নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাগঐতিহাসিক ধারাভাষ্যকার শ্রদ্ধেয় \"চৌঃ জাফর উল্লাহ শরাফতের\" সাথে আমার নামের মিল ছাড়া, কাছে বা দুরের কোণ সম্পর্ক নেই।

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত

সাধারণ মানুষ

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলাম, পর্দা এবং বুরখা

২৮ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৪:৪৭

মুশাররফ করিম কি বলেছেন? এটাই ধর্ষনের জন্য পোশাক দায়ী নয়। বুরখা পড়া অনেকেও ধর্ষনের স্বীকার হ্য় । বুরখা ছারাও অনেকে ধর্ষিত হয়?

কিছু দিন আগে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের একটি লিখায় বলেছিলেন, “ভাষা আন্দলনের সময়কার ছবি গুলিতে একটি মেয়েও বুরখা পড়া নেই, কিন্তু এখন বুরখা পড়া মেয়ে বেশি দেখা যায়, তাহলে তখন মেয়েরা কি ইসলাম কম মানত?” এবং তিনি বুরখার নেকাবের কারনে তার একজন ছাত্রিকে কোণ এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখেও চিনতে পারেননি বলে আফসস করেছিলেন।

ব্যস হয়ে গেলেন তারা ইসলাম বিদ্বেষী ক্ষেত্র বিশেসে নাস্তিক, মুরতাদ।

কেন জানি বুরখার বিরুদ্ধে কিছু শুনলেই তথা কথিত আলেমদের আস্ফলন বেড়ে যায়। তখন ধর্ষনটা আর মুখ্য বিষয় থাকে না। বিষয় পালটে হয়ে যায় ধর্মিয় অনুভুতিতে আঘাত।

(শানে নাযুলঃ এখানে “তথা কথিত আলেম” বলিতে আমি সেই সমস্ত আলেমদের কথা বলিতেছি যাহারা রাস্তা ঘাটে নামিয়া অ-ইসলামিক পন্থায় ভাংচুর করিতে ভালবাসেন। এবং অবশ্যই অতি অবশ্যই আমি সব আলেম দিগকে ঢালাও ভাবে বুঝাইতেছি না।)
তারা চোখের নিমিশে বুরখা বিরোধী যে কোণ বক্তব্যকে ইসলামের খিলাফ সুক্ষ ষড়যন্ত্রের শুরু বানিয়ে ফেলে। ইহুদি নাসারা বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব চায় মুসলিম নারীরা যেন তাদের নারীদের মত ভোগ বিলাসের বস্তুতে পরিণত হয়(সেটা চেয়ে তাদের কি লাভ তা অবশ্য আমার বুঝে আসে না), সেই উদ্দেশ্যে এই সমস্ত (মুশাররফ করিম, জাফর ইকবাল) দালালদের তৈরি করে যাতে মুসলিম নারীরা বেপর্দা হয়ে ওঠে।

“বুরখার বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে ইসলামের বিরুদ্ধে বলা, ইসলামের পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে বলা”।
আসলেই কি তাই্‌?
বুরখা কি ইসলামী পোশাক?
এখন গরম পড়তে শুরু করেছে, গত বছর গরমের সময় আমি রাস্তায় অনেক মহিলাকে দেখেছি, আপাদ মস্তক কালো বুরকা, সাথে নেকাব, হাত ও পায়ে মুজা পরিহিতা। এই ভ্যপ্সা গরমে এই পোশাক পড়ে রাস্তায় বেরুনো টা কি পরিমাণ কষ্ট সাধ্য ব্যপার তা চিন্তা করা যায় না। আমার খুব ইচ্ছা, কোণ তেল তেলে মেঠো মুল্লাহকে দাড়ি সমেত, দাস্তানা, মুজা লাগিয়ে বুরখার মধ্যে ঢুকিয়ে তপ্ত দুপুরে ঢাকার রাস্তায় ছেড়ে দেই। এখন অবশ্য অনলাইন মিডিয়ার বদৌলতে অনেক ভিডিও দেখা যায় যেগুলোতে দেখানো হয় বুরখা পড়া নারীরা কত শুখে শান্তিতে আছে। তারা নিজেদের ইচ্ছায় বুরখা পড়ে হাটা হাটি করছে, খাওয়া দাওয়া করছে, যেখানে খুশি সেখানে যাচ্ছে। এটা আমার কাছে মনে হয় অনেকটা চিরিয়া খানার বাঘের খাচার সামনে গিয়ে বলা, “দেখো বাঘটা কত আনন্দের সাথে হাড্ডি চিবাচ্ছে। সে যদি আনন্দে না থাকত তাহলে কি হাড্ডি চিবাত?!!”

কিন্তু কেন আমাদের নারীদের এই কষ্ট সহ্য করা?
ধর্ষনের কথা যদি বাদও দেই, ইসলাম কি মুসলিম নারীদেরকে আসলেই বলে এভাবে আপাদ মস্তক ঢেকে বাসা থেকে বেরুতে।

“হ্যা বলেছে ।আলবত বলেছে”।

ইসলাম যে নারীদের বস্তাবন্দী করে রাখতে বলেছে- এই তথ্যটা কে দিয়েছে ?

“কেন? মসজিদের ইমাম সাব দিয়েছেন, শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন ইউসুপ দিয়েছেন, আমার বাসার হুজুর দিয়েছেন, আমার পীর দিয়েছেন.................. ইত্যাদি ইত্যাদি।

মানে এই তথ্যটা কি আমারা যাচাই করে দেখেছি? ইসলাম আসলেই কি বলেছে?

আসুন একটু যাচাই বাছাই করি।

আপানদের(মুল্লাহদের) মতের সাথে মিল রেখেই করি। আপনারা নারীদের লাগাম পরানর জন্য যে আয়াত টাকেই প্রথমে বেছে নেন সেটা দিয়েই শুরু করি,

সুরা নুর
সূরা নম্বর: 24
নাজিলের দিক থেকে সূরাটি: মাদানী
পারা: 18
নাযিল হওয়ার ক্রম অনুযায়ী: 102

“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত (কিছু অনুবাদে “নত” বলা হয়েছে) রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের (কিছু অনুবাদে “লজ্জাস্থান” আছে) হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য (কিছু অনুবাদে “আভরণ” দেয়া আছে) প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য (আভরণ) প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [মুহিউদ্দীন খান]

সাধারণ ভাবে শুধু পোশাকের ব্যপা্র খেয়াল করলে দেখা যায়, “মাথার ওড়না” ছাড়া আর কোণ পোশাকের উল্লেখ নেই এবং এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ নারীদের প্রতি কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

কিন্তু সাধারনভাবে দেখলে বা বুঝলে তো হবে না।

যে কোণ আয়াত পড়েই সে অনুযায়ী আমল করলে তো হবে না।

সেই আয়াতের নাযিলের কারন, পরিপ্রেক্ষিত, প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। তারপর তাফসীর কারকরা কি ব্যখ্যা দিয়েছেন তা পড়তে হবে, সাথে হাদিসের সাপোর্ট লাগবে, তবেই না বোঝা যাবে। তাই না?

তাহলে চলুন আপনাদের কথানুযায়ী ইবনে কাথির বিখ্যাত তাফসীর কারক এই আয়াতের কি ব্যখ্যা দেন দেখি। যদিও তাফসীর গুলো সঙ্কলনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যপার আমার কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হয় না।

তাফসিরে ইবনে কাথির, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৯৪,
“আল্লাহ তালা উল্লিখিত আয়াত সমূহে মুমিন স্ত্রীলোক গনকে তাহাদের আত্ব মর্যাদা বোধ সম্পন্ন স্বামীদেরকে মানসিক প্রসান্তি দাণের জন্য এবং জাহেলি যুগের কু প্রথা হইতে তাহাদেরকে পৃথক করিবার লক্ষে, অবৈধ ও হারাম দৃষ্টি হইতে চক্ষু অবনত করিবার হুকুম দিয়াছেন"।

কিন্তু কি এমন কারন যার জন্য আত্ব-মর্যাদা বোধ সম্পন্ন স্বামীরা মানসিক অশান্তি তে ছিলেন? আর জাহেলি যুগের কোণ কু প্রথার কথা বলা হয়েছে?

"মুকাতিল ইবন হাইওয়ানের বর্ননানুসারে আয়াতের শানে নযুল হইল তিনি বলেন জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলিয়াছেন, আসমা বিনতে মারসাদ নামক মহিলা বানু হারিসা গোত্রের এক বাড়িতে বাস করিতেন।স্ত্রী লোকেরা তাদের প্রথানুসারে পায়ের গহনা, বক্ষ ও চুল খুলিয়া তাহার নিকট উপস্থিত হইত।একদিন তিনি বলিলেন ইহা কি বদ অভ্যাস, তখন এই আয়াত নাযিল হইল,

“মুমিন স্ত্রীলোক গনকে বলিয়া দিন, যেন অপর পর পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত হইতে বিরত থাকে”।

এখন একটু খেয়াল করুন, “তখনকার প্রথা অনুযায়ী তাদের পায়ের অলঙ্কারাদি এবং “বক্ষ” ও “চুল” খুলে রাখা অবস্থায় আসতো”==== “বক্ষ” খোলা অবস্থায় আসাটা পায়ের অলঙ্কারাদি পড়া ও “চুল” খোলা রাখার থেকেও হাজারগুন ভয়াবহ। তাই বুঝা যায় পায়ের অলঙ্কারাদি পড়া ও “চুল” খোলা রাখা শুধু মাত্র এই দুই কারনের জন্য এই আয়াত নাজিল হয় নাই, সাথে “বক্ষ” খোলা রাখার মত ভয়াবহ ব্যপারও ছিল।এই ভয়াবহ ব্যপার আমাদের সমাজে কিন্তু দেখা যায় না, যেখানে হুজুররা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন আমাদের নারীদের চলাফেরা নিয়ে। যা সম্ভব এই বক্ষ খোলা রেখে অন্য মহিলার ঘরে ঘোরা ফেরা করার কারনেই স্বামিরা শান্তি অনুভব করতে পারত না। সদ্য অন্ধকার যুগ থেকে বেরিয়ে আসা স্বামিদের জন্য এটা অসান্তি লাগারই কথা। না জানি তার স্ত্রী বক্ষ খোলা রেখে কোণ পুরুষের কু নজরে পড়ে?!!

এর পর,
“অনেক উলামা কেরামের মত হইল, স্ত্রী লোকের পক্ষেও অপর পুরুষের প্রতি দৃষ্টি পাত করা জায়েজ না, চাই কাম উত্তেজনা হোক বা না হোক”।

এটা আমাদের দেশের অধিকান্ত মেঠো মুল্লাহদের প্রানের কথা। “তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত (কিছু জায়গায় “নত” বলা হয়েছে) রাখে” আয়াতের এই অংশ দ্বারা তারা নিমিষেই দাবী করে বসে আল্লাহ মহিলাদের রাস্তা দিয়ে চলার সময় তাদের দৃষ্টি পর্যন্ত নিচের দিকে রেখে চলতে বলেছেন। বেমালুম ভুলেই যায় পুর্বের আয়াতেই একই কথা মুমিন পুরুষদের প্রতি ও আল্লাহ বলেছেন। দৃষ্টিকে নত বা সংযত করার মানে কি এই যে একদম মাটির দিকে চোখ দিয়ে চলতে হবে? নারী কোণ পুরুষের দিকে তাকাতে পারবে না
এর দলিল তারা পেশ করেন নিন্মক্ত হাদিস দ্বারা, আমি নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি আপনারা মিলিয়ে নিন।

সুনান আবু দাউদ (তাহহিদ)
অধ্যায়ঃ ২৭/ পোশাক পরিচ্ছদ
হাদিস নম্বরঃ ৪১১২
উক্ত হাদিসে মহানবী (সাঃ) উনার স্ত্রী উম্মু সালমা ও মাইমুনাহ (রাঃ) কে ইবনু উম্মু মাক্তুম (রাঃ) নামক একজন অন্ধ সাহাবির সামনে পর্দা করতে বলেন।“.......................... সে অন্ধ কিন্তু তোমরা উভয়ে তাকে দেখছ না?”
হাদিসটি তিরমিজি তেও আছে।

ব্যস এত টুকু বলেই মেঠো মোল্লারা হুঙ্কার ছাড়ে, “যেখানে আমার নবি এক অন্ধ সাহাবির সামনেও পর্দা করতে বলেন সেখানে আর কি প্রমান দরকার???” ক ও ও ও কো প্পা পা আ আ আ আ আ আ আ আ আ আ......... ফয়জুর .........কোপ্পা.....য়া আআআআ ।

কিন্তু মেঠো আপনাকে পরের একটি লাইন কখনও বলবে না । তা হচ্ছে, “হাদিসটি বর্ননা করে ইমাম তিরমিজি(রাঃ) বলেন ইহা “হাসান সহি”।

আর সুনান আবু দাউদে হাদিসটিকে “দুর্বল” বলা হয়েছে। তিরমিজি, নাসায়ি, আহমদ। সনদের নাহবান সম্পর্কে ইবনু হাযম বলেনঃ মাজহুল। ইরওয়া হা/১৮০৬।
এটি দ্বা‘ঈফ হাদিস।

“সানাউল্লাহ নজির আহমদ” তার “হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষা পরিচিতি” নামক বইতে দ্বা’ইফ সম্পর্কে বলেন,

সহি ও হাসানের বাইরে হাদিসের সকল প্রকার দ্বা‘ঈফ। দ্বা‘ঈফ বা দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব দ্বা‘ঈফ প্রচার করা, শিক্ষা দেওয়া ও তার উপর আমল করা দুরস্ত নয়। তবে প্রয়োজন হলে দুর্বলতা প্রকাশ করে দ্বা‘ঈফ বলা বৈধ, কারণ দুর্বলতা প্রকাশ করা ব্যতীত দ্বা‘ঈফ বলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যারোপ করার শামিল। মুসলিম সহি গ্রন্থে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ حَدَّثَ عَنِّى، بِحَدِيثٍ يُرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِينَ»
“যে আমার থেকে কোন হাদিস বর্ণনা করল, অথচ দেখা যাচ্ছে তা মিথ্যা, তাহলে সেও মিথ্যাবাদীদের একজন”। অপর হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন:
«وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»
“আর আমার উপর যে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়”।

দ্বা‘ঈফ বর্ণনার পদ্ধতি: ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়’, অথবা ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়’। দৃঢ়ভাবে বলা যাবে না ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন’।

শায়খ উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আমার নিকট দুর্বলতা প্রকাশ করা ব্যতীত দুর্বল হাদিস বলা বৈধ নয়, বিশেষ করে জনগণের সামনে। কারণ তাদের সামনে যখন হাদিস বলা হয়, তারা সেটাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে। তারা মনে করেন খতিব যা বলেন তাই ঠিক। বিশেষ করে আগ্রহ সৃষ্টি ও সতর্ককারী হাদিসগুলো। কুরআন ও সহি সুন্নায় যা রয়েছে, দুর্বল হাদিস অপেক্ষা তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট”।

এইটা কি ফাইজলামি পাইসো?বাইছা বাইছা হাদিস নিবা?ইবনে কাথির থেকে সুবিধা মত লাইন নিবা?হাদিস নিবা, সনদ বলবা না? যেখানে খোদ কাথির সনদসহ বিস্তারিত বলেছেন? এখানে একটা ব্যপার উল্লেখ না করে পারছি না, মোবাইলের জন্য কিছু ইবনে কাথিরের এপ্স আছে সেগুলতে এই হাদিসটির সনদ দেয়া নাই। আরও অনেক আলেম উলামাদের বইতেও হাদিসটি দেয়া আছে, সনদ ছাড়া।আর মেঠোরা তো সনদের তোয়াক্কাই করে না।

এর পর দেখুন উপরের মত টি “অনেক উলামা কেরামের মত”, মানে সব উলামারা এই মতের সাথে এক মত না। ইবনে কাথির থেকে,
“আরেক দল উলামা বলেন কাম উত্তেজনা না থাকিলে অপর পুরুষের প্রতি দৃষ্টি পাত জায়েজ আছে”।
দলিল?

সহি বুখারি(তাওহিদ) অধ্যায়ঃ ৮/সালাত, হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪, সহিহ
সহি বুখারি(তাওহিদ) অধ্যায়ঃ ৮/সালাত, হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫, সহিহ
সহি বুখারি(তাওহিদ) অধ্যায়ঃ ১৩/দুই ঈদ, হাদিস নম্বরঃ ৯৫০, সহিহ
সহি বুখারি(তাওহিদ) অধ্যায়ঃ ১৩/দুই ঈদ, হাদিস নম্বরঃ ৯৮৮, সহিহ

আয়শা (রাঃ) বর্নিত সব গুলো হাদিসে আছে রাসুল (সাঃ) উনাকে সঙ্গে নিয়ে হাবশিদের খেলা দেখছিলেন। অবশ্য তিনি পর্দায় ছিলেন, কিন্তু দেখছিলেন।
৯৮৮ নম্বর হাদিসে উল্লেখ আছে উমার (রাঃ) হাবসিদের ধমক দিয়েছিলেন(হয়ত খেলা বন্ধ করতে) , কিন্তু রাসুল (সাঃ) উনাকে ধমক দিতে নিষেধ করে যা করছিল তা করতে বললেন।

তাহলে দেখুন, কোণ দিকের পাল্লা ভারি। “নারীরা পর পুরুষের দিকে তাকাতেও পারবে না” এই আইন ইসলামের নামে জায়েজ করার মানে নারীদের ঘর থেকে বেরুতে না দেয়া। কারন বেরুলেই তো পর পুরুষ নজরে আসবে। এর পক্ষে দ্বা ইফ হাদিস টাই মেঠো মুল্লাহরা গ্রহন করবে কিন্তু তার বিপরীতে আয়শা (রাঃ) থেকে বরনিত বুখারি শরিফের সহি হাদিস গুলা উল্লেখি করবে না।

এত টুকু পর্যন্ত এটাই বুঝা যায় মহিলারা পর পুরুষ কে দেখতে পারবে, কিন্তু কাম ভাবে না। এবং পর্দা করে সামনেও আসতে পারবে।

এর পর আয়াত,
“তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে”
“যা সাধারণতঃ প্রকাশমান” বলতে কি বুঝা যায়?

হযরত ইবন মাসউদ(রাঃ) বলেন, “যা প্রকাশ না করিয়া উপায় নাই, তা হইল, “যে চাদর দ্বারা আরবের স্ত্রী গন শরীর কে আবৃত করে এবং পরিহিত কাপড়ের নিন্মাংশ”।

হাসান ইবন শিরীন,আবুল যাওয়া,ইব্রাহিম নাখঈ (রাঃ), এবং আরও অনেকে এই মত দিয়েছেন।

“যে চাদর দ্বারা আরবের স্ত্রী গন শরীর কে আবৃত করে” এই চাদর ওড়না কেই ইঙ্গিত করে।
“পরিহিত কাপড়ের নিন্মাংশ” আরবের স্ত্রী গন লম্বা আল খাল্লার মত পোশাক পড়ত তার নিচের অংশকে বোঝানো হয়েছে। অনেকটা আমাদের দেশের বুরখার মত(নেকাব ছাড়া),কিন্তু বুরখা না।

সে অনুযায়ী আমাদের দেশের স্ত্রী গন দেশীয় পোশাক আশাক ওড়না সহ ঢেকে পড়তে পারে।কারন আরবিয়রা আরবিয় পোষাককেই ইসলামের বিধান অনুসারে পরিবর্তন করে নিয়েছিল। আমরাও আমাদের পোশাক আশাকে তা করতে পারি। তা না বলে শুধু মাত্র বুরখার কথা বলার মানে কি? সেলওার কামিজ বা শাড়ি পড়েও তো ওড়না দিয়ে মাথা বা বুকের অংশ ঢাকা যায়। মালইশিয়ায় মুসলিম নারীরা ফতুয়ার সাথে ওড়না পরছে না?

হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ),ইবন উমর (রাঃ) আতা, ইক রিমা, সাইদ বলেন, “যা প্রকাশ না করিয়া উপায় নাই, তা হইল মুখমণ্ডল ও হস্ত দ্বয়ের কব্জি”।

এতটুক পর্যন্ত যা পাওয়া গেল তাতে আমাদের ভগিনিকুল মুখমণ্ডল সহ হাতের কব্জি পর্যন্ত খুলিবার অনুমতি পাইল। বিশদ বর্ননার লাইন গুলো আপনারাই পড়ে নিন, গয়নার ব্যপারটা ও সাথে একটি হাদিস আছে।

আমি একটু সংক্ষেপে, যে সব ব্যাপারে পোশাকের বিষয় এসে যায় সেগুলো নিয়ে আগাই,

ইবনে কাথির থেকে থেকে,

“এইভাবে জাহিলি যুগে প্রচলিত স্ত্রী লোকদের প্রথার বিরধিতা করা হয়।তাহারা তাদের বক্ষ আবৃত করিত না এবং পুরুষের স্মমুখে তাহারা খুলিয়া রাখত।অনেক সময় তাহারা স্বীয় গ্ররদান ও চুলও খুলিয়া রাখিত এবং কানের লতি সমূহও। অতপর আল্লাহ তালা মুমিন স্ত্রী লোক গনকে তাহাদের রূপ সৌন্দর্য ঢাকিয়া রাখিবার হুকুম করিয়াছেন”।

ইবনে কাথিরের ব্যখ্যাটা একটু মনে রাখুন,“তাহারা তাদের বক্ষ আবৃত করিত না এবং পুরুষের স্মমুখে তাহারা খুলিয়া রাখত”, এ ব্যাপারে পরে আসছি,

এর পর ইবনে কাথির বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য পুর্ন সুরা আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতটি উল্লেখ করেন,
সুরা আহজাব
সূরা নম্বর: 33
আয়াত সংখ্যা: 73
নাজিলের দিক থেকে সূরাটি: মাদানী
পারা: 21, 22
নাযিল হওয়ার ক্রম অনুযায়ী: 90
অর্থাৎ সুরা আহযাব, সুরা নুরের আগে নাযিল হয়েছে। আয়াত,
হে প্রিয় নবী! তোমার স্ত্রীগণকে ও কন্যাদের ও মুমিন-লোকের স্ত্রীলোকদের বলো যে তারা যেন তাদের বহির্বাস থেকে তাদের উপরে টেনে রাখে। এটিই বেশী ভাল হয় যেন তাদের চেনা যায়, তাহলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ্ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা। [জহুরুল হক]

“আলোচ্য আয়াতে ইরশাদ হইয়াছে,
“তারা যেন তাদের মাথার ওড়না দ্বারা তাহাদের গ্রিবা ও বক্ষ স্থল আবৃত করে” / ওড়না “বক্ষ দেশে ফেলে রাখে”

সাইদ ইবন যুবাইর (রাঃ) বলেন, “স্ত্রী লোকদের পক্ষে তাহাদের ওড়না দ্বারা তাহেদের বক্ষ বাধিয়া লওয়া উচিৎ, যেন বক্ষের কোণ স্থান দেখা না যায়”।

ইমাম বুখারি (রাঃ) বলেন আহমেদ ইবন শাবির......... হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্নিত, “যখনই এই আয়াত অবতির্ন হইল তখন তাহারা স্বীয় চাদর ফারিয়া উরনা করিয়া লইল।.................. অতপর তাহারা প্রত্যেকেই উরনা মাথায় দিয়া ফজরের সালাতে সারিবদ্ধ হইয়া গেল, যেন প্রত্যেকের মাথায় একটি ডোল রাখিয়াছে”। একাধিক সুত্র হইতে ও হাদিসটি বর্ননা করা হয়েছে।

এই আয়াতের আরেক ব্যখ্যা আমি শুনি ডাঃ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের এক অয়াজে। তিনি বলেন মাথার ওড়না বক্ষে ফেলার কথা বলা হয়েছে, তাহলে মাথার ঘোমটা সামনা সামনি বক্ষে ফেললে মুখ তো ঢাকা পড়বেই। সুতরাং মুখ ঢাকা ও এর মধ্যে পড়ে যাবে।কিন্তু লক্ষ করুন হযরত আয়শা (রাঃ) কি বলেছেন, “যেন প্রত্যেকের মাথায় একটি ডোল রাখিয়াছে”—ঘোমটার মত করে মাথায় কাপড় দিলেই সেরকম মনে হয় না কি? অবশ্য স্যার সুন্দর যুক্তি দিয়ে এটাও বললেন কোণ মহিলা যদি মেকাপ ছাড়া মুখ খোলা রাখে তাহলে সে ইসলামী বিধান মানে নি এটা বলা যাবে না, কারন তিনি মুল বিধান পর্দা ঠিক রেখেছেন শুধু দুই ধরনের মাসলা থেকে একটি গ্রহণ করেছেন। মেঠো রা কিন্তু এত চমথকার ব্যক্ষার ধারে কাছেও যাবেও না কাউকে জানাবেও না। তাদের মাসলা একটাই। বুরখা।

সুরা আহজাবের পটভূমি পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় উক্ত আয়াত গুলো রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রিদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে। সেই যুক্তি তে তা সাধারণ মুমিন নারীদের ক্ষেত্রে খাটবে না।অনেক আলেম এই মত পোষণ করেন। তবে ভিন্ন মতের ও আছেন। তবে পক্ষে বা বিপক্ষে যাই থাকুক, অন্তত আমাদের আলচ্য বিষয় বুরখা র উল্লেখ কোথাও নেই তা নিশ্চিত।

কাথির থেকে,
আয়াত, সুরা নূর,
“এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”

পরবর্তি আলোচনা বিষদ, কিন্তু পড়লে বুঝতে পারবেন উপরে উল্লিখিত সৌন্দর্য প্রকাশ না করে এর মানে এই নয় যে কার ও সামনে যেতে পারবে না। মাথায় ওড়না, বক্ষ ও উরনা দ্বারা ঢাকা ছাড়া উপরে উল্লিখিত ব্যক্তিদের সামনে যেতে পারবে কিন্তু বাইরে গেলে অবশ্যই মাথা এবং বক্ষ, হাতের কব্জি পর্যন্ত ঢাকা থাকতে হবে।

আমি আবার একটু সংক্ষেপে আগাই,

আয়াত
“তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে”

মেঠোর দল খুব মজা পায় এই আয়াত বর্ননা করার ক্ষেত্রে,
তারা বেশি জোর দেয় জোরে পদচারনা করার দিকে, নারীরা জোরে জোরে পা ফেলে চলতে পারবে না। দলিল এই আয়াত সাথে ডজন ডজন সনদ ছাড়া উদ্ভট হাদিস।

ইবনে কাথিরে আছে,
“জাহেলি যুগের স্ত্রী লোকেরা যখন পথ চলতো তখন তাহাদের পায়ের নুপুর বাজিয়া না উঠিলে তাহারা সজোরে পা দ্বারা আঘাত করিত । লোকেরা উহার শব্দ শুনিয়া আনন্দ উপভোগ করিত ।অতঃপর আল্লাহ তা আলতাইহা হইতে তাহাদিগকে নিষেধ করিয়াছেন। অনুরূপ স্ত্রীলোকের অন্য কোণ গোপন গহনা বাজাইয়াও উহা প্রকাশ করা যাইবে না”।

আমাদের দেশে অনেক মেয়েই একপায়ে ছোট মল পড়ে, কিন্তু সেগুলোর আওয়াজ এতই সুক্ষ হয় যে তা সাভাবিক রাস্তার পরিবেশে শোনা যায় না। আমি অবশ্য কোণ মেয়েকে কক্ষনও দেখিনি পা সজোরে নেড়ে নেড়ে সেই মল থেকে শব্দ বের করার চেষ্টা করতে। আর যদি করতও যারা এই ব্যখ্যা টি শোনেনি বা এই সম্পর্কে জানে না(বিশেষ করে আমাদের দেশের পুরুষরা) তাদের মনে এই শব্দ শুনে কামত্তেজনা সৃষ্টি হত কিনা তা নিয়ে বিস্তর গবেষনা করা যাইতে পারে।

সেদিকে না গিয়ে আসুন পুরো ব্যপারটা একটু পর্যালচনা করে দেখি। পুর্বে বলা নারীদের বক্ষ উন্মুক্ত রাখার ব্যখ্যা টা স্বরনে রেখেছিলেন? এবার বের করুন আর চিন্তা করুন, তখনকার নারীদের বক্ষ উন্মুক্ত রাখার এই অশ্লীল প্রথা বন্ধ করার জন্য আল্লাহ বিধান দিলেন মাথায় ওড়না আর বক্ষে ওড়না। আর আমাদের দেশে এই ধরনের প্রথা কোণ কালে ছিল না (যদি বাংলাদেশের জন্ম থেকে হিসাব করি), আমাদের নারীরা বক্ষ উন্মুক্ত করে পুরুষদের সামনে আসতো না, তাদরে জন্য আপনারা বিধান দিতে চাচ্চছেন আগা গোঁড়া কাপড়ের আবরণ, শুধু চোখ ছাড়া? এটা কি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?

এখন যদি বলেন বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে যে ভাবে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে তাতে নারীদের একটু টাইটে না রাখলে তারা নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে বলতে ই হয় টাইট টা নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই করা কি যুক্তি যুক্ত নয়? সুরা আল নুরে নারীদের আগে পুরুষদের জন্য ও তো আয়াত আছে, কই ধর্শন রোধে সেটা তো কেউ আগে বলেন না!!! ইবনে কাথিরে ৩০ নং আয়াতের ব্যখ্যায় শেষের দিকে চোখের যিনার প্রতিকার স্বরূপ উল্লেখ আছে “উলামায়ে সালফের অনেকেই দাড়িহীন ছেলেদের প্রতি দৃষ্টি দানকেও নিশিদ্ধ করিয়াছেন ।আইম্মায়ে সুফিয়াগনের অনেকেই এ বিষয়ে বহু কঠরতা অবলম্বন করিয়াছেন”। ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৯৩।

আপনারাও করুন। আমাদের সমাজে জমিদারদের মধ্যে ঘেটু পুত্রের সাথে বজরায় আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার রেও্যাজ কিন্তু ছিল এক কালে। একালেও কিছু বিকৃত রুচির মানুষ কম বেশি দেখা যায়। নারীদের ব্যাপারে মশা মারতে কামান দাগাবেন আর পুরুষের বেলায় প্রথা বিলুপ্তির অযুহাত দেখাবেন তা কেন হবে???? পড়ান যত দাড়িহীন মাকুন্দ বালক আছে তাদেরকে বুরখা??!!!

ইসলামের দাসী প্রথা এবং সে সম্পর্কিত কিছু ভয়ানক হাদিসগুলোর (যদিও কিছু হাদিসের গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে আমার আপত্তি আছে) জবাবে আপনারাই তো বলেন, “দাসী প্রথা ইসলামের আগে থেকেই আরব সমাজে বিদ্যমান ছিল। এর শেকড় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে অনেক গভীরে থাকার কারনে তা পুরো পুরি উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় নি।কিন্তু ইসলাম এই প্রথা যাতে বন্ধ হয়ে যায় সেই রাস্তা ঠিক করে দিয়েছিল বিভিন্ন নিয়ম কানুনের মাধ্যমে। কালের প্রভাবে দাসী প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাই এখন আর সেই নিয়ম কানুনের আর প্রয়োজনীয়তা নেই”। কুরআনে দাসী রাখার ব্যপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে তার পরও আপনারা মানতে পারছেন না। কেন? কারন তখনকার সমাজ ব্যবস্থায় সেটা স্বাভাবিক হলেও এখন কার সমাজে তা অস্বাভাবিক। তাই এখন যদি আপনি ইসলামী বিধি নিষেধ মুতাবিকও দাস দাসী রাখতে চান তাহলে জুতার বাড়ি একটাও মাটিতে পড়বে বলে মনে হয় না। সুতরাং আপনাকে সামাজিক অবস্থা অবশ্যই বিচার বিবেচনায় আনতে হবে।এক দম হুবহু আপনি পালন করতে পারবেন না। তেমনি ভাবেই ইসলাম নারী স্বাধীনতা পুরা পুরি ,আমি আবার বলছি “পুরা পুরি” দিতে না পারলেও তার পথ করে দিয়েছিল কিছু নিয়ম কানুনের মাধ্যমে। কিন্তু আমরা নিয়ম কানুন গুলো শুধু নারীদের ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দিয়ে সে রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছি ক্রমশ। ইসলাম বলেনি নারীরা শুধু চোখ খুলা রেখে, হাতে দাস্তানা, পায়ে মুজা পড়ে, ভ্যপ্সা গরমে রাস্তায় বের হবে।

আপনাকে অবশ্যই মুল আকিদা ঠিক রেখে সমাজ সভ্যতা মাথায় রেখে আইন প্রয়োগ করতে হবে। তাই নারীদের বস্তা বন্দি করার আগে সেই আমলের সদ্য আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে আলো তে আসা পুরুষগুলো আর বিংশ শতকে জন্ম নেয়া পুরুষগুলোর মন মানসিকতা বুঝতে হবে। তারা জন্মের পর থেকেই নগ্ন নারী দেখতে ও যত্র তত্র ভোগ করতে অভ্যস্থ ছিল। ইসলামের বিধি নিষেধ গুলো তাদের আগের আচরণ থেকে দূরে রেখছিল ঠিকই, কিন্তু সামান্য উস্কানিতে তাদের পা যে পিছলাবে না তার গ্যারান্টি ছিল না।মানুষের সহজাত প্রবিত্তি বা অভ্যাস পরিবর্তন হঠাৎ করে করাটা সহজ নয় (আমি স্বাধারন মুসলমানদের কথা বলছি, বিখ্যাত সাহাবারা অবশ্যই ব্যতিক্রম ছিলেন)। তাই তাদেরকে নারীদের হাত, পা বা চলার শব্দ বা ছোট খাট ইশারা সহজেই উত্তেজিত করতে পারে যা এখন কার যুগের পুরুষকে করবে না। পর্ন দেখা আর নিজে করার মধ্যে পার্থক্য আছে। পর্ন দেখাটা এখন কার যুগের বদ অভ্যাস, আর অশ্লীলতা আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে ছিল সাধারণ অভ্যাস। তাই ছোট খাট ইশারা তাদের পুরানো স্বাভাবিক অবস্থার কথা স্বরন করিয়ে ধর্সনের দিকে ধাবিত করতে পারে সহজেই। হাজার বছরের পুরুষ শাসিত সমাজে চট করে শাসককে শাসিতের কাতারে নামিয়ে আনলেও মন থেকে শাসকও তা মেনে নিতে পারবে না, শাসিতও ভয়ে ভয়ে মেনে নিলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ হত না । তাই সেই যুগে অশ্লীলতা দূর করতে নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল তার চেয়ে কঠিন আইন ধর্সন রোধে শুধু মাত্র নারীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করাটা যুক্তিসঙ্গত কিনা সে ব্যপারে বিস্তর গবেষণা করা যেতে পারে।

সেদিকে আপাতত আর বিশদে না গিয়ে আমরা আজকে বরং বুরখা নিয়েই থাকি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বুরখা তাইলে কোথা থেকে আমদানি হইল? তখনকার নারীরা কেও তো বোরখার কথা বলেন নি। তাহলে এখন যে রাস্তা ঘাটে বুরখা তো বুরখা সাথে নিঞ্জা স্টাইলে শুধু চোখ দেখা যাওয়া নারীরা কোণ ইসলাম পালন করে? সাথে হাতের দাস্তানা। এই আয়াত নাজিলের পর মহিলারা মাথায় কাপড় দেন, সাথে বক্ষে ও কাপড় জরিয়ে নেন। কিন্তু কোথায় বলা আছে নিনজা রুপধারন করতে হবে?
আর যেটা ইসলাম করতে বলেনি (মানে এই নিনজা রূপ ধারন) তা আমাদের নারীদের করতে বাধ্য করাটা কি ইসলাম সম্মত হবে?

সবশেষে “ফয়জুর” এবং তাদের বড় হুজুরদের আর যারা মুশাররফ করিমের কথা নিয়ে লাফাচ্ছেন তাদেরকে কিছু খোরাক দেই,

১। মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা ছাত্রী এবং শিক্ষিকাদের ক্লাসরুম ও ক্যম্পাসে নিকাব (niqab - the full-face veil) পড়া নিসিদ্ধ ঘোষণা করে।

http://www.islamicity.org/3670/sheik-of-al-azhar-bans-face-veil/

আল জাজিরাতেও এই খবর এসেছে,

Click This Link

বলাই বাহুল্য সেখানেও কিছু মেঠো মুল্লাহ আছেন যারা বিরধিতা করছে। কিন্তু আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সুন্নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শেইখ কি নির্ভর যোগ্য দলিল ছাড়া এধরনের বক্তব্য দিবেন?

২। এসোসিয়েট প্রফেসর ডঃ ইলহাম মিনহা যিনি, একজন ইয়েমিনি মহিলা, বলেন, “বুরখা ইসলামী কোণ পোশাক নয়, এটা একটা আরবিয় ট্র্যাডিশন যা সৌদি আরব থেকে এসেছে”।
http://www.abc.net.au/news/2017-08-28/burkas-are-political-symbols-not-islamic-says-muslim-scholar/8843916
আরও ভয়ংকর খবর শুনুন,

৩। মিশরীয় আইনবিদ আম্না নসেইর, যিনি ৪০ বছর ধরে বুরখা/ নিকাবের বিরুদ্ধে আন্দলন করছেন, তিনি তার গবেষণায় প্রমান করে দেন নিকাব তথা পুরা মুখ ঢেকে রাখার প্রথার আদি উথস ইহুদি ধর্মিয় আইন।
https://www.alaraby.co.uk/english/blog/2017/4/9/egypt-lawmaker-calls-for-total-ban-of-jewish-burqa

৪। Dr. Menachem M. Brayer (Professor of Biblical Literature at Yeshiva University) তার The Jewish Woman in Rabbinic Literature: A Psychosocial Perspective (Hoboken, N.J: Ktav Publishing House, 1986) বইতে উল্লেখ করেন, “Rabbinic সাহিত্যে বর্নিত আছে ইহুদি মহিলারা ঘরের বাইরে বেরুলে মাথা ঢাকা থকত কাপড় দ্বারা, কখনও কখনও তাদের পুরা চেহারা ঢাকা থাকত কেবল মাত্র একটি চোখ ছাড়া” পেইজ- ২৩৯।

তাহলে দেখুন পোশাকের ব্যাপারে মুসলিম বিস্বে শুধু মুশাররফ করিমই যে প্রথম বলেছে তা কিন্তু নয়।

সুতরাং মেঠো মুল্লাহর দল,
দ্রুত তৈরি হও। মিশর আর সৌদি দূতাবাস ঘেরাও কর্মসুচি পালন কর। তবে ভুলেও দুতাবাস ভাংচুর করতে যাইও না। তাহলে তোমাদের তৈলাক্ত দেহের পশ্চাৎ দেশের একটা নির্দিসট অংশের চামড়া, চাবকে স্রেফ উপড়ে ফেলা হবে।

[বিঃদ্রঃ যে কেউ আমার যুক্তিগুলো খণ্ডন করতে পারেন, যুক্তি সঙ্গত হলে আমি মেনে নেব, কিন্তু অবশ্যই তা কুরআন, সহিহ হাদিস এবং ইবনে কাথিরের তাফসীর অনুসারে হতে হবে।]

[বিঃবিঃদ্রঃ আমি অবশ্যই চাই না নারী বা পুরুষ কেউই সুন্দরী প্রতিযগিতায় অংশ নিক বা টি ভির বিজ্ঞাপনের মডেল হোক বা রাস্তা ঘাটে বিরি সিগারেট খাক......... যা সবই আমার মতে মেধার অপচয়। তাই এই সমস্ত কু যুক্তি কেউ দিবেন না]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৩

উড়োজাহাজ বলেছেন: অনেক কষ্ট করেছেন। সবটুকু পড়তে পারলাম না।

আসলে মানুষের যুক্তিবুদ্ধি হারিয়ে গেলে শত কথায়, শত যুক্তিতেও কাজ হয় না।
মেঠোদের ঘিলুতে পচন ধরেছে। সেটা সংক্রমিত হয়েছে তাদেরকে একমাত্র ধর্মের ঠিকাদার মনে করা সাধারণ পাবলিকের মাঝে। কথা বলতে গেলেই বলবে, আপনি কি হুজুরের চাইতে বেশি বোঝেন? আপনি কোন মাদ্রাসায় পড়েছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.