![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-১
১৩
পরিচয়
যে দেশে উদয়ি রবি উদয়-অচলে,
ধরণীর বিম্বাধর চুম্বন আদরে,
প্রভাতে; যে দেশে গেয়ে, সুমুধুর কলে,
ধাতার প্রশংসা-গীত, বহেন সাগরে
জাহ্নবী; যে দেশে ভেদি বারিদ১৮-মন্ডলে
( তুষার বপিত বাস ঊর্দ্ধ কলেবরে,
রজতের উপবীত স্রোতাঃরূপে গলে,)
শোভেন শৈলেন্দ্র-রাজ, মান-সরোবরে১৯
( স্বচ্ছ দরপণ !) হেরি ভীষণ মুরতি;
যে দেশে কুহরে পিক বাসন্ত কাননে;
দিনেশে যে দেশে সেবে নলিনী যুবতী,
চাঁদের আমোদ যথা কুমুদ-সদনে,
সে দেশে জনম মম; জননী ভারতী ;
তেঁই প্রেম-দাস আমি, ওলো বরাঙ্গনে ৷
১৪
কে না জানে কবি-কুল প্রেম-দাস ভবে,
কুসুমের দাস যথা মারুত, সুন্দরি,
ভাল যে বাসিব আমি, এ বিষয়ে তবে
এ বৃথা সংশয় কেন ? কুসুম-মঞ্জরী
মদনের কুঞ্জে তুমি ৷ কভু পিক-রবে
তব গুণ গায় কবি ;কভু রূপ ধরি
অলির, যাচে সে মধু ও কানে গুঞ্জরি,
ব্রজে যথা রসরাজ রাসের পরবে!২০
কামের নিকুঞ্জে,এই! কত যে কি ফলে,
হে রসিক, এ নিকুঞ্জ, ভাবি দেখ মনে!
সরঃ ত্যজি সরোজিনী ফুটিছে এ স্থলে,
কদম্ব, বিম্বিকা,রম্ভা, চম্পকের সনে!
সাপিনীরে হেরি ভয়ে লুকাইছে গলে
কোকিল; কুরঙ্গ গেছে রাখি দু-নয়নে!২১
১৫
যশের মন্দির
সুবর্ণ দেউল আমি দেখিনু স্বপনে
অতি-তুঙ্গ শৃঙ্গ শিরে! সে শৃঙ্গের তলে,
বড় অপ্রশস্ত সিঁড়ি গড়া মায়া-বলে,
বহুবিধ রোধে রুদ্ধ২২ ঊর্দ্ধগামী জনে!
তবুও উঠিতে তথা সে দুর্গম স্থলে
করিছে কঠোর চেষ্টা কষ্ট সহি মনে
বহু প্রাণী ৷ বহু প্রাণী কাঁদিছে বিকলে,
না পারি লভিতে যত্নে সে রত্ন-ভবনে ৷
ব্যথিল হৃদয় মোর দেখি তা সবারে ৷
শিয়রে দাঁড়ায়ে পরে কহিলা ভারতী,
মৃদু হাসি; “ওরে বাছা, না দিলে শকতি
আমি, ও দেউলে কার সাধ্য উঠিবারে?
যশের মন্দির ওই; ওথা যার গতি,
অশক্ত আপনি যম ছুঁইতে রে তারে!”
১৬
কবি
কে কবি কবে কে মোরে ? ঘটকালি করি,
শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন,
শোভে কি অক্ষয় শোভা যশের রতন ?
সেই কবি মোর মতে, কল্পনা সুন্দরী
যার মনঃ-কমলেতে পাতেন আসন,
অস্তগামি-ভানু-প্রভা-সদৃশ বিতরি
ভাবের সংসারে তার সুবর্ণ-কিরণ ৷
আনন্দ, আক্ষেপ, ক্রোধ, যার আজা মানে
অরণ্যে কুসুম ফোটে যার ইচ্ছা-বলে;
নন্দন-কানন হতে যে সুজন আনে
পারিজাত কুসুমের রম্য পরিমলে;
মরুভূমে তুষ্ট হয়ে যাহার ধেয়ানে
বহে জলবতী নদী মৃদু কলকলে ৷
১৭
দে-দোল
ওই যে শুনিছ ধ্বনি ও নিকুঞ্জ-বনে,
ভেবো না গুঞ্জরে অলি চুম্বি ফুলাধারে;
ভেবো না গাইছে পিক কল কুহরণে,
তুষিতে প্রত্যুষে আজি ঋতু-রাজেশ্বরে !
দেখ, মীলি, ২৩ ভক্ত জন, ভক্তির নয়নে,
অধোগামী দেব-গ্রাম উজ্জ্বল-অম্বরে,
আসিছেন সবে হেথা এই দোলাসনে
পূজিতে রাখালরাজ রাধা-মনোহরে !
স্বর্গীয় বাজনা ওই ! পিককুল কবে,
কবে বা মধূপ, করে হেন মধু-ধ্বনি ?
কিন্নরের বীনা-তান অপ্সরার রবে !
আনন্দে কুসুম-সাজ ধরেন ধরণী,
নন্দন-কানন-জাত পরিমল ভবে
বিতরেন বায়ু-ইন্দ্র২৪ বন আপনি !
১৮
শ্রীপঞ্চমী
নহে দিন দূরে, দেবি, যবে ভূভারতে
বিসর্জ্জিবে ভূভারত, বিস্মৃতির জলে,
ও তব ধবল মূর্ত্তি সুদল কমলে,
কিন্তু চিরস্থায়ী পূজা তোমার জগতে !
মনোরূপ-পদ্ম যিনি রোপিলা কৌশলে
এ মানব-দেহ-সরে, তাঁর ইচ্ছামতে
সে কুসূমে বাস তব, যথা মরকতে
কিম্বা পদ্মরাগে জ্যোতিঃ নিত্য ঝলঝলে !
কবির হৃদয়-বনে যে ফুল ফুটিবে,
সে ফুল-অঞ্জলি লোক ও রাঙা চরণে
পরম-ভকতি-ভাবে চিরকাল দিবে
দশ দিশে, যত দিন এ মর ভবনে
মনঃ-পদ্ম ফোটে, পূজা, তুমি, মা, পাইবে !
কি কাজ মাটির দেহে তবে, সনাতনে ?
১৯
কবিতা
অন্ধ যে, কি রূপ কবে তার চক্ষে ধরে
নলিনী ? রোধিলা বিধি কর্ণ-পথ যায়,
লভে কি সে সুখ কভু বীণার সুস্বরে ?
কি কাক, কি পিচধ্বনি, সম-ভাব তার !
মনের উদ্যান-মাঝে, কুসুমের সার
কবিতা-কুসুম-রত্ন !দয়া করি নরে,
কবি-মুখ-ব্রহ্মা-লোকে ঊরি অবতার
বাণীরূপে বীণাপাণি এ নর-নগরে ৷
দুস্মতি সে জন, যার মনঃ নাহি মজে
কবিতা-অমৃত-রসে ! হায় , সে দুর্ম্মতি,
পুষ্পঞ্জলি দিয়া সদা যে জন না ভজে
ও চরণপদ্ম, পদ্মবাসিনি ভারতি !
কর পরিমলময় এ হিয়া-সরোজ
তুষি যেন বিজ্ঞে, মা গো, এ মোর মিনতি ৷
২০
আশ্বিন মাস
সু-শ্যামাঙ্গ বঙ্গ এবে মহাব্রতে রত ৷
এসেছেন ফিরে উমা, বৎসরের পরে,
মহিষমর্দ্দিনীরূপে ভকতের ঘরে;
বামে কমলকায়া রমা, দক্ষিণে আয়ত-
লোচনা বচনেশ্বরী২৫ স্বর্ণবীণা করে;
শিখিপৃষ্ঠে শিখিধ্বজ, যাঁর শরে হত
তারক অসুরশ্রেষ্ঠ; গন-দল যত,
তার পতি গণদেব,রাঙাকলবরে
করি-শিরঃ;আদিব্রহ্ম বেদের বচনে ৷
এক পদ্মে শতদল! শত রূপবতী
নক্ষত্রমন্ডলী যেন একত্রে গগনে!
কি আনন্দ ! পূর্ব্ব কথা কেন কয়ে, স্মতি,
আনিছ হে বারি-ধারা আজি এ নয়নে ?
ফলিবে কি মনে পুনঃ সে পূর্ব্ব ভকতি ?
সূত্রঃ ইন্টারনেট,
মধুসূদন কাব্য সমগ্র-বাংলা একাডেমী,
মধুসূদন রচনাবলী-সম্পাদনা সব্যসাচী রায়,কলিকাতা
টীকা
১৮৷ মেঘ ৷
১৯৷ মানস সরোবর ৷
২০৷ রাধাকৃষ্ণের ব্রজলীলার প্রসঙ্গ ৷
২১৷ দু’নয়নে হরিণের চোখ ৷
২২৷ প্রতিবন্ধকের দ্বারা বাধাযুক্ত ৷
২৩৷ উন্মীলিত করে ৷
২৪ ৷ বায়ুদের মধ্যে শ্রেষ্ট ৷
২৫৷ বাগ্দেবী সরস্বতী ৷
( চলবে )
©somewhere in net ltd.