![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-৬
পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
পর্ব-৪
পর্ব-৫
৫৭
শৃঙ্গার-রস
শুনিনু নিদ্রায় আমি নিকুঞ্জ-কাননে
মনোহর বীণা ধ্বনি দেখিনু সে স্থলে
রূপস৭১ পুরুষ এক কুসুম-আসনে
ফুলের চৌপর৭২ শিরে ফুল-মালা গলে ৷
হাত ধরাধরি করি নাচে কুতুহলে
চৌদিকে রমণী-চয় কামাগ্নি-নয়নে
উজলি কানন-রাজি বরাঙ্গ-ভূষণে
ব্রজে যথা ব্রজঙ্গনা রাস-রঙ্গ-ছলে ৷
সে কামাগ্নি-কণা লয়ে সে যুবকহাসি
জ্বালাইছে হিয়াবৃন্দে ফুল-ধনুঃ ধরি
হানিতেছে চারি দিকে বাণ রাশি রাশি
কি দেব কি নর উভে জর জর করি
কামদেব অবতার রস-কুলে আসি
শৃঙ্গার রসের নাম ৷ জাগিনু শিহরি ৷
৫৮
## ##########
নহি আমি চারু-নেত্রা সৌমিত্রি৭৩ কেশরী
তবে কেন পরাভূত না হব সমরে ?
চন্দ্র-চূড়-রথী তুমি বড় ভয়ঙ্করী
মেঘনাদ-সম শিক্ষা মদনের বরে ৷
গিরির আড়ালে থেকেবাঁধ লো সুন্দরি
নাগ-পাশে অরি তুমি দশ গোটা শরে
কাট গন্ডাদেশ তার দন্ড লো অধরে
মুহুর্মুহুঃ ভূকম্পনে অধীর লো করি
এ বড় অদ্ভুত রণ তব শঙ্খ-ধ্বনি
শুনিলে টুটে লো বল ৷ শ্বাস-বায়ু-বাণে
ধৈরয-কবচ তুমি উড়ায়ে রমণি
কটাক্ষর তীক্ষ্ন অস্ত্রে বিঁধ লো পরাণে ৷
এতে দিগম্বরী-রূপ যদি সুবদনি
ত্রস্ত হয়ে ব্যস্তে ক লো পরাস্ত না মানে ?
৫৯
সুভদ্রা
যথা ধীরে স্বপ্ন-দেবী রঙ্গে সঙ্গে করি
মায়া-নারী রত্নোত্তমা রূপের সাগরে
পশিলা নিশায় হাসি মন্দিরে সুন্দরী
সত্যভামা, সাথে ভদ্রা ফুল-মালা করে ৷
বিমলিল দীপ-বিভা পুরিল সত্বরে
সৌরভে শয়নাগার যেন ফুলেশ্বরী
সরোজিনী প্রফুল্লিলা আচম্বিতে সরে
কিম্বা বনে বন-সখী সুনাগকেশরী
শিহরি জাগিলা পার্থ যেমতি স্বপনে
সম্ভোগ-কৌতুকে মাতি সুপ্ত জন জাগে
কিন্তু কাঁদে প্রাণ তার স কু-জাগরণে
সাধে সে নিদ্রায় পুনঃ বৃথা অনুরাগে ৷
তুমি পার্থ ভাগ্য-বলে জাগিলা সুক্ষণে
মরতে স্বরগ-ভোগ ভোগিতে সোহাগে ৷৭৪
৬০
উর্ব্বশী
যথা তুষারের হিয়া ধবল-শিখরে
কভু নাহি গলে রবি-বিভোর চুম্বনে
কামানলে অবহেলি মন্মথের শরে
রথীন্দ্র হেরিলা জাগি শয়ন-সদনে
( কনক-পুতলী যেন নিশার স্বপনে)
উর্ব্বশীরে ৷ কহ দেবি কহ এ কিঙ্করে
সুধিলা সম্ভাষি শূর সুমধুর স্বরে,
কি হেতু অকালে হেথা মিনতি চরণে ?
উম্মাদা মদন-মদে কহিলা উর্ব্বশী
কামাতুরা আমি নাথ তোমার কিঙ্করী
সরের সুকান্তি দেখি যথা পড়ে খসি
কৌমুদিনী তার কোলে লও কোলে ধরি
দাসীরে অখর দিয়া অধর কাঁপে কাঁপি থর থরি ৷৭৫
৬১
রৌদ্র-রস
শুনিনু গম্ভীর ধ্বনি গিরির গহূরে
ক্ষুধার্ত্ত কেশরী যেন নাদিছে ভীষণে
প্রলয়ের মেঘ যেন গর্জ্জিছে গগনে
সচূড়ে পাহাড় কাঁপে থর থর থরে
কাঁপে চারি দিকে বন যেন ভূকম্পনে
উথলে অদূরে সিন্ধু যেন ক্রোধ-ভরে
যবে প্রভঞ্জন আসে নির্ঘোষ ঘোষণে ৷
জিজ্ঞাসিনু ভারতীরে জ্ঞানার্থে সত্বরে
কহিলা মা রৌদ্র নামে রস রৌদ্র অতি
রাখি আমি ওরে বাছা বাঁধি এই স্থলে
(কৃপা করি বিধি মোরে দিলা এ শকতি)
বাড়বাগ্নি মগ্ন যথা সাগররের জলে ৷
বড়ই কর্কশ-ভাষী নিষ্ঠুর দুর্ম্মতি
সতত বিবাদে মত্তপুড়ি রোষানলে ৷
৬২
দুঃশাসন
মেঘ-রূপ চাপ ছাড়ি বজ্রাগ্নি যেমনে
পড়ে পাহাড়ে শৃঙ্গে ভীষণ নির্ঘোষে
হেরি ক্ষেত্রে ক্ষত্র-গ্লানি দুষ্ট দুঃশাসনে
রৌদ্ররূপী ভীমসেন ধাইলা সরোষে
পদাঘাতে বসুমতী কাঁপিলা সঘনে
বাজিল ঊরুতে অসি গুরু অসি-কোষে
যথা সিংহ সিংহনাদে ধরি মৃগে বনে
কামড়ে প্রগাঢ়ে ঘাড় লহু-ধারা শোষে
বিদরি হৃদয় তার ভৈরব-আরবে
পান করি রক্ত-স্রোতঃ গর্জ্জিলা পাবনি ৷
মানাগ্নি নিবানু আমি আজি এ আহবে
বর্ব্বর পাঞ্চালী সতী পান্ডব-রমণী
তার কেশপাশ পর্শি আকর্ষিলি যবে
কুরু-কুলে রাজলক্ষ্মী ত্যজিলা তখনি ৷৭৬
৬৩
হিড়িম্বা
উজলি চৌদিক এবে রূপের কিরণে
বীরেশ ভীমের পাশে কর যোড় করি
দাঁড়াইলা প্রেম-ডোরে বাঁধা কায় মনে
হিড়িম্বা সুবর্ণ-কান্তি বিহঙ্গী সুন্দরী
কিরাতের ফাঁদে যেন ধাইল কাননে
গন্ধামোদে অন্ধ অলি আনন্দে গুঞ্জরি
গাইল বাসস্তামোদে শাখার উপরি
মধুমাখা গীত পাখী সে নিকুঞ্জ-বনে ৷
সহসা নড়িল বন ঘোর মড়মড়ে
মদ-মত্ত হস্তী কিম্বা গন্ডার সরোষে
পশিলে বনেতে বন যেই মতে নড়ে
দীর্ঘ-তাল-তুল্য গদা ঘুরায়ে নির্ঘোষে
ছিন্ন করি লতা-কুলে ভাঙি বৃক্ষ রড়ে
পশিল হিড়িম্ব রক্ষঃ রৌদ্র ভগ্নী-দোষে ৷৭৭
৬৪
ক্রোধান্ধ মেঘের চক্ষে জ্বলে যথা খরে
ক্রোধাগ্নি তড়িত-রূপে রকত-নয়নে
ক্রোধাগ্নি মেঘের মুখে যেমতি নিঃসরে
ক্রোধ-নাদ বজ্রনাদে সে ঘোর ঘোষণে
ভয়ার্ত্ত ভূধর ভূমে খেচর অম্বরে
ঘন হুহুঙ্কার-ধ্বনি বিকট বদনে
রক্ষঃ-কুল-কলঙ্কিনি কোথা লো এ বনে
তুই ? দেখি আজি তোরে কে বা রক্ষা করে ৷
মুর্ত্তিমান্ রৌদ্র-রসে হেরি রসবতী
সভয়ে কহিলা কাঁদি বীরেন্দ্রের পদে
লৌহ-ক্রম চিল ওই সফরীর গতি
দাসীর ছুটিছে দুষ্ট ফাটি বীর-মদে
অবলা অধীনা জনে রক্ষমহামতি
বাঁচাই পরাণ ডুবা তব কৃপা-হ্রদে।
৬৫
উদ্যানে পুষ্করিণী
বড় রম্য স্থলে বাস তোর লো সরসি
দগধা বসধা যবে চৌদিকে প্রখরে
তপনের পত্রময়ী শাখা ছত্র ধরে
শীতলিতে দেহ তোর মৃদ্যু শ্বাসে পশি
সুগন্ধ পাখার রূপে বায়ু বায়ু করে ৷
বাড়াতে বিরাম তোর আদরে রূপসি
শত শত পাতা মিলি মিষ্টে মরমরে
স্বর্ণ-কান্তি ফুল ফুটি তোর তটে বসি
যোগায় সৌরভ-ভোগকঙ্করী যেমতি
পাট-মহিষীর খাটে শয়ন-সদনে ৷
নিশায় বাসর রঙ্গ তোর রসবতি
লয়ে চাঁদে কত হাসি প্রেম-আলিঙ্গনে
বৈতলিক-পদে৭৮ তোর পিক-কুল-পতি
ভ্রমর গায়ক নাচে খঞ্জন ললনে ৷
৬৬
নতুন বৎসর
ভূত-রূপ সিন্দু-জলে গড়ায়ে পড়িল
বৎসর কালের ঢেউ ঢেউর গমনে ৷
নিত্যগামী রথচক্র নীরবে ঘুরিল
আবার আয়ুর পথে ৷ হৃদয়-কাননে
কত শত আশা-লতা শুখায়ে মরিল
হায় রে কব তা কারে কব তা কেমনে
কি সাহসে আবার বা রোপিব যতনে
সে বীজ যে বীজ ভূতে বিফল হইল
বাড়িতে লাগিল বেলা ডুবিবে সত্বরে
তিমিরে জীবন-রবি ৷ আসিছে রজনী
নাহি যার মুখে কথা বায়ু-রূপ স্বরে
নাহি যার কেশ-পাশে তারা-রূপ মণি
চির-রুদ্ধ দ্বার যার নাহি মুক্ত করে
ঊষা তপনের দূতী অরুণ-রমণী
৬৭
কেউটিয়া সাপ
বিষাগার শিরঃ হেরি মন্ডিত কমলে
তোর যম-দূত জন্মে বিস্ময় এ মনে
কোথায় পাইলি তুই কো্ন পুন্যবলে
সাজাতে কুচূড়া তোর হেন সুভূষণে ?
বড়ই অহিত-কারী তুই এ ভবনে ৷
জীব-বংশ-ধ্বংস-রূপে সংসার-মন্ডলে
সৃষ্টি তোর ৷ ছটফটি কে না জানে জ্বলে
শরীর বিষাগ্নি যবে জ্বালাস্ দংশনে ?
কিন্তু তোর অপেক্ষা রে দেখাইতে পারি
তীক্ষ্নতর বিষধর অরি নর-কুলে
তোর সম বাহ্য-রূপে অতি মনোহারী
তোর সম শিরঃ-শোভা রূপ-পদ্ম-ফুলে ৷
কে সে ? কবে কবি শোন্ সে রে সেই নারী
যৌবনের মদে যে রে ধর্ম্ম-পথ ভুলে
সূত্রঃ অন্তর্জাল
পাদটীকাঃ
৭১ ৷ রূপবান ৷
৭২ ৷ টোপর ৷
৭৩ ৷ সুমিত্রার পুত্র লক্ষণ ৷
৭৪ ৷ মহাভারতের প্রসঙ্গ ৷
৭৫৭৬৭৭ ৷ মহাভারতের বিভিন্ন পর্ব থেকে গৃহীত ৷
৭৮ ৷ স্তুতিপাঠক ৷
©somewhere in net ltd.