![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-৩
পর্ব-১
পর্ব-২
২১
সায়ংকাল
চেয়ে দেখ, চলিছেন মৃদে২৬ অস্তাচলে
দিনেশ, ছড়ায়ে স্বর্ণ, রত্ন রাশি রাশি
আকাশে ৷ কত বা যত্নে কাদম্বিনী আসি
ধরিতেছে তা সবারে সুনীল আঁচলে !
কে না জানে অলঙ্কারে অঙ্গনা বিলাসী ?
অতি- ত্বরা গড়ি ধনী দৈব-মায়া-বলে
বহুবিধ অলঙ্কার পরিবে লো হাসি,
কনক-কঙ্কণ হাতে,স্বর্ণ-মালা গলে !
সাজাইবে গজ, বাজী ; পর্ব্বতের শিরে
সুবরণ কিরীট দিবে ; বহাবে অম্বরে
নদস্রোতঃ উজ্জ্বলিত স্বর্ণবর্ণ নীরে !
সুবর্ণের গাছ রোপি, শাখার উপরে
হেমাঙ্গ বিহঙ্গ থোবে !এ বাজী করি রে
শুভ ক্ষণে দিনকর কর-দান করে !
২২
সায়াংকালের তারা
কার সাথে তুলনিবে, লো সুর-সুন্দরি,
ও রূপের ছটা কবি এ ভব-মন্ডলে ?
আছে কি লো হেন খনি, যার গর্ভে ফলে
রতন তোমার মত, কহ, সহচরি
গোধূলির ? কি ফণিনী, যার সু-কবরী
সাজায় সে তোমা সম মনির উজ্জ্বলে ?
ক্ষণমাত্র দেখি তোমা নক্ষত্র-মন্ডলে
কি হেতু ? ভাল কি তোমা বাসে না শর্ব্বরী ?
হেরি অপরূপ রূপ বুঝি ক্ষুণ্ন মনে
মানিনী রজনী রাণী, তেঁই অনাদরে
না দেয় শোভিতে তোমা সখীদল-সনে,
যবে কেলি করে তারা সুহাস-অম্বরে,
ক্ষণমাত্র দেখি মুখ, চির আঁখি স্মরে ৷
২৩
নিশা
বসন্তে কুসুম-কুল যথা বনস্থলে,
চেয়ে দেখ, তারাচয় ফুটিছে গগনে,
মৃণাক্ষি ৷ সুহাস-মুখে সরসীর জলে,
চন্দ্রিমা করিছে কেলি প্রেমানন্দ-মনে ৷
কত যে কি কহিতেছে মধুর স্বননে
পবন বনের কবি, ফুল্ল ফুল-দলে,
বুঝিতে কি পার, প্রিয়ে ? নারিবে কেমনে,
প্রেম-ফুলেশ্বরী তুমি প্রমদা-মন্ডলে২৭ ?
এ হৃদয়, দেখ, এবে ওই সরোবরে,
চন্দ্রমার রূপে এতে তোমার মুরতি !
কাল বলি অবহেলা, প্রেয়সি, যে করে
নিশায়, আমার মতে সে বড় দুস্মতি ৷
হেন সুবাসিত শ্বাস, হাস স্নিগ্ধ করে
যার, সে কি কভু মন্দ, ওলো রসবতি ?
২৪
নিশাকালে নদী-তীরে বট-বূক্ষ-তলে
শিব-মন্দির
রাজসূয়-যজ্ঞে যথা রাজাদল চলে
রতন-মুকুট শিরে ; আসিছে সঘনে
অগণ্য জোনাকীব্রজ, এই তরুতলে
পূজিতে রজনী-যোগে বৃষভ-বাহনে২৮ ৷
ধূপরূপ পরিমল অদূর কাননে
পেয়ে, বহিতেছে তাহে হেথা কুতুহলে
মলয় ; কৌমদী, দেখ, রজত-চরণে
বীচি-রব-রূপ পরি নুপূর, চঞ্চলে
নাচিছে; আচর্য্য-রূপে এই তরু-পতি
উচ্চারিছে বীজমন্ত্র ৷ নীরবে অম্বরে,
তারাদলে তারানাথ করেন প্রগতি
( বোধ হয় )আরাধিয়া দেবেশ শঙ্করে !
তুমিও, লো কল্লোলিনি, মহাব্রতে ব্রতী,
সাজায়েছ, দিব্য সাজে, বর-কলেবরে !
২৫
ছায়াপথ
কহ মোরে, শশিপ্রিয়ে, কহ, কৃপা করি,
কার হেতু নিত্য তুমি সাজাও গগনে,
এ পথ, উজ্জ্বল কোটি মনির কিরণে ?
এ সুপথ দিয়া কি গো ইন্দ্রাণী সুন্দরী
আনন্দে ভেটিতে যান নন্দন-সদনে
মহেন্দ্রে, সঙ্গেতে শত বরাঙ্গী অপ্সরী,
মলিনি ক্ষণেক কাল চারু তারা-গণে
সৌন্দর্য্যে ? এ কথা দাসে কয়, বিভাবরি !
রাণী তুমি ; নীচ আমি; তেঁই ভয় করে,
অনুচিত বিবেচনা পার করিবার
আলাপ আমার সাথে ; পবন-কিঙ্করে,
ফুল-কুল সহ কথা কহ দিয়া যারে,
দেও কয়ে; কহিবে সে কানে,মৃদুস্বরে,
যা কিছু ইচ্ছহ, দেবি, কহিতে আমারে!
২৬
কুসুমে কীট
কি পাপে, কহ তা মোরে, লো বন-সুন্দরী,
কোমল হৃদয়ে তব পশিল,কি পাপে
এ বিষম যমদূত ? কাঁদে মনে করি
পরাণ যাতনা তব ; কত যে কি তাপে
পোড়ায় দুরন্ত তোমা, বিষদন্তে হরি
বিরাম দিবস নিশি! মৃদু কি বিলাপে
এ তোমার দুখ দেখি সখী মধুকরী,
উড়ি পড়ি তব গলে যবে লো সে কাঁপে ?
বিষাদে মলয় কি লো, কহ, সুবদনে,
নিশ্বাসে তোমার ক্লেশে, যবে লো সে আসে
যাচিতে তোমার কাছে পরিমল-ধনে ?
কানন-চন্দ্রিমা তুমি কেন রাহু-গ্রাসে ?
মনস্তাপ-রূপে রিপু,হ্যায় পাপ-মনে,
এইরূপে, রূপবতি, নিত্য সুখ নাশে !
২৭
বটবৃক্ষ
দেব-অবতার ভাবি বন্দে যে তোমারে,
নাহি চাহে মনঃ মোর তাহে নিন্দা করি,
তরুরাজ! প্রত্যক্ষতঃ ভারত-সংসারে,
বিধির করুণা তুমি তরু-রূপ ধরি!
জীবকুল-হিতৈষিণী, ছায়া সু-সুন্দরী,
তোমার দুহিতা, সাধু! যবে বসুধারে
দগধে আগ্নয় তাপে, দয়া পরিহরি,
মিহির, আকুল জীব বাঁচে পূজি তাঁরে ৷
শত-পত্রময় মঞ্চে, তোমার সদনে,
খেচরঅতিথি-ব্রজ, বিরাজে সতত,
পদ্মরাগ ফলপূঞ্জে ভূঞ্জি হৃষ্ট-মনে;
মৃদু-ভাষে মিষ্টালাপ কর তুমি কত,
মিষ্টালাপি, দেহ-দাহ শীতলি যতনে !
দেব নহ; কিন্তু গুণে দেবতার মত ৷
২৮
সৃষ্টিকর্ত্তা
কে সৃজিলা এ সুবিশ্বে, জিজ্ঞাসিব কারে
এ রহস্য কথা, বিশ্বে, আমি মন্দমতি ?
পার যদি, তুমি দাসে কহ, বসুমতি;
দেহ মহা-দীক্ষা, দেবি, ভিক্ষা, চিনিবারে
তাঁহায়, প্রসাদে যাঁর তুমি, রূপবতি,
ভ্রম অসম্ভ্রমে২৯ শৃন্যে ! কহ, হে আমারে,
কে তিনি, দিনেশ রবি, করি এ মিনতি,
যাঁর আদি জ্যোতিঃ, হেম-আলোক সঞ্চারে
তোমার বদন, দেব, প্রত্যহ উজ্জ্বলে ?
অধম চিনিতে চাহে সে পরম জনে,
যাঁহার প্রসাদে তুমি নক্ষত্র-মন্ডলে
কর কেলি নিশাকালে রজত-আসনে,
নিশানাথ ৷ নদকুল, কহ কলকলে,
কিম্বা তুমি, অম্বুপতি, গম্ভীর স্বননে ৷
২৯
সুর্য্য
এখনও আছে লোক দেশ দেশান্তরে
দেব ভাবি পূজে তোমা, রবি দিনমণি,
দেখি তোমা দিবামুখে উদয়-শিখরে,
লুটায়ে ধরণীতলে, করে স্তুতি-ধ্বনি;
আশ্চর্য্যের কথা,সূর্য্য,এ না মনে গণি ৷
অসীম মহিমা তব, যখন প্রখরে
শোভ তুমি, বিভাবসু, মধ্যাহ্নে অম্বরে
সমূজ্জ্বল করজালে আবরি মেদিনী!
অসীম মহিমা তব, অসীম শকতি,
হেম-জ্যোতিঃ-দাতা তুমি চন্দ্র-গ্রহ-দলে;
উর্ব্বরা তোমার বীর্য্যে সতী বসুমতি;
বারিদ, প্রসাদে তব, সদা পূর্ণ জলে;
কিন্তু কি মহিমা তাঁর, কহ, দিনপতি,
কোটি রবি শোভে নিত্য যাঁর পদতলে!
৩০
সীতাদেবী
অনুক্ষণ মনেমোর পড়ে তব কথা
বৈদেহী! কখন দেখি, মুদিত নয়নে,
একাকিনী তুমি, সতি, অশোক-কাননে,
চারি দিকে চেড়ীবৃন্দ, চন্দ্রকলা যথা
আচ্ছন্ন মেঘের মাঝে ! হায়, বহে বৃথা
পদ্মাক্ষি, ও চক্ষুঃ হতে অশ্রু-ধারা ঘনে !
কোথ দাশরথি শূর কোথ মহারথী
দেবর লক্ষণ, দেবি, চিরজয়ী রণে ?
কি সাহসে, সুকেশিনি, হরিল তোমারে
রক্ষস ? জানে না মূঢ়, কি ঘটিবে পরে!
রাহু-গ্রহ-রূপ ধরি বিপত্তি আধাঁরে
জ্ঞান-রবি, যবে বিধি বিড়ম্বন করে!
মজিবে এ রক্ষোবংশ, খ্যাত ত্রিসংসারে,
ভূকম্পনে, দ্বীপ যথা অতল সাগরে!
৩১
মহাভারত
কল্পনা-বাহনে সুখে করি আরোহণ,
উতরিনু, যথা বসি বদরীর তলে,
করে বীণা, গাইছেন গীত কুতুহলে
সত্যবতী-সুত কবি,ঋষিকুল-ধন ৷
শুনিনু গম্ভীর ধ্বনি; উন্মীলি নয়ন
দেখিনু কৌরবেশ্বরে,৩০ মত্ত বাহুবলে;
দেখিনু পবন-পুত্রে,৩১ ঝড় যথা চলে
হুঙ্কারে!৩২ আইলা কর্ণসূর্য্যের নন্দন৩৩
তেজস্বী ৷ উজ্জ্বলি যথা ছোট অনম্বরে
নক্ষত্র, আইলা ক্ষেত্রে পার্থ মহামতি,
আলো করি দশ দিশ, ধরি বাম করে
গান্ডীব৩৪ প্রচন্ড-দন্ড-দাতা- রিপু প্রতি ৷৩৫
তরাসে আকুল হৈনু এ কাল সমরে,
দ্বাপরে গোগৃহ-রণে উত্তর যেমতি ৷৩৬
৩২
নন্দন-কানন
লও দাসে, হে ভারতি, নন্দন-কাননে,
যথা ফোটে পারিজাত; যথায় উর্ব্বশী,
কামের আকাশে বামা চির-পূর্ণ-শশী,
নাচে করতালি দিয়া বীণার স্বননে;
যথা রম্ভা, তিলোত্তমা, অলকা রূপসী
মোহে মনঃ সুমধুর স্বর বরিষণে,
মন্দাকিনী বাহিনীর স্বর্ণ তীরে বসি,
মিশায়ে সু-কন্ঠ রব বীচির বচনে !
যথায় শিশিরের বিন্দু ফুল্ল ফুল-দলে
সদা সদ্য; যথা অলি সতত গুঞ্জরে;
বহে যথা সমীরণ বহি পরিমলে;
বসি যথা শাখা-মুখে কোকিল কুহরে;
লও দাসে; আঁখি দিয়া দেখি তব বলে
ভাব-পটে কল্পনা যা সদা চিত্র করে ৷
৩৩
সরস্বতী
তপনের তাপে তাপি পথিক যেমতি
পড়ে গিয়া দড়ে রড়ে ছায়ার চরণে ;
তৃষাতুর জন যথা হেরি জলবতী
নদীরে, তাহার পানে ধায় ব্যাগ্র মনে
পিপাসা-নাশের আশে; এ দাস তেমতি,
জ্বলে যবে প্রাণ তার দুঃখের জ্বলনে,
ধরে রাঙা পা দুখানি, দেবী সরস্বতি!
মান কোল-সম মা গো, এ তিন ভুবনে
আছে কি আশ্রয় আর ? নয়নের জলে
ভাসে শিশু যবে, কে সান্ত্বনে তারে?
কে মোছে আখিঁর জল অমনি আচঁলে?
কে তার মনের খেদ নিবারিতে পারে,
মধুমাখা কথা কয়ে, স্নেহের কৌশলে?
এই ভাবি, কৃপাময়ি, ভাবি গো তোমারে !
৩৪
কপোতাক্ষ নদ
সতত,হে নদ, তুমি পড় মোর মনে ৷
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;
সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া-যন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে ?
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্ম-ভুমি-স্তনে!৩৭
আর কি হে হবে দেখা ? যত দিন যাবে,
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি-রূপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে
বঙ্গজ-জনের কানে, সখে, সখা-রীতে
নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সঙ্গীতে !
সূত্রঃ ইন্টারনেট,
মধুসূদন কাব্য সমগ্র-বাংলা একাডেমী,
মধুসূদন রচনাবলী-সম্পাদনা সব্যসাচী রায়,কলিকাতা
২৬৷ ধীরে ধীরে ৷
২৭৷ নারীমন্ডলীতে ৷
২৮৷ বৃষভ যাঁর বাহন মহাদেব ৷
২৯ ৷ সম্ভ্রম শব্দের আদি অর্থ ভয় ৷ মধুসূদন সেই অর্থই গ্রহণ করেছেন ৷ অসম্ভ্রম ব্যবহার করে নির্ভয় বুঝিয়েছেন ৷
৩০ ৷ কৌরবদের মধ্যে প্রধান দুর্যোধন ৷
৩১ ৷ ভীমসেন ৷ পবনের ঔরসে কুম্ভীর গর্ভে জন্ম ৷
৩২ ৷ ভীম ও দুর্যোধনের গদাযুদ্ধ প্রসঙ্গ ৷
৩৩ ৷ কুম্ভীর কুমারী অবস্থায় পুত্র ৷ সূর্যের ঔরসে কুম্ভীর গর্ভে কর্ণের জন্ম ৷
৩৪ ৷ অর্জুনের ধনুক ৷
৩৫ ৷ কর্ণও অর্জুনের যুদ্ধ প্রসঙ্গ ৷
৩৬ ৷ মহাভারতের বিরাট পর্বের প্রসঙ্গ ৷ গোগৃহে কৌরবদের গোহরণকালে বৃহন্নলাবেশী অর্জুনকে একাকী কৌরবদের পরাজিত করতে দেখে উত্তরা ভীত সম্ত্রস্ত হয়েছিলেন ৷
৩৭৷ কবি প্রবাসে সাগরদাঁড়ি ও সন্নিহিত নদী কপোতাক্ষকে স্মরণ করেছেন ৷
(চলবে)
২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫২
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: সহযাত্রী হবেন আশা করি ৷ মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা ৷
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪
মশিকুর বলেছেন:
চমৎকার বললেও কম বলা হবে। ভবিষ্যতে এই প্রয়াস অব্যাহত থাকুক।