নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

,

বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা

জাহাঙ্গীর.আলম

..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জাহাঙ্গীর.আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-৬

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯

মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-৬



পর্ব-১

পর্ব-২

পর্ব-৩

পর্ব-৪

পর্ব-৫



৫৭

শৃঙ্গার-রস

শুনিনু নিদ্রায় আমি নিকুঞ্জ-কাননে

মনোহর বীণা ধ্বনি দেখিনু সে স্থলে

রূপস৭১ পুরুষ এক কুসুম-আসনে

ফুলের চৌপর৭২ শিরে ফুল-মালা গলে ৷

হাত ধরাধরি করি নাচে কুতুহলে

চৌদিকে রমণী-চয় কামাগ্নি-নয়নে

উজলি কানন-রাজি বরাঙ্গ-ভূষণে

ব্রজে যথা ব্রজঙ্গনা রাস-রঙ্গ-ছলে ৷

সে কামাগ্নি-কণা লয়ে সে যুবকহাসি

জ্বালাইছে হিয়াবৃন্দে ফুল-ধনুঃ ধরি

হানিতেছে চারি দিকে বাণ রাশি রাশি

কি দেব কি নর উভে জর জর করি 

কামদেব অবতার রস-কুলে আসি

শৃঙ্গার রসের নাম ৷ জাগিনু শিহরি ৷



৫৮

## ##########

নহি আমি চারু-নেত্রা সৌমিত্রি৭৩ কেশরী

তবে কেন পরাভূত না হব সমরে ?

চন্দ্র-চূড়-রথী তুমি বড় ভয়ঙ্করী

মেঘনাদ-সম শিক্ষা মদনের বরে ৷

গিরির আড়ালে থেকেবাঁধ লো সুন্দরি

নাগ-পাশে অরি তুমি দশ গোটা শরে

কাট গন্ডাদেশ তার দন্ড লো অধরে

মুহুর্মুহুঃ ভূকম্পনে অধীর লো করি 

এ বড় অদ্ভুত রণ  তব শঙ্খ-ধ্বনি

শুনিলে টুটে লো বল ৷ শ্বাস-বায়ু-বাণে

ধৈরয-কবচ তুমি উড়ায়ে রমণি

কটাক্ষর তীক্ষ্ন অস্ত্রে বিঁধ লো পরাণে ৷

এতে দিগম্বরী-রূপ যদি সুবদনি

ত্রস্ত হয়ে ব্যস্তে ক লো পরাস্ত না মানে ?

৫৯

সুভদ্রা

যথা ধীরে স্বপ্ন-দেবী রঙ্গে সঙ্গে করি

মায়া-নারী রত্নোত্তমা রূপের সাগরে

পশিলা নিশায় হাসি মন্দিরে সুন্দরী

সত্যভামা, সাথে ভদ্রা ফুল-মালা করে ৷

বিমলিল দীপ-বিভা পুরিল সত্বরে

সৌরভে শয়নাগার যেন ফুলেশ্বরী

সরোজিনী প্রফুল্লিলা আচম্বিতে সরে

কিম্বা বনে বন-সখী সুনাগকেশরী 

শিহরি জাগিলা পার্থ  যেমতি স্বপনে

সম্ভোগ-কৌতুকে মাতি সুপ্ত জন জাগে

কিন্তু কাঁদে প্রাণ তার স কু-জাগরণে

সাধে সে নিদ্রায় পুনঃ বৃথা অনুরাগে ৷

তুমি পার্থ ভাগ্য-বলে জাগিলা সুক্ষণে

মরতে স্বরগ-ভোগ ভোগিতে সোহাগে ৷৭৪

৬০

উর্ব্বশী

যথা তুষারের হিয়া ধবল-শিখরে

কভু নাহি গলে রবি-বিভোর চুম্বনে

কামানলে অবহেলি মন্মথের শরে

রথীন্দ্র হেরিলা জাগি শয়ন-সদনে

( কনক-পুতলী যেন নিশার স্বপনে)

উর্ব্বশীরে ৷ কহ  দেবি কহ এ কিঙ্করে

সুধিলা সম্ভাষি শূর সুমধুর স্বরে,

কি হেতু অকালে হেথা মিনতি চরণে ?

উম্মাদা মদন-মদে কহিলা উর্ব্বশী

কামাতুরা আমি নাথ তোমার কিঙ্করী

সরের সুকান্তি দেখি যথা পড়ে খসি

কৌমুদিনী তার কোলে লও কোলে ধরি

দাসীরে অখর দিয়া অধর কাঁপে কাঁপি থর থরি ৷৭৫

৬১

রৌদ্র-রস

শুনিনু গম্ভীর ধ্বনি গিরির গহূরে

ক্ষুধার্ত্ত কেশরী যেন নাদিছে ভীষণে

প্রলয়ের মেঘ যেন গর্জ্জিছে গগনে

সচূড়ে পাহাড় কাঁপে থর থর থরে

কাঁপে চারি দিকে বন যেন ভূকম্পনে

উথলে অদূরে সিন্ধু যেন ক্রোধ-ভরে

যবে প্রভঞ্জন আসে নির্ঘোষ ঘোষণে ৷

জিজ্ঞাসিনু ভারতীরে জ্ঞানার্থে সত্বরে 

কহিলা মা রৌদ্র নামে রস রৌদ্র অতি

রাখি আমি ওরে বাছা বাঁধি এই স্থলে

(কৃপা করি বিধি মোরে দিলা এ শকতি)

বাড়বাগ্নি মগ্ন যথা সাগররের জলে ৷

বড়ই কর্কশ-ভাষী নিষ্ঠুর দুর্ম্মতি

সতত বিবাদে মত্তপুড়ি রোষানলে ৷

৬২

দুঃশাসন

মেঘ-রূপ চাপ ছাড়ি বজ্রাগ্নি যেমনে

পড়ে পাহাড়ে শৃঙ্গে ভীষণ নির্ঘোষে

হেরি ক্ষেত্রে ক্ষত্র-গ্লানি দুষ্ট দুঃশাসনে

রৌদ্ররূপী ভীমসেন ধাইলা সরোষে

পদাঘাতে বসুমতী কাঁপিলা সঘনে

বাজিল ঊরুতে অসি গুরু অসি-কোষে

যথা সিংহ সিংহনাদে ধরি মৃগে বনে

কামড়ে প্রগাঢ়ে ঘাড় লহু-ধারা শোষে

বিদরি হৃদয় তার ভৈরব-আরবে

পান করি রক্ত-স্রোতঃ গর্জ্জিলা পাবনি ৷

মানাগ্নি নিবানু আমি আজি এ আহবে

বর্ব্বর পাঞ্চালী সতী পান্ডব-রমণী

তার কেশপাশ পর্শি আকর্ষিলি যবে

কুরু-কুলে রাজলক্ষ্মী ত্যজিলা তখনি ৷৭৬

৬৩

হিড়িম্বা

উজলি চৌদিক এবে রূপের কিরণে

বীরেশ ভীমের পাশে কর যোড় করি

দাঁড়াইলা প্রেম-ডোরে বাঁধা কায় মনে

হিড়িম্বা সুবর্ণ-কান্তি বিহঙ্গী সুন্দরী

কিরাতের ফাঁদে যেন  ধাইল কাননে

গন্ধামোদে অন্ধ অলি আনন্দে গুঞ্জরি

গাইল বাসস্তামোদে শাখার উপরি

মধুমাখা গীত পাখী সে নিকুঞ্জ-বনে ৷

সহসা নড়িল বন ঘোর মড়মড়ে

মদ-মত্ত হস্তী কিম্বা গন্ডার সরোষে

পশিলে বনেতে বন যেই মতে নড়ে 

দীর্ঘ-তাল-তুল্য গদা ঘুরায়ে নির্ঘোষে

ছিন্ন করি লতা-কুলে ভাঙি বৃক্ষ রড়ে

পশিল হিড়িম্ব রক্ষঃ রৌদ্র ভগ্নী-দোষে ৷৭৭

৬৪

ক্রোধান্ধ মেঘের চক্ষে জ্বলে যথা খরে

ক্রোধাগ্নি তড়িত-রূপে রকত-নয়নে

ক্রোধাগ্নি  মেঘের মুখে যেমতি নিঃসরে

ক্রোধ-নাদ বজ্রনাদে সে ঘোর ঘোষণে

ভয়ার্ত্ত ভূধর ভূমে খেচর অম্বরে

ঘন হুহুঙ্কার-ধ্বনি বিকট বদনে

রক্ষঃ-কুল-কলঙ্কিনি কোথা লো এ বনে

তুই ? দেখি আজি তোরে কে বা রক্ষা করে ৷

মুর্ত্তিমান্ রৌদ্র-রসে হেরি রসবতী

সভয়ে কহিলা কাঁদি বীরেন্দ্রের পদে

লৌহ-ক্রম চিল ওই সফরীর গতি

দাসীর  ছুটিছে দুষ্ট ফাটি বীর-মদে

অবলা অধীনা জনে রক্ষমহামতি

বাঁচাই পরাণ ডুবা তব কৃপা-হ্রদে।

৬৫

উদ্যানে পুষ্করিণী

বড় রম্য স্থলে বাস তোর লো সরসি 

দগধা বসধা যবে চৌদিকে প্রখরে

তপনের পত্রময়ী শাখা ছত্র ধরে

শীতলিতে দেহ তোর মৃদ্যু শ্বাসে পশি

সুগন্ধ পাখার রূপে বায়ু বায়ু করে ৷

বাড়াতে বিরাম তোর আদরে রূপসি

শত শত পাতা মিলি মিষ্টে মরমরে

স্বর্ণ-কান্তি ফুল ফুটি তোর তটে বসি

যোগায় সৌরভ-ভোগকঙ্করী যেমতি

পাট-মহিষীর খাটে শয়ন-সদনে ৷

নিশায় বাসর রঙ্গ তোর রসবতি

লয়ে চাঁদে কত হাসি প্রেম-আলিঙ্গনে 

বৈতলিক-পদে৭৮ তোর পিক-কুল-পতি

ভ্রমর গায়ক নাচে খঞ্জন ললনে ৷



৬৬



নতুন বৎসর

ভূত-রূপ সিন্দু-জলে গড়ায়ে পড়িল

বৎসর কালের ঢেউ ঢেউর গমনে ৷

নিত্যগামী রথচক্র নীরবে ঘুরিল

আবার আয়ুর পথে ৷ হৃদয়-কাননে

কত শত আশা-লতা শুখায়ে মরিল

হায় রে কব তা কারে কব তা কেমনে 

কি সাহসে আবার বা রোপিব যতনে

সে বীজ যে বীজ ভূতে বিফল হইল 

বাড়িতে লাগিল বেলা ডুবিবে সত্বরে

তিমিরে জীবন-রবি ৷ আসিছে রজনী

নাহি যার মুখে কথা বায়ু-রূপ স্বরে

নাহি যার কেশ-পাশে তারা-রূপ মণি

চির-রুদ্ধ দ্বার যার নাহি মুক্ত করে

ঊষা তপনের দূতী অরুণ-রমণী 

৬৭

কেউটিয়া সাপ

বিষাগার শিরঃ হেরি মন্ডিত কমলে

তোর যম-দূত জন্মে বিস্ময় এ মনে 

কোথায় পাইলি তুই কো্ন পুন্যবলে

সাজাতে কুচূড়া তোর হেন সুভূষণে ?

বড়ই অহিত-কারী তুই এ ভবনে ৷

জীব-বংশ-ধ্বংস-রূপে সংসার-মন্ডলে

সৃষ্টি তোর ৷ ছটফটি কে না জানে জ্বলে

শরীর বিষাগ্নি যবে জ্বালাস্ দংশনে ?

কিন্তু তোর অপেক্ষা রে দেখাইতে পারি

তীক্ষ্নতর বিষধর অরি নর-কুলে 

তোর সম বাহ্য-রূপে অতি মনোহারী

তোর সম শিরঃ-শোভা রূপ-পদ্ম-ফুলে ৷

কে সে ? কবে কবি শোন্  সে রে সেই নারী

যৌবনের মদে যে রে ধর্ম্ম-পথ ভুলে 



সূত্রঃ অন্তর্জাল



পাদটীকাঃ

৭১ ৷ রূপবান ৷

৭২ ৷ টোপর ৷

৭৩ ৷ সুমিত্রার পুত্র লক্ষণ ৷

৭৪ ৷ মহাভারতের প্রসঙ্গ ৷

৭৫৭৬৭৭ ৷ মহাভারতের বিভিন্ন পর্ব থেকে গৃহীত ৷

৭৮ ৷ স্তুতিপাঠক ৷

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.