নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

জাহিদুল হক শোভন

এই শহরের বোকা ছেলেটি।

জাহিদুল হক শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: অভিলাষ

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫১

আপনি কি আমার উপর বিরক্ত? বিরক্ত নিয়ে আমার সাথে সংসার করা ঠিক হচ্ছে? এতো বিরক্ত নিয়ে একসাথে থাকতেছেন, একসাথে খাচ্ছেন সব কি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে না? ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করে? এটা তো নিজের আত্মার মধ্যে দীর্ঘশ্বাস তৈরি করে, হতাশা তৈরি করে, আর জানেন তো এই দীর্ঘশ্বাস আর হতাশাই এক সময় জীবনকে শেষ করে দেয়। এমন করার তো দরকার নেই। আমি কি ঠিক বললাম?

আমি অনেকক্ষন ভাবলাম এমন করে বলার কারণ কি হতে পারে? ফাহমিদা কেন আমাকে এমন করে বললো? আমি মাথা নিচু করে শুধু অনুভব করলাম ভিন্নতা নিয়ে, চিন্তা শক্তি নিয়ে, একটা মানুষ কখন এমন করে ভাবতে পারে। এই ভাবনাটা হুট করেই তৈরি হয় না। দীর্ঘ সময় ধরে এসব কথা অন্তরে জমা হয়, ধারণ হয়। এই ধারণ ক্ষমতা যখন অতিক্রম করে তখনই মানুষ তার ভিতরের কথা জানিয়ে দেয়। আমি তাকে ইতস্তত হয়ে জানালাম “আমরা মানুষরা প্রত্যেকে ইচ্ছা, পছন্দ, আচার, আচরণ সব কিছু থেকে ভিন্ন। এতো কিছুর পরও আমরা নিজেকে নিজ নিজ কিছু বিষয় ছাড় দিয়ে বা মানিয়ে একসাথে থাকি। কিন্তু আমরা কতটুকু পারি? এই পারা আর না পারার মাঝে অনেক প্রশ্ন থাকে, আবেগ থাকে, মায়া থাকে, কোন না কোন কারণের মাঝে ভালোবাসা থাকে। আর এসব আবেগ, মায়া, ভালোবাসার কারণে নিজ নিজ ইচ্ছা ছাড় দিলেও আমরা একসাথে থেকে যাই, জীবন পার করে দেই। এই জীবন পার করে দেয়া চলাকালীন সময়ে আমরা আরো কারণ খুঁজি, অনুভূতি খুঁজি, আরও একটু ভালোবাসা বাড়ানো যায় কিনা। যেটা দিয়ে রাগ অভিমান হলেও সেটা যেন আকাশের মেঘের মত কেটে যায়। তোমার শেষের কথাটা সত্য, এতো কিছুর মাঝে অন্তরে যখন দীর্ঘশ্বাস তৈরি হয় তখনি জীবন শেষ করে দেয়, জীবনে আসে বিচ্যুত। যা কিছু হোক দীর্ঘশ্বাস ঠায় দেয়া ঠিক না। কিন্তু আমরা মানুষ, আমাদের ধৈর্য্য শক্তি খুবই কম। আমরা চাইলেও দীর্ঘশ্বাস এড়াতে পারি না। এই দীর্ঘশ্বাস কেন এড়াতে পারি না জানো?

এইটুকু বলে আমি থামলাম। ফাহমিদা চেহারায় একটা উদাসীন ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। শুধু নিরব চোখে মাথা নেড়ে বলে “উহুম”

আমি তাকে শান্তভাবেই বললাম “আমার জীবনে ইচ্ছার দাম নেই, জীবনে সফলতা বলতে কিছু নেই, কথার দাম নেই, আমার মনের মত হয়নি, যেটা বলা হলো সেটা কেন হলো না, এটা করার ইচ্ছা, ওটা করার ইচ্ছা কিন্তু কিছুই হয় না, এই সব গুলোই না পাওয়ার আক্ষেপ। এই আক্ষেপটা যতদিন আমাদের মানুষের ভিতরে থাকবে ততদিন দীর্ঘশ্বাস হবে। আমরা একে অপরকে যখন ভালোবাসি, কিংবা একসাথে সংসার করি, কিংবা কোন কিছু করার চেষ্টা করি, এরমাঝে আমাদের মতের অমিল হতেই পারে, ইচ্ছার মিল না হতেই পারে, যেটা করতে চেয়েছিলাম সেটা নাও হতে পারে। আমরা যখন আমাদের জীবনের কাছের মানুষকে নিজের ইচ্ছার বিষয়ে বলি আর তখনি কিছু কিছু বিষয় বারণ করা হয় বা অমিল দেখা দেয়। কিন্তু আমরা বুঝি না কেন বারণ করা হলো, এর কারণ কি হতে পারে, এই বারণেন মাঝে দুজনের উপকার হবে নাকি অপকার হবে। কিন্তু আমরা এসব না ভেবে নিজ নিজ স্বার্থ বা ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে চিন্তাশীল হয়ে যাই, বাকবিতণ্ডতায় জড়িয়ে যাই। একজন স্বামী/স্ত্রী যখন ইচ্ছা প্রকাশ করবে তখন দুজনের দিক চিন্তা করেই ইচ্ছা প্রকাশ করতে হয়। এই সংসার জীবনে হাজার হাজার ছোট বড় ইচ্ছা থাকে, চাহিদা থাকে। আমাদের জীবনে যখন এই অমিল/বারণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে, তখনি আক্ষেপ হয় আর এই আক্ষেপই দীর্ঘশ্বাস তৈরি করে, জীবন শেষ করে দেয়। তখন ভালোবাসাটা থাকে না। আর এটা একদিনে হয় না।

ফাহমিদা আমার কথার কোন প্রত্যুত্তর দেয় না। ও নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে আমি কি বুঝাতে চেয়েছি। ওর সাথে আমার সংসার জীবন মাত্র পাঁচ মাস। এই সামান্য কয়েকমাসে বুঝতে চেষ্টা করেছি, জানতে চেষ্টা করেছি, ভালোবাসতে চেষ্টা করেছি। এই জানা বুঝা ভালোবাসার মাঝে একে অপরের ইচ্ছাকে সামনে এনেছি বিভিন্ন সময়ে। আমাদের সামনে অনেক সময় পরে আছে। কিন্তু এই সামান্য সময় পার করার মাঝে আমি তার অনেক ইচ্ছাকেই ডিরেক্ট নিষেধ না করলেও নানাভাবে বুঝিয়েছি, কিন্তু ও যখন ইচ্ছা প্রকাশ করতো তখন নিজেকে প্রাধান্য দিয়েই ভাবতো। আমি জানি তার কোন দোষ নেই। হয়তো সে জানে না, বিয়ের পর স্বামী/স্ত্রীর কোন ইচ্ছা থাকলে দুজনের দিক/সংসারের দিক/সন্তান থাকলে সকল বিষয়ে চিন্তা করে ইচ্ছা প্রকাশ করতে হয়। আমি যখন ওর কথা বার্তায় মানিয়ে নিতে পারছিলাম না, তখনি আমি ওর সাথে কম কথা বলা শুরু করি, নিজেকে যতটা পারতাম চুপচাপ রাখতাম। আমি ধারণা করেছিলাম ওকে বুঝতে আরো সময় লাগবে। এইভাবে বাকবিতণ্ডতায় জড়ানো যাবে না। ও আমার এমন চলাফেরা দেখে এটা অন্তত বুঝতে পেরে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে বিরক্ত কিনা। কিন্তু আমি ওর প্রতি বিরক্তই হইনি। ওর চুপ থাকা দেখে আমিও আর কিছু বলি না। ও শুধু বললো “খেতে আসেন”।

আমার ছোট বেলা কেটেছে একটা ভঙ্গর পরিবেশে। আমার বয়স যখন আট বছর তখন আমার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়েছিলো। এতো অল্প বয়সে এই অনুভূতিটা বুঝার আমার কথা নয়। বাবা তার কাছে আমাকে রেখে দিয়েছিলেন। আমার বয়সটা যত অতিক্রম হচ্ছিলো আমি আস্তে আস্তে একটা জিনিস অনুভব শুরু করলাম কি যেন নেই আমার জীবনে। আমি পরিচিত হতে লাগলাম শূন্যতার সাথে। সবাই যখন ঘুমিয়ে যেত মাঝে মাঝে আমি কেন যেন কাঁদতাম। বাবাও কেমন যেন বছর যত যাচ্ছিলো তত নিরব হয়ে গেছিলো। আমার দাদা দাদি বাবাকে আবার বিয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু বাবা করেনি। মা অবশ্য ঠিকি বিয়ে করেছিলো। যে বছর মা বিয়ে করেছিলো তার মাস তিনেক পর একরাতে ঘুমের মাঝেই বাবা মারা গিয়েছিলেন। যেই রাতে বাবা মারা গিয়েছিলো তার কয়েকদিন আগে থেকেই বাবা আমার খুব কাছে কাছে থাকতেন। আমি কি করি, খাওয়া, গোসল, মাথার চুল মুছে দেওয়া, একপাশ করে চুলের সিথি করে আচড়িয়ে দেয়া, নিজ হাতে খাইয়ে দেয়া সব কিছু করেছিলেন। আমাকে একবার বললেন “আমাদের ভিতর যে আত্মাটা থাকে সেখানে আপন হয়ে কেউ না কেউ জড়িয়ে যায়, তখন নিজেকে নিয়ে একলা ভাবা ঠিক না। বড় হয়ে তোমার আত্মার মাঝেও যখন কেউ আসবে তখন নিজেকে নিয়েও একা ভাববা না, তাকে প্রাধান্য দিবা।” এসব কথা উপলব্ধি করার বয়স আমার ছিলো না। কি অদ্ভুত আজ এতো বছর পর আমি বুঝতে পারি বাবা কেন আমাকে এই কথাগুলো বলেছিলো। ঠিক তখন যদি আমি বুঝতে পারতাম তাহলে বাবাকে জিজ্ঞাসা করতাম “বাবা তোমার আত্মার মাঝে আমার স্থান কি ছিলো না?”

অবশ্য বাবার মৃত্যুর পর মা আমাকে বেশ কয়েকবার নিতে এসেছিলো। কিন্তু দাদি আমাকে দেয়নি। আমারও যেতে ইচ্ছে হয়নি।কেন ইচ্ছে হয়নি জানি না।

আমার জীবনটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। কিন্তু এটাই সত্য যে উপরে ঐযে একজন বিধাতা আছে তিঁনি এমন করেই লিখে রেখেছেন বলেই আমার এই জীবন। আমি আসলে আমার এই জীবন নিয়ে যতটা দুদর্শা করার কথা ছিলো কিন্তু তা হতে দেয়নি আমার দাদা আর দাদি। তারা সবসময় সেই ছোটবেলা থেকেই বুঝিয়েছে, এই জীবনটা আল্লাহ থেকে প্রদত্ত। এই জীবনটা পরীক্ষার, এই দুনিয়ায় এমনি এমনি পাঠায় নাই। সব পরিস্থিতিতে তাঁর প্রতি ভরসা রাখতে শিখিয়েছেন, ধৈর্য্য ধরতে শিখিয়েছেন। সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। আমি জানিনা এই পরীক্ষায় কতটা সফল হতে পারবো।

বেশ কিছুদিনপর এক বিকেল বেলা খেয়াল করলাম ফাহমিদা বারান্দার এক কোনে জড়োসড়ো হয়ে বাহিরে দিকে তাকিয়ে বসে আছে। কেমন যেন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিলো। একবার ভাবলাম তাকে জিজ্ঞেস করি “মানুষ হঠাৎ করেই পরিবর্তন হয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে। মানুষের এই পরিবর্তন নিয়ে মানুষের নানা অভিযোগ থাকলেও সময়কে নিয়ে কেউ অভিযোগ করে না। তোমার কি সময় ভালো যাচ্ছে না?” আমি তাকে এসব কিছুই আস্ক করিনি। ভাবলাম পরে যদি এই সময়ের মূল্য নিয়ে প্রতিভাষ চায় আমি কী বলবো? কিন্তু আমি তার কাছে গিয়ে তাকে বললাম “বিকেলের আকাশ আর রাতের আকাশের মধ্যে ভিন্নতা কি বলতে পারো?” ও আমার উপস্থিতি টের পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নড়ে বসে। তারপর একটু চিন্তা করে বললো “পার্থক্য কি তা জানি না। তবে আকাশের বিভিন্ন রুপটা যতবার নিজের মাঝে ধারণ করি ততবার বিমোহিত হই। কখনো মেঘলা, কখনো রোদেলা, কখন ‍রুপালি, কখনো গৌধূলি। জানেন অনুভূতিরা তখন বড্ড বেহায়া হয়ে উঠে নানা বাহানায় তাকে ছোয়ার জন্য। আকাশকে আপন করে দেখতে হয়, পর বা দূরের হিসেবে দেখতে নেই এটা কি জানেন?” আমার মাথায় তেমন কোন উত্তর না আসলেও আমি বললাম “দূরের আকাশ মন খারাপ করে দেয় ঠিক আমাদের মানুষের মত হয়তো এমনটা” ও কিছু না বলে বাহিরের আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের দিকে তাকিয়েই বললো “আপনাকে একটা কবিতা শোনাই। আমার পছন্দের কবিতা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর...

সাতশো একান্নতম আনন্দটি পেয়েছি সেদিন
যখন বিকেলবেলা মেঘ এসে
ঝুঁকে পড়েছিল, গোলাপ বাগানে
এবং তোমার পায়ে ফুটে গেল লক্ষ্মীছাড়া কাঁটা
তখন বাতাসে ছিল বিহ্লতা,
তখন আকাশে ছিল কৃষ্ণক্লান্তি আলো,
ছিল না রঙের কোলাহল
ছিল না নিষেধ...

এই কয়েকমাসের সংসারে ও আমাকে অসংখ্যবার কবিতা শুনিয়েছে। যখন ও কবিতা শোনায় আমি বিস্মিত হয়ে নিজের মাঝে ধারণ করি। একবার তাকে বলেছিলাম “এতো ভালোবাসা আর মোহনিত চোখচোড়া নয়নে আমাকে কেউ কবিতা শোনায়নি। তোমার বলার ধরনে কত প্রগাঢ় অনুভূতি হয় সেটা খেয়াল করেছো? ও শুধু হেসেছিলো। এখনও আমি চুপকরে প্রগাঢ়াতাকে অনুভব করি। আমার চুপ থাকা দেখে ও এবার আমার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত হয়ে বললো “আমরা মেয়েরা অণুভূতির পাগল। আমরা মেয়েদের সখ আহ্লাদ একটু বেশি কাজ করে। জানেন আমাদের প্রত্যেকের একজন খুব কাছের মানুষের প্রয়োজন হয়। আমাদের ভিতরের কথা গুলো জানানোর জন্য, বলার জন্য। আমার আসলে এমন কেউ ছিলো না। আপনাকে যখন তিনবার কবুল বলে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করলাম তখন থেকেই মনে প্রাণে স্থির করলাম আপনিই সেই একজন। যাকে সব কিছু বলতে পারবো। জানেন আমি ইচ্ছে করেই এই সেই কথা, যে কথার কোন আগামাথা নেই, সেইগুলোও এমনি আপনাকে বলতাম। নানা রকম ইচ্ছা প্রকাশ করতাম। এটা কেন করতাম জানেন? শুধুমাত্র একটু কথা বলার জন্য। আমার জীবনের প্রথম মানুষ আপনি, প্রথম ভালোবাসা। এই ভালোবাসা একে অপরকে কাছে আনে। যেখানে বিষণ্নতা, একাকীত্ব চাইলেও আসতে পারে না।”

এইটুকু বলে ও থামে। আমি মাথা নেড়ে বললাম “কথা সত্য” ও আবার বলা শুরু করলো “আপনার আসলে দোষ নেই। দোষটা আমার। আমার বুঝা উচিৎ ছিলো সবার ধৈর্য্য ক্ষমতা এক না, আবেগ এক না। আমি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করেছি। আমার এটা বুঝা উচিৎ ছিলো আমার এই কথা, সেই কথার বাকবিতণ্ডতায় ছোট ইস্যু থেকে বড় ইস্যু হয়ে যেতে পারতো। সমস্যা জানান দিয়ে আসে না। কিন্তু আপনি কথার একটা সময়ে চুপ হয়ে যেতেন। পরিস্থিতি একদম অন্য রকম করে ফেলতেন। আমি চাইলেও আর কিছু বলতে পারতাম না। বিষয়টা আমার কাছে অন্যরকম লেগেছিলো। কারণ এমন করে চললে একটা সময় দুরত্ব তৈরি হবে, মোহ, ভালোবাসা কমতে থাকবে। বিরক্ত ভাব আসবে। তখন ভালো কথা বললেও বিষের মত লাগবে। এই দুরত্ব আসা, ভালোবাসা কমা সেটা একদিনে তৈরি হয় না। এমন বিষয় যখন বারবার পুনরাবৃত্তি হয় তখনি মনে নেগেটিভ চিন্তা আসে। আপনি চাকরি করে বাসায় আসেন, সব সময় মেজাজ এক নাও থাকতে পারে এটা আমি এই কয়েকদিনে বুঝতে পেরেছি। আমি জানি আপনার জীবনে কি গিয়েছে। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই এসব পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে বড় হয়েছেন। আমি যখন এই সেই বেহুদা কথাবার্তা বলতাম, আপনি বুঝাতেন, বারণ করতেন। বিশ্বাস করেন আমার ভিতরটা একদম শীতল হয়ে যেত। মনে হতো আমি যদি অজান্তে বা ভুল করে কোন কিছু করে ফেলি আপনি আমাকে বুঝাবেন, শাসন করবেন। এই বিশ্বাসটা আমার তৈরি হয়েছে। আপনি আমাকে না বুঝালে, না শাসন করলে, কে করবে? আমি জানি আমি জানি একজন স্ত্রীর কাছে একজন স্বামীর মর্যাদা কতখানি। অনেক নারী মনে করে বিয়ের পর নারী, পুরুষের কাছে শুধুমাত্র একজন দাষী। স্বামী যা বলবে তা মানতে হবে, করতে হবে, চলতে হবে। কিন্তু বিষয়গুলো এমন না। আমি একজন মুসলিম মেয়ে, আমি জানি সংসার জীবনে স্বামী স্ত্রীর হকের ব্যাপারে। অধিকারের ব্যাপারে। আপনার প্রতি আমার অনুরোধ আমার সাথে চুপ হয়ে যাইয়েন না। আমাকে দূরের আকাশ করিয়েন না। করবেন না তো? বলেন করবেন না?

আমি ওর মায়া মায়া চেহরাটার দিকে নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে থাকি। কি অদ্ভুত, ও এমন করে বলতে পারে, চাইতে পারে, অভিলাষ জানান দিতে পারে কখনোও ভাবিনি। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম কি বলা যায়। সেই প্রথম যখন বিয়ের রাতে বিছানায় চুপটি করে নিচের দিকে মুখ করে বসেছিলো, আমি তখন ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম “আপনাকে দেখতে পারি?” অনেকক্ষণ পর ফাহমিদা চোখ বন্ধ করে মুখ আমার দিকে করেছিলো। ঠিক তখন যেমন ওর প্রতি প্রথম মায়া জন্মেছিলো আজ ঠিক তেমন সেই মায়া হলো। আমি তার হাতটা আলতো করে ধরে বললাম “তোমার অভিলাষের প্রতি আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা সব সময় থাকবে। আমাদের মত মধ্যবিত্ত মানুষের অভিলাষগুলো ক্ষুদ্র। কিন্তু এই অভিলাষে জড়িয়ে থাকা ভালোবাসাটা অনকে বড়। এই অভিলাষের জীবনে ভালোবাসাটা যতদিন থাকবে, যতদিন শ্বাস থাকবে ততদিন একজীবন বেশ কাটিয়ে দেয়া যাবে। কাছের আকাশ হয়েই থাকো আর কিচ্ছু না...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.