানদের(পাকিস্থান) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আলেম,সাধারণ মানুষ, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী, নাস্তিক, সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে। আন্তর্জাতিক ভাবে আমাদের প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে ভারত (যাদের অধিকাংশ নাগরিক হিন্দু) পরখ্যভাবে সাহায্য করে রাশিয়া (যাদের অধিকাংশ নাগরিক নাস্তিক)। আর কোণ মুসলিম দেশ আমাদের যাহায্য করে নি বা আমাদের পক্ষে জাতিস্নঘে ভেটো দেয়নি, রাশিয়ার মতো।
২। মক্কা বিজয় ছিলো ধর্মীয় প্রচারণা তথা তৎকালীন আরবের মধ্যে শ্রেস্ত ধর্ম হিসাবে ইসলামের বিজয়, এককথায় বলা যায় ধর্মীয় যুদ্ধের বিজয়। আর আমাদের ১৯৭১ শুধু ধর্মীয় যুদ্ধ ছিল না, কারন তখন তো অনেক ধর্মের লকেরাই বাস করতো বাংলাদেশে।
৩। মক্কা বিজইয়ের পর অনেক গোত্র ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়, মহানবী (সাঃ) এর সাথের সাহাবিরাও (অবশ্যই) মুসলমান এবং গঠিত হয় একক ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা ইসলামী রাষ্ট্র। আর আমরা ১৯৭১ সালে পৃথিবীর বৃহত্তর ইসলামী রাষ্ট্র ভেঙ্গে আলাদাভাবে গঠন করি, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার” তথা “বাংলাদেশ”। যার গঠন তন্ত্র বা শ্নগবিধানে কোথাও নেই যে বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র এবং শুধুমাত্র মুসলিম বাঙ্গালিদের এখানে থাকার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের জন্মলগ্নে কেউ ভুলেও চিন্তা করে নাই রাষ্ট্র ধর্ম শুধুমাত্র ইসলাম হবে।
৪। রাসুসুল্লাহ (সাঃ) মুসলিম খিলাফতের গঠনের পর আরও অনেক রাজ্য বা জাতি ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম সেই রাজ্যের অধিনে আসে, আমাদের সেই রাস্তায় চলার উপায় নাই।
৫।সর্ব পরি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সকল যুদ্ধের পটভূমি, উদ্দেশ্য সবি ছিল ধর্মীয় এবং বিস্বের তাবত মুসলিম উম্মার উন্নতি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বহাল রাখা, আর আমরা দুখ্য জনক ভাবেই হোক সেই ঐক্য ভেঙ্গেই আলাদা রাষ্ট্র গঠন করেছি বা করতে বাধ্য হয়েছি।
সুতরাং প্রাথমিকভাবে ১৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ আর মক্কা বিজয়ের পটভূমি এক নয় কোণ ভাবেই, যদিও দুটোই বিজয়। এখন দেখা যাক সুরা নাসর এর আয়াতের ব্যখ্যায় তাফসিরে কি বলা আছে।
সুরা আল নাসার আয়াত,
গ্রন্থঃ তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদঃ শায়েখ আব্দুল হামিদ ফাইজী
সুরার নামঃ আন-নাসর/An-Nasr/سورة النصر
([1]) অবতীর্ণের দিক দিয়ে এটি হল কুরআনের শেষ সূরা। (সহীহ মুসলিম তফসীর অধ্যায়) যখন এই সূরাটি অবতীর্ণ হল, তখন কিছু সংখ্যক সাহাবী (রাঃ) বুঝতে পারলেন যে, এবার নবী (সাঃ)-এর অন্তিম (মৃত্যুর) সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ জন্যই তাঁকে তসবীহ, তাহমীদ (আল্লার প্রসংশা) এবং ইস্তিগফার করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। যেমন, ইবনে আববাস (রাঃ) এবং উমর (রাঃ) এর ঘটনা সহীহ বুখারীতে বিদ্যমান রয়েছে। (তাফসীর সূরা নাস্র)
১। যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।
২। এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। [1]
[1] আল্লাহর সাহায্য অর্থ হল, ইসলাম এবং মুসলিমদের কুফর ও কাফেরদের উপর বিজয় দান। আর বিজয় অর্থ হল, মক্কা বিজয়। মক্কা মহানবী (সাঃ)-এর জন্মভূমি এবং বাসস্থান ছিল। কিন্তু সেখান হতে তাঁকে এবং তাঁর সাহাবাগণ (রাঃ)-কে কাফেররা হিজরত করতে বাধ্য করেছিল। সুতরাং যখন ৮ হিজরীতে এই মক্কা নগরী বিজয় হল তখন লোকরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে লাগল। অথচ এর পূর্বে এক-দুজন করে মুসলমান হত। মক্কা বিজয়ের পর মানুষের নিকট এ বিষয়টি পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠল যে, তিনি আল্লাহর সত্য পয়গম্বর এবং ইসলামই হল সত্য ধর্ম; যা অবলম্বন ব্যতীত পরকালে পরিত্রাণ সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা বললেন, যখন এমন হবে তখন তুমি----।
৩। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবা গ্রহণকারী। [1]
[1] অর্থাৎ, বুঝে নাও যে, রিসালতের তবলীগ ও হক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যা তোমার উপর ছিল তা পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার দুনিয়া থেকে তোমার বিদায় নেওয়ার পালা এসে গেছে। এ জন্য তুমি আল্লাহর তসবীহ, প্রশংসা এবং ক্ষমা প্রার্থনায় অধিকাধিক মনোযোগী হও। এ থেকে আমরা জানতে পারি যে, জীবনের শেষ দিনগুলিতে উক্ত কর্মাবলী করতে অধিক যত্নবান হওয়া উচিত।
তাফসীর থেকে কি বিজয় দিবসের করনীয় বোঝা যাচ্ছে? আমি তো বুঝতে পারছি না ।তাহলে চলুন হাদিস কি বলে দেখি,
অধ্যায়: তাফসীর | অনুচ্ছেদ: “তখন আপনি আপনার রবের প্রশংসার সহিত পবিত্রতা-মহিমা বর্ণনা করতে থাকুন এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা... (নাসর ১১০/৩)
সহীহুল বুখারী :: হাদিস : ৪৯৭০
মূসা ইবন ইসমাইল (র).... ইবন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাযিঃ) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রবীণ সাহাবীদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করতেন। এ কারণে কারো কারো মনে প্রশ্ন দেখা দিল। একজন বললেন, আপনি তাঁকে আমাদের সাথে কেন শামিল করছেন। আমাদের তো তাঁর মত সন্তানই রয়েছে। উমর (রাযিঃ) বললেন, এর কারণ তো আপনারাও জানেন। সুতরাং একদিন তিনি তাঁকে ডাকলেন এবং তাঁদের সাথে বসলেন। ইবন আব্বাস (র) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম, আজকে তিনি আমাকে ডেকেছেন এজন্য যে, তিনি আমার প্রজ্ঞা তাঁদেরকে দেখবেন। তিনি তাদেরকে বললেন : আল্লাহর বানী : { إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ } সূরা নাসর এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আপনারা কি বলেন, তখন তাঁদের কেউ বললেন, আমরা সাহায্য প্রাপ্ত হলে এবং আমরা বিজয় লাভ করলে। এ আয়াতে আমাদেরকে আল্লাহর প্রশংসা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার কেউ কিছু না বলে চুপ করে থাকলেন। এরপর তিনি আমাকে বললেন, হে ইবন আব্বাস! তুমিও কি তাই বল? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে তুমি কি বলতে চাও? উত্তরে আমি বললাম, “এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ জানিয়েছেন। আল্লাহতা’আলা বলেছেন, আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসলে’ এটিই হবে তোমার মৃত্যুর আলামত। فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا } তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি তো তওবা কবুলকারী”। এ কথা শুনে উমর (রাযিঃ) বললেন, তুমি যা বলছ, এ আয়াতের ব্যাখ্যা আমিও তা-ই জানি।
তাহক্বীক:: সহিহ , মাওকূফ।
তাখরীজ :: [ বুখারীঃ তা.পা ৪৯৭০, ৩৬২৭] ( আ.প্র.৪৬০১, ই.ফা.৪৬০৬)

তাফসিরে বুঝা যাচ্ছে “জীবনের শেষ দিনগুলিতে উক্ত কর্মাবলী করতে অধিক যত্নবান হওয়া উচিত।“, হাদিস থেকে এ “আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ জানিয়েছেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করতে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে”, যা তাফসিরে সমর্থন করে।
কিন্তু এখান থেকে আমাদের দেশীয় আলেমরা কিভাবে বুঝতে পারলেন যে
“পবিত্র কুরআনের সূরায়ে নাসর-এ বিজয় দিবসের তিনটি কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।“ সুতরাং এই তিনটি ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না??
‘১. এই দিনে তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা কর। ২. আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর।
৩. মুক্তিযুদ্ধের সময়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, জিহাদ চলাকালীন সময় যদি ভুল-ত্র“টি হয়ে থাকে, তার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাও। বিজয় দিবসে এই তিনটিই আমাদের জাতীয় কর্মসূচী।
সুরা নাসার কি বিজয় দিবসের কর্মকাণ্ডের ব্যপারে নাযিল হয়েছে? তাহলে আমাদের এই দিবসগুলো কিভাবে পালন করা যায় সেই ব্যাপারে কুরান ও হাদিসের কোণ সরাসরি দিক নিরদেশনা নেই। থাকার কথাও না । তাহলে আমরা কিভাবে ইসলামের নামে বলতে পারি এটা করা যাবে বা তা করা যাবে না? আর বলা হচ্ছে এই তিনটি ই আমাদের জাতীয় কর্মসূচি?

অনেকে বলেছেন মুসলিম হিশাবে আমরা আল্লাহ রাসুলের নাম নিব, শহিদদের প্রতি দোয়া করবো, এতিম খাওয়াব, চাই কি নফল নামাজও পড়তে পারি। অবশ্যই এটা আমরা মুসলিম হিসাবে করতে পারি এবং করব । এখন মুসলিম হিশাবে আমরা যদি শহিদদের প্রতি দোয়া করি তাহলে যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা যারা নাস্তিক ছিলেন (ওনেক জাসদ বা কম্যুনিস্ট নেতা শহিদ হয়েছিলেন) তাদের জন্য কি দোয়া করব? আমরা তাদের জন্য দোয়া করলে সেটা কি তাদের উপকারে আসবে? নাকি তাদের জন্য দোয়া করবো না। তাহলে তাদের যে আত্বত্যাগ তা কি আমরা স্বীকার করলাম? বা স্বরন করলাম? বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ(মুসলিম রাষ্ট্র নয়)। মোট জনসংখ্যার ৯০% মুসলমান। মাত্র ১০% অন্য ধর্মের। এখন আমরা যদি মুসলমান হিসাবে আলাদা ভাবে এইসব অনুষ্ঠান পালন করতে যাই, ধর্মীয় ভাবে, তাতে নিশ্চয় অন্য ধর্মের নাগরিকেরা অংশ নিবে না, আমরা তাদের বাধ্য করতেও পারব না। সুতরাং তারাও তাদের ধর্ম মতে বা প্রচলিত নিয়মে দিবস গুলো পালন করবে। তাহলে? বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার,
ইসলাম ৯০.৩৯%
হিন্দু ৮.৫৪%
বৌদ্ধ ০.৬০%
খ্রিষ্টান ০.৩৭%
অন্যান্য ০.১৪%
বলতে পারেন মাত্র ১০% নিয়ে চিন্তা করার কি আছে। কিন্তু মোট জনসংখ্যার ১৫২,৫১৮,০১৫ (২০১১) এর ১০% মানে, ১ কোটি ৫২ লক্ষ ৫১ হাজার ৮০১ জন। প্রায় দের কোটি মানুষের মতামত বা অধিকার কে অস্বীকার করার উপায় নেই।তারাও আলাদা আলাদা ধর্মীয়ভাবে দিবসগুলো পালন করলে্ এটা কি বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ প্রেমের বিষয়ে আমাদের ভবিষ্যত ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাংঘর্শিক হবে না কি? এই ভাবে ধর্মীয় মতামত অনুযায়ী ভাগাভাগি করে জাতীয় দিবস পালন করার কথা ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তারা কি চেয়েছিলেন? বা চিন্তা করেছিলেন?
আচ্ছা বাদ দিন, অনেকে বলেছেন আমদের মুসলমানদের জন্য পালনের নিয়ম আলাদা হওয়া উচিত। এখন এই নিয়মটা তৈরি করবে কে? বা কোথা থেকে আসবে? এখন নিশ্চয় বলবেন কোরআন ও হাদিস থেকে। যা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি, তাছাড়া কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের মুসলমান দের তো আলাদা থাকারই কথা না। সব মুসলমান একসাথে ইসলামী রাষ্ট্রে থাকবে। একজন খলিফা থাকবে মুসলিম উম্মার। কিন্তু তা তো এখন বস্তবিকি সম্ভব নয়। অবশ্য আই এস চেষ্টা করেছিল, সৌভাগ্য বশত তারা পারেনি। আর তা ছাড়া বাগদাদির মত খলিফা ইসলামি উম্মার হাল ধরলে কি হাল হতো তা আর না বললেও চলবে, এখন বাকি থাকলো, বিস্ব মুসলিম উম্মাহ কি চিন্তা করে বা কি মনে করে এইসব উথসব পালনের ক্ষেত্রে । আমরা শিয়া, সুন্নি, সুফিবাদ বা ৪মাযহাব এগুলতে না গিয়ে মুসলিম দেশ গুলকে একে একে দেখি, তারা তাদের জাতীয় দিবস গুলতে কি করে?

সৌদি আরবের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ভিডিও,
Saudi Arabia National Day 2014 (Arrth)


সৌদি ন্যাশনাল ডেঃ। দেখুন তাদের ট্র্যাডিশনাল ড্যান্স, যার সাথে ইসলামের কোণ সম্পর্ক নেই।


সৌদি কিং নিজে নাচে অংশ গ্রহণ করেছেন, নিচের ভিডিও টি দেখুন,


বর্তমানে সৌদি আরব মহিলাদেরও অংশ গ্রহনের অনুমতি দিয়েছে। সম্প্রতি।
SEPTEMBER 23, 2017 / 6:46 AM / 4 MONTHS AGO
National celebrations open Saudi sports stadium to women for first time

অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশ বা মুসলিম দেশ,
The Arab Republic of Egypt Celebrating Their National Day on 23rd July 2015


Qatar National Day Song 2015 شيلة شيخنا خيال العليا


the national day of turkey (firework celebration ) 2/3
অনেকে আমাদের রহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্ক কে তো বিস্বের একমাত্র মুসলিম দেশের খেতাব দিয়েছেন।নিচের ভিডিও টি দেখুন, আতশ বাজি যা হিন্দুদের দীপাবলিতে ব্যবহার হয়,


National Day celebrations at Bahrain City Centre


পাকিস্থানে মোমবাতি?????!!!!!!! তাও আবার বেগানা আওরাতের হাতে?????


আরও অনেক দেশ আছে।
[https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_national_independence_days]
উইকিপিদিয়ার তালিকা দেখে গুনে নিন কয়টা মুসলিম দেশ আছে। কিছু কিছু দেশের কোণ স্বাধীনতা দিবস নেই এই কারনে যে তারা কক্ষনো কারও অধিনে ছিল না। যেমন, ব্রিটেন।
এমন কোণ মুস্লিম,হিন্দু, খ্রিস্টান বা নাস্তিক বা অন্য কোণ মতের দেশ পৃথিবীর বুকে নেই, যাদের কোণ স্বাধীনতা দিবস বা কোণ জাতীয় দিবস নেই বা তারা তা পালন করে না।
তাহলে আমাদের দেশের আলেম রা কি বলবেন, তারা সারা বিশ্বের মধ্যে কোণ ইসলামী দেশ এই হাদিস আমল করছে না কেন? বিস্বের মুসলিম দেশ গুলো যা করছে আমরা তা না করার পক্ষে কিভাবে থাকব? যেখানে সৌদি আরবের মত কট্টর সরিয়া পন্থি দেশের মানুষরা , বড় বড় স্ক্রিনে তাদের নেতাদের ছবি টাঙ্গিয়ে, সঙ্গীতের তালে তালে, হেলে দুলে, তলওয়ার হাতে নিইয়ে তাদের দেশিও নাচ তাদের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে গাইতে পারে তাহলে আমরা কেন “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো গান”, খালি পায়ে, ফুলের মালা হাতে, শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে গাইতে পারব না? ওরা যদি আতসবাজি জালিয়ে, রাস্তায় আনন্দ উথসব করতে পারে, তাহলে আমরা করলে কেন তা বেদাত হবে?
যদি বলেন তারা ইসলামী নিয়ম কানুনের বাইরে চলে গেছে, তাহলে এমন একটা দেশ দেখান যারা ইসলামের এই হাদিস মেনে কোণ দিবস পালন করছে না বা করলেও শুধু মাত্র নফল নামাজ বা দোয়া করাতে সীমিত রেখেছে?
তারা সবাই তাদের ট্র্যাডিশন তথা দেশীয় স্কংস্ক্রিতিকে ইসলাম বিরধি মনে না করে তাহলে আমরা কেন বাঙালি সংস্কৃতি কে অপসংস্কৃতি বা অশ্লীল বলব?
হিন্দু রা দীপাবলিতে আতসবাজি ফুটায়। এটা তাদের ধর্মীয় উথসব। সেই আতশ বাজি ফুটিয়ে আরবিয়রা তাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে কেন? এখন তো একটা জবাবি দিবেন, “আরে হিন্দুরা তো পুজার উদ্দেশ্যে বা দেবতাকে খুশি করার নিয়তে বাজি ফুটায়, আরবিয়রা কি আর সেই নিয়তে ফুটায়? আরনিয়রা তো আর পুজা করার উদ্দেশ্য নিইয়ে ছবির সামনে নাচ্ছে না বা বাজি ফুটাচ্ছে না। নিয়ত দেখতে হবে।“
জি ভাইয়েরা, এই কথা টাই চিন্তা করেন না কেন যখন শহীদ মিনারে কেউ ফুল দেয়? পুজার নিয়তে কি দেয়?????

[বিঃ দ্রঃ কেউ এখন এই কু যুক্তি দেখাবেন না যে এই সব উথসবে নারী পুরুষের অবাধ মেলা মেশার কারনে অশ্লীলতা প্রকট আকারে সমাজে ছড়িয়ে পরবে। কারন এ দেশে বা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই শুধু মাত্র এই ধরনের অনুষ্ঠানেই নারী পুরুষ একত্রে অংশ নেয় না, তারা স্কুলে একসাথে পড়ে, কচিং এ একসাথে পড়ে, কলেজে একসাথে পড়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে পড়ে, এমন কি একসাথে চাকরী পর্যন্ত করে।তারা অনেক ক্ষেত্রেই একসাথে মিশছে ]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.