নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাগঐতিহাসিক ধারাভাষ্যকার শ্রদ্ধেয় \"চৌঃ জাফর উল্লাহ শরাফতের\" সাথে আমার নামের মিল ছাড়া, কাছে বা দুরের কোণ সম্পর্ক নেই।

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত

সাধারণ মানুষ

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোল্লার মৃত্যুতে আলোকিত শকুনের এতিম নাতি পুতি.।.।.।.।

০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:০২

শুনুন।। বলি,এক বীরের গল্প। গ্রীক,আরব,পার্সিয়ান,রোমান বা মুঘল বীর নয়। জিহাদ, ক্রসেড বা রামায়নের বীর নয়। ছা-পোষা বাঙ্গালী জাতির এক বাঙ্গালী বীরের গল্প।নাম আগে বলবো না। বললে হয়ত শুনতে চাইবেন না। রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক মনের দরজাটা একটু বন্ধ করে শুনুন। জন্ম তার,১৪ ই নভেম্বর ১৯৩৮ সালে। আসামে। ৮ ভাই ৩ বোনের সংসারে ছিলেন ৩য় সন্তান।সিলেট এম সি কলেজ থেকে বি এ পাস করে ,আর্মি তে যোগ দেন ১৯৫৯ সালে। তৎকালীন পাকিস্তান আর্মি। ১৯৬০ সালে কমিশন লাভ করেন। প্রথমে পদাতিক বাহিনী। পরবর্তিতে, ১৯৬৫ সাল থেকে যোগ দেন পাকিস্থানের, দূধর্শ কমান্ডো বাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের এলিট অফিসার হিসাবে। “যোগ দেন” কথাটা যত সহজে বলে ফেললাম, তত সহজ কিন্তু নয় ব্যপারটা। যোগ্যতা থাকতে হয় কমান্ডো হতে হলে। ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে “শিয়াল কোট” সেক্টরে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে মারাত্বক ভাবে আহত হন তিনি। পাকিস্থান ও ভারতের মধ্যে সংঘঠিত যুদ্ধ গুলোর মধ্যে “শিয়াল কোট” উল্লেখযোগ্য, যা নিয়ে পাকিস্তান সত্যিকারের গর্ব করতে পারে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত, তিনি চট্টগ্রাম সেনা নিবাসে কমান্ডো ব্যটলিয়নে অবস্থান করেন। ৭ আগস্ট ১৯৬৯ সালে বিয়ে করেন। এর পর কুয়েটার স্টাফ কলেজে সিনিয়ার টেকনিক্যল কোর্সে যোগ দেন। তিনিই ছিলেন একমাত্র বাঙ্গালী অফিসার যাকে “মেরুন প্যারাস্যুট উইং” প্রদান করা হয়।প্যরা জাম্পে কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষনের জন্য মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রে পাঠানো হয়, পাকিস্তান আর্মির পক্ষ থেকে। ১৯৬৯ এর শেষের দিকে নর্থ ক্যরোলিনার স্পেশাল ফোর্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট তাকে অনার্স ডিগ্রী প্রদান করে। এছাড়াও ২৫২বার স্কাই জাম্প করার দূর্লভ কৃতিত্ব রয়েছে তার ঝুলিতে। সে সময় আর কোন এলাইড অফিসার একসাথে এতগুলো কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হন নি। পশ্চিম পাকিস্তানী অনেক তাগড়া তাগড়া পাঞ্জাবী অফিসারও না। মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের, ট্রেনিং শেষে তার সার্টিফিকেট এ লিখা হয়,
“This fighter can serve at any army, at any place, at any condition, of the whole world”.
“এই যোদ্ধা বিশ্বের যে কোণ জায়গায়, যে কোণ সেনা বাহিনীর সাথে যে কোণ অবস্থায় যুদ্ধ করতে সক্ষম।”
পাকিস্তান আর্মিতে থাকাকালে তার অসাধারন সাহসিকতার কথা ছড়িয়ে পড়ে।তার সম্পর্কে বলা হত, "আ লিজেন্ট ইন দ্য হিস্ট্রি অভ কামান্ডো ট্রেনিং। ...আ ম্যান ক্যান নট বী লাইক হিম। হী ইজ আ সুপার, এক্সেপশনাল'।"
২৫শে মার্চ ১৯৭১ সাল। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েটায়, স্কুল অব ইনফেন্ট্রি এন্ড টেক্টীক্সে সিনিয়র টেকনিক্যল কোরে অংশ নিচ্ছিলেন।২৬ শে মার্চ একজন পাঞ্জাবি অফিসার শেখ মুজিব সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করায়,ফুশে উঠে বীরের রক্ত। প্রতিবাদ করায় তাকে বন্দি করা হয়।পশ্চিম পাকিস্তান আর্মি, পশ্চিম পাকিস্তানী ক্যন্টর্মেন্ট বন্দি করে রাখতে পারে নি তাকে। কমান্ডো বলে কথা। দেশের প্রয়োজনের সময় কমান্ডো ট্রেনিং কাজে লাগাতে না পারার জন্য তিনি কমান্ডো হন নি। কয়েক বার পালানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলেও জুলাই মাসে তিনি, এবটা বাদ দিয়ে ভারতের দেবী গড় সিমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মুক্তি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। সেই সময় আরও অনেক বাঙ্গালী অফিসার বন্দি ছিলেন পাকিস্তানে। আমাদের বিশ্ব বেহায়া হু মু এরশাদ সাহেবও ছিলেন। বেচারা পালিয়ে আসতে পারেন নি। ছিলেন “কর্নেল ইউসুপ হায়দার”, উল্লেখ যোগ্য কেউ নন, কিন্তু নাম টা মনে রাখুন। আরও একজন বাঙ্গালী কমান্ডো ছিলেন, মেজর আনোয়ার। “সেবা” প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হওয়া তার সেই সময়ের আত্বজিবনি মূলক একটি বই পড়েছিলাম অনেক আগে। তখন স্কুলে পড়তাম। বইয়ের নাম “হেল কমান্ডো”। সেখানে মেজর আনোয়ার লিখেছিলেন, ““আমার(আনয়ার-লেখক) পুনরায় স্ব-ইচ্ছায় কমান্ডো ট্রেনিং এ যোগ দেয়ায় তিনি খুশি হয়ে বলেছিলেন, “বাঙ্গালী হয়ে দ্বিতীয় বার কমান্ডো ট্রেনিং এ এসেছো দেখে খুশি হলাম, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে প্রয়োজন পড়বে”। আমি (আনোয়ার) অবাক হয়ে বলেছিলাম, “স্যর দেশ তো স্বাধীন”, তিনি কট মট করে তাকিয়ে বললেন, “এটা আমাদের দেশ নয়””।এহেন দেশ প্রেমি বাঙ্গালী বীর কে বন্দি রাখার সাধ্য পাকিস্তান ক্যন্টর্মেন্ট এর ছিল না।
মুক্তি যুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে সেক্টর কমান্ডার হিসাবে যোগ দেন। অথবা বলা যায় স্বপরিবারে যোগ দেন। দুই বোন সহ পাচ ভাই একই সেক্টরে, কেউ নিয়মিত বাহিনীর সাথে কেউ গেরিলা বাহিনীর সাথে মুক্তি যুদ্ধে অংশ নেন। ১৪ ই নভেম্বর ছিল তার ৩৩ তম জন্ম দিন। সে দিনই, কামাল্পুর আক্রমনে পাকিস্তানী শেলের আঘাতে বাম পা হারান। সমগ্র মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব পুর্ন অবদাণের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভুশিত হন। যুদ্ধের মধ্যেই স্বাধীন বাংলা সরকার তাকে লেঃ কর্নেলে উন্নিত করে ।বিজয়ের পর, ভারতের পুনা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে নকল পা লাগিয়ে দেশে ফেরেন। বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনির প্রথম এডজুজেন্ড জেনারেল করে।
নাম তার লেঃ কর্নেল তাহের।
কিন্তু পরবর্তিতে বঙ্গ বন্ধু সরকারের সাথে মতানৈক্য দেখা দিলে কুমিল্লা ক্যনট্ররমেন্টে কর্মরত থাকা অবস্থায় পদত্যগ করে জাসদে যোগ দান করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা কাণ্ডের পর,মুস্তাক সরকার এবং পরবর্তিতে খালেদ মুশাররফের অভ্যুথানের পর তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয় যার ফল সরূপ ক্ষমতায় আসে জিয়াউর রহমান। “বঙ্গ বন্ধু সরকারের সাথে মতানৈক্য” এটা কে অনেকে একটু অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চায় বলে বলছি, এই মতানৈক্য এমন পর্যায় যায় নি যে ব্যক্তি গত ভাবে তাহের, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু কামনা করবেন। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে কর্নেল তাহের বঙ্গ বন্ধুকে একটি উৎপাদনক্ষম সেনাবাহিনী গঠনের রুপ রেখা দেন। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব তার সেই সপ্নের রুপ রেখা গ্রহণ করেন নি বলে অভিমানে তিনি অবসর নেন।
জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে, ২৪ শে নভেম্বর ১৯৭৫ সালে, এস এম হল থেকে গ্রেফতার হন তাহের। ১৭ জুলাই ১৯৭৬ সালে, সামরিক আদালতে তাহেরকে মৃত্যু দণ্ড দেয়া হয়। ২১ শে জুলাই তা কার্যকর করা হয়।
কি? থমকে গেলেন? অকুত ভয় বীর মুক্তি যোদ্ধার এমন সমাপ্তি আশা করেন নি তো?
না সমাপ্তি নয়।সমাপ্তি হতে পারে না। এ তো কেবল শুরু। মৃত্যুকে জয় করে বেচে থাকার শুরু। (শানে নাযুলঃ “মৃত্যুকে জয়” কথাটা রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তার পরেও যদি কেউ বুঝতে চেষ্টা করেন, এটা কুরআনের আয়াত,”জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে”=সুরা আন-কাবুত-৫৭, এর পরিপন্থি তাহলে আরও বিশদ ব্যখ্যা আলাদা ভাবে দেয়া যাবে)
কিন্তু দোষ কি ছিল তার। কি মামলায় ফাসির রায় দিয়েছিলো সামরিক আদালত?
দেশ দ্রোহী। সরকার উৎখাতের চেষ্টা। যেখানে দেশে তিন দিন কোণ সরকারই ছিল না। সেই না থাকা সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করার চেষ্টায় বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত, পৃথিবীর যে কোণ সামরিক বাহিনীর সাথে কাজ করার যোগ্যতা সম্পন্ন এক জন বাঙ্গালী কমান্ডো, যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধা দেশ দ্রোহী মামলায় ফাসির শাস্তি পেলেন । তার বিচার করার জন্য গঠিত সামরিক ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যন হওয়ার প্রস্তাবে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত কোণ মুক্তি যোদ্ধা রাজি হন নি। শেষে রাজি হয়েছিলেন “কর্নেল ইউসুপ হায়দার”। সেই “কর্নেল ইউসুপ হায়দার” যারা দেশের বিপদে মুক্তি যুদ্ধে যোগ না দিয়ে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসাতে না পারার অজুহাতে পাকি বেতন নিয়ে নয় মাস আরামে কাটিয়ে মুখে কৃত্রিম বেদনা ঝুলিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন (বঙ্গ বন্ধু হত্যা কাণ্ডে এই ধরনের মানুষ গুলোই অগ্রনি ভুমিকা পালন করেন) । বিচার চলা কালে তার ঔদ্ধত্য পুর্ন আচরণ দেখে তাহের চরম ক্রোধে ভর্তসনা করে বলেছিলেন, “আপনি তো মুক্তি যুদ্ধ ই করেন নি, একজন মুক্তি যোদ্ধার জন্য দেশ দ্রোহী অপবাদের লজ্জা আপনি কিভাবে উপলব্ধি করবেন? আপনাদের কোণ অধিকার নেই আমার বিচার করার।”
সেই গোপন বিচারে ফাঁসির রায় পড়ে শোনায় বিচারক। তাহেরের ফাঁসি আর বাকি দের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড সাথে জরিমানা। সাথে এও উল্লিখিত হয় বাকিরা সবাই মুক্তি যোদ্ধা হওয়ার কারনে তাদের শাস্তি কিছুটা হাল্কা করে যাবজ্জিবন করা হোল। অথচ এই যুক্তি তে তাহের সবার আগেই রেহাই পান।
“কনডেম্বড সেলে শুয়ে তার লিখা চিঠি তার স্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে প্রকাশ করা হয়। তারই কিছু অংশ হুবহু তুলে দিলাম।

“ফাসির আসামিদের নির্ধারিত জায়গা আট নম্বর সেলে আমাকে নিয়ে আসা হয়।পাশের তিনটি সেলে আরও তিন জন ফাসির আসামি।ছোট্ট সেল টি ভালই বেশ পরিষ্কার। মৃত্যুর মুখমুখি দাড়িয়ে যখন জীবনের দিকে তাকাই, তাতে লজ্জার তো কিছু নেই,আমার জীবনের নানা ঘটনা আমাকে আমার জাতির সাথে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।এর মত বড় সুখ বড় আনন্দ আর কি হতে পারে? নিতু জিশু ও নিতুর কথা(উনার ছেলে মেয়ে), সবার কথা মনে পড়ে।তাদের জন্য অর্থ সম্পদ কিছুই আমি রেখে যাইনি ( মৃত্যু দন্ডের সাথে তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়)।কিন্তু আমার সমগ্র জাতি রয়েছে তাদের জন্য।আমরা দেখেছি শত সহস্র উলঙ্গ মা ও ভালবাসা বঞ্চিত শিশু। তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় আমরা গড়তে চেয়েছি।বাঙ্গালী জাতির জন্য উদ্ভাশিত সূর্যের আর কত দেরি? না আর দেরি নেই। সুর্য্য উঠলো বলে।এ দেশ সৃষ্টির জন্য আমি রক্ত দিয়েছি।সেই সুর্যের জন্য আমি প্রাণ দেব। যা আমার জাতিকে আলোকিত করবে, উজ্জীবিত করবে।এর চাইতে বড় পুরস্কার আমার জন্য আর কি হতে পারে?আমাকে কেউ হত্যা করতে পারে না।আমি আমার সমস্ত জাতির মধ্যে প্রকাশিত।আমাকে হত্যা করতে হলে সমগ্র জাতিকে হত্যা করতে হবে।কোন শক্তি তা করতে পারে!? কেউ পারবে না।
আজকে পত্রিকায় এল। আমার মৃত্যুদণ্ড ও অন্যান্যদের বিভিন্ন শাস্তির খবর ছাপা হয়েছে প্রথম পাতায়। মামলার যা বিব রন প্রকাশ করা হয়েছে তা স্মপুর্নভাবে মিথ্যা। রাজ সাক্ষিদের জবান বন্দিতে প্রকাশ পেয়েছে আমার নেতৃত্বে ৭ ই নভেম্বর সিপাহি বিপ্লব ঘটে।আমার নির্দেশে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়। আমার দ্বারা বর্তমান সরকার গঠন হয়। সমগ্র মামলায় কাদেরিয়া বাহিনীর কোণ উল্লেখই ছিল না। এডভোকেট আতাউর রহমান,জিল্মত আলী ও অন্যান্য যারা উপস্থিত ছিলেন তারা যেন এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করেন ও সমগ্র মামলাটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। আমি মৃত্যুর জন্য ভয় পাই না। কিন্তু বিশ্বাস ঘাতক, চক্রান্ত কারী জিয়া (জিয়াউর রহমান)আমাকে জন গনের সামনে হেয় করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। আতাউর রহমান ও অন্যান্যদেরকে বলবে সত্য প্রকাশ তাদের নৈতিক দায়িত্ব।এই দ্বায়িত্ব পালনে যদি তারা ব্যর্থ হন তবে ইতিহাস তাদের কে ক্ষমা করবে না। তোমরা আমার অনেক শ্রদ্ধা ভালবাসা আর আদর নিও।বিচার ঘরে বসে জিয়া (তাহেরের সাথে গ্রেফতার হওয়া তার সহযোগী) অনেক কবিতা লিখে। তারই একটি অংশ,
“জন্মেছি সারা দেশ টাকে কাপিয়ে তুলতে, কাপিয়ে দিলাম।
জন্মেছি তোদের শোষণের হাত দুটো ভাঙ্গবো বলে, ভেঙ্গে দিলাম।
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করবো বলে, করেই গেলাম।
জন্ম আর মৃত্যুর দুটি বিশাল পাথর, রেখে গেলাম।
পাথরের নিচে, শোষক আর শাসকের, কবর দিলাম।
পৃথিবী, অবশেষে, এবারের মত, বিদায় নিলাম।”
তোমাদের তাহের।

যে রাতে তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করার কথা, সেদিন বিকালে তার পুরো পরিবার কে দির্ঘ ছয় মাস পর দেখা করার অনুমতি দেয়া হয় কারাগারে তার সাথে দেখা করতে। কিন্তু তাদের জানানো হয় নি, ফাসির কথা। তাহেরের স্ত্রীর ভাষ্যআনুসারে, তার মা বাবা সাথে স্ত্রী দেখা করতে যান কারাগারে। তাদের কে দেখে উচ্ছাসিত হয়ে উঠেন তিনি।পরিষ্কার সেলের মেঝেতে পরিপাটি হয়ে বসে সেলের বাইরে তার পরিবারের সদস্য দের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করতে অনুরধ করেন জেলার সাহেব কে। চেয়ারে বসলে পরিবারের সাথে মেতে উঠেন হাসি ঠাট্টায়, জেলে ঘটিত যত মজার মজার ঘটনা নিয়ে। তার সাথে সাথে হেসে ওঠে গোটা পরিবার। ঘুণাক্ষরেও কেউ আন্দাজ করতে পারেন নি তার মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করা হবে আজ রাতে। এক পর্যায়ে জেলার সময় শেষের তাড়া দিলে তিনি তার স্ত্রীর সাথে একান্তে কিছুক্ষন সময় কাটাতে চান। স্ত্রী ছাড়া সবাই
হাসি মুখে বিদায় নেয়। বিদায় কালে বাবা মা কে বলেন, “আবার দেখা হবে।”
স্ত্রীর সাথে কথা বলা শেষ করে তার হাতে তুলে দেন এই চিঠিটি।

ডেথ ওয়ারেন্ট ইস্যু করার মাত্র ৩ দিনের মাথায় তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। অথচ জেল কোড অনুযায়ী ডেথ ওয়ারেন্ট ইস্যুর ২১ দিন এর আগে বা ২৮ দিন এর পরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিধান নাই।
‘সন্ধ্যায় তাঁকে তওবা পড়াতে মৌলভি সাহেব আসেন। তিনি বলেন,“কেন আমি তওবা করবো? তোমাদের পৃথিবীর পাপ আমাকে স্পর্শ করেনি।” ২০ জুলাই ভোররাতে (২১ জুলাই) তিনটার দিকে জেলার ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি তাঁকে অবহিত করেন।কিছুক্ষন সময় পাওয়া যাবে জেনে বিকালে স্ত্রী র নিয়ে আসা আম কাটেন। নিজে খান, তাকে নিতে আসা সেন্ট্রিদের খাওয়ান। তারপর এক কাপ চা খান। তার স্বাভাবিক আচরণ সেন্ট্রিদের হতবাক করে দেয়। চা শেষ করে উঠে দাড়িয়ে বলেন, “চলো আমি তৈরি”। ওই সময় কর্নেল তাহের তাঁর নিজের লেখা কনডেম সেলে থাকা কবিতাটি ও দুটি পাইপ (সিগেরেটের) তাঁর বড় ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিতে বলেন।দণ্ড কার্যকরের সময় উপস্থিত তত্কালীন ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ফজলুর রহমানকে বলেন,“দেখেন রশি ঠিক আছে কি না, ভেজলিন দেওয়া হয়েছে কি না?” গ্যালোতে (ফাঁসির মঞ্চ) নিয়ে যাওয়ার সময় তাহের বলেন, আমি মাস্ক (মুখোশ) পরে যেতে চাই না।ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ফজলুর রহমান বলেন, “আইনে আছে মাস্ক পড়ে যেতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।”
খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় দৃপ্ত পায়ে ফাসির মঞ্চে উঠলেন।
জেলার রুমাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। রুমাল ছেড়ে দেওয়ার পর রশি টান দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টার মতো রশিটা ঝুলতে থাকে। ঠিক আধা ঘণ্টা পড় রশিটা স্থির হয়ে যায়। এরপর সিভিল সার্জেন মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ফাসির মঞ্চে তার শেষ কথা ছিল,
“Long Live My Countrymen.”
বীরের বীরোচিত বিদায়।
মনে পরে যায় মেজর আনোয়ার বইতে উল্লেখিত একটি বাক্য,
“Once a Comando, always a Comando”
আমি জানি না কত টুকু মনের জোর থাকলে একজন মানুষ তার মৃত্যু নিশ্চিত যেনেও তার পিতা মাতা কে শেষ বার দেখার পরও হাসি মুখে বলতে পারে, “আবার দেখা হবে”। আমি জানি না কতটুকু মনের জোর থাকলে ফাসির আগ মুহির্তে একটি মানুষ আম কেটে খেতে পারে!। জানতে চাওয়ার মত মনের জোরও আমার নেই। আমি কারাগারের দেখার ঘরে, তারের ফাক দিয়ে পিতার উদ্ভ্রান্ত চেহারা দেখে, হাউ মাউ করে কেদে ওঠা সাধারণ মামলায় এক বছর কাস্টডি খাটা সাধারণ বাংলাদেশী নাগরিক। আমি জানি না কিভাবে কারাগারে আবেককে গলা টিপে ধরে মুখে ঝোলাতে হয় অভয়ের হাসি। শুধু এত টুকু জানি বা উপলব্ধি করতে পারি, লেঃ কর্নেল তাহেরদের মত বীরেরা বাংলার ঘরে জন্মেছিলেন বলেই আজ বাংলা ভাষায় লিখতে পারছি। নাহলে সারা জীবন দুলে দুলে মুখস্ত করতে হত, “এক কুত্তা মিট্টী মে লেয়টা হায়”।
আপনি আস্তিক বা নাস্তিক হতে পারেন।হতে পারেন মুজিব সেনা, জিয়ার সৈনিক, চে গুয়েভারার ভক্ত অথবা ইসলামী ছাত্র সেনা। হতে পারেন সাধারণ মানুষ, আলেম অথবা জালেম, আপনি যে মতবাদেরই হওন না কেন সত্য আপনাকে মানতেই হবে। নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করতেই হবে, একজন যোদ্ধার যোগ্য সম্মান তাকে দিতেই হবে।
তাহের নিশ্চিত ছিলেন তার জাতি তাকে ভুলবে না।তার মৃত্যু আলোকিত করবে বাংলার অস্তগামি সুর্যকে, উজ্জীবিত করবে নতুন প্রজন্মকে।
কিন্তু তিনি কি জানতেন, এমনও দিন আসবে বাংলাদেশে, প্রজন্মের কিছু অংশকে “আলোকিত” করবে রাজাকার “আব্দুল কাদের মোল্লাহর” শাহাদাআত!!?
https://www.youtube.com/watch?v=P9Pug_ikfeg

লেখাটি তাদের জন্য। যারা দুখ্যে ভারাক্রান্ত হয়ে নাকের শিন্নি চোখের পানি এক করে হাহাকার করেন রাজাকারের মৃত্যুদন্ডে। তাদের জন্য যারা স্বপ্ন দেখে আমার প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মোলাকাত করছেন “রাজাকার কাদের মল্লাহ”র সাথে। তাদের জন্য যারা পরবর্তি প্রজন্মকে শেখাতে চায় রাজাকার এবং মুক্তি যোদ্ধা দুজনেই দেশপ্রেমিক, সমান মর্যাদার যোগ্য।(“জীবনে যা দেখলাম” ১ম খণ্ড ---গোলাম আজম, আট খণ্ডের এই জীবনী গ্রন্থ গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ মূলক একটা লিখা শুরু করেছিলাম, কিন্তু অত্যাধিক বমি হওয়ার দরুন দ্রুত লিখে শেষ করতে পারছি না।)
আমাকে উজ্জীবিত করে মুক্তি যোদ্ধার আত্ব ত্যগ, তোমাদের উজ্জীবিত করে রাজাকারের শাহাদাত। তাই আমাকে মুক্তি যুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞা বা ব্যখ্যা অন্তত তোমরা বোঝাতে এসো না। আর, তোমাদের কাছ থেকে যদি চেতনার এই বিকৃত ব্যখ্যা প্রজন্ম ধারন করতে শেখে তবে “বীর উত্তম লেঃ কর্নেল তাহের” এর আত্ব ত্যগ বৃথা হয়ে যাবে।যোদ্ধাদের দ্বায়িত্ব তারা পালন করেছেন, পালা এবার আমাদের।মুখামুখি দাড়িয়ে আছে শকুনের এক পাল এতিম নাতি পুতি। তাদের দাদুরাও আজ উজ্জীবিত পশ্চিমে।
তো!! খেলা হপ্পে এ এ এ এ এ……...।
https://youtu.be/DB-HMIwajQ8

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: আমার নতুন গল্প...।
সময়ের প্রয়োজন পর্ব ১
দয়া করে একবার ঘুরে আসবেন ।
লিংক...
http://www.somewhereinblog.net/blog/rkrokon143/30242516

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.