নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর মনে অনুভব করো পৃথিবী কত সুন্দর !!

নাহার জেনি

সুন্দর মনে অনুভব করো পৃথিবী কত সুন্দর !!

নাহার জেনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কক্সবাজার, টেকনাফ ও বান্দরবান ভ্রমণের গল্প (শেষ পর্ব)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২০

পর্ব ০১
পর্ব ০২

৬ অক্টোবর ২০১৬

টেকনাফ যাওয়ার উদ্দেশ্যে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হল। তখনো ভোরের আলো পুরোপুরি ফুটেনি। ঘুম থেকে উঠার পরে সবাই ফ্রেশ হয়ে বাসে গিয়ে বসলাম। টেকনাফ যাবার পথের প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো অনেক সুন্দর ছিল। যারা অরণ্য ও প্রকৃতি প্রেমী তাদের কাছে অবশ্যই ভাল লাগবে। আনুমানিক তিন ঘন্টার মত বাস জার্নি করার পরে টেকনাফে পোঁছলাম। বাজারের সাথে একটা স্কুল ছিল। স্কুলের পাশেই মাঠ ছিল। মূলত এই জায়গাতেই পিকনিক বাসগুলা পার্কিং করে রাখা হয়। তারপর যে যার মত সকালের নাস্তা করে অটো দিয়ে টেকনাফ সমুদ্রবন্দরে গেলাম যেখান থেকে খুব সম্ভবত সেন্টমার্টিন যাওয়া হয়। কিন্তু তখন তিন নম্বর বিপদ সংকেত ছিল। তাই জাহাজ, লঞ্চ বা কোনো ট্রলারই চোখে পড়েনি। অবশ্য তখন প্রচন্ড রোদ ছিল। তা সত্ত্বেও কোনো কিছুই সাগরে দেখা যায়নি। তাই সেন্টমার্টিন যাওয়া হলো না। আমি যখন টেকনাফে যাই, তখন সাগর সংলগ্ন পুরো জায়গাটা-ই ফাঁকা ছিল। কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। এমনকি আশেপাশে কোনো দোকান ছিলনা। পুরোটা জুড়েই ছিল ছিমছিম নিরবতা যেখানে নেই কোনো কল কারখানা, বসতভিটা, কৃষিজমি বা চায়ের দোকান এমনকি বাথরুম-ও। হয়তোবা বর্তমানে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল আছে। কিন্তু তখন টেকনাফে কিছুই ছিলনা। একেবারেই শান্তশিন্ত ছিল যেখানে ছিলনা মানুষের কোলাহল বা শব্দ দূষণ।

যেহেতু তিন নম্বর বিপদ সংকেতের কারনে সেন্টমার্টিন যাওয়া সম্ভব না, তাই মনটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেল। তারপর আমার আঙ্কেল আমাদেরকে খুব সম্ভবত বার্মিজ মার্কেটে নিয়ে গেল। সেখান থেকে জুতা কিনলাম সবার জন্য।। তারপর মার্কেট থেকে সোজা চলে গেলাম স্পটে যেখানে বাস পার্কিং করা ছিল। তখন প্রায় তিনটা বেজে গেছে। সাথে আনা বাবুর্চি দের রান্না করা খাবার খেতে হবে রাস্তা ও বাজার সংলগ্ন খোলা মাঠে বসে। কিন্তু আমি একটু ইতস্তত বোধ করলাম। বাজার সংলগ্ন খোলা মাঠে বসে কিভাবে খাবো এত মানুষের সামনে? তাই আমি চেয়েছিলাম বাসের ভিতরে বসে খাওয়া দাওয়া করতে। কিন্তু বাসের ভিতরে খাওয়া দাওয়া করা নিষেধ। তাই কড়া নিষেধাজ্ঞার কারনে শেষ পর্যন্ত মাঠে বসেই খেতে হল। খাওয়া দাওয়া শেষে নিকটস্থ হাই স্কুল মাঠের ভিতরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করলাম। তারপর বাসে গিয়ে বসলাম। টেকনাফ বাজার থেকে বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। প্রায় আড়াই বা তিন ঘন্টা জার্নির পর কক্সবাজার হোটেলে পৌঁছালাম।

৭ অক্টোবর ২০১৬

পূর্বের দিন টেকনাফ ট্যুরের কারনে সবাই ক্লান্ত ছিলাম। তাই একদম বিকেলের দিকে আমরা হোটেল থেকে বের হয়েছিলাম অন্য আরেকটা বীচে যাবার জন্যে। আমরা সেদিন সিএনজি দিয়ে আরেকটা বীচে গেলাম। এই বীচের নামটা আমার মনে নেই। এই বীচেও দেখলাম প্রচুর পর্যটকদের সমাগম। সাথেই মার্কেট। এই মার্কেট থেকে আমরা মাছের শুঁটকি কিনলাম। তারপর মার্কেট পর্ব শেষ করে রাত ৮ টার দিকে হোটেলে চলে আসলাম। এর পরেরদিন বান্দরবানে নিয়ে যাবে। তাই ভোরে উঠতে হবে।

০৮ অক্টোবর ২০১৬

বান্দরবান যাবার উদ্দেশ্যে ভোর ছয়টার দিকে বাস ছাড়লো। কয়টায় বান্দরবানে পোঁছেছি তা আমার মনে নেই। বাস থেকে নেমে সবাই খাওয়া দাওয়া করে যে যার মত করে মেঘলা পাঁহাড় / নীলগিরি / নীলাচল এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। যে জায়গায় বাস পার্কিং করেছিল সে জায়গা থেকে মেঘলা পাঁহাড়ে যেতে পাঁচ মিনিটের মত লাগে। আমরা টিকিট কেটে মেঘলা পাঁহাড়ে গেলাম। আর বাসের অনেক যাত্রীরা নীলগিরি, নীলাচলে গেছে। তখন মেঘলা পাঁহাড়ের ভিতরে সিঁড়ির কাজ চলছিল। এর আগে কখনোই এখানে আসি নি। নিচে নামতে প্রায় পাঁচ মিনিট লেগেছে আমাদের। মেঘলা পাঁহাড়ের ভিতরে মিনি চিড়িয়াখানা আছে। তাছাড়া ঝুলন্ত সাঁকো রয়েছে। ইটের সিঁড়ি বেয়ে আমরা উপরে উঠলাম। উপরে উঠে দেখলাম উপজাতি দের দোকান। এই দোকানে উপজাতিরা পানি, শুকনো খাবার বিক্রি করে। তবে একটা জিনিস দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। সেটি হচ্ছে এখন উপজাতি মেয়েরাও ঝিলিক জামা পরিধান করে!! তখন ঝিলিক জামা বের হয়েছিল। তারাও এখন জর্জেট এর ড্রেস পরে! মানে উপজাতি বা আদিবাসী মেয়েরাও অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে! তারা এখন আর পোষাকে বা লেখাপড়ায় পিঁছিয়ে নেই! তাদের ড্রেসআপ আমাদের মতই আধুনিক ও দামী! এই ব্যাপারটা দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছি!! যাই হোক, আমরা কিছু শুকনো খাবার খেয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম।

মেঘলা পাঁহাড় সত্যি অনেক বড়। আমরা সবাই ক্লান্ত হয়ে গেছি এই মেঘলা পাঁহাড়ে। নীলগিরি বা নীলাচল যাওয়ার কোনো সময়ই আমাদের হাতে ছিল না। তাই এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে নীলগিরি বা নীলাচলে যেতে চাইলে মেঘলা পাঁহাড়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ মেঘলা পাঁহাড়ে গেলে আপনি নীলগিরি/নীলাচল যাবার পর্যাপ্ত সময় পাবেন না এবং সেই সাথে তখন খুব ক্লান্ত হয়ে পরবেন। মেঘলা পাঁহাড় ঘুরে স্পটে গেলাম যেখানে বাস পার্কিং করা ছিল। খাওয়া দাওয়া করতে করতে বিকাল হয়ে গেছে। মেঘলা পাঁহাড় ঘুরে সবাই অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছি। তাই বাসে গিয়ে বসে পরলাম। বান্দরবান থেকে এবার বাড়ি ফেরার পালা! অনেক তো ঘুরেছি। কক্সবাজার, টেকনাফ, বান্দরবান...। এবার যে সবাইকে বাড়ি যেতেই হবে! তারপর রাত ৮ টার দিকে বাস ছেড়ে গেল আমাদের চিরচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। বাস ছাড়ার পরে রাত দশটার দিকে বিরতি দেয়া হয়েছে রাতের খাবার হোটেল থেকে খাওয়ার জন্যে। তারপর মধ্যরাতে আবার বিরতি দেয়া হয়েছিল। খুব সম্ভবত কুমিল্লার একটা বিখ্যাত রসমালাই এর দোকান আছে। এই দোকান এর রসমালাই অনেক জনপ্রিয়। অনেকেই রসমালাই নিয়েছে। আমরাও নিয়েছি। সারা রাত বাস চলার পর ফজরের আযানের আগেই আমরা আমাদের বাস স্ট্যান্ডে পোঁছালাম। যে যার মত করে ব্যাগ বা জিনিসপত্র নিয়ে বাস থেকে নামলাম। বাড়ি পোঁছার পথেই ফজরের আযান দিল। অন্ধকার রাত থাকতেই বাড়িতে গিয়ে পোঁছলাম। এই ছিল আমার কক্সবাজার, টেকনাফ ও বান্দরবান ভ্রমণের গল্প!!


আমার জীবনে এই ভ্রমণ এবং ভ্রমনের গল্পগুলো অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জীবনটা ভালভাবে উপভোগ করতে হলে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। অন্তত আমার মনে হয়েছে ভ্রমন করতে না পারলে জীবনটা-ই বৃথা। তাই তো আমি বারবার ভ্রমন করতে চাই এবং মিশিয়ে যেতে চাই সবুজ অরণ্যে!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.