![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধারণ মানুষ
মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করে সরকারের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আনা রিট ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
কুড়িগ্রামের, একটি ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, “নুরুল ইসলাম মিয়া” ও ঢাকার কদমতলা মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ রিট দায়ের করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী “তৈমুর আলম খন্দকার” । রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল “মাহবুবে আলম”।
কথা উঠেছে জাতীয় সংগীত কাওমি মাদ্রাসায় গাওয়াকে বাধ্য করা নিয়ে। একে তো ইসলামে গান গাওয়াই হারাম (মেঠো মুল্লাহদের মতে) তার ওপর আবার বাধ্য করা?
আমাদের দেশের এখন শতকরা ৮০% মুসলমান মনে করে গান গাওয়া বা শোনা হারাম এবং তারা তা করে গুনহা করছেন। এই গুনহা করার কারনে তারা হীনমন্বতায় ভুগেন। এই হীনমন্বতা তাদেরকে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে, পয়লা বৈশাখে, জঙ্গিদের বোমা হামলার প্রতীবাদ দৃঢ়তার সাথে করতে বাধা দেয়।
মিন মিন করে প্রাথমিক প্রতীবাদ, “কাজ টা ঠিক হয় নাই” জাতীয় কথা বার্তাগুলো বের হলেও, মেঠো মুল্লাহদের চোখ রাঙ্গানিতে পরক্ষনেই তা হয়ে যায়, “অবশ্য ইসলামে গান গাওয়াও তো হারাম”......।। তাদের এই ক্ষীণ আওয়াজের কারনেই মুল্লাহরা এখন জাতীয় সঙ্গীতের উপর চোখ রাঙ্গাতে পারছে । হাদিস কুরআন থেকে রেফারেন্স দেয়ার পাশা পাশি তারা জামাত শিবিরের প্রাচীন পদ্ধতির ব্যবহারও সম্প্রতি শুরু করেছে। যেসব কথা ১৯৯৮- ২০০৪ এর দিকে শিবিরের মটিভেশন মূলক অনুষ্ঠানে শোনা যেত, যা পরে জঙ্গিদের মুখে শোনা যায়, সেসব বানী এখন হেফাজত তথা কাওমি মাদ্রাসার ছেলেদের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে । যেমন,
“আমরা মুসলমান হয়ে কিভাবে হিন্দু কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান কে জাতীয় সংগীত হিসাবে মেনে নেব”?
অথবা,
“আমাদের মুসলমানদের মাঝে কি কবি নেই? কাজী নজরুল ইসলামের রচিত গান কি নেই”?
ইত্যাদি ইত্যাদি............।।
নাক টিপলে শাল দুধ বেরুবে, হাঁটুর বয়সী সব চেংড়া চেংড়া হুজুরের দল অবলীলায় নজরুলকে বানিয়ে দিচ্ছে কট্টর মুসলিম পন্থি আর রবিন্দ্রনাথ কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী ইংরেজদের দালাল।
আগে তারা বলত, গান ইসলামে পুরাপুরি নিশিদ্ধ। আমার কথা না ।তাদের মুখের কথা,
http://qawmionline.blogspot.com/2015/05/blog-post_29.html
সেই তারাই এখন বলছে, “আমরা মুসলমান হয়ে কিভাবে হিন্দু কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানকে জাতীয় সংগীত হিসাবে মেনে নেব?”
ঠিক আছে তোমরা মুসলিম কবিদের থেকে জাতীয় সংগীত বেছে নাও। সাথে এটা ও মনে রেখো, বেছে নেয়া মানেই কিন্তু মেনে নেয়া হবে যে, গান হারাম নয়। গান গানই, তা সে দউফ বাজিয়েই হোক বা ড্রাম সেট।
“গান বাজনা হারাম” এই মতের পক্ষে তারা কুরআন থেকে যে সব সুরার রেফারেন্স(দলিল) দেখায় সেগুলো, তাফসীরসহ হাদিসের আলোকে একে একে চলুন একটু বুঝে দেখি। এই বুঝে দেখা বা যাচাই করে দেখার অধিকার কিন্তু মুসলমান হিসাবে ইসলামই আমাদের দিয়েছে।
একই লিখাতে সব গুলো সুরা বা হাদিস বা তাদের যুক্তি গুলো নিয়ে আলোচনা করাটা পাঠককে ধর্য্যহারা করতে পারে ভেবে লিখাটা কয়েকটা পর্বে ভাগ করে নিচ্ছি । যদিও এই লেখাটাও ম্যারাথন আকার ধারন করেছে।
১ম পর্বঃ "আল কুরআন" গানের অনুমতি দেয় না।
=================================================
বেশিরভাগ আলেমেরা গানের বিরুদ্ধে, তাদের প্রথম দলিল দেখায় সুরা লুকমান, আয়াত ৬ ।
“একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি”। [মুহিউদ্দীন খান]
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشْتَرِى لَهْوَ ٱلْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۢ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌۭ مُّهِينٌۭ [٣١:٦]
উচ্চারন(ইংরেজি)ঃ
Wamina alnnasi man yashtaree lahwa alhadeethi liyudilla AAan sabeeli Allahi bighayri AAilmin wayattakhithaha huzuwan ola-ika lahum AAathabun muheenun.
শাব্দিক অর্থ (ইংরেজি)ঃ
And of the mankind (is he) who purchases, idle tales to mislead from (the) path (of) Allah without knowledge, and takes it (in) ridicule. Those for them (is) a punishment humiliating.
এখানে,
لَهْوَ ٱلْحَدِيثِ
================= lahwa alhadeethi == idle tales to mislead
حَدِيث
========================= শব্দের অর্থ কথা,কি্সসা,কাহিনি।
لَهْو
================================== শব্দের অর্থ গাফিল হওয়া, যে সব বিষয় মানুষকে প্রয়োজনীয় কাজ থেকে “গাফিল” করে দেয় (অন্য দিকে ফিরিয়ে দেয় বা বিরত করে) সেগুলোকে لَهْو বলা হয়।
মাঝে মাঝে এমন কাজকেও لَهْو বলা হয়, যার কোণ উল্লেখযোগ্য উপকারিতা নেই, কেবল সময় ক্ষেপণ ও মনোরঞ্জন এর জন্য করা হয়। (মা আরেফুল কুরআন)
=================================================
যদি শাব্দিক অর্থ ধরে আগাই তাহলে এখানে সরাসরি গান সম্পর্কে কিছুই পাওয়া যায় না। বিশদ অর্থে لَهْوَ ٱلْحَدِيثِ ( lahwa alhadeethi = idle tales to mislead ) দ্বারা এমন সব জিনিসকে বোঝানো হয়েছে, যা মানুষকে প্রয়োজনীয় কাজ থেকে গাফিল করে দেয়, যার কোণ উপকারিতা নেই, কেবল সময় ক্ষেপণ ও মনোরঞ্জনের জন্য করা হয় এবং অবশ্যই এর মধ্যে গান পড়তে পারে।
কুরআনের যতগুলো গ্রহণযোগ্য, সর্বজন বিদিত অনুবাদ দেখা যায় তার কোণ অনুবাদকই সরাসরি َهْوَ ٱلْحَدِيثِ এর অনুবাদ “গান বাজনা” করেননি, যেমন ঃ Muhammad Asad, M. M. Pickthall, Yusuf Ali(Saudi Rev.1985), Yusuf Ali (Orig. 1938), Shakir, Wahiduddin Khan, Dr. Laleh Bakhtiar, T.B.Irving, The Clear Quran, Dr. Mustafa Khattab, Safi Kaskas, [The Monotheist Group] (2011 Edition), Abdel Haleem,Abdul Majid Daryabadi, Ahmed Ali,Aisha Bewley, Ali Ünal, Ali Quli Qara'i, Hamid S. Aziz, Muhammad Mahmoud Ghali, Muhammad Sarwar, Muhammad Taqi Usmani, Shabbir Ahmed, Syed Vickar Ahamed, Umm Muhammad (Sahih International), Farook Malik, Dr. Munir Munshey, Dr. Kamal Omar, Talal A.Itani (new translation), Maududi,Ali Bakhtiari Nejad, A.L. Bilal Muhammad et al (2018), [The Monotheist Group](2013 Edition),Mohammad Shafi।
(এই ওয়েবসাইটে, ৬ নং আয়াতের সব অনুবাদ, অনুবাদক অনুসারে ইংরেজিতে পাশাপাশি দেখতে পারবেন। )
https://www.islamawakened.com/quran/31/6/default.htm
এবং কিছু আলেম অনুবাদক আছেন যাদের করা আয়াতের অনুবাদকে বিতর্কিত বলা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। (Controversial, deprecated, or status undetermined works) এদের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশের “মওলানা মহশিন খান” একজন। অবশ্য এই ওয়েব সাইট টি কিসের উপর ভিত্তি করে এই তথ্য দিয়েছে তা জানি না। তাই আমরা তা গ্রহণ না ই করি। মানে চিন্তা করি তাদের অনুবাদ বিতর্কিত নয়। বিতর্কিত চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে তাদের অনুবাদ গুলও একটু দেখি,
Muhsin Khan & Muhammad al-Hilali: And of mankind is he who purchases idle talks (i.e.music, singing, etc.) to mislead (men) from the Path of Allah without knowledge, and takes it (the Path of Allah, the Verses of the Quran) by way of mockery. For such there will be a humiliating torment (in the Hell-fire).
বাকিরা হচ্ছেন (যাদের অনুবাদও বিতর্কিত বলা হয়েছে)
Bijan Moeinian: As to those talented speakers who use their appealing jokes while delivering fiery but meaningless speeches to divert people from …………………
Faridul Haque: And some people buy words of play, in order to mislead from …………………………………….
Hasan Al-Fatih Qaribullah: There are some people who would purchase distracting talk, to lead astray from ………………………
Maulana Muhammad Ali: And of men is he who takes instead frivolous discourse to lead astray from …………………………..
Muhammad Ahmed – Samira: And from the people who buys the information's/speeches' amusement/fun to misguide from …………………………..
Sher Ali: And of men is he who takes idle tales in exchange for guidance to lead men astray from ………………………………………
Rashad Khalifa: Among the people, there are those who uphold baseless Hadith, and thus divert others from..................................
Ahmed Raza Khan (Barelvi): And some people buy words for mere playing that they may mislead from..................।।
Amatul Rahman Omar: (On the other hand) there are some people who follow ways of causing diversion (from guidance), with the result that they, in their ignorance, lead (people) astray ....................................।।
Dr. Mohammad Tahir-ul-Qadri: And of people there are those who buy absurd narrations to make............
সুতরাং দেখা যায়, কোথাও গান বা বাজনা সরাসরি বলা নেই মওলানা “মুহসিন খান” ও “মহিউদ্দিন খান” এর অনুবাদ ছাড়া। কিন্তু অন্তর্নিহিত তাৎপর্য্য থাকতে পারে তাই বিশেষজ্ঞের স্বরনাপন্ন্য হওয়াই শ্রেয়।
তাফসির নিচ্ছি,
মা’আরেফুল কুরআন
হযরত মওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফি(রঃ)
অনুবাদঃ মওলানা মুহিউদ্দিন খান।
ইসলামিক ফাউনডেশন
শ্রদ্ধেয় মওলানা “মুহসিন খান” ও “মহিউদ্দিন খান” এর অনুবাদের প্রতিফলন আমরা পাই, মারেফুল কুরআনে। দেখুন এই আয়াতের তাফসীর,
=================================================
তাফসীরে মা আরেফুল কুরআন ৭ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩
আলচ্য আয়াত টি একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে। মক্কার মুশরিক ব্যবসায়ী “নযর ইবনে হারেস” বানিজ্যের কারনে বিভিন্ন দেশে যেতেন। সে একবার পারস্য দেশ থেকে কিসরা প্রমুখ আজমি সম্রাটের ঐতিহাসিক কাহিনির বই, ক্রয় করে আনল এবং মক্কার মুশ্রিকদেরকে বলল মুহম্মদ তমাদেরকে আদ সামুদ প্রভ্রিতি সম্প্রদায়ের কিসসা কাহিনি শোনায়, আমি তোমাদিগকে রুস্তম ইস্ফিন্দিয়ার প্রমুখ পারস্য সম্রাটের সেরা কাহিনি শোনাই। মক্কার মুশরিকরা অত্যন্ত আগ্রহ ভরে তার আনিত কাহিনি শুনতে থাকে। কারন এগুলতে শিক্ষা বলে কিছু ছিল না যা পালন করার শ্রম স্বীকার করতে হয়। বরং এগুলো ছিল চটকদার গল্পগুচ্ছ। এর ফলে অনেক মুশরিক যারা এর আগে কুরানের অলৌকিকতা ও অদ্বিতিয়তার কারনে একে শোনার আগ্রহ রাখত এবং গোপণে শুনত, তারা কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ছুতা পেয়ে গেল। (রুহুল ম আ নি)
দুররে মনসুরে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, উল্লিখিত ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাদী ক্রয় করে এনে তাকে কুরআন শ্রবন থেকে মানুষকে ফেরানর কাজে নিয়জিত করলো। কেউ কুরআন শ্রবনের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনাবার জন্য বাদিকে আদেশ করত ও বলতো মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামাজ পড়া রোজা রাখা ও ধর্মের জন্য প্রাণ বিসরজন দেয়ার কথা বলে। এতে কষ্টই কষ্ট। এসো এই গানটি শোন এবং উল্লাস কর।
আলোচ্য আয়াত টি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই অবতির্ন হয়েছে । এতে لَهْوَ ٱلْحَدِيث ক্রয় করার অর্থ আজমি সম্রাটের ঐতিহাসিক কাহিনির বই অথবা গায়িকা বাদী ক্রয় করা।
=================================================
ইবনে কাথিরের তাফসীরে আছে,
খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা- ৬৫৮
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস উদ (রাঃ) বলেন, لَهْوَ ٱلْحَدِيث এর অর্থ হোল গান। এ কথা তিনি শপথ করে বলেন।
ইবন জরির (রাঃ) বলেন, ইউনুস ইবন আব্দুল আ’লা (রাঃ) আবুস সাহাবা বিকরি (রাঃ) হইতে বর্নিত যে ইবন মাসউদ (রাঃ) এই কথাই বলেন।
হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) জাবির (রাঃ) ইক্রিমাহ সাইদ ইবন জুবাইর, মুজাহিদ, মাক হুল, আমর ইবনে শুআইব ও আলী ইবনে খুযাইমাহ (রাঃ) অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
আবার কেউ কেউ বলেন এর অর্থ গায়িকা বাদী ক্রয় করা। তবে এর পক্ষে হাদিস গুলো দুর্বল। মুজাহিদ (রাঃ) বলেন আয়াতের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্র সত্য পথকে তারা বিদ্রুপের বিষয় বস্তু হিসাবে গ্রহণ করে। এই অর্থের গ্রহণ যোগ্যতা বেশি বলা হয়েছে।
=================================================
বিশদভাবে কাথির পড়লে আপনারাও বুঝতে পারবেন, মতভেদ রয়েছে। তবে কাথিরের তাফসীরে উপ্রিউল্লেখিত মুশরিক ব্যবসায়ী “নযর ইবনে হারেস” এর কাহিনি টি নেই। কাথিরে দেয়া নেই বলে কি ঘটনা মিথ্যা হবে?
তাই বিশ্বাস করলাম ঘটনা সত্য।
এবার আসুন আমরা একটু যুক্তি তর্কে শান দেই,
সুরা লুক মান নাযিল হয় মক্কায়, রাসুল (সাঃ) এর হিজরতের আগে, ইসলাম প্রচারের একদম সুচনা লগ্নে। তখন কাফের মুশরিকরা হেন অপকর্ম নেই যা বাদ রেখেছিল ইসলাম প্রচারে বাধা দিতে। সেই সব অপকের্মর একটি শাখা ছিল কুরআনের গ্রহনযোগ্যতা কমানো। একটু খেয়াল করতে হবে, তখন মুল বেপার ছিল দুই টি। ইসলামের উত্থানের সাথে কাফের মুশরিকদের সামাজিক প্রভাবের প্রতিযোগিতা । রাষ্ট্র তথা গোত্র, সমাজ, ব্যক্তি সবাই তখন দুই পক্ষে বিভক্ত, ইসলামের পক্ষে বা বিপক্ষে। তাই তারা সেই সব জিনিস লোকজনের সামনে প্রদর্শন করতে লাগলো যেগুলো মানুষের চিত্তকে সহজে আকৃষ্ট করতে পারে। কাহিনি বা গান,নাচ, জাদু ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব জিনিস তখন আনা হয়েছিলো কুরআনের বিপরীতে, কুরআনের সাথে প্রতিযগিতা করার জন্য। সেই সময়ে নাযিল্ক্রিত আয়াতের لَهْو শব্দের অর্থ গাফিল হওয়া, যে সব বিষয় মানুষকে প্রয়োজনীয় কাজ থেকে গাফিল করে দেয় সেগুলোকে لَهْو বলা হয়।
প্রয়োজনীয় কাজটি কি?
কুরআন পড়া বা কুরআন শুনে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া।
মাঝে মাঝে এমন কাজকেও لَهْو বলা হয়, যার কোণ উল্লেখযোগ্য উপকারিতা নেই, কেবল সময় ক্ষেপণ ও মনোরঞ্জন এর জন্য করা হয়।
মাঝে মাঝে বুঝানো হয়। কিন্তু এখানে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতের সাথে মিলালে ১ম অর্থ টাই যুক্তি যুক্ত মনে হয়। কারন অনুবাদক “মা-আরেফুল কুরআন” গ্রন্থের, ১ম খণ্ডের “অনুবাদকের আরয” এ বলেছেন, “গ্রন্থকার তার পুর্বসুরি হযরত শাহ রফিউদ্দিন (রাঃ) ও শায়খুল-হিন্দ মওলানা মাহমুদুল হাসান (রাঃ) এর অনুসরণে কোরআন শরীফের আয়াতগুলোর উর্দু অনুবাদ করেছেন। উল্লেখ্য যে এ উভয় বুযুর্গ ই আয়াতের আক্ষরিক অনুবাদ না করে মর্মানুবাদ করেছেন। তবে এতে মুলের সাথে তরজমা বিন্দুমাত্র সামঞ্জস্যহীন হয় নি। বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রেও আমরা যত্নের সাথে সে ধারা অনুসরণ করতে চেষ্টা করেছি”। পৃষ্ঠা ১১, ১ম খণ্ড।
তাই মর্মবানী অনুধাবন করলে এটাই তো বুঝা যায়, মুশরিক ব্যবসায়ীর উদ্দেশ্য ছিল প্রয়োজনীয় কাজ কুরআন শোনা বা পড়া থেকে মানুষকে গাফিল করে দেয়া বা সরিয়ে দেয়া। নিছক সময় ক্ষেপণ বা মনোরঞ্জন করা নয়।
আর حَدِيث শব্দের অর্থ কিসসা বা কাহিনি, ঘটনার পরি প্রেক্ষিতে চটক দার কাহিনি ও গায়িকা বাদী ক্রয় করা।
এখন গান ও কাহিনির বই ১৪০০ বছর আগে ইসলামের বিরুদ্ধে সরা সরি ব্যবহার করা হয়েছিল যার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা আলা এ আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন। যারা করেছিলো তারা তার শাস্তি পাবে। কিন্তু এখন এই ২০১৮ সালে যারা গান গাচ্ছেন বা বই লিখছেন তারা সবাই কি মানুষকে কুরআনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ানোর উদ্দেশ্যে তা করছেন বা লিখ ছেন? যদি কেউ করেও সে তার শাস্তি পাবে পরকালে। তাছারা সেই সময় কুরআনের নাযিল হওয়ার সময় ছিল। আর এখন কুরআন নাযিল হয়ে, লক্ষ লক্ষ হাফেজের অন্তরে, লাখের উপর মাদ্রাসা গুলতে সংরক্ষিত, ইন্টারনেটে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে সহজ লভ্য। তাই ঢালাও ভাবে এই আয়াতের পরি পেক্ষিতে গান বা নভেল নিশিদ্ধ করা টা কি যুক্তি সঙ্গত হবে?
“সন্ত্রাসীরা গুলী করে মানুষ মারে” এই যুক্তিতে গুলী নিশিদ্ধ ঘোষণা করলে পুলিশ তো নগ্ন হয়ে যাবে। ছুরি বা দা দিয়ে মানুষ খুন করা হয়, সেই ছুরি বা দা কিন্তু আমাদের সবার রান্নাঘরে থাকে, তাই বলে কি ছুরি দা রান্নাঘরে রাখা নিশিদ্ধ করা যায়? প্যথেদ্রিন নেশা করার জন্য ও ব্যবহৃত হয়, সেই প্যথেদ্রিন ছাড়া কিন্তু হাস্পাতাল গুলো একদিন ও চলতে পারবে না। তাই সব জিনিসেরই ভালো খারাপ দুটো ব্যবহারই আছে। আপনি কোণ হিসাবে ব্যবহার করবেন তা আপনার উপর, জিনিসের উপর নয়।
এখানে একটি হাদিস উল্লেখে ব্যপারটা ব্যখ্যা করা যেতে পারে,
সহিহ বুখারি (তাওহিদ)
অধ্যায় ৬৪/ মাগাযি(যুদ্ধ)
হাদিস নাম্বারঃ ৪১২৪
ইব্রাহিম ইবনু তাহ মান (রহঃ).....................বারাআ ইবনু “আযিব (রাঃ) থেকে অধিক বর্ননা করে বলেছেন, নবি (সাঃ) বানু কুরাইযার সঙ্গে যুদ্ধের দিন হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) কে বলেছিলেন (কবিতা আবৃতি করে) মুশরিকদের দোষ ত্রুটি তুলে ধর। এ ব্যপারে জিবরীল (আঃ) তোমার সঙ্গি। (আধুনিক প্রকাশনী ৩৮১৭, ইসলামিক ফাউনডেশনঃ ৩৮২০)
হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) কে রাসুল (সাঃ) এর কবি বা ইসলামের কবি বলা হত। কারন কাফির কবিরা যেমন আল্লাহ্র রাসুল ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুথসা ও বদনাম করতো তেমনি তিনিও কাফিরদেরকে কবিতা ও সাহিত্যের মাধ্যমে তার জবাব দিতেন। (সহিহ)
এখানে বুঝা যাচ্ছে কাফিররা যে কবিতা ও সাহিত্যকে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল, এর জবাবে রাসুল (সাঃ)ও কবিতা এবং সাহিত্যকে কাফিরদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন। এখন “কাফিররা ইসলামের বিরুদ্ধে কবিতা বা সাহিত্য রচনা করত” এই যুক্তি তে কি কবিতা ও সাহিত্য কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যায়?????!!!!!!!!!!!!
================================================
তাফসীরে মারুফুল কুরআন ৭ম খণ্ড পৃষ্ঠা ৮, গান ও বাদ্য যন্ত্র সম্পর্কিত বিধানঃ
“কয়েকজন সাহাবী উল্লিখিত আয়াতের তাফসীর করেছেন গান-বাজনা করা। অন্য সাহাবী গন ব্যপক তাফসীর করে বলেছেন যে আয়াতে এমন প্রত্যেক খেলাকে বোঝানো হয়েছে যা মানুষকে আল্লাহ থেকে গাফেল করে দেয়। তাদের মতে গান বাজনা এতে দাখিল আছে”।
=================================================
মানে আপনি যেদিকেই যান গান বাজনা হারাম তো হারাম সাথে খেলাধুলাও। এর পর দলিল হিসাবে যে হাদিস গুলো দেয়া আছে সেগুলো দেখুন,
=================================================
১ম হাদিসঃ আবু দাউদ, ইবনে মাজা ও ইবনে-হিব্বান বর্নিত হযরত আবু মালেক আশ-আরির রেওয়াতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“ আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পালটিয়ে তা পান করবে। তাদের সামনে গায়িকারা বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র সহকারে গান করবে। আল্লাহ তা আলা তাদেরকে ভু গর্ভে বিলিন করে দেবেন এবং কতকের আকৃতি বিকৃত করে বানর বা শুকরে পরিণত করে দেবেন”।
২য় হাদিসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর রেওয়াতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ তা আলা মদ, জুয়া, তবলা ও সারেঙ্গী হারাম করেছেন। তিনি আর ও বলেন, নেশা গ্রস্থ করে- এমন প্রত্যেক বস্তু হারাম”। (আহমদ, আবু দাউদ)।
৩য় হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যখন জিহাদ লব্ধ সম্পদ কে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা হবে, যখন গচ্ছিত বস্তুকে লুটের মাল গণ্য করা হবে যাকাতকে জরিমানার মত কঠিন করা হবে, যখন পার্থিব সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মিয় জ্ঞান শিক্ষা করা হবে, যখন মানুষ স্ত্রীর আনুগত্য ও মাতার অবাধ্যতা শুরু করবে, যখন বন্ধুকে নিকটে টেনে নেবে ও পিতাকে দূরে সরিয়ে রাখবে, যখন মসজিদ সমূহে হট্টগোল হবে, যখন পাপাচারী কুকর্মি ব্যক্তি গোত্রের নেতা হবে, যখন দুষ্ট লোকদের সম্মান করা হবে তাদের অনিষ্ঠের ভয়ে, যখন গায়িকা নারী ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যপক প্রচলন হবে, যখন মদ্যপান শুরু হবে, যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের পরবর্তি লোক গন পুর্ববর্তি গন কে অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা প্রতিক্ষা কর একটি লাল বর্ণযুক্ত বায়ুর, ভূমিকম্পের, ভুমি ধসের, আকার আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়ার এবং কিয়ামতের এমন নিদর্সন সমূহের, যেগুলো একের পর এক প্রকাশমান হতে থাকবে যেমন কোণ মালার সুতা ছিঁড়ে গেলে দানা গুলো একের পর এক প্রকাশমান হতে থাকবে, যেমন কোণ মালার সুতা ছিঁড়ে গেলে দানা গুলো একের পর এক খসে পড়তে থাকে”।
বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ এ হাদিসের শব্দ গুলো বার বার পড়ুন এবং দেখুন এ যেন বর্তমান জগতের পরি পুর্ন চিত্র। যেসব গোনাহ বর্তমানযুগে মুসলমানদের মধ্যে ব্যপকভাবে প্রসার লাভ করছে, চউদ্দশ বছর পুর্বে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার সংবাদ দিয়ে গেছেন। এধ রনের পরিস্থিতি সম্পর্কে খবরদার করার জন্য এবং পাপ কর্ম থেকে নিজে বাচার ও অন্যকে বাঁচানোর সযত্ন প্রয়াস অব্যাহত রাখার জন্য তিনি মুসলমানদের সাবধান করে দিয়েছেন।
অন্যথায় যখন এসব পাপ ব্যাপকভাবে ছরিয়ে পড়বে তখন এ ধরনের পাপিদের উপর আসমানি আজাব নাযিল হবে এবং কিয়ামতের সর্বশেস লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে যাবে। মেয়েদের নৃত্যগীত এবং সংগীত ও বাদ্য যন্ত্র সমূহ যথা ঃ তব্লা,সারিন্দা, ইত্যাদিও এ পাপ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এখানে এ হাদিসটি এই প্রেক্ষাপটেই নকল করা হয়েছে। এত ভিন্ন বহু প্রামান্য ও নির্ভরযোগ্য হাদিস রয়েছে যাতে গান বাদ্য হারাম ও নাযায়েজ বলা হয়েছে, এব্যাপারে বিশেষ সতর্ক বানী রয়েছে এবং কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।
=================================================
অর্থাৎ, এক কথায় গান গাওয়ার কঠিন শাস্তির বিধান আছে। বলাই বাহুল্য কঠিন শাস্তির বিধান উপরে উল্লিখিত তিনটি হাদিসের দলিলেই দেখানো হয়েছে। তাহলে চলুন তেনা না পেচাই, সোজা হাদিস গুলো খেয়াল করি।
১ম হাদিসঃ “মদের নাম পালটিয়ে তা পান করবে” এটা আমরা বর্তমানে দেখতে পাই, অনেকে বিয়ার বা ওয়াইন পান করাকে মদ্যপান হিসাবে ধরতে চান না। “তাদের সামনে গায়িকারা বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র সহকারে গান করবে”...।। মদ্য পান করতে করতে নাচ গান শোনা এ ধরনের পরিবেশ বার বা উচু তলার পাররটি গুলতে দেখা যায় যা অবশ্যই নিন্দনিয়। বিশেস করে এখন কার যুবক যুবতিদের মধ্যে প্রচলিত ডি জে পার্টি গুলো। আলো আধারির বদ্ধ রুমে তুমুল বাজনার তালে নাচা, অশ্লীল অঙ্গ ভঙ্গি করা কোণ ভাবেই ভাল হতে পারে না। কিন্তু এই পরিবেশ আর আমাদের ঘরে বিশেষ করে ইদের ছুটি তে বছরে একবার বা দুইবার পুরো পরিবার একত্রে বসে, চাচাতো, ফুপাত বা মামাত,খালাত ভাই বোনরা মজা করে গান গাওয়ার যে পরিবেশ তা কি একই হয়?তেমনি ভাবে বন্ধু বান্ধবীরা মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যম্পাসে দিনে দুপুরে গান গেয়ে আড্ডা দেয়ার পরিবেশ? বা ছেড়ে আসা স্কুল কলেজের পুরনো বন্ধুদের সাথে বহু বছর পর পর আয়োজিত পুনরমিলনির অনুষ্ঠান গুলোর পরিবেশ? নাইট ক্লাবের পরিবেশ আর রমনা বট মুলের পরিবেশ কি এক? অনেকে আবার বলবেন রমনার পরিবেশের কারনেই নাইট ক্লাব গুলোর সৃষ্টি। তাহলে লাখ লাখ পর্ন ওয়েবসাইট বা প্রায় বিলুপ্ত হওয়া নিকট অতিতের চটি বই গুলোকে নিরীহ দাবী করা হবে। আবার রমনার সাহিত্য চর্চা আর অশ্লীল সাহিত্য চর্চার মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে হলে আমাকে আরেকটি লিখা তৈরি করতে হবে। সুতরাং এখন সে দিকে না যাই।
হরর মুভি মাঝ রাতে অন্ধকার ঘরে একা একা দেখতে বসলে, ভয় তো লাগবে। সেই একই মুভি দিনের বেলা দেখলে একই রকম ভয় কি লাগবে? তাহলে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর হরর মুভির কার্যক্ষমতা পরিবর্তিত হচ্ছে না?
তাছাড়া এর থেকে কি পাওয়া যায়, গান গাওয়া যাবে না? আমি তো মুলত বুঝতেসি বার আর নাইট ক্লাব গুলতে যাওয়া যাবে না, ওয়াইন বা বিয়ার খাওয়া যাবে না।
২য় হাদিসঃ “আল্লাহ তা আলা মদ, জুয়া, তবলা ও সারেঙ্গী হারাম করেছেন”, এখানে কিছু বাদ্য যন্ত্রের উল্লেখ আছে , সরা সরি গান কি বলা আছে?
৩য় হাদিসঃ এখানে দেখুন শুধু গানের কথা কিন্তু বলা হয় নি। মানুষ নিজের দোষ টা দেখে না বা প্রথমে দেখতে চায় না।
“যখন পার্থিব সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মিয় জ্ঞান শিক্ষা করা হবে” এই অভ্যাসটা কাদের তা বুঝার জন্য নিশ্চয় তাফসীর ঘাটতে হবে না।
“যখন মসজিদ সমূহে হট্টগোল হবে”, জুম্মার নামাজ পড়েই মুসল্লিদের কারা উত্তেজিত করে মিছিল বের করে?
“যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের পরবর্তি লোক গন, পুর্ববর্তি গন কে অভিসম্পাত করবে”, বাহাস গুলতে একজন আরেকজনের দলিল (কোণ না কোণ প্রাচীন ইসলামী ব্যক্তি বর্গের তাফসীর বা লিখা) ভুয়া বলে কারা মারামারি করে?
এই সব পয়েন্ট বাদ দিয়ে স্রেফ “মেয়েদের নৃত্যগীত এবং সংগীত ও বাদ্য যন্ত্র সমূহ যথা ঃ তব্লা,সারিন্দা, ইত্যাদিও এ পাপ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এখানে এ হাদিসটি এই প্রেক্ষাপটেই (গানের প্রেক্ষা পটে) নকল করা হয়েছে”.........??????!!!!!!!।অদ্ভুত।
এবার আসুন আসল বোমাটার বিস্ফোরণ ঘটাই। ৩য় হাদিসের ক্ষেত্রে অনুবাদক শুধু বর্ননা করেই ক্ষান্ত দেন নি, গুরুত্ব বুঝাবার জন্য “বিশেষ জ্ঞাতব্য” যুক্ত করেছেন। সেখানে এই হাদিসের শব্দ গুলো বার বার পড়তে বলেছেন। এ হাদিস, যার মাঝে বর্তমান জগতের পরি পুর্ন চিত্র তথা যেসব গোনাহ বর্তমানযুগে মুসলমানদের মধ্যে ব্যপকভাবে প্রসার লাভ করছে, যা চউদ্দশ বছর পুর্বে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার সংবাদ দিয়ে গেছেন,যার নম্বরঃ ১৭২৭, সেই হাদিস সম্পর্কে কে কি বলেছেন আসেন একটু দেখি,
“হাদিসটি তিরমিযি (২/৩৩) রুমাইহ জুযামি সুত্রে আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে “মারফু” হিসাবে বর্ননা করে নিম্নের ভাষায় “দুর্বল” আখ্যা দিয়ে বলেন,
হাদিসটি “গরীব”, এ টিকে একমাত্র এ সুত্রেই চিনি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ রুমাইহু মাজহুল (অপরিচিত) যেমনটি “আত-তাকবির” গ্রন্থে এসেছে। এরুপি একটি হাদিস ভিন্ন ভাষায় পরবর্তিতে আসবে।
হাদিসটি “দ্বা-য়িফ”
“জঈফ ও জাল হাদিস সিরিজ এবং উম্মাতের মাঝে তার কু প্রভাব”
৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩১৪
মুলঃ আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আল বানী (রহঃ)
অনুবাদঃ আবু শিফা মুহাম্মদ আকমাল হোসেন বিন বদিউজ্জামান
পরবর্তিতে এরুপি যে হাদিস আসার কথা বলা হয়েছে তার নম্বর ১১৭০( যেখানে উম্মতের ১৫ টি মন্দ চরিত্রের সাথে গানের কথা এসেছে) এবং ১১৭১ এখানে ৫৮ টি মন্দ চরিত্রের কথা বলা হয়েছে। বিষয়ের সাথে যায় না কিন্তু তবুও হাদিসটি উল্লেখ করছি, কারন মেঠো মুল্লাহদের প্রিয় হাদিস গুলির মধ্যে এটি একটি, যার দ্বারা তারা যেখানে খুশি যেভাবে খুশি কঠিন শাস্তির বিধান জারি করে হুংকার দিয়ে বলে উঠে , “ঠিক কিনা বলেন?”। আমাদেরকে বাধ্য হয়ে বলতে হয় “ঠিক ঠিক”।
তবে একটা বিষয় অবশ্যই স্বরন রাখতে হবে যে নিন্মক্ত বিষয় গুলো উল্লেখ কারি হাদিসটি দ্বা য়িফ এর মানে এই নয় যে সে বিষয়গুলো জায়েজ হয়ে যাবে বা মানা যাবে না। আবার এ হাদিসের শতকরা ৮০% বর্তমান দেশের অবস্থা তথা সময়ের সাথে মিলে যায় বলেই যে তা সহিহ হয়ে যাবে তাও নয়।
“কিয়ামত নিকটবর্তি হলে উম্মতের মধ্যে বাহাত্তরটি মন্দ চরিত্র দেখা যাবে,
১। তোমরা যখন লোকদের দেখবে তারা সালাতকে মেরে ফেলছে(ছেরে দিচ্ছে), ২। আমানতকে নষ্ট করছে, ৩। সুদ খাচ্ছে, ৪। মিথ্যা বলাকে বৈধ মনে করছে, ৫। রক্ত প্রবাহিত করাকে হাল্কা মনে করছে, ৬। উচু উচু বিলডিঙ নির্মান করছে, ৭। দুনিয়ার বিনিময়ে দ্বীনকে বিক্রি করে দিচ্ছে, ৮। আত্বিয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে, ৯। বিচার ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে, ১০। মিথ্যাই সত্য হয়ে যাচ্ছে, ১১। রেশমি কাপড় দ্বারাই পোশাক বানানো হচ্ছে, ১২। অত্যাচার বেড়ে যাচ্ছে, ১৩। ত্বালাক প্রদান ও হত্যা মৃত্যু বেশি বেশি হচ্ছে, ১৪। খিয়ানতকারীর নিকট আমানত রাখা হচ্ছে আর সত্যিকারের আমানত কারিকে খিয়ানত কারি বানানো হচ্ছে, ১৫। মিথ্যুক কে সত্যবাদী আখ্যা দেয়া হচ্ছে, সত্যবাদীকে মিথ্যুক বানানো হচ্ছে, ১৬। অপবাদ প্রদান বেশি বেশি হচ্ছে, ১৭। বৃষ্টি হবে গরম আর সন্তান হবে ক্রধান্বিত, ১৮। কৃপণতা অত্যাধিক বেড়ে যাবে আর দয়া প্রদর্শন কমে যাবে, ১৯। রাষ্ট্রের প্রধানগন হবে পাপাচারী আর মন্ত্রীগন হবে মিথ্যাচারি, ২০। আমানত রক্ষ্যা কারিরা হবে খিয়ানত কারি, ২১। উপদেসটা গন হবে অত্যাচারি, ২২। কারি গন হবে ফাসেক, ২৩। তারা যখন মেশের চামড়া পরিধান করবে তখন তাদের অন্তর গুলো হবে মৃত দেহের চেয়েও বেশি দুর গন্ধ যুক্ত এবং তিক্ত বস্তুর চেয়েও বেশি তিক্ত, ২৪। আল্লাহ তালা তাদেরকে এমন ফিতনা দ্বারা ছেয়ে দিবেন যার মধ্যে তারা অত্যাচারি ইয়াহুদ্দের অস্থিরতার ন্যায় পরস্পরে অস্থিরতায় হাবু দুবু খাবে, ২৫। দ্বিনারের প্রচলন প্রাধান্য পাবে আর দেরহাম অনুসন্ধান করা হবে, ২৬। বেশি বেশি ভুল সংঘটিত হবে, ২৭। রাষ্ট্রীয় নেতারা খিয়ানত করবে, ২৮।কুরান কে অলঙ্ক্রিত করা হবে, ২৯।মসজিদ সমূহের ছবি তোলা হবে ( সুন্দর্য মণ্ডিত হওয়ার কারনে), ৩০। উচু উচু মিনার নির্মান করা হবে, ৩১। হৃদয় সমূহ মন্দ হয়ে যাবে, ৩২।মদ্য পান করা হবে, ৩৩। হুদুদ (অপরাধীর শাস্তিকে) বাতিল করে দেয়া হবে, ৩৪। দাসি (মা) তার মুনিবকে জন্ম দিবে, ৩৫। তুমি খালি পা আর উলঙ্গ বদনে থাকা দরিদ্র ব্যক্তিদেরকে দেখবে তারা দেশের রাজা বাদশা হয়ে যাচ্ছে, ৩৬। স্ত্রি তার স্বামীর সাথে ব্যবসা বানিজ্যে অংশ গ্রহণ করবে, ৩৭। পুরুষরা মহিলাদের সাদৃশ্য আর মহিলারা পুরুষদের সাদ্রিশ্য গ্রহণ করবে, ৩৮। শপথ পাঠ করতে বলা ব্যতীতই আল্লাহ্র নামে শপথ পাঠ করা হবে ৩৯।পরিচিত জন কেই সালাম দেয়া হবে, ৪০। দ্বিনহিন জ্ঞান অর্জন করা হবে, ৪১। আখেরাতের কর্মের দ্বারা দুনিয়াকে অনুসন্ধান করা হবে, ৪২। গনিমত যখন একটি সম্প্রদায়ের মধ্যেই ঘুরপাক করবে, ৪৩। রক্ষিত আমানতকে যখন গনিমাত মনে করে নিজের সম্পদ ভেবে নেয়া হবে, ৪৪। জাকাত বের করাকে যখন মুশকিল মনে করা হবে, ৪৫। সম্প্রদায়ের নিম্ন শ্রেনির লোক যখন নেতৃত্বদানকারী হবে, ৪৬। ব্যক্তি যখন তার পিতার অবাধ্য হবে, ৪৭। মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করবে, আর তার বন্ধুর সাথে সদ্ব্যবহার করবে, ৪৮। তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে, ৪৯। ফাসিক রা মসজিদে উচু আওয়াজে কথা বলবে, ৫০। নর্তকি বা গায়িকা ও বাদ্য যন্ত্র ব্যবহার করা হবে, ৫১। রাস্তা ঘাটে মদ্যপান করা হবে, ৫২। অত্যাচার করাকে অহ ংকার হিসাবে গণ্য করা হবে, ৫৩। বিচার কার্য ক্রয় বিক্রয় করা হবে, ৫৪। পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, ৫৫। কুরআনকে সংগীত হিসাবে গণ্য করা হবে, ৫৬। পশুর চামড়াকে মুদ্রন কাজে ব্যব হার করা হবে, ৫৭। মসজিদ গুলো রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা হবে, ৫৮। উম্মাতের শেষের লোকেরা যখন প্রথম যুগের লোকদের অভিশাপ দিবে সে সময় তারা যেন লাল বায়ু অথবা ভুমি ধস রূপ (আকৃতি) পরিবর্তন ও বহু নিদর্শ্নের অপেক্ষা করে”।
হাদিস টি দুর্বল
হাদিস টি আবু নুয়াইম “আল-হিল ইয়াহ” গ্রন্থে (৩/৩৫৮) সুও্য়াইদ ইবনু সাঈফ সুত্রে ফারাজ ইবন ফযালাহ হতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু ওবাইদ লাইসি হতে, তিনি হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান হতে “মারফু” হিসাবে ব র্ন না করেছেন।
আবু নুয়াইম বলেন, “আব্দুল্লাহ ইবনু ওবায়েদ ইবনে ওমারের কর্ত্রিক বর্নিত হাদিসটি “গারিব”। আমার জানা মতে তার থেকে একমাত্র ফারাজ ইবনু ফুযালাহ-ই বর্ননা করেছেন।
আমি (আল বানী) বল ছিঃ এ হাদিসটি দুর্বল যেমনটি হাফিয ইরাকি (৩/২৯৭) বলেছেন। এ হাদিসের সনদে ২য় আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই যে, এটি মুনকাতি (অ র্থাত সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে)।
আবু নুয়াইম আব্দুল্লাহ ইবনু ওবায়েদের জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে(৩/৩৫৬) বলেছেনঃ তিনি আবুদ দারদা (রাঃ), হুযাইফা (রাঃ) প্রমুখের উদ্ধৃতিতে মুরসাল হিসাবে বর্ননা করেছেন।
শায়খ উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আমার নিকট দুর্বলতা প্রকাশ করা ব্যতীত দুর্বল হাদিস বলা বৈধ নয়, বিশেষ করে জনগণের সামনে। কারণ তাদের সামনে যখন হাদিস বলা হয়, তারা সেটাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে। তারা মনে করেন খতিব যা বলেন তাই ঠিক। বিশেষ করে আগ্রহ সৃষ্টি ও সতর্ককারী হাদিসগুলো। কুরআন ও সহি সুন্নায় যা রয়েছে, দুর্বল হাদিস অপেক্ষা তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট”।
এখন একটা ব্যখ্যাই দেয়া যায় বা মেঠো মুল্লাহরা দিয়ে থাকে,
তিনটি বিষয়ে ‘অল্প যয়ীফ’ হাদীস বলা বা আমল করা অনেকে অনুমোদন করেছেন:
(১) কুরআনের ‘তাফসীর’ বা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে,
(২) ইতিহাস বা ঐতিহাসিক বর্ণনার ক্ষেত্রে এবং
(৩) বিভিন্ন নেক আমলের ‘ফযীলত’-এর ক্ষেত্রে।
এখানে ১ নম্বর বেপারটাই ঘটেছে অর্থাত কুরআনের তাফসিরের ব্যখ্যায় দ্বায়িফ হাদিস বলা যাবে তাই তো?
কিন্তু এক্ষেত্রেও হাদিসটি নিচের শর্তগুলো পূরণ করছে কিনা বিবেচনা করতে হবে :
(১) যয়ীফ হাদীসটি ‘‘অল্প দুর্বল’ হবে, বেশি দুর্বল হবে না।
(২) যয়ীফ হাদীসটি এমন একটি কর্মের ফযীলত বর্ণনা করবে যা মূলত সহীহ হাদীসের আলোকে জায়েয ও ভালো।
(৩) যয়ীফ হাদীসকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কথা বলে বিশ্বাস করা যাবে না। এবং কোনোভাবেই তা আকীদা বা বিশ্বাসের জগতে প্রবেশ করবে না। যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করার ক্ষেত্রে একথা মনে করা যাবে না যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সত্যিই একথা বলেছেন। সাবধানতামূলকভাবে আমল করতে হবে। অর্থাৎ মনে করতে হবে, হাদীসটি নবীজী ﷺ -এর কথা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, তবে যদি সত্য হয় তাহলে এ সাওয়াবটা পাওয়া যাবে, কাজেই আমল করে রাখি। আর সত্য না হলেও মূল কাজটি যেহেতু সহীহ হাদীসের আলোকে মুস্তাহাব সেহেতু কিছু সাওয়াব তো পাওয়া যাবে।
(৪) এরূপ দুর্বল হাদীস নির্ভর কোনো আমল প্রকাশ্যে করা যাবে না; বরং একান্ত ব্যক্তিগতভাবে তা পালন করতে হবে।
"হাদীসের নামে জালিয়াতি"
বিভাগের নামঃ ৮. মিথ্যা হাদীস বিষয়ক কিছু বিভ্রান্তি
লেখক/সঙ্কলক/অনুবাদকের নামঃ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
=================================================
একটা ব্যপার উল্লেখ না করে পারছিনা, হয় তো তা আমার অনুর্বর মস্তিস্কের চিন্তা, এমন হাদিস যদি আমাকে এক বা দুই বছর আগেও কেউ দেখিয়ে দুনিয়া দারির সাথে মিলাতে বলত, আমি নির্ঘাত জ্বিহাদী চেতনায় “আবুল কাশেম” হাতে তুলে নিতাম। (এ কে ৪৭)।
সুতরাং গান হারাম এই মতের দলিল হিসাবে সুরা লুকমানের আয়াত টি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। আমি আবার বলছি “গান হারাম এই মতের দলিল হিসাবে” সুরা লুকমানের আয়াত টি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। ইবনে কাথিরে বর্নিত অনেক সাহাবা বা আলেমদের অনেকেই পক্ষে বিপক্ষে মত দিয়েছেন। সুতরাং এই মত যে শুধু আমার তা নয়।
এখন কথা হচ্ছে মা আরেফুল কুরআনে গানের বিপক্ষে বিধান চালুর পরিপ্রেক্ষিতে দ্বায়িফ হাদিসের রেফারেন্স কেন দেয়া হোল? এত বিখ্যাত বিখ্যাত কাওমি আলেম বা বুযুর্গ ব্যক্তি রা কি জানতেন না হাদিসটি দ্বায়িফ? আর দ্বায়িফ বা দুর্ব ল হাদিস কিভাবে বর্ননা করতে হয়? আসা করি কোণ কাওমি পাশ ভাই আমার প্রশ্ন টির সদুত্তর দিবেন।
(বিঃ দ্রঃ আলোচ্য লিখায় শুধু মাত্র সুরা লুকমানের আয়াত নিয়ে মতামত গুলো দেয়া হয়েছে তাই কেউ যুক্তি দিলে তার আলোকেই দেবেন। অহেতুক কে কোথায় ফতোয়া দিল তার উল্লেখ না করাই ভালো।)
@@@বিষয় নির্বাচন, স্যার হাসান মাহমুদের "শারিয়া কি বলে আমরা কি করি" বই এর "ইসলামে সংগীত" অধ্যায় থেকে।@@@
©somewhere in net ltd.