![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী পর্ব-৭
পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
পর্ব-৪
পর্ব-৫
পর্ব-৬
৬৮
শ্যামা-পক্ষী
আঁধার পিঞ্জরে তুই রে কুঞ্জ-বিহারি
বিহঙ্গ কি রঙ্গে গীত গাইস্ সুস্বরে ?
ক মোরে পূর্ব্বের সুখ কেমনে বিস্মরে
মনঃ তোর ? বুঝা রে যা বুঝিতে না পারি
সঙ্গীত-তরঙ্গ-সঙ্গে মিলি কি রে ঝরে
অদৃশ্যে ও কারাগারে নয়নের বারি ?
রোদন-নিনাদ কি রে লোকে মে করে
মধুমাখা গীত-ধ্বনি অজ্ঞাতে বিচারি ?
কে ভাবে হৃদয়ে তোর কি ভাব উথলে?
কবির কুভাগ্য তোর আমি ভাবি মনে ৷
দুখের আঁধরে মজি গাইস্ বিরলে
তুই পাখি মজায়ে রে মধু-বরিষণে
কে জানে যাতনা কত তোর ভব-তলে ?
মোহে গন্ধে গন্ধরস সহি হুতাশনে ৭৯
৬৯
দ্বেষ
শত ধিক্ সে মনেরে কাতর যে মনঃ
পরের সুখেতে সদা এ ভব-ভবনে
মোর মতে নর-কুলে কলঙ্ক সে জন
পোড়ে আঁখি যার যেন বিষ-বরিষণে
বিকশে কুসুম যদি গায় পিক-গণে
বাসন্ত আমোদে পুরি ভাগ্যের কানন
রের কি গুন দেখে কব তা কেমনে
প্রসাদ তোমার রমা কর বিতরণ
তুমি ? কিন্তু এ প্রসাদ নমি যোড় করে
মাগি রাঙা পায়ে দেবি দ্বেষের অনলে
(সে মহানরক ভবে ) সুখী দেখি পরে
দাসের পরাণ যেন কভু নাহি জ্বলে
যদিও না পাত তুমি তর ক্ষুদ্র ঘরে
রত্ন সিংহাসন মা গো কুভাগ্যের বলে
৭০
বসন্তে কানন-রাজি সাজে নানা ফুলে
নব বিধুমুখী বধূ যাইত বাসরে
যেমতি তবু সে নদ শোভে যার কূলে
সে কাননযদ্যপিও তার কলেবরে
নাহি অলঙ্কার তবু সে দুখ সে ভুলে
পড়শীর সুখ দেখি তবুও সে ধরে
মুর্ত্তি তার হিয়া-রূপ দরপণে তুলে
আনন্দে আনন্দ-গীত গায় মৃদু-স্বরে ৷
হে রমা অজ্ঞান নদ জ্ঞানবান্ করি
সৃজেছেন দাসে বিধি তবে কেন আমি
তব মায়া মায়াময়ি জগতে বিস্মরি
কু-ইন্দ্রিয়-বশে হব কুপথ-গামি ?
এ প্রসাদ যাচি পদে ইন্দিরা সুন্দরি
দ্বেষ-রূপ ইন্দ্রিয়ের কর দাসে স্বামী ৷
৭১
যশঃ
লিখিনু কি নাম মোর বিফল যতনে
বালিতে রে কাল তোর সাগরের তীরে ?
ফেন-চূড় জল-রাশি আসি কি রে ফিরে
মুছিতে তুচ্ছেতে ত্বরা এ মোর লিখনে ?
অথবা খোদিনু তারে যশোগিরি-শিরে
গুণ-রূপ যন্ত্রে কাটি অক্ষর সুক্ষণে
নারিবে উঠাতে যাহে ধুয়ে নিজ নীরে
বিস্মৃতি বা মলিনিতে মলের মিলনে ?
শূন্য-জল জল-পথে জলে লোক স্মরে
দেব-শূন্য দেবালয়ে অদৃশ্যে নিবাসে
দেবতা ভস্মের রাশি ঢাকে বৈশ্বানরে ৷
সেই রূপে ধড় যবে পড়ে কাল-গ্রাসে
যশোরূপাশ্রমে প্রাণ মর্ত্ত্যে বাস করে
কুযশে নরকে যেন সুযশে আকাশে ৷
৭২
ভাষা
O matre pulchra-
Filia pulchrior!”
HOR.
লো সুন্দরী জননীর
সুনন্দরীতরা দুহিতা
মূঢ় সে পন্ডিতগণে তাহে নাহি গণি
কহে যে রূপসী তুমি নহ লো সুন্দরি
ভাষা শত ধিক্ তারে ভুলে সে কি করি
শকুন্তলা তুমি তব মেনকা জননী ?
রূপ-হীনা দুহিতা কি মা যর অপ্সরী ?
বীণার রসনা-মূলে জন্মে কি কুধ্বনি ?
কবে মন্দ-গন্ধ শ্বাস শ্বাসে ফূলেশ্বরী
নলিনী ? সীতারে গর্ভে ধরিলা ধরণী ৷
দেব-যোনী মা তোমার কাল নাহি নাশে
রূপ তাঁর তবু কাল করে কিছু ক্ষতি ৷
নব রস-সুধা কোথা বয়সের হাসে৮০ ?
কালে সুবর্ণের বর্ণ ম্লান লো যুবতি
নব শশিকলা তুমি ভারত-আকাশে
নব-ফুলে বাক্য-বনে নব মধুমতী ৷
৭৩
সাংসারিক জ্ঞান
কি কাজ বাজায়ে বীণা কি কাজ জাগায়ে
সুমধুর প্রতিধ্বনি কাব্যের কাননে ?
কি কাজ গরজে ঘন কাব্যের গগনে
মেঘ-রূপে মনোরূপ ময়ূরে নাচায়ে ?
স্বতরিতে তুলি তোরে বেড়াবে কি বায়ে৮১
সংসার-সাগর-জলে স্নেহ করি মনে
কোন জন ? দেবে৮২ অন্ন অর্দ্ধ মাত্র খায়ে৮৩
ক্ষুধার কাতর তোরে দেখি রে তোরণে ?
ছিঁড়ি তার-কূল বীণা ছুড়ি ফেল দুরে
কহে সাংসারিক জ্ঞান ভবে বৃহস্পতি ৷
কিন্তু চিত্ত-ক্ষেত্রে যবে এ বীজ অঙ্কুরে
উপায়ে ইহায় হেন কাহর শকতি ?
উদাসীন-দশা তার সদা জীব-পুরে
যে অভাগা রাঙা পদ ভজে মা ভারতি ৷
৭৪
পুরুরবা
যথা ঘোর বনে ব্যাধ বধি অজাগরে৮৪
চিরি শিরঃ তার লভে অমূল রতনে ৮৫
বিমুখি কেশীরে আজি হে রাজা সমরে
লভিলা ভুবন-লোভ তুমি কাম-ধনে ৮৬
হে সুভগ যাত্রা তব বড় শুভ ক্ষণে
ঐ যে দেখিছ এবে গিরির উপরে
আছন্ন হে মহীপতি মুর্চ্ছা-রূপ ঘনে
চাঁদেরে কে ও তা জান ? জিজ্ঞস সত্বরে
পরিচয় দেবে সখী সমুখে যে বসি ৷
মানসে কমল বলি দেখছ নয়নে
দেখেছ পূর্ণিমা-রাত্রে শরতের শশী
বধিয়াছ দীর্ঘ-শৃঙ্গী কুরঙ্গে কাননে
সে সকলে ধিক্ মান ওই হে উর্ব্বশী
সোণার পুতলি যেন পড়ি অচেতনে ৷
৭৫
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
স্রোতঃ-পথে বহি যথা ভীষণ ঘোষণে
ক্ষণ কাল অল্পায়ুঃ পয়োরাশি চলে
বরিষায় জলাশয়ে দৈব-বিড়ম্বনে
ঘটিল কি সেই দশা সুবঙ্গ-মন্ডলে
তোমার কোবিদ বৈদ্য ? এই ভাবি মনে
নাহি কি হে কেহ তব বান্ধবের দলে
তব চিতা-ভস্মরাশি কুড়ায়ে যতনে
স্নেহ-শিল্পে গড়ি মঠ রাখে তার তলে ?
আছিলে রাখাল-রাজ কাব্য-ব্রজধামে
জীবে৮৭ তুমি নানা খেলা খেলিলা হরষে
যমুনা হয়েছ পার তেঁই গোপগ্রামে
সবে কি ভুলিল তোমা ? স্মরণ-নিকষে
মন্দ-স্বর্ণ-রেখা-সম এবে তব নামে
নাহি কি হে জ্যোতিঃ ভাল স্বর্ণের পরশে ?
৭৬
শনি
কেন মন্দ গ্রহ বলি নিন্দা তোমা করে
জ্যোতিষী ? গ্রহেন্দ্র তুমি শনি মহামতি
ছয় চন্দ্র৮৮ রত্নরূপে সুবর্ণ টোপরে
তোমার সুকটিদেশে পর গ্রহ-পতি
হৈম সারসন৮৯ যেন আলোক-সাগরে
সুনীল গগন-পথে ধীরে তব গতি ৷
বাখানে নক্ষত্র-দল ও রাজ-মুরতি
সঙ্গীতে হেমাঙ্গ বীণা বাজায়ে অম্বরে ৷
হে চল রশ্মির রাশি সুধি কোন জনে
কোন জীব তব রাজ্যে আনন্দে নিবাসে ?
জন-শূন্য নহ তুমি জানি আমি মনে
হেন রাজা প্রজা-শূন্য প্রত্যয়ে না আসে
পাপ পাপ-জাত মৃত্যু জীবন-কাননে
তব দেশে কীটরূপে কুসুম কি নাশে ?
সূত্রঃ অন্তর্জাল
টীকাঃ
৭৯ ৷ অগ্নিদাহন সহ্য করেও ধূপ গন্ধ বিতরণ করে এবং মুগ্ধ করে ৷
৮০ ৷ পরিণত বয়স্কার হাসি ৷
৮১ ৷ বেয়ে ৷
৮২ ৷ দিনকালে ৷
৮৩ ৷ খেয়ে ৷
৮৪ ৷ শুদ্ধ শব্দ অজগর ৷
৮৫ ৷ অমুল্য রত্ন এটি কাল্পনিক বিশ্বস মাত্র ৷
৮৬ ৷ কামনার ধন ৷
৮৭ ৷ জীবনকালে ৷
৮৮ ৷ উপগ্রহ বোঝাতে চন্দ্র শব্দের ব্যবহার ৷ শনিগ্রহের ছয়টি উপগ্রহ ৷ প্রকৃতপক্ষে আটটি ৷
৮৯ ৷ কোমরবন্ধ ৷
©somewhere in net ltd.