![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।
জলদাস গাঁ : The Untold Story ! Part-1
আমার এ অরঙা তল-আঁধারি মেঠো তালগাছের মত একাকি জীবনে কতনা উঁচু নীচু ঝালোডাঙার খাঁ-খাঁ মাঠ আর বিল পেরিয়ে এ পৌঢ়ত্বে চলে এলাম আমি! কিভাবে তাও এক বিস্ময়! পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে গিয়েও আমার জলদাস জীবন নৌকোর গলুইয়ে মাথা রেখেই ঘুমিয়েছি প্রতিটা মূহূর্ত। টেমস, ওব, লেনা, গঙ্গা কিংবা জলঙ্গী সব নদীর স্রোতের গোপন টানেই ভেসে গিয়েছে আমার কাঁসা পিতলের চেতনার ঘটি বাটি! চৈত্রের পাতাঝরা বিষণ্ণ মর্মরবৃক্ষের মত শীতের সন্ন্যাসী হয়ে কত পথ ভেঙেছি আমি এ জীবনে! কিন্তু বস্তুবাদি জীবনের নিখাঁদ আকাঙ্ক্ষার ক্লান্ত ঘোড়ারা এক অপরূপ অন্ধকারে খুঁজে ফিরেছে সেই গাঁকে। ধেয়ে চলা জীবনের দ্বীপাতীত লক্ষ্যে অবিরাম বেয়ে গেছি সেই গাঁয়ের নৌকোই! কতনা শব্দসঙ্কুল পথে ধ্বংসমত্ত অন্ধকার ভেদ করে এগিয়েছি সূচিপথ গুলোকে! নক্ষত্রজগতের অপার আলোকবর্ষ ঘিরে খুঁজে মরেছি সেই একই গাঁ আর তার জলবাতাসকে। মহাজাগিতক অনন্ত এক জ্যোতিষ্ক জগতে বার বার এপিঠ ওপিঠ করেছি অনন্তের মানবিকতা খুঁজতে। এবং সেইসব মানুষ, প্রকৃতি আর দিনরাত্রির কথাই বলে যাবো আমার গাঁয়ের জলদাস চরের জীবন এ কাব্যিক চিত্রনে!
:
গ্রামীণ এক দূরন্ত জীবনে চমকপ্রদ আনন্দময়তার মাঝে সারাক্ষণ বেঁচে থাকতাম আমরা। বর্ষাঋতুতে বড় বড় জাহাজগুলো কানফাটা হুইসেল বাজিয়ে চলে যেত দূর সমুদ্রে। চলমান সমুদ্রগামি বিশালাকার তেল ট্যাঙ্কার কিংবা মালবাহি জাহাজগুলো ছুঁয়ে দেখার প্রতিযোগিতা হতো আমাদের মাঝে। কলাগাছ কেটে বন্ধুরা নদীতীরে অপেক্ষা করতাম বড় কোন জলকাঁপানো জলযানের। দূরের সাইরেন শুনে সচকিত হতাম আমরা। কলাগাছে বুক রেখে সাঁতার কেটে খাড়িতে চলে যেতাম দলবেঁধে। যেটা ছিল জাহাজ চলাচলের পথ। কেউ কদাচিৎ ছুঁতে পারতাম জাহাজ! কিউবা বিশালাকাল ঢেউয়ে পুলকিত হয়ে চেয়ে থাকতাম ধাবমান জল কপোতের দিকে। সাহসী বন্ধু এগারো বছরের সেলিম একবার জাহাজ ছোঁয়ার আনন্দ বন্যায় চলে গেল একদম জাহাজের পেছনে। যেখানে হাজারো অশ্বশক্তির প্রপেলার ঘুরছে প্রবল জলতাড়নায়। যে ঘুর্ণনে এমন বিশাল হাজার টনি জাহাজ জল কেটে এগিয়ে যেতে থাকে বিপরীত স্রোতে। কিভাবে যেন সেলিম চলে গেল প্রপেলারের টানে একদম জলের ভেতরে। হারিয়ে গেল সে তার ভাসমান কলাগাছসহ। আমরা সবাই প্রচন্ড উত্তেজনা আর ভয়ে তাকিয়ে রইলাম সেলিমের ডুবে যাওয়ার দিকে। আমাদের ছাড়িয়ে চলে গেল জাহাজ তার গন্তব্যের দিকে। খানিক পরে ছিন্নবিচ্ছিন্ন কলাগাছ ভেসে উঠলো বেশ দূরে। শান্ত নদীর নীলাভ জল রক্তাক্ত আবিরের মত দেখালো আমাদের চোখে। অনেকে খুঁজেও সেলিমকে আর পেলাম না আমরা!
:
ভয়ে সবাই উঠে এলাম তীরে। আমাদের অভিভাবকগণ এলেন, গ্রামের মানুষজন এলো। সেলিমের মা বাবা এলেন। সবাই সাঁতারকেটে আর নৌকো নিয়ে খোঁজাখুঁজি করলো সেলিমকে রাত না নামা অবধি। কিন্তু একবুক নিসঙ্গতা কান্না আর বুকভাঙা আর্তনাদ নিয়ে ফিরে গেলাম আমরা নিজ নিজ ঘরে সবাই! খুব ভোরে সূর্য ওঠার আগেই জেলেদের চিৎকার ঘুম ভাঙলো আমাদের। দৌঁড়ে সবাই নদীতীরের মাছ ঘাটে পৌঁছে দেখি, আধা জল আধা কাদায় জালে প্যাচানো সেলিমের ছিন্নভিন্ন দেহ। রাতে আটকা পড়েছে ইলিশ ধরা জেলেদের জালে। হাজারো হর্সপাওয়ারের শক্তিধর জাহাজের প্রপেলারের প্রচন্ড আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে কিশোর সেলিমের দেহ। যে কিনা আমাদের প্রাত্যহিক স্কুলসাথী, জলসাথী, বনবাদারের সাথী ছিল। দেখার অযোগ্য কাটাছেঁড়ার কারণে হোগলাপাতার চাটাইয়ে জড়িয়ে একসময় নেয়া হলো তার নিথর দেহ নিজেদের উঠুনে। মায়ের বার বার মূর্ছা আর বাবার উচ্চরবের ক্রন্দনধ্বনির মাঝে আমরা বাকরহিত হয়ে পাথর হয়ে কেবল জড়িয়ে রাখলাম হোগলা পাতার চাটাইকে। বেশিক্ষণ ওপরে রাখতে চাইলোনা গ্রামের মুরব্বিরা প্রায় কুড়ি ঘন্টা জলেডোবা লাশকে। মায়ের মুর্ছাবস্থা আর বাবার আর্তধ্বনির মাঝে গোছল করানো হলো এক বিশেষ স্থানে আমাদের সেলিমকে।
:
গ্রামের এক প্রবিণের সাথে সবাই কবল খুড়লাম আমরা। ওকে কবরে নামানোর সময় আমরা সবাই নামতে চাইলাম ওর করবে। কিন্তু ইমাম মুসল্লিরা হাফপ্যান্টপরা এসব চ্যালাদের দূরে সরিয়ে রাখলো অনেকক্ষণ। কেবল মাটি দিতে অনুমতি দিলো আমাদের! চল্লিশ কদম হেঁটে যাওয়ার পরই সেলিমকে উঠে বসানো হবে। নানাবিধ প্রশ্ন করা হবে তাকে, এমন জটিল চিন্তনে নিমগ্ন হলাম আমরা! ওর জন্য অদেখা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে থাকলাম আমরা, যাতে সহজতর হয় ওর মৃত্যু পরবর্তী প্রশ্নমালা। এমনকি আমাদের জমানো টাকাগুলো সব সেলিমের মৃত্যু পরবর্তী দোয়া অনুষ্ঠানের তালবে আলেমদের আগাম দিয়ে দিলাম, যাতে নেক খাস দিলে সেলিমের জন্য দোয়া করে তারা!
:
নতুন কোন ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত সেলিমের স্মৃতি আমাদের কাছে প্রেয়সির চিতার শ্মশানে ধূসরিত ধোঁয়ার কুন্ডলীর মতো অনেকদিন পাক খেতে থাকলো! এসব কৌশোরিক রৌদ্রময় দহনের অনলে পুড়তে পুড়তে কাঞ্চনপ্রভা হয়ে কখন যে চলে এলাম এ বয়সে এখন আর মনে পড়ছে না খুব একটা!
[এরপর জলদাস গাঁয়ের চলমান পর্ব : ২]
©somewhere in net ltd.