নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ অনেক নীল । মানুষ অনেক লাল । মানুষ অনেক বাদামী ।

মানুষ অনেক নীল । মানুষ অনেক লাল । মানুষ অনেক বাদামী ।

জাহিদ ১৯৯

মেহরাব হাসান

জাহিদ ১৯৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খোলা চিঠি

৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:৪৩

তাগাদা নেইঃ

সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।অপেক্ষা ছিলো এক ঝিলিক রৌদ্রের।সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত , রাত পেরিয়ে গভীর রাত।বৃষ্টি থামছেই না।আমারও বাড়ি ফেরার তাগাদা নেই,বৃষ্টি ঝড়ুক তবুও যদি কিছু ধুলো মুছে যায়,যাক।একের পর এক বাস বাসস্ট্যান্ডে এসে থামছে যাত্রী ভরে নিয়ে আবার চলেও যাচ্ছে।এক একটা বাস পাগলের মতো,পেটে তরীব ক্ষুধা থাকলে যেমন হয়।কোন কিছুই বাদ দিচ্ছে না বাস খোঁড়া মানুষ,কানা মানুষ,চাকুরীজিবী,বুদ্দিজীবি,মহিলা সব সব খাচ্ছে বাস আর পাগলের মতো ছুটছে।কারো জন্য কোন অপেক্ষা নেই,বাড়ি ফেরার তাগাদা নেই,আমার জন্যে অপেক্ষায় থাকা কেউ নেই এমনকি যাত্রীর জন্য পাগল বাস গুলোও নয়।অবিরাম ঝরে পরা বৃষ্টি কারো জন্যই অপেক্ষা করছে না।বাড়ি ফিরে দেখবো ঘরে মাকড়সারা জাল বুনছে,ঘরের ছাদ থেকে বট গাছের লতার মতো ঝুলে ঝুলে আছে মাকড়সা গুলো।কতোগুলো ইঁদুর খাটের নিচে লুকোচুরি খেলছে।আলমারিতে তুলে রাখা শরৎ , রবি, নজরুলের উপর ধুলোর আস্তরন ।টেবিল চেয়ার আর বাবার ছবিরটার উপর জমে থাকা ধুলো আস্তরন বৃষ্টির ঝাপটায় কাঁদার মতন হয়ে যাবে।আমি বাড়িতে ফেরার পর মূল দরজায় তালা খুলে ঢুকতে হবে,এর আগে যতবার বাড়ি ফিরেছি মা দরজা খুলে দিয়ে বলতো এসেছিস।

ঘরে ঢুকে দেখতাম পরিপাটি করে সাজানো আমার ঘড়।বিছানায় নতুন চাদর,চকচকে টেবিলের উপর কলমদানি একপাশে রাখা কিছু বই।দেয়ালে লাগানো বাবার ছবিটার উপর দেখতাম টাটকা বকুল ফুলের মালা।আমি গা থেকে কাপড় খোলার আগেই মা শরবত নিয়ে এসে বলতো গুড়ের শরবতটা খেয়ে নে।

মা আমার পছন্দের খাবার গুলো কখন কিভাবে যেনো সামনে এনে বলতো সব গুলো খেয়ে তারপর বাহিরে যাবি।সমস্যা বাধতো বাড়ি থেকে আসার সময় আমি ব্যাগ গুছিয়ে বের হবো হঠাৎ দেখি মা নেই।এ ঘর ও ঘর খুঁজে না পেয়ে বাহিরের পুকুর পারের জলপাই গাছের নিচে বসে মা চোখ মুছতে মুছতে বলতো আবার কবে আসবি?আমি মাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে বলতাম এইতো সামনের মাসে ভার্সিটি এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ হবে।

সেই চেনা রাস্তা,যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য থাকতো আকুলতা। বাড়ি ফিরে হয়তো ধুলোয় জড়ানো বিছানাটা ঠিক ঠাক করতে হবে,বৃষ্টির ঝাপটায় কাঁদার মতন হয়ে যাওয়া বাবা মার ছবি দুটো পরিষ্কার করে দিবো। হয়তো ফিরে আসার পর আবারো ধুলো জমবে,মাকড়সারা বটের লতার মতো ঘর জুরে ঝুলে থাকবে।

তারচেয়ে বরং এই বাসস্ট্যান্ডেই থাকি।পাগল হয়ে যাওয়া বাস দেখি,ক্ষুধর্ত বাস দেখি।রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়ে যাচ্ছে,রাতটা এখানে কাটিয়ে সকালে বাড়িতে না গিয়ে মেসে ফিরে যাবো।আমার বাড়ির ফেরার কোন তাগাদা নেই,আমার জন্য অপেক্ষায় কেউ নেই।বৃষ্টির মতো কারো জন্য অপেক্ষা না করে ঝরে চলছে আমার দুচোখ।



মেহরাব হাসান

মর্ডান বাসষ্ট্যান্ড,রংপুর

৩০।০৫।১৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.