![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-৪
পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
৩৫
ঈশ্বরী পাটনী
“সেই ঘাটে খেয়া দেয় ঈশ্বরী পাটনী ৷”
অন্নদামঙ্গল ৷
কে তোর তরিতে বসি, ঈশ্বরী পাটনী ?৩৮
ছলিতে তোরে রে যদি কামিনী কমলে,
কোথা করী, বাম করে ধরি যারে বলে,
উগরি, গ্রাসিল পুনঃ পূর্ব্বে সুবদনী ?
রূপের খনিতে আর আছে কি রে মণি ?
এর সম ? চেয়ে দেখ, পদ-ছায়া-ছলে,
কনক কমল ফুল্ল এ নদীর জলে
কোন্ দেবতারে পুজি, পেলি এ রমণী ?
কাঠের সেউঁতি তোর, পদ-পরশনে
হইতেছে স্বর্ণময় ! এ নব যুবতি
নহে রে সামান্যা নারী, এই লাগে মনে;
বলে বেয়ে নদী-পারে যা রে শী্রগতি ৷
মেগে নিস্ , পার করে, বর-রূপ ধনে
দেখায়ে ভকতি শোন্ , এ মোর যুকতি ৷
৩৬
বসন্তে একটি পাখীর প্রতি
নহ তুমি পিক, পাখি, বিখ্যাত ভারতে,
মাধবের বার্ত্তাবহ; যার কুহরণে
ফোটে কোটি ফুল-পুঞ্জ মঞ্জু কুঞ্জবনে !
তবুও সঙ্গীত-রঙ্গ করিছ যে মতে
গায়ক, পুলক তাহে জনমে এ মনে !
মধুময় মধুকাল সর্ব্বত্র জগতে,
কে কোথা মলিন কবে মধুর মিলনে,
বসমতী সতী যবে রত প্রেমব্রতে ?
দুরন্ত কৃতান্ত-সম হেমনত এ দেশে৩৯
নির্দ্দয়; ধরার কষ্টে দুষ্ট তুষ্ট অতি !
নাদেয় শোভিতে কভু ফুলরত্নে কেশে,
পরায় ধবল বাস বৈধব্যে যেমতি!
ডাক তুমি ঋতুরাজে, মনোহর বেশে
সাজাতে ধরায় আসি, ডাক শীঘ্রগতি!
৩৭
প্রাণ
কি সুরাজ্যে, প্রাণ, তব রাজ-সিংহাসন !
বাহু-রূপে দুই রথী, দুর্জ্জয় সমরে,
বিধির বিধানে পুরী তব রক্ষা করে;
পঞ্চ অনুচর তোমা সেবে অনুক্ষণ ৷
সুহাসে ঘ্রাণেরে গন্ধ দে ফুলবন ;
যতনে শ্রবণ নে সুমধুর স্বরে ;
সুন্দর যা কিছু আছে , দেখায় দর্শন
ভূতলে, সুনীল নভে, সর্ব্ব চরাচরে !
স্পর্শ, স্বাদ, সদা ভোগ যোগায়, সুমতি!
পদরূপে দুই বাজী তব রাজ-দ্বারে;
জ্ঞান-দেব মন্ত্রী তব ভবে বৃহস্পতি;
সরস্বতী অবতার রসনা সংসারে !
স্বর্ণস্রোতোরূপে লহু, অবিরল-গতি,
বহি অঙ্গে; রঙ্গে ধনী হে তোমারে !
৩৮
কল্পনা
লও দাসে সঙ্গে রঙ্গে, হেমাঙ্গি কল্পনে,
বাগ্ দেবীর প্রিয়সখি, এই ভিক্ষা করি ;
হায়, গতিহীন আমি দৈব-বিড়ম্বনে,
নিকুঞ্জ-বিহারী পাখী পিঞ্জর-ভিতরি !
চল যাই মহানন্দে গোকুল-কাননে,
সরস বসন্ত যথা রধাকান্ত হরি
নাচিছেন, গোপীচয়ে নাচায়ে; সঘনে
পুরি বেণুরবে দেশ !৪০ কিম্বা শুভঙ্করি,
পুজেন উমায় রাম, রঘুরাজ-পতি,৪১
কিম্বা সে ভীষণ ক্ষেত্রে, যথা শরজালে
নাশিছেন ক্ষত্রকুলে পার্থ মহামতি ৷৪২
কি স্বরগে, কি মরতে, অতল পাতালে,
নাহি স্থল যথা, দেবি নহে তব গতি
৩৯
রাশি-চক্র
রাজপথে, শোভে যথা রম্য-উপবনে
বিরাম-আলয়বৃন্দ গড়িলা তেমতি
দ্বাদশ মন্দির বিধি বিবিধ রতনে
তব নিত্য পথে শূন্যে রবি দিনপতি
মাস কাল প্রতি গৃহে তোমার বসতি
গ্রহেন্দ্র প্রবেশ তব কখন সুক্ষণে
কখন বা প্রতিকুল জীব-কুল প্রতি
আসে বিরামালয়ে সেবিতে চরণে
গ্রহব্রজ প্রজাব্রজ রাজাসন-তলে
পুজে রাজপদ যথা তুমি তেজাকর
হৈমময় তেজঃ-পুঞ্জ প্রসাদের ছলে
প্রদান প্রসন্ন ভাবে সবার উপর ৷
কাহার মিলনে তুমি হাস কুতুহলে
কাহার মিলনে বাম শুনি পরস্পর ৷
৪০
সুভদ্রা-হরণ
তোমার হরণ-গীত গাব বঙ্গাসরে
নব তানে ভেবেছিনু সুভদ্রা সুন্দরি
কিন্তু ভাগ্যদোষে শুভে আশার লহরী
শুখাইল যথা গ্রীষ্মে লরাশি সরে
ফলে কি ফুলের কলি যদ প্রেমাদরে
না দেন শিশিরামৃত তারে বিভাবরী ?
ঘৃতাহুতি না পাইলে কুন্ডের ভিতরে
স্রিয়মাণ অভিমানে তেজঃ পরিহরি
বৈশ্বানর৪৩ দুরদৃষ্ট মোর চন্দ্রাননে
কিন্তু ( ভবিষ্যৎ কথা কহি ) ভবিষ্যতে
ভাগ্যবান্তর কবি পুজি দ্বৈপায়নে৪৪
তোমার হরণ-গীত তুষি বিজ্ঞ জনে
লভিবে সুযশঃ সাঙ্গি৪৫ এ সঙ্গীত-ব্রতে
৪১
মধুকর
শুনি গুন গুন ধ্বনি তোর এ কাননে
মধুকর এ পরাণ কাঁদে রে বিষাদে
ফুল-কুল-বধু-দলে সাধিস্ যতনে
অনুক্ষণ মাগি ভিক্ষা অি মৃদু নাদে
তুমকী৪৬ বাজায়ে যথা রাজার তোরণে
ভিখারী কি হেতু তুই ? ক৪৭ মোরে
কি সাদে৪৮
মোমের ভান্ডারে মধু রাখিস্ গোপনে
ইন্দ্র যথা চন্দ্রলোকে দানব-বিবাদে
সুধামৃত ?৪৯ এ আয়াসে কি সুফল ফলে ?
কৃপণের ভাগ্য তোর কৃপণ যেমতি
অনাহারে অনিদ্রায় সঞ্চয়ে বিকলে
বৃথা অর্থ বিধি-বশে তোর সে দুর্গতি
গৃহ-চ্যুত করি তোরে লুটি লয় বলে
পর জন পরে তোর শ্রমের সঙ্গতি
৪২
নদী-তীরে প্রাচীন দ্বাদশ শিব-মন্দির
এ মন্দির-বৃন্দ হেথা কে নির্ম্মিল কবে ?
কোন্ জন ? কোন্ কালে ? জিজ্ঞাসিব কবে ?
কহ মোরে কহ তুমি কল কল রবে
ভুলে যদি কল্লোলিনি না থাক লো তারে ৷
এ দেঊল-বর্গ গাঁথি উৎসর্গিল যবে
সে জন ভাবিল কি সে মাতি অহঙ্কারে
থাকিবে এ কীর্ত্তি তার চিরদিন ভবে
দীপরূপে আলো করি বিস্মৃতি-আঁধারে ?
বৃথা ভাব প্রবাহিনী দেখ ভাবি মনে ৷
কি আছে লো চিরস্থায়ী এ ভবমন্ডলে ?
গুঁড়া হয়ে উড়ি যায় কালের পীড়নে
পাথর হুতাশে তার কি ধাতু না গলে ?
কোথা সে ? কোথা বা নাম ? ধন ? লো ললনে ?
হায় গত যথা বিম্ব তব চল জলে
৪৩
ভরসেলস্ নগরে রাজপুরী ও উদ্যান
কত যে কি খেলা তুই খেলিস্ ভুবনে
রে কাল ভুলিতে কে তা পারে এই স্থলে ?
কোথা সে রাজেন্দ্র এবে যার ইচ্ছা-বলে
বৈজয়ন্ত-সম৫০ ধাম এ মর্ত্ত্য-নন্দনে
শোভিল ? হরিল কে সে নরাপ্সরা-দলে
নিত্য যারা নৃত্যগীতে এ সুখ-সদনে
মজাইত রাজ-মনঃ কাম-কুতুহলে ?
কোথা বা সে কবি যারা বীণার স্বননে
( কথারূপ ফুলপুঞ্জ ধরি পুট করে )
পুজিত সে রাজপদ ? কোথা রথী যত
গান্ডীবি-সদৃশ যারা প্রচন্ড সমরে ?
কোথা মন্ত্রী বৃহস্পতি৫১? তোর হাতে হত ৷
৪৪
কিরাত-আর্জ্জুনীয়ম্
ধর ধনুঃ সাবধানে পার্থ মহামতি ৷
সামান্য মেনো না মনে ধাইছে যে জন
ক্রোধভরে তব পানে ওই পশুপতি
কিরাতের রূপে তোমা করিতে ছলন
হুঙ্কারি আসিছে ছদ্মী৫২ মৃগরাজ-গতি
হুঙ্কারি হে মহাবাহু দেহ তুমি রণ ৷
বীর-বীর্য্যে আশা-লতা কর ফলবতী
বীরবীর্য্যে আশুতোষে৫৩ তোষ বীর-ধন
করেছ কঠোর তপঃ এ গহন বনে
কিন্তু হে কৌন্তেয় কহি যাচ্ছি যে শর
বীরতা-ব্যতীত বীর হেন অস্ত্র-ধনে
নারিবে লভিতে কভু দুর্লভ এ বর
কি লাজ অর্জ্জুন কহ হারিলে এ রণে ?
মৃত্যুঞ্জয় রিপু তব তুমি রথি নর ৫৪
৪৫
পরলোক
আলোক-সাগর-রূপ রবির কিরণে
ডুবে যথা প্রভাতের তারা সুহাসিনী
ফুটে যথা প্রেমামোদে আইলে যামিনী
কুসুম-কুলের কলি কুসুম-যৌবনে
বহি যথা সুপ্রবাহে প্রবাহ-বাহিনী
লভে নিরবাণ সুখে সিন্ধুর চরণে
এই রূপে ইহ লোক শাস্ত্রে এ কাহিনী
নিরন্তর সুখরূপ পরম রতনে
পায় পরে পর-লোকে ধরমের বলে ৷
হে ধর্ম্ম কি লোভে তবে তোমারে বিস্মরি
চলে পাপ-পথে নর ভুলি পাপ-ছলে ?
সংসার-সাগর-মাঝে তব স্বর্ণতরি
তেয়াগি কি লোভে ডুবে বাতময়৫৫ জলে ?
দু দিন বাঁচিতে চাহে চির দিন মরি ?
সূত্রঃ ইন্টারনেট,
মধুসূদন কাব্য সমগ্র-বাংলা একাডেমী,
মধুসূদন রচনাবলী-সম্পাদনা সব্যসাচী রায়,কলিকাতা
পাদ-টীকাঃ
৩৮ ৷ ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রসঙ্গ ৷ দেবী অন্নদা ছদ্মবেশে ঈশ্বরী পাটনীর নৌকায় নদী পার হয়েছিলেন ৷
৩৯ ৷ কবি স্বয়ং পাদটীকা করেছেন ফরাসীস্ দেশে ৷
৪০ ৷ রাধাকৃষ্ণপ্রেমলীলার প্রসঙ্গ ৷
৪১ ৷ রামায়ণের লঙ্কাকান্ডের প্রসঙ্গ ৷
৪২ ৷ মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রসঙ্গ ৷
৪৩ ৷ অগ্নি ৷
৪৪ ৷কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস ৷
৪৫ ৷ সাঙ্গ করে ৷
৪৬ ৷ তুম্বকী একতারা
৪৭ ৷ কথা বলার আঞ্চলিক কথ্যরূপ ৷
৪৮ ৷ সাধে ৷
৪৯ ৷ সমুদ্রমন্থনের প্রসঙ্গ ৷
৫০ ৷ ইন্দ্রের প্রসাদ ইন্দ্রপুরী ৷
৫১ ৷ প্রজ্ঞাবান অর্থে ৷
৫২ ৷ ছদ্মবেশধারী ৷
৫৩ ৷ যিনি অল্পে সন্তুষ্ট হন মহাদেব ৷
৫৪ ৷ এ কবিতর উপাদান মহাভারতের আখ্যান থেকে লওয়া ৷
৫৫ ৷ ঝটিকাসংকুল ৷
©somewhere in net ltd.