![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর। মুসলমানদের জন্য সেদিন ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের খুশীর সাথে যোগ হয়েছিল আরও একটি আনন্দ। তৎকালীন অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে প্রথমবারের মতো আজান ধ্বনিত হলো ইথারে বেতারে। কে ছিল এর প্রথম মুআজ্জিন? কাজী নজরুল ইসলাম।
হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সে প্রবল বৈরী সময়েও ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ থেকে শোনা যেত কুরআন তেলাওয়াত। কে ছিল এর ক্বারী? কাজী নজরুল ইসলাম।
চারিদিকে নতুন নতুন উর্দু কাওয়ালীর মধ্যে নতুন সুরে মাতোয়ারা হল বাঙ্গালী মুসলমানরা। ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে..’ গানটির আবেগ ও আনন্দ আজও ডিঙ্গাতে পারেনি কোন কবি মহাকবির গান।
শত দাঙ্গা আর কাঁদা ছোঁড়াছোড়ির মধ্যেও কী এক অসামান্য সাধনা আর প্রতিভা নিয়ে তিনি লিখে চলেছেন এ ঘুমন্ত মুসলিম জাতির জন্য কত গান, কবিতা। এ সংক্ষেপ লেখায় এর সামান্য বিবরণও সম্ভব নয়।
তার এক অমর সৃষ্টি কাব্যে আমপারা অনুবাদ। এর উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছেন, বাংলার নায়েবে নবী মৌলবী সাহেবানদের দস্ত মোবারকে..। আর ভূমিকার শেষে তিনি লিখেছেন, খাদেমুল ইসলাম- নজরুল ইসলাম।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর আবেগবশঃত হয়ে তিনি একটি শব্দ ব্যবহার করে ফেলেছিলেন, যদিও পরিণতি ও হুকুম না জেনে এসব শব্দ ব্যবহারে স্থান কাল পাত্র ভেদে ফতওয়ার তারতম্য ঘটে, কিন্তু তৎকালের আলেম সমাজ ফতওয়া নিয়ে বিন্দুমাত্র দেরী করলেন না।
শুরু হল ফতওয়ার তির্যক তীরের আঘাত, এমন সংবেদনশীল কবি সত্যিই ব্যথিত হয়েছিলেন এসব বাড়াবাড়ি দেখে। উল্লেখ্য, কবি পরে তার এ শব্দ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু আলেম সমাজ ফতওয়া প্রত্যাহার করেছিলেন কি না জানা যায়নি।
তারা একবারও ভাবলেন না, কবি নজরুল আল্লাহ পাকের তরফ থেকে এ জাতির জন্য এক অমূল্য দান। এর সম্মান ও রক্ষণাবেক্ষণ আমাদেরই করতে হবে। মানুষ হিসেবে কেউই তো ভুলের উর্ধ্বে নয়। কিন্তু সেসব আমাদেরই সামাল দিতে হবে, মায়া ও ভালোবাসা এবং সম্মানের সাথে বুঝাতে হবে।
অপ্রিয় হলেও দুঃখজনক, কবি নজরুল ইসলামের কাছে কেউ এসব সংশোধনের পয়গাম নিয়ে গিয়েছিলেন কিনা, ইতিহাস এ বিষয়ে নীরব।
পাকিস্তানের মহাকবি আল্লাম ইকবাল। তার কবিতা আজও আরব ও অনারবে পঠিত হয়।
এমন গুণী কবিও অজ্ঞতা বশত একটি কবিতা লিখে বসলেন যা মুসলমানদেরকে ব্যথিত করল। পাক ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম যাকে বলা হত ‘ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী’ তিনি ছুটে গেলেন কবির কাছে, তাকে বুঝালেন, তারপর কবি সেসব সংশোধন করলেন।
আর আমাদের বাঙ্গালী আলেম সমাজ! নিছক ফতওয়া দিয়ে কবিকে মুসলমানদের কাছে ঘৃণিত করা আর নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন উদ্যোগ আমরা দেখিনি।
এরকম অসংখ্য হৃদয়জাগানিয়া গান গজল আর হামদ ও নাত, বাংলার তরুণ মুসলমানদের চেতনায় আত্মোপলদ্ধির আগুন ধরালেন যে বিদ্রোহী কবি, সেই তিনিই কি নির্মম আঘাত সয়েছেন বাংলার আলেম ও সাহিত্যিক সমাজ থেকে। নিজেদের গুণীকে নিয়ে আমরা টানা হেঁচড়া করে ছেলেখেলা খেলি, এ যেন আমাদের কপালের লিখন।
কবি নজরুলের বিরুদ্ধে তৎকালের মুসলিম পত্রিকাগুলো যেমন মোহাম্মদী, ইসলাম দর্শন, ছোলতান, বঙ্গনূর, নওবাহার- এরা যেন সর্বাত্মকভাবে কবিকে হেয় ও অপদস্থ করতে জোটবদ্ধ হয়েছিলেন। এ কথা কবি নিজেই বলেছেন, ‘প্রথম গালাগালির ঝড়টা আমার ঘরের দিক অর্থাৎ মুসলমানদের দিক থেকেই এসেছিল এটা অস্বীকার করিনে।’
এক ভাষণে তিনি এও বলেছেন, আপনারা জেনে রাখুন, আল্লাহ ছাড়া আর কিছুর কামনা আমার নেই। ‘লীডার’ হওয়ার লোভ ও দুর্মতি থেকে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। আজ মোল্লা মৌলভী সাহেবদের মুসলমানীর ফখরের কাছে টেকা দায়। কিন্ত তাদের আজ যদি বলি, যে ইসলামের অর্থ আত্মসমর্পণ, আল্লাহ তায়ালার সেই পরম আত্মসমর্পণ কার হয়েছে? আল্লাহে পূর্ণ আত্মসমর্পণ যার হয়েছে, তিনি এই মুহুর্তে এই দুনিয়াকে ফেরদৌসে পরিণত করতে পারেন।’
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের প্রাণের কবি, আমাদের মনন ও চেতনায় তিনিই তো প্রথম ডাক দিয়েছিলেন বিদ্রোহী হতে, কোন শাসকের অন্যায়ের কাছে নয়, মানবতার জন্য জীবনের সব অর্জন- এমনই ছিল কবির জীবনদর্শন।
তার জীবনের অসামান্য কীর্তিসমূহের কথা ভুলে গিয়ে যারা লিপ্ত হয়েছিলেন শুধুই তার আবর্জনা কুড়াতে- কাল কিয়ামতের মাঠে আল্লাহ পাক যে তাদেরকে কবির কাছে গিয়ে তাকে শ্রদ্ধার সাথে বুঝানোর দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না- এর নিশ্চয়তা কে দিবে?
মুজাদ্দিদে আলফে সানী বলেছেন, বাদশাহ আকবর ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম মিলাতে গিয়ে যে তালগোল পাকালেন- আল্লাহ পাক অবশ্যই ঐ সময়ের সব আলেমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসবাদ করবেন, কারণ তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করেনি।
অন্যধর্মের রমনীকে বিয়ে করা থেকে নিয়ে জাতীয় কবির জীবনে কিছু বিচ্যুতি রয়েছে- একমাত্র রাসূল ছাড়া কেউই তো ত্র“টিমুক্ত নন- কিন্ত তাই বলে যেখানে সেখানে ইসলামের নামে এভাবে অপমান ও আঘাত করা বৈধ হয়ে যায়- এর কোন নজির ইসলামে নেই।
ইসলামের মনিষীরা বলে গেছেন, কারো মধ্যে যদি নিরানব্বই ভাগ কুফুরীর কাজও দেখা প্রকাশ পায়, কিন্তু বাকী মাত্র এক ভাগের জন্য হলেও তোমরা তাকে কাফের বলতে যেয়োনা।
পবিত্র কবির ১১৩ তম জন্মবার্ষিকীর সময়ে তার আত্মার জন্য অসংখ্যবার ক্ষমাপ্রার্থনা ও তার মর্যাদা বৃদ্ধির আকুতির সকাতর নিবেদন পেশ করছি তোমার দুয়ারে হে পরম দয়াময়!
২| ২৬ শে মে, ২০১২ রাত ৯:৩৯
শিকদার বলেছেন: তথ্য সূত্র আছে কি? একটা কথা মনে রাখতে হবে, তখন ছিল ব্রিটিশদের সময়, তাই তাদের ষড়যন্ত্রের কথাও মাথায় রাখতে হবে।
ইহুদী ও নাস্তিকেরা আজও ততপর মুসলমান মুসলমানে দন্দ সৃষ্টিতে। তাই ঢালাও ভাবে কাওকে দায়ী করা উচিত নয়। তখন ছিল মুসলমানদের জন্য যুদ্ধের ময়দান।
৩| ২৬ শে মে, ২০১২ রাত ৯:৪০
রাফসান রাফী বলেছেন: "ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও"
৪| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৩০
রাসেল সরকার বলেছেন: কাজী নজরুল ইসলামকে কেবল গায়ের জোরেই নাস্তিক বলা যায় । সমসাময়িককালে তার মতো আস্তিক দ্বিতীয়জন কেউ ছিলেন কিনা তা বলা কঠিন ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে মে, ২০১২ রাত ৯:২৫
আসফি আজাদ বলেছেন: নতুন কিছু তথ্য জানলাম, যা অজানা ছিল। ভালো লাগল। ধন্যবাদ।