![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
্মুক্ত চিন্তা হয়ে উঠতে পারে দেশ বদলের হাতিয়ার.................................।
‘তুমি কিন্তু ইদানীং বেশ ক্লাস ফাকি দিচ্ছ!এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছে না।’
‘আমি জানি,আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না।’
‘জানই যখন,তখন জেনে শুনে ভুল করছ কেন?’
‘প্রতিদিন-ই ভাবি আজই শেষ।আর কখনো ক্লাস ফাকি দিবনা।কিন্তু এই আজ আর শেষ হয়না।অনেক চেষ্টা করেছি,পারছি না। সিগারেট,মদ,জুয়ার মত এটা আমারও একটা নেশা হয়ে গেছে।’
‘এখন তো তাই মনে হচ্ছে।’
‘ভার্সিটি ভর্তির পর থেকেই আমার মধ্যে এ রোগ দেখা দিয়েছে।জানো!আমি না স্কুল,কলেজে একটি দিনও ক্লাস ফাকি দিইনি।’
‘তখন হয়ত সুযোগ পাওনি,তাই ক্লাস ফাকি দেয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনি।’
‘হাঃ…একদম ঠিক!সত্যি বলতে কি তখন আম্মু এতটা চোখে চোখে রাখত,অন্য কেউ তো দুরের কথা একটু প্রান খুলে আম্মুর সাথে কথা বলব,সে সুযোগও হতনা।সারাদিন বই আর পড়ার টেবিল ছাড়া আম্মু কিছু বুঝতোনা।কিন্তু, তুমি জানলে কি করে?’
এখানে তোমার চলাফেরা দেখেই মনে হচ্ছে তুমি বন্দিদশা থেকে কতকাল পর মুক্তি পেয়েছ!বহুদিন প্রকৃতির সাথে কথা হয়নি,দেখা হয়নি। নতুন ধানের আগমনের প্রাক্কালে ফসল ভরা ক্ষেতে বাতাসের সাথে ধানের গাছগুলো যেমন দোল খেয়ে আনন্দে উদবেলিত হয়,তোমাকে ঠিক তেমনটা মনে হচ্ছে,বাতাসে সমস্ত শরীর হেলে দিয়ে যত দুঃখ,বেদনা,ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে প্রকৃতির মুক্ত মঞ্চে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর চেষ্টারত।আবার মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি সুখের প্রতীক হয়ে ঘুরছ।প্রকৃতির সাথে হেসে বেড়ানো তোমার এমন ছবি সুখের বহিঃপ্রকাশ নয়তো কী?
হুমম!!আমার তো সুখ বেয়ে বেয়ে পড়ছে।আসলে,ঐ যে বললে না বহুদিন পর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছি।ঐ টাই ঠিক!অনেকদিন পর নিজের ইচ্ছেমত চলার সুযোগ পেয়েছি তো,তাই একটু আত্নহারা হয়ে গেছি আর কি!সারাদিন ঘুরে বেড়ানোটাকেই আমার কাছে আনন্দের মনে হয়।
এখন বোধহয় উঠা দরকার।পাচটা বেজে গেল!
এখনি উঠবে!
না,আরো কিছুক্ষন থাকবো।গত দুই দিন তো টিউশনি যাওয়া হয়নি,আজকে না গেলেও কিছু হবে না;কি বলো?
এভাবে বলছ কেন?একটু ভালোভাবে সোজা করে কথাটা বলা যায়না।
যায়,সোজা করে বললে,কথাটাকে ওভাবে গুরুত্ব দিতে না।বাকা করে বলছি বিধায় এখন গায়ে লেগেছে।
শোনো!সবে মাত্র ফার্স্ট ইয়ার!এখনোও তিন বছর পড়ে আছে।নিজের ইচ্ছেকে ইচ্ছে মত কাজে লাগাতে পারবে।সবাই ক্লাস ফাকি দেয় শেষ দিকে এসে,তুমি ক্লাস ফাকি দেয়া শুরু করেছে প্রথম থেকেই;তোমার কপালে যে কী আছে কে জানে?একটু তো সিরিয়াস হও এবার!
নিজে ক্লাস ফাকি দিচ্ছে ভুরি ভুরি,তার কোন হিসেব নেই,আমাকে বলছে!আমি তো তোমার চেয়ে একটু ভালোই আছি,তুমি এক্সাম ও ফাকি দেও;আমি তো আর এক্সাম ফাকি দিই না।
পাইছো একটা কথা!সারাদিনই শুধু এই ঢোলই তো পেটাও।এটা তো আর আমি ইচ্ছে করে করেনি,কোন কারনে তা হয়ে উঠেনি।এটা আমার জীবনের একটা ট্র্যাজিডি!এই কথা বলে আমাকে আর কখনো খেপাবা না।
২
আচ্ছা!তোমার থিয়েটারের খবর কী?
চলছে!
এই অভ্যাসটা আর গেল না।না?প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর একটা শব্দ দিয়েই পার করে দেয়া।
সামনে কোন শো-টো নেই?
আছে,আগামী শুক্রবার!বটতলায়,একটা পথনাটক মঞ্চস্থ করার কথা চলছে।আর সামনের মাসে রবিঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার একটা নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার কথাও চলছে।
টিউশনি,রিহার্সেল এরপর আর পড়ার এনার্জি থাকে।টেবিলে সামনের বসতে ভালো লাগে?
হুম!আরো বেশি ভালো লাগে।আমাদের যেমন প্রতিদিনের কাজের ফাকে কিছু কমন কাজ করতে হয় যেগুলো কে আমরা সাধারনত কাজের আওতায় আনিনা যেমন গোসল করা,খাওয়া,ঘুমানো,ইত্যাদি।টিউশনি,রিহার্সেল আমার কাছে এখন ঘুম খাওয়া কিংবা গোসলের মত।এগুলো ছাড়া দিন চলেনা।আর এতে বরঞ্চ আরো উদ্দীপনা বাড়ে।সাহিত্য-সংস্কৃতি জীবনের একটা অংশ,একে লালন করা আমাদের দায়িত্ব।সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে থাকলে অন্যরকম একটা আনন্দ পাওয়া যায়,মন ভালো থাকে।কাজে উদ্দীপনা জাগে।
আমারও না থিয়েটারের সাথে যুক্ত হতে ইচ্ছে করছে।
বেশ ভালো!তবে,যেকোন কিছুর ব্যাপারে ইচ্ছা পোষন করলেই হবে না তার জন্য নিজে কতখানি যোগ্য তা বিবেচনা করতে হবে এবং যোগ্য না হলে আগে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
তুমি বলতে চাইছো,আমি এর জন্য যোগ্য না?
আমি সেরকম কিছু বলিনি।তোমার চেয়ে অনেক খারাপ ছেলেমেয়ে আজকাল সাহিত্য-সংস্কৃতির চেষ্টা করছে ফ্যাশন হিসেবে শুধু মাত্র নিজের ইমেজ বাড়ানোর জন্য।অনেকে আবার চেষ্টায় সফল হয়ে যায়।আমি চাই তোমার পুজির ভান্ডার সমৃদ্ধ থাকুক,যাতে তোমাকে অন্য সকলের মত পদে পদে সমস্যা পোহাতে না হয়।তোমার যেহেতু গলা ভালো,একটু আধটু গান কর,আবার মাঝে মাঝে আবৃত্তিও কর;সেজন্য তোমার শুদ্ধ উচ্চারনে পারদর্শী হওয়া উচিত।ভালো হয় কন্ঠশীলনের উপর তুমি একটা কোর্স করে ফেল!আমাদের ক্যাম্পাসেই করানো হয়।বাংলা বিভাগের শিক্ষকরাই ক্লাস নেন,তাদের সাথে একটা ভালো সম্পর্কও তৈরী হবে।
ঠিক আছে,তাহলে আমাকে ভর্তির ব্যবস্থা করে দাও!
৪
কী খবর?
যাক! তাহলে মনে পড়ল!
কেন?মনে পড়বেনা কেন?
পড়বেই বা কেন?
আমি তো না পড়ার কোন কারন খুজে পাচ্ছিনা,তুমি-ই না হয় মনে না পড়ার কারনগুলো বলে দাও।
এতদিন পর!কোথা থেকে আবিষ্কৃত হলেন?
গ্রামের বাড়ি গিয়েছি!
গ্রামের বাড়ি গিয়েছ,ভালো!কিন্তু আমাকে জানালে খুব বেশি অসুবিধে হত!
হুট করেই গিয়েছিলাম,আম্মুর শরীরটা একটু খারাপ হয়েছিল,খবরটা শোনা মাত্রই সব ভুলে বাড়ি ছুটে গিয়েছি।
এখন কেমন আছে?
ভালো!জানো!আমি যাওয়ার পরদিনই মা সুস্থ!
তাহলে এতদিন ছিলে কেন?
এতদিন,কোথায়!মাত্র তো সাতদিন!আর এবার বাড়ি গিয়ে সময়টা যে কিভাবে পার হয়েছে টের পাইনি।বাড়ি গিয়ে দেখি ফাহিম ভাইও এসেছে,ফাহিম ভাইয়ের সাথে সারা গ্রাম ঘুরেছি,নদীতে নৌকা করে ঘুরেছি,এখানে ওখানে গিয়েছি।আম্মু তো দুদিন পর,বকাই দিয়ে বসল,বলল,তোকে আসতে বলে ভুলই করেছি।খাওয়া দাওয়ার নাম গন্ধ নেই এখনো আগের মতই টইটই করে ঘুরে বেড়াস।
হুমম!এখন বুঝতে পারছি!আমাকে কেন মনে পড়েনি?
আমারটা না হয় বুঝলে, তোমার খবর কি বল?আমাকে তোমার একবারও মনে পড়েনি?
আমার খবর আর কী শুনবে?আমার খবর শুনে তোমার উতফুল্ল মনটা নিস্তেজ হয়ে পড়তে পারে।
কেন?কী এমন ঘটেছে যে,শুনলে আমার মন নিস্তেজ হয়ে পড়বে?
না কিছুই হয়নি!
তোমার পেচানোর অভ্যাসটা আর গেলো না।সোজা ভাবে বলা যায় না।
কখনো কখনো সোজা কথায় সবটুকু প্রকাশ পায়না,পেচিয়ে বলতে হয়!
রীতিমত দেখছি দার্শনিক হয়ে উঠছ!কিন্তু,আমি তো কিছুই বুঝতে পারিনি!
……।।
কী করছিলে এতক্ষন?
কবিতা পড়ছিলাম!
আমাকে একটু শোনাও তো!
আমি তো সে অপেক্ষায়-ই এতক্ষন!তোমাকে শোনাবো বলেই কবিতার বই খুলে রেখেছি।
একটু আগে একটা কবিতা পড়েছিলাম,আমার সাথে কবির কথাগুলো বেশ মিলে যাচ্ছিল,বেশ অদ্ভুত দেখাচ্ছিল।
তোমার ফোন আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরোটাই যেন মিলে গেল।মনে হল কবিতাটা আমার জন্যই লেখা।অবাক লাগলেও,আমার মনে একধরনের অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করেছিল।
অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই।কবিতা শুধু যে কবির কল্পনায় গড়া তা না,কবিতা জীবনের কথা ও বলে।সুতরাং কারো সাথে মিলে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।তুমি হয়ত ভাগ্যবান তাই পুরো কবিতাটা তোমার হয়ে কথা বলছে।তাহলে এবার শুনি-
………………
“সাত শতাব্দীর মত দীর্ঘ সাতদিন পর নিঃশব্দে এসে তুমি
জানতে চাওঃ ‘আমাকে কি একবারও মনে পড়েছে তোমার?’
-না;শুধু রক্তে কিছু মুমূর্ষা ও গোঙ্গানি দেখা দিয়েছিলো
রোববার ভোর থেকে;ট্রাকের চাকার তলে খিন্ন প্রজাপতির মতোন রিকশা
আর শিশুটিকে দেখেও কষ্ট পাইনি;বুঝতে পারিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়
আঙ্গুলে আবার কখন উঠেছে সিগ্রেট।চারটি ইন্দ্রিয় সম্পূর্ন বিকল
হয়ে খুব তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছিলো শ্রুতি-পৃথিবীর সমস্ত পায়ের শব্দের
বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য বুঝেছি,শুধু একজোড়া স্যান্ডেলের ঠুমরি শুনি নি।
বুঝেছি যা-কিছু লিখেছে পাচ হাজার বছর ধ’রে মানুষ ও তাদের
দেবতারা-সবই অপাঠ্য,অন্তঃসারশুন্য,ভারি বস্তাপচা।আর অই
শ্রীরবীন্দ্রনাথকে মনে হয়েছে নিতান্তই গদ্যলেখক,শোচনীয় গৌণ এক কবি।
জীবন,বিজ্ঞান,কলা,রাজনীতি-সমস্ত কিছুকে মনে হয়েছে সে-অভিধানে
সংকলিত শব্দপুঞ্জ,যাতে প্রত্যেক শব্দের অর্থ-‘শুন্যতা,নিরর্থ প্রলাপ’।
-না;সাত শতাব্দী ধ’রে তোমাকে একবারও মনে পড়ে নি……”
……………
কবিতার ছলে ছেলেটির হৃদয় ভাঙ্গা আর্তনাদ শুনে মেয়েটি অজান্তে হেসে উঠে।কোন প্রাপ্তির ছোয়ায় তার হৃদয় ভরে উঠে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েতো এতটা অবুঝ হতে পারেনা।কবিতার ভাষা তো তার বোঝা উচিত,নিশ্চয়ই সে বুঝতে পেরেছে আমি কি বলতে চাচ্ছি!সে যদি বুঝেই থাকে তাহলে সে কোন প্রতিক্রিয়া জানালো না কেন?
মেয়েটির হেয়ালীপনা দেখে রিমেলের ভেতরটা আরো জ্বলে উঠে।মেয়েটির প্রতি এই মুহুর্তে তার তীব্র ঘৃনা বোধ হচ্ছে।জেদের বশেই হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি সুইচ অফ করে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দেয়।সব কাজ কর্ম বাদ দিয়ে সারাদিন বাসায় বসে থাকে,বের হলেও চেনা জায়গায় না গিয়ে অচেনা জায়গায় একা একা বসে থাকে।প্রায় সাতদিন হতে চলল রিমেলের কোন খবর না পেয়ে রিমি চিন্তিত হয়ে পড়ে।প্রতিদিন চেনা জায়গায় গিয়ে খোজ করেও তার খবর পাওয়া যাচ্ছেনা,রিমেলের বন্ধু রাকিবকে ফোন করেও তার খবর পাওয়া পেলনা।আশ্চর্য ব্যাপার এতদিন রিমেলের সাথে চলাফেরা করেও রিমেলের বাসার ঠিকানা রাকিব বা রিমি দুজনের কেউ জানতে পারলো না।কোন এলাকায় থাকে তা জানলেও না যাওয়ার কারনে রিমেলের বাসা দুজনের অচেনাই রয়ে গেল;তাছাড়া গেল মাসেই রিমেল নতুন বাসায় উঠল;হলে সিট পাওয়ার কথা থাকলেও…।রিমি দিশেহারা হয়ে পড়ে,রিমেলকে যে তার চাই-চাই।বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে ক্লাসের বন্ধুবান্ধবদের বাদ দিয়ে এই রিমেলকে নিয়েই যে তার দিন কাটতো।রিমি তো এমনটা চায়নি;সে চেয়েছিল রিমেল যেন তাকে মুখ ফুটে বলে।রিমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে রিমেল তাকে পছন্দ করে।কিন্তু পরিনাম যে এমনটা দাঁড়াবে কে জানতো।আর রিমেলই বা কেমন সেও কি বোঝে নাই রিমিও যে তাকে পছন্দ করে।এতদিনের চলাফেরা,একসাথে এতটা সময় কাটানোর পরও রিমেল কে কেন খুলে বলতে হবে এ কথা।রিমির ভাবনা জুড়ে শুধুই বিষন্নতা।
এতদিন একসাথে পথচলার পরও রিমেলকে নিয়ে ভয় হচ্ছে রিমির কেননা রিমেলের রাগ কিংবা অভিমান সম্পর্কে সে একেবারেই অজানা।রিমেল তবে কি রিমিকে এড়িয়ে চলতে চাইছে?নাকি অভিমানের জের ধরে কিছু সময় দূরে থাকা মাত্র?নানা ভাবনার গ্যাড়াকলে পড়ে রিমির দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা তারপর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত কিংবা ভোর এভাবেই চলছে।ফোন বন্ধ এসএমএসের পর এসএমএস পাঠানোর পরও কোন উত্তর মিলছেনা।নানা ভাবে রিমেলের অনুপস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করে গেল।
………………পথ হারিয়ে ফেলা পথিকের মত সাতদিন অজানা কোথাও বহুদুর হেটে হেসে ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত,ছন্নছাড়া রিমেল বাসায় প্রবেশ করল!দরজা খুলেই পা বাড়ানো মাত্রই চোখ পড়ল নিচে পড়ে থাকা একটি চিঠির খামের উপর। সাতদিন তার কক্ষে মানুষের চিহ্নের অনুপস্থিতি প্রকট আকারে বুঝা গেল তার কক্ষের অবস্থা দেখে।শান্ত,বধির,নির্জন পরিবেশ সমস্ত কক্ষ জুড়ে;ধুলো জমা শার্ট,প্যান্টগুলো দেরাজেই দাঁড়িয়ে আছে মুর্তির মত।শেষবারের মত টি-শার্টটি খুলে যে বিছানায় রেখেছিল,ঠিক সে অবস্থায় পড়ে আছে এখনো।টেবিলে সাজানো শেক্সপিয়ারের বইগুলোতে ধুলো জমে যেন শেক্সপিয়ার নামটাই মুছে গেল।দেয়ালে টাঙ্গানো চে গুয়েভারার হাসিটিও ধুলো জমে মলিন রুপ ধারন করেছে।চিঠিখানা বিছানায় ফেলে একটু স্থির হতে চাইলো রিমেল।এই মুহুর্তে ফ্যান দিলে রীতিমত কক্ষজুড়ে একটা বালুঝড় বয়ে যেতে পারে মনে করে ফ্যানের সুইচ দিতে গিয়েও আবার থমকে যায় রিমেল।ধুলোজমা টি-শার্টটিকে সরিয়ে বিছানায় বসে পড়ল।এদিক-ওদিক করে আরো একবার পর্যবেক্ষন করতে গিয়ে চোখ পরে গেল বিছানায় পড়ে থাকা খামটির উপর।এটাকে ঠিক পুরোদস্তুর চিঠি বলা যাবেনা;চিঠির আদলে লেখা নিয়মবহির্ভুত চিঠির এক প্রতিরুপ মাত্র। সম্বোধন হীন চিঠির কথামালাও কোন রুপ বিশেষনে ভরপুর নয়।নিরেট কয়েকটি লাইনও নয়,শিরোনামহীন একটি কবিতা মাত্র।
প্রাপক,
ইফতেখার হোসেন রিমেল
…………………………………………………
‘জানতে চাওঃ ‘আমাকে কি একবারও মনে পড়েছে তোমার?’
-না;শুধু রক্তে কিছু মুমূর্ষা ও গোঙ্গানি দেখা দিয়েছিলো
রোববার ভোর থেকে;ট্রাকের চাকার তলে খিন্ন প্রজাপতির মতোন রিকশা
আর শিশুটিকে দেখেও কষ্ট পাইনি;বুঝতে পারিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়
আঙ্গুলের রেখা গুলো ক্রমশই মিশে যাচ্ছে আর অজান্তেই
কারো মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ হতে বারবার বাতাসে হাত বাড়ায়;বুঝতেই পারিনি
দু’চোখে আবার কখন নেমেছে জল।চারটি ইন্দ্রিয় সম্পূর্ন বিকল
হয়ে খুব তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছিলো শ্রুতি-পৃথিবীর সমস্ত পায়ের শব্দের
বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য বুঝেছি,শুধু একজোড়া জুতোর শব্দ শুনি নি,
শুনি নি শাসনের সুরে তীব্র আদর মাখা কোন স্বর;
বুঝেছি যা-কিছু লিখেছে পাচ হাজার বছর ধ’রে মানুষ ও তাদের
দেবতারা-সবই অপাঠ্য,অন্তঃসারশুন্য,ভারি বস্তাপচা।আর অই
শ্রীরবীন্দ্রনাথকে মনে হয়েছে নিতান্তই গদ্যলেখক,শোচনীয় গৌণ এক কবি।
জীবন,বিজ্ঞান,কলা,রাজনীতি-সমস্ত কিছুকে মনে হয়েছে সে-অভিধানে
সংকলিত শব্দপুঞ্জ,যাতে প্রত্যেক শব্দের অর্থ-‘শুন্যতা,নিরর্থ প্রলাপ’।
-না;সাত শতাব্দী ধ’রে তোমাকে একবারও মনে পড়ে নি……”
………………………………………………………………………………………………………………………………………
প্রেরক,
সাদিয়া জাহান রিমি ! ( nov,2012)
©somewhere in net ltd.