নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিভৃতচারী, ঘুরে বেড়াই পথে-প্রান্তরে।।

জমীরউদ্দীন মোল্লা

ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ। ধ্বংস-নিশান উঠুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি’॥

জমীরউদ্দীন মোল্লা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন আলি কেনানের উত্থান পতনঃ প্রসঙ্গ বাংলাদেশের মাজার ব্যবসায়।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮


দে তোর বাপরে একটা ট্যাহা!

ছফা সাহেব ঠিক এভাবেই আলি কেনানের গল্প টা শুরু করেছিলেন। ছফা সাহেব তার লেখনীর মাধ্যমে দেখিয়েছেন আমরা কোন ভন্ড সমাজে বাস করি এবং এখানে কিছু মানুষ শুধু ধূর্ততামির জোরে বাকি মানুষ গুলোকে বোকা বানিয়ে নিজে রাজা সেজে বসে আছে। এখানে শুধু ভণ্ডামিই না একজন মানুষের জীবন যে কতটা অনিশ্চিত কতটা টুইস্টে ভরপুর সেটাও তুলে এনেছে ছফা সাহেব। তিনি বহু বছর আগেই এসব ভণ্ডামির স্বরূপ উন্মোচন করে গেছেন।

বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরার আগে আলি কেনানের গল্প টা ছোট্ট করে বলে নেই। আলি কেনান বাংলাদেশর একমাত্র দ্বীপ জেলার বাসিন্দা। সে তার ভাইদের সাথে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। একদিন দৈবক্রমে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্থানের গভর্নর সাহেব এই দ্বীপ জেলায় মিটিং করতে গিয়ে নদীতে ডুবে মরতে বসছিলো, সেখানে আলি কেনান তাকে উদ্ধার করে হিরো বনে যায়। যে আলি কেনান আগে ভাইদের সাথে ছোট নৌকায় সাগরে ঘুরে বেড়াতো জীবিকার সন্ধানে, সেই আলি কেনান এখন গভর্নর সাহেবের খাস লোক। জীবনের এই বাক আলি কেনান নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না। গভর্নরের খাস লোক হিসাবে কেনানের যে পারিবারিক উত্থান হয় সেটা আমাদের বর্তমান সমাজে আরো প্রকট। আপনি এমপি মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদের সম্পদ বা পাওয়ার প্র্যাকটিস দেখলেই সেটা বুঝে যাবেন। কেউ একবার ক্ষমতা পেয়ে গেলে সে যতটা না তার আত্মীয়-স্বজন দের দাপটে আশেপাশের মানব জীবন একটা সংকটে পড়ে যায়। আলি কেনানের ব্যাপারটা ও ঠিক তাই ঘটেছিলো। কিন্তু আলি কেনান তখন পর্যন্ত শুধু উত্থান ই দেখেছিলো, যখন সে মুদ্রার অপর পিঠ দেখলো, জীবনে যে অনেক রকম টুইস্ট আছে সেটা হারে হারে টের পাইলো।

এরপর আলি কেনান তার নতুন জীবন শুরু করে। আলি কেনান সময়ের দাবি খুব ভাল ভাবেই বুঝে। গভর্নর হাউজ থেকে বিতাড়িত হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আলি কেনান নিজের ফুলতলি সম্রাজ্য গড়ে তুলে। ফুলতলির উঁচু বাধানো কবর টা কে ঘিরে যে রমরমা ব্যবসায় শুরু হয়েছিলো তার লিডে ছিলো আলি কেনান। আলি কেনান তার সৃজনী শক্তি দিয়ে বেশ ভালো ভাবেই তার সাম্রাজ্যের বিস্তার করেছিলো। প্রথমবার পতনের পড় আলি কেনান বেশ ভাল রকম শিক্ষাই নিয়েছিলো। ফুলতলিতে যখন তার পতন অবশ্যম্ভাবী আলি কেনান পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত নিমবাগান মাজারে সটকে পড়ে। এই নিমবাগান মাজার দখল করেই পুরো ঘটনা আবর্তিত হয় সেই সাথে সাথে চলে আলি কেনানের উত্থান পতনের গল্প। কিভাবে বেশীরভাগ মানুষ বোকার স্বর্গে বাস করে, কিভাবে আলি কেনান শ্রেণীর মানুষ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুবিধা ভোগ করে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন কিংবা মানুষকে বোকা বানিয়ে কিছু মানুষের আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে।

বর্তমান চিত্র তো আরো ভয়াবহ। রাজনীতি করাটা যেমন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায়, মাজার ব্যবসায় তারচেয়ে কয়েকগুন বেশি লাভ এবং ঝুকিমুক্ত। এর কারনটাও ছফা সাহেব বলে গেছেন, "এদিক দিয়ে দেখলে একেকটা মাজার অন্য দশটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চাইতে আলাদা নয়। তফাত শূধু এটুকু যে অন্য ব্যবসায়ে মূলধন মারা যাওয়ার ঝুকি আছে, মাজার ব্যবসায়ে তা নেই। মাজারে মানুষ আসবেই কারণ সে দুর্বল, অসহায়, এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী।" এবং ঠিক এই কারনেই বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরের উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে মাজার সেক্টর ও এগিয়ে যাচ্ছে ফোর জি গতিতে।

বাংলাদেশের মাজার নিয়ে কথা বলার আগে এটার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে একটু কথা বলা দরকার। এই উপমহাদেশে অষ্টম শতাব্দীতে ইসলাম ধর্মের প্রসার শুরু হয় মুহাম্মাদ বিন কাশিমের হাত ধরে। যদিও ইতিহাসে আছে এর অনেক আগে থেকেই উপমহাদেশে মুসলমানদের যাতায়াত ছিলো। এরপর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সারা উপমহাদেশেই ইসলাম ধর্মের প্রসার হয়েছে। আর এই কাজে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি প্রচারিত হয়, তারা হলেন পশ্চিম থেকে আগত ওলি-আউলিয়া, সূফী-সধকগণ (যদিও ইতিহাস এরকম সাক্ষী দেয় না)। তাদের অকালন্ত পরিশ্রমের ফল টা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি, উপমহাদেশে এখন প্রায় ৫০ কোটি মুসলমানের বাস। তো যারা এ মহতী ধর্ম প্রচারের কাজ টা করে গেসে তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের নিশানা জাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য প্রায় তাদের অনুসারীগণ তাঁদের স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতেন। কালের পরিক্রমায় এরকম হাজারো অলি আউলিয়ার কবর এখন উপমহাদেশে আছে।

একটা সময়পর আলি কেনান শ্রেণীর কিছু লোক বুঝে গেলো যে মানুষ দুর্বল ও অসহায়। ধর্মের কথা বললে তারা বাছবিচার ছাড়াই সেটাই মেনে নেয়। মানুষের এই দুর্বল দিকটাকে কাজে লাগিয়ে এই কেনান শ্রেণীর লোকেরা তাঁদের ভণ্ডামির ব্যবসায় ফেঁদে বসলো, যেখানে লাগে না কোন মূলধন আবার নাই কোন ঝুকি। শুধু এক টুকরো লাল সালুই যথেষ্ট। এখানে লাভের পরিমাণ এতোই বেশি যে, কিছু মানুষের শত শত মাটির ঢিবির উপর লাল সালু চড়িয়ে ব্যবসায় করতে বাঁধছে না। আমি আপনাদের একটা ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে পারি, একটা সার্ভে করেন উপমহাদেশে কত জন অলি আউলিয়া ছিলো? সঠিক সংখ্যা টা না পেলেও কাছাকাছি একটা সংখ্যা পাওয়া যাবে। কিন্তু মাজার গুলা তো আর উধাও হতে পারবে না। দেখবেন আউলিয়া দের সংখ্যা থেকে বেশ কয়েক গুন বেশি মাজার আছে। তো এগুলো কি মাটি ফুরে আপনাআপানি বের হইছে? ইন্ডিপেনডেন্ট চ্যানেলের তালাশে একবার ঢাকার মাজার নিয়ে একটা এপিসোড ছিলো যেখানে এই তত্থ্য টা বেরিয়ে আসছে অনেক মাজার বলতে আমরা যা বুঝি তার টিকিটাও নেই। শুধু মাটির ঢিবির উপর এক খানা লাল সালু চড়িয়ে দিলেই হয়ে গেল মাজার। এরপর রমরমা ব্যবসায়।

কয়দিন আগে একটা ভিডিও দেখলাম খান জাহান আলীর মাজার নিয়ে। খান জাহান আলী উনার জীবদ্দশায় যা করে গেসে তার জন্য উনি অবশ্যই সম্মানিত ব্যাক্তি। কিন্তু উনার স্মৃতি সংরক্ষণের নামে যা হচ্ছে তা যদি উনি দেখতেন আমার মনে হয় নাউনি উনার স্মৃতি সংরক্ষণ করতে দিতেন। উপমহাদেশের সব মাজার গুলোতেই এসব চলছে। তারউপর শুধু মাটির ঢিবিওয়ালা মাজার গুলো বাদ ই দিলাম। মানুষের বিশ্বাস এর উপর ভিত্তি করে যে ব্যাবসায় গুলা করা হয় তার মুনাফা বরাবর ই উচ্চ। বাংলাদেশে মাজারের চিত্র টা কতটা ভয়াবহ আপনি দুই চারটা মাজার ঘুরলেই বুঝতে পারবেন। ধর্মের বালাই সেখানে নেই। সমান তালে চলছে গাঁজা সেবন। এর আড়ালে হয় কোটি কোটি টাকার ব্যাবসায়। মাজার ব্যাবসার স্বরুপ জানতে হলে আপনাকে মাজারের খাদেম দের আর্থিক অবস্থার গোপন খবর টা নিতে হবে। আমি এমন ও লোক দেখছি যে নিজের গ্রামের বাড়িতে বেশ বড় রকমের বিল্ডিং দিয়েছে মাত্র কয়েক বছর এ লাইনে থেকে। মানুষের নির্বুদ্ধিতার জন্য কিছু মানুষ এ ব্যবসায় করে ফেলে ফেপে ঊঠছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৩

সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:১৫

জমীরউদ্দীন মোল্লা বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.