নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ ও বিশ্ব

বাংলাদেশের সকল মানুষকে আমি ভালবাসি ।।।

জাফরুল৯৩

স্বার্থপর না !!!

জাফরুল৯৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্ব বৈধ ও সংবিধানসম্মত

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:০১

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের অভিমত

বঙ্গবন্ধুর প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্ব বৈধ ও সংবিধানসম্মত।

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইনসম্মতভাবেই ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। এর আগের দিন হেয়ার রোডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার বদলে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। মুজিবনগর সরকারের ঘনিষ্ঠ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্টজনরা এসব তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি ফ্লাইটে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পাঠাতে রাজি ছিল না তখনকার পাকিস্তান সরকার। তারা তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে পাকিস্তান সরকারের তৈরি করা পাসপোর্ট ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুকে দেশে ফিরতে হয়েছিল।

লন্ডনে গত মঙ্গলবার এক সেমিনারে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দাবি করেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ‘অবৈধ’ ছিল। তারেক বলেন, পাকিস্তান থেকে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে ফেরার সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। তারেক রহমানের এমন বক্তব্যের পর দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রধান উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সংবিধানের প্রণেতা ও বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরেন। ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকলেন তাজউদ্দীন আহমদের ৩৪ নম্বর হেয়ার রোডের বাসায়। আমি ও ড. কামাল হোসেন একসঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত হই। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলো রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করার। ওই সময় বৈঠকে আলোচনা হয় যে যুদ্ধকালে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের প্রয়োজন ছিল। যেহেতু দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাই সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করা উচিত। মন্ত্রিসভা বৈঠকের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে দেশের বিচারব্যবস্থা চালু করা। বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, পাশের রুমে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সাহেব রয়েছেন। ওনার সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁকে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন।’ আমীর-উল ইসলাম আরো বলেন, ‘ওই দিন (১১ জানুয়ারি) প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার ১৯৭২ প্রণয়ন করা হয়। তা ছাপানোর পর প্রকাশ করা হলো এবং ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতিসহ অন্যদের শপথের ব্যবস্থা করা হলো। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বঙ্গবন্ধু পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যকে শপথ পাঠ করালেন। এ বিষয়গুলো একটি সহজ ইতিহাসের অংশ। এসব ইতিহাসের মধ্যে কোনো রকম সুচ ফুটানোর জায়গা নেই। কেউ সুচ ফুটানোর চেষ্টা করলে তা ভোঁতা হয়ে যাবে।’

ব্যারিস্টার আমীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর দায়িত্ব নেওয়া সম্পূর্ণভাবে সংবিধানসম্মত। এখনকার সংবিধানেও এটির বৈধতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর দায়িত্ব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে তা হবে সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই লঙ্ঘনের জন্য আইনে আনুষ্ঠানিক শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপপ্রচার করবে তাদের ঘৃণা করার মাধ্যমে জনগণ সবচেয়ে বড় শাস্তি দেবে। একটি মহল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে ঘৃণ্য অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, এটি তাদের মানসিক বিকৃতির বহিঃপ্রকাশ। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসব ঘৃণ্য বক্তব্যের মাধ্যমে জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে।’

‘সাপ্তাহিক’ সাময়িকীতে দেওয়া ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকারের একটি অংশ তুলে ধরে তারেক রহমান মঙ্গলবার লন্ডনে বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার সুযোগ থাকলেও তিনি পাকিস্তানের পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশে ফেরেন।

ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন ড. কামাল হোসেনও। পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার সময় পাকিস্তানের পাসপোর্ট ব্যবহার করার কারণ সম্পর্কে ‘সাপ্তাহিক’ সাময়িকীতে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারেই ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘দুই দিন পরে ওদের (পাকিস্তানের) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ এলেন। তিনি পুরনো আইসিএস অফিসার। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সময় গুলি চালানো হয়েছে তাঁর দায়িত্বে। তিনি এসে বলছেন যে দেখো, এভাবে তো ফ্লাই করা যাবে না। তোমাদের অন্য রুটে যেতে হবে। নিরপেক্ষ কোনো দেশ হয়ে তোমাদের নিতে চাই। সেটা ইরান হতে পারে। আমরা বললাম, না, ইরান তো নিরপেক্ষ না। ইরান তো পাকিস্তানের পক্ষে। তুরস্ক? না, এটাও না। আমি ওদেরকে বলা শুরু করলাম যে না, নিরপেক্ষ মানে যেমন ভিয়েনা, জেনেভা এসব দেশ। তিনি পরের দিন এসে বললেন, ঠিক আছে লন্ডন হলে কী রকম হয়? বঙ্গবন্ধু বললেন, এটা তো আমাদের লুফে নেওয়া উচিত। লন্ডনে তো আমাদের একটা নিজস্ব জায়গা। সেখানে এত বাঙালি আছে। রেডিও ও পত্রিকাতে পেয়েছি, ওখানে আবু সাঈদ চৌধুরীকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাঙালি যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত হয়েছেন। এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে। এটা মেনে নাও। ওদেরকে বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি লন্ডনে যাব। ব্যবস্থা করেন। ব্যবস্থার মধ্যে প্রথম যেটা করল, দর্জি পাঠাল। কিছু গরম কাপড় দেওয়া হবে। কারণ তখন তো শীতকাল। তারপর পাকিস্তানি পাসপোর্টের জন্য ছবি তোলা হলো। পাসপোর্ট করা হলো। পাকিস্তানি পাসপোর্ট দিল, কারণ লন্ডনে দেখাতে হবে। দেখলাম যে লন্ডনের ছাপটাও বোধ হয় মারেনি। ওখান থেকে আমরা গেলাম লন্ডনে।’

মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল লোহানী। তারেক রহমানের বক্তব্যকে ‘ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা’ আখ্যা দিয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই পাকিস্তানফেরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সবার জানা ইতিহাসকে এখন উল্টে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। বাঙালি জাতির অধিকার রক্ষা ও স্বাধীনতার জন্য ২৩ বছরের লড়াই সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এখন বই পড়ে তিনি জানার চেষ্টা না করে নিজের মতো করে ইতিহাস বানানোর চেষ্টা করছেন, যা জীবদ্দশায় জিয়াউর রহমান কখনোই করেননি। রাজনীতিবিদদের কথাবার্তা আর আচরণে অনেক সময় নিজের গায়ে কামড় দিয়ে যাচাই করতে হয়, আমরা কি মানুষ আছি, নাকি পশু হয়ে গেছি। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এসব ছেলের কাছ থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনতে হয়, এর আগে মৃত্যু অনেক ভালো ছিল।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তার ইতিহাস নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা তারেক রহমানের নেই। তিনি যেভাবে নিচুমানের মিথ্যাচার ও অসংগতিপূর্ণ কথাবার্তা বলছেন, তা নিয়ে কথা বলা আমার জন্য মর্যাদা হানিকর।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.