নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয়দীপ চক্রবর্তী : পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। নেশায় লেখক। আকাশবানী কোলকাতায় সম্প্রচারিত হয়েছে তার লেখা নাটক। পেশাদারী থিয়েটার “অবেক্ষন” তার লেখা নাটককে বেছে নিয়েছে তাদের প্রযোজনা হিসেবে। তার কাহিনী চিত্রনেট্যে তৈরী সর্ট ফ্লিম, প্রচারিত হয়েছে ইউটিউব চ্যা

জয়দীপ চক্রবর্তী

জয়দীপ চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি খুনের নেপথ্যে

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২১


- খবর শুনেছিস পিয়ালি? অনিমেষ তো আবার বিয়ে করেছে।
- তোকে কে বলল?
- কে আর বলবে? চৈতালি ফেসবুকে আপডেট দিয়েছে। ওদের রেজিস্ট্রির ছবিও পোষ্ট করেছে।
ও তাই নাকি? দেবশ্রীর কথাটাকে বেশী গুরুত্ব না দেখিয়ে নিজের কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করল পিয়ালি। কিন্তু না, মন বসছে না। ঘুরে ফিরে শুধু ঐ সব কথাই মনে পরে যাচ্ছে। মাত্র ছয়মাস হয়েছে ওদের ডিভোর্স হয়েছে। এর মধ্যেই আবার বিয়ে করে ফেলল অনিমেষ। যদিও এই ভবিতব্যটা পিয়ালির জানাই ছিল, তবুও মনের কোথাও যেন একটু চিন-চিন করছে। মাত্র দশ লাখ টাকার বিনিময়ে পিয়ালি ও ঋজুর থেকে মুক্তি নিয়েছে অনিমেষ। পিয়ালি অনেকটা বাধ্য হয়েই মিউচাল ডিভোর্সে গেছে। লড়াই করার মত মনোবল, লোকবল, অর্থবল কোনোটাই যে ছিল না ওর। আর বাবা, দাদার থেকে তেমন সাহায্য নিতেও চায়নি ও। আর নেবেই বা কোন মুখে? বাবা, দাদা তো ওকে অনিমেষের সাথে বিয়ে দেয়নি। আর এই বিয়েতে ওদের খুব একটা মতও ছিলনা। বছর পাঁচেক প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে প্রায় জোর করেই অনিমেষকে বিয়ে করেছিল পিয়ালি। তাছাড়া ওর দাদা তখন কোম্পানির ডেপুটেশানে সেন্ট লুইসে গিয়ে বসে ছিল। বাবারও বয়েস হয়েছে, তাকেও বেশী চাপ দেওয়া যায় না। আর যে সম্পর্কের পচন ধরেছে, সে সম্পর্কের প্রতি মায়া না বাড়িয়ে সেটাকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলাই ভালো। শ্বশুরবাড়ির মায়া ত্যাগ করে কিছুদিনের জন্য বাপের বাড়িতে ছিল পিয়ালি। তবে দাদা কোলকাতা ফেরার খবর শুনেই কাছাকাছি একটা বাড়ি ভাড়া করে ঋজুকে নিয়ে চলে গেছে পিয়ালি। ওদের সংসারে পিয়ালি এখন অতিথি। অতিথিরা বেড়াতে আসতে পারে, কিন্তু তাদের বেশীদিন থাকা শোভা পায় না। ঋজুকে পুল কারে তুলে অফিস আসে ও, আর ওই পুল কারই ঋজুকে তার দাদুর বাড়ি নামিয়ে দিয়ে যায়। অফিস থেকে ফিরে, ছেলেকে নিয়ে নিজের বাড়ি ফেরে পিয়ালি।
আজ অফিস আসার সময় ঋজু বায়না ধরেছে পিয়ালি যেন অফিস থেকে ফেরার পথে একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি কিনে বাড়ি আসে। সব সময় সব বায়না মেটানো পিয়ালির পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু বায়না করার মতো ঋজুর তো পিয়ালি ছাড়া আর কেউ নেই। মামা বা দাদু-দিদার কাছে কিছু চাইতে পিয়ালি না করে দিয়েছে। আর ঋজুও মায়ের কথার অবাধ্য হয় না।

দেবশ্রীর হালকা ঝাঁকুনিতে সম্বিৎ ফিরে পেল পিয়ালি। চোখ দিয়ে একটা ঈশারা করে ওয়াশরুমের দিকে গেল দেবশ্রী। পিয়ালি ঝুঁকে বসে থাকায় বুকের কিছুটা অংশ বেড়িয়ে ছিল। আর সেটাই চোখ দিয়ে শুষছিল পাশে বসে থাকা চোল্লিশোর্ধ কলিগ রঞ্জন সামন্ত। দেবশ্রী, পিয়ালির কাছে যেতেই রঞ্জন চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মন দিয়েছে। পিয়ালি চুড়িদার টেনে, ওড়না ঠিক করে নিজের কম্পিউটারে চোখ রাখল।
পুরুষ জাতিটার ওপরই একটা ঘৃণা জন্মেছে পিয়ালির। রঞ্জন, অনিমেষরা ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। যারা নারী বলতে বোঝে একটা শরীর। উঁচু বুক, ভারি নিতম্ব, সরু কোমর যুক্ত একটা শরীর। যাকে ওরা কল্পনা দিয়ে নগ্ন করে। সুযোগ পেলেই কনুই, হাত বা অন্যান্য অঙ্গ স্পর্শ করে বা চোখ দিয়ে শুষে নিয়ে উপভোগ করে সেই শরীর। পিয়ালি চল্লিশ ছুঁই ছুঁই হলেও নির্মেদ চেহারায় বয়স যেন একটু কমই দেখায়। উপবৃত্তাকার মুখ, শূন্য সিঁথি, নিভাঁজ ত্বক। সময় এখনো তেমন ছাপ ফেলেনি শরীরে। এমন নারীর প্রতি পুরুষের কৌতূহল, আগ্রহ তো স্বাভাবিক। তাই অফিসে, যাতায়াতে অনেক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় ওকে। যতটা পারে না দেখি, না শুনি ভাব করে, সমস্যা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে পিয়ালি। অটোতে পারত পক্ষে পিছনের সিটে বসে না। সেক্টর ফাইভ, বিধান-নগর চত্বরে অটোতে চারজন যাত্রী বসারই রীতি রয়েছে। ড্রাইভারের বাঁপাশে বসতেই পছন্দ করে ও। তবু অনেক সময়ই অযাচিত স্পর্শ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
অফিস থেকে বেড়িয়ে একটি বাস ধরল পিয়ালি। এখন বেশিরভাগ বাসেই আর মহিলা সংরক্ষিত সিট থাকে না। আর থাকলেও তা দুটির বেশি নয়। ড্রাইভারের পাশের যে সিটগুলি এক সময় মহিলাদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল, তা এখন সর্ব সাধারণের। বাসটি যাত্রী পরিপূর্ণ। ড্রাইভারের বাঁদিকে, দরজার লাগোয়া সিটে একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক কোলে ব্যাগ রেখে, দুহাতে তা ধরে বসে আছে। ভদ্রলোকের দুই হাঁটুর মাঝখানে দুটি হাত। ঠিক তার সামনেই দাঁড়ালো পিয়ালি। এক-দু স্টপেজ যেতেই বাসটিতে যাত্রীতে একদম ঠাঁসাঠাসি হয়ে গেল। একটা লোক ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওর গায়ের সাথে প্রায় লেগে থেকে ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। বাসে একটু জার্কিং হলেই, বা ব্রেক কষলেই পিয়ালির গায়ে লোকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। পিয়ালি সেই চাপ সামলাতে না পেরে সামনে বসে থাকা লোকটার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। আর ওর নাভির নিচের অংশ সামনের লোকটার হাতের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে। পিয়ালি লোকটাকে হাত সরাতে বললে উনি বললেন, হাত সরালে তো ব্যাগটা পড়ে যাবে। তাছাড়া আমার হাত তো একই জায়গায় আছে। কোনও নাড়াচাড়া তো করিনি। আপনিই তো আমার গায়ে এসে পড়ছেন। পিয়ালি সে কথার আর উত্তর দিল না। কিন্তু শত চেষ্টা করে চাপ সামলাতে পারছে না ও। তাই বারে বারে ওর গোপোনাঙ্গে লোকটার হাতের ছোঁয়া লাগছে। সামনে পিছনে দুদিকেই এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। রাগে সারা শরীর দিয়ে আগুন বেরচ্ছে। কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে নাভির সামনে ধরল ও। কিন্তু এক হাতে বাসের রড ধরে চাপ সামলানো যাচ্ছে না। ভেতর থেকে একটা কান্না পাচ্ছে ওর। পুরুষ জাতির প্রতি ওর ঘৃণাটা এই কয়েক মিনিটে চতুর্গুণ বেড়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বিধান নগর স্টেশনের জন্য অপেক্ষা করল পিয়ালি।
অবশেষে বিধান নগর স্টেশন স্টপেজ এলো। বাস থেকে নেমে একটা উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্টেশনের দিকে পা বাড়াল পিয়ালি। স্টেশনে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। ট্রেনে অবশ্য মহিলাদের জন্য আলাদা বগি রয়েছে। আর যাই হোক, পুরুষের অযাচিত হ্যাংলা স্পর্শ থেকে তো মুক্তি। নৈহাটি লোকাল স্টেশনে এলো। অনেক মহিলাদের সাথে হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে উঠলো পিয়ালি। ট্রেন চলছে। গেটের কাছে পিয়ালি। বেলঘড়িয়ায় নামবে, তাই ভেতরে ঢোকেনি ও। একটি মাত্র হকার কম্পার্টমেন্টে, ইমিটেশন গলার হার, কানের দুল বিক্রি করছে। দমদম স্টেশন এলো। বেশ কিছু মহিলা ওঠা-নামা করল। ট্রেন ছাড়ল। হকারটি বাণিজ্য সেরে গেটের মুখে, পিয়ালির ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ট্রেনের ঝাঁকুনি বা ইচ্ছাকৃত ভাবে হকারটি বার-বার পিয়ালির গায়ে ঢলে পড়ছে।
- ঠিক হয়ে দাঁড়ান।
- সরি ম্যাডাম, ঝাঁকুনি হচ্ছে তো।
কোনও কিছু না ধরে, মূলত পায়ের ওপর ব্যালেন্স রেখে, এক হাতে সাপোর্ট নিয়ে, কখনও দুহাতকে কাজে লাগিয়েই গয়নাগুলো ব্যাগে ঢোকাচ্ছে হকার। ট্রেনটা বেশ জোরে একটা ঝাঁকুনি দিল। হকার ছেলেটি একেবারে পিয়ালির বুকে গিয়ে পড়ল।
অনেকক্ষণ থেকে বলছি, ঠিক হয়ে দাঁড়ান না। বেশ রাগের সঙ্গে কথাটা বলে ছেলেটিকে এক ধাক্কা মারল পিয়ালি। পুরুষ জাতির ওপর যে রাগটা ওর জন্মে ছিল, সেই সকল রাগ ঐ ধাক্কার সাথে মেশায়, ধাক্কাটা একটু জোরে হয়ে গেল। আর হকারটি সেই মুহূর্তে কোনও কিছু না ধরে থাকায়, সেই ধাক্কা সামলাতে পাড়ল না। চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গেল সে। সঙ্গে সঙ্গেই আর্তনাদ করে উঠল পিয়ালি। মুহূর্তের রাগে সে যে এমন একটা কাণ্ড করে ফেলবে, সে স্বপ্নেও ভাবেনি। আর তার ধাক্কায় এতো জোরও ছিল না যে, একটি সবল সতেজ যুবক ছিটকে পড়ে যায়। হকারটি যে সেই মুহূর্তে কিছুই ধরে ছিল না, সেটা খেয়াল করেনি পিয়ালি।
আশেপাশের মহিলাদের বেশির ভাগই কেউ মোবাইলে, কেউ নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত ছিল। হাতে গোনা কয়েকজনই সচক্ষে দেখল এই ঘটনা। কিন্তু পিয়ালির আর্তনাদ সকলের দৃষ্টি কাড়ল।
- ধাক্কা মেরে ছেলেটিকে ফেলে দিলেন?
- তাই নাকি? কি নিষ্ঠুর মহিলা! হতে পারে এটা মহিলা কামরা। তাই বলে একটি জলজ্যান্ত ছেলেকে মেরে ফেলবে?
- আরে মহিলা কামরা তো কি হয়েছে? হকাররা তো যেকোনো কামরাতেই ওঠে।
- কোন হকারটা দিদি?
- আরে গয়না বেচছিল যে ছেলেটি।
- ঐ ইয়ং ছেলেটাকে ঠেলে ফেলে দিল? গায়ে জোর আছে বলতে হবে?
- ছাড়বেন না। ওকে পুলিশে দেব।
- ঠিক বলেছেন, একে পুলিশে দেওয়াই উচিৎ।
সারা কম্পার্টমেন্টে ছড়িয়ে পড়েছে ঘটনাটা। সবাই সবার মত করে বক্তব্য রাখছে। গেটের সামনে থাকা সব মহিলারাই প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে গেছে। যে যার মত করে সাজিয়ে অপরজনকে পরিবেশন করছে।
পিয়ালির মুখে কোনও কথা নেই। একটা অপরাধ বোধে ভুগছে। একদম শুরুতে কয়েকজনকে ওর মত করে কিছু বোঝাতে গিয়েছিল। কিন্তু কেউ ওর কথা শুনতে চায়নি। সবাই শোনার চেয়ে নিজ অভিমত প্রকাশ করতেই ব্যস্ত ছিল।
বেলঘড়িয়া স্টেশনে ট্রেন থামলে বেশ কয়েকজন মহিলা পিয়ালিকে ধরাধরি করে আর.পি.এফের কাছে নিয়ে গেল। লোকমুখে খবরটা সারা প্ল্যাটফর্ম ছড়িয়ে পড়েছে। আর.পি.এফের রুমের সামনে অসংখ্য জনতার ভিড়। পিয়ালিকে দেখার আগ্রহে কৌতূহলী জনতা এ ওর ঘাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আর.পি.এফ অফিসার বেড়িয়ে এসে বললেন, আপনারা এখানে অযথা ভিড় করবেন না। আমাদেরকে কাজ করতে দিন। তারপর এক জুনিয়র অফিসারকে বললেন, ইমিডিয়েটলি হকারটি কোথায় পড়েছে সেটা আইডেন্টিফাই করার ব্যবস্থা করুন। গাছপালা, ঝোপঝাড়ের মধ্যে পড়লে এখনো বেঁচেও থাকতে পারে।
পিয়ালিকে ভেতরে আর.পি.এফ অফিসারের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পিয়ালিকে ধরে আনা বেশ কয়েকজন মহিলাকে বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আর.পি.এফ অফিসারকে পিয়ালি সম্পূর্ণ সত্যি ঘটনা বিস্তারিত ভাবে বলল। অফিসারের প্রশ্নের উত্তরে নিজের ব্যক্তিগত জীবনকেও সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরে পিয়ালি। ঠিক এমন সময় পিয়ালির ফোন বেজে ওঠে। ফোন ধরতে দ্বিধা করলেও অফিসারের ইশারায় ফোনটা রিসিভ করে ও।
মা, তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। তোমাকে আর আমার জন্য গাড়ি কিনতে হবে না। আমি দাদুর কাছে পড়তে বসে, সব অঙ্ক একবারে ঠিক করেছি বলে, দাদু নিজের থেকেই আমাকে একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি দেবে বলেছে। আমি কিন্তু চাইনি। তুমি চলে এসো। দাদু দিদা তোমার দেরী দেখে চিন্তা করছে। ওরা তো জানে না যে তুমি আমার গাড়ি কিনতে গেছ বলে তোমার দেরী হচ্ছে।
বেশ জোরে জোরে কথা গুলো বলছিল ঋজু। ফোন স্পিকারে না থাকলেও সবটাই শুনতে পেল অফিসার। পিয়ালির মুখ দিয়ে কোনও কথা বের হচ্ছে না। একটা দলা পাকানো কান্না গলায় আটকে আছে। কোনও রকমে “ঠিক আছে, এখন রাখছি” বলে ফোনটা কাটল ও।
পিয়ালিকে অন্য একটা ঘরে বসিয়ে আর.পি.এফ অফিসার ওর সহযাত্রীদের আলাদা আলাদা ভাবে, ঠিক কি হয়েছে জানতে চাইলেন। প্রত্যেকে নিজের মত করে ঘটনার বর্ণনা দিল। কেউ কেউ বলল, পিয়ালি গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়ে হকারটিকে ফেলে দিয়েছে। কেউ আবার বলল, পিয়ালি ট্রেনের ঝাঁকুনিতে হকারটির গায়ে গিয়ে পড়েছিল, আর হকারটি তখন কিছু না ধরে থাকায় পড়ে গিয়েছে।
সকল অভিযোগকারীকে সেই অফিসার বললেন, দেখুন আপনারা এক একজন এক এক রকম কথা বলছেন। কার কথা সঠিক আমি বুঝতে পারছি না। তাছাড়া মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তো কোনও স্টেপ নাওয়া যাবে না। আপনাদের মধ্যে যিনি নিজের চোখে ঘটনাটা দেখেছেন, তিনি লিখিত অভিযোগ করুন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এই ভদ্রমহিলাকে অ্যারেস্ট করব। কোর্ট-কাছারি হবে। আপনাদেরকে কোর্টে যেতেও হবে।
কোর্ট-কাছারির নাম শুনে সকলের গলার সুর বদলে গেল। না, আমি তো মোবাইলে ব্যস্ত ছিলাম। ঠিক কি ঘটেছে তা লক্ষ করিনি। আরেকজন বলল আমি তো ঠিক সামনে ছিলাম না। ওর চিৎকার শুনে ওখানে যাই। কেউ কেউ বলল আমারা তো নিজেদের মধ্যে গল্প করছিলাম। এক্স্যাক্ট কি ঘটেছে, আমাদের পক্ষে বলা মুশকিল।
আপনারা যদি এরকম কথা বলেন, তবে তো আমি ভদ্রমহিলার বিরুদ্ধে কোনও স্টেপই নিতে পারবো না।
সে আপনি কি করবেন, আপনি বুঝবেন। আমি চলি। আমার অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে। এক এক করে সকল অভিযোগকারীই চলে গেলেন। অফিসার পিয়ালির থেকে ওর আই কার্ড নিয়ে তার ফটোকপি করে রাখলেন। পিয়ালির থেকে ওর ফোন নম্বর নিলেন। তারপর বললেন, যান ম্যাডাম, বাড়ি যান। বাড়িতে বাবা, মা, ছেলে সবাই আপনার অপেক্ষায় আছে। দরকার পড়লে আমি আপনাকে ডেকে নেব।
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা, কথাটা বলে পিয়ালি অফিসারের হাত ধরে কেঁদে ফেলল।
আরে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আমি আমার ডিউটি করেছি। আর পুরুষ মানুষ মাত্রই খারাপ হয় না।
পিয়ালি নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়াল, আর মনে মনে ভাবল, সত্যি সকল পুরুষ মানুষকে এক গোত্রে ফেলা ঠিক নয়।
সমাপ্ত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.