নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

,

বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা

জাহাঙ্গীর.আলম

..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জাহাঙ্গীর.আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-১

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৬

মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-১



বাংলা সাহিত্যে সনেটের আদলে চতুর্দ্দশপদী কবিতার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)৷ তাঁর চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্বান্তরে দেয়ার চেষ্টা করব সাথে কিছু অর্থও থাকবে ৷ উৎসাহীরা সবাই সাথে থাকবেন আশা করি ৷





উপক্রম

যথাবিধি বন্দি কবি, আনন্দে আসরে,

কহে, ষোড় করি কর, গৌড় সুভাজনে;

সেই আমি, ডুবি পূর্ব্বে ভারত-সাগরে১,

তুলিল যে তিলোত্তমা-মুকতা যৌবনে;

কবি-গুরু বাল্মীকির প্রসাদে তৎপরে,

গম্ভীরে বাজায়ে বীণা, গাইল, কেমনে,

নাশিলা সুমিত্রা-পুত্র, লঙ্কার সমরে,

দেব-দৈত্য-নরাতঙ্ক রক্ষেন্দ্র-নন্দনে২;

কল্পনা দূতীর সাথে ভ্রমি ব্রজ-ধামে

শুনিল যে গোপিনীর হাহাকার ধ্বনি,

(বিরহে বিহ্বলা বালা হারা হয়ে শ্যামে৩

বিরহে-লেখন পরে লিখিল লেখনী

যার,বীর জায়া-পক্ষে বীর পতি-গ্রামে৪

সেই আমি,শুন, যত গৌড়-চূড়ামণি!



ইতালী, বিখ্যাত দেশ, কাব্যের কানন,

বহুবিধ পিক যথা গায় মধুস্বরে,

সঙ্গীত-সুধার রস করি বরিষণ,

বসন্ত আমোদে মন পুরি নিরন্তরে;

সে দেশে জনম পূর্ব্বে করিলা গ্রহণ

ফ্রাঞ্চিস্কো পেতরাকা৫ কবি; বাক্ দেবীর বরে

বড়ই যশস্বী সাধু, কবি-কূল-ধন,

রসনা অমৃতে সিক্ত, স্বর্ণ বীণা করে ৷

কাব্যের খনিতে পেয়ে এই ক্ষুদ্র মণি,

স্বমন্দিরে প্রদানিলা বাণীর চরণে

কবীন্দ্র; প্রসন্নভাবে গ্রহিলা জননী

(মনোনীত বর দিয়া) এ উপকরণে ৷

ভারতে ভারতী-পদ উপযুক্ত গণি,

উপহার রূপে আজি অরপি রতনে ৷৷৬





বঙ্গভাষা

হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন;

তা সবে, (অবোধ আমি) অবহেলা করি,

পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ

পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচারি ৷

কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি!

অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ,

মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;

কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন !

স্বপ্নে তব কুললক্ষী কয়ে দিলা পরে

“ওরে বাছা মাতৃ-কোষে রতনের রাজি,

যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!”

পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে

মাতৃ-ভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে ৷৷



কমলে কামিনী

কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে

কালিদহে ৷ বসি বামা শতদল-দলে

(নিশীথে চন্দ্রিমা যথা সরসীর জলে

মনোহরা ৷) বাম করে সাপটি হেলনে

গজেশে, গ্রসিছে তারে উগরি সঘনে ৷

গুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ অন্ধ পরিমলে,

বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে ৷

কার না ভোলে রে মনঃ এ হেন ছলনে !

কবিতা-পঙ্কজ-রবি, শ্রীকবিকঙ্কণ,

ধন্য তুমি বঙ্গভূমে !৭ যশঃ-সুধাদানে

অমর করিলা তোমা অমরকারিণী

বাগ্দেবী ! ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ,

এবে কে না পূজে তোমা, মজি তব গানে?

বঙ্গ-হৃদ-হ্র্রদে চন্ডী কমলে কামিনী ৷৷



অন্নপূর্ণার ঝাঁপি

মোহিনী-রূপসী-বেশে ঝাঁপি কাঁখে করি,

পশিছেন, ভবানন্দ, দেখ তব ঘরে

অন্নদা!৮ বহিছে শূন্যে সঙ্গীত-লহরী,

অদৃশ্যে অপ্সরাচয় নাচিছে অম্বরে ৷

দেবীর প্রসাদে তোমা রাজপদে বরি,

রাজাসন, রাজছত্র, দিবেন সত্বরে

রাজলক্ষ্মী; ধন-স্রোতে তব ভাগ্যতরি

ভাসিবে অনেক দিন, জননীর বরে ৷

কিন্তু চিরস্থায়ী অর্থ নহে এ সংসারে;

চঞ্চলা ধনদা রমা, ধনও চঞ্চল;

তবু কি সংশয় তব জিজ্ঞাসি তোমারে ?

তব বংশ-যশ-ঝাঁপি অন্নদামঙ্গল

যতনে রাখিবে বঙ্গ মনের ভান্ডারে,

রাখে যথা সুধামৃতে চন্দ্রের মন্ডলে ৷৷



কাশীরাম দাস

চন্দ্রচুড়৯ জটাজালে আছিলা যেমতি

জহ্নবী,১০ ভারত-রস ঋষি দ্বৈপায়ন,

ঢালি সংস্কৃত-হ্র্রদে রাখিলা তেমতি;

তৃষ্ণায় আকুল বঙ্গ করিত রোদন ৷

কঠোরে গঙ্গায় পুজি ভগীরথ ব্রতী,

(সুধন্য তাপস ভবে, নর-কুল-ধন!)

সগর-বংশের যথা সাধিলা মুকতি,

পবিত্রিলা আনি মায়ে, এ তিন ভুবন;

সেই রূপে ভাষা-পথ খননি স্ববলে,

ভারত-রসের স্রোতঃ আনিয়াছ তুমি

জুড়াতে গৌড়ের তৃষা সে বিমল জলে !

নারিবে শোধিতে ধার কভু গৌড়ভূমি ৷

মহাভারতের কথা অমৃত-সমান ৷

হে কাশি, কবীশদলে তুমি পূণ্যবান্ ৷৷





কৃত্তিবাস

জনক জননী তব দিলা শুভ ক্ষণে

কৃত্তিবাস নাম তোমা! কীর্ত্তির বসতি

সতত তোমার নামে সুবঙ্গ-ভবনে,

কোকিলের কন্ঠে যথা স্বর, কবিপতি,

নয়নরঞ্জন-রূপ কুসুম যৌবনে,

রশ্মি মাণিকের দেহে! আপনি ভারতী,

বুঝি কয়ে দিলা নাম নিশার স্বপনে,

পূর্ব্ব-জনমের তব স্মরি হে ভকতি !

পবন-নন্দন হনু, লঙ্ঘি ভীমবলে

সাগর, ঢালিয়া যথা রাঘবের কানে

সীতার বারতা-রূপ সঙ্গীত-লহরী;১১

তেমতি, যশস্বি, তুমি সুবঙ্গ-মন্ডলে

গাও গো রামের নাম সুমধুর তানে,

কবি পিতা বাল্মীকিকে তপে তুষ্ট করি !



জয়দেব

চল যাই জয়দেব. গোকুল-ভবনে

তব সঙ্গে, যথা রঙ্গে তমালের তলে

শিখিপুচ্ছ-চূড়া শিরে, পীত ধড় গলে

নাচে শ্যাম, বামে রাধা সৌদামিনী ঘনে!১২

না পাই যাদবে যদি, তুমি কুতুহলে

পুরিও নিকুঞ্জরাজী বেণুর স্বননে!

ভুলিবে গোকুল-কুল এ তোমার ছলে,

নাচিবে শিখিনী সুখে, গাবে পিকগণে,

বহিবে সমীর ধীরে সুস্বর-লহরী,

মৃদুতর কলকলে কালিন্দী আপনি

চলিবে! আনন্দে শুনি সে মধুর ধ্বনি,

ধৈরজ ধরি কি রবে; ব্রজের সুন্দরী ?

মাধবের রব, কবি, ও তব বদনে,

কে আছে ভারতে ভক্ত নাহি ভাবি মনে ?



কালিদাস

কবিতা-নিকুঞ্জে তুমি পিককুল-পতি !

কার গো না মজে মনঃ ও মধুর স্বরে ?

শুনিয়াছি লোক-মুখে আপনি ভারতী,

সৃজি মায়াবলে সরঃ বনের ভিতরে,

নব নাগরীর বেশে তুষিলেন বরে

তোমায়;১৩ অমৃত রসে রসনা শিকতি,

আপনার স্বর্ণ বীণা অরপিল করে !

সত্য কি হে এ কাহিনী, কহ, মহামতি ?

মিথ্যা বা কি বলে বলি ! শৈলেন্দ্র-সদনে,

লভি জন্ম মন্দাকিনী (আনন্দ জগতে!)

নাশেন কলুষ যথা এ তিন ভুবনে;

সঙ্গীত-তরঙ্গ তব উথলি ভারতে

(পুন্যভূমি!) হে কবীন্দ্র, সূধা-বরিষণে,

দেশ-দেশান্তরে কর্ণ তোষে সেই মতে !

১০

মেঘদূত

কামী যক্ষ দগ্ধ, মেঘ, বিরহ-দহনে,

দূত-পদে বরি পূর্ব্বে, তোমায় সাধিল

বহিতে বারতা তার অলকা-ভবনে,

যেখানে বিরহে প্রিয়া ক্ষুণ্ন মনে ছিল ৷

কত যে মিনতি কথা কাতরে কহিল

তব, পদতলে সে, তা পড়ে কি হে মনে ?

জানি আমি, তুষ্ট হয়ে তার সে সাধনে

প্রদানিলা তুমি তারে যা কিছু যাচিল;

তেঁই গো প্রবাসে আজি এই ভিক্ষা করি;

দাসের বারতা লয়ে যাও শীঘ্রগতি

বিরাজে, হে মেঘরাজ, যথা সে যুবতী,

অধীর এ হিয়া হায়, যার রূপ স্মরি !

কুসুমের কানে স্বনে মলয় যেমতি

মৃদু নাদে, কয়ো তারে, এ বিরহে মরি!

১১

গরুড়ের বেগে, মেঘ, উড় শুভক্ষণে ৷

সাগরের জলে সুখে দেখিবে, সুমতি,

ইন্দ্র-ধনূঃ-চূড়া শিরে ও শ্যাম মুরতি,

ব্রজে যথা ব্রজরাজ যমুনা-দর্পণে

হেরেন বরাঙ্গ যাহে মজি ব্রজঙ্গনে

দেয় জলাঞ্জলি লাজে ! যদি রোধে গতি

তোমার, পর্ব্বত-বৃন্দ, মন্দ্রি ভীম স্বনে

বারি-ধারা-রূপে বাণে বিঁধো, মেঘপতি.

তা সকলে, বীর তুমি; কারে ডর রণে ?

এ দূর গমনে যদি হও ক্লান্ত কভু,

খগেন্দ্র১৪ উপেন্দ্র১৫-সম,তুমি সে বাহনে!

কৌস্ত্তভের রূপে পরো তড়িত-রতনে ৷৷





১২

“বউ কথা কও”

কি দুখে, হে পাখি, তুমি শাখার উপরে

বসি, বউ কথা কও, কও এ কাননে ?

মানিনী ভামিনী১৭ কি হে, ভামের গুমরে,

পাখা-রূপ ঘোমটায় ঢেকেছে বদনে ?

তেঁই সাধ তারে তুমি মিনতি-বচনে ?

তেঁই হে এ কথাগুলি কহাছ কাতরে ?

বড়ই কৌতুক, পাখি, জনমে এ মনে

নর-নারী-রঙ্গ কি হে বিহঙ্গিনী করে ?

সত্য যদি, তবে গুন, দিতেছি যুকতি;

(শিখাইব শিখেছি যা ঠেকি এ কু-দায়ে)

পবনের বেগে যাও যথায় যুবতী;

“ক্ষম, প্রিয়ে” এই বলি পড় গিয়া পায়ে ৷

কভু দাস, কভু প্রভু, শুন, ক্ষুণ্নমতি,

প্রেম-রাজ্যে রাজাসন থাকে এ উপায়ে ৷৷



সূত্রঃ ইন্টারনেট,

মধুসূদন কাব্য সমগ্র-বাংলা একাডেমী,

মধুসূদন রচনাবলী-সম্পাদনা সব্যসাচী রায়,কলিকাতা





টীকা

১৷ মহাসাগরকে সাগরেরে সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ৷

২, ৩, ৪ ৷ মেঘনাথবধ কাব্য ব্রজঙ্গনা কাব্য ও বীরাঙ্গনা কাব্যের কথা উল্লেখ করেছেন কবি ৷

৫৷ ফ্রান্সকো পের্ত্রার্কা (১৩০৪-১৩৭৪) প্রথম সনেট রচয়িতা ৷

৬৷ বাঙ্গালী কবি মধুসূদন প্রথম সনেট বা চতুর্দ্দশপদী কবিতা রচনা করে ইতালীর কবিকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ৷কবি কবিতাটি রচনা করেছিলেন ফরাসিদেশের ভরসেলস নগরে ৷

৭৷ কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী অন্যতম বাঙ্গালী কবি ৷ তার রচিত মঙ্লকাব্য কবিকঙ্কন-চন্ডীতে যে কমলে কামিনী চিত্র অঙ্কিত হয়েছে মধুসূদন তার সনেটে উপকরণরূপে গ্রহণ করেছেন ৷

৮৷ রায়গুণাকর কবি ভারতচন্দ্র রায় অন্নদামঙ্গল কাব্য রচয়িতা ৷ ইনি অষ্টাদশ শতকের বাঙ্গালী কবি ৷

৯৷ চন্দ্র চূড়ায় যায় মহাদেব ৷

১০৷ গঙ্গার অপর নাম ৷ ভগীরথের গঙ্গা আনয়নের পৌরণিক বৃত্তান্ত ৷

১১৷ অশোককাননে বন্দিনী সীতার বার্তা এনেছিল হনুমান ৷

১২৷ মেঘের কোলে বিদ্যুতের নৃত্য ৷

১৩৷ কালিদাসের কবিত্বলাভ বিষয়ে প্রচলিত কিম্বদন্তীর প্রসঙ্গ ৷

১৪৷ পক্ষীদের রাজা গরুড় ৷

১৫৷ বিষ্ণু ৷

১৬৷ বিষ্ণুর বক্ষস্থিত মণি ৷

১৭৷ কোপনস্বভাবা রমণী ৷



(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.