![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অতিসাধারণদের একজন...মনে লুকানো সাধারণ কিছু কথা বলতে এসেছি। বিশাল বিশাল ব্লগ লেখার ক্ষমতা বা যোগ্যতা কোনটাই আমার নেই। রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম ইত্যাদি কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনায় দয়া করে আমাকে কেউ টানবেন না :)
“মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই,
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রি-ভূবনে নাই।”
......এমনই একটি কবিতা পড়েছিলাম ছোটবেলায়। লাইন সব ঠিকঠাক আছে কিনা নিশ্চিত নই, তবে এমনই ছিলো মনে হয়। ছোটবেলা থেকেই কেন যেন কবিতাটা খুব ভালো লাগতো। যখন পড়তাম, হালকা পাতলা ইমোশনাল হয়ে যেতাম। পরে অবশ্য আবার যেই-সেই! একটু অস্থির চিত্তের ছিলাম তো, তাই।
অন্যরা মাকে সাধারণত যেভাবে কল্পনা করে, অন্তত আমাদের প্রজন্ম ও তার আগ পর্যন্ত (নিরীহ, ঠাণ্ডা, সরল-ভূষণা, সন্তানের সব দোষ ঢাকতে উন্মুখ, অতি মমতাময়ী...) আমার মা তেমন ছিলো না মোটেও। আমার মা ছিলো ভীষণ চঞ্চল, দুষ্টু, আমুদে, হাসিখুশি, ম্যাচিং এক্সপার্ট (জ্ঞান হওয়ার পর আম্মুকে কখনো এক রঙের শাড়ির সাথে ভিন্ন রঙের কানের দুল পড়তে দেখি নি), মিশুক। সন্তানদের লেখাপড়া এবং চারিত্রিক উন্নতির দিক দিয়ে আমাদের ছোটবেলা থেকেই সে ছিলো ভীষণ কঠোর। আমাদের নামে, ভুল বললাম, আমার নামে কোন বিচার আসলে (আপ্পির নামে জীবনেও কোন বিচার আসে নি, সে ছিলো অতিরিক্ত শান্তশিষ্ট, আমার ধারণা সেটা অস্বাভাবিক!) আম্মু কখনোই তা ঢাকতে চেষ্টা করতো না। জনসমক্ষে ডেকে বিচার করে ধোলাই দিতো। অন্য মা-রা দেখতাম সন্তানদের নামে সত্যি-মিথ্যা কতশত সুনাম করতো, “আমার ছেলে অমুকটা করেছে “, “আমার মেয়ে তমুকটা পেয়েছে”... বলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠতো। আমার আম্মু তার ধারে কাছেও যেতো না। এমনকি তার সন্তানদের নামে কেউ প্রশংসা করলে তা-ও মানতে চাইতো না। উল্টো দোষগুলো সবাইকে জানিয়ে দিতো! ব্যাপারটা নিয়ে আপ্পি আর আমি ভীষণ ক্ষেপতাম, এখনো ক্ষেপি।
জীবনে আম্মুর মার কম খাই নি। স্যান্ডেল ছাড়া বাকি মোটামুটি সবকিছুর মার খেয়েছি আম্মুর হাতে (যাক, আম্মু এতটুকু সম্মান তো রেখেছে, স্যান্ডেল দিয়ে মারে নি!)। তবে না মেরে অবশ্য উপায়ও ছিলো না। ডাকু টাইপের মেয়ে ছিলাম। বাসায় তুফান ছুটিয়ে বেড়াতাম সারাক্ষণ। স্কুলে কাউকে হুমকি দিয়ে কাবু করে ফেলতাম, কারো আবার মাথায় আলু গজাতাম। কিন্ডারগার্টেনে থাকতে বেস্ট ফ্রেন্ড বাবুর সাথে রাব্বি (বাবুর আরেক বন্ধু) বসে পড়ায় আমি প্রায় তাকে খুন করতে গিয়েছিলাম। এমনকি ‘আমার ফার্স্ট বেঞ্চে’ অন্য কেউ কেন বসেছে, তাই স্কুলের হেড মিস্ট্রেসকে দিয়েও একবার বেঞ্চ টানিয়েছিলাম (কাজটা ঠিক করি নি, এখন বুঝি...)। So, আমাকে আম্মু মারবে না তো কাকে মারবে?!
আমার আম্মু ছিলো নায়িকা শাবানা’র মতো সুন্দরী। আমি কিন্তু একবর্ণও বাড়িয়ে বলছি না! এখন হয় তো বয়সের কারণে সেই সৌন্দর্যের অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে। কিন্তু আম্মুর কলেজ জীবনের একটা সাদাকালো ছবি আমি ক্লাস ফাইভে থাকতে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম এইটা শাবানা’র ছবি। শাবানা নিজে আমাকে ছবিটা দিয়েছে, কারণ তিনি আমার আপন খালা হন! সবাই কথাটা বিশ্বাসও করেছিলো, কারণ ছবিটা দেখলে সাক্ষাৎ শাবানাও ভড়কে যেতো, এতটাই মিল! আম্মুর এমন বেশ কিছু ছবি তোলা ছিলো্। কিন্তু আমার আব্বু সেগুলো সবার ‘কু’নজর থেকে লুকিয়ে রাখতে গিয়ে হারিয়েই ফেলেছে! অবশ্য এজন্য তাকে আমাদের সবার কাছ থেকে কম ঝাড়ি শুনতে হয় নি।
আমার মা এখনো অনেকটা তেমনই আছে। তবে সংসারের চাপে তার সেই উড়ালপাখির ডানা কেটে গেছে। চাইলেও আম্মু আর এখানে সেখানে বেড়াতে যেতে পারে না। জীবনের সুখ, আনন্দ অনেকটাই আম্মুর জীবন থেকে দূরে সরে গেছে। তার জন্য দায়ী অবশ্য আমরা, তার সন্তানেরা। আমরা আমাদের মাকে সেই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যটুকু দিতে পারি নি। আমার নিজের কথাই বলি, আলস্য আর অজ্ঞতার কারণে আমার মাকে আমি প্রায় কোনরকম সাহায্যই করি না। মা-টা আমার সারাজীবন খেটেই মরলো্। তার দুই অকর্মা মেয়ের জন্য জীবনে শান্তি পেলো না। বরং কষ্টই পেয়ে গেলো।
আজ বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দিনটাকে বিভিন্নভাবে পালন করে। দিনটিকে ঘিরে ভালো ব্যবসাও চলে গিফ্ট শপগুলোর। সারা বছর যারা মাকে ভুলে থাকে, মায়ের খোঁজটাও একবার নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না, তারাও অনেকটা ফর্মালিটির খাতিরে আজকের দিনটাতে মাকে ফোন করে বা দেখতে যায়, টুকটাক গিফ্ট দিয়ে মাকে সাময়িক খুশি করতে চায়। মনে করে মায়ের প্রতি তার দায়িত্ব সে যথাযথভাবে পালন করেছে! একারণেই অনেকে বিশেষ কোন দিবস উদ্যাপনের বিপক্ষে।
আমি কোন দিবস পালনের বিপক্ষে নই, বরং পক্ষে। আমার মনে হয় বিশেষ দিনগুলো আমাকে সেই সম্পর্কের ব্যাপারে আরও সচেতন করে তোলে, ভালোবাসাকে আরও গাঢ় করে তোলে, মনে করিয়ে দেয় সম্পর্কটা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কারো জন্মদিন মনে রাখা, পালন করা, যত ছোট করেই হোক, তাকে সুন্দর করে উইশ করা, পছন্দের কোন উপহার দেয়া, তার সাথে সময় কাটানো, এ কাজগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা মানুষটাকে বোঝাতে পারি তার গুরুত্ব আমাদের কাছে কতখানি যে তার ছোট ছোট বিষয়গুলো আমরা শুধু তার জন্য মনে রাখি; শুধু তাকে খুশি করতে আমরা তার পছন্দের কিছু তাকে উপহার দিচ্ছি, তার সাথে সময় কাটাচ্ছি তাকে ভালোবাসি বলে। মা দিবসটাও আমার জন্য এমনই। মাকে ভালোবাসবো রোজ। কিন্তু এই দিনটায় যেন মাকে নতুন করে মনে করিয়ে দিতে পারি তাকে কতটা ভালোবাসি, তাই তার জন্য দিনটা পালন করতে চাইছি, তার জন্য ছোট্ট কোন উপহার নিয়ে এসেছি। কিন্তু এমন যদি হয় সারা বছর ফিরেও তাকালাম না, শুধু বিশেষ দিনটাতেই তার জন্য ভালোবাসা উথলে পড়লো - না। এমন মা দিবস আমি সমর্থন করি না। বিশেষ দিন বিশেষ মানুষকে বিশেষ অনুভব করানোর জন্য, সারা জীবন তাকে তুচ্ছ গণ্য করে এক দিন বিশেষ করে ছোট করার জন্য না।
আম্মু, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। হয় তো সবসময় বোঝাতে পারি না। তোমাকে আলসেমি করে সাহায্যও করি না তেমন। যখন তখন জেনে না জেনে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিছু কষ্ট আবার এতটাই বড়, যা ভেবে আমার নিজেরই ভীষণ যন্ত্রণা হয়। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি। কোন একটা সময় তুমি আমার প্রতি উদাসীন হয়ে গিয়েছিলে, তা যে কারণেই হোক। তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলাম। এ কারণেই তোমাকে অত বড় কষ্ট দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। নইলে হয় তো সেই ভুল করাই হতো না। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে জীবনের অনেক বড় কিছু শিক্ষাও পেয়েছি। তোমাকেও পেয়েছি নতুনভাবে। সত্যিই ঈশ্বর যা করেন ভালোর জন্যই করেন। শুধু যখন করেন তখন বুঝতে পারি না। তিনি আমার জীবনটাই পাল্টে দিয়েছেন। আর বন্ধুত্বটা আরো গাঢ় করে দিয়েছেন ‘মা’ নামের বন্ধুর সাথে।
(ছবি: ইন্টারনেট)
২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩০
ঝড়-বৃষ্টি বলেছেন: সত্যিই, মা মানে শুধুই মা...
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৬
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: পৃথিবীতে একমাত্র শ্রেষ্ঠ এবং প্রাণের অনুরণন হলেন মা।শৈশব থেকেই পিতামাতা বলতে একমাত্র মা'কেই জেনে আসছি।মা ছাড়া নিজের আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই।পৃথিবীর সব মায়েরাই ভালো থাকুন...