নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুকানাও ৫ কেজি, ভিজলেও ৫ কেজি !

মামার আস্তানায় কুশিক্ষা ছাড়া কিছুই নাই !

জাতির মামা

কোন কাম কাজ নাই তাই শুধু মানুষের সমালোচনা করি।

জাতির মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি রক্ত মাখা প্যান্ট, ভুত এবং আমি !!!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬

শুক্রবার রাত, ভুত এফ এম শুনছি। গায়ে কাটা দেয়ার মত কিছু কাহিনী শোনার পর বিছানা ছেড়ে টয়লেটে পর্যন্ত যাওয়ার সাহস করতে পারলাম না। সর্বশেষ যে ঘটনা শুনছিলাম তা ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রিক। ঘটনাটা এমন ছিল যে কয়েকজন ভুত মহাশয় মেডিকেলের এক কর্মচারীর হাত কেটে চিকিৎসা বিদ্যার প্রশিক্ষন কার্যক্রম সম্পুর্ন করেছেন।

এই কাহিনীটা শোনার পর আমার অবস্থা আরো খারাপ।

আমার খুব কাছের এক কলিগ ছিনতাইকারীদের গুলিতে আহত হয়ে তিন দিন যাবত ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি, সেই কারনে প্রায় প্রতিদিনই অন্তত একবার করে হলেও ঢাকা মেডিকেল যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ভুতেদের কাহিনী শোনার পর ভুত এফ এম বন্ধ না করে থাকতে পারলাম না। কোনমতে গুটি শুটি হয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে নড়াচড়াহীন ভাবে ঘুমের রাজ্যে রওনা দিলাম।

পরদিন ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়া করে ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম। পকেটে ভাংতি টাকা বলতে ছিল মাত্র নয় টাকা আর ছিল একখানা পাচশত টাকার নোট। যখন শাহবাগ এসে নামলাম পকেটে ভাংতি মাত্র চার টাকা এবং সকাল তখন ৭.২০ বাজে। এত সকালে কোন রিক্সায়ালাকে পাঁচশো টাকার নোট দিলে নির্ঘাত মাইর ছাড়া কোন গতি হবে না। এদিকে তারাতারি হাসপাতালে পৌছাতে হবে, কারন আমি ঢাকা মেডিকেলে পৌছানোর পর আমার কলিগের মা বাসায় যাবেন।

শাহবাগ থেকে মেডিকেলের দিকে দ্রুত পায়ে হাটা শুরু করলাম। শহীদ মিনার পার হয়ে বহির্বিভাগের গেট দিয়ে মেডিকেলে ঢুকলাম ঘড়িতে তখন ৭.৪০।

বহির্বিভাগের সিড়িতে পা দেয়া মাত্রই একজন লোক আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে গতকাল আপনি একটা রক্তমাখানো প্যান্ট খুজেছিলেন না? আমি একটু অবাক হই বলি হ্যাঁ খুজেছিলাম। প্যান্টটা ছিলো আমার কলিগের, ছিনতাইকারীরা আমার কলিগের পায়ে এবং তলপেটে গুলি করেছিল তাই সম্পুর্ন প্যান্টই ছিল রক্তে ভরপুর । সম্ভবত এক্সরে করার সময় ভুলক্রমে এক্সরে রুমে রেখেছিলাম কিন্তু পরে আর খুজে পাইনি। এমারজেন্সি তে খুজেছি, সিটি স্ক্যান রুমে খুজেছি, আল্ট্রা-সনোগ্রাম রুমে খুজেছি মোটামুটি সব জায়গাতেই খুজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।

লোকটা আমাকে ইশারা দিয়ে ওনার পিছনে পিছনে যেতে বললেন, আমি ভাবলাম উনি হয়তো সেই রক্তমাখা সেই প্যান্টের সন্ধান দিতে পারবেন। আমিও আর কিছু জিজ্ঞাসা না করেই ওনার পিছনে পিছনে হাটা দিলাম। মুহুর্তের মধ্যেই আমি লক্ষ করলাম লোকটার ডান হাতটা ব্যান্ডেজ করা ঠিক গত রাতের ভুত এফ এম এ যে কাহিনী শুনেছি সেই লোকটার মতন। কিছুটা বিগড়ে গেলাম, চারপাশে তেমন লোকজনও ছিলনা, কিন্তু সকাল বেলা কোন ভুত টুত মানুষের সামনে আসবে সেটাও বিশ্বাস করতে পারিনি। যাই হোক মনে সাহস সঞ্চার করে লোকটার পিছনে পিছনে হাটতে লাগলাম। মিনিট খানেকের মধ্যেই এক্সরে রুমের সামনে গিয়ে লোকটা থামল। আমি ইততস্ত করে লোকটার কাছে জানতে চাইলাম ভাই আপনার হাতে কি হয়েছে? লোকটা কেমন জানি একটু বিরক্তি সহকারে জানালো গতরাতে হাতের অপারেশন হয়েছে।

এইবার আমি আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি আমার কলিগের রক্তমাখা প্যান্টের কথা জানলেন কিভাবে?

এইবার লোকটা চরম বিরক্ত হয়ে বলে আপনার কি সেই প্যান্ট লাগবে যদি লাগে তাহলে কোন কথা না বলে চুপচাপ এখানে দাড়ান আমি নিয়ে আসছি।

লোকটার এমন ব্যাবহার আমি আশা করিনি, তাই হতাশ হয়ে আর কিছু না বলে চুপচাপ থাকলাম। আশে পাশে তাকালাম কেউ নেই, এতো সকালে কারো থাকার কথাও না অবশ্য।

লোকটা এক্সরে রুমে চলে গেলো, আমি বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকলাম।

পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট, পনেরো মিনিট হয়ে গেল অথচ লোকটার কোন খবর নাই। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। অপেক্ষা করছি, তো করছিই। ঘড়িতে আট টার বেশি বাজে। কয়েকজন লোকও আশে পাশে দেখতে পাচ্ছি। এক্সরে রুমের বিপরীতেই আল্ট্রা-সনোগ্রাম রুম। একজন মহিলা এসে রুম খুলে ঢুকল সাথে সাথে ২ জন রোগীও এসেছে আর আমি বাহিরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি কিন্তু লোকটার কোন খবর নাই। মনে মনে গালি দিচ্ছি, ফাউল লোক। নাহলে প্যান্ট আনতে এতক্ষন লাগে নাকি? আমি বিরক্ত হয়ে এক্সরে রুমে ঢোকার জন্য উদ্যত হলাম। রুমে ঢুকতে গিয়েই আমার চোখ কপালে! আমি কি দেখছি? নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছি না। এক্সরে রুমে তালা ঝুলছে। তাহলে লোকটা কিভাবে ঢুকলো? আর লোকটাই বা কোথায় গেলো? এক মুহুর্ত দেরি না করে আল্ট্রা-সনোগ্রাম রুমের সামনে এসে এই বিভাগের দায়িত্বরত মহিলার কাছে জানতে চাইলাম কখন এক্সরে রুম খুলবে? মহিলা আমাকে বলে অপেক্ষা করেন রুমের সামনে গিয়ে দাড়ান এখনি হয়ত চলে আসবে।

কিন্তু আমার সাথে যা ঘটলো আমি কিছুই বলতে পারলাম না। আর কোন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আমার কলিগ যে ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল সেখানে চলে গেলাম। মাথার ভিতর ঘুরপাক কাচ্ছে কি হল এটা? লোকটা কোথায় গেল? আর এক্সরে রুমে ঢুকল কিভাবে? আমি কি কিছু ভুল দেখালাম?

এই ঘটনার পর থেকেই আমি যখন একা একা হাটি আমার মনে হয় আমার পিছনে পিছনে কেউ একজন হাটছে! আজব এক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.