নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয়দীপ চক্রবর্তী : পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। নেশায় লেখক। আকাশবানী কোলকাতায় সম্প্রচারিত হয়েছে তার লেখা নাটক। পেশাদারী থিয়েটার “অবেক্ষন” তার লেখা নাটককে বেছে নিয়েছে তাদের প্রযোজনা হিসেবে। তার কাহিনী চিত্রনেট্যে তৈরী সর্ট ফ্লিম, প্রচারিত হয়েছে ইউটিউব চ্যা

জয়দীপ চক্রবর্তী

জয়দীপ চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুড়ান্ত পরিনতি

২৫ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:৫২

প্রস্তাবনা

একটা জটিল কেস প্রায় শেষের পথে। দু-এক দিনের মধ্যেই অপরাধীকে সনাক্ত করবে গগন। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যস্ত। নিজের বাড়ির বসার ঘরে বসে গভীর চিন্তা-মগ্ন গগন। এমন সময় একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘরে ঢোকে হেমলতা। সোনার একগাছা চুড়ি আর একজোড়া কানের দুল গগনের সামনে রেখে হেমলতা বলে,
- এই মুহূর্তে এর থেকে বেশী কিছু দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। গগন বাবু আমাকে আপনি বাঁচান ।
- দেখুন, আপনাকে প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে আমার কেস নেওয়া, না নেওয়া, পারিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করে না। পুরোটাই নির্ভর করে কেসের গুরুত্বর ওপর। এখন আমি একটা কেস নিয়ে একটু ব্যস্ত আছি। আপনি কয়েকদিন পরে যোগাযোগ করুন।
- আমার হাতে যে একদম সময় নেই গগন বাবু। আমার স্বামী অম্লান বিশ্বাস গত কাল মারা গেছেন। আমার শ্বশুর, ভাসুর আমাকেই সন্দেহ করছে। আমি নাকি ওকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছি। পুলিশকেও ওরা সন্দেহের কথা জানিয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ও আমার সাথে যেমন ব্যবহারই করুক না কেন, আমি ওকে কখনই মেরে ফেলতে চাইনি।
- আপনি অস্থির হবেন না। শান্ত হয়ে বসুন। আমি আমার ভাইঝিকে ডেকে দিচ্ছি। আপনি ওকে সব কথা খুলে বলুন। ও আপনার সাথে গিয়ে স্পটটাও দেখে আসবে। প্রাথমিক ভাবে ও একটু কেস স্টাডি করুক। আমি ফ্রি হয়েই কেসে ঢুকছি।
কথাগুলো বলেই তীর্থাকে ডেকে নিলো গগন। তীর্থা এখন গগনের বেশ নির্ভরযোগ্য সহকারী হয়ে উঠেছে। অপরাধ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনাও করছে ও। হেমলতার কথা সংক্ষেপে তীর্থাকে বলল গগন। সব শুনে তীর্থা হেমলতাকে বলল, আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি তৈরি হয়ে আসছি। আপনার সাথে আপনাদের বাড়ি যাবো। ওখানে গিয়েই আপনার সব কথা শুনবো।
তীর্থা আবার ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। হেমলতা বসে রইল ওর অপেক্ষায় ।

ঘটনা যেখানে শুরু

বাস ও অটো-রিক্সা করে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই হেমলতাদের বাড়ি পৌঁছল ওরা। তিনতলা বাড়ির একতলায় অম্লানের বাবা-মা থাকেন। দোতলায় অম্লান ও হেমলতা তাদের একমাত্র মেয়ে পাখনাকে নিয়ে থাকতো। পাখনার বয়স তেরো। ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। তিনতলায় অম্লানের দাদা ধীমানের বাস। ধীমানের ছেলে প্রিয়ঙ্কর এবছর হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেবে।
পথে আসতে আসতেই পরিবারের সদস্যদের পরিচয় নিয়ে নিয়েছে তীর্থা। হেমলতাদের ঘরে ঢুকে চারপাশ দেখতে দেখতে অম্লানের মৃত্যুর দিনের ঘটনাটা হেমলতার থেকে বিস্তারিত জানতে চাইল ও।
সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ভর্তি লোক। রবিবার বা অন্যান্য ছুটির দিনে প্রায়শই কোনও না কোনও বাড়িতে ওরা একত্র হয়। মদ্যপানের সাথে চলে আড্ডা। অম্লানের বন্ধু সৌম্যশুভ্র এসেছে। সাথে এনেছে বিলেতি মদ। অম্লান ও সৌম্যশুভ্র দুজনেই পুলিশের চাকরি করে। অম্লান থানায় বসে কেরানী বা দপ্তরীর কাজ করে। সৌম্য রয়েছে টোল-প্লাজায়। দুহাতের উপার্জন তার। অম্লানের সেই সুযোগ নেই।
রাজন্যা, পাখনা একই স্কুলের পড়ে, পাখনার থেকে পাঁচ বছরের ছোটো। দুই পরিবারের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পাখনা প্রায়ই রাজন্যাদের বাড়ি সময় কাটায়। আজকেও সারাদিন ঐ বাড়িতেই কাটিয়েছে পাখনা। হেমলতা ওকে সকালবেলা পৌঁছে দিয়ে এসেছে। সন্ধ্যাবেলায় পাখনাকে ওর বাড়ি পৌঁছে দিতে রাজন্যা, তার বাবা কুণাল সেন ও মা আরাধ্যা এসেছে। কুণাল সেনের ভেষজ ব্যবসা। নানাধরনের গাছপালার আমদানি রপ্তানি করে ও। বাড়ির সাথে অনেকটা জমি নিয়ে বাগান রয়েছে। এছাড়া বাড়ি থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরে একটি নার্সারিও রয়েছে। কুণাল আজ সাথে এনেছে ছোলা বাদাম মাখা। পেয়াজ কুঁচি,লঙ্কা কুঁচি, ধনে পাতা এবং নানারকম মশলা সহযোগে মিশ্রণটি বেশ সুস্বাদু ও মদ্যপানের সাথে বেশ উপযোগী।
হেমলতা চিকেন কিমা সহযোগে ঘুগনি বানিয়েছে। তার ওপর ধনেপাতা ও পেয়াজ কুঁচি ছড়িয়ে, সকলকে আলাদা আলাদা প্লেটে পরিবেশন করেছে। ওকে এই কাজে সাহায্য করেছে ধীমানের স্ত্রী মধুরিমা। হেমলতার শাশুড়ি মাঝে মাঝে রান্নাঘরে ঢুকে অযাচিত পরামর্শ দিতে ছাড়েনি।
হেমলতা ও মধুরিমা সকলের হাতে ঘুগনির প্লেট তুলে দিল। কোথা থেকে ছুটে এসে বাবার ঘুগনিতে ভাগ বসাল পাখনা। তারপর একমুঠ ছোলা বাদাম খেয়ে পাশের ঘরে রাজন্যার সাথে আবার খেলতে চলে গেল। ঠিক তার পরেই মধুরিমা অম্লানের প্লেটে একটা চুল দেখতে পেয়ে সরিয়ে দেয়।
সকলে ঘুগনি ও ছোলা বাদাম সহযোগে মদ্যপান করছে। এমন সময় এক ব্যাগ গজা নিয়ে তিনতলা থেকে দোতলায় নামল ধীমান। ওরা সেদিনই পুরী থেকে ফিরেছে। সবাই এক একটা আস্ত গজা আত্মস্থ করল। তবে অম্লান ভেঙে নিলো অর্ধেকটা। আর বাকি অর্ধেকটা ধীমান নিজেই খেল। গজাটা খাওয়ার পরেই অম্লান একটা অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ ডাক্তার ডেকে আনে ধীমান। ডাক্তার এসে অম্লানকে মৃত ঘোষনা করে। শরীরে হঠাৎ অক্সিজেনের অভাব ঘটে রেস্পেরেটারি সিস্টেম কোলাপ্স করেই অম্লানের মৃত্যু হয়েছে বলে ডাক্তারের ধারনা। তবে মারা যাওয়ার সময় বেশ একটা হাসির রেশ ছিল অম্লানের মুখে।
স্বাভাবিক ভাবেই বিষক্রিয়াতেই অম্লানের মৃত্যু হয় বলেই ধারনা করে সবাই। যদিও ধীমানের দেওয়া গজা খাওয়ার পরেই অম্লানের মৃত্যু হয়,তবুও বেশিরভাগ মানুষের সন্দেহ হেমলতার ওপরেই। সৌম্যশুভ্র অম্লানের দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
হেমলতার ওপরে সন্দেহের তেমন বিশেষ কোনও কারণ নেই। ঘুগনি হেমলতা একা পরিবেষণ করেনি। মধুরিমাও সাথে ছিল। তাছাড়া অম্লান ঘুগনি ছাড়াও অনেক কিছু খেয়েছিল। যেকোনো কিছুর মধ্যেই বিষ থাকতে পারে। আর ওদিন ওখানে উপস্থিত যে কেউ সে কাজটি করে থাকতে পারে। তবুও ওর শ্বশুর, ভাশুর ওর দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে। হেমলতার বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। বাপের বাড়ির তরফ থেকে ওর পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই। তাই ও বেশ অসহায়। শ্বশুরবাড়ির অনেক কিছুই ওকে মেনে নিতে হয়। তবে অপরাধ না করে স্বামীর খুনের দায়ভার ওর কাঁধে চাপিয়ে দিলে তা মেনে নেওয়া যায় না। আর সেই কারণেই হেমলতা গগনের শরণার্থী হয়েছে।
আচ্ছা ঐ দিন আপনারা কোনও ছবি বা ভিডিও তোলেন নি? প্রশ্ন করে তীর্থা।
- ফটোতো উঠেছিলই। আমরা কোথাও একসাথে হলেই সেলফির বন্যা বয়ে যায়। সবার মোবাইলেই সেই ছবি আছে। অন্যান্য দিন আমরা একে অপরের সাথে ছবি শেয়ার করি। ঐ দিন আর করা হয়নি।
- আর ভিডিও?
- ভিডিও তোলা হয়েছে বলে তো আমার জানা নেই। তবে সবার মোবাইল চেক করে দেখতে পারো।
- আপনার মোবাইলের ছবিগুলো আমাকে হোয়াটস-অ্যাপ করুন। বাকিদেরটা আমি দেখে নিচ্ছি। আরেকটা প্রশ্ন। আপনার সাথে আপনার স্বামীর সম্পর্ক কেমন ছিল?
- ভালো নয়।
- একটু বিস্তারিত বলবেন?
- সবটা কি বলতেই হবে?
- বলুন না। তদন্তের প্রয়োজনে আমাদের সবকিছু জানা দরকার।
একটু সংকোচ বোধ হলেও হেমলতা বলে চলল তার পনের বছরের বিবাহিত জীবনের কথা। হেমলতার চোখের আড়ালে তীর্থা সেকথা তার মোবাইলে বন্দি করতে থাকলো।

অতীতের পাতা থেকে

হেমলতা ও অম্লানের বিয়ে দেখাশোনা করেই হয়। অম্লানের স্বাগতা নামের একটি মেয়ের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। তবে স্বাগতার পরিবারের কেউই ওদের এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। স্বাগতাকে ওনারা এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী কৃতিত্ব বনিকের সাথে বিয়ে দেন। বাধ্য হয়েই হেমলতাকে বিয়ে করে অম্লান। তবে ওর মন জুড়ে স্বাগতাই ছিল। হেমলতা সব জানতো, মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই ওকে যেটা মেনে নিতে হল, তার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিল না হেমলতা।
মধুচন্দ্রিমা করতে গোয়ায় গিয়েছিল হেমলতা ও অম্লান। সেই মধুচন্দ্রিমার সম্পূর্ণ খরচাই দেয় অম্লানদের থানার ওসি দিবাকর বিশ্বাস। তবে দিবাকরের এই অর্থ ব্যয়ের একটা শর্ত ছিল। হেমলতাকে মধুচন্দ্রিমার মধুর রাতগুলি, স্বপ্নের রাতগুলি অম্লানের পরিবর্তে দিবাকরের সাথে কাটাতে হয়। এতে হেমলতার বিন্দুমাত্র সম্মতি না থাকলেও অম্লান ওকে এই কাজ করতে বাধ্য করে।
এরপর শুধু দিবাকর নয় অম্লান হেমলতাকে বহু পুরুষের সাথেই সহবাসে বাধ্য করে। আর তার বিনিময়ে অস্নান পায় মোটা অঙ্কের টাকা। অম্লান উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ। খেলাধুলার সুবাদে পুলিশের চাকরিটা পেয়েছে ও। তবে ও যে পদে চাকরি করে সেখানে উপরি উপার্জনের সুযোগ নেই। মাহিনার টাকাই একমাত্র ভরসা। মাহিনার টাকা দিয়ে নিজেদের সকল চাহিদা, সখ, আহ্লাদ পূরণ সম্ভব নয়। সেইজন্য উপার্জনের এই সহজ পথটা বেছে নিয়েছে অম্লান।
প্রথমে মেনে নিতে না পারলেও পরে নিজেকে অদৃষ্টর হাতে তুলে দিয়েছে হেমলতা। বিয়ের বছর দুয়েক পরে হেমলতার মেয়ে হল। সেই মেয়েটির প্রকৃত বাবা কে সে ব্যপারে অম্লানের মনে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। ঝগড়াঝাঁটির সময় তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো। সে সন্দেহের একটি বিশেষ কারনও ছিল। অতিরিক্ত পরিমানে নেশার মধ্যে ডুবে থাকার ফলে অম্লানের পৌরষ্যত্বের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। বেশী সময় ধরে ও যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারতো না।
নিত্য নতুন কাস্টমার জোগাড় করে হেমলতার কাছে হাজির করত অম্লান। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন হেমলতাকে ভোগ করার সময় ওকে শারীরিক কষ্ট দিত। এজন্য হেমলতা নানাভাবে প্রতিবাদ করলেও তেমন কোনও সুরহা হয়নি। আর এমন পরিবেশের মধ্যেই পাখনা বড় হয়ে উঠল।
হেমলতা তার স্বামী ছাড়া সে সব লোকের সাথে সহবাস করতে বাধ্য হয়েছিল, তার মধ্যে একজনকে হেমলতা বেশ পছন্দ করত। সেই লোকটি বেশ রোম্যান্টিক স্বভাবের। অনেক কবিতাও লিখেছিল সে হেমলতাকে নিয়ে। তার সান্নিধ্যে এলে হেমলতার মন বেশ ভালো হয়ে যেতো। সেই লোকটির নাম কুণাল সেন। কুনালের বিয়ের আগে হেমলতার সাথে ওদের দুজনের একটা মধুর সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পর অবশ্য সে সম্পর্ক অনেকটাই স্মিত হয়ে যায়। তবে দুই পরিবারের মধ্যে আসা যাওয়া অব্যাহত ছিল। কুণালের লেখা চিঠিগুলো এখনও বেশ যত্নে রয়েছে। তীর্থার অনুরোধে সেগুলো ওকে দেখাল হেমলতা। একটি কবিতা বেশ নজর কাড়ল।
সঙ্গোপনে, আমার মনে নিয়েছ তুমি ঠাঁই।
সারারাত সারা গায়ে তোমায় মাখতে চাই।
তোমার বমি, বমি ভাবের হবো আমি কারণ।
প্রেমের মন্ত্র পড়ে আমি করব তোমায় ধারণ।
তুমি আমার জীবন-সুধা, তুমি অক্সিজেন,
তোমার মনে বাঁধল বাসা, এই কুণাল সেন।
হেমলতার শ্বশুর শাশুড়ি নিজের ছেলের কোনও দোষই দেখতেন না। দেখতে চাইতেনও না। হেমলতার রাত করে বাড়ি ফেরা, বাড়িতে যখন তখন চেনা-অচেনা লোক-জনের যাতায়াত প্রভৃতির জন্য ওনারা হেমলতাকেই গালমন্দ করতেন। ধীমানও বাবা-মাকেকে সম্পূর্ণ সমর্থন করত।
হেমলতাদের বাড়িতে সৌম্যশুভ্রর ছিল অবাধ যাতায়াত। হেমলতার প্রতি তার ভীষণ আকর্ষণ ছিল। সৌম্য ওর উপরি উপার্জনের অধিকাংশই হেমলতার পিছনে খরচ করত। সৌম্য এলেই অম্লান ওর মেয়েকে নিয়ে কোথাও না কোথাও বেরিয়ে পড়ত। কোনও কোনও দিন পাখনাকে ওরা রাজন্যাদের বাড়িতে রেখে আসতো। রাজন্যার সাথে খেলা ছাড়াও কুণালের কাছে নানা বিষয়ের গল্প শোনাও ছিল পাখনার ঐ বাড়ি যাওয়ার অন্যতম কারণ। সে গল্প কখনও মহাভারতের কর্ণ, কৃষ্ণ বা অর্জুনকে নিয়ে, কখনও বা সক্রেটিস, গালিলিও, কোপারনিকাসদের নিয়ে, কখনো বা যিশুখ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ, মহাবীরকে নিয়ে। বিভিন্ন গাছপালার গুণগান নিয়েও আলোচনা চলত কখনও সখনো।
হেমলতার সাথে কথা বলে, ওর থেকে সেদিনকার ছবি নিয়ে তিনতলায় ধীমানের সাথে দেখা করতে যায় তীর্থা। ধীমান তার কর্মস্থলে থাকায় ওর সাথে দেখা হল না। ধীমানের স্ত্রী মধুরিমার সাথে কথা হল ওর।

কিছু কথা, কিছু তথ্য

ধীমান অফিসে চলে গেছে। প্রিয়ঙ্কর গেছে কোচিং ক্লাসে। একা ঘরে সংসারের কাজ করছে মধুরিমা। এমন সময়েই তীর্থা গিয়ে হাজির হল। প্রথমে ধীমানের খোঁজ করে, ওকে না পেয়ে মধুরিমার থেকে ধীমানের নম্বর নিয়ে ওকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে তীর্থা।
- আপনার দেবরের সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
- ওর সম্পর্কে কি আর বলব? ভীষণ মুডি স্বভাবের। আমি এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর শুনেছিলাম যে ওর সাথে স্বাগতার বিয়ে হবে। কিন্তু সেটা হল না। হেমলতার সাথে বিয়ে হল। আর তাতেই অম্লান সম্পূর্ণ বদলে গেল।
- এ বাড়ির অন্যান্যদের মত আপনিও কি মনে করেন যে অম্লান বিশ্বাসকে হেমলতাই খুন করেছে?
- না, তা করি না। তবে যদি ও সেটা করেও থাকে তবে একটুও ভুল কাজ করেনি। অনেক আগেই ওর এই কাজটা করার ছিল। লোকটা হেমলতার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে।
- আপনি হেমলতার জায়গায় থাকলে কি করতেন?
- আর যাইহোক, ওর মতন সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করতাম না। প্রথম থেকেই কিছু একটা ব্যবস্থা নিতাম। বেড়াল প্রথম রাতেই মারা উচিৎ।
- হেমলতার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, তবে কি আপনিই আপনার দেবরকে খুন করলেন? হেমলতার সাথে আপনিও তো ঘুগনি পরিবেষণ করে ছিলেন। ওতে বিষ মেশানোর স্কোপ তো আপনারও আছে।
- আমরা কাউকেই কোনও প্লেট হাতে তুলে দিইনি। প্লেট সুদ্ধ ট্রে সামনে ধরেছি। যে যার মত হাতে তুলে নিয়েছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে ওখানে ঐদিন উপস্থিত ছিল, এমন যে কেউকে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারো।
- না, আপনার কথা আমি অবিশ্বাস করছি না। তবে আপনি তো অম্লান বাবুর প্লেটে চুল দেখে তা নিজের হাতে ফেলে দিয়েছিলেন। সেই সময় তো কিছু মিশিয়ে দিতেই পারেন।
- দেখো, তোমার কল্পনায় তুমি খুশিমতো অনেক কিছুই ভেবে নিতে পারো। তবে কারোর দিকে অভিযোগের অঙ্গুল তুললেই তাকে অভিযুক্ত সাজানো যায় না। সে অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ দিতে হয়।
- প্রমাণ তো নিশ্চয় দিতে হবে। আর সে প্রমাণ আমরা যোগাড়ও করে ফেলবো খুব শীঘ্রই। ততদিন আপনি আরাম করুন। আজ আমি আসছি।
তিনতলা থেকে নেমে একতলায় অম্লানের বাবা মায়ের ঘরে ঢুকল তীর্থা। তারা পুত্র শোকে বেশ বিহ্বল। স্বাভাবিক কথা বলার অবস্থায় তারা নেই। তবে অল্প কথার মধ্যেও তারা যে তাদের ছেলের মৃতুউর জন্য হেমলতাকেই দায়ী করছেন, সেটা তীর্থাকে জানিয়ে দেন। আরও দু-চারটে সাধারণ কথা বলে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ে তীর্থা।

গগনের তদন্তের সূচনা

গগন তার পূর্ববর্তী তদন্তের কাজ শেষ করে হেমলতার দেওয়া কাজে মন দেয়। ভাইঝির থেকে অম্লানের খুনের ইতিবৃত্ত জেনে নেয় সে। রেকর্ডিং করা হেমলতার কথাও মনোযোগ দিয়ে শোনে ও। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এই তদন্তের বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খুনের অস্ত্রটি কি তা জানা না গেলে অপরাধীকে ধরা সহজ হবে না। ঠিক কিভাবে এই কেসের তদন্ত শুরু করবে, ডাইরিতে তারই ছক কষছে গগন।
কি মনে হচ্ছে কাকাই? গগন অনেকক্ষণ ধরে চুপ থাকাতে, তীর্থার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গল।
- বেশ জটিল কেস তীর্থা। খুনের সময় উপস্থিত প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলতে হবে। আর প্রত্যেকের কথা ক্রস চেক করে নিতে হবে। হেমলতা যে সব সত্যি কথা বলছে এরকমটা ভাবারও কোনও মানে নেই।
- কিন্তু মৃত্যুটা যদি বিষ প্রয়োগেই হয়ে থাকে, তবে সে বিষ যে পুরীর গজাতেই ছিল তা নিশ্চিন্ত। আর সে গজা যখন ধীমান বাবু খাইয়েছেন। তখন প্রাথমিক সন্দেহ তো ওনার ওপরেই পরে।
- গজার অর্ধেকটা তো ধীমান বাবু নিজেই খেয়েছেন। ওনার কিচ্ছু হয়নি। অথচ ওনার ভাই মারা গেল। তাছাড়া অনেক বিষ আছে, যা খাওয়ার ঘণ্টা খানেক পরে তার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাই বিষ ঘুগনিতে, ছোলা-বাদাম মাখাতে, এমন কি মদের মধ্যেও থাকতে পারে।
- অম্লান বাবুর থেকে তো ওনার মেয়ে পাখনাও ঘুগনি খেয়েছে। আর ছোলা বাদাম মাখা তো একটা পাত্রেই ছিল। ওখান থেকে সবাই খেয়েছে। মদও তাই।
- মদের গ্লাস তো সবার আলাদা আলাদা। অম্লানের গ্লাসে যদি আগে থেকে কেউ কিছু রেখে দিয়ে থাকে, তবে ?
- সেটা তুমি একদম ঠিক বলেছ। তবে এখন আমাদের করনীয় কাজ কি হবে কাকাই?
- সেদিন অম্লানের খাওয়া প্রতিটি জিনিষই পুলিশ তদন্তের জন্য নিয়ে গেছে। প্রথমে সেই রিপোর্টের খোঁজ নেব। অম্লান বাবুর পোস্টমর্টেম রিপোর্টটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্টগুলো পাওয়ার পর সবার সাথে কথা বললে আমাদের তদন্ত করতে সুবিধে হবে।
- তাহলে এখন আমাদের কোনও কাজ নেই?
- অবশ্যই আছে। ঐদিন ওখানে উপস্থিত সকলের ফোনের কল লিস্ট ভালোভাবে ঘাটতে হবে। ওখান থেকে কিছু তথ্য পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। আর তোর একারও কিছু কাজ আছে।
- আদেশ করো কাকাই।
- অম্লানের পুরনো প্রেমিকা স্বাগতার একটু ডিটেলে খোঁজ নিতে হবে। ইদানীং ওর সাথে অম্লানের কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা, স্বাগতার স্বামী কেমন প্রকৃতির মানুষ, প্রভৃতি সব কিছুর খোঁজ নিবি। আর একটা সাস্পেক্ট লিস্ট তৈরি করবি। সবার নাম রাখবি তাতে। শুধু ঐদিনের উপস্থিত লোক-জনদেরই না, অম্লান ও হেমলতার সাথে জড়িত, ঐ বাড়িতে বসবাসকারী সকলের। তদন্ত এগোবে, আর আমরা এক-একটা নাম কাটতে কাটতে যাবো। আর পাখনার ব্লাড সেম্পেলটা কালেক্ট করতে হবে। পাখনা সত্যিই অম্লান বাবুর মেয়ে কিনা তা জানা দরকার।
- যো আজ্ঞা কাকাই, তোমার কথা মতই কাজ হবে।

পরীক্ষাগারের ফলাফল

পাখনার ব্লাড সেম্পেলটা কালেক্ট করে, ফরেনসিক সার্জেন্ট অনীক মিত্রকে ফোন করে ওনার ল্যাবে পৌছায় গগন। অনীক মিত্রের পর্যবেক্ষণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। অম্লানের খাওয়া প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যই বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন উনি। কিন্তু কোনটাতেই কোনও বিষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাকস্থলীতে থাকা খাবারের মধ্যেও কোনও বিষ নেই।
তবে অম্লান মারা গেল কিভাবে? বেশ উদ্বেগের সাথে অনীককে প্রশ্ন করে গগন।
- সেটাই তো রহস্য। যে বা যারাই কাজটা করে থাকুক না কেন বেশ ঠাণ্ডা মাথায়, বেশ প্ল্যানিং করে করেছে। বুঝলে গগন, খুনটা বেশ পাকা মাথার কাজ বলেই মনে হচ্ছে আমার।
- সেটা তো বুঝতেই পারছি। তবে আমাদেরও হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।
- হাল কে ছাড়ছে? আমি ভিক্টিমের খাওয়া খাবারের প্রতিটি কণা আবার ইনভেস্টিগেট করছি।
- সে করুন। কিন্তু অম্লানের অবশিষ্ট কোনও খাবারের মধ্যে যদি কোনও বিষাক্ত কিছু না থেকে থাকে, তাহলে কি পেটের কোনও খাবারে বিষ থাকবে?
- সেটাই তো আমার কথা। আমি তো ভেবেছিলাম অম্লানের মদের গ্লাসে মধ্যে অবশ্যই কিছু পাওয়া যাবে।
- আচ্ছা মৃত্যুটা তো অন্য ভাবেও হতে পারে।
- ওনার কোনও ভাবে নিউরো-মাসকুলার জংশন ব্লক হয়ে রেস্পেরেটারি সিস্টেম কোলাপ্স করেছে। তেমন পয়জনাস কিছু শরীরে না ঢুকলে হঠাৎ করে নিউরো-মাসকুলার জংশন ব্লক হবে কি করে?
- ঠিক আছে। আপনি আবার ভালোভাবে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করুন। আর তার সাথে এই ব্লাড সেম্পেলটারও ডি.এন.এ টেস্ট করুন। কিছু জানতে পারলেই আমাকে ফোন করবেন। আমি ততক্ষণ প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখি নতুন কোনও খেই খুঁজে পাওয়া যায় কিনা।

হেমলতাকেই সন্ধেহ

ফরেনসিক ল্যাব থেকে বেরিয়ে ধীমানকে ফোন করল গগন। আগামীকাল শনিবার, ধীমানের ছুটি। তাই সকালের দিকেই ওর সাথে দেখা করবে ঠিক করে ফেলল গগন। পরেরদিন সময়মতই তীর্থাকে নিয়ে ধীমানদের বাড়ি পৌঁছল গগন। ছুটির দিনে একটু দেরীতে ঘুম থেকে ওঠে ধীমান। প্রাতঃকালীন কাজকর্ম সেরে ধীমান সবে একটা চায়ে চুমুক দিয়েছে, ঠিক সেই সময়েই গগন ও তীর্থা ওদের বাড়িতে উপস্থিত হল। মধুরিমাকে বলে আরও দু কাপ চা আনিয়ে নিলো ধীমান। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে গগনের উদ্দেশ্যে বলল, বলুন আপনাদের কি জানার আছে?
- আপনার ভাইয়ের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
- যে ভাই একজন বেশ্যাকে নিয়ে ঘর করে, তার সাথে কার সম্পর্ক ভালো থাকবে বলুন?
- যতদূর জানি বেশ্যা সে সেধে হয়নি, আপনার ভাই তাকে বেশ্যা বানিয়েছে।
- নিজের দোষ ঢাকতে এসব কথা সবাই বলে। হেমলতা যে লাইফ স্টাইল বিলং করে, যে কসমেটিক ইউজ করে, যে শাড়ি গয়না পরে, তা জোগানোর ক্ষমতা আমার ভাইয়ের নেই। আর সেই জন্যই ও ঐ রাস্তা বেছে নিয়েছে।
- আপনার ভাইয়ের মৃত্যুর পিছনে কার হাত আছে বলে আপনার মনে হয়?
- এতে আর মনে হওয়ার কি আছে। ইদানীং হেমলতার চাল-চলন অম্লান একদমই মেনে নিতে পারছিল না। প্রায়ই ওদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকত। অম্লান বেঁচে থাকতে হেমলতা তার মনের মানুষদের সাথে ঠিকভাবে মেলামেশা করতে পারছিল না। তাই ও আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে।
- কিন্তু আপনার দেওয়া পুরীর গজা খাওয়ার পরেই অম্লান বাবুর মৃত্যু হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সন্দেহের তীর আপনার দিকেই থাকে।
- দেখুন গজার প্যাকেট থেকে প্রত্যেকেই নিজে বেছে গজা তুলেছে। আমি কাউকে হাতে তুলে দিইনি। আমার ভাই যে গজাটা খেয়েছিল, তার অর্ধেকটা আমি খেয়েছিলাম। ওতে বিষ থাকলে তো আমিও মারা যেতাম। গজা খাওয়ার আগে অম্লান আরও অনেক কিছু খেয়েছিল। তার যেকোনোটায় বিষ থাকতে পারে। সব বিষ তো সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে না।
- সে কথা আমি অস্বীকার করছি না। তবে অম্লান বাবুর খাওয়া অন্যান্য খাবারও সবাই খেয়েছিল। তার ওপর সব খাবারই ভালো ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনটাতেই কিছু পাওয়া যায়নি।
- তার মানে তো আমার আনা গজাতেও কোনও বিষ পাওয়া যায়নি, তাই তো?
- হ্যাঁ, এখনও খুনের অস্ত্রটা আমরা আইডিন্টিফাই করতে পারিনি। তবে আশা করছি খুব শীঘ্রই ওটা আইডিন্টিফাই করা যাবে।
- যখন আইডিন্টিফাই করবেন, তখন করবেন। তার আগে কাউকে সন্দেহ করা ঠিক নয়। আপনার কি আমার থেকে আর কিছু জানার আছে?
- না আপাতত আর কিছু জানার নেই। আমরা এখন আসছি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আবার আসবো।
ধীমানের সাথে কথা বলে ওদের বাড়ি থেকে বের হল গগন ও তীর্থা।

নতুন সূত্র, খুনের অস্ত্র

ধীমানদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি গতি নেওয়ার অল্প ক্ষণের মধ্যেই অনীক মিত্রের ফোন পেল গগন। অম্লানের মৃত্যুর কারণ উনি আবিষ্কার করেছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গগনকে ওনার ল্যাবে চলে আসতে বললেন উনি। বাধ্য হয়েই গাড়ির গতিপথ পরিবর্তন করল গগন।
আরে, এসো এসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করে আছি। ল্যাবে পৌছনো মাত্রই গগনদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন অনীক।
অবশেষে বিষের সন্ধান পেলেন তাহলে! সরাসরি বিষয়ে ঢুকল গগন।
- হ্যাঁ, পেলাম। তবে সেই প্রসঙ্গে ঢোকার আগে জানিয়ে রাখি পাখনা অম্লান বাবুর মেয়ে নয়।
- এই সন্দেহটা আমার আগে থেকেই ছিল। এবারে পাখনার আসল বাবাকে আমাদের খুঁজে বার করতে হবে। তা বিষটা কিসের সাথে মিশিয়ে অম্লানকে খাওয়ানো হয়েছিল, সেটা বুঝতে পেরেছেন?
- কোনও খাবারের সাথেই বিষ মেশানো হয়নি।
- তাহলে?
- বিষটাকেই খাবার বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
- ঠিক বুঝলাম না।
- হেমলক গাছের নাম শুনেছ তো?
- হ্যাঁ, হেমলকের পাতা তো ভয়ানক বিষাক্ত।
- একদম ঠিক। দার্শনিক সক্রেটিসকে ঐ গাছের পাতার রস পান করিয়েই মারা হয়েছিল। তা ঐ গাছের পাতা দেখেছ কখনো?
- না, তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
দাঁড়াও আমি তোমাকে এই গাছের ছবি দেখাই। কথা বলতে বলতেই মুঠোফোনে জাল বিস্তার করে গগনকে হেমলক পাতার ছবি দেখালেন অনীক। পাতা গুলোর সাথে আমাদের চেনা কোনও পাতার সাদৃশ্য পাচ্ছ গগন?
- এ তো অনেকটা ধনেপাতার মত দেখতে।
- একদম ঠিক। ধনেপাতার জায়গায় এই পাতা অম্লান বাবুকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও খাবারের সাথেই বিষ মেশানো হয়নি। সেই কারণে কোনও খাবার পরীক্ষা করেই কোনও কিছু পাওয়া যায়নি। আর এই পাতা খাওয়া মাত্রই মানুষ মারা যায় না। ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। এটা শরীরে ঢুকে ধীরে ধীরে নিউরো-মাসকুলার জংশনগুলো ব্লক করে দেয়। যার ফলে রেস্পেরেটারি সিস্টেম কোলাপ্স করে যায়, আর মানবদেহে অক্সিজেনের ঘাটতি ঘটে। ফল স্বরূপ তার মৃত্যু হয়। সাধারনত এইভাবে মৃত্যু হলে ভিক্টিমের মুখে একটু হাসি থাকে। যেটা অম্লান বাবুর মুখে ছিল।
- বুঝলাম। ধনেপাতা ঘুগনিতে ছিল। আবার ছোলা বাদাম মাখাতেও ছিল। তার মানে এই দুটোর কোনটাতে এই হেমলক পাতা ছিল।
এই দুটোই তো সবাই খেয়েছিল। বাদাম-ছোলা মাখাটা তো একটা পাত্রেই ছিল। সবাই ওখান থেকে খেয়েছে। আর অম্লান বাবুর ঘুগনি থেকে তো ওনার মেয়েও ভাগ বসিয়ে ছিল। তাই ওটাতেও কিছু থাকা সম্ভব নয়। তাছাড়া সবগুলো প্লেট একই রকম দেখতে। কারো জন্য নির্দিষ্ট কোনও প্লেট ছিল না। তাই সেখানে কোনও কারসাজি করাটাও অসম্ভব। অনেকক্ষণ পরে কথা বলল তীর্থা।
সেটাই তো রহস্য, আর খুনির মুনশিয়ানা। তবে খুনি যদি হাতে ঐ পাতা নিয়ে সবার অলক্ষ্যে অম্লান বিশ্বাসের ঘুগনির পাতে রেখে দেয়, তবে অম্লান বাবুর সেটাকে ধনে পাতা মনে করে খেয়ে নেওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। আর সে ক্ষেত্রে খুনি যে কেউই হতে পারে। আর খুনি যেই হোক না কেন, তাকে আমার বেশ পাকা মাথার খেলোয়াড় বলেই মনে হচ্ছে। বেশ চিন্তার সাথে কথাটা বলে গগন।
আরেকটি রহস্য হল হেমলক পাতার এখানে আসাটা। এই গাছ সচরাচর এ দেশে দেখা যায় না। উত্তর অ্যামেরিকা ও পূর্ব এশিয়ার সাধারণত এই গাছ জন্মায়। অত দূর থেকে এই গাছের পাতা নিয়ে আসা তো সম্ভব নয়।
কুণাল রায়ের শুনেছি বিদেশী গাছের ব্যবসা। ওনার নার্সারি আছে একটা। একবার ওনার ওখানে গিয়ে দেখতে হবে। ওনাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করা দরকার। অনেক ধন্যবাদ অনীক দা, এই ইনফরমেশন গুলো দেওয়ার জন্য। এবারে আমরা আসি। প্রয়োজনে আবার ফোন করবো।
অনেক গুলো সম্ভাবনা মাথায় নিয়ে অনীক মিত্রের ল্যাব থেকে বের হল গগনরা।
আরও কিছু কথা, আরও কিছু তথ্য
গগনের পরামর্শ মত স্বাগতার ফোন নম্বর জোগাড় করে ওর সাথে কথা বলে ওদের বাড়ি যায় তীর্থা। প্রাথমিক কথা-বার্তার পর স্বাগতা নিজেই মুল বিষয়ে ঢোকে।
- অম্লানের সাথে আমার প্রেম ক্লাস নাইন থেকে। ও তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। আমাদের পাড়াতেই থাকতো। ভীষণ ভালো ফুটবল খেলত। যেখানে যখন যা টুর্নামেন্ট খেলত, আমাকে নিয়ে যেত অম্লান। পাড়াতেও ও ছিল খুব পপুলার। পাড়ার পূজা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতা, সব কিছুতেই ও ছিল সর্বে সর্বা। পাড়ার যেকোনো কারো বিপদ-আপদে ও সবার আগে ছুটে যেত। তবে পড়া-শোনায় ও একদমই ভালো ছিল না। অনেক বারের চেষ্টায় কোনও রকমে উচ্চমাধ্যমিক টা পাশ করে। তবে আমাকে নানা ভাবে সাহায্য করত ও। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ভোর বেলা থেকে লাইন দিয়ে ফর্ম তোলা। আমাকে বাইকে করে কলেজে বা কোচিং ক্লাসে পৌঁছে দেওয়া। স্যার বা কোনও বন্ধুর কাছ থেকে নোট এনে দেওয়া প্রভৃতি যেকোনো দরকারে ও সব সময় আমার পাশে ছিল।
- এতো সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল আপনাদের মধ্যে, তবে আপনাদের বিয়ে হল না কেন?
- অম্লানের মত ছেলেদের রাত বিরতে ডেকে সাহায্য নেওয়া যায়। কিন্তু ওর সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় না। আমি তখন বাংলায় এম.এ পাশ করে বি.এড পরীক্ষা দিচ্ছি। আর ও অনেক নেতা মন্ত্রী ধরে, চেষ্টা চরিত্র করে, খেলার সুবাদে থানায় হাবিলদারের চাকরি জোগাড় করেছে। কোথায় আমি আর কোথায় ও। বাড়ির লোক দেখে-শুনে এক অবস্থাপন্ন উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ী কৃতিত্ব বনিকের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন। অর্থ ঐশ্বর্যে ভরে থাকলাম আমি।
- আপনার বিয়ের পর তো অম্লান বাবুও হেমলতাকে বিয়ে করে নিয়েছিল। দুজনের আলাদা আলাদা সুখের সংসার। তাহলে অসুবিধে কোথায় হল?
- পুরোটাই তো অসুবিধের। আমার বিয়ের পর অম্লান একদম অন্য মানুষ হয়ে গেল। নেশা ভান ধরল। শুনেছি বন্ধু বান্ধবের সাথে দুয়েক-বার খারাপ পল্লীতেও গিয়েছিল। ছেলেকে সামাল দিতে অম্লানের বাবা-মা তাড়াতাড়ি ওর বিয়ের ব্যবস্থা করল। কিন্তু অম্লানের মন প্রাণ জুড়ে শুধু আমি। আর কাউকে ওর পক্ষে ভালোবাসা সম্ভব ছিল না।
- আর আপনি? আপনার তো কোনও অভাবই ছিল না। আপনি নিশ্চয় সুখেই সংসার করছিলেন?
- সুখ? অর্থ, প্রাচুর্য দিয়ে কি সুখ কেনা যায়? কৃতিত্ব তার প্লাইউডের ব্যবসা নিয়ে এতো ব্যস্ত, যে আমাকে দেওয়ার মত তার কাছে কোনও সময়ই নেই। তাছাড়া আমার মন প্রাণ জুড়েও তো শুধু অম্লানই ছিল। ওকে ভোলাও আমার পক্ষে সহজ হল না। বিয়ের পরেও আমরা লুকিয়ে দেখা করতাম। কিছুদিন আমাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও ছিল।
- কিছুদিন কেন? কোনওভাবে কি আপনার স্বামী আপনাদের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে ছিলেন?
- না, তা নয়। অম্লানই দিনে দিনে শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়ছিল।
- অম্লান বাবুর এই মৃত্যুতে কাউকে সন্দেহ হয়?
- অম্লানের শত্রুর অভাব ছিল না। ওর বৌ, দাদা, আমার স্বামী কৃতিত্ব, কেউই ওকে সহ্য করতে পারত না। যে কেউই এই কাজটা করতে পারে।
- আপনার স্বামীও অম্লানকে খুন করতে পারে?
- স্ত্রীর বয়-ফ্রেন্ড কে কোন স্বামী সহ্য করবে? যদিও ঐ দিন ও স্পটে ছিল না। তবুও কৃতিত্বর তো টাকা পয়সার অভাব নেই। তাছাড়া মধুরিমার বাপের বাড়ি আমাদের পাড়াতেই। ওদের মধ্যে এখনও কথাবার্তা, যাতায়াত রয়েছে। দুজনে হাত মিলিয়েও কিছু করতে পারে।
- এতোগুলো ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার স্বামীর নম্বরটা আমাকে একটু দেবেন?
- হ্যাঁ, দিচ্ছি।
স্বাগতার কাছ থেকে কৃতিত্বর ফোন নম্বর নিয়ে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো তীর্থা।

তদন্তের মধ্য গগনে গগন

অনেকটা জায়গা জুড়ে, গাছ গাছালিতে ঘেরা একটা দোতলা বাড়ি। এই বাড়িতেই কুণাল সেনের সপরিবারে বসবাস। সকাল বেলা গগন যখন ঐ বাড়িতে পৌঁছল, কুণাল তখন তার বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত। গগনকে দেখেই কুণাল তার কাজ থেকে উঠে আস্তে চাইল। কিন্তু গগন তাকে বাধা দিয়ে বলল,
- আপনি ব্যস্ত হবেন না। আপনি আপনার কাজ সারুন। আমি বরং আপনার বাগানটা দেখি। আচ্ছা, আপনি এখন যে গাছটার পরিচর্যা করছেন, তার নাম কি?
- এটা সেন্দ মনসা। ইউফরবিয়া গণের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। রসবাত সারাতে এই গাছের বিশেষ ভূমিকা আছে।
- আর ওটা?
- ওটা হেমলক গাছ।
- এই গাছ তো এ দেশে হয় না। আপনি পেলেন কিভাবে?
- হংকং থেকে আনিয়েছি। এই গাছের কাঠের বেশ চাহিদা আছে। এর থেকে প্লাই-উড তৈরি হয়। নরম প্রকৃতির কাঠ বলে বিভিন্ন কাজে এই কাঠ ব্যবহার হয়।
- কিন্তু এই গাছের পাতা তো বিষাক্ত।
- হ্যাঁ। সক্রেটিসকে এই গাছের পাতার রস খাইয়েই হত্যা করা হয়েছিল।
- অম্লানকেও এই গাছের পাতা খাইয়েই হত্যা করা হয়েছে।
- ও, তাই নাকি?
- হ্যাঁ। পাতাটাকে যে কেউ এক নজরে ধনে-পাতা বলে ভুল করবে। আর আপনি যে সেদিন ছোলা বাদাম নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটাতেও ধনে পাতা ছিল।
- আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?
- সেটা করা স্বাভাবিক নয় কি? এই পাতার গুণগান সম্পর্কে আপনার থেকে ভাল আর কে জানবে? আর কারো পক্ষে এই পাতা পাওয়াও সহজ নয়।
- দেখুন, এই গাছ-গাছালির ব্যবসা কলকাতা শহরে আমি একা করি না। অনেকের কাছেই আপনি এই গাছ পাবেন। আর আমি তো এই সব গাছ বাগানের শোভা বর্ধন করার জন্য রাখিনি। এগুলো আমি বিক্রি করি। কাস্টমাররা সম্পূর্ণ গাছটাই কেটে নিয়ে যায়। হতেও তো পারে আমার থেকে কিনে কেউ ঐ কাজে ব্যাবহার করেছে। আর আমি অম্লানকে খুন করতে যাবই বা কেন?
- আপনি তো হেমলতার প্রেমে পাগল ছিলেন। কত কবিতা লিখেছেন তার জন্য। সেই প্রেমিকাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য তার স্বামীকে আপনি সরিয়ে দিতে চাইবেন, এর মধ্যে তো আশ্চর্যের কিছু নেই।
- সেসব আমার বিয়ের আগের কথা। আমার বিয়ের পর হেমলতার সাথে কেবল মাত্র একটা বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কই ছিল। আর আমি যেটা নিয়ে গিয়েছিলাম সেটা কারোর জন্য আলাদা আলাদা করে নিয়ে যাইনি। একটা ঠোঙ্গা থেকেই আমরা সবাই ওটা শেয়ার করেছি। ওতে বিষ থাকলে তো আমরা সবাই একসঙ্গে মারা যেতাম।
- হ্যাঁ, সেখানে যে একটা সংশয় রয়েছে, তা আমি অস্বীকার করছি না। আচ্ছা কৃতিত্ব বনিককে আপনি চেনেন?
- প্লাইউড ব্যবসায়ী কৃতিত্ব বনিক কি? উনি তো কয়েকদিন আগেই আমার থেকে দুটো হেমলক গাছ কিনে নিয়ে গেছেন। তবে ওটা এখান থেকে নয়, আমার নার্সারি থেকে সাপ্লাই হয়েছে।
- আপনার কল লিস্টে ওনার নম্বরটা দেখলাম। তাই প্রশ্নটা মনে এলো। আর একটা কথা। আমরা জানতে পেরেছি যে পাখনা অম্লান বাবুর মেয়ে নয়। তাই ওর বাবার খোঁজ পেতে সন্দেহজনক সকলের ব্লাড টেস্ট করতে চাই।
- কোনও টেস্ট করার দরকার নেই। পাখনা আমার সন্তান। হেমলতা অম্লানকে ভীষণ ভাবে ঘৃণা করত। ওর সন্তানে অম্লানের রক্ত থাকে তা ও কখনই চায়নি। তাই ও আমাকে রিকোয়েস্ট করাতে আমি ওর প্রস্তাবে রাজি হই। এই কথা আমি আর হেমলতা ছাড়া আর কেউ জানে না। আপনি এই কেসটার তদন্ত করছেন, তাই আপনাকে সত্যিটা বললাম। আশাকরি কথাটা গোপন থাকবে।
- সেই ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। গোপনীয়তা রক্ষা করাই আমাদের পেশার নিয়ম। আমার আর বিশেষ কিছু জানার নেই। আজ আমি চললাম।
- সেকি? প্রথম দিন আসলেন। ঘরে ঢুকলেন না। এক কাপ চাও খেলেন না। চলে যাবেন।
- আজ বসতে আসিনি। কাজে এসেছিলাম। চা অন্য দিন খাওয়া যাবে।
কুণাল সেনের বাড়িতে আর বিশেষ সময় নষ্ট না করে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ল গগন।
গগনদের তদন্তে অন্বেষণের উপদেশ
গগন ও তীর্থা তদন্তের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ও বিভিন্ন জনের থেকে পাওয়া সকল তথ্য একত্রিত করে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে ওরা। অঙ্কটা যেন মিলেও মিলছে না। তীর্থার থেকে ওর সন্দেহ তালিকাটা হাতে নিয়ে চোখ বোলাতে থাকল গগন।
- কিরে, তুই তো কাউকেই বাদ দিসনি। ধীমান আর ওর বাবা-মার নামটা কেটে দে।
- হেমলতার নামটাও কি রাখার দরকার আছে?
- না, ওটা থাক। তবে সৌম্যশুভ্রর নামটা কেটে দিতে পারিস।
- তাহলে কাকাই, তুমি এখন মেইন সাস্পেক্ট লিস্টে কাদের কাদের রাখছ?
- দ্যাখ, কেসটা এতদূর পর্যন্ত স্টাডি করে মনে হচ্ছে যে কাজটা কেউ একা করেনি। কমপক্ষে দুজন মিলে করেছে। পাতাটা সংগ্রহ করা আর সেটা অম্লানের খাবারের সাথে মেশানো, একজনের কাজ বলে তো মনে হচ্ছে না। সে দুজন মধুরিমা ও কৃতিত্বও হতে পারে। আবার কুণাল ও হেমলতাও হতে পারে।
- আচ্ছা হেমলতা একাও তো কাজটা করতে পারে কাকাই। পাখনাকে কুণাল সেনের বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে পাতাটা নিয়ে এলো। আর ঘুগনিতে মিশিয়ে সার্ভ করল।
- সে যদি ও কাজটা একাও করে থাকে, তাহলেও ব্যাপারটা কুণাল সেনের অজানা থাকার কথা নয়। আর ঐ হেমলক পাতা কিন্তু প্রথমেই মেশানো হয়নি। মেশানো হয়েছে প্রত্যেকের হাতে ঘুগনির প্লেট পৌঁছে যাওয়ার পরে। হেমলতার পক্ষে এই কাজটা করা একটু ডিফিকাল্ট।
- তবে তো মধুরিমা ও কৃতিত্বই মেইন সাস্পেক্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে কাকাই।
- সে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে তেমন স্ট্রং কোনও এভিডেন্টও পাওয়া যাচ্ছে না, যার ভিত্তিতে ওদের অপরাধী বলে ইন্ডিকেট করা যায়। ওদের ফোন কল ঘেঁটেও তেমন কিছু পাইনি আমি।
হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজে গগন ও তীর্থার আলোচনার ব্যাঘাত ঘটে। গগন দরজা খুলে বেশ চমকে গেল। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অন্বেষণ কর।
আরে স্যার আপনি? গগনের কথাতে বিস্ময় ঝরে পড়ল।
- কি করব? মহম্মদ যদি পর্বতের কাছে না যায়, পর্বতকেই মহম্মদের কাছে আসতে হয়। ডাক্তার দেখিয়ে এই রাস্তা দিয়েই ফিরছিলাম। তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু দেখা করে যাই।
- কেন,আপনার আবার কি হল?
- বয়স-জনিত রোগ। বহুদিন আগের মডেল তো। এখন এই মডেলের স্পেয়ার পার্স কোথাও পাওয়া যায় না। তাই আমাদের রোগও সারার নয়। ঐ জোড়া-তাপ্পি দিয়ে কোনও রকমে টিকিয়ে রাখা আরকি। আমার কথা ছাড়ো। তোমাদের খবর বল। এখন কি কেস নিয়ে ব্যস্ত?
- একটা খুনের কেস। আপনি যখন এসেই পড়েছেন, তখন আপনার থেকে একটা মতামত তো নিতেই হয়।
গগন তার এক সময়ের সিনিয়র কলিগ তথা শিক্ষাগুরু অন্বেষণ করকে এই কেসটির ইতিবৃত্ত সবটাই বর্ণনা করল। সবটা বিস্তারিত শুনে অন্বেষণ বললেন,
- তোমরা তো একদম ঠিক পথেই এগোচ্ছ। আমার এ কেসে বিশেষ কিছু বলার নেই। আমি শুধু একটাই সাজেশন দেব যে, তোমরা যেমন সবাই কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছ, তেমনি ছোটোদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করো। ওরা সাধারণত সঠিক তথ্যই দেয়। আর এখনকার বাচ্চাদের মেমরি এতো ভালো যে বড়রা যদি কোনও কিছু ভুলে গিয়ে থাকে, কোনও কিছু লক্ষ্য না করে, ছোটোদের থেকে তা সঠিক ভাবে জানা যায়।
- কথাটা আপনি মন্দ বলেননি অন্বেষণ দা। আমরা ওদের টোটালি অমিট করে গিয়েছি। ছোট বলতে তো দুজন। পাখনা আর রাজন্যা। আমি কালই ওদের সাথে কথা বলে নিচ্ছি।
- শুধু ওদের দুজনের সাথেই নয়। ভিক্টিমের দাদা ছেলের সাথেও কথা বলে নিও।
- ওকে। তীর্থা তুই কাল রাজন্যার বাড়ি চলে যা। আমি এদের দুজনের সাথে কথা বলে নেব।
- উল্টোটা কর না কাকাই। তুমি তো কুণাল সেনের বাড়ি গিয়েছিলে। ওখানে তুমিই যাও। এদের দুজনের সাথে আমি কথা বলছি। আমি তো রেকর্ডিং করবই। তাই আমি কিছু মিস করে গেলে তুমি তা পরে শুনে নিতে পারবে।
- বেশ তবে তাই হবে। এখন আর কাজের কথা নয়। অন্বেষণ দা, কি খাবেন বলুন?
- আমাকে খাওয়ানো কিন্তু বেশ চাপের। খাওয়ার তালিকার থেকে আমার না খাওয়ার তালিকা বড়। এখন আপাতত এক কাপ চিনি ছাড়া চা খাওয়াও। বেশ চা তেষ্টা পেয়েছে।
- তীর্থা যা তো। তিন কাপ চায়ের ব্যবস্থা করে আয়।
তীর্থা গেল বাড়ির অন্দরমহলে। গগন আর অন্বেষণ মাতল পুরনো দিনের স্মৃতিচারণে।

কচি-কাঁচার সঙ্গে তীর্থা

হেমলতাদের বাড়ির কচি কাঁচাদের সাথে দেখা করতে গিয়ে তীর্থাকে বেশ চাপে পড়তে হল। এখনকার স্কুল পড়ুয়ারা স্কুল, কোচিং ও পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। অনেক অনুরোধের পর বিকেলে প্রিয়ঙ্করের সাথে, আর সন্ধ্যের সময় পাখনার সাথে কথা বলার সুযোগ পেল তীর্থা।
কথামত সঠিক সময়েই ধীমানদের তিনতলার বসার ঘরে গিয়ে উপস্থিত হল ও । ধীমান ও মধুরিমার ছেলে তখন কোচিং ক্লাসে গিয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরে এসে তীর্থার সাথে একান্তে আলোচনায় বসল প্রিয়ঙ্কর।
- তোমার অম্লান কাকা যখন মারা যায়, তখন তুমি কি করছিলে?
- সেদিন সকালে আমরা পুরী থেকে ফিরেছিলাম। সন্ধ্যায় বাড়িতে স্যার এসেছিলেন। পড়ছিলাম।
- আর তখন তোমার বাবা-মা কোথায় ছিল?
- বাবা-মা তখন দোতলায় কাকাদের ওখানেই ছিল।
- তোমার পড়াশোনার ব্যাপারে বাবা-মা হেল্প করে? নাকি তুমি শুধু প্রাইভেট টিউটরদের সাহায্যেই পড়াশোনা কর।
- মেইনলি টিচারদের হেল্পেই। তবে বাবা ছুটির দিনে মাঝেমধ্যে আমাকে নিয়ে বসে।
- আর মা?
- মা তো সারাদিন সংসারের কাজ নইলে মোবাইলে হোয়াটস-অ্যাপ ফেসবুকেই ব্যস্ত থাকে। তারপর বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ফোনে আড্ডা তো আছেই। আমাকে আর কোথা থেকে সময় দেবে?
- মধুরিমা দি এতো কার সাথে কথা বলে, যে তোমাকে সময়ই দিতে পারে না?
- মায়ের বধূ-বান্ধবের কি অভাব আছে? প্রায় দিনই তো নিজের মোবাইলে চার্জ থাকে না। আমার মোবাইল নিয়ে কথা বলে।
- ও, তোমারও মোবাইল আছে?
- হ্যাঁ। আই.সি.এস.ই পাশ করার পর বাবা দিয়েছে। পড়তে গিয়ে বা কোনও বন্ধুর বাড়ি গিয়ে দেরি হলে খবর দিয়ে দি। বাবা-মাও আমি কোথায় কখন আছি জানতে পারে।
- রিসেন্টলি তোমার মা তোমার মোবাইল থেকে কাকে কাকে ফোন করেছে, বলতে পারবে?
- দেখাচ্ছি। আমি যাদের সাথে কথা বলি তাদের নম্বর সব ফোনে শেভ করাই আছে। শেভ না করা আউট গোইং কল যা আছে সে গুলো আমার মায়েরই করা।
প্রিয়ঙ্করের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে কল লিস্ট দেখতে লাগল তীর্থা। সবচেয়ে বেশি বার কল করা নম্বরটা তীর্থার চেনা মনে হল। নম্বরটা যাচাই করে নিলো ও। ওটা কৃতিত্ব বনিকের নম্বর। এতক্ষণে দুয়ে দুয়ে চার করতে পারলো তীর্থা। এই কারণেই মধুরিমার মোবাইলের ফোন কল ঘেঁটে কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রিয়ঙ্করের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ওদের ওখান থেকে বেরিয়ে দোতলায় গেল তীর্থা।
হেমলতার বসার ঘরে বসে পাখনার সাথে কথা বলার আগে গগনকে ফোন করে নিলো তীর্থা। গগন তখন কুণালদের বাড়ির দিকে এগোচ্ছে। মধুরিমার ফোনের কথা গগনকে জানিয়ে ফোন রাখল ও । তারপর পাখনাকে নিয়ে একটা আলাদা ঘরে বসল। খুব সাধারণ ও চালু প্রশ্ন দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল তীর্থা।
- তোমার বাবা আর মায়ের মধ্যে কে তোমাকে বেশি ভাল বাসত পাখনা?
- অবশ্যই মা।
- কেন বাবা তোমাকে ভালোবাসতো না?
- ধুর, বাবার আদর ভালোবাসা আমার ভালো লাগতো না। তাছাড়া ঐসব থেনস আঙ্কলদের বাড়িতে নিয়ে আসত। আমার একদম পছন্দ হত না।
- থেনস মানে এন্ড গেম সিনেমার ভিলেন?
- হ্যাঁ।
- ওরা কি তোমার মায়ের ওপর খুব অত্যাচার করত?
- সেটা আমি ঠিক জানি না। বেশিরভাগ সময়েই আমি বাড়ি থাকতাম না।
- বাবাকে খুব মিস করছ?
- সে তো করছিই। তবে কারো বাবাই তো চিরকাল বেঁচে থাকে না।
- টিচাররা ছাড়া তোমার পড়াশোনায় কে সবচেয়ে বেশি হেল্প করত?
- কুণাল আঙ্কল।
- আর বাবা মা ?
- বাবা মা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। আমার পড়াশোনা দেখার সময় কোথায়? মা তবুও মাঝে মাঝে একটু আধটু দেখে।
- আচ্ছা, তুমি তো বাবার থেকে ঘুগনি খেয়েছিলে। তাহলে সেই ঘুগনি খেয়ে তোমার বাবা মারা গেলেন কিভাবে?
- আমার মনে হয় ঘুগনি খেয়ে বাবার কিছু হয়নি। ঘুগনি ছাড়াও তো আরও অনেক কিছু খেয়েছিল বাবা। ওর মধ্যেই কিছু একটা খেয়ে বাবা মারা গেছে।
- ঠিক আছে। আমার আর কিছু জানার নেই। তুমি এখন তোমার কাজে যেতে পারো।
পাখনার সাথে কথা শেষ করে, হেমলতার সাথে দেখা করে ঐ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে তীর্থা।

অবশেষে অপরাধীর সন্ধান

তীর্থা ও গগন দুজনে দুজনার কাজ সেরে বাড়ি ফিরে এলো। তীর্থার মোবাইলে রেকর্ডিং করা জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব বেশ মন দিয়ে শুনল গগন। আর সব শুনে বলল,
- মনে হচ্ছে আমাদের এখুনি আবার হেমলতাদের বাড়ি যাওয়া উচিৎ।
- কেন কাকাই? মধুরিমা ও কৃতিত্বের ফোন কল কি তুমি শুনে ফেলেছ?
- হ্যাঁ। মধুরিমা খুব শীঘ্রই কৃতিত্বের কোম্পানিতে জয়েন করছে। ফোন কলটা সেই সংক্রান্তই। তবে এখানেও একটা খটকা আছে? চাকরি সংক্রান্ত ফোনে এতো লুকোচুরি কেন? সবার সাথেই এখুনি একবার কথা বলতে হবে। পাখনার সাথেও একবার কথা বলা দরকার।
- পাখনার সাথে তো কিছুক্ষণ আগেই আমি কথা বলে এলাম। তুমি নতুন করে ওকে আর কি জিজ্ঞাসা করবে?
- আছে, আছে। অনেক প্রশ্ন এখনও বাকি থেকে গেছে। তোর মতো আমাকেও পাখনার কথা রেকর্ড করতে হবে। ওদের ঘরে ঢুকে তুই আলাদা ভাবে হেমলতার সাথে কথা বলবি, আর আমি পাখনার সাথে।
- আমি হেমলতাকে নতুন করে আর কি জিজ্ঞাসা করব? ওর সাথে সব কথাই তো হয়ে গেছে।
- বলবি আমরা মধুরিমা ও কৃতিত্বকে সাস্পেক্ট করছি। সেই সম্পর্কে হেমলতা কিছু জানে কিনা, সেটা জানতেই এখন এখানে আসা।
- বুঝেছি। চল এবার তবে বেরনো যাক।
তীর্থা ও গগন যখন হেমলতাদের বাড়ি পৌঁছল তখন প্রায় রাত দশটা। এতো রাতে গগনদের দেখে বেশ অবাক হয়েছে হেমলতা। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুজনে দু-ঘরে আলাদা আলাদা ভাবে দুজনের সাথে কথা বলতে শুরু করল। তীর্থা গগনের শেখানো বুলি হেমলতার কাছে আওরাতে লাগলো। আর গগন পাখনার সাথে পরিকল্পিত বাক্যালাপ চালিয়ে গেল।
আমরা তোমার বাবার খুনি কে, তা জানতে পেরেছি। তবে সেটা শুনে তোমার হয়তো মন খারাপ হয়ে যাবে। কোনোরকম ভূমিকা না করে সরাসরি প্রসঙ্গে ঢুকল গগন।
- কেন? কে খুন করেছে আমার বাবাকে?
- তোমার মা।
- হতেই পারে না। আমার মা এই কাজ করতেই পারে না। আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।
- তোমার মা ঐ দিন সকালে তোমাকে যখন কুণাল আঙ্কলের বাড়ি পৌঁছতে গিয়েছিল, তখনই ওখান থেকে হেমলক পাতা নিয়ে এসেছিল। তারপর সুযোগ বুঝে তা তোমার বাবার ঘুগনির প্লেটে দিয়ে দিয়েছে।
- কি সব বাজে কথা বলছেন? মা তো ঐ দিন বাড়ির ভেতরেই ঢোকেনি। বাড়ির সামনে আমাকে পৌঁছেই চলে গেছে।
- আমি বুঝতে পারছি যে তুমি তোমার বাবাকে হারিয়েছ। এখন যদি তোমার মায়েরও কোনও সাজা হয়ে যায়, তবে তুমি একদম একা হয়ে যাবে। তোমার খুব কষ্ট হবে। তাই তুমি তোমার মাকে বাঁচাতে চাইছ। কিন্তু পাখনা, সত্যিটা তো একদিন প্রকাশ পাবেই।
- সত্যিটা কোথায় প্রকাশ পাচ্ছে? আমার মা কিছুই করেনি। অথচ আপনি মায়ের ওপর মিথ্যে দোষ চাপাচ্ছেন।
- আমি কোনও মিথ্যে দোষ চাপাচ্ছি না। তোমার মা সকাল বেলা হেমলক পাতা নেয়নি এটা ঠিক। নিয়েছিল সন্ধ্যাবেলা। তোমার বন্ধু রাজন্যা নিজের চোখে তোমার মাকে হেমলক গাছ থেকে পাতা পারতে দেখেছে।
- ভুল। সন্ধ্যাবেলায় আমার মা নয়, আমি হেমলক পাতা পেরেছিলাম।
- একদম ঠিক। রাজন্যা তোমাকেই দেখেছে। তুমি সেই পাতা তোমার বাঁহাতে লুকিয়ে রেখেছিলে। বাবার কাছ থেকে ঘুগনি খাওয়ার সময় বাঁহাতের পাতাগুলো বাবার ঘুগনিতে মিশিয়ে দিয়েছিলে।
- হ্যাঁ, তাই দিয়েছি। বেশ করেছি। ওটা আমার বাবা? বাবারা কখনো সুযোগ পেলেই মেয়ের প্রাইভেট পার্টে হাত দেয়? বাবা বেঁচে থাকলে, আমি একটু বড় হলে মায়ের মত আমাকে দিয়েও খারাপ কাজ করাতো। সৌম্যশুভ্র আঙ্কল আমাকে একদিন একা পেয়ে বিচ্ছিরি ভাবে আদর করছিল। আমি কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে বাবাকে সবটা বলি। বাবা সৌম্যশুভ্র আঙ্কলকে তো কিছু বললই না, উলটে আমাকে বলল, কি হয়েছে কাকু তো। কাকুরা একটু আদর তো করতেই পারে। আমি ঐ দিনই বুঝতে পেরেছিলাম যে , নিজেকে আর মাকে বাঁচাতে গেলে বাবাকে শেষ করে দিতে হবে।
- কিন্তু এই হেমলকের আইডিয়াটা তুমি কোথা থেকে পেয়েছিলে?
- কুণাল আঙ্কল একদিন সক্রেটিসের গল্প বলতে বলতে ঐ হেমলক গাছ দেখিয়ে বলেছিলেন যে, এই পাতার রস খাইয়েই সক্রেটিসকে হত্যা করা হয়েছিল। একটা পাতাই একজন মানুষের মৃত্যুর পক্ষে যথেষ্ট। দেখতে অনেকটা ধনেপাতার মতো। সেদিন মা ধনেপাতা দিয়ে ঘুগনি করবে শুনেই আমার প্ল্যানটা মাথায় এলো।
- দ্যাখো তুমি কি পরিস্থিতিতে, কতটা বাধ্য হয়ে এই কাজটা করেছ, সেটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু অন্যায় তো অন্যায়ই। সাজা তোমাকে পেতেই হবে।
পাখনার সাথে কথা শেষ করে, হেমলতাকে ডেকে নিয়ে মেয়ের এই কাজের ইতিবৃত্ত সবটা খুলে বলল গগন। হেমলতা এর বিন্দু-বিসর্গও জানতো না। সব শুনে ও বলে,
- আপনি আমার মেয়েটাকে বাঁচিয়ে, সব দোষ আমার ঘাড়ে ফেলে দিন। আমি আদালতে সব দোষ স্বীকার করে নেব। এই কেস আদালতে উঠলে আমার চরিত্র নিয়ে কাটা-ছেড়া হবে। আমার সম্মান এমনিতেও কিছু আর অবশিষ্ট থাকবে না। এর থেকে আমার জেল হওয়া অনেক ভালো।
- তা হয়না। সত্যিকে মিথ্যে দিয়ে ঢাকা যায় না। পাখনা নাবালিকা, তার ওপরে নানা ভাবে ওর বাবা ও বাবার বন্ধুদের দ্বারা অত্যাচারিত। আদালতে দাঁড়িয়ে ও সব স্বীকার করলে, ওর নাম মাত্রই সাজা হবে। আপনার চরিত্র বিশ্লেষন করারও কেউ সূযোগ পাবে না। কিন্তু আপনি সব দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিলে, সে সাজার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যাবে। তখন পাখনা সত্যি বেশ সমস্যায় পড়বে।
গগনের কথা মতই কাজ হল। পাখনার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ থাকলেও, বিচারক সব দিক বিচার করে পাখনাকে মাত্র তিন বছরের সাজা দেন। এই তিন বছর ওকে ভালো আচরণে থাকার জন্য অ্যাডমনিশন রাখার নির্দেশ দেন। সেখানে পাখনার নানা রকম কাউন্সেলিং চলে। যা পাখনার ভবিষ্যৎ জীবনকে সঠিক পথা চালিত করতে সাহায্য করবে।
বিচারক তার বিচারে মন্তব্য করেন যে, অপরাধকে ঘৃণা কর, অপরাধীকে নয়। আর এই কথার ওপর নির্ভর করেই তিনি তার রায় দেন, এবং বলেন, তিন বছর পাখনা এই সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।

ভাঙন শেষ, এবার গড়ার পালা

তিন বছর কেটে গেল। শেষ হল হেমলতার অপেক্ষার দিন । আজ সে মেয়েকে আনতে চলেছে। এই কটা বছর ও বেশ পরিশ্রম করে নিজেকে স্বনির্ভর করে তুলেছে। “সুস্বাদু” নামের একটি হোম সার্ভিস খুলেছে ও। ওর এই কাজে সঙ্গে আছে কুণালের স্ত্রী আরাধ্যা। কুণাল ওদের প্রাথমিক ভাবে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছে। বছর দুয়েকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে হেমলতা ও আরাধ্যার “সুস্বাদু” আজ ভালোভাবেই দাঁড়িয়ে গেছে। খাবার পৌঁছে দেবার জন্য দুজন ছেলে রেখেছে ওরা। ব্যবসায় সাফল্য এলেও হেমলতার মনে শান্তি ছিল না। মেয়ের জন্য মনটা সব সময়ই অস্থির হয়ে থাকতো। আজ সেই অস্থিরতা অবসানের দিন।
নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে গেল হেমলতা। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর পাখনা তার সামনে এলো। এসেই তার মাকে জড়িয়ে ধরল সে। আবেগ ও ভালোবাসা বিনিময়ের পর বাড়ির উদ্দেশ্য পথ চলা শুরু করল ওরা। সকল বাধা বিপত্তি কেটে গেছে। এখন শুধু এগিয়ে চলা।

সমাপ্ত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছ। ঈদ মোবারক ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.