![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
সিরিয়া ইস্যুর ভয়াবহতা যেন শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। যতই দিন যাচ্ছে, ততই নিত্য নতুন ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের ভয়াবহ দুঃসংবাদ আসছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অধিকাংশ নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর আশ্রয়শিবিরে। তারপরও কিছু মানুষ রয়ে গিয়েছিলেন সিরিয়ায়। আজ না হয় কাল, কোনো একদিন যুদ্ধ থামবে এবং শান্তি ফিরে আসবে, এ আশায় তারা দিন গুনছেন। যুদ্ধ যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ফেলল ততক্ষণে তাদের ভুল ভেঙেছে সত্য, কিন্তু ততদিনে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত। তবুও না হয় আতঙ্ক কিংবা ঘরবন্দী জীবন সহ্য করা যায়। কিন্তু ক্ষুধা! বিশ্ব এবং মানবাধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার ঘটেছে- যার বিষক্রিয়ায় নিমিষেই হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল। এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর বিশ্ব নেতৃত্ব যখন সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ে সরব হলো, চতুর সিরিয়ার সরকারী বাহিনী তখন অন্য পথ বেছে নিল। একদিকে তারা আন্তর্জাতিক তদন্ত দলকে সিরিয়ায় তাদের কাজ করার সুযোগ করে দিল, অন্যদিকে সিরিয়ার অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গায় অবরুদ্ধ হয়ে থাকা মানুষগুলোর কাছে সব ধরণের এাণসামগ্রী পৌঁছার পথ বন্ধ করে দিল। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সিরিয়ার সর্বত্র ক্ষুধা, দারিদ্র এবং সংঘাতে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর কালোরাত যেন আর শেষ হচ্ছে না।
১৯৫২ সালে ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত আশ্রয়প্রার্থীদেরকে জায়গা দিয়েছিল সিরিয়ার তৎকালীন সরকার। দামেশক থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণে ইয়ারমুক নামক অঞ্চলে একটি সুবিশাল এলাকাজুড়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য ক্যাম্প তৈরি করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে বিদ্রোহ শুরু হলে দামেশকের অধিবাসীরাও ওই ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং এলাকাটিতে তার ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি মানুষ বাস করতে থাকেন।
এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে এবং দুভার্গ্যবশত সেখানেও সরকারী বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের নিক্ষেপ করা কামানের গোলা এসে পড়তে শুরু করে। নিজেদের মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত অসহায় ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যাকাশে বিপর্যয়ের কালো মেঘ যেন আরও ঘন হয়ে এলো। সরকারী বাহিনীর ছোঁড়া কামানের গোলায় বিধ্বস্ত হয়ে যায় পুরো ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘরবাড়ি। রেহাই পায়নি মসজিদ এবং শিশুদের স্কুলও। যেসব ঘরে অসুস্থ মানুষ ছিল, তাদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। ওষুধের অভাবে ইতিমধ্যে সেখানে মৃত্যুবরণ করেছে কয়েক শ অসুস্থ শয্যাশায়ী মানুষ। আর খেলার জন্য মা-বাবার অগোচরে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া শিশু বাচ্চাটির লাশ কিছুক্ষণ পর এখানে ওখানে পড়ে থাকার দৃশ্য যেন এখন গা সওয়া হয়ে গেছে ইয়ারমুক ক্যাম্প ও তার আশেপাশের এলাকায়। এ পর্যন্ত ওই ক্যাম্পে নিহত হয়েছেন অনেক অসংখ্য মানুষ। যাদের বেশির ভাগ নিষ্পাপ শিশু ও অসহায় নারী।
অবস্থার মারাত্মক অবনতি চলছে সা¤প্রতিক দিনগুলোতে। বিশেষ করে ঈদুল আযহার কয়েকদিন আগে থেকে সরকারী বাহিনী ওই ক্যাম্প এবং আশেপাশের অঞ্চলে তাদের আক্রমণ আরও জোরদার করেছে এবং জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপায় উপকরণ সংগ্রহের সব পথ রুদ্ধ করে রেখেছে। ‘রাসায়নিক অস্ত্র’ নিরীক্ষণ ও অপসারণের নাটকে ব্যস্ত সিরিয়ার সরকার এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থার দৌঁড়ঝাপের খবর সংগ্রহে ব্যস্ত সংবাদমাধ্যমের কাছে এই কৌশলী অভিযানের খবর সেভাবে আসছে না।
ওই এলাকায় গত কদিনে নিহতের সংখ্যা ১৩০ ছাড়িয়েছে যাদের অধিকাংশই শিশু এবং কিশোর। অথচ প্রায় ছয় লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের বেসামরিক মানুষগুলোকে কোথাও পালিয়ে যাওয়ার কিংবা আশ্রয় নেয়ার সুযোগও দেয়া হচ্ছে না। একদিকে যে কোনো মুহূর্তে বাড়ির ছাদের ওপর গোলা এসে পড়ার আশঙ্কা অন্যদিকে ক্ষুধা ও পিপাসার অসহনীয় যন্ত্রণা। সবমিলিয়ে ইয়ারমুক অঞ্চলে গত ১১০ দিন ধরে কোনো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে দেয়নি সিরিয়ান আর্মিরা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে যারা পালিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ ও অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা ও দাতাদের পাঠানো সামান্য ত্রাণ হলেও পাচ্ছে এবং কোনোরকম অন্তত গোলাগুলির হাত থেকে নিরাপদে বেঁচে আছেন। কিন্তু দামেশকের কাছাকাছি অবস্থিত এ ইয়ারমুক ক্যাম্পে সেসবের ছিটেফোঁটাও যাচ্ছে না। ফলে সেখানকার নারী এবং শিশুরা ক্ষুধা ও দারিদ্রের সাথে মরণপণ বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন।
বেঁচে থাকার জন্য এ করুণ সংগ্রামের নিদারুণ চিত্র ফুটে ওঠেছে ইয়ারমুক ক্যাম্পের ভেতর অবস্থিত মসজিদ ও মাদরাসার শায়খদের একটি ফতওয়ায়। জামে ফিলিস্তিন মসজিদের ইমাম ও শায়খ মুহাম্মাদ আবুল খায়ের গত সপ্তাহের শুক্রবার জুমুআর বয়ানে প্রদত্ত ফতওয়ায় জানিয়েছেন, ‘এই ক্যাম্পের অভাবগ্রস্ত অধিবাসীদের জন্য চলমান দূরাবস্থা ও সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিড়াল, কুকুর এবং গাধার গোশত খাওয়া বৈধ।’ তার ফতওয়ায় সম্মতি দিয়েছেন ওই অঞ্চলের অন্যান্য আলেমরাও। শায়খ আবুল খায়ের তার ফতওয়ায় উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা যে অবস্থায় পৌঁছেছি, তাতে এসব গ্রহণ না করলে ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার আর কোনো পথ নেই।’ ফতওয়ার খবর পেয়ে ওইদিনই ক্যাম্পের ক্ষুধার্ত মানুষেরা তিনটি কুকুর জবাই করেছে। আলজাজিরা চ্যানেলসহ আরববিশ্বের সবগুলো দৈনিকে এই খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।
সিরিয়ার ওই ফিলিস্তিনি ক্যাম্পে যখন কুকুরগুলো জবাই করা হচ্ছিল, আশেপাশের আরববিশ্বে তখন ঈদুল আযহার মাংস দিয়ে তৈরি নানা রকমের কাবাব খাওয়ার উৎসব চলছে। আজকের আধুনিক যুগে এমন লজ্জাজনক হৃদয়বিদারক ফতওয়ার খবরে অবাক হওয়ার কারণ নেই। কারণ, দামেশক নগরীতে এমন ফতওয়া এটাই প্রথম হলেও এর আগে ‘হিমস’শহরেও এমন ফতওয়া দেয়া হয়েছে সেখানকার আলেমদের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশে বসে আপনি যখন এ হৃদয়বিদারক লেখাটি পড়ছেন, তখন ইতিহাসের জন্মভূমি সুদূর সিরিয়ায় এখানে ওখানে ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে আরও অসংখ্য শিশু এবং অসহায় মানুষ। বন্দুক কিংবা কামানের গোলায় মৃত্যুর যন্ত্রণা ক্ষণিকের, কিন্তু ক্ষুধার যন্ত্রণা! পিপাসার্ত এবং ক্ষুধার্ত পুষ্টিহীন একটি দেহ শুধু খাদ্যের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে, কথা বলার শক্তি নেই, চোখের পলক ফেলবার মতোও ক্ষমতা নেই, হাত পা অচল হয়ে পড়ে আছে, ক্ষুধার আগুনে ওই বাচ্চাটির ভেতর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে- অথচ সে তা এই বধির পৃথিবীকে জানিয়ে যেতে পারছে না তার আর্তচিৎকারে- ওইটুকু শক্তিও যে তার অবশিষ্ট নেই। একই আকাশতলে কোথাও অতি উদরপূর্তিতে বদহজম হচ্ছে, আর কোথাও সামান্য খাবারের অভাবে ছটফট করে মৃত্যুর জন্য অধীর হয়ে আছে কত অগণন মানুষ- ভাবা যায়!
সংকলন ও রচনা- তামীম রায়হান
সূত্র- আলজাজিরা, আশশারক আলআওসাত, নিউজআরাবিয়া অবলম্বনে
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১
মৌন ভাষা বলেছেন: এমন খবর এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। হায়! আরব বিশ্ব যদি আজ ইউরোপ আমেরিকার গোলামে পরিণত না হত!!!
তবে বিশ্বে এমন খবর শুনতে হত না।
আমরাও তো ঘুমিয়েই আছি।
যেখানে মুসলিম বিশ্বেরই আজ দূরাবস্থা, সেখানে শুধু শুধু বিশ্ব মোড়লদের দোষ দিয়ে লাভ কি ?
৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭
রাফসান বড়ুয়া বলেছেন: অনলাইনে একটি যথোপযুক্ত ফান্ড করা হলে ভাল হত।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপনি যখন এ হৃদয়বিদারক লেখাটি পড়ছেন, তখন ইতিহাসের জন্মভূমি সুদূর সিরিয়ায় এখানে ওখানে ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে আরও অসংখ্য শিশু এবং অসহায় মানুষ। বন্দুক কিংবা কামানের গোলায় মৃত্যুর যন্ত্রণা ক্ষণিকের, কিন্তু ক্ষুধার যন্ত্রণা! পিপাসার্ত এবং ক্ষুধার্ত পুষ্টিহীন একটি দেহ শুধু খাদ্যের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে, কথা বলার শক্তি নেই, চোখের পলক ফেলবার মতোও ক্ষমতা নেই, হাত পা অচল হয়ে পড়ে আছে, ক্ষুধার আগুনে ওই বাচ্চাটির ভেতর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে- অথচ সে তা এই বধির পৃথিবীকে জানিয়ে যেতে পারছে না তার আর্তচিৎকারে- ওইটুকু শক্তিও যে তার অবশিষ্ট নেই। একই আকাশতলে কোথাও অতি উদরপূর্তিতে বদহজম হচ্ছে, আর কোথাও সামান্য খাবারের অভাবে ছটফট করে মৃত্যুর জন্য অধীর হয়ে আছে কত অগণন মানুষ- ভাবা যায়!
শয়তান সউদদের ধ্বংস হোক। ইসলামের নামে লেবাসে ইহুদীদের দোসর সউদ যত নষ্টের গোড়া। তারা মিশরে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতে বিলিয়ন ডলার ঘুষ দিতে পারে- মানুষ নামের অসহায় জীবগুলোর জন্য তাদের দয়া হয় না।
ধিক। শতধিক।