নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

,

বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা

জাহাঙ্গীর.আলম

..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জাহাঙ্গীর.আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-২

২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৪





মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-১



১৩

পরিচয়

যে দেশে উদয়ি রবি উদয়-অচলে,

ধরণীর বিম্বাধর চুম্বন আদরে,

প্রভাতে; যে দেশে গেয়ে, সুমুধুর কলে,

ধাতার প্রশংসা-গীত, বহেন সাগরে

জাহ্নবী; যে দেশে ভেদি বারিদ১৮-মন্ডলে

( তুষার বপিত বাস ঊর্দ্ধ কলেবরে,

রজতের উপবীত স্রোতাঃরূপে গলে,)

শোভেন শৈলেন্দ্র-রাজ, মান-সরোবরে১৯

( স্বচ্ছ দরপণ !) হেরি ভীষণ মুরতি;

যে দেশে কুহরে পিক বাসন্ত কাননে;

দিনেশে যে দেশে সেবে নলিনী যুবতী,

চাঁদের আমোদ যথা কুমুদ-সদনে,

সে দেশে জনম মম; জননী ভারতী ;

তেঁই প্রেম-দাস আমি, ওলো বরাঙ্গনে ৷

১৪

কে না জানে কবি-কুল প্রেম-দাস ভবে,

কুসুমের দাস যথা মারুত, সুন্দরি,

ভাল যে বাসিব আমি, এ বিষয়ে তবে

এ বৃথা সংশয় কেন ? কুসুম-মঞ্জরী

মদনের কুঞ্জে তুমি ৷ কভু পিক-রবে

তব গুণ গায় কবি ;কভু রূপ ধরি

অলির, যাচে সে মধু ও কানে গুঞ্জরি,

ব্রজে যথা রসরাজ রাসের পরবে!২০

কামের নিকুঞ্জে,এই! কত যে কি ফলে,

হে রসিক, এ নিকুঞ্জ, ভাবি দেখ মনে!

সরঃ ত্যজি সরোজিনী ফুটিছে এ স্থলে,

কদম্ব, বিম্বিকা,রম্ভা, চম্পকের সনে!

সাপিনীরে হেরি ভয়ে লুকাইছে গলে

কোকিল; কুরঙ্গ গেছে রাখি দু-নয়নে!২১

১৫

যশের মন্দির

সুবর্ণ দেউল আমি দেখিনু স্বপনে

অতি-তুঙ্গ শৃঙ্গ শিরে! সে শৃঙ্গের তলে,

বড় অপ্রশস্ত সিঁড়ি গড়া মায়া-বলে,

বহুবিধ রোধে রুদ্ধ২২ ঊর্দ্ধগামী জনে!

তবুও উঠিতে তথা সে দুর্গম স্থলে

করিছে কঠোর চেষ্টা কষ্ট সহি মনে

বহু প্রাণী ৷ বহু প্রাণী কাঁদিছে বিকলে,

না পারি লভিতে যত্নে সে রত্ন-ভবনে ৷

ব্যথিল হৃদয় মোর দেখি তা সবারে ৷

শিয়রে দাঁড়ায়ে পরে কহিলা ভারতী,

মৃদু হাসি; “ওরে বাছা, না দিলে শকতি

আমি, ও দেউলে কার সাধ্য উঠিবারে?

যশের মন্দির ওই; ওথা যার গতি,

অশক্ত আপনি যম ছুঁইতে রে তারে!”

১৬

কবি

কে কবি কবে কে মোরে ? ঘটকালি করি,

শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন,

শোভে কি অক্ষয় শোভা যশের রতন ?

সেই কবি মোর মতে, কল্পনা সুন্দরী

যার মনঃ-কমলেতে পাতেন আসন,

অস্তগামি-ভানু-প্রভা-সদৃশ বিতরি

ভাবের সংসারে তার সুবর্ণ-কিরণ ৷

আনন্দ, আক্ষেপ, ক্রোধ, যার আজা মানে

অরণ্যে কুসুম ফোটে যার ইচ্ছা-বলে;

নন্দন-কানন হতে যে সুজন আনে

পারিজাত কুসুমের রম্য পরিমলে;

মরুভূমে তুষ্ট হয়ে যাহার ধেয়ানে

বহে জলবতী নদী মৃদু কলকলে ৷

১৭

দে-দোল

ওই যে শুনিছ ধ্বনি ও নিকুঞ্জ-বনে,

ভেবো না গুঞ্জরে অলি চুম্বি ফুলাধারে;

ভেবো না গাইছে পিক কল কুহরণে,

তুষিতে প্রত্যুষে আজি ঋতু-রাজেশ্বরে !

দেখ, মীলি, ২৩ ভক্ত জন, ভক্তির নয়নে,

অধোগামী দেব-গ্রাম উজ্জ্বল-অম্বরে,

আসিছেন সবে হেথা এই দোলাসনে

পূজিতে রাখালরাজ রাধা-মনোহরে !

স্বর্গীয় বাজনা ওই ! পিককুল কবে,

কবে বা মধূপ, করে হেন মধু-ধ্বনি ?

কিন্নরের বীনা-তান অপ্সরার রবে !

আনন্দে কুসুম-সাজ ধরেন ধরণী,

নন্দন-কানন-জাত পরিমল ভবে

বিতরেন বায়ু-ইন্দ্র২৪ বন আপনি !

১৮

শ্রীপঞ্চমী

নহে দিন দূরে, দেবি, যবে ভূভারতে

বিসর্জ্জিবে ভূভারত, বিস্মৃতির জলে,

ও তব ধবল মূর্ত্তি সুদল কমলে,

কিন্তু চিরস্থায়ী পূজা তোমার জগতে !

মনোরূপ-পদ্ম যিনি রোপিলা কৌশলে

এ মানব-দেহ-সরে, তাঁর ইচ্ছামতে

সে কুসূমে বাস তব, যথা মরকতে

কিম্বা পদ্মরাগে জ্যোতিঃ নিত্য ঝলঝলে !

কবির হৃদয়-বনে যে ফুল ফুটিবে,

সে ফুল-অঞ্জলি লোক ও রাঙা চরণে

পরম-ভকতি-ভাবে চিরকাল দিবে

দশ দিশে, যত দিন এ মর ভবনে

মনঃ-পদ্ম ফোটে, পূজা, তুমি, মা, পাইবে !

কি কাজ মাটির দেহে তবে, সনাতনে ?

১৯

কবিতা

অন্ধ যে, কি রূপ কবে তার চক্ষে ধরে

নলিনী ? রোধিলা বিধি কর্ণ-পথ যায়,

লভে কি সে সুখ কভু বীণার সুস্বরে ?

কি কাক, কি পিচধ্বনি, সম-ভাব তার !

মনের উদ্যান-মাঝে, কুসুমের সার

কবিতা-কুসুম-রত্ন !দয়া করি নরে,

কবি-মুখ-ব্রহ্মা-লোকে ঊরি অবতার

বাণীরূপে বীণাপাণি এ নর-নগরে ৷

দুস্মতি সে জন, যার মনঃ নাহি মজে

কবিতা-অমৃত-রসে ! হায় , সে দুর্ম্মতি,

পুষ্পঞ্জলি দিয়া সদা যে জন না ভজে

ও চরণপদ্ম, পদ্মবাসিনি ভারতি !

কর পরিমলময় এ হিয়া-সরোজ

তুষি যেন বিজ্ঞে, মা গো, এ মোর মিনতি ৷

২০

আশ্বিন মাস

সু-শ্যামাঙ্গ বঙ্গ এবে মহাব্রতে রত ৷

এসেছেন ফিরে উমা, বৎসরের পরে,

মহিষমর্দ্দিনীরূপে ভকতের ঘরে;

বামে কমলকায়া রমা, দক্ষিণে আয়ত-

লোচনা বচনেশ্বরী২৫ স্বর্ণবীণা করে;

শিখিপৃষ্ঠে শিখিধ্বজ, যাঁর শরে হত

তারক অসুরশ্রেষ্ঠ; গন-দল যত,

তার পতি গণদেব,রাঙাকলবরে

করি-শিরঃ;আদিব্রহ্ম বেদের বচনে ৷

এক পদ্মে শতদল! শত রূপবতী

নক্ষত্রমন্ডলী যেন একত্রে গগনে!

কি আনন্দ ! পূর্ব্ব কথা কেন কয়ে, স্মতি,

আনিছ হে বারি-ধারা আজি এ নয়নে ?

ফলিবে কি মনে পুনঃ সে পূর্ব্ব ভকতি ?



সূত্রঃ ইন্টারনেট,

মধুসূদন কাব্য সমগ্র-বাংলা একাডেমী,

মধুসূদন রচনাবলী-সম্পাদনা সব্যসাচী রায়,কলিকাতা





টীকা

১৮৷ মেঘ ৷

১৯৷ মানস সরোবর ৷

২০৷ রাধাকৃষ্ণের ব্রজলীলার প্রসঙ্গ ৷

২১৷ দু’নয়নে হরিণের চোখ ৷

২২৷ প্রতিবন্ধকের দ্বারা বাধাযুক্ত ৷

২৩৷ উন্মীলিত করে ৷

২৪ ৷ বায়ুদের মধ্যে শ্রেষ্ট ৷

২৫৷ বাগ্দেবী সরস্বতী ৷





( চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.