নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিভৃতচারী, ঘুরে বেড়াই পথে-প্রান্তরে।।

জমীরউদ্দীন মোল্লা

ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ। ধ্বংস-নিশান উঠুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি’॥

জমীরউদ্দীন মোল্লা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমিয়াখুম-দ্যা হিডেন বিউটি অফ বাংলাদেশ।।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৮



ট্রাভেলিং আমার রক্তে মিশে আছে কিন্তু তারপর ও বেকার হওয়ার কারনে যথেষ্ট ট্যুর দেয়া হয় না। তথাপিও যে কয়েকটা ট্যুর ই দেয়া হয় সঠিক তথ্যের অভাবে বেশ রকম ঝামেলায় পড়তে হয় উপরন্তু খরচ ও বেড়ে যায়। তাই আমি আমার ট্রাভেলিংর অভিজ্ঞতার আলোকে অন্তত ডিটেইলস তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো। যাতে যারা ঘুরতে যাবে তারা উপকৃত হয়।

আমার এই পোস্টটি অমিয়াখুম ভ্রমণের পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন হলেও আমি মোটামুটি থানচি উপজেলার অন্যান্য যেসব দেখার মত সুন্দর প্লেইস আছে সেগুলা নিয়ে ও বলবো। আপনি এক অমিয়াখুম দেখতে গেলেই অন্তত আরো ৫ টা দর্শনীয় স্থান দেখতে পাবেন। এগুলো হচ্ছে, বান্দরবন থেকে থানচি আসার পথেই মিলনছড়ি, শৈলপ্রপাত, তিন্দু বড় পাথর, রেমক্রি ফলস, নাফাখুম, সাতভাইখুম, ভেলাখুম ও নাইখংমুখ ঝর্না। এছারাও বর্ষায় গেলে অসংখ্য ছোট ছোট ঝর্না দেখতে পাবেন। ২০১৮ সালে দুইবার বান্দরবন যাওয়া হয়েছে, সেই আলোকে অমিয়াখুম-দ্যা হিডেন বিউটি অফ বাংলাদেশ।

অমিয়াখুম যেতে হলে প্রথমেই আপনার বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে আপনি থানচি দুইভাবে আসতে পারেন। আমরা সাধারণত ঢাকা থেকে বান্দরবন শহরে আসি তারপর চান্দের গাড়িতে করে থানচি। আপনি বাজেটি ট্যুর দিতে চাইলে বান্দরবন শহর থেকে লোকাল বাসে থানচি যেতে পারেন। কিন্তু লোকাল বাসে গেলে আপনার ধৈর্যর পরিচয় দিতে হবে। আর একভাবে থানচি আসতে পারেন সেটা হল কক্সবাজারের চকোরিয়া হয়ে আলিকদম, তারপর সেখান থেকে বাইকে করে থানচি। প্রতি বাইকে দুইজন বসতে পারবেন, ভাড়া নিবে বাইক প্রতি ৫০০ করে। কিন্তু আপনাদের ব্যাগ বেশি থাকলে এভাবে না আসাই ভালো। আলিকদম হয়ে আসলে কিছু টাকা সেভ হবে।

আমার মনে হয় যারা ঢাকা থেকে যাবেন তারা রাত ১১ টার বাস ধরলেই ভালো করবেন। কারন আমাদের হাইওয়ে তে আপনি যখন ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকবেন তখন আপনার প্ল্যান পরিবর্তন করতে হইতে পারে। আপনি সকাল সকাল বান্দরবন নামতে পারলে ১১-১২ টার মধ্যেই থানচি পৌঁছে যাবেন। জ্যামের কারনে আমাদের বান্দরবন পৌছাইতে সকাল ১০ টা বাজছিলো। পড়ে যখন আমরা থানচি পৌঁছাইলাম তখন বেলা তিনটার উপরে।

সাঙ্গু ব্রিজের উপর থেকে সাঙ্গু নদীকে ক্যামেরায় বন্দী করেছিলাম।

থানচি পৌঁছানোর পর আপনার প্রথম কাজ ই হল একজন গাইড ঠিক করা। ওখানে বিজিবির রেজিস্ট্রিকৃত গাইড আছে। আপনাকে দেখলে তাঁরাই এসে আপনাকে সবকিছুর আদ্যোপান্ত জানাবে। তবে আমার পরামর্শ থাকবে এদের সাথে একটু ক্লিয়ার করে কথা বলবেন। কয়দিন থাকবেন, কই কই ঘুরতে চান এসব ঠিক করে নিবেন।বা আপনি চাইলে ঢাকা থেকেও গাইড ঠিক করে যেতে পারেন। বিভিন্ন ফেবু ট্যুর গ্রুপে অনেক গাইডের নম্বর পাবেন। গাইডের সমস্ত খরচ আপনার যে কয়দিন আপনারা ট্যুরে থাকবেন। গাইড ঠিক হয়ে গেলে বাকি কিছু গাইডে করে দিবে। এরপর আপনাকে থানচি থানার পুলিশ আর বিজিবির কাছে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজেস্ট্রি করতে ব্যাস্ত আমরা, কারন শীতের সময় বিকাল ৪ টার পর আপনাকে বিজিবি আর যেতে দিবে না।

রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে গাইডের ভারাকৃ্ত নৌকায় চেপে বসবেন। নৌকায় ৫ জনের বেশি ঊঠতে পারবেন না। সো প্ল্যান করলে এটা মাথায় রাখবেন। ৭ বা ৮ হলে খরচ বারবে। আর হ্যা আর একটা জিনিস গাইডের সাথে কথা বলে নিবেন, যে আপনারা যে কয়দিন রেমক্রি বা অমিয়াখুম থাকেন তখন মাঝিদের খাবারের বিল কে দিবে সেটা। কারন প্রতি নৌকায় দুই জন মাঝি থাকে, আপনারা ৩ দিন থাকলে ৯ বেলা ২ জনের মানে ১৮ বেলা খাবারের বিল আপনাকে দিতে হবে। আমরা যখন মার্চে গেলাম মাঝিদের খাবারের বিল আমরা দেই নাই কিন্তু সেপ্টেম্বরে গিয়ে এই অদ্ভুত বিল টা আমাদের দিতে হয়েছে। আর হ্যা নৌকা কিন্তু আপনাদের রিটার্ন নিয়ে আসবে। বর্ষায় গেলে নিজেদের লাইফ জ্যাকেট থাকলে নিয়ে নিবেন তা না হলে কিন্তু লাইফ জ্যাকেটের ও ভাড়া আপনাকে পরিশোধ করতে হবে।

যেহেতু আপনি নৌকায় চড়তে চড়তে লাঞ্চের সময় হয়ে যাবে, চাইলে আপনি লাঞ্চ পার্সেল করে নিয়ে নৌকাতে গিয়ে খেতে পারেন। সেটার ফিলিংস টা হবে দুর্দান্ত। আপনি গাইডকে বললেই গাইড ব্যাবস্থা করে দিবে। এরপর থানচি বাজার থেকে কিছু দূর আসার পর ই আপানর মোবাইলের নেটওয়ার্ক ডেড হবে কিন্তু চিন্তা করবেন না। সুউচ্চ পাহাড়ের সারি, সাঙ্গু নদী আর পাহাড়ি জীবনের ছোঁয়া আপনাকে সবকিছু ভুলিয়ে রাখবে।
থানচি থেকে কিছুদূর আসার পর। সাঙ্গু নদীকে মনে হচ্ছিল পাথুরে খাল। সাঙ্গু বলেন বা বান্দরবন এর সৌন্দর্য বর্ষায় একরকম শীতে একরকম। বর্ষায় গেলে আপনি সাতার না জানলে সাঙ্গুর স্রোতের ভয়ে হয়তো আর না যেতে চাইতে পারেন। মিনিট চল্লিশ চলার পর আপনি ছোট একটা বাজার পাবেন, যেটার নাম তিন্দু বাজার। আপনি হয়ত তিন্দু নাম টা শুনে থাকবেন। যেটাকে বাংলাদেশের ভূস্বর্গ বলা হয়। তিন্দুর বড় পাথর এলাকা টা আসলেই স্বর্গ।
তিন্দু বাজার নৌকা ঘাট।

এইজে দেখছেন পরিশ্রমী বালক।
বড় পাথর এলাকার রাজা পাথর। পাহাড়িরা এটা কে শ্রদ্ধা করে।

এরপর আপনার যাত্রা চলতে থাকবে। পথিমধ্যে এই ছোট্ট চরে চাইলে আপনি থেমে কিছু খেতে পারেন। বর্ষা কালে হয়তো আপনি এই চরের উপর দিয়েই নৌকা নিয়ে যাবেন ছবিটা শীত কালে তোলা। তখন সাঙ্গুতে পানি থাকে অনেক কম। পারলে এসব দোকান থেকে টুকটাক কিছু খাবেন। খাবার আইটেম ও খুব বেশি কিছু না, কিন্তু হয়ত আপনার এই কন্ট্রিবিউশন কারো জীবিকার ব্যাবস্থা কবে। শীত মৌসুমে গেলে নদীর দুধারে অনেক তামাক খেত দেখতে পাবেন। তামাক শুকানো হচ্ছে। সাঙ্গুতে চলতে পথে এরকম বেশ কিছু টং দেখতে পাবেন। কি? বলেছিলাম না পাহাড়ি জীবন আপনাকে অনেক কিছু ভুলিয়ে দিবে। এরকম নৌকা দেখেছেন কখন?

শীত মৌসুমে আসতে আপনার বেশ সময় লাগবে কারন নদীর মদ্ধে, পাথর মাথা উঠিয়ে বসে আছে তাই স্লো চালাতে হয় বা অনেক জায়গায় নৌকা আপনাকে ঠেলে নিতে হবে। বর্ষা মৌসুমে সে ঝামেলা তো নাই ই উপরন্তু আপনি মারাত্মক একটা রাইডের অভিজ্ঞতা পাবেন। আপনার প্ল্যান ঠিক মত থাকলে আপনি ৩ থেকে সাড়ে ৩ টার মধ্যেই রেমাক্রি পৌঁছে যাবেন। রেমাক্রি তে থাকার জন্য আমার জানা মতে ২ টা রিসোর্ট/কটেজ আছে। এগুলো খুব উন্নতমানের কিছু না। তবে বেশ চলে যায়। আর আগের থেকে এখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও ভাল হচ্ছে। আমরা যেটায় উঠেছিলাম সেটা হল নাফাখুম গেস্ট হাউজ। আর থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা আপনাকে গাইড ই করে দিবে।

আমরা পৌছাইতে সন্ধ্যা হওয়ায় আমরা সাঙ্গু নদী তেই গোসল করি। মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সেরা সুইমিং পুল। আপনি আগে পৌছাইতে পারলে রেমাক্রি ফলসে গোসল করতে পারবেন। বর্ষার সময় কিন্তু আপনি দুনিয়ার সেরা সুইমিং পুল উপভোগ করতে পারবেন না, এরজন্য আপনাকে শীতে যেতে হবে। তবে বর্ষায় আপনি রেমক্রি ফলসে বেশ রকমের জলকেলি করতে পারবেন। রেমক্রি ফলস। কি, বিছানাকান্দি ভেবেছিলেন? এটা হল, যেখানে রেমাক্রি খাল সাঙ্গুর সাথে মিলিত হয়েছে।

সময় থাকলে আপনি বিকালে রেমক্রি বাজার, বৌদ্ধ মন্দির এসব ঘুরে দেখতে পারেন। যেহেতু সারাদিন আপনি দৌরের উপর ছিলেন কিংবা আগামীকাল ই আপনি অমিয়াখুমের উদ্দেশে যেতে চান তাহলে রাতের খাবার খেয়েই ঘুম দিবেন। আর খাবারের কথা বলতেই হয়। পাহাড়িরা খুব ঝাল খায়। তবে রান্না টা চমৎকার।

আমাদের যেহেতু একটা প্ল্যান ছিলো পরের দিন ই নাফাখুম দেখে থুইসাপাড়া যাবো। পরেরদিন আমরা খুব সকালে উঠেই রওনা করি। রেমাক্রি খাল পার হচ্ছি।
আপনাকে থুইসাপাড়া বা জিন্নাপাড়া পর্যন্ত যেতে কমবেশি ৫-৭ ঘন্টা ট্রেকিং করতে হবে। বর্ষার সময় তো কথাই নাই। তবে আমার হিসাব টা শীতের। সো আপনি কখন যাচ্ছেন সেটার উপর ভিত্তি করে প্রস্তুতি নিবেন। সাথে অবশ্যই পর্যাপ্ত শুকনা খাবার রাখবেন। এরকম আড্ডা আপনার লাইফ টাইম মনে থাকবে। যখন আমাদের গ্রুপ রেস্ট নিচ্ছিলো। শীত মৌসুমে গেলে রেমাক্রি খালের ব্লু পানির সাথে এরকম অসংখ্য ক্যাস্কেড পাবেন। কিন্তু বর্ষায় গেলে এসব আশা করা বোকামি। বর্ষায় যেমন ভাবে আপনাকে যেতে হবে..।

রেমাক্রি খালের ব্লু পানি উধাও। হ্যা তখন আপনাকে এরকম গলা সমান পানি ও পার হইতে হবে বা সাতার না জানলে হয়তো আপনি নাফাখুম ই দেখতে যেতে পারবেন না অমিয়াখুম বাদ ই দিলাম। তো যারা সাতার না পারেন তাদের জন্য শীত কাল ই উত্তম। মার্চে যখন গেলাম রেমাক্রি থেকে নাফাখুম যাইতে সময় লেগেছিলো পাক্কা আড়াই ঘন্টা সেখানে বর্ষায় যেতে টাইম লাগছে সাড়ে চার ঘন্টার ও বেশি।
শীতের মৌসুমে নাফাখুম
বর্ষা মৌসুমে নাফাখুম। নাফাখুম ত্রিপুরা পাড়া। এই পাড়া মার্চে ও দেখি নি। যাইহোক নাফাখুমের সাথে একটা পাড়া হওয়াতে মনে হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা পাওয়া যাবে।

নাফাখুম দেখা শেষ হলে আপনি আবার হাটা শুরু করবেন। এখানে প্রকৃতি এতো সুন্দর আমার মনে হয় না আমার ক্লান্তি আপনাকে আটকাতে পারবে।
এরকম সাঁকো আপনাকে পার হতে হবে। তবে বর্ষাকালের কথা বললাম না কিছু। তখন নিজেই সাঁকো হয়ে পার হয়ে যাবেন।
রেমাক্রি খালে মাছ ধরছে। তামাক গাছ। আপনি যেহেতু লম্বা একটা সময় ট্রেকিং করবেন। আপনি অবশ্যই পানির পিপা বইতে পারবেন না। তখন পানির এই সুপেয় উৎস থেকি আপনি আপনার তেষ্টা মিটাবেন। জিনা পাড়ার পথে আমরা কয়জন। অবশেষে আমাদের টানা ছয় ঘন্টার ট্রেকিং শেষে ঐযে জিনাপাড়া।

লম্বা ট্রেকিং করার পর আরো ২০ মিনিট হেটে আপনার আর থুইসা পাড়া যেতে ইচ্ছা করবে না। আমার মনে হইছে থুইসা পাড়া থেকে জিনাপাড়া বেশি সাজানো গোছানো আর পরিস্কার। জিনাপাড়ার পাশেই একটা ঝিরি আছে যেখানে আপনি বড়ফ ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে পারবেন। যেটা নিমিশেই আপনাকে আপনার ক্লান্তি অর্ধেক কমিয়ে দিবে। আপনি খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে বিকাল হবে। একটু রিলাক্স হওয়ার আগেই দেখবেন আপনার মনে পড়বে যে আপনি দুই দিন নেটওয়ার্কের বাইরে। তখন কি করার? উপায় অবশ্য একটা আছে। থুইসাপাড়া তে এক আশ্চর্য বাঁশ আছে যেখানে আপনি ফোন রাখলে নেটওয়ার্ক পাবেন। নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
বিকালে থুইসা পাড়া দেখে আপনি জিনাপাড়া ব্যাক করতে করতে সন্ধ্যা হবে। রাতের খাবার খেয়ে ঘুম । কারন পরেরদিন সকালে আমরা আমাদের বহুল আকাংখিত অমিয়াখুমের উদ্দেশে রওনা করবো। আপনি লাকে থাকলে হরিণের মাংস পারেন। পাহাড়িরা এখন ও কিছু কিছু শিকার করে।

পাহাড়ে ঠান্ডা কারে বলছে সেটা আপনি একদম ভোরে টের পাবেন। সকাল ৮ টায় উঠে দেখি নিজের হাত ই দেখা জাচ্ছিলো না। সকাল বেলার জিনাপাড়া।
এরপর আপনি ভাল মত ট্রাকিং করলে ২ থেকে আড়াই ঘন্টার মদ্ধে দেবতা পাহাড়ে পৌঁছে যাবেন। এই ট্রাকিং টা বেশ কষ্টসাধ্যই বলতে হবে। কারন বেশ চরাই উতরাই আছে। আসার সময় পেস্তা বাদামের বাগান দেখতে পাবেন বেশ কিছু।
দেবতা পাহার থেকে বলছি।।
এরপর শুরু হবে আসল খেলা প্রায় খারা দেবতা পাহার থেকে নিচে নামা। একটা কথা আছে যে, দেবতা পাহার যারা বাইতে পারবে তারা বান্দরবনের সব পাহার বাইতে পারবে। সেটা যে কতটা সত্য সেইটা একটু পর ই আমরা টের পেয়েছিলাম।


দেবতা পাহাড়ের মাঝে গাছ পালা এত ঘন আপনার মনে হবে যে আপনি কোন রেইন ফরেস্টে আসছেন। গাছ গুলো ও অসম্ভব লম্বা আর মোটা। এরপর আপনি পাহাড়ের নিচে নামতেই ঝর্নার গুরু গাম্ভির আওয়াজ পাবেন। আসলে অমিয়াখুম দেখতে আসলে আপনি শুধু অমিয়াখুম ই না সাথে বোনাস হিসাবে সাতভাইখুম, ভেলাখুম ও নাইখংমুখ ঝর্না ও দেখতে পাবেন।
হ্যালো, অমিয়াখুম থেকে বলছি। সাতভাই খুমে আমরা।।
সাতভাই খুম নিয়ে একটা কথা বলতেই হয়। দুপাশে পাহার, মাঝে গাড় সবুজ পানি কোন শব্দ নেই মাঝে মদ্ধে দুএকটা নাম না জানা পাখি ডেকে উঠে। এর সৌন্দর্য আসলে লিখে প্রকাশ করার মত না।
ভেলাখুম।
ভেলাখুম হয়েই আপনি নাইখংমুখ ঝর্নায় যেতে পারবেন। যদিও আমরা যেতে পারি নাই আমাদের গাইডের জন্য। এই জায়গাটার বর্ণনা আমি করতে অপরাগ। যাই হোক এবার ফেরার পালা। দেবতা পাহাড় নামতে যতটা কষ্ট হয়েছে, উঠা তারচেয়ে তুলনামুলক সহজ ছিলো। ভাল মত হাটলে বিকালের মধ্যেই জিনাপাড়া পৌঁছে যাবেন।

অনেক তো হইলো এবার বাড়ি ফেরার পালা। এখান থেকে দুইভাবে ব্যাক করা যায়। এক আপনি পদ্মঝিরি-পদ্মমুখ হয়ে ব্যাক করবেন নয়ত রেমাক্রি হয়ে ব্যাক করবেন। হাটা কিন্তু দুই দিকেই সমান। তদুপরি রেমাক্রি গেলে আবার নৌকায় দুই আড়াই ঘন্টা বেশি লাগবে। কিন্তু পদ্মঝিরি ট্রেইল রেমাক্রি ট্রেইল থেকে ২০ গুন বেশি কঠিন। আমরা যেহেতু প্ল্যান করে আসছি আমরা পদ্মঝিরি হয়ে ব্যাক করব সেটাই আমরা বহাল রেখেছিলাম যদিও আমাদের গাইড রেমাক্রি হয়ে যেতে বলছিলো। পরেরদিন সকালে আমরা নাস্তা করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে যাত্রা শুরু করি।
যার বাড়ীতে ছিলাম। তার পরিবার ও আমরা।
পদ্মিঝিরি ট্রেইল যে এত জোস সেটা প্রথম একটা পাহাড় ট্রেকিং করেই বুঝে গেসি। পাহাড় গুলার সাইজ তো মাশআল্লাহ তার উপর এখানে নাকি ট্রাক আসে গাছ নিতে। আমি ভেবে পাই নাই কেমনে চলে! ধুলায় টাখনু গিরা ডেবে যায়। মনে হচ্ছিলো রেমাক্রি হয়েই ব্যাক করি। এই রাস্তা দিয়ে নাকি ট্রাক চলে!
প্রথম তিন টা ইয়া বড় বড় পাহাড় শেষ করে নতুন পাড়ায় আমরা।
অবস্থা দেখছেন আমাদের? পাহারগুলোকে আমাদের কাছে এভারেস্ট মনে হচ্ছিলো। আর গরমের কথা নাই ই বললাম।
হরিশ্চন্দ্রপাড়া।

এরপর আর তেমন কোন কষ্ট নেই। ছোট বড় টিলা ঝিরি পথ বাকি টুকু। ঝিরি থেকে পানি নিচ্ছে পাহাড়িরা।
ক্লান্তির শেষ সীমায়। পদ্মখুম।

পদ্মমুখ এসে দেখবেন, আপনার রিসার্ভ করা নৌকা এসে হাজির। আপনি চাইলে রেস্ট নিয়ে বা না নিয়েই থানচির উদ্দেশে রউনা করতে পারেন।

[ বিঃদ্রঃ এখানে যা বলা হয়েছে সব ই আমার নিজের ট্যুর এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলা। আপনি চাইলে অন্যভাবে ও আপনার ট্যুর প্ল্যান করতে পারেন। আপনি ট্যুর বড় করতে চাইলে রেমক্রি একদিন স্টে করতে পারেন বা থুইসা পাড়া থাকতে পারেন। তবে আমরা যেটা করছি এটা খুব রাশ ছিলো না আবার একেবারে রিলাক্স ও ছিলো না। আর খরচের ব্যাপারগুলো আমি উল্লেখ করি নাই কারন এটা অনেক কিছুর উপর ডিপেন্ড করে। আপনার ট্যুর মেম্বার বেশি হলে আপনার খরচ কমবে। যেহেতু এটা একটা এডভেঞ্চার ট্যুর তাই অবশ্যই আপনাকে যথেষ্ট সতর্কতার সাথে ব্যাগ প্যাক করতে হবে। ফার্স্ট এইড কিট, মুভ, অডোমস, নিক্যাপ এসব সাথে রাখবেন। আমরা যেহেতু শীতের সময় গেসি খুব একটা জোক ছিলো না। বর্ষায় গেলে এই ব্যাপারে সাবধান। শূকনা খাবার সাথে রাখবেন, গ্লুকোজ স্যালাইন রাখতে পারেন। যেহেতু অনেক ট্রাকিং করতে হবে খাবার সাথে থাকলে ভালো। আর ব্যাগ এমন ভাবে প্যাক করতে হবে যাতে আপনি সেটা নিয়ে ট্রেকিং করতে পারেন। আর অবশ্যই আগে থেকে প্ল্যান করে যাবেন। আগে থেকেই প্ল্যান না করে হুট করে গেলে নানা ধরনের বিপদে পরবেন।]

যেহেতু আপনি পাহাড়ি এলাকায় যাচ্ছেন। পাহাড়িদের কে সম্মান দেখাবেন। তারা বিরক্ত হয় এমন কিছু করবেন না। আর পরিস্কার পরিছন্নতার কথা বলি। যেহেতু আপনি শুকনা খাবার নিবেন, প্যাকেট গুল ব্যাগে করে নিয়ে আসবেন। আমরা ঘুরতে গিয়ে এমন কিছু করবো না যাতে আমাদের পরিবেশ নস্ট হয়। এছারা আপনার যেকোনো তথ্য দরকার হলে কমেন্টে আসক করেন। আমি আমার সাদ্ধমত জানানোর চেষ্টা করবো।

হ্যাপি ট্রাভেলিং।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩

নজসু বলেছেন: মনোমুগ্ধকর।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৮

জমীরউদ্দীন মোল্লা বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.